1 of 2

হেমলকের নিমন্ত্রণ – ৯

‘ভীতি নয়, চাই ভালোবাসা বিনিময়
ভয়ের বদলে ভয়ই পাওয়া যায়,
যার ভয়ে সবে কাঁপে, সে করে সব্বারে ভয়।

—ডিমোক্রিটাস

***

‘সখী, ভালোবাসা কারে কয়?’

সক্রেটিস আর ক্রিতো একসাথে প্রশ্নটি করল। সামনে ষাট বছরের বৃদ্ধা ডিওটিমা। ভালোবাসা কী জিনিস, সেটি জানতে তারা ডিওটিমার কাছে এসেছে। দিনের আলো কমে এসেছে। সন্ধ্যার আগে গোধূলির আলো নিভু নিভু করছে। বাইরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিমাখা নিভু নিভু আলোতে তারা প্রেমের সংজ্ঞা বের করতে চাইছে।

ডিওটিমা একজন রহস্যময় নারী। তিনি জিউসের মন্দিরের পুরোহিত। মুখ দেখে ভবিষ্যৎ বলতে পারেন। একবার তাকিয়েই কার ভাগ্যে কী আছে, ফটাফট বলে দিতে পারেন। তার কাছে লাইন ধরে লোক আসে। তিনি কাউকে বিশেষ কিছুই বলেন না। তবে যা বলেন, সেটি মিথ্যা হয়েছে এমন নজির নেই। লোকে তাকে বুঝতে পারে না। তিনি রহস্যময়ী নারী।

এই রহস্যময়ী নারীর কাছে আসার জন্য ক্রিতো কয়েক দিন ধরে সক্রেটিসের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করছিল। ক্রিতোর বিয়ে হবে। তার মা-বাবা মেয়ে দেখতে শুরু করেছেন। খুব তোড়জোড় চলছে। বিয়ের আগে ক্রিতোর একটু প্রেম বিষয়ক জ্ঞান দরকার। ভালোবাসা বিষয়ক জ্ঞানের জন্য তারা এখন এসেছে ডিওটিমার আখড়ায়।

ক্রিতো খুব লাজুক। একজন বয়স্ক নারীর কাছে প্রেমের কথা বলা যায় নাকি? লজ্জা-শরম বলে তো একটি কথা আছে! সক্রেটিসের এসব লজ্জা একেবারেই নেই। জ্ঞানের জন্য লজ্জা, ঘৃণা, ভয়— এই তিন থাকতে নেই। তাই জ্ঞানের জন্য সে কোনো লজ্জা করে না। ডিওটিমা তাকে খুবই আদর করেন। একেবারে আপন খালার মতো। তার কাছে সক্রেটিস একেবারে পানির মতো সহজ। তার কাছে গড়গড় করে মনের কথা বলতে পারে।

সক্রেটিস নারীদের শ্রদ্ধার চোখে দেখে। এথেন্সের মানুষ কল্পনাও করতে পারে না যে মেয়েরাও জ্ঞানী হতে পারে। তারা জ্ঞানের আলোচনা করার জন্য কোনোদিনই একজন মেয়ের কাছে আসবে না। সেখানে একমাত্র ব্যতিক্রম সক্রেটিস। জ্ঞানের জন্য ডিওটিমার কাছে আসতে তার কোনো আপত্তি নেই।

ডিওটিমা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। কোনো কিছুর উত্তর করছেন না। সক্রেটিস আবার বলল, ভালোবাসা কারে কয়?[৩৫]

ডিওটিমা তার রহস্যময় গলায় বললেন, ভালোবাসা ভালো নয়।

তার গলার স্বরে একটি ভয়ের ব্যাপার আছে। সক্রেটিস ভয়ে ভয়ে বলল, ভালোবাসা তাহলে মন্দ?

‘না, কোনো কিছু ভালো না হলেই মন্দ হবে, এমন কোনো কথা নেই। ভালোবাসা হলো ভালো আর মন্দের মাঝামাঝি একটি জিনিস।’

সক্রেটিস বোঝার চেষ্টা করছে। ভালোবাসায় যে মন্দ কিছু থাকতে পারে, সেটি মানতে তার কষ্ট হচ্ছে। সে মনে করে ভালোবাসা খুবই সুন্দর আর পবিত্র জিনিস।

সক্রেটিস মনে মনে কী ভাবছে, সেটি মনে হয় ডিওটিমা বুঝতে পেরেছেন। তিনি আবার রহস্য করে বললেন, ভালোবাসা সুন্দর নয়।

সক্রেটিস বলল, ভালোবাসা অসুন্দর?

ডিওটিমা বললেন, যা কিছু সুন্দর নয়, তাই অসুন্দর হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ভালোবাসা হলো সুন্দর আর অসুন্দরের মাঝামাঝি একটি জিনিস।

এই নারী মনে হয় মধ্যপন্থি। তিনি সবকিছুর মাঝামাঝি থাকেন। মাঝামাঝি থাকলে ঝুঁকি কম। কেউ ভুল ধরতে পারে না। সুযোগমতো যেকোনো এক দিকে চলে যাওয়া যায়। ডিওটিমাও এখন ভালোবাসাকে সুন্দর আর অসুন্দরের মাঝামাঝি বলছেন। এখন মাঝখানে থাকছেন। পরে সুযোগমতো ডানে-বাঁয়ে একটি দিকে যাবেন।

ডিওটিমা বলছেন, ভালোবাসা কী সেটি বুঝতে হলে, আগে জানতে হবে ভালোবাসার পিতা-মাতা কে?

সক্রেটিস আর ক্রিতো চোখ চাওয়া-চাওয়ি করছে। ভালোবাসার বাবা-মা? এই বুড়ির মাথা খারাপ হয়ে গেল না তো!

ডিওটিমা বললেন, ভালোবাসার বাবা হলেন একজন দেবতা, তার নাম ঐশ্বর্য। আর তার মা হলেন— দারিদ্র্য বা অভাব।

ক্রিতো পিটপিট করে বুড়ির মুখের দিকে তাকাচ্ছে। এই বুড়ি একজন পুরোহিত। তার মতে জগতের সবকিছুই করেছেন দেবতারা। তাই এখানেও দেব-দেবী নিয়ে এসেছেন। ক্রিতো ভাবছে, এর কাছে আসাই ভুল হয়েছে। বেহুদা সময় নষ্ট হচ্ছে। এই বুড়ি একজন কুসংস্কারাচ্ছন্ন দেবতাভক্ত। তার কাছ থেকে জ্ঞানের কথা জানা যাবে না।

ডিওটিমা বললেন, এবার যা বলব, ভালো করে শোন—

‘ভালোবাসার বাবা হলেন ঐশ্বর্য। ঐশ্বর্য মানে সম্পদ, ঐশ্বর্য মানে ক্ষমতা। সেজন্য ভালোবাসার অনেক ক্ষমতা, ভালোবাসার অনেক শক্তি। তুমি ভালোবাসা দিয়ে বিশ্ব জয় করতে পারবে। পৃথিবীতে ভালোবাসার মতো এমন শক্তিশালী জিনিস আর নেই। আর ভালোবাসার মা হলেন অভাব। সেজন্য ভালোবাসার চারপাশে সব সময় একটি অভাব। মানুষ প্রেমে পড়লে শুধু চাই আর চাই। আরও বেশি চাই। মনে হয় আমি পেলাম না, সবাই পেল, শুধু আমিই পেলাম না। যখন সে একটু পায়, তখন আরও চায়। যখন আরও বেশি পায়, তখন শুরু হয় হারাই হারাই ভয়। মনে হয় এই বুঝি হারিয়ে যাবে, এই বুঝি চলে যাবে। এই হারানোর ভয় যতদিন থাকে, ততদিনই ভালোবাসা থাকে। যে মুহূর্তে হারানোর ভয় শেষ, সেই মুহূর্তে ভালোবাসাও শেষ। তাই ভালোবাসার সাথে সব সময়ই একটি অভাব জড়িয়ে থাকে, সব সময় একটি না পাওয়ার ব্যাপার থাকে।’

ভালোবাসার এমন চমৎকার ব্যাখ্যা সক্রেটিস আর কোথাও শোনেনি। সে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল বুড়ির দিকে। বুড়ি কী শুনালো? ক্রিতোর চোখেও এক সাগর মুগ্ধতা। তারা যা শুনতে এসেছে, তা শোনা হয়ে গেছে।

ডিওটিমা বললেন, এবার ভালোবাসার জন্ম কাহিনি শোন। সেদিন ছিল সৌন্দর্যের দেবী আফ্রোদিতির জন্মদিন। তার বাবা জিউস মহাধুমধাম করে জন্মদিন পালন করছেন। সেই অনুষ্ঠানে এসে দেবতা ঐশ্বর্য এবং দেবী অভাবের প্রথম দেখা হয়, আর সেই রাতেই জন্ম হয় ভালোবাসার।

এবার সক্রেটিস আর ক্রিতো হাসি দিল। দেবদেবী নিয়ে এই ব্যাখ্যা হাস্যকর। কিন্তু ডিওটিমা পুরোহিত। তিনি দেবতা দিয়েই সবকিছুর ব্যাখ্যা দেন।

ডিওটিমা বললেন, শোন। এবার আর একটি ভালো কথা বলব-

‘ভালোবাসার জন্ম হয়েছে সৌন্দর্যের দেবীর জন্মদিনে। সেজন্য ভালোবাসা সব সময় সুন্দরের খোঁজ করে। যেখানেই সুন্দর কিছু আছে, সেখানেই ভালোবাসা আছে। যদি তোমার মনে হয় কেউ অসুন্দর কাউকে ভালোবেসেছে, সেটি তোমার বোঝার ভুল। সেখানেও সে সুন্দর কিছু পেয়েছে বলেই ভালোবেসেছে। সেটি না হলে সে ভালোবাসেনি, শুধু ভালোবাসার অভিনয় করেছে।’

সক্রেটিস আবারও মুগ্ধ। সুন্দরের সাথে ভালোবাসার যে সম্পর্ক, সেটিও একেবারে পরিষ্কার।

ডিওটিমা বললেন, আমি প্রথমে বলেছিলাম যে ভালোবাসা হলো সুন্দর আর অসুন্দরের মাঝামাঝি। ভালো আর মন্দের মাঝামাঝি। এবার সেটির কারণ শোন। আগেই বলেছি, ভালোবাসা হলো ঐশ্বর্য আর অভাবের সন্তান। এই দুটো হলো পুরোপুরি বিপরীত গুণ। ঐশ্বর্য সুন্দর আর অভাব অসুন্দর। তাই এদের সন্তান ভালোবাসা হচ্ছে সুন্দর আর অসুন্দরের মাঝামাঝি। একইভাবে ঐশ্বর্য হলো ভালো আর অভাব হলো মন্দ। তাই এদের সন্তান ভালোবাসা হচ্ছে ভালো আর মন্দের মাঝামাঝি। ভালোবাসার যেমন সুন্দর করার ক্ষমতা আছে, তেমনই কিছু অসুন্দর করার ক্ষমতাও আছে। ভালোবাসা যেমন মঙ্গল করে, তেমনই হিংসারও জন্ম দেয়। ভালোবাসা শান্তি আনে, তেমনই ভালোবাসা থেকে যুদ্ধও হয়।

সক্রেটিস মনে মনে ভাবছে, এই বুড়ি বিয়ে করেনি, সারা জীবন মন্দিরে দেবতার সেবা করেছে। তবুও এতকিছু কীভাবে জানেন?

ডিওটিমা বললেন, শোন। এবার শেষ কথা বলব :

‘মানুষ প্রথমে দেহের সৌন্দর্য দেখে ভালোবাসে। সবাই এভাবেই শুরু করে। এরপর আর একটু জ্ঞান বাড়লে, আর শরীরের সৌন্দর্য নয়, মনের সৌন্দর্য খোঁজে। সেটি আর একটু উচ্চ পর্যায়ের ভালোবাসা। মানুষ যখন আরও একটু বুঝতে শেখে, তখন সে জ্ঞানকে ভালোবাসতে শুরু করে। এক সময় সে হয়ে যায় জ্ঞানের প্রেমিক। আর জ্ঞানের প্রতি প্রেমই হলো সবচেয়ে উচ্চ পর্যায়ের ভালোবাসা। জ্ঞানের প্রেমিক হলেন দার্শনিক বা ফিলোসফার ফিলিন (philein) মানে ভালোবাসা আর সফি (sophie) মানে জ্ঞান। যিনি জ্ঞানকে ভালোবাসেন তিনিই হলেন ফিলোসফার (Philosopher)।’

ক্রিতো ভাবছে, এই বুড়ি তো প্রেমের জ্ঞানকে দর্শনের জ্ঞান বানিয়ে দিল।

সে বলল, তার মানে ঘর-সংসার চাইলে অল্প ভালোবাসতে হবে। অল্প ভালোবাসলে নারী-পুরুষের প্রেম থাকবে। আর বেশি ভালোবাসলে জ্ঞানপ্রেমিক হয়ে যাবে। মানে দার্শনিক হয়ে যাবে। আমি তাহলে কোনটা করব?

সক্রেটিস বলল, তোমার মা তোমার জন্য মেয়ে দেখছেন। তোমার জন্য অল্প ভালোবাসাই ভালো। ঘর-সংসার হবে।

ক্রিতো বলল, আর তুমি? তুমি ঘর-সংসার করবে না? তুমি বুঝি জ্ঞান প্রেমিক হবে?

সক্রেটিস হাসলো। মুখে কিছুই বলল না।

ডিওটিমা বললেন, প্রেমের আলাপ বাদ। ভালোবাসার কথায় এখানেই ইতি। এখন অন্য কথার আসি। সক্রেটিস, তোমার মতো লোক আমি জীবনে দেখিনি। জ্ঞানী অনেকেই আছে, তুমি সবার থেকে আলাদা। কিন্তু তুমি মানুষকে প্যাঁচ দিয়ে প্রশ্ন করো। তুমি এমন প্যাঁচ দেওয়া কথা কোথায় শিখলে?

সক্রেটিস বলল, এটি আমার নিজেরই বানানো।

‘কারও কাছে শিখোনি?’

‘সেভাবে নয়। তবে যদি ওস্তাদ হিসেবে কারও নাম বলতে হয়, তাহলে যার নাম মনে আসছে, তিনি হলেন দার্শনিক জেনো[৩৬]।’

‘জেনো?’

খেলা

‘হ্যাঁ, আমার বয়স তখন পনের। এথেন্সে প্যান-এথেনিয়ান[৩৭] দেখতে দুজন সাধু এসেছেন। একজন থুখুরে বুড়ো, চুল সব পাকা। আরেকজন কাঁচা চুলের। তার দুজন গুরু-শিষ্য। বুড়োজনের নাম পারমিনিডিস। তার মাথা ভরা নতুন নতুন বিষয়। কিন্তু বয়স হয়ে গেছে। তিনি তেমন কথাবার্তা বলেন না। কথা বলেন কাঁচা চুলের সাধু। তার নাম হলো জেনো। বয়স চল্লিশ হবে। তারা কেরামিকাসে হোটেলে উঠেছেন। হোটেলের বারান্দায় বসে গল্প করছেন। অনেক লোকের ভিড়। ভিড় দেখে আমিও গেলাম। দেখি সাধু জেনো একটি বই পড়ছেন। তিনি বই পড়ছেন আর বলছেন, আমাদের বাইরের পৃথিবীকে যেমন জানতে হবে, তেমনই নিজের ভেতরের আত্মাকেও জানতে হবে।

আমি দেখলাম আরে, এই সাধু তো আমার মতো কথা বলেন। আমি সারা দিন মন, আত্মা এগুলো নিয়ে ভাবি। আমি মনে মনে যা ভাবি এই সাধু সুন্দর করে ব্যাখ্যা করে সেগুলোই বলছেন।

আমার তাকে অনেক ভালো লেগে গেল। আমি রোজ তার কাছে যাওয়া শুরু করলাম। খুব ভালো লাগত। তার কথা শুনতাম, তিনি কিছুটা প্রশ্ন-প্রশ্ন মিলিয়ে কথা বলতেন। সেটি আমার মনে লেগে গিয়েছিল। সেই থেকেই প্রশ্ন শুরু করি।’

ডিওটিমা বললেন, প্রশ্নরোগের ঘটনা তাহলে এটি।

সক্রেটিস বলল, ঘটনা আরও আছে, মজার ঘটনা। দার্শনিক জেনোকে আমার এত ভালো লেগেছিল যে, তাকে মাঝে মাঝে বাড়িতে নিয়ে আসতাম। ওনার সাথে প্রশ্ন-প্রশ্ন খেলতাম।

আমি বলতাম, ঘোড়া কী জিনিস?

তিনি বলতেন, একটি জন্তু।

‘জন্তু কী?’

‘যারা লাফালাফি করে। চলাচল করে।’

‘মানুষও চলাচল করে, তাহলে মানুষও কি জন্তু?’

‘হুঁম, মানুষও জন্তু।’

‘দেবতারাও চলাচল করে, দেবতারাও কি জন্তু?’

‘হুঁম, দেবতারাও জন্তু।’

একথা শুনেই আমার মা দৌড়ে আসতেন। বলতেন, ‘কী শিখাচ্ছেন ছেলেটাকে? দেবতারা জন্তু? এসব কথা শুনলে ওকে ফাঁসি দেবে।’ ফাঁসির ভয়ে আমরা দেব-দেবীর কথা বাদ দিয়ে নতুন কিছু নিয়ে শুরু করতাম। চলতে থাকত প্রশ্ন প্রশ্ন খেলা।

জেনো সাহেব এথেন্স থেকে চলে গেলেন। এবার আমি শুরু করলাম প্রশ্ন। প্রথমে ছোট বাচ্চাদের প্রশ্ন করি। তারপর আর একটু বড় বাচ্চাদের। দেখি বিশাল মজা। খেলতে খেলতে আমি হয়ে গেলাম প্রশ্ন-খেলার ওস্তাদ। সেই খেলা এখন খেলি বুড়োদের সাথে।’

‘বুড়াদের সাথে?’

‘হুঁম, ধরো একদিন আগোরাতে একজন কবি এলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা কবি সাহেব, বলুন তো— কবিতা কী জিনিস? কবি উত্তর দেন। তার উত্তর থেকে আবার প্রশ্ন করি। কবি না পারলে, অন্য কেউ উত্তর দেয়। সেটি থেকে আবার প্রশ্ন। এভাবে চলতে থাকে প্রশ্ন আর উত্তরের খেলা। এক সময় দেখি কবিতা কী, সেটি আমরা স্পষ্ট বুঝে গেছি।’

ডিওটিমা বললেন, এমন খেলা আসলেই তোর কাজে লাগছে?

এতক্ষণ ক্রিতো কোনো কথা বলেনি।

এবার ক্রিতো বলল, কাজে লাগছে কি! এই খেলা এখন এথেন্সে ভীষণ জনপ্রিয়। খুব বাজার পেয়েছে। এখন আমার বন্ধুরাও সুযোগ পেলেই প্রশ্ন শুরু করে। এই প্রশ্ন প্রশ্ন খেলাকে তারা বলে সক্রেটিস পদ্ধতি বা ‘সক্রেটিক মেথড’[৩৮]।

‘সক্রেটিক মেথড?’

ক্রিতো বলল, হুঁম, সক্রেটিক মেথডে এখন জ্ঞানের জন্ম হচ্ছে।

ডিওটিমা অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন সক্রেটিসের দিকে। এই পিচ্চি ছেলে জ্ঞানের জন্ম দেয়। ডিওটিমার চোখে বিস্ময়। এক আকাশ বিস্ময়।

মা-খালারা এমন বিস্মিত হলে লজ্জা লাগে। সক্রেটিসের লজ্জা-শরম কম। সে তেমন লজ্জা পেলো না।

সে বলল, খালা, মিষ্টি বাতাস আসছে। দখিনা হাওয়ায় হবে নাকি প্ৰশ্ন- প্ৰশ্ন খেলা?

***

৩৫. প্লেটোর সিম্পোজিয়াম (Symposium) ডায়ালগে সক্রেটিস ভালোবাসা বিষয়ে ডিওটিমার কাছে শোনা গল্প বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।

৩৬. এরিস্টটলের মতে, সক্রেটিস যে ডায়ালেক্টিক পদ্ধতি ব্যবহার করেন, সেটি দার্শনিক জেনো (Zeno of Elea) এবং তার গুরু পারমিনিডিস (Parmenides) এর আবিষ্কার। তাদের সাথে সক্রেটিসের আলাপের বিস্তারিত বিবরণ আছে প্লেটোর Parmenides নামক গ্রন্থে।

৩৭. অলিম্পিকের মতো প্রতিযোগিতা হতো গ্রিসের চারটি বড় শহরে চার বছর পর পর। অলিম্পিয়া শহরের আয়োজনকে বলা হতো অলিম্পিক, এটিই সবচেয়ে বড় ছিল। এথেন্সের প্রতিযোগিতার ইংরেজি নাম প্যান-এথেনিয়ান গেমস (Panathenain Games)।

৩৮. সক্রেটিক মেথড : একের পর এক প্রশ্ন করে কোনো জটিল বিষয় বুঝতে পারার পদ্ধতি। প্লেটো তার ডায়ালগগুলোতে যে প্রক্রিয়া ব্যবহার করেছেন, সেটিই সক্রেটিক মেথড।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *