1 of 2

হেমলকের নিমন্ত্রণ – ১৭

১৭

‘নিজের কাছে জিততে পারাই জীবনের সবচেয়ে বড় জয়।’

–ডিমোক্রিটাস

***

সক্রেটিসের নাট্যকার বন্ধু ইউরিপিডিস যতই ভালো নাটক লিখুক, সে কখনো প্রথম হতে পারে না। সব সময় প্রথম হন আরেক জন। সে ইউরিপিডিসের জীবনের অভিশাপ। তার জীবনের নেমেসিস। ইউরিপিডিসের নেমেসিস মহাপ্রতিভাধর এই নাট্যকারের নাম সফোক্লিস[৫৩]।

তার বাড়ি এথেন্সের কলোনাস মহল্লায়। আগোরা থেকে চার কিলোমিটার উত্তরে। গত কয়েক বছর ধরে তিনি যা লিখছেন, তাতেই মানুষ মোহিত হচ্ছে। হোমারের পরে তিনিই এখন সেরা সাহিত্যিক। শুধু লেখাই নয়, তার গানের গলা এত মিষ্টি যে, মনে হয় মধু ঝরছে। সেজন্য লোকে তাকে বলে এথেন্সের মধুকর।

সফোক্লিস লিখতে বসেছেন। তার লেখার কায়দা-কানুন খুবই বাহারি। মাথায় যা আসে পটাপট লিখে ফেলেন। তারপর শুরু করেন সেটুকুর অভিনয়। চিৎকার করে হাসতে হাসতে, কাঁদতে কাঁদতে অভিনয়। অভিনয়ের শব্দে লোক ভিড় করে। রাস্তার মানুষ ভাবে তার বাড়িতে ঝগড়া লেগেছে। লোক দাঁড়িয়ে যায়, ঘরে উঁকিঝুঁকি দেয়। একটু শুনেই বুঝে যায়, এত মিষ্টি গলায় কেউ চেঁচামেচি করে না। এই মধুর গলা এথেন্সের মধুকর সফোক্লিসের। তিনি লিখছেন আর অভিনয় করছেন। তিনি লিখতে বসলেই চারদিকে ডাক পড়ে যায়। রাস্তা দিয়ে লোক যায়, আর বলে, বুঝেছি নাট্যকার লিখতে বসেছেন। দুনিয়ার সবচেয়ে বড় নাটকবিদ কলম হাতে নিয়েছেন।

সফোক্লিসের জীবনে একটিই নেশা। সেটি হলো পুরস্কারের নেশা। তিনি প্রতি বছর বসন্ত অনুষ্ঠানে প্রথম, না হলে দ্বিতীয় হন। জীবনে কোনোদিন তৃতীয় হননি। কিছুদিন পুরস্কার না পেলেই তার মনে হয়, লোকে বুঝি তাকে ভুলে গেছে। লোকে যাতে ভুলতে না পারে সেই নেশায় তিনি দিন-রাত লেখেন।

এবার লিখছেন থিবস শহরের রাজার কাহিনি। এথেন্স থেকে ষাট মাইল উত্তর-পশ্চিমে থিবস শহর। এই শহরের পুরনো এক রাজার নাম ইদিপাস ইদিপাসের পরিবারের করুণ কাহিনি সারা পৃথিবীর মানুষের মুখে মুখে। কাহিনিটি ভালো করে বুঝতে সফোক্লিস কদিন আগে থিবস ঘুরে এসেছেন। কাহিনিটি এরকম-

থিবসের রাজপুত্র ইদিপাস না জেনে নিজের বাবাকে হত্যা করে রাজা হয় এবং নিজের মাকে বিয়ে করে ফেলে। তাদের ছেলেমেয়েও হয়। অনেক বছর পরে সত্য পরিচয় জানতে পেরে অনুতাপে ইদিপাস নিজেই অন্ধ হয়ে যায়। তার মা আত্মহত্যা করে। তাদের সন্তানদের সবাই বলে অভিশপ্ত। সন্তানদের জীবনও হয়ে ওঠে ভীষণ করুণ।

এই কাহিনি নিয়ে সফোক্লিস নাটক লিখছেন। নাটকের কাহিনি সবাই জানে। তিনি কাহিনি পাল্টাবেন না। কিন্তু প্লট সাজাচ্ছেন অতি নাটকীয় করে। তিনি নাটকের থিম ঠিক করলেন, মানুষ নিয়তির হাতের পুতুল। ট্র্যাজেডির জন্য খুবই সুন্দর থিম। ইদিপাস রাজা হয়েও নিয়তিকে ঠেকাতে পারেননি। ভাগ্য ইদিপাসকে নিয়ে খেলেছে। পৃথিবীতে সব মানুষই ভাগ্যের হাতের খেলনা। সবার জীবনেই ইদিপাসের মতো খারাপ সময় আসে, যার উপর মানুষের কোনো হাত থাকে না। তাই নিজের ওপর গর্ব করে লাভ নেই, মানুষের অহংকার করার কিছুই নেই। ভাগ্য মানুষকে নিয়ে যেভাবে খুশি খেলতে পারে।

সফোক্লিস একটু লিখছেন আর অভিনয় করছেন। হঠাৎ মনে হলো ধুর্, এই কাহিনি চলবে না। এই সময়ে মানুষ এই কাহিনি গ্রহণ করবে না। এখন এথেন্সে গণতন্ত্রের সুসময় চলছে। গণতন্ত্রের নেতা পেরিক্লিস সবাইকে শিখাচ্ছেন— ‘আমাদের ভাগ্য আমাদের নিজেদের হাতে। আমরা নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য বানাব। নিজেদের চেষ্টায় এথেন্সকে পৃথিবীর এক নম্বর বানাব।’ এখন সবাই গণতন্ত্র আর নিজের ক্ষমতার ওপর বিশ্বাসী। এই সময়ে ভাগ্যের হাতে ইদিপাসের এমন পরিণতি মানুষ পছন্দ করবে না।

নতুন কিছু লিখতে হবে। কিন্তু ইদিপাসের কাহিনি সফোক্লিসের এত পছন্দ যে এটি বাদ দিতে তার বুকে চিনচিন ব্যথা লাগছে। নতুন কিছু লেখা তার জন্য কোনো ব্যাপার না। কিন্তু মনে হচ্ছে এটি না লিখলে মৃত রাজা ইদিপাস খুব রাগ করবে। আজ রাতে ইদিপাস তাকে ফিসফিস করে বলবে, ছিঃ ছিঃ, সফোক্লিস। এই ছিল তোর মনে? তুই তো লোক সুবিধার না

মন ঠিক করতে পারছেন না সফোক্লিস। বাড়ির বাইরের দিকে জলপাই বাগানে গেলেন। অনেকক্ষণ চুপচাপ ভাবছেন। হঠাৎ দেখলেন— বাগানের পেছনের রাস্তা দিয়ে একদল লোক একটি লাশ নিয়ে যাচ্ছে।

সফোক্লিস জিজ্ঞেস করলেন, কার লাশ?

সামনের লোকটি উত্তর দিল, কার লাশ জানি না। ঐ পেনতিলিস পাহাড়ের ধারে পড়ে ছিল। লাশ নিয়ে ঝামেলায় পড়ে গেছি গো। মরা দেহ তো ফেলে রাখা যাবে না, দেবতারা ক্ষেপে যাবে, পাপ হবে। তাই দাফন দিতে নিয়ে যাচ্ছি।

সফোক্লিস চিৎকার করে উঠলেন, ‘পেয়ে গেছি, পেয়ে গেছি।’ এটি তার ইউরেকা মুহূর্ত। ইদিপাসের কাহিনিতে তার ছেলেমেয়েদের লাশ দাফনের কথা আছে। সেই কাহিনিও খুবই করুণ। লাশ নিয়ে কাহিনি লোকে পছন্দ করবে। এটি লিখে ফেলা যায়। এক্ষুনি লিখতে হবে। না হলে মাথা থেকে ছুটে যাবে। তিনি নাচতে নাচতে ঘরের দিকে দৌড় দিলেন।

লাশ বহনকারী লোকেরা অবাক। সফোক্লিসের কী হলো? একজন বলল, কাণ্ডটা দেখেছ! একটি লাশ দেখে এমন ভয় পেল? এক দৌড়ে ঘরে ঢুকে গেল! পাশের লোক বলল, ভয় কোথায় দেখলে? সে তো আনন্দে তিড়িং বিড়িং করছে। লাশ দেখে নাচাপিচা করছে। ওনার আর পাগল হতে বেশি দিন লাগবে না।

পাগলের মতোই করছিলেন সফোক্লিস। তিনি পেপিরাস কাগজ নিয়ে বসলেন। ফটাফট লিখতে শুরু করলেন নতুন নাটক। নাম এন্টিগনি[৫৪]।

এন্টিগনি রাজা ইদিপাসের মেয়ে। ইদিপাস অন্ধ হয়ে দূরে চলে গেছে। রাজা হয়েছে তার শ্যালক ক্রিয়ন। ক্রিয়নের কুবুদ্ধিতে ইদিপাসের দুই ছেলে নিজেরা ঝগড়া করে করে দুজনেই মারা যায়। তাদের একজন ক্রিয়নের পক্ষে ছিল। তার দেহ দাফন করা হলো। অন্য জন ছিল ক্রিয়নের বিপক্ষে। ক্রিয়ন আদেশ দিল বিপক্ষের ছেলের কোনো সৎকার হবে না। তার লাশ শিয়াল- কুকুরে খাবে। কিন্তু রুখে দাঁড়াল এন্টিগনি। সে ভাইয়ের লাশ কবর দেবে। সে ক্রিয়নের আদেশ মানবে না। সে দেবতার আদেশ মানবে। দেবতারা সবার লাশ সৎকারের নির্দেশ দিয়েছেন। এন্টিগনি রাতের আঁধারে ভাইকে কবর দিল। সেই অপরাধে ক্রিয়ন এন্টিগনির মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করল। ক্রিয়নের একমাত্র ছেলে ক্রিয়নকে বোঝাতে অনেক চেষ্টা করল। কিন্তু ক্রিয়ন কারও কথা শুনল না। মৃত্যুদণ্ড হবেই। কিন্তু দণ্ডের আগেই এন্টিগনি আত্মহত্যা করল। সেই সাথে আত্মহত্যা করল ক্রিয়নের একমাত্র ছেলে। ছেলেটি এন্টিগনিকে ভালোবাসত। ছেলের শোকে আত্মহত্যা করল ক্রিয়নের স্ত্রী। ক্রিয়ন দেখল, দুনিয়ায় তার আর আপন কেউ নেই। অন্যায়ের শাস্তি হাতেনাতে পেয়েছে ক্রিয়ন।

ঝড়ের মতো লিখছেন সফোক্লিস। এটি কাহিনির মতো কাহিনি। এই নাটক জনপ্রিয় হবেই। তিনি নাটকে দেখাবেন, ক্রিয়ন একজন একনায়ক, একজন স্বৈরাচার। একনায়করা ভীষণ অহংকারী। এই অহংকারকে গ্রিকরা বলে হুব্রিস। হুব্রিসের কারণে একনায়করা কাউকে মানে না। কারও কথা রাখে না। তাদের পরিণতি হয় ভয়াবহ। এথেন্সের মানুষ একনায়কের পতন মারাত্মক পছন্দ করবে। নাটক দেখে তারা বলবে— ছিঃ ছিঃ ছিঃ! একনায়করা এত জঘন্য! আর আমাদের গণতন্ত্র দ্যাখো, গণতন্ত্রের মতো ভালো জিনিস আর কিছু আছে নাকি? তিনি সংলাপ লিখলেন, যে নগরে মাত্র একজনের শাসন চলে, সেটি কোনো নগরই নয়।

সংলাপটি তার পছন্দ হয়েছে। এই সংলাপে অনেক হাততালি পাবে। তবু আরও ভালো করে একটু বলা দরকার। ক্রিয়ন নিজেকে সংশোধনের কোনো চেষ্টাই করেনি। সে একটি গোঁয়ার, এক নম্বরের অহংকারী।

সফোক্লিস লিখলেন, মানুষমাত্রই ভুল করে, কিন্তু যে মানুষ ভুল বুঝতে পারামাত্র সংশোধন করে, সেই হলো ভালো মানুষ। মানুষের একমাত্র অপরাধ হলো অহংকার।

সফোক্লিস দেবতাদের নিয়ে ঠাট্টা করেন না। তিনি মনে করেন— দেবতারা অলিম্পাস পাহাড়ে বসে আরাম করছে। শুধু শুধু তাদের রাগানোর কী দরকার। তিনি দেবতাদের নামে ভালো ভালো কথা লিখেন। দেবতাদের নিয়ে উল্টা-পাল্টা লিখে এথেন্সের নাট্যগুরু এস্কিলাসের করুণ পরিণতির কথা তার মনে আছে। এথেন্সের মানুষ নিজে ধর্ম পালন করুক আর নাই করুক, অন্য কেউ দেবতাদের নিয়ে কিছু বলেছে তো তার অবস্থা কেরোসিন করে দেবে। তাই সফোক্লিস কাউকে চটান না।

তিনি এন্টিগনির মুখে সংলাপ দিলেন, ‘মানুষের আইনের চেয়ে দেবতার আইন বড়।’ এই সংলাপটিও তার পছন্দ হলো। মঞ্চে দাঁড়িয়ে টনটনে গলায় বলে ফেলা যায়। দর্শক ফিদা হয়ে যাবে। নাটক জমে ক্ষীর হয়ে যাবে। তবে একটি সমস্যা হয়েছে। এই নাটক লিখতে গিয়ে কিছু কিছু জায়গায় আর একজনের মতো কথা চলে আসছে। তার নাম হেরোডোটাস। হেরোডোটাস খুব সুন্দর গল্প বলে। সেই গল্প তার মাথায় ঢুকে গেছে। মাথা থেকে সেই গল্প কলমে চলে আসছে। বড় ঝামেলা করছে। বারবার কাটতে হচ্ছে।

সফোক্লিস সামোস দ্বীপে গিয়েছিলেন যুদ্ধে। সেখানে দেখা হয়েছে হেরোডোটাসের সাথে। ছেলেটির গল্প শুনে তিনি এত মুগ্ধ হয়েছিলেন, রোজ তাকে ডাকতেন। সে এথেন্সের গল্প বড় মিষ্টি করে বলে। সেটিই এখন কাল হয়েছে। নাটক লিখতে বসে তার মতো সংলাপ চলে আসছে।

সফোক্লিস হেরোডোটাসকে এথেন্সে আসার নিমন্ত্রণ করে এসেছেন। তার গল্প এথেন্সের মানুষ ভীষণ পছন্দ করবে। সফোক্লিস ভাবছেন হেরোডোটাস বই লিখতে গিয়ে আবার নাটক লিখে ফেলবে না তো? হেরোডোটাস নাটক লিখলে, সফোক্লিস ঝামেলায় পড়বে। এক নম্বর নাট্যকারের জায়গা নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে। তবে আশার কথা হলো, হেরোডোটাস মনে হয় নাটক লিখবে না। সে বানানো কাহিনি পছন্দ করে না, সে সত্য কাহিনি লিখবে। সে নতুন কিছু করবে। যেটি পৃথিবীতে কেউ করেনি, সেটিই করবে হেরোডোটাস। সফোক্লিস ভাবছে, সেটিই ভালো। নাটকের যে মাধুর্য, সেটি হেরোডোটাস না বুঝলেই ভালো। নাটকে এমন করে মানুষের কথা বলা যায়, যেন মানুষ সেখানে নিজেকে দেখতে পায়। প্রত্যেক মানুষ নিজেকে নায়ক ভাবতে পারে। এই কাজে সফোক্লিসই এক নম্বর। পৃথিবীতে তার সামনে দাঁড়ানোর কেউ নেই। হেরোডোটাস চুলায় যাক, সফোক্লিসকে নাটক শেষ করতে হবে। তিনি ঝড়ের বেগে লিখতে শুরু করলেন।

নাটক দাঁড়িয়ে গেছে। সফোক্লিস খুশি। চমৎকার প্লট। রক্ত, খুন, মারামারি, শাস্তি, দেবতা, গণতন্ত্র সবই আছে। নাটকের শেষটাও চমৎকার। গ্রিক ট্র্যাজেডির সব মশলা দেওয়া হয়ে গেছে। শুধু ভালোবাসার কথায় একটু ঘাটতি আছে মনে হয়। ভালোবাসা ছাড়া ট্র্যাজেডি হয় নাকি? ভালোবাসা ছাড়া কাহিনিই হয় না।

সফোক্লিস এন্টিগনির মুখে সংলাপ দিলেন,

আমি পৃথিবীতে এসেছি শুধুই ভালোবাসার জন্য, কখনই ঘৃণা করার জন্য নয়।

লিখেই চমকে উঠলেন সফোক্লিস। এর চেয়ে ভালো কথা কি হোমারও লিখতে পেরেছেন? জানালার সামনে দাঁড়িয়ে তিনবার অভিনয় করে বললেন, ‘আমি পৃথিবীতে এসেছি শুধুই ভালোবাসার জন্য, কখনই ঘৃণা করার জন্য নয়।’ থরথর করে কাঁপছেন সফোক্লিস। এরকম একটি কথা লিখে মরে যাওয়া যায়। তার মনে হচ্ছে, সেই প্রথম নাটক লিখে যেমন রোমাঞ্চ লেগেছিল, আজ আবার সেরকম লাগছে। এটিই হবে তার সেরা নাটক।

এই সেরা লেখাটিকে খুবই যত্ন করে অভিনয় করতে হবে। কোনো রকম ফাঁক রাখা যাবে না। সফোক্লিস ভাবছেন, শুধু দুজন অভিনেতা এই নাটক জমাতে পারবে না। ট্র্যাজেডিতে এখন পর্যন্ত মাত্র দুইজন অভিনেতা থাকে, আর সাথে কয়েকজন কোরাস গায়। নাট্যগুরু এস্কিলাস এই নিয়ম করে গেছেন। এখনও সবাই সেটিই করে। সফোক্লিস ভাবছেন শুধু দুইজনে হবে না। কম করে হলেও তিনজন লাগবে। সফোক্লিস সিদ্ধান্ত নিলেন, এই নাটক থেকেই আমার নাটকে তিনজন করে অভিনেতা থাকবে।

আরও নতুন একটি কাজ করলেন সফোক্লিস। তিনি ছবি আঁকতে বসে গেলেন। নাটকের দৃশ্য আঁকতে লাগলেন। মঞ্চের পেছনে পর্দা দিয়ে ছবি থাকবে। প্রতিটি দৃশ্যের জন্য আলাদা আলাদা ছবি। ঘটনা কোথায় হচ্ছে সেটি ছবি দিয়ে বুঝিয়ে দেবেন। এটিও তার আবিষ্কার। এর আগে কেউ দৃশ্যের জন্য ছবি আঁকেনি।

সফোক্লিসের মন অনেক খুশি। চমৎকার একটি নাটক লিখেছেন। নতুন নতুন কায়দা-কানুন, দৃশ্য এসব নিয়ে এবার মঞ্চে উঠবেন তিনি। এবার আর প্রথম হওয়া আটকায় কে? এখন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন ইউরিপিডিস। ছেলেটা তার চেয়ে পনেরো বছরের ছোট। ছেলেটা লিখে ভালো, কিন্তু রক্ত গরম। খালি গরম গরম কথা লিখে। সে দেবতা মানে না। সে শুধু মানুষের কথা লিখে। ইউরিপিডিস নাকি আজকাল সক্রেটিসের সাথে চলে। সক্রেটিস যেমন সবকিছুতে মানুষের কথা বলে, তেমনই ইউরিপিডিসও নাটকের মঞ্চে উঠে দেবতাদের কথা বাদ দিয়ে শুধু মানুষের কথা বলে। মঞ্চে উঠে নাটক না করে জ্ঞানের কথা বলে, দর্শনের আলাপ করে। লোকে ঠাট্টা করে বলে সক্রেটিস হলো রাস্তা-ঘাটের দার্শনিক আর ইউরিপিডিস হলো রঙ্গমঞ্চের দার্শনিক। দুজনেই বেহুদা লাফায়। সফোক্লিস তাদের লাফালাফি মনে করে হাসলেন। তার নাটক লেখা হয়ে গেছে। এবার দুই চ্যাংড়া লাফাতে থাকুক। সক্রেটিস রাস্তায়, ইউরিপিডিস থিয়েটারে।

***

৫৩. সফোক্লিস (Sophocles, 496 – 406 BC), এথেন্সের সেরা ট্র্যাজেডিয়ান এবং নাট্যকার।

৫৪. সফোক্লিসের নাটক এন্টিগনি (Antigone) খ্রি.পূ. ৪৪১ অব্দে মঞ্চস্থ হয়। এই বইয়ে যেখানেই সফোক্লিসের তিনটি নাটক রাজা ইদিপাস, এন্টিগনি বা ইদিপাস কলোনাসে অনুবাদ দরকার হয়েছে, আমি Robert Fagles এর ইংরেজি অনুবাদ (The Three Theban Plays) থেকে বাংলা করেছি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *