সৌদি আরবে সেক্স শপ
দুতিন দিন আগে আরব দেশে একটা খবর বেরিয়েছে, সৌদি আরবে সেক্স শপ শুরু হচ্ছে। হাবিজাবি সেক্স শপ নয়, হালাল সেক্স শপ। সেক্স শপ হালাল কখন হয়, আর হারাম কখন হয়, তা আমার জানা নেই। আমার এও খুব জানার ইচ্ছে, সেক্স শপে গিয়ে একা একটা মেয়ে তার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কিছু কিনতে পারবে কিনা। যে দেশে মেয়েদের ন্যূনতম ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই, যে দেশে পুরুষের যৌনদাসী ছাড়া আর কোনও পরিচয় নেই মেয়েদের, সে দেশে সেক্স শপ শুধু পুরুষের যৌন আনন্দের জন্য খোলা হবে, এ নিয়ে নিশ্চয়ই কারও কোনও সংশয় নেই।
সৌদি পুরুষদের হাতে অঢেল টাকা। যত খুশি বিয়ে করতে পারে তারা, কলগার্ল বা দামি পতিতা পেতে দেশের বাইরেও অনেকে সেক্স ট্যুরে যায়, সেক্স শপগুলোতেও ঘুরে বেড়ায়। এখন থেকে কষ্ট করে এর জন্য আর বিদেশ ভ্রমণ করতে হবে না। হাতের নাগালে চলে আসছে সেক্স শপ। যৌন সুখ পেতে এরা শুনেছি চীনদেশ পর্যন্ত যেতে পারে। সৌদি পুরুষদের দেখেছি মেয়েদের দিয়ে অশ্লীল নাচ নাচায় আর শরীরে টাকা ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারে। এসব ভিডিও এখন ইউটিউবেই বিস্তর আছে।
বার্লিনে বিয়াটে উসের সেক্স মিউজিয়াম দেখেছিলাম আজ প্রায় কুড়ি বছর আগে, সে-ই আমার প্রথম কোনও সেক্স মিউজিয়াম দেখা। তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলাম। এরকমও যে কিছু জিনিস হতে পারে, আমার কল্পনার মধ্যেও ছিল না। এখন, ইওরোপ আমেরিকা থেকে সেক্স শপ এশিয়ার প্রগতিশীল দেশগুলোয় এলোনা, লাফ দিয়ে চলে গেলো পৃথিবীর সবচেয়ে রক্ষণশীল দেশে, যেখানে চলমান যৌনাঙ্গ ছাড়া আর কিছু হিসেবে মেয়েদের দেখা হয় না। বিয়াটে উসে সৌদি আরবের পুরুষদের জন্য সেক্স শপ খুলছেন শীঘ্রই।
সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহর ছিল তিরিশটা স্ত্রী। তিরিশ স্ত্রীর এক স্ত্রী আলানোদ আল ফায়াজকে তালাক দিয়েছিলেন আবদুল্লাহ। আলানোদের চার কন্যা প্রাসাদে বন্দি। জাওহার, মাহা, সাহার, আর হালা আক্ষরিক অর্থে বন্দি। তাদের কোনও স্বাধীনতা নেই প্রাসাদের বাইরে পা ফেলার। তাদের দুবেলা খাবারও দেওয়া হয় না, সৎ ভাইগুলো বেধড়ক পেটায়, কারও কারও চল্লিশ পার হয়ে গেছে, কিন্তু এখনও অবিবাহিত। বিয়েটুকু করারও অধিকার নেই। এদের মা আলানোদ বিলেতে থাকেন, দুনিয়ার মিডিয়াকে জানিয়েছেন চারটে মেয়ের দুর্দশার খবর। এতে লাভ কিছু হয়নি। আমেরিকার সরকারই যদি সৌদি আরবের বাদশার সামনে মাথা নুইয়ে চলে, আর কারও কী শক্তি আছে প্রতিবাদ করার! এই সেদিন ওবামা তাঁর স্ত্রী নিয়ে ঘুরে এলেন। একবারও কি বলেছেন ওই চার বন্দী মেয়ের শেকল খুলে দিতে!
এই হচ্ছে সৌদি আরব, যা তার প্রাণে চায় তাই সে করবে। সৌদি মেয়েদের আজ বোরখা ছাড়া ঘরের বাইরে বেরোতে দিচ্ছে না। মেয়েরা কথা বলতে পারছে না। পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলা হারাম, তাদের সঙ্গে গাড়িতে চড়া হারাম। পুরুষ দ্বারা ধর্ষিত হয়, আবার সে কারণে কঠিন শাস্তিও পায় তারা। সপ্তম শতাব্দীর আইন চলছে এই একবিংশ শতাব্দীর সৌদি আরবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। রাইফ বাদাভিকে আজও চাবুক মারা হচ্ছে মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতো বলে। কোনওরকম আধুনিকতা আর সভ্যতার তোয়াক্কা না করে দিব্যি আছে সৌদি আরব। বিশ্বের দেশগুলোকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে। গরিব মুসলিম দেশগুলোতে পাচার করছে মৌলবাদ। চরিত্রহীন, নীতিহীন দেশটিকে শিক্ষা দেওয়ার ইচ্ছে কোনও চরম নীতিবান দেশেরও নেই।
সৌদি পুরুষের কী সেবা করতে পারে সেক্স শপ! সেক্স শপের লেদার, চাবুক, শেকল, মাস্ক ইত্যাদি এখন দেদার ব্যবহার করবে পুরুষরা। মেয়েদের বাধ্য করবে সাব-ডোম রোল প্লে করতে। শুরু হবে মেয়েদের ওপর আরেক রকম যৌন অত্যাচার। কিন্তু মুখ বুজে সবই সইতে হবে তাদের।
সুখটা পুরুষের জন্যই। মেয়েরা সত্যিকার কোনও যৌন সুখ পাবে না। মৌলিক অধিকারই যাদের নেই, তাদের আবার যৌন-অধিকার কী! যৌন অধিকার বা যৌন স্বাধীনতা যাদের নেই, তাদের যৌন সুখও নেই। যৌনদাসীরা যৌন সুখ উপভোগ করে না। বন্দিকে প্রথম মুক্তি দিতে হয়।
মেয়েরা নিজের জীবনটা উৎসর্গ করে গেলো পুরুষদের নানা কিসিমের সুখের জন্য। জানি না কবে রুখে দাঁড়াবে সচেতন সৌদি নারী-পুরুষ। সময় যে চলে যায়।