হরিতালী তৃতীয়া ব্ৰত মাহাত্ম্য

।। হরিতালী তৃতীয়া ব্ৰতস্য মাহাত্ম্য।।

শুক্লে ভাদ্রপদস্যৈব তৃতীয়ায়াং সমচয়েৎ। সর্বধান্যেস্তাং বিরুঢ়াং ভূতাং হরিতশাদ্বলাম্। হরকালীং দেবদেবীং গৌরীং শংকরবল্লভাম্।।১।। গন্ধৈঃ পুষ্পৈঃ ফলৈধূপৈনৈবেদ্যৈমোদকাদিভিঃ। প্রীণয়িত্বা সমাচ্ছাদ্য পখরাগেন ভাস্বতা।।২।। ঘন্টাবাদ্যাদিভিগীতৈঃ শুভৈদিব্যকথানুগৈঃ। কৃত্বা জাগরণং রাত্রৌ প্রভাতে হ্যদ্‌গতে রবৌ।।৩।। সুবাসিনীভিঃ সা নেয়া মধ্যে পুন্যজলাশয়ে। তস্মিন্ বিসর্জয়েৎ পার্থ হরকালীং হরিপ্রিয়ম্।।৪।। ভগবন্ হরকালীতি কা দেবী প্রোচ্যতে ভূবি। আর্দ্রধান্যৈঃ স্থিতা কস্মাৎ পূজ্যতে স্ত্রীজননে সা। পূজিতা কিং দদাতীহ সর্বং মে ব্রৃহি কেশব।।৫।।

।। হরিতালী তৃতীয়া ব্রত মাহাত্ম্য।।

শ্রীকৃষ্ণ বললেন, ভাদ্রপদ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে বিরুঢ়ভূতা হরিতশাদ্বলার ধ্যানপূর্বক অর্চনা করবে। হরকালী- দেবদেবী গৌরী-শংকরবল্লভা তিনিই। গন্ধ-পুষ্প-ফল-ধূপাদি–মোদক ইত্যাদি দ্বারা দেবীকে প্রসন্ন করে তথা ভাসমান পদ্মরাগ দ্বারা সমাচ্ছাদন করবে। ঘন্টা-বাদ্য প্রভৃতি গীত দ্বারা শুভ ও দিব্য কথানুগ দ্বারা রাত্রি জাগরণ করতে হবে। প্রভাতকালে সুবাসিনিগণের দ্বারা পুণ্য জলাশয়ে বিসর্জন করবে।।১-৪।।

যুধিষ্ঠির বললেন, হে ভগবান্, এই ভূমন্ডলে হরকালী কে? আর্দ্রধান্যস্থিতা স্ত্রীগণের দ্বারা কি পূজিতা হন? হে কেশব তুমি আমাকে বল, যদি তিনি পূজিতা হন তাহলে তিনি কিরূপে পূজিতা হন। ৫।।

সর্বপাপহরাং দিব্যাং মত্তঃ শৃণু কথামিমাম্। আসীদ্ দক্ষস্য দুহিতা কালীনাম্নী তু কন্যকা।।৬।। বর্ণেনাপি চ সা কৃষ্ণা নবনীলোৎপলপ্রভা। সা চ দত্তা এ্যম্বকায় মহাদেবায় শূলিনে।।৭।। বিবাহিতা বিধানেন শংখতূমানুনাদিনা। যৎকুৰ্মাদাগতৈদেবৈব্ৰাহ্মণানাং চ নিস্বনৈঃ।।৮।। নির্বর্তিন্তে বিবাহে তু তয়া সার্ধং ত্রিলোচনঃ। ক্রীড়তে বিবিধৈর্ভোগৈমনসঃ প্রীতিবর্ধনৈঃ।।৯।। অথ দেবসমানস্তু কদাচিৎস বৃষধ্বজঃ। আস্থানমন্ডপে রম্যে আস্তে বিষ্ণুসহায়বান্।।১০।। তত্রস্থশ্চাহ্বায়মাস নর্মণা ত্রিপুরান্তকঃ। কালীং নীলোৎপলশ্যামাং গণমাতৃগণাবৃতাম্।।১১।। এহ্যেহি ত্বসিতঃ কাসি কৃষ্ণাজ্ঞনসমন্বিতে। কালসুন্দরি মৎপার্শ্বে ধবলে ত্বমুপাবিশ।।১২।। এবমৎক্ষিপ্তমনসাং দেবী সংক্রদ্ধমানসা। শ্চাসয়ামাস তাম্রাক্ষী বাষ্পগদ্‌গদয়া গিরা।।১৩।।

রুরোদ খস্বরং বালাতত্রস্থা স্ফুরিতাধরা। কিং দৈব যোগাত্তাম্রা গৌগৌরী চেত্যভিধীয়তে।।১৪।। যস্মান সমোপমা দত্তা কৃষ্ণবর্ণেন শংকর। হরকালীতি বাহুতা দেবর্ষিগণসেবিতা।।১৫।। তস্মাদ দেহমিসং কৃষ্ণ জুহোসি জ্বলিতেহনলে। ইত্যুক্তা বার্যমানা তু হরকালী রুষান্বিতা।।১৬। মুমোচ হরিতচ্ছায়াকান্তিং হরিতশাদ্বলে। চিক্ষেপ দোষং রাগেণ জ্বলিতে হব্যবাহনে।। ১৭।। গুনঃ পর্বতরাজস্য গৃহে গৌরী বভূব সা। মহাদেবস্য দেহাৰ্দ্ধে স্থিতা সংপূজ্যতে সুরৈঃ।।১৮।। এবং সা হরকালীতি গৌরীশস্য ব্যবস্থিতা। পূজনীয়া মহদেবী মন্ত্রেণানেন পান্ডব।।১৯।। হরকর্মসমুৎপন্নং হরকার্যে হরপ্রিয়ে। মাংত্রাহীশস্য মূর্তিস্থে প্রণতাস্তু নমোনমঃ।।২০।।

শ্রীকৃষ্ণ বললেন, পাপহা পরম দিব্য কথা শ্রবণ কর। দক্ষের কালী নামক এক কন্যা ছিল। তিনি কৃষ্ণবর্ণের ছিলেন ও নবীন নীল কমলের ন্যায় আভাযুক্ত ছিলেন। সে কন্যাকে ত্র্যম্বকের জন্য প্রদান করা হয়েছিল। তাঁর বিবাহ শংখ ও তূর্মের অনুযায়ী বিধান দ্বারা হয়েছিল। বিবাহের পর মহাদেব তার সঙ্গে মানসিক বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ভঙ্গে ক্রীড়া করতেন। অতঃপর কিছুকাল তাঁরা বৃষধ্বজ বিষ্ণুর সহায়তায় পরমরম্য আস্থান মন্ডপে ছিলেন। সেখানে ত্রিপুরান্তক মাতৃগণ সমাবৃত কালিকা নর্মের মাধ্যমে ডেকে পাঠালেন। বললেন- “তুমি এদিকে এসো, কৃষ্ণাঞ্জনে সমন্বিত, হে কালসুন্দরি তুমি আমার পার্শ্বে ক্ষণকাল বসো।” এইভাবে উক্ষিপ্তমনা দেবী মনে মনে ক্রুদ্ধ হলেন। তাম্রনেত্র দেবী বাষ্প গদ্‌গদ্ বাণী দ্বারা দীর্ঘশ্বাস নিলেন এবং ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন। বললেন–হে দেব, কি কারণে তাম্রা গৌ গৌরী এই নামে কথিত হয়।।৬-১৪।।

ভগবান্ শংকর আমাকে কৃষ্ণবর্ণের উপমা দিয়েছেন বা হরকালী বলেছেন এই কারণে আমি অগ্নিতে এই কৃষ্ণদেহ হবন করব। এই বলে তিনি নিজ সংকল্পে অটুট থাকলেন।।১৫-১৬।।

ইত্থং সংপূজ্য নৈবেদ্যং দদ্যাবিপ্ৰায় পান্ডব। তাং চ প্রাতজলে রম্যে মন্ত্রেনৈব বিসর্জয়েৎ।।২১।। অর্চিতাসিময়া ভক্ত্যা গচ্ছ দেবি সুরালয়ম্। হবকালে শিবে গৌরি পুনরাগমনায় চ।।২২।। এবং যঃ পান্ডবশ্রেষ্ঠ হরকালীব্রতং চরেৎ। বর্ষে বর্ষে বিধানেন নারী নরপতে শুভা।।২৩।। সা যৎ ফলম্বাপ্নোতি তনুষ নরাধিপ। মত্যলোকে চিরং তিষ্ঠেৎসর্বরোগ বিজিতা।।২৪। সর্বভোগসমাযুক্তা সৌভাগ্যবল গর্বিতা। পুত্রপৌত্র সুহৃণ্‌ মিত্রনপ্তদৌহিত্রসংকুলা।।২৫।। সাগ্রং বর্ষশতং যাবদ্ ভোগান্ ভুক্ত্বা মহীতলে। ততোবসানে দেহস্য শিবজ্ঞানা মহামুনে।।২৬।। চিরভদ্রা মহাকালনন্দীশ্বর বিনায়কাঃ। তদাজ্ঞাকিংকরা সর্বে মহাদেব প্রসাদতঃ।।২৭।। সংপূর্ণসূর্যগনসপ্তবিরুঢ়শস্যাং। তাং বৈ হিমাদ্রিতনয়াং হরকালিকাখ্যাম্। সংপূজ্য জাগরমনুদ্ধতগীতবাদ্যৈঃ।। যচ্ছন্তি যা ইহ ভবস্তি পতিপ্রিয়াসতাঃ।।২৮।।

তিনি হরিৎ ছায়া কান্তিকে হরিৎ শাদ্বলে ছেড়ে দিয়ে জলন্ত অগ্নিতে দোষকে রাগে নিক্ষিপ্ত করলেন। পুনরায় তিনি পর্বত রাজের গৃহে গৌরী হয়ে মহাদেবের দেহের অর্ধভাগে স্থিত ছিলেন। এইভাবে তিনি হরকালী থেকে গৌরীশ নামে পরিচিত হলেন। হে পান্ডব মহাদেবীকে নিম্ন মন্ত্রে পূজন করবে। হে হরকর্ম সমুৎপন্না, হরকায়ে, হরপ্রিয়ে, ঈশমূর্তিতে স্থিত আমাকে রক্ষা করো। আমি তোমাতে প্রণত হচ্ছি। আপনাকে বারবার প্রণাম। এই ভাবে নৈবেদ্য বিপ্ৰ দ্বারা অর্চনা করবে। আর প্রাতঃকালে তার রম্যজল মন্ত্রসহ বিসর্জন করবে।

হে দেবি, আপনাকে ভক্তিভাবে পূজন করলাম এখন সুরালয়ে গমন কর। হে হরকালে, শিবে, গৌরী, পুনরাগমনের জন্য আপনাকে এখন বিসর্জন জানাচ্ছি। হে পান্ডবশ্রেষ্ঠ, এই ভাবে শুভানারী প্রতিবর্ষে এইরূপে হরকালী ব্রত সমাচরণ করবে। এই ব্রতের ফল মাহাত্ম্য শ্রবণ কর। এই ব্রত পালন করলে সকল রোগ রহিত হয়ে স্থিত হয়। বিভিন্ন প্রকার ভোগ সমাযুক্ত হয়ে সৌভাগ্য বলে গর্বিত হয়। পুত্র-পৌত্রাদি সুহৃদ মিত্র সমাযুক্ত হয়ে সুখে বসবাস করে। সে ব্যক্তি শতবৎসর পর্যন্ত মহীতলে সকল কিছু ভোগ করে মৃত্যুর পর শিবলোক প্রাপ্ত হয়। হে মহামুনে, চির ভদ্রা, মহাকাল, নন্দীশ্বর, বিনায়কাদি মহাদেবের আজ্ঞায় তার দাস হয়ে যায়। হরকালিকা নাম্নী হিমাদ্রি তনয়ার যিনি পূজন করেন সেই নারী এই লোকে পতির পরম প্রিয়া হন।।১৭-২৮।।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *