দ্বিতীয় খন্ড
উত্তরপর্ব
2 of 3

হংসপদ্মিনী বর্ণন

।। হংস কা পদ্মিনী বৰ্ণন।।

বিংশাব্দে চৈব কৃষ্ণাংশেযথা জাতং তথা শৃণু। সাগরাখ্যসরস্বীরে কদাচিদিনদুলো বলী। জপ্তা সপ্তশতীস্তোত্রং তত্র ধ্যানন্বিতোহ ভবৎ।।১।। এতস্মিন্নস্তরে হংসা আকাশাৎ ভূমিমাগতাঃ। তেষাং চ রুতশব্দৈশ্চ স ধ্যানাদুখিতোহ ভবৎ।।২।। বক্ষ্যমাণাং বচঃ প্রান্থধন্যোহয়ং দিব্যবিগ্রহঃ। পর্বতানাং হিমগিরির্বনং বৃন্দাবনং তথা।।৩।। মহাবতী পুরীণাং চ সাগরঃ সরসামপি। নারীণাং পদ্মিনী নারী নৃণাং শ্রৈষ্ঠত্ত্বমিন্দুলঃ।।৪।। ভো ইন্দুল মহাপ্রাজ্ঞ মানসে সরসি স্থিতাঃ। বয়ং শ্রুত্বা শ্রিয়ো বাক্যং নলিনী সাগরং গতা।।৫।। দৃষ্ট্বা তত্র শুভাং নারীং সর্বাভরণ ভূষিতাম্।। সপ্তালভিযুতাং রম্যাং গীতনাট্য বিশারদাম্।।৬।। দৃষ্ট্বা মোহত্বমাপন্না বয়ং দেশান্তং গতাঃ। বিলোকিতা নরাঃ সর্বেহত্রাস্মাভিজগতীতলে। ত্বৎসমো ন হি কোহপ্যত্র পদ্মিনী সদৃশো বরঃ।।৭।। তস্মাত্ত্বং নঃ সমারহ্য তাং দেবীং দ্রষ্টমইসি। তথেত্যুত্ত্বা শত্রুসুতো হংসরাজং সমারুহৎ।।৮।। সিংহলদ্বীপকে রম্যে হ্যাৰ্যসিংহো নৃপঃ স্থিতঃ। তৎসুতা পদ্মিনী নাম্না রূপযৌবনশালিনী। রাগিণ্যঃসপ্ত বিখ্যাতাস্তৎসখ্য প্রমদোত্তমাঃ।।৯।। নলিনীসাগরে রম্যে গিরিজামন্দিরং শুভম। তত্র স্থিতাং চ তাং দেবীমিন্দুলঃ স দদর্শ হ।।১০।

।। হংসপদ্মিনী বর্ণন।।

এই অধ্যায়ে ইন্দুলের প্রতি হংস কথিত পদ্মিনী বৃত্তান্ত তথা সিংহল দেশে গিয়ে যুদ্ধাদি বৃত্তান্ত বর্ণনা করা হয়েছে।

সূতজী হললেন–কৃষ্ণাংশ বিংশ বৎসর বয়ঃপ্রাপ্ত হলে যা কিছু ঘটেছিল তা শ্রবণ কর। সাগর নামক সরোবরের তটে কোনো সময় ইন্দুল ছিল। সেখানে তিনি সপ্তশতী স্তোত্র পাঠ করেছিলেন এবং ধ্যানরত হন।।১।।

ইতিমধ্যে কিছু হংস আকাশপথে উড়ে এসে ভূমিতে এসে গিয়েছিল। তাদের রত ধ্বনিতে ইন্দুল ধ্যান ভঙ্গ করে উঠে বসলেন।

সেই হংসের দল আগে যা আলোচনা করেছিল সে কথা তারা বলল যে, ঐ ব্যক্তি দিব্য শরীরধারী পরম ধন্য, পর্বত মধ্যে হিমগিরিতে বৃন্দাবন বন আছে, পুরীর মধ্যে মহাবতী পুরী এবং সরোবরের মধ্যে সাগরের ন্যায় উত্তম সাগর এবং নারীদের মধ্যে পদ্মিনী নারী এবং নরগণের মধ্যে ইন্দুল সর্বশ্রেষ্ঠ। হে মহাপ্রাজ্ঞ ইন্দুল, আমরা মানস সরোবরে ছিলাম, সেখানে লক্ষ্মীবচন শ্রবণ করে নলিনী সাগরে গিয়েছিলাম। সেখানে আমরা সমস্ত আভূষণ ভূষিত এক শুভনারীকে তার সাত সখীর সঙ্গে দেখেছিলাম। তিনি পরমধন্য এবং গীত ও নাট্যে বিদূষী। তাঁকে দেখে আমরা মোহত্ব প্রাপ্ত হয়ে গিয়েছিলাম এবং পুনরায় অন্যদেশে চলে গিয়েছিলাম। এই জন্য আমরা অনেক মানুষ দেখেছি কিন্তু আপনার তুল্য পদ্মিনীর বর হওয়ার যোগ্য কাউকে দেখিনি। সেই পদ্মিনীর তুমিই একমাত্র যোগ্য বর।।২-৭।।

এই কারণে আপনি আমাদের উপরে সমারোহণ করে সেই দেবীকে দেখে আসুন। ‘তাই হোক’ এ কথা বলে ইন্দ্ৰপুত্র ইন্দুল হংসরাজের উপর সমারোহণ করলেন। সিংহল দ্বীপে অত্যন্ত রমনীয় স্থানে আর্য সিংহ নৃপ বসবাস করেন। তাঁর পুত্রী পদ্মিনী, যিনি রূপ লাবণ্য যুক্ত। তাঁর সপ্তসখী রাগ-গানে পারদর্শী এবং প্রমাদাগণের মধ্যে অতি উত্তম এবং বিখ্যাত।।৮-৯।।

সাপি তং সুন্দরং দৃষ্ট্বা হংসদেহে সমাস্থিতম্। সংমোহ্যায় তং দেবং তেন সার্দ্ধমরীরমৎ।।১১।। বর্ষমেকং যযৌ তত্র নানালীলাসু মোহিতঃ। নক্তং দিবং ন বুবুধে রমমাণস্তয়া সহ।।১২।। ভক্তিগর্বত্বমাপন্নে চাহ্লাদে জগদাম্বিকা। দৃষ্ট্বা চান্তর্দধে দেবী গর্বাচরণ কুণ্ঠিতা।।১৩।। তস্য প্রাপ্তং মহদ্ দুঃখমাহ্লাদস্য জয়ৈষিণঃ। স কৈশ্চিৎপুরুষৈবীরঃ কথিতোহ ভূৎস্ব মন্দিরে।।১৪। ইন্দুলং রূপসংপন্নং লঙ্কাপুরনিবাসিনঃ। রাক্ষসাস্তং সমাহৃত্য স্বগেহং শীঘ্রমাযঃ।।১৫।। ইতি শ্রুত্বা বচো ঘোরং সকুলে বিললাপ হ। হাহাশব্দো মহাশ্চাসীত্তেষাং তু রুদতাং মুনে।। ১৬।। কৃষ্ণাংশো রুদিতং প্রাহাহ্লাদং জ্যেষ্ঠ শৃণুম্ব ভোঃ। জিত্বোহং রাক্ষসান সর্বাস্তালনাদ্যৈঃ সমন্বিতঃ। ইন্দুলা ত্বাং সমেষ্যামি ভবান্ধৈর্যপরো ভবেৎ।।১৭।।

পরম রম্য নলিনী সাগরে এক শুভ গিরজা মন্দির আছে। সেখানে দেবীকে ইন্দুল দেখলেন। তিনি সেই অতি সুন্দর হংসের উপর স্থিত ইন্দুলকে দেখলেন। পুনরায় তিনি ইন্দুলকে সম্মোহিত করে এবং তাকে আহ্বান করে তার সাথে রমণ করলেন। অনেক প্রকারে লীলাতে মোহিত হয়ে সেখানে একবৎসর অতিবাহিত করলেন। সেই পদ্মিনীর সাথে রমণকারী ইন্দুলের রাতদিন কোনো জ্ঞান ছিলনা।।১০-১২।।

দেবীর প্রতি ভক্তির গর্ব্বে আহ্লাদকে গৰ্ব্বিত দেখে গর্ব্বাচরণে কুণ্ঠিতা দেবী জগদম্বিকা অন্তর্ধান করেন। কয়েকজন পুরুষের দ্বারা জয়েচ্ছু আহ্লাদ মহান্ দুঃখ পেলেন।

রূপবান্ ইন্দুল লংকাপুর নিবাসী কোনো এক রাক্ষস দ্বারা হৃত হয়েছেন এই ঘোরবচন শ্রবণ করে আহ্লাদ সমস্ত কুলের সঙ্গে বিলাপ করতে লাগলেন। হে মুনে, সেখানে সকলের হাহাকার শব্দ উৎপন্ন হয়েছিল।।১৬।।

কৃষ্ণাংশ জ্যেষ্ঠ আহ্লাদকে রোদন করতে দেখে তাঁকে বললেন–শুনুন, আমি তালনাদিকে সঙ্গে নিয়ে সেই সকল রাক্ষসকে জয় করে ইন্দুলকে এনে দেব। আপনি ধৈর্য্য ধারণ করুন।।১৭॥

বলখানিশ্চ কৃষ্ণাংশো দেবসিংহশ্চ তালনঃ। সপ্তলক্ষবলৈঃ সার্দ্ধং লঙ্কাং প্রতিথযুমুদা।।১৮।। মার্গপ্রাপ্তাশ্চ যে ভূপা গ্রামপা রাষ্ট্রপাস্তথা। যথাযোগ্যং বলিং রম্যং প্রাপ্য তস্মৈ ন্যবেদয়ন্।।১৯।। যে ভূপা মদমত্তাশ্চ জিত্বা তাংস্তালনো বলী। বদ্ধা তৈশ্চ সমাগচ্ছৎসেতুবন্ধং শিবস্থলমং।।২০।। পূজয়িত্বা চ রামেন স্থাপিতং শিবম্। সিংহলদ্বীপম গমম্মম্মাসাভ্যন্তরে তদা।।২১।। নলিনীসাগরং প্রাপ্য তত্র বাসমকারয়ন। পত্রং সংপ্রেষয়ামাস বলখানিনৃপায় চ।।২২।। আৰ্য্যসিংহ মহাভাগ স্বপোতান্ দেহি তীর্ণকান্ ভবাঁশ্চ স্ববলৈঃ সার্দ্ধং লঙ্কাং প্রতি ব্রজাধুনা। নো চেত্ত্বাং সবলং জিত্বা রাষ্ট্রভঙ্গং করোম্যহম্।।২৩।।

বলখানি, কৃষ্ণাংশ, দেবসিংহ এবং তালন সাতলক্ষ সেনা সঙ্গে নিয়ে লঙ্কাতে চলে এলেন। পথি মধ্যে যে সকল রাজা-গ্রামপ তথা রাষ্ট্রপ ছিলেন তারা কৃষ্ণাংশ প্রভৃতিকে যথাযোগ্য বলি প্রদান করেছিলেন। যে রাক্ষস মদমত্ত ছিলেন তাকে বলী তালন জয় করেছিলেন। তাদের বন্ধন করে সেতুবন্ধে শিবস্থলে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন। শ্রীরামচন্দ্রের দ্বারা স্থাপিত শিব শ্রীরামেশ্বর পূজা করে ছয়মাসের মধ্যে সিংহল দ্বীপে চলে গেলেন।।১৮-২১।।

সেখানে নলিনী সাগরে পৌঁছে সকলে নিজ নিজ নিবাস স্থান তৈরী করলেন। বলখানি সেখানকার রাজার জন্য একটি পত্র প্রেরণ করলেন। হে মহাভাগ, আর্যসিংহ, আপনি আপনার তীর্ণক জাহাজ আমাকে প্রদান করুন এবং আপনিও সেনাদের সঙ্গে নিয়ে লঙ্কায় চলুন না হলে আমি সেনাদের সাথে তোমাকে জয় করে তোমার রাষ্ট্র ভঙ্গ করে দেবো।।২২-২৩।।

ইতি শ্রুত্বা পত্ৰবচো ভূপতিবলবত্তরঃ। রক্ষিতঃ শত্রুপুত্রেণ যুদ্ধায় সমুপাযযৌ।।২৪।। ইন্দুলঃ স্তম্ভণং মন্ত্রং সংস্থাপ্য শর উত্তমে। স্তম্ভয়ামাস তৎসৈন্যং তালনাদ্যৈঃ সুরক্ষিতম্।।২৫।। দিবসে সুখশর্মা চ ত্রিলক্ষৈঃ স্বদলৈঃ সহ। আৰ্য্যসিংহস্য তনয়ো মহুদ্যুদ্ধমচীকরৎ।।২৬।। নিশামুখে চ সংপ্রাপ্তে শত্ৰুপুত্রে মহাবলঃ। শতপুত্রৈঃ ক্ষত্ৰিয়াণাং সার্দ্ধং যুদ্ধায় চার্ঘযৌ।।২৭।। তেষাং হয়া হরিদ্বর্ণা যোগিবেশধরা বলাৎ। মহতীং তে সহস্রং চ রিপোঃ সেনাং বনাং ব্যনাশয়ন। তৎপশ্চাৎগেহমাসাদ্য তদা তৈঃ সুখিতোহ বসৎ।।২৮। এবং জাতাশ্চ যন্মাসাস্তয়োযুদ্ধং হি সেনয়োঃ। ক্রমেন সংক্ষয়ং প্রাপ্তং বলখানেমহদ্বলম্।।২৯।।

পত্রে লিখিত বচন শ্রবণ করে ইন্দ্রপুত্র দ্বারা রক্ষিত বলবান্ ভূপতি যুদ্ধের জন্য এসে উপস্থিত হল।।২৪।।

ইন্দুল স্তম্ভনমন্ত্র উত্তম শরে সংস্থাপিত করে তালনাদির দ্বারা সুরক্ষিত সেনাদের স্তম্ভিত করলেন। আর্যসিংহের পুত্র সূর্যবর্মা তিনলক্ষ সেনা নিয়ে দিনে মহাযুদ্ধ করেছিলেন। রাত্রে ইন্দ্রপুত্র মহাবলবান্ ক্ষত্রিয়গণের শতপুত্রের সাথে যুদ্ধের জন্য আগত হলেন। তার অশ্ব হরিদ্বর্ণের ছিল এবং তিনি যোগী বেশধারণ করে শত্রুদের মহান্ একসহস্র সেনা মহাবলে বিনষ্ট করেছিল। এরপর গৃহে আগত হয়ে তিনি সুখে নিবাস করেছিলেন।।২৫-২৮।।

এই প্রকারে ছয়মাস ব্যাপী দুই পক্ষের সেনাদলের মধ্যে মহাযুদ্ধ হয়েছিল ক্রমান্বয়ে বলখানির মহাসেনা ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হল।।২৯।।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *