আমি ভারত বেড়াতে গিয়েছি। কলকাটা, দিল্লী, আগ্রা, জয়পুর, সিমলা, কাশ্মীর ঘুরে এসেছি শুনে প্রথম যে প্রশ্নটি লোক করে, সে হোল -সঙ্গে কে ছিল? কাশ্মীর এর বরফাচ্ছাদিত গূলমার্গ, বানিহাল টাণেল, হিমালয়ের উপর ঝুলন্ত চেয়ার, ডাল থেকে সিকারা হাউজবোট সম্পর্কে আমি উচ্ছ্বসিত হই। কিন্তু তাদের ওই এক প্রশ্ন- সঙ্গে কে ছিল?
আমি উত্তরে বলি -একা।
একা? একা একটি মেয়ে বাইরে বেড়াতে যেতে পারে নাকি? কার ও বিশ্বাস হয় না।এরপর কেউ আমার শান্তিনিকেতন, দীঘার সমুদ্র, কন্যাকুমারী বিচিত্র অভিজ্ঞতার প্রতি আগ্রহ দেখায় না । যে চিন্তাটি তাদের মস্তিষ্ক জুরে ঘেটি পাকায় , তা হল সঙ্গে কে ছিল। আমি একবার বলেছিলাম, সঙ্গে অতসী, কৃষ্ণকলি আর মল্লিকা ছিল।
আর?
আর কেউ না।
কেন? পুরুষ মানুষ কেউ ছিল না?
না।
লোকে অবাক চোখে তাকায়। পুরুষ ছাড়া মেয়েরা একজনও যা সাতজনও তা।
এক্ষেত্রে আমার বয়সী একটি ছেলে যদি একইভাবে দার্জিলিং, সিমলা, কাশ্মীর ঘুরে আসত, একা, তবে বিমোহিত সকলেই বলত, আহা কি পবিত্র মন! কি চমৎকার রুচি ! কি অগাত সৌন্দর্য বোধ ! কি অপূর্ব জীবন !
ধরা যাক আমার খুব সমুদ্র দেখতে ইচ্ছা করছে, আমার খুব সীতাকুণ্ড পাহাড়ে যেতে ইচ্ছা করছে, আমার খুব যেতে ইচ্ছা করছে শালবন বিহার, কাপ্তাই লেকে স্পীডবোট নিয়ে সারা বিকেল ঘুরতে ইচ্ছে করছে, সাঁতার কাটতে ইচ্ছে করছে পদ্মায়, তখন কি করতে হবে? একজন পুরুষ জোগাড় করতে হবে।
পুরুষ ছাড়া মেয়েরা দূরে কোথাও যেতে পারে না। সে যে বয়সের ই হোক না কেন। বাসে চরলে কন্ট্রাক্টর জিজ্ঞাসা করে, আপনার সঙ্গের লোক কই? তারা নিশ্চিত সঙ্গে একজন লোক অর্থাৎ পুরুষ আচেই। নানা জায়গায় পুরুষ থাকা না থাকা নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় মেয়েদের। সঙ্গে যদি পুরুষ থাকে, সে যদি স্বামী অথবা নিকটাত্মীয় না হয়, তাহলে অসুবিধে- কে এই লোক? কি সম্পর্ক? আর যদি সঙ্গে পুরুষ না থাকে তাহলেও অসুবিধে নেই কেন? অত্যন্ত সচেতন ভাবে পুরুষের উপর মেয়েদের নির্ভর করানো হচ্ছে। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পিতার কন্যারা অথবা স্বামীর বধূরা দুচার টে আত্মীয় বাড়ি আর মার্কেট ঘরাঘুরি করেই ভাবে ‘ নারী স্বাধীনতা’ হয়ে গেল।
আসলে তা হয় না। মেয়েদের পায়ের শৃঙ্খল খুব শক্ত শৃঙ্খল। হাত-পা ছেড়ে বসে থাকলে কেউ তার শিকল খুলে দিয়ে বলবে না বেরিয়ে আয়। রূপকথায় শুভার্থী পাওয়া যায় বাস্তবে নয়।
মেয়েরা এমন শখ করে পায়ে মল পরে। এই মল জিনিসটি আবিস্কারের এবং মেয়েদের পরানোর পেছনে একটি উদ্দেশ্য আছে। মল পরলে মেয়েদের গতিবিধি- তারা কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, শব্দ শুনে জানা যায়। আর বোকা মেয়েরা সেই মল, যা একটি সিমানার ভেতরে তাদের বন্দী রাখে,তা পরে, ভাবে যে তাদের পায়ের সৌন্দর্য বুঝি বেড়েছে।