1 of 2

স্বপ্ন হলেও সত্য

স্বপ্ন হলেও সত্য

কেন জানি না আমার হঠাৎই খেয়াল হল লন্ডন শহরে বনেদি এলাকায় গিয়ে থাকবার। অনেক খুঁজেপেতে একটা বনেদি ও সেকেলের পুরানো বাড়ির সন্ধান পেলাম, এই বাড়িটা ছিল নদীর পাশ দিয়ে প্রধান রাস্তার উপর দিয়ে গিয়ে ভিতর দিকে টেম্পলে কিংসফোর্ড ওয়াকের। এই বাড়িটা দেখতেও ছিল অদ্ভুত ধরনের। বাড়িটা দেখেই আমার পছন্দ হয়ে গেল। ভাবলাম, যাক এতদিনে একটা মনের মতো বাড়ি পেলাম। একটু নির্জনে থাকতে পারব। চিন্তা-ভাবনা করবার পক্ষে খুবই উপযুক্ত বাড়ি ছিল এটা। বাড়িটা পেয়ে খুব খুশিই হলাম।

আমার পাঠকেরা নিশ্চয় এতক্ষণে বুঝতে পেরেছে, যেখানে আমি আছি সেখানে ভূত-প্রেতের গন্ধ থাকবেই। কিন্তু এই বাড়িটার ব্যাপারে আমার মনে কোনো ভূত-প্রেতের সন্দেহও উঁকি মারেনি। তাছাড়া আমি কোনো প্রেত-চর্চাসঙ্ঘের সদস্যও নই। কিন্তু কী করব আমার ভাগ্যটাই এমন। যেখানেই যাই সেখানেই আমার গন্ধে ভূতপ্রেতেরা এসে হাজির হয়। তাই এই বাড়িটাও আমাকে শান্তিতে থাকতে দিল না।

আমার বাড়িওলি বেশ বয়স্ক ধরনের মহিলা। দেখলেই বোঝা যায় পাকা গিন্নিবান্নি মানুষ, তাছাড়া উনি সৎ, কর্মঠ ও পরিশ্রমী। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, এই বাড়িতে এসে আমার ব্রেকফাস্ট বন্ধ হল। কোনো দিনই সকালে ব্রেকফাস্ট পেতাম না। তার কারণ আমি রোজ সকালে দশটার পর ঘুম থেকে উঠতাম আর দশটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে তা টেবিল থেকে তুলে নেওয়া হত। এই ছিল বাড়িওলির নিয়ম। নিয়মমতো টেবিলে উপস্থিত না থাকার জন্যে আমার কপালে খাওয়া জুটত না। ঘুম থেকে উঠে খিদেয় ছটফট করতাম। তাই খিদের জ্বালা মেটাতাম হোটেলে গিয়ে।

এইভাবে বেশ চলতে লাগল। মনে মনে খুবই অশান্তিতে ভুগছিলাম। ব্রেকফাস্ট খাই না অথচ তার টাকাগুলো আমাকে দিতে হচ্ছে। একদিন ভাবলাম, না আর অপেক্ষা করা চলে না, বাড়িওলিকে সব ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলব। এইভাবে দিনের পর দিন না খেয়ে বিল মেটানোর কোনো মানে হয় না।

খুব সাহস করেই একদিন মহিলাকে বলে ফেললাম—দেখুন, আমার রাতে ঘুম হয় না। ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়ি, তাই আপনি যদি দয়া করে ব্রেকফাস্টটা দশটার সময় না সরিয়ে আরও দশ মিনিট পরে সরান তাহলে আমার খাওয়াটা হয়। এই ব্যাপারে আপনি একটু ভেবে দেখবেন।

আমার কথা শুনে মহিলাটি তো খেপে আগুন। ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বললেন—তোমার কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই। আমি বলি, তোমার বিবেক বলেও কিছু নেই। তুমি আমার অসুবিধে বোঝো না। তোমার চেয়ে আমার দ্বিগুণ বয়স, দ্যাখো তো আমি কত পরিশ্রম করি। আর তুমি রবিবার গির্জায় যাও, রাতে প্রার্থনা করো, আর সকাল খেয়ে-দেয়ে শুয়ে পড়ো। তার পরেও তোমার ন-টার সময় ঘুম ভাঙে না, ব্রেকফাস্ট খেতে পারো না, আমার মনে হয় তুমি একটা দুর্বৃত্ত। তোমাকে আমার বাড়িতে থাকতে দেওয়াই অন্যায় হয়েছে। যুবক বয়সে যে ছেলে এমন অকর্মণ্য হয় তাকে দিয়ে আর কোনো কাজই হয় না।

আমি আর কথা বাড়ালাম না, ভাবলাম ওনাকে বোঝাতে পারব না। এ আমার সাধ্যের অতীত, কী করে বোঝাব যে, এই ঘরে যে শোবে তার ঘুমের সর্বনাশ হবে। আমি বেশ কিছুদিন থেকে বুঝতে পারছিলাম এই ঘরে কোনো ভৌতিক ব্যাপার আছে। তা-ই রাতের পর রাত আমাকে জাগিয়ে রেখে ঘুম কেড়ে নিয়েছে, সারারাত জেগে জেগে বই পড়ে ক্লান্ত হয়ে ভোরবেলায় ঘুমিয়ে পড়ি, যার জন্যে কিছুতেই সকাল দশটার আগে ঘুম থেকে উঠতে পারি না। এই কথা কাকে বোঝাব, কেউই আমার কথা বিশ্বাস করতে চাইবে না।

একদিন দুপুরবেলায় খুবই ক্লান্ত ছিলাম, তাই আমার বৈঠকখানার ছোটো শোফাটায় ঘুমিয়ে পড়লাম। এত গভীর ঘুম দিয়েছিলাম যে আমি দুপুর থেকে অনেক রাত পর্যন্ত ঘুমালাম। হঠাৎ জেগে উঠে দেখি আমার হাতে একটা পেনসিল ধরা রয়েছে, আর মনের মধ্যে অদ্ভুত একটা স্বপ্ন হয়ে রয়েছে। স্বপ্নের কথাগুলো আমার মনের মধ্যে ছবির মতো ফুটে উঠল কিন্তু পেনসিলটা কোথা থেকে এল তা কিছুতেই মনে পড়ল না। আরও অবাক হয়ে গেলাম যখন দেখলাম পাশেই কয়েকটা কাগজের টুকরো পড়ে রয়েছে। কাগজের টুকরোগুলো হাতে তুলে আমি চমকে উঠলাম, কারণ যে স্বপ্নটা আমি ঘুমের ঘোরে দেখেছি, আর তারই সব কথা এই কাগজগুলোতে আমি ঘুমের মধ্যে লিখে রেখেছি। ঘুমের মধ্যে আমি কী করে লিখলাম, কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

তবুও আমি যা স্বপ্নের কথা লিখেছিলাম তাই পাঠকদের জানাচ্ছি—আমি যে ঘরটায় থাকতাম সেটা জেমসের রাজত্বকালে স্টেলা নামে একটি সুন্দরী মেয়ে, আর তরুণ এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির গোপনে দেখাশোনার জায়গা ছিল। তরুণটি ছিল প্রোটেস্টান্ট আর স্টেলা ছিল ক্যাথলিক। একদিন ক্যাথলিক রাজার কাছে তাদের গোপন অভিসারের কথা জানিয়ে দেওয়া হল। এই খবর পেয়ে তরুণটি রাগে-ক্রোধে উন্মাদ হয়ে তার উপপত্নীকে খুন করে এই বাড়ির নীচে একটা কুয়োর মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। এই মারাত্মক স্বপ্নের কথাগুলো পড়ে আমি শোফা ছেড়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু কী আশ্চর্য ব্যাপার, তারপর আমি শান্তিতে ঘুমিয়েও পড়লাম।

পরের দিন রাতে আবার সেই একই স্বপ্ন দেখলাম। এমনকি স্বপ্নে অশরীরীকে অনুসরণ করে আমি তার সঙ্গে অচেনা একটা ঘরে ঢুকলাম। এই ঘরে আগে আমি কখনও আসিনি, কিন্তু স্বপ্নে আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম মাটির নীচের ঘরটা, যার মেজেটা মস্তবড়ো একটা চৌকো, পাথরের টুকরো দিয়ে তৈরি, বহুদিনের অব্যবহারের ফলে কালো হয়ে গেছে।

স্বপ্নে আরও অনেক কিছু দেখলাম। আমি এই ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ভগবানের উদ্দেশে প্রার্থনা জানানো হল, আর যেইমাত্র প্রার্থনাটা শেষ হল অমনি সব কিছু অদৃশ্য হয়ে গেল, এমনকি জায়গাটাও আবার ফাঁকা আর পোড়া হয়ে গেল।

পর পর তিন দিন একই স্বপ্ন দেখে আমি ঠিক করলাম, এই রহস্যের সমাধান করতে হবে। অনেক ভেবে-চিন্তে পরের দিন বাড়িওলিকে বললাম—এই বাড়িতে কোনো গোপন ঘর আছে? আমাকে একটু বলুন না সেই ঘরটা কোথায়?

আমার কথা শুনে মহিলাটি রেগেই গেলেন, বললেন, এই ঘরটা ভাড়া দিলেই যত জ্বালাতন বাড়ে! যে-ই এই ঘরে রাত কাটিয়েছে তারাই এই একই প্রশ্ন করেছে আমাকে। কেন যে তারা এই গোপন ঘরের প্রশ্ন করে তা আমি আজও জানতে পারিনি। তারপর বিরক্তিপূর্ণ কণ্ঠে বললেন—হ্যাঁ, একটা গোপন ঘর আছে। সেটা রান্নাঘরের নীচে।

আমি ভদ্রমহিলাটির কাছে যা জানতে চেয়েছিলাম তার সঠিক উত্তর না পেয়ে মনে মনে অখুশি হলাম। তারপর ভাবলাম, ওঁনাকে প্রশ্ন করে কোনো লাভ নেই। উনি ঠিক বলতে পারবেন না। তাই ঠিক করলাম, বাড়িওলি বাড়ি থেকে বের হলেই আমি একলাই অনুসন্ধান চালাব। একটু পরেই বাড়িওলি বেরিয়ে গেলেন। তারপর আমি উঠে রান্নাঘরে গিয়ে হাজির হলাম। এই রান্নাঘরটা রাস্তার সমতলের ঠিক নীচে। বেশ খানিক খোঁজাখুঁজি করে পুরানো ওক কাঠের একটা দরজা খুঁজে পেলাম। তারপর সেই দরজার ভিতর দিয়ে গোপন ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। দেখলাম, আমার স্বপ্নে দেখা এই সেই ঘরটা। স্বপ্নের সঙ্গে হুবহু মিলে গেল। এমনকি মেজেটাও গাঢ় কালো রঙের পাথর দিয়ে বাঁধানো। আর আমি বেশিক্ষণ এই ঘরটায় থাকলাম না। তাড়াতাড়ি নিজের ঘরে ফিরে এলাম। মনটা চঞ্চল হয়ে উঠল। এটা কী ধরনের রহস্য বুঝতে পারলাম না। মন থেকে ব্যাপারটা মুছে ফেলবার জন্যে ড্রেস করে বাইরে বেরিয়ে গেলাম। যাতে এই বাজে চিন্তার থেকে আমি মুক্তি পেতে পারি।

সারা সন্ধ্যাটা আমি বাইরেই কাটালাম, থিয়েটার দেখলাম, তারপর অনেক রাতে বাড়ি ফিরে এলাম। খুবই পরিশ্রান্ত ছিলাম। বিছানায় শুয়ে পড়তেই সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়লাম। আবার সেই একই স্বপ্ন দেখতে লাগলাম। কিন্তু আজকের স্বপ্নটা ছিল অন্যদিনের চেয়ে একটু আলাদা। স্টেলা নামে সুন্দরী মেয়েটি আমাকে পথ দেখিয়ে সেই মাটির নীচের ঘরে নিয়ে গেল, তারপর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, আজ রাত বারোটার সময় এই ঘরে মৃতের জন্যে প্রার্থনার আয়োজন করো। তারপর সে অদৃশ্য হয়ে গেল।

স্বপ্ন দেখা শেষ হতেই আমি চমকে উঠে পড়লাম। স্বপ্নের কথাগুলো কানের মধ্যে বাজতে লাগল। এমনকি মেয়েটার শীতল নিশ্বাসের স্পর্শ পর্যন্ত আমি অনুভব করতে পারছিলাম; সবকিছু মিথ্যে ভাববার জন্যে আমি ভালো করে চোখ রগড়াতে লাগলাম। তারপর দেওয়ালের দিকে তাকিয়েই আঁতকে উঠলাম। চোখের সামনে, স্বপ্নে, কানে শোনা কথাগুলো দেওয়ালে স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে। ঠিক সেই কথা—‘মাঝরাতে এই ঘরের মৃতের জন্যে প্রার্থনা করো’। আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলাম না কী করে এই দেওয়ালে লেখা হল। তাহলে কি আমিই ঘুমের ঘোরে উঠে টেবিল থেকে পেনসিল নিয়ে দেওয়ালে লিখেছি। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হল না, না এটা অসম্ভব।

আমি এসব কথা কাউকে কিছু না বলে পোশাক পরে পথে বেরিয়ে পড়লাম। ভাবলাম যেমন করেই হোক আজ রাতে প্রার্থনার ব্যবস্থা করব। পথে বেরিয়ে মনটা ভোরের ঠান্ডা মিষ্টি হাওয়ায় ভরে উঠল। মনে হল দিনের সঙ্গে রাতের কত পার্থক্য। এই কথা ভাবতেই মনে পড়ে গেল রাতের স্বপ্নে দেখা দৃশ্যগুলো, যে কথাগুলো আমার কানের মধ্যে হাতুড়ি মারতে লাগল, মনে মনে ভাবলাম স্বপ্নের কথামতো সবই পালন করব, সকলকে বিশ্বাস করাতে চেষ্টা করব। আমি নিজে ক্যাথলিক নই। আমি কখনও কোনো গোঁড়া মতের সমর্থক নই, কিন্তু বেড়াতে বেরিয়ে প্রায়ই ক্যাথালিক চার্চে যেতাম। যার ফলে চার্চের কয়েকজন যাজকের সঙ্গে আমার আলাপ ছিল। আমি ভাবলাম এখান থেকে আমি সাহায্য পেতে পারি। তাই তাড়াতাড়ি ছুটে চার্চে গেলাম এবং যাজকের সঙ্গে দেখা হল। আমি জানতাম উনি খুব সহানুভূতিশীল ও খুব বুদ্ধিমান। কিন্তু আমার সব কথা শুনেও উনি বিশ্বাস করলেন না। বললেন—এসব বাজে কথা, মিথ্যে কথা! তাছাড়া তিনি আমাকে আরও বললেন—আপনার এই বাজে চেষ্টা ছেড়ে দিন। কেউই ওই ঘরে গিয়ে প্রার্থনা করবে না। আমি বলছি এই লন্ডন শহরে আপনি এমন একজনও পাদরি খুঁজে পাবেন না যিনি আপনার ইচ্ছা পূরণ করবেন।

আমি অনেকগুলো চার্চ পেরিয়ে এলাম। আর একটায়ও ঢুকলাম না। অশান্ত মনে গ্রিন পার্কে ঢুকে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। তারপর একটা বেঞ্চে বসে ভাবতে লাগলাম কী করা যেতে পারে। হঠাৎ দেখলাম একজন তরুণ পাদরি আপনমনে একটা প্রার্থনার বই পড়তে পড়তে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে সুপ্রভাত জানিয়ে হাতের বইটা বন্ধ করলেন এবং আমরা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলতে লাগলাম। কথা বলে এই তরুণ পাদরিটিকে আমার বেশ ভালো লাগল। ভাবলাম তাহলে ওঁনাকে আমার স্বপ্নের কথাটা বলা যেতে পারে, হয়তো উনি বিশ্বাসও করতে পারেন। তাই সাহস করে আমার স্বপ্নের কথা বললাম।

আমার কথা শুনে মনে হল, উনি পুরোপুরি বিশ্বাস করেছেন। উনি আমার দিকে তাকিয়ে একটু মৃদু হেসে বললেন—আমি আপনাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করব। আপনি আর কোনো কিছু ভাববেন না। আপনার যা যা দরকার সবই আমি করে দেব। কথা দিলাম আজ রাতে আমি আপনার বাড়িতে যাব। এই তরুণ পাদরিটি কাছ থেকে কথা পেয়ে আমি খুব নিশ্চিন্ত হলাম। মনের আনন্দে বাড়ি ফিরে এলাম।

রাত্রিবেলায় কয়েকজন বন্ধু আমার সঙ্গে দেখা করতে এল। তাদের আমি এই ব্যাপারে সব কথা বললাম। বন্ধুরা সব কথা শুনে খুবই উৎসাহী হয়ে অনুরোধ করল—আমরাও এই রাতে এই ঘরে থাকতে চাই। দয়া করে তুমি পাদরিকে জিজ্ঞাসা করো প্রার্থনার সময় আমরা উপস্থিত থাকতে পারব কি না। আমারও মনে মনে ইচ্ছা এই ঘটনায় বন্ধুরা উপস্থিত থাকুক।

সবাই মিলে গল্প করতে লাগলাম। সময় হু হু করে কেটে যেতে লাগল। বারোটা বাজতে যখন পনেরো মিনিট বাকি—ঠিক সেই সময় দরজার কাছে পাদরির পায়ের শব্দ পেলাম। ওঁনাকে আমি বন্ধুদের মনোবাসনা জানালাম। উনি বললেন—আমার কোনো আপত্তি নেই। আপনার বন্ধুরা সবাই উপস্থিত থাকতে পারেন।

পাদরির মত পেয়ে আমরা সবাই খুশি হলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা সবাই মিলে ধীরে পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে এলাম। অনুষ্ঠানের মধ্যে কোনো রহস্যজনক কিছুই চোখে পড়ল না। কিন্তু ঘরটায় ঢুকে মনে হল মৃত্যুর পরিবেশেই আমরা রয়েছি। কী নিস্তব্ধ, নিথর চারিদিক। মোমবাতির ম্লান আলোয় পাদরির মুখটা আমার কাছে খুবই রহস্যময় বলে মনে হল। কী নিবিষ্ট মনে প্রার্থনা করছেন। আমি শুধু সেদিকেই চেয়ে দেখতে লাগলাম। প্রার্থনা শেষ হলে সবাই আমরা নীচে নেমে এলাম। তারপর তরুণ পাদরিটি আমাদের সকলকে বিদায় জানিয়ে আস্তে আস্তে চলে গেলেন।

এইভাবে কয়েক সপ্তাহ কেটে গেল। আমি মনে মনে খুবই নিশ্চিন্ত হলাম। স্বপ্ন দেখার আর কোনো উৎপাত রইল না। প্রার্থনার দিন থেকেই আমি শান্তিতে ঘুমুতে পাচ্ছিলাম। কোনো রকম গোলমাল হয়নি। বেশ সুখেই বাড়িটায় ছিলাম।

হঠাৎ একদিন সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামবার সময় দেখলাম একদল রাজমিস্ত্রি আর জলের কলের মিস্ত্রি ঘরের সঙ্গে রাস্তার যোগাযোগ করাবার জন্যে দরকারি কী সব কাজকর্ম করছিল। ওদের ঘরের মেঝের পাথর তোলবার দরকার ছিল তাই তারা পাথর উঠিয়ে মাটির তলায় একটা কুয়ো আবিষ্কার করল। সেদিন সবাই খুব অবাক হয়ে দেখেছিল কুয়োটা। আমি কিন্তু একটুও আশ্চর্য হয়নি। কারণ আমি এই মাটির তলার ঘর ও বাড়ির নীচে কুয়োর কথা সবই স্বপ্নে দেখেছিলাম।

এই ঘটনার বেশ কিছুদিন পরে একটি পত্রিকায় খবরটি প্রকাশ পায়। ঘটনাটির বিবরণ ছিল এমনি: আরম্ভের প্রথমেই ছিল—মাটির নীচে মনুষ্যদেহাবশেষ। চমকপ্রদ আবিষ্কার। কিংস বেঞ্চওয়াদের একটা বাড়ি মেরামত করবার সময় মিস্ত্রিরা একতলা ঘরের নীচে একটা কুয়ো আবিষ্কার করেছে এবং কুয়োর তলায় পাওয়া গেছে একটা তরুণীর কঙ্কাল ও একটা তরবারি। তরবারিটা পরীক্ষা করে দেখা গেছে একটা তরুণীর কঙ্কাল ও একটা তরবারি। তরবারিটা পরীক্ষা করে দেখা গেছে তাতে দ্বিতীয় জেমসের রাজত্বকালের তারিখ দেওয়া আছে। এতে প্রমাণ হচ্ছে, নিশ্চয় কোনো রোমান্সজনিত ঘটনা রয়েছে। তাছাড়া রহস্যপূর্ণ নারীর মৃত্যু— এইসব মিলিয়ে এই বাড়িটায় একটা গোপন রহস্য এতদিন ধরে ছিল।

সত্যি কথা বলতে কী—এই ঘটনার পর আমার জীবন অনেকখানি পার হয়ে গেছে— তবুও যখন নির্জনে ভাবতে বসি, তখন কিছুতেই এই ঘটনার রহস্যটা খুঁজে পাই না। ভাবি, এটা কি নিছক স্বপ্ন না অন্য কিছু। আজও উত্তর পাইনি।

___

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *