তেষট্টি
দুপুরে ক্যাজুনদের স্টেক হাউসে বসে টি-বোন আর আলুর চিপ্স খেল রানা ও জেনি। ওখান থেকে বেরিয়ে বসল ছোট এক বার-এ। দক্ষিণের মেয়েদের মতই বোতল মুখে তুলে ডিক্সি বিয়ার গিলল জেনি। এখন ওর পরনে ঢোলা লাল শার্ট ও জিন্স-প্যান্ট। খোলা চুলে মিষ্টি দেখাচ্ছে ওকে। তার ওপর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক ও চোখে মাসকারা। রানা মুগ্ধ হচ্ছে কি না তা বুঝতে বারবার ওর চোখে তাকাচ্ছে জেনি।
নীরব কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর নিচু গলায় বলল জেনি, ‘তা হলে আগামীকাল সত্যিই চলে যাচ্ছ?’
‘আরও কোনও ঝামেলায় জড়িয়ে না গেলে,’ বলল রানা।
‘তোমার জন্যে বাড়িতে বউ অপেক্ষা করছে?’
‘না। বিয়ে তো করিনি।’
বিয়ারে চুমুক দিল জেনি। ‘কিন্তু প্রেমিকা নিশ্চয়ই আছে, তাই না?’
‘ঠিক তা-ও নয়। কোন রকম বাঁধনে জড়ানো আর হয়ে ওঠেনি। বিপজ্জনক কাজ করি তো…’ বাক্য শেষ না করে থেমে গেল রানা।
‘তবে তোমাকে ভালবাসে কেউ?’
‘হয়তো বাসে, কিন্তু সেই সুযোগে আমি তো তার সর্বনাশ করতে পারি না, তাই না?’
‘তার মানে, তুমি কখনও বিয়েই করবে না।’ মাথা নাড়ল জেনি। হাসল। ‘আমার কপালটাই দেখছি মন্দ! ভাবতে শুরু করেছিলাম, মনের মানুষ বুঝি পেয়েই গেলাম! যাক গে, যা হবার নয়…’
অস্বস্তি কাটিয়ে উঠে জানতে চাইল রানা, ‘আরেক জোড়া বিয়ারের কথা বলি?’
বাইরে নামছে সন্ধ্যা।
একটু পর বিয়ার শেষ করে বার থেকে বেরিয়ে মানুষের ভিড়ের মাঝ দিয়ে সিভিক সেন্টারের দিকে চলল রানা ও জেনি। মেয়েটা এখন কঠোর মনের পুলিশ অফিসার নয়। নিজেও জানে না, হারিয়ে বসার ভয়ে কখন যেন শক্ত করে ধরেছে রানার বাহু।
সিভিক সেন্টারে গিজগিজ করছে মানুষ। টিকেট করাই ছিল। জেনিকে নিয়ে সামনের সারিতে গিয়ে বসল রানা।
বাঁশি শোনার জন্যে অধীর হয়ে অপেক্ষা করছে শ্রোতারা। একটু পর লাল পর্দা উঠে যেতেই দেখা গেল মঞ্চে নিজের দলের সবাইকে নিয়ে বসে আছেন দুনিয়া-সেরা বংশীবাদক পদ্মবিভূষণ পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া। হাতদুটো বুকে জড় করে নমস্কার জানালেন তিনি।
খুশিতে হৈ-হৈ করে উঠল শ্রোতারা।
বাঁশিটা ঠোঁটে তুললেন শিল্পী। বেজে উঠল শিবরঞ্জনী রাগে মর্মস্পর্শী, অতিপ্রাকৃত, করুণ সুর। আলাপের পর স্থায়ী ধরলেন জাদুকর। তবলা সঙ্গত শুরু করলেন আরেক দুনিয়া- সেরা ওস্তাদ জাকির হোসেন। গভীর মনোযোগে পণ্ডিতের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে স্বর্গীয় সুধা পান করছে রানা। খেয়াল করল না সব হারানোর দৃষ্টিতে ওকে দেখছে পাশে বসা মেয়েটি।
ভাবছে: কেউ পায়, কেউ পায় না!
***সমাপ্ত***