সিয়াম – ১

প্রথম দর্শনে
                       ত্রিশরণ মহামন্ত্র যবে
                             বজ্রমন্দ্ররবে
           আকাশে ধ্বনিতেছিল পশ্চিমে পুরবে,
           মরুপারে, শৈলতটে, সমুদ্রের কূলে উপকূলে,
           দেশে দেশে চিত্তদ্বার দিল যবে খুলে
                 আনন্দমুখর উদ্‌বোধন, —
           উদ্দাম ভাবের ভার ধরিতে নারিল যবে মন,
                 বেগ তার ব্যাপ্ত হল চারিভিতে,
           দুঃসাধ্য কীর্তিতে, কর্মে চিত্রপটে মন্দিরে মূর্তিতে,
                 আত্মদানসাধনস্ফূর্তিতে
                       উচ্ছ্বসিত উদার উক্তিতে,
           স্বার্থধন দীনতার বন্ধনমুক্তিতে, —
           সে-মন্ত্র অমৃতবাণী হে সিয়াম, তব কানে
                   কবে এল কেহ নাহি জানে
           অভাবিত অলক্ষিত আপনাবিস্মৃত শুভক্ষণে
                   দূরাগত পান্থসমীরণে।
                 সে-মন্ত্র তোমার প্রাণে লভি প্রাণ
           বহুশাখাপ্রসারিত কল্যাণে করেছে ছায়াদান।
                       সে-মন্ত্রভারতী
                     দিল অস্খলিত গতি
           কত শত শতাব্দীর সংসারযাত্রারে —
                       শুভ আকর্ষণে বাঁধি তারে
                       এক ধ্রুব কেন্দ্র-সাথে
                       চরম মুক্তির সাধনাতে, —
           সর্বজনগণে তব এক করি একাগ্র ভক্তিতে,
                 এক ধর্ম, এক সংঘ, এক মহাগুরুর শক্তিতে।
           সে বাণীর সৃষ্টিক্রিয়া নাহি জানে শেষ,
           নবযুগ-যাত্রাপথে দিবে নিত্য নূতন উদ্দেশ;
                 সে বাণীর ধ্যান
           দীপ্যমান করি দিবে নব নব জ্ঞান
                 দীপ্তির ছটায় আপনার,
           এক সূত্রে গাঁথি দিবে তোমার মানসরত্নহার।
                 হৃদয়ে হৃদয়ে মিল করি
                       বহু যুগ ধরি
           রচিয়া তুলেছ তুমি সুমহৎ জীবনমন্দির,-
                       পদ্মাসন আছে স্থির,
           ভগবান বুদ্ধ সেথা সমাসীন
                   চিরদিন —
           মৌন যাঁর শান্তি অন্তহারা,
           বাণী যাঁর সকরুণ সান্ত্বনার ধারা।
      আমি সেথা হতে এনু যেথা ভগ্নস্তূপে
      বুদ্ধের বচন রুদ্ধ দীর্ণকীর্ণ মূক শিলারূপে,
           ছিল যেথা সমাচ্ছন্ন করি
                 বহু যুগ ধরি
                       বিস্মৃতকুয়াশা
           ভক্তির বিজয়স্তম্ভে সমুৎকীর্ণ অর্চনার ভাষা|
                 সে-অর্চনা সেই বাণী
                       আপন সজীব মূর্তিখানি
           রাখিয়াছে ধ্রুব করি শ্যামল সরস বক্ষে তব,-
                 আজি আমি তারে দেখি লব, —
                       ভারতের যে মহিমা
           ত্যাগ করি আসিয়াছে আপন অঙ্গনসীমা
                 অর্ঘ্য দিব তারে
           ভারত-বাহিরে তব দ্বারে।
                 স্নিগ্ধ করি প্রাণ
               তীর্থ জলে করি যাব স্নান
                     তোমার জীবনধারাস্রোতে,
               যে নদী এসেছে বহি ভারতের পুণ্যযুগ হতে —
                      যে যুগের গিরিশৃঙ্গ-‘পর
                 একদা উদিয়াছিল প্রেমের মঙ্গলদিনকর।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *