1 of 2

হেমলকের নিমন্ত্রণ – ৪১

৪১

‘শিক্ষা দেওয়া মানে আলোক শিখা জ্বালানো,
জাহাজে তেল দেওয়া নয়।’

—সক্রেটিস

***

ডাক্তার হিপোক্রাটিস তীব্র মনঃকষ্টে আছেন।

সবাই ভেবেছিল তিনি পেরিক্লিসকে সুস্থ করে তুলবেন। কিন্তু তিনি আসার আগেই পেরিক্লিস মারা গেছেন। তিনি পেরিক্লিসকে বাঁচাতে পারেননি। কথাটা যতবার মনে পড়ে, মনে হয় আমি ব্যর্থ, আমি পারলাম না, মানুষ কত আশা নিয়ে আমার জন্য বসে আছে, তবু পারলাম না।

সেই মনকষ্ট থেকে ডাক্তার নিজের কাছে শপথ নিলেন, আমি এথেন্স ছেড়ে যাব না। আমি এথেন্স থেকে প্লেগ তাড়াব। পেরিক্লিস তো মারা গেছেন আমি আসার আগে। আমার কিছুই করার ছিল না। এখন আমার যা করার আছে আমি করব। এই মহামারী না তাড়িয়ে আমি এথেন্স ছাড়ব না। শুরু করলেন কাজ। দিন-রাত ছুটছেন। ঘরে-ঘরে, দুয়ারে দুয়ারে, কবরে-শ্মশানে, দরবারে-থিয়েটারে, আগোরায় সবখানে যাচ্ছেন। মানুষের শোয়ার ঘর থেকে রান্নাঘর প্রতিটি জায়গায় ছুটছেন।

তার ছাত্ররাও ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তিনি শিষ্যদের বললেন, তোমরা সারা জীবনে যত রোগী দেখবে, এই মুহূর্তে এথেন্সে তার চেয়েও বেশি রোগী। শহরের সবাই তোমার রোগী। এটিই সুযোগ, যাও, মানুষ বাঁচাও। সারা এথেন্স এখন তোমাদের জন্য একটি হাসপাতাল।

তার নিদান একটাই— সেটি হলো আগুন। সবকিছু আগুনে দিয়ে দাও। যেখানেই মনে হবে কেউ আক্রান্ত হয়েছে, সেখানে সবকিছু আগুনে জ্বালিয়ে দাও। আগুনে ঝলসে শুদ্ধ হোক এথেন্স।

সবাই তার কথা মেনে নিয়েছে। নগরের কর্তারা ক্ষমতা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। নগর চলছে হিপোক্রাটিসের কথায়। অন্য কোনো উপায় নেই। পেরিক্লিসের মতো সবচেয়ে ক্ষমতাশালী মানুষ মারা গেছেন। কেউ কোনো প্রতিকার দিতে পারেনি। তাই ডাক্তার হিপোক্রাটিসই শেষ ভরসা। তিনি যা বলেন, সবাই মেনে নিচ্ছে। যার যা কিছু আছে সব পুড়িয়ে ফেলছেন। ডাক্তার ঠিক করেছেন প্লেগের সময় সব লাশ পুড়িয়ে দিতে হবে। লাশ থেকেই জীবাণু ছড়াচ্ছে সবচেয়ে বেশি। তাই মৃত্যুর সাথে সাথে লাশ পুড়িয়ে দিতে হবে। সেজন্য এখন চারদিকে আগুন আর আগুন। আলোর নগরী এথেন্স এখন আগুনের নগরী।

ডাক্তারের বুদ্ধিতে কাজ হলো। কদিনেই দেখা গেল প্লেগের প্রকোপ কমতে শুরু করেছে। আবহাওয়াও পরিবর্তন হচ্ছে। তীব্র গরম কমে শীত পড়তে শুরু করেছে। এখানে শীতকালে বৃষ্টি হয়। এক সকালে ধুম বৃষ্টি শুরু হলো। একটানা কয়েক দিন বৃষ্টি। বৃষ্টিতে সারা এথেন্স ভেসে গেল। সেই সাথে ভেসে গেল প্লেগের জীবাণু। বৃষ্টির পরেই প্লেগ কমে গেল। হঠাৎই যেন মানুষ মারা যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। যেরকম ঝুপ করে মহামারী এসেছিল, আবার চলেও গেল হুট করেই। মনে হচ্ছে একটি বিশাল ঝড়ের রাতের পর হঠাৎ আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেছে। মৃত্যু চিৎকারও বন্ধ হয়েছে।

হিপোক্রাটিস হিরো হয়ে গেলেন। তিনিই এথেন্সকে বাঁচালেন স্মরণকালের ভয়াবহতম মহামারী থেকে। এখন তার সম্মান দেবতার কাছাকাছি। ঘরে ঘরে মানুষ বলছে, এই একটি লোকই এথেন্সকে বাঁচিয়েছে। কৃতজ্ঞতার ফল স্বরূপ এথেন্সের সংসদে ডাক্তারকে পুরস্কার দেওয়া হলো। এথেন্সের পক্ষ থেকে সোনার মুকুট পরিয়ে দেওয়া হলো ডাক্তারকে। তাকে এথেন্সের নাগরিকত্ব দেওয়া হলো।

আসপাশিয়া একা বসে কাঁদছেন, সেই তো ডাক্তার এলেন, কিন্তু কয়টা দিন আগে কেন এলেন না? তিনি সময়মতো এলে, পেরিক্লিস বাঁচতেন। আজ প্লেগমুক্ত হয়েছে এথেন্স, আজ তার চেয়ে বেশি খুশি কেউ হতেন না। আসপাশিয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে। তাকে ভরসা দিচ্ছে এলসিবিয়াডিস। সাহস দিচ্ছে। তরুণ ছেলেটি পেরিক্লিসের সংসারের হাল ধরেছে। তার ছেলে পেরিক্লিস নাম্বার টু এখনও অনেক ছোট।

সারা এথেন্সে সক্রেটিসই একমাত্র মানুষ, যে প্লেগে কাবু হয়নি। সক্রেটিস শক্ত-সমর্থ মানুষ। জীবনে কবে জ্বর হয়েছিল, মনে পড়ে না। সে সারা জীবন খালি পায়ে সারা শহরে হেঁটেছে। কোনোদিন আরামের কথা ভাবেনি। রোগ- ব্যাধি তার ধারে কাছে আসে না। প্লেগও আসতে পারেনি। এই প্লেগেও তার শরীর কাবু হয়নি।

লোকজন ফিরতে শুরু করেছে। সক্রেটিস গাধার গাড়ি নিয়ে রওনা হলো ক্রিতোদের আনতে। কিন্তু পথেই দেখল তারা সবাই ফিরে আসছে।

প্লেগ শেষ হয়েছে। এই প্লেগ অনেক কিছু নিয়ে গেছে। নিয়ে গেছে পেরিক্লিসকে। নিয়ে গেছে এথেন্সের সুখের দিন। ফেলে গেছে দুঃখ, কষ্ট, দারিদ্র্য, অশান্তি। মানুষের ঘরে ঘরে দুঃখ। সারা এথেন্সের তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ মারা গেছে। প্রতি ঘরে ঘরেই কেউ না কেউ মারা গেছে। ঘরে ঘরে এখন শুধুই শোকের মাতম।

জেনথিপির বাবা-মা দুজনই মারা গেছেন। ক্রিতোর মা, চেরোফোনের তিন কাকা সবাই মারা গেছেন। শিশুরা প্রায় সবাই মারা গেছে। সক্রেটিস আর জেনথিপির ভাগ্য ভালো। তাদের কোনো সন্তান নেই। ছোট্ট শিশু এই প্লেগে বাঁচতে পারত না।

প্লেগ শেষ হয়েছে, কিন্তু যুদ্ধ শেষ হয়নি। যুদ্ধ এখনও চলছে। স্পার্টা আবার আক্রমণ করেছে। আবার যুবকেরা মারা যাচ্ছে। বয়স্ক আর শিশুরা সব প্লেগে মারা গেছে। এখন যুদ্ধে মারা যাচ্ছে যুবকেরা। এখন এথেন্সে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। অনেক ঘরেই সংসার চালানোর মতো কোনো পুরুষ নেই।

উপায় না পেয়ে নারীরা বের হয়ে আসছে। এখন নারীরা নিজেরা বাজার করে। বাইরে কাজ করে। ব্যবসা করতে শুরু করেছে। আগে শহরের রাস্তায় কোনো মেয়ে দেখা যেত না। প্লেগের পর রাস্তায় অনেক মেয়ে। প্লেগ এথেন্সে নারীদের নিয়ম ভাংতে বাধ্য করেছে। আগে মেয়েরা বাইরে এলে নিন্দা হতো। এখন আর নিন্দা হয় না। সময় নিন্দার মুখে কুলুপ দিয়ে দিয়েছে।

প্লেগের পর এথেন্স বদলে গেছে। মানুষও বদলে গেছে। আইনও বদলাতে হলো।

লোকজন টের পেল তারা মেয়েদের বিয়ে দিতে পারছে না। যুবক ছেলে নেই। ছেলের চেয়ে মেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। এথেন্সে কোনোদিন বহুবিবাহ ছিল না। একজন পুরুষ একটি নারীকেই বিয়ে করতে পারত। সেটি বদলে গেল। আইন করা হলো— এখন থেকে একজন পুরুষ একাধিক মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে।

শহরে শিশুর সংখ্যা দ্রুত বাড়ানো দরকার। তারা আবার নিয়ম করল— স্বামী-স্ত্রী রাজি হলে অন্য পুরুষ বা স্ত্রী দ্বারা সন্তান নিলেও সেটি বৈধ হবে। এসব আইন-কানুনের ফলে খুব তাড়াতাড়ি শহরটা বদলে যাচ্ছে। আগে যেমন সবকিছুতে শৃঙ্খলা ছিল, সেটি এখন কমে গেছে। সমাজ পাল্টে যাচ্ছে। মানুষের মনও পাল্টে যাচ্ছে।

সক্রেটিস ও তার বন্ধুরাও অনেক বদলে গেছে। শহরের বয়স্করা সব মারা যাওয়ায়, তারা এখন এথেন্সের বয়স্কদের কাতারে। তারা মুরুব্বি হয়ে গেছেন। যারা তাদের তুমি করে বলতেন, তারা আর কেউ বেঁচে নেই। এখন যারা আছে, সবাই তাদের আপনি করে বলে। তারা এখন বয়োজ্যেষ্ঠ। প্রবীণের কাতারে তরুণরা তাদের মুরুব্বি জ্ঞান করে, সবাই তাদের আপনি করে বলে। এখন সক্রেটিসদের কথা উঠলে আর কেউ ‘সে’ বলে সম্বোধন করে না। সম্বোধন করে ‘তিনি’।

সক্রেটিসের বিশ্বাস হয় না তিনি প্রবীণ হয়ে যাচ্ছেন। তার এখনও ছেলেমেয়ে হয়নি। এত তাড়াতাড়ি বয়স্ক ভাব আনতে ভালো লাগে না। মনের বয়স তার এখনও বারো কি তেরো। কিন্তু রাস্তায় যখন সবাই তার চেয়ে কম বয়সের, তখন মনের বয়সও বেড়ে যায়। তাকে মেনে নিতে হচ্ছে তিনি এখন প্রবীণ ব্যক্তি।

এই প্লেগ ভয়ংকর প্লেগ জ্ঞানী লোকদের মেরে ফেলেছে। বিদেশ থেকে যেসব সফিস্ট, দার্শনিক বা জ্ঞান-প্রেমিক এথেন্সকে ভরিয়ে তুলতেন, তারা প্লেগের শুরুতেই পালিয়ে গেছেন। জ্ঞানী লোকেরা সাধারণত প্রবীণ হন। প্রবীণরা সব মারা গেছেন। তাই এথেন্সে এখন জ্ঞানী লোকেরও অভাব।

এই জ্ঞানহীন নগরে এখন বাবা-মায়েরা সন্তানকে পড়ানোর জন্য জ্ঞানী লোকদের তালাশ করেন। সক্রেটিসের কাছে ছাত্র পড়ানোর প্রস্তাব আসে। সক্রেটিস সবাইকে পড়ান। কিন্তু একেবারে বিনামূল্যে, কারও বাড়ি গিয়ে নয়। আগের মতোই সিমনের দোকানে, আগোরার পাশে, পথে-প্রান্তরে যেখানে তরুণ যুবকেরা আছে, সেখানেই সক্রেটিস পড়ান। সক্রেটিস এখন শিক্ষক। রাস্তা-ঘাটের শিক্ষক। বেতন ছাড়া বেগার খাটা শিক্ষক। কিন্তু যারা সুন্দর জীবন খোঁজে, তাদের কাছে এই বেগার-খাটা শিক্ষকের দাম অনেক বেশি। তারা সক্রেটিসকে ভালোবাসে। তাকে না পেলে, জ্ঞান-প্রেমিক তরুণদের হাঁসফাঁস লাগে। এখন অনেক তরুণই নিজেকে সক্রেটিসের ছাত্র বলতে গর্ব অনুভব করে।

.

ডাক্তার হিপোক্রাটিস প্রায়ই রাস্তাঘাটে সক্রেটিসকে দেখেন। তারই বয়সী, কিন্তু কথাবার্তায় মনে হয় উঁচু স্তরের। লোকটি প্লেগের মধ্যেও রাস্তায় হেঁটেছেন, ভয়-ডর নেই। সব সময় হাসি-ঠাট্টা মিশিয়ে কথা বলছেন। তার সাথে সব সময় কিছু তরুণ দেখা যায়। তরুণরা তার মস্ত ভক্ত। ডাক্তার ভাবেন, লোকটি কদাকার কিন্তু তাকে লক্ষ না করে পারা যায় না। তার কথার মধ্যে কিছু একটি আছে, যা তাকে অন্যরকম আকর্ষণীয় করেছে। এটি ডাক্তার বোঝেন না, তিনি শরীরের খবর জানেন, মানুষের মনের তালাশ এখনও করেননি।

ডাক্তার তার কথা যেটুকু শুনেছেন ভালোই লেগেছে। আরও শুনতে ইচ্ছা করে। কিন্তু ডাক্তার মহাব্যস্ত, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সক্রেটিসের কথা শোনার সময় তার নেই। তারচেয়ে বড় কথা, ডাক্তার যেখানেই যান, দলে দলে মানুষ তাকে ঘিরে ধরে। তার মতো সেলিব্রেটির পক্ষে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কারও কথা শোনা অসম্ভব।

তবে তিনি জানেন সক্রেটিস তরুণদের সুন্দর জীবনের কথা বলেন, নিজেকে জানতে বলেন। ‘সুন্দর জীবন’ কথাটি তার পছন্দ হয়েছে। সবারই সুন্দর জীবন দরকার। ডাক্তারদেরও দরকার। তিনি সুন্দর জীবনের কথা ভাবেন।

কিন্তু কয়েক দিন ধরে মনে হচ্ছে ডাক্তারদের জীবন সুন্দর নয়, ঘাপলা আছে। ছাত্রদের মধ্যে এলোমেলো ঘটনা দেখছেন। ছাত্ররা কিছু কিছু বাড়িতে ঘন ঘন যেতে চায়, আবার অনেক বাড়ি থেকে লোক এসে বসে থাকলেও যেতে চায় না। খোঁজ নিয়ে দেখলেন, বড়লোকের বাড়িতে যেতে ছাত্রদের খুবই আগ্রহ, কিন্তু তারা গরিব রোগীদের হেলাফেলা করে।

খুব কষ্ট পেলেন ডাক্তার। তিনি মনে করেছিলেন, তার ছোঁয়ায়ই ছাত্ররা বুঝে যাবে যে, চিকিৎসককে সাম্যবাদী হতে হয়। চিকিৎসার জগতে কোনো উঁচু-নিচু নেই। ডাক্তারের চোখে সবাই সমান। কিন্তু ছাত্ররা বোঝেনি। তারা সাম্যবাদী হয়নি। যেখানে বেশি টাকা, সেখানেই ছুটছে।

ডাক্তার ক্ষেপে আগুন হয়ে গেলেন। শ-কার, ব-কার তুলে বকাঝকা করলেন। আর যদি কেউ এমন করে, তাহলে জীবনে আর তার মুখ দেখবেন না বলে সাবধান করলেন। কিন্তু সাবধান বাণীতে কাজ হলো না। এমনিতে সবাই তাকে মানে। তবু মাঝে মাঝে টাকার কাছে হেরে যায়।

ডাক্তার বুঝলেন— চিকিৎসকও তো মানুষ। আজ ওরা ডাক্তারি করছে বলে ওদের মানব চরিত্র রাতারাতি বদলে যাবে না। ওরা মানুষ, মনের কাছেই বন্দি। মনের চারধারে হাজার রকম প্রলোভন, কোনো না কোনো প্রলোভনে মন সাড়া দেবেই। কিন্তু বিষয়টি তাকে ভাবাচ্ছে। চিকিৎসক মানুষের সবচেয়ে কাছাকাছি যায়। মানুষের একান্ত গোপন জিনিস জানতে পারে। সেখানে ডাক্তার খারাপ হলে খুবই বিপদ। ভালো করতে গিয়েই ক্ষতি করা সবচেয়ে সহজ। এই ব্যাপারে তাকে কিছু একটা করতে হবে। তিনিই চিকিৎসা শাস্ত্ৰ সবার জন্য উন্মুক্ত করেছেন। তিনিই প্রথম চিকিৎসা বিদ্যালয় খুলেছেন। তাই নতুন চিকিৎসকরা যাতে নীতিবান হয়, সেটি তাকেই নিশ্চিত করতে হবে।

সক্রেটিস যেরকম সুন্দর জীবনের কথা বলেন চিকিৎসকদের জন্যও তেমনই সুন্দর জীবন দরকার। ন্যায়, নীতি ও সত্যের জীবন দরকার। তাদের জন্যও নিয়ম-কানুন দরকার। সক্রেটিস যদি মানুষের মনের জন্য নিয়ম-কানুন বানান তাহলে হিপোক্রাটিসও ডাক্তারদের জন্য নিয়ম বানাবেন।

কিছুদিন আগে এক বৃদ্ধ তাকে অনেক অনুনয় করে বলছিলেন, ‘ডাক্তার বাবু, প্লেগের যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছি না, এমন একটি ওষুধ দেন যেন আমি এক্ষুনি মরে যাই।’ ডাক্তার বলেছিলেন, ‘যা খেলে আপনি মরে যাবেন, সেটি তো বিষ। চিকিৎসার ধর্ম অনুযায়ী কাউকে বিষ দেওয়া যায় না।’ বৃদ্ধ বলেছিলেন, ‘আমি আর সইতে পারছি না। আমি আপনাকে অনেক টাকা দেব, আমার সব টাকা গোপনে রক্ষিত আছে। সব আপনাকে দেব। শুধু একটি ব্যবস্থা করেন।’ সেদিন বৃদ্ধের কথা শুনে একজন ছাত্রের চোখ চকচক করে উঠেছিল। কিন্তু ডাক্তার বলেছিলেন, ‘আমার কাজ মানুষ বাঁচানো, মানুষ হত্যা নয়। আপনাকে আমি কিছুতেই বিষ দিতে পারব না। দেবতার নিষেধ আছে। তার চেয়ে আসেন, আপনাকে বাঁচাতে চেষ্টা করি।’ ঘরে ফিরলে এক ছাত্র জিজ্ঞেস করেছিল, ‘সত্যি কি দেবতার নিষেধ আছে? উনি তো নিজেই মরতে চাচ্ছেন, আমরা একটু সাহায্য করতেই পারি।’ ছাত্রের কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি, কী বলছে তার ছাত্র! প্রচণ্ড রাগে গর্জন করে বলেছিলেন, ‘নিষেধ আছে। নিষেধ না থাকলেও আজকে থেকে নিষেধ। হিপোক্রাটিসের নিষেধ।’ সেদিন মনে হয়েছিল ওই ছাত্রটি সুযোগ পেলে টাকার জন্য বিষ দিতে দ্বিধা করবে না।

ভালো করে বুঝতে হবে ছাত্ররা কী অনিয়ম করছে। ভালো করে পরখ করতে হবে। ছাত্ররা সব তরুণ ছেলে। এদের জন্য সবার আগে দরকার নারী বিষয়ক পরীক্ষা। পরের দিন তিনি ছাত্রদের খুব সুন্দর কিছু নারী রোগীর কাছে নিয়ে গেলেন। নারী রোগীদের সাথে ছাত্রদের একা ঘরে ছেড়ে দিয়ে নিজে আড়াল থেকে লক্ষ করতে লাগলেন। বেশিরভাগ ছেলেই ভালো আচরণ করছে। তাদের স্পর্শ বা চাহনি স্বাভাবিক। শুধু কয়েকজন দুষ্ট আচরণ করছে। তাদের হাতের ছোঁয়া যেন কেমন কেমন, ঠিক ডাক্তার সুলভ নয়। তাদের মনে কিন্তু আছে।

আর একদিন ডাক্তার দেখলেন, এক তরুণ ছাত্রকে এক বিধবার বাড়ি থেকে ঘন ঘন ডাকতে আসে। সেখানে এতদিনে রোগ সেরে যাওয়ার কথা। কিন্তু তবুও ছাত্রটি সেই বাড়িতে যায়। সেই বাড়ির কথা উঠলে তার ফর্সা গাল টকটকে লাল হয়ে যায়।

হিপোক্রাটিস ভাবছেন, কী করা যায়! আমি কি ভুল করছি? ডাক্তারি বিদ্যা দেবতাদের বংশধরদের কাছ থেকে মুক্ত করে সবার জন্য খুলে দিয়ে কি ভুল করলাম? আগে শুধু ডাক্তারের ছেলেরাই ডাক্তারি শিখতে পারত। তারা নিজেদের দেবতার সন্তান ভাবত। ভুল করতো কম। তাদের সবার বাবার কঠিন শাসন ছিল। একটু স্খলন হলে পরিবারের ভয়াবহ অসম্মান হতো। চিরতরে ডাক্তারি ছেড়ে দিতে বাধ্য হতেন। তখন তাদের পেট চালানোই অসম্ভব হতো। কিন্তু এখন যেকোনো মানুষ ডাক্তার হচ্ছে। তাদের দেবতার ভয় কম। পারিবারিক অনুশাসন নেই। ছোটবেলায় বাবাকে ডাক্তারি করতে দেখেনি। একজন চিকিৎসকের নৈতিক গুণ কী হওয়া উচিত, সেটি ওরা জানে না। সেটি ওদের শেখাতে হবে। নতুন ডাক্তারদের কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়, সেটি অবশ্যই জানাতে হবে। তিনি ডাক্তারদের নৈতিকতার নিয়ম বানাবেন।

তিনি মনে মনে একটি নাটকীয় বুদ্ধি করলেন। এথেন্সে এসে তিনি অনেক নাটক দেখেছেন। এথেন্সের লোকেরা প্লেগের মধ্যেও নাটক করেছে। নাটক দেখে ডাক্তারের মাথায় শুধু প্লট ঘোরে। তার ইচ্ছা হয় একটি নাটক করবেন। সেটি সম্ভব হচ্ছে না। তাই এখন ছাত্রদের দিয়ে একটি খণ্ড নাটক করবেন। তিনি সব ছাত্রকে ডেকে বললেন, আজ বিকেলে আমাদের বিশ্রাম। আমরা কোনো রোগী দেখব না। সবাই আমার সাথে যাবে। আমরা এজিয়ান সাগর পাড়ে বনভোজন করব।

এক ছাত্র বলল, সাগর পাড়ে বনভোজন? তার চেয়ে বলি সমুদ্রভোজন।

দিনটি সুন্দর। বিকেলের আলোয় এজিয়ান সাগর একেবারে শান্ত। কোনো ঢেউ নেই। থমথমে পানিতে নীল আলো যেন ঠিকরে পড়ছে। সেখানে চলছে ডাক্তারদের সমুদ্রভোজন।

হিপোক্রাটিস সুরা বের করলেন। করিন্থ শহর থেকে আনা কড়া মাপের সুরা। ছাত্ররা অবাক। তারা জানে যে হিপোক্রাটিস সকল প্রকার নেশা থেকে হাজার হাত দূরে থাকেন। সুরা তার দু’চক্ষের বিষ। ছাত্ররা কেউ যাতে আসক্ত না হয়, সেজন্য তার কঠিন নির্দেশ আছে। তবু আজ সবকিছু ভুলে ডাক্তার নিজেই সুরা নিয়ে এসেছেন।

ছাত্ররা আহ্লাদে বাকবাকুম। আজ ডাক্তার তাদের দোস্ত হয়ে গেছেন। নিজ হাতে সুরা ঢেলে দিচ্ছেন। বড় বড় মাটির পাত্র কানায় কানায় ভরিয়ে দিচ্ছেন। মনে হচ্ছে ডাক্তারের জন্য আজ বিশ্ব সুরা দিবস। ছাত্ররা খাচ্ছে, আর মাতাল হচ্ছে। ছাত্রদের পা কাঁপছে, কথা জড়িয়ে যাচ্ছে, তখন থামলেন ডাক্তার। এতক্ষণ তিনি ছাত্রদের প্রস্তুত করেছেন। এখন সবাই মাতাল। ঢুলুঢুলু। এবার যা জিজ্ঞেস করবেন, ফরফর করে বলে দেবে। এটিই তার নাটক।

ডাক্তার তাদের সাথে শুরু করলেন হালকা আলাপ। দোস্তের মতো আলাপ। ছাত্ররা বলতে লাগল— কবে কার সাথে কী করেছে। কোন রোগীর সাথে কী হয়েছে। কার কাছে বিষ বিক্রি করেছে। কার গোপন কথা কাকে বলেছে। কত টাকা পেয়েছে। তারা মনের আনন্দে ঝরনার মতো বলছে। কার মনে কী আছে সব বলে দিচ্ছে। কী ভালো কাজ করতে চায় সেটি বলছে। কার ক্ষতি করতে চায় সেটিও বলছে। ডাক্তার ঝড়ের বেগে লিখছেন তাদের ঘটনা।

সূর্য ডুবছে। সাগর এখনও শান্ত। জলে আর নীল নেই, এখন মিষ্টি একটি লালচে লালচে ভাব। সাগরের ঐ পাড়ে ছোট্ট দুটি পাহাড়। দুই পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে ধীরে ধীরে জলে ডুবে যাচ্ছে টকটকে লাল সূর্য। একটি নরম আলো ভেসে আসছে সাগর থেকে। ঘরে ফিরছে এক ঝাঁক সাদা পাখি। এমন জায়গায় কিছুক্ষণ থাকলে মন ভিজে ওঠে। ছাত্রদের মন ভিজে গেছে। ভেজা মনে ছুরি চালিয়ে মনের সব কথা বের করছেন ডাক্তার। ছাত্ররা বুঝতেও পারছে না যে, এই ঘোরলাগা সন্ধ্যায় তাদের মাতাল করে কী করছেন হিপোক্রাটিস।

তারা বুঝতে পারল পরদিন সকালে। সারা রাত হিপোক্রাটিস কাজ করেছেন। খুব ভোরেই সবাইকে ডেকে তিনি বললেন, ওঠো, এটি দেখো।

একটি পেপিরাসের টুকরায় কয়েক লাইন লেখা। লেখার শিরোনাম— ‘চিকিৎসা বিদ্যার শপথ’[৯৯]। শুরুটা এমন :

আমি এপোলো, এসক্লিপিয়াসসহ সকল দেবদেবীর নামে শপথ করে বলছি, আমি আমার যোগ্যতা ও বিচার বিবেচনা অনুযায়ী এই শপথ মেনে চলব।

হিপোক্রাটিস বললেন, প্রত্যেকে একটি করে শপথ পড়ো।

ছাত্ররা ভয় পেয়ে ভাবছে, এটি মনে হয় আর একটি নাটক। ওস্তাদ ইদানীং প্রতিবেলা নাটক করছেন।

একজন প্রথম বাক্য পড়ল : চিকিৎসা বিষয়ে আমি রোগীর যা কিছু শুনি বা দেখি তা সম্পূর্ণরূপে গোপন রাখব। কারও ব্যক্তিগত কোনো তথ্য প্রকাশ করব না এবং সবকিছু পবিত্র গোপনীয় বলে মান্য করব।

এটি শুনে একজন মুচকি হাসি দিল। তার স্বভাব হলো রোগীদের কথা হরহর করে বলে দেওয়া। সে ভাবছে, ওস্তাদ মনে হয় আমার কথা মনে করেই এটি লিখেছেন। তার ভয় ভয় লাগছে।

আরেকজন দ্বিতীয় বাক্য পড়ছে : আমি শুধু চিকিৎসা সেবার উদ্দেশ্যেই কারও গৃহে প্রবেশ করব, অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয় এবং অবশ্যই সব ধরনের ইচ্ছাকৃত ক্ষতিসাধন থেকে বিরত থাকব; বিশেষত কোনো নর-নারীকে কখনই শারীরিকভাবে অপব্যবহার করব না।

এটি পড়ে প্রেমিক ছাত্রদের মাথায় হাত। ওস্তাদ তাদের মন পড়ে ফেলেছেন।

আরেকজন পড়ছে : আমি আমার চিকিৎসা বিদ্যা শুধুই অসুস্থ মানুষকে ভালো করার জন্য কাজে লাগাব, কখনই কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে কাজে লাগাব না। কোনো অবস্থায়ই আমি কাউকে বিষ প্রদান করব না। কোনো নারীকে এমন কিছু দেব না যাতে তার গর্ভপাত হতে পারে।

এভাবে একে একে অনেকগুলো শপথ পড়ল ছাত্ররা। তাদের মুখ কাঁচুমাচু। মনে হচ্ছে তারা সবাই অপরাধী। অপমানিত লাগছে। মনে হচ্ছে আমরা সবাই চোর। সেজন্য এমন করে বলতে হবে। ওস্তাদ খুব জটিল নাটক করল। তাদের মুখ দেখে মায়া লাগল হিপোক্রাটিসের। এরা তার সবচেয়ে ভালো ছাত্র। বাছাই করে এনেছেন এথেন্সে।

তিনি বললেন, শপথ পড়ে কী মনে হচ্ছে?

সবাই চুপ। কেউ কিছু বলতে সাহস পাচ্ছে না।

ডাক্তার বললেন, কিছু একটা বলো। ভয় নেই।

একজন মিনমিন করে বলল, নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।

‘আর কার কী মনে হচ্ছে?’

আর একজন বলল, কাল বিকেলে আমরা যা বলেছি, তার জন্য দুঃখিত। তখন আমাদের হুঁশ ছিল না। আমরা ভুল করেছি।

ডাক্তার বললেন, তোমরা সবাই নির্ভয়ে বসো। তোমরা কেউ চোর নও। তোমাদের বকা দেওয়ার জন্য এটি লিখিনি। ভালো করে শিরোনাম দ্যাখো। কী লেখা আছে?

ছাত্ররা পড়ল, ‘চিকিৎসা বিদ্যার শপথ’

‘এটি হলো সব চিকিৎসকদের জন্য শপথ। এটি তোমার আমার ব্যক্তিগত কিছু নয়। কালকে সমুদ্রভোজনের নামে আমরা একটি নাটক করেছি। তাতে তোমাদের গোপন কথা আমি জেনে গেছি। কিন্তু সেটি গোপনই থাকবে। দেখো, শপথে আছে— রোগীর গোপন তথ্য কাউকে বলা যাবে না।’

ছাত্রদের মনে সাহস ফিরে এলো। তারা একে অন্যের মুখে তাকাচ্ছে।

এরপর ডাক্তার তার ডাক্তারি জীবনের কিছু ঘটনা বললেন। তিনি বললেন, চিকিৎসা হলো জীবন নিয়ে কারবার। মানুষের নাড়ির খবর নেওয়া, হাঁড়ির খবর নেওয়া। চিকিৎসকরা যদি অসৎ হন, সেটি হবে ভয়ংকর। তাই একটি নিয়ম লাগবে। আমরা সবাই দেবতাদের কাছে এই শপথ নিয়ে চিকিৎসা করতে বের হব। অক্ষরে অক্ষরে মানব এই শপথ।

ছাত্ররা মুগ্ধ হয়ে শুনছে। তাদের খুব ভালো লাগছে। বড় ডাক্তার এথেন্সে এসে ভাষণ দেওয়া শিখে গেছেন। এথেন্সে নেতারা ছুতানাতায় ভাষণ শুরু করে। কিছুদিন এখানে থাকলে আর কিছু শিখুক আর নাই শিখুক, ভাষণ যে শিখবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

ছাত্রদের ভয় কেটে যাচ্ছে। তারা বুঝতে পারছে, ওস্তাদ আরেকবার সত্যিকার ওস্তাদের মতো কাজ করেছেন। যেভাবে তিনি দেবতাদের বাদ দিয়ে রোগ নির্ণয়ে রোগীর দেহ নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন, যেভাবে সবার জন্য চিকিৎসা বিদ্যালয় করেছেন, সেভাবেই আর একটি বিশাল কাজ করলেন। তিনি চিকিৎসকদের নৈতিকতা ধরে রাখতে একটি শপথ লিখে ফেলেছেন।

একজন ছাত্র বলল, আমার মনে হয়, এই শপথের নাম হোক ‘হিপোক্রাটিক শপথ’

সবাই আনন্দে হৈ হৈ করে উঠল। এর চেয়ে ভালো নাম আর হতে পারে না। একজন বলল, এই শপথ সবার ঘরে ঝুলিয়ে রাখব। আরেকজন বলল, আমাদের হাসপাতালের সামনে পাথরে খোদাই করে দেব।

ডাক্তার বললেন, সবই করা যাবে, আগে শপথ চূড়ান্ত হোক।

‘মানে কী? এটি চূড়ান্ত নয়?’

‘মনে হয় না। তোমরা সবাই ভাবো। আর কী যোগ করা যায়। দেশে ফিরে অন্য ডাক্তারদের কথা শুনব। সবার মতামত নিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় চূড়ান্ত করব। আমরা এমন একটি শপথ বানাব, যেটি সারা দুনিয়ার ডাক্তাররা মেনে চলবে। যেদিন পাস করে বের হবে, সেদিন এই শপথ নিয়েই তারা কাজে নামবে।

তিনি আবার বললেন, আর একটি কাজ করতে হবে। ডাক্তারদের জন্য আইন বানাতে হবে। সবাই কাজ শুরু করো। সবাই লিখতে থাকো। আমরা একসাথে চিকিৎসা শাস্ত্রের আইন তৈরি করব।

এক ছাত্র বলল, আমার মাথায় একটি কথা এসেছে। আমি ছিলাম এক গরিবের ছেলে। কোনোদিন ভাবিনি যে, জীবনে ভালো কিছু করতে পারব। আপনি আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন। আমাকে ডাক্তার বানাচ্ছেন। আমরা আমাদের শপথে আপনার জন্য কিছু রাখতে চাই। আমরা আপনার কাছে সারা জীবন যাতে কৃতজ্ঞ থাকি, সেরকম কিছু আমাদের শপথে রাখতে চাই।

হিপোক্রাটিস কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন, ঠিকই বলেছ। শপথে শিক্ষকদের বিষয়ে কিছু রাখা উচিত। তোমরা আমার কথা বলছো, কারণ এখন আর কোনো শিক্ষক নেই। আমি একাই শিক্ষক। কিছুদিন পরে তোমরাই শিক্ষক হবে। তোমরা শত শত ছেলেমেয়েকে ডাক্তার বানাবে। শপথে শিক্ষকদের নিয়ে কিছু যুক্ত করতে হবে।

যে ছাত্রটি শিক্ষকের কথা প্রস্তাব করেছিল সে বলল, আমি একটি লাইন বলতে চাই, ‘আমার শিক্ষককে আমি নিজের পিতা মনে করব এবং তার পরিবারকে নিজের পরিবার বলে ভাবব। ‘

হিপোক্রাটিস ছাত্রটির দিকে ভালো করে তাকালেন। এই ছেলেটি তাকে বাবা বলছে। তার চোখ ছলছল করে উঠল। তার নিজের বাবার কথা মনে পড়ল। নিজের ছেলের কথাও মনে পড়ল। হিপোক্রাটিস সম্প্রতি বিবাহ করেছেন। তার একটি শিশু সন্তান আছে। তার মনে হচ্ছে জীবনটা একেবারে মন্দ নয়। অনেকগুলো ছেলে তার কাছে চিকিৎসাবিদ্যা শিখছে। তারা তাকে নিজের পিতার মতো দেখছে। তার কষ্ট সার্থক হয়েছে।

ডাক্তারদের মাঝে একটি আবেগের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবাই অনেক দিন ধরে দূরে আছে। সবার নিজের পরিবারের কথা মনে পড়ছে।

তারা এথেন্স ছেড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করল।

***

৯৯. এটি চিকিৎসকদের Hippocratic Oath, এখনও সারা পৃথিবীর চিকিৎসকগণ এই শপথটি গ্রহণ করেন। বিভিন্ন দেশে মূল থিম ঠিক রেখে শপথের ভাষাটি পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *