1 of 2

স্ট্রেঞ্জার – ১

এক

উত্তর আমেরিকার দক্ষিণ প্রান্তে মেক্সিকো উপসাগর ঘেঁষা লুইযিয়ানা রাজ্য।

আঠারো শ’ চৌষট্টির গ্রীষ্মকালের এক উত্তপ্ত দুপুর।

রাজপ্রাসাদের মত মস্তবড় বাড়ি থাউয্যাণ্ড ওক। ওটারই মালিক উইলিয়াম এফ. নোভাকের আমন্ত্রণে ডাইনিং রুমে উপস্থিত হয়েছে কনফেডারেট আমেরিকার উচ্চপদস্থ ক’জন আর্মি অফিসার। তারা প্রত্যেকেই ক্লোভিস জেলার প্রতাপশালী মানুষ। চলছে জরুরি মিটিং। একটু আ প্ল্যানটা খুলে বলেছে নোভাক, জানিয়েছে, কী করা হলে যুদ্ধে পরাজিত হবে ইউনিয়ান আর্মি।

এ মুহূর্তে থাউয্যাণ্ড ওক-এ উইলিয়াম এফ. নোভাকের সঙ্গে যে তিন আর্মি অফিসার রয়েছে, তাদের পরনে মিলিটারি ইউনিফর্ম। ঝিকমিক করছে সোনার মেডেল। মিটিঙের সভাপতি তুলা ব্যবসায়ী ও ডাক্তার উইলিয়াম নোভাক টেক্সাস রাজ্যে জন্মালেও ঘাঁটি গেড়েছে লুইযিয়ানা রাজ্যে। শুধু যে গোটা দক্ষিণের বৃহত্তম তুলা-প্ল্যান্টেশনের মালিক সে, তা নয়, এ ছাড়াও তার রয়েছে গ্রাম ভরা কয়েক হাজার কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাস ও ক্রীতদাসী। নির্বিচারে অসহায় মানুষগুলোর ওপর অকথ্য অত্যাচার করে সে। তবে উত্তরের রাজ্যগুলোর প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি মুক্ত করে ছাড়বেন আমেরিকার সমস্ত ক্রীতদাস ও ক্রীতদাসীকে। সেক্ষেত্রে মুখ থুবড়ে পড়বে নোভাকের তুলার প্ল্যান্টেশন। শুধু কি তাই, এ-ও মেনে নিতে হবে, এ দেশে সমঅধিকার পাবে নোংরা, কালো ওই কুত্তার বাচ্চাগুলো!

এ মিটিঙে যোগ দিয়েছে সি. এস. এ. বা কনফেডারেট স্টেট্স্ অভ আমেরিকার বড় এক আর্মি জেনারেল। ডান চোখ হারিয়েছে লোকটা বুল রানের যুদ্ধে। মারা গেছে তার তিন জোয়ান ছেলে। অত্যন্ত তিক্ত মনের মানুষ এই জেনারেল। তার ওপর প্রতিদিন পিছাতে হচ্ছে তাদের সেনাবাহিনীকে। গত বছর চ্যাটানুগার যুদ্ধে হারার পর থেকে সেনাপতি ইউলিসিস এস. গ্র্যান্টের অধীনে ক্রমেই এগোচ্ছে ইউনিয়ান আর্মি। আজ হোক বা কাল, এ যুদ্ধে হারবে দক্ষিণের রাজ্যগুলো। তাই জেনারেল আজকাল ভাবছে, বৃথা প্রাণ দিয়েছে তার তিন সন্তান।

‘আপনি যা বললেন, তেমন অলৌকিক কিছু না ঘটালে সত্যিই যুদ্ধে হারব,’ সিগারে টান দিল জেনারেল। ‘দেখা যাক আপনার পরিকল্পনায় কাজ হয় কি না।’

‘প্রাণপণ লড়েও প্রতিদিন পিছাচ্ছি আমরা,’ বলল আরেক অফিসার। কালো এক ক্রীতদাসী ওয়াইন ঢেলে দিলেই বামহাতে গ্লাস তুলে ঢক করে গিলে নিচ্ছে মাথাগরম কর্নেল। বিগত এক যুদ্ধে লোকটার কনুই পর্যন্ত ডানহাতটা প্রতিপক্ষের গোলার আঘাতে ছিঁড়ে উড়ে গিয়ে পড়েছিল দুই শ’ গজ দূরে। পিন গেঁথে বুকের কাছে আটকে রেখেছে সে ইউনিফর্মের হাতা। এখন যুদ্ধের সময় তলোয়ার ধরে বামহাতে।

‘হ্যাঁ, আসলেই পরাজিত হচ্ছে দক্ষিণ,’ মাথা নেড়ে ড্রিঙ্কে চুমুক দিল জেনারেল। ‘প্রেসিডেন্ট জেফ ডেভিসের মাথা আর পেটে জঘন্য পচা, দুর্গন্ধময় পায়খানা! তার কোলে বসে আহ্লাদে আটখানা হয়ে ছ্যার ছ্যার করে ঝাঁজালো হলুদ প্রস্রাব ছাড়ছে জেনারেল রবার্টস ই. লি। ওই দুই হারামজাদা কিছু পারবে না, করবেও না।’

জেনারেলের কথা শুনে তাল মিলিয়ে বাজে মন্তব্য করতে লাগল অপর তিনজন।

জেনারেল লি আর প্রেসিডেন্ট ডেভিস সেসব শুনলে ভিরমি খেয়ে মেঝেতে পড়ে সঙ্গে সঙ্গে প্রাণ ত্যাগ করত।

‘তবে একটা কথা,’ সন্দেহ নিয়ে বলল জেনারেল, ‘কাজটা কি সত্যিই সম্ভব, মিস্টার নোভাক? সত্যিই কি তাতে বিপর্যয় ঠেকাতে পারব আমরা?’

‘সবই তো বললাম,’ আত্মবিশ্বাসী জবাব নোভাকের, ‘আমার কথামত চললে, এটা এক শ’ ভাগ নিশ্চিত, বদলে যাবে যুদ্ধের মোড়।’

‘তো দেরি না করে কাজে নামুন না,’ সমস্বরে বলল তিন আর্মি অফিসার। ‘শেষ চেষ্টা করে দেখা যাক একবার!’

মাথা দোলাল নোভাক। ‘আজই খবর দেব আমার দলের ছেলেদেরকে।

আগেই রাজকীয় লাঞ্চ সেরেছে তারা। খালি ডিশগুলো সরানো হয়েছে টেবিল থেকে। বিদায় নিয়েছে বাটলার। ড্রিঙ্ক দেয়ার জন্যে রয়ে গেছে শুধু কালো চামড়ার সেই ক্রীতদাসী তবে মিটিং শেষ হওয়ায় তাকে হাতের ইশারায় বিদায় করতে চাইল উইলিয়াম এফ. নোভাক। কালোদেরকে কুকুরের চেয়েও অধম মনে করে সে, তাই খেয়াল করল না, ঘর ছেড়ে যাওয়ার আগে তরুণীর ঠোঁটে ফুটে উঠেছে একচিলতে হাসি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *