সিঁদুর দেওয়া তো উঠেই গিয়েছে
‘ব্যাবসাটা ভালোই, কী বলো? বেশ লাভজনক!’
‘কোন ব্যাবসার কথা বলছ, ধান, গম, তেল?’
‘না রে ভাই, কিডন্যাপিং। ধরো তোমাকে তুলে নিয়ে গেল! এই মর্নিংওয়াক করছ। একটা গাড়ি এসে দাঁড়াল। টাটা, গুডবাই।’
‘এখন তুলতে এলে, আটটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। দু-কাপ চা খাব, তারপর আমার ডাক আসবে। তারপর আমি মুক্ত পুরুষ হয়ে বলব, চলো ব্রাদার।’
‘মামার বাড়ি! অত খাতির নেই। ওদের কাছে দুটো জিনিস থাকবেই থাকবে। প্ল্যানিং অ্যান্ড সিপড। লোক্যাল এজেন্ট আগে দেখবে, মালটা মালদার কি না! এর পর তোমার ফাইল যাবে হেড কোয়ার্টারে। সেটা মুম্বইতে হতে পারে, আবার দুবাইতেও হতে পারে। সেখান থেকে সেলফোনে সিগন্যাল আসবে, ‘বিপ, বিপ, বিপ।’ এদিককার এজেন্টরা উত্তর দেবে, ‘পিপ, পিপ, পিপ।’
দুই প্রবীণে এই রকম কথা হচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে।
‘এর পর মালটাকে নিয়ে গিয়ে আড়তে ফেলবে। গিয়ে দেখবে আরও গোটাকতক মাল গুদামে মজুত। গলায় টিকিট ঝুলছে। লেখা আছে নাম, ঠিকানা। ফোন নং বয়েস। ক্যাচ ডেট, অর্থাৎ কোন তারিখে পাকড়েছে। আর বড় অক্ষরে লেখা-ডিম্যান্ড। কত টাকা চাওয়া হয়েছে।
‘এই অবস্থায় তুমি একটা মজা দেখবে। ধরো, তোমার টিকিটে তোমার ভ্যালু ধরেছে দশ লাখ, আর তোমার পাশে যে মালটা, টিকিটে তার ভ্যালু এক কোটি টাকা। সে তোমার সঙ্গে কথা বলবে না। তুমি হয়তো গায়ে পড়ে জিগ্যেস করলে, কী দাদা! লাঞ্চ হো গিয়া! সে মুখ ফিরিয়ে নেবে। সে যে তার ভ্যালু জেনে গিয়েছে। তার ওপাশের মালটার ভ্যালু তিন কোটি। সে তো চোখ বুজে বসে আছে অহংকারে। সবচেয়ে দামি মাল। যতদিন না তোমাকে হরণ করা হচ্ছে, ততদিন তোমার ‘ভ্যালু’ জানা যাবে না।’
‘এর পর একটা ফোন আসবে। ও পাশে ভারী গলা—এই তোর বাপকে ধরেছি। এক কোটি টাকা দিয়ে নিয়ে যা। একটু ভেঙেচুরে গিয়েছে। মেরামত করে নিস।’
‘ছেলে ফোন ছেড়ে দিয়ে কী করবে বল তো?’
‘কী’
‘মায়ের সঙ্গে পরামর্শে বসবে। মা কী করা যায়? অনেক চাইছে। এত কস্টলি বাবা নিয়ে কী হবে?’ ছেলের মা বলবে, ‘খদ্দের পায় তো অন্য কোথাও ঝেড়ে দিতে বল। নয় তো ওদের স্টকেই পড়ে থাক। কিছুদিন রাখলেই বুঝবে কী মাল?’
‘যদি মেরে ফেলে?’
‘তোর মনস্কামনা পূর্ণ হবে। আর আমি হব মর্ডান বিধবা!’
দুই প্রবীণের আলোচনায় তৃতীয় আর একজন এসেছেন অনেকক্ষণ। রাউন্ড চলছে। তৃতীয় প্রবীণ বললেন, ‘একালে আবার সধবা, বিধবা! সিঁদুর দেওয়া তো উঠেই গিয়েছে। বিধবারা আর থান পরে না। টেলিফোনে, ইন্টারনেটে বিয়ে হয়।’
‘হ্যাঁ ভাই, সেই সমাজ আসছে। যে সমাজে বাপ-মায়ের নাম জিগ্যেস করাটা হবে অসভ্যতা। কোথা থেকে এল ওই ব্যাক ডেটেড বুড়োটা। বলে, বাপের নাম কী, মায়ের নাম কী? বাপের নাম ‘এক্স’, মায়ের নাম ‘ওয়াই’। ছেলের নাম ‘ জেড’।
‘জেব্রা সোসাইটি’। ‘অ্যালজেব্রার ফর্মুলায় চলছে। ‘‘X×Y=Z’’
‘একটা ব্যাপার ‘ক্লিয়ার’। যম ছাড়া কেউ আমাদের নেবে না—’নো টেকার। তাও তো নিত্য দু’বেলা শুনতে হয় সহধর্মিণীর আক্ষেপ—’দেখবি, ওই ঢকঢকে শরীর নিয়ে হাঁপাতে-হাঁপাতে একশো বছর টেনে দেবে। শচীনের জাত। সেঞ্চুরি না করে উইকেট ছাড়বে না।’ ছেলে ভরসা দেবে, কিচ্ছু ভেবো না, যাকে নিয়ে আসছি অ্যায়সা টাইট দেবে!’
‘টাইট দেবে কী করে? বাড়িটা নিজের নামে, কাঁড়ি টাকা ব্যাংকে নিজের নামে। ডাঁট মেরে বলে শুনিস না, শেষকালে যে আমার সেবা করবে, সব মালকড়ি তাকে দিয়ে যাব।’
‘এদের কী বলে জানো মা, মজুতদার বাপ।’
‘সেবাদাসী রেখে দেখুক না। কাগজে পড়িস তো, গলা টিপে রেখে যাবে।’
‘সে ভয়টা তোমার, গয়না তো সব তোমার আলমারিতে।’
অবশেষে তিন ভ্রমণকারীর সমবেত খেদোক্তি—’রমণীয় রমণীরা কেন এমন ভীষণ ভয়ংকরী!’