সাদা বিছানা
সুদক্ষিণা মুখে ক্রিম ঘসছিল। জানালা খোলা। চৈত্রের ঝড়ো হাওয়া কদিন থেকেই বেশ জোর বইছে। কেমন সব অগোছালো করে দেয় গাছপালা, জানল বিছানার চাদর। সকালের দিকে থমকে থাকে। বেলা যত বাড়ে হাওয়ার জোর তত বাড়ে। মাঘ-ফাল্গুনে মশার উৎপাতাটা ঝড়ো হাওয়ায় এক সময় উড়িয়ে নিয়ে যায়। সন্ধ্যায় বারান্দায় বসে আকাশ দেখার অবসর মেলে। কনকেন্দু বিছানায় শুয়ে সুদক্ষিণার ক্রিম ঘসা দেখছিল। সুদক্ষিণার এগুলো সহবাসের আগেকার প্রস্তুতি। ভোজে বসার আগে কলাপাতা ধুয়ে নেওয়ার মতো। শরীরে তার এখন কেমন জ্বর জ্বর লাগছে। বোধ হয় সুদক্ষিণা আগে থেকে এ-সব করে জানিয়ে দেয়, আমি কিন্তু রেডি হচ্ছি। তুমি নিজেকে ঠিকঠাক করে নাও। আজ আমার পৃথিবী আবার নতুন হয়ে গেছে।
কনকেন্দু হাসল।
অফিস থেকে তার ফিরতে আজ একটু দেরিই হয়েছে। রাস্তাঘাট ভালো না। সে ফিরে না আসা পর্যন্ত বাড়িটা কেমন অস্বস্তির মধ্যে থাকে। সে ফিরলেই একটা রাতের মতো সুদক্ষিণা কেমন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। যাক কারো জন্য আর আশঙ্কা নিয়ে বারান্দায় পায়চারি করতে হয় না, অথবা খুট করে গেট খোলার আওয়াজের জন্য তাকে বসেও থাকতে হয় না। সুদক্ষিণা তখন যেন বাড়ির সব কাজ বড়ো নিখুঁত ভাবে সেরে ফেলতে পারে।
আয়নায় মুখ দেখছিল সুদক্ষিণা।
পর্দা সরিয়ে পাপু ডাকল, মা।
তোমরা এখনও ঘুমাওনি! বিছানা থেকে নেমে এলে কেন!
পাপু পর্দা সরিয়ে মাকে দেখছিল।
পেছনে আর একটা মুখ। ঝুমকি।
মা, দাদা আমার বালিশ দিচ্ছে না।
সুদক্ষিণা নিজেকে সামলাচ্ছিল। এবং যেন একটু ক্ষোভও সৃষ্টি হয়েছে সুদক্ষিণার ভেতর। এটা কার উপর কনকে জানে। মা বুড়ো মানুষ, সুদক্ষিণা বোঝে না এই দুটো দৈত্যকে সামলানো কত দায় একজন বুড়ো মানুষের পক্ষে।
কনকেন্দু বলল, চল দেখছি। সে পাপুকে বলল, তোরা শান্তিতে তোর মাকে একটু ঘুমোতে যেতে দিবি না! ওর বালিস দিচ্ছিস না কেন!
ও আমারটা নিয়েছে। নিজেরটা কী করেছে কে জানে! বা
রান্দা পার হয়ে ডানদিকের ঘরটায় দুটো খাট। একটাতে মা, পাশেরটাতে পাপু আর ঝুমকি। মার চোখে চশমা, সামনে বই। বোধ হয় কোনো ধর্মগ্রন্থ হবে। রাত করে মার এ-সব পড়ার অভ্যাস। সাদা থান, সাদা বিছানা, সাদা বালিসে মার বিছানাটা তার আজ কেন জানি সহসা আদ্ভুত ঠেকল। সে ডাকল, দেখ মা এদের কাণ্ড।
কখন নেমে গেলি! কী হয়েছে!
কনকে দেখল, তার মা উঠে বসেছে। তারপর বইয়ের ভাঁজে চশমাটা রেখে নীচে নেমে এল। দরজা থেকে দুজনের হাত ধরে টেনে নেবার সময় বলল, তোদের চোখে ঘুম নেই! কখন থেকে খটাখটি করছিস। বিছানায় ওঠ।
পাপু উঠে গেল। ঝুমকি উঠল না।
ঝুমকি বলল, আমার বালিশ পাচ্ছি না ঠাকুমা। দাদা কোথায় লুকিয়ে রেখেছে।
মারব, আমার নামে মিছে কথা বললে।
কনকেন্দুর দিকে তাকিয়ে মা বলল, তুই যা। দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে যাস। আমি দেখছি।
কনকেন্দুর কেমন লজ্জা লাগছিল মার দরজা বন্ধ করে দেওয়া দেখতে। দরজাটা খোলাই থাকে। ও-ঘর দিয়ে রাতে বাথরুমে যেতে হয়। বাবা প্ল্যানে ওই একটা মস্ত ভুল করেছিলেন বাড়িটা করার সময়। তখন অবশ্য বাড়িতে দুই কাকা থাকতেন। জ্যাঠামশাই থাকতেন। এক একটা ঘর ছিল এক একজনের জন্য। এ ঘরটা খাবার ঘর হিসাবে ব্যবহার হত। ওরা বাড়ি করে উঠে যাবার পর, নীচের তলাটা বাবা ভাড়া দিয়ে দেন। এতগুলো ঘরের সত্যি দরকার হয় না। ওপরে তিনখানা ঘর। একটা বসার। ওটা সিঁড়ির মুখে পড়ে। মার ঘরটা কড়িডোরের মুখে। তাদের ঘরটা একেবারে দক্ষিণ ঘেঁষে। জানলায় দাঁড়ালে আগে বড়ো মাঠ দেখা যেত। এখন মাঠও নেই—সেইসব গাছপালাও নেই। কেমন ঘিঞ্জি। মাঝে মাঝে মনে হয় এটা আর বড়ো শহরের উপকণ্ঠ নয়। বরং মূল শহরটাই যেন এখানে উঠে এসেছে।
কনকেন্দু করিডোর ধরে হাঁটার সময় এ-সব ভাবছিল। কারণ কনকে জানে মা দরজায় ছিটকিনি তুলবে না। রাতে বাথরুম যেতে হলে মাকে ডেকে তুলতে হবে। এসব কারণে মা আর দরজায় ছিটকিনি তুলে দেয় না। সে বলতেও পারে না, আজ তুমি ছিটকিনি তুলে দাও। নীচের তলায় আলগা একটা বাথরুম আছে। বাড়িতে লোজন বেশি হলে ওটা খুলে রাখা হয়। এমনিতে বন্ধ থাকে। নীচের তলায় ভাড়াটেরা নাহলে সেটাও দখল করে নেবে। এই একটা ভয় আছে কনকেন্দুর।
সুদক্ষিণার মাঝে মাঝে কী হয়। সহবাসের ব্যাপারে কেমন ওর শরীরে এক ধরনের জোয়ারভাটা আছে। সুদক্ষিণা আসার পর তার এটা মনে হয়নি। কিন্তু সাত-আট বছরের অভিজ্ঞতায় এটা মনে হচ্ছে তার। মাসখানেক সুদক্ষিণার জোয়ার থাকে, মাসখানেক ভাটা চলে। পুরুষ মানুষের বোধ হয় এটা থাকে না। তার কাছে একজন নারী সব সময়ই উষ্ণতা ছড়িয়ে রাখে। তবে একই ভাবে কতদিন আর এক জানলায় বসে গভীর নীল আকাশ দেখা যায়। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় জানলাটা বন্ধ থাক। কিন্তু জোয়ারের সময় সুদক্ষিণা, জানলাটা নিজেই খুলে দেবে। তার ভালো লাগা মন্দ লাগা নিয়ে যেন সুদক্ষিণার কিছু আসে যায় না। তখন এক ধরনের ক্লান্তিকর আকাশের নীচে সে বসে আছে এমন মনে হয়। পাশ ফিরে চুপচাপ শুয়ে থাকার চেষ্টা করেও পারে না। সুদক্ষিণা, ঠিক এক সময় না এক সময় তাকে অস্থির করে তুলবেই।
ঘরে ঢুকতেই সুদক্ষিণা বলল, দরজাটা বন্ধ করে দাও।
দরজাটা বন্ধ করে দিতে কনকেন্দুর অস্বস্তি হচ্ছিল। পাপু কিংবা ঝুমকি যে কোনো সময় এসে দরজা ধাক্কাতে পারে। কারণ ওরা যে একটা বালিশ নিয়ে পড়েছে, সেটা মার পক্ষে বের করা কতটা কঠিন সুদক্ষিণা বোঝে না। ঝুমকি ও ঘরে এমনিতেই শুতে চায় না। সে ফাঁক পেলেই উঠে এসে মার পাশে শুয়ে থাকে। বছর খানেক আগেও ওকে ঘুমোলে মার ঘরে তুলে দিয়ে আসতে হত। এখন অবশ্য বুঝেছে, কী বুঝেছে জানে না, তবু আর মার সঙ্গে শোবে, বাবার পাশে শোবে এমন বায়না ধরে বসে থাকে না।
সুদক্ষিণা এ বাড়িতে বেশ কম বয়সেই এসেছিল। কুড়িও পার হয়নি। কনকেন্দু বাবার একমাত্র সন্তান। পাসটাশ করে যাবার দৌলতে সে দামি চাকরিও পেয়ে গেছিল। ওকে বেকার থাকতে হয়নি। একদিনও। বাবা কম বয়সে ছেলের বিয়ে দিয়ে যেন একটা জীবনের বড়ো কাজ করে ফেলেছেন—যেটা অনেক বাবাদের পক্ষেই সম্ভব হয় না, এ-কারণে সে, দেখেছে, বাবার যাদুবিদ্যা আছে কোনো, কিংবা বাবা ঠিক টের পেয়েছিলেন, কম বয়সে বিয়ে দিলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রগাঢ়তা বাড়ে। তা না হলে, সে এই বয়সেই এত সংসারী হয়ে উঠবে কেন। যেন সুদক্ষিণাকে খুশি রাখা ছাড়া পৃথিবীতে তার আর অন্য কোন দায়িত্ব নেই।
কনকেন্দু দেখল, সুদক্ষিণা নতুন পাট ভাঙা শাড়ি পরছে। সে যে দরজাটা বন্ধ করেনি, সাজগোজের বহরে সুদক্ষিণার সেটা খেয়াল নেই। নাকে নথ পরেছে। নথ পরলে সুদক্ষিণার কাছ থেকে সে আর কিছুতেই দূরে সরে থাকতে পারে না। কিংবা, শাড়ি পেঁচিয়ে পরার সময় স্তন আলগা, সুদক্ষিণা তখন চুমো খাবার বড়ো আগ্রহ বোধ করে। চুমোর সঙ্গে রোজকার সেই অভ্যেসের কথাটাও বের হয়ে আসে—তুমি সুদক্ষিণা এখনও সুইট সিকসটিন। কবে টুয়েন্টি হবে।
সুইট সিকসটিন বললেই যেন এক ঝড় উঠে যায়—চোখ অলস হয়ে আসে। সারা আকাশময় ঘন গভীর বিদ্যুতের ছটা মুহুর্মুহু জ্বলে ওঠে। নারী বড়ো সুধাময়ী, এত সুধাময়ী যে সে তখন আর স্থির থাকতে পারে না। সুদক্ষিণার কাছে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়, হাত ধরে। দুজন হাঁটে পাশাপাশি। এবং আঁচল খসে পড়ে। চোখের কাজল চিক চিক করতে থাকে। সারা শরীরে সুঘ্রাণ ওঠে। সুদক্ষিণার নারী মহিমা বড়ো রহস্যজনক হয়ে উঠে তখন।
দরজাটা বন্ধ করলে না।
কনকেন্দু বলল, দিচ্ছি।
সুদক্ষিণা ব্লাউজের নীচে এবং বগলে পাউডার ছড়াচ্ছে।
কনকেন্দু বলল, আমার ঘুম পাচ্ছে।
সুদক্ষিণা বলল, শুয়ে পড় না। কে তোমাকে জেগে থাকতে বলেছে।
এ সময় কনকে একবার সকালের সুদক্ষিণাকে ভাবল। সকাল হলে কে বলবে, এই সুদক্ষিণা রাতে যাত্রার সখির মতো সহবাসে যাবার জন্য সাজতে বসেছিল। সংসারে সে মা, তার আর তখন কোন পরিচয় থাকে না যেন। এই পাপু ওঠো। এই ঝুমকি ওঠ মা। হাত মুখ ধুয়ে নে। স্কুলের গাড়ি চলে আসবে। ওঠ ওঠ। এক মুহূর্ত বিশ্রাম নেই। বাথরুমে যাবার আগে কনকেন্দুর চা, বাথরুম থেকে এলে কনকেন্দুর দাঁত মাজার ব্রাশ, আবার চা, ছেলেমেয়ের জলখাবার, সুদক্ষিণা কোন সকালে ওঠে তার স্নান বাথরুম কখন সব শেষ, কেউ টের পায় না। স্নান সেরে কাজের মেয়ের হাতে সব কাচাকাচির ভার দিয়েই রান্নাঘরে এবং এক হাতে তখন সে অতি আয়াসে সব করে যাবে।
সুদক্ষিণা পর্দাগুলো ভালো করে টেনে দিচ্ছে। বিকালে আলতা পরেছে।
কনকেন্দু জানে এমন তার মাসখানেক কী দু-মাস। কনকেন্দু তখন রাজার মতো। নিজেকে যাত্রার সখা সাজতে হয় না। সে নিজে থেকে কিছু না বললেও দেখা যায় এ সময়টায় সুদক্ষিণার মধ্যে প্রবল বাতাস যেন সব উড়িয়ে নিয়ে যেতে চায়। কনকে ইচ্ছে করলে বলতে পারে, শরীর ভালো নেই। যেমন, ভাটার সময়। সুদক্ষিণা প্রায় এমন কথা বলেই এড়িয়ে যায়। ভাটার সময়টাও মাস দু-মাসে। একবার তো মাস চার পাঁচ। তখন সে কিছুতেই সুদক্ষিণার শরীরে হাত দিতে পারে না। তখন অভিমান এবং যতরকমের ভালোবাসাবাসির কথা। কিন্তু সুদক্ষিণার এক কথা, পেটের নীচটায় ব্যথা।
ডাক্তার দেখালে হত না।
না, আর না। যা সব ডাক্তার-হাত দিতে পারলেই বাঁচে। আর ও-মুখো হচ্ছি। এমনিতেই সেরে যাবে। ঠিক যায়ও সেরে। জোয়ার এলে রক্তকোশে কোনো কীট বাসা বাঁধলে তার আর নিস্তার নেই বুঝি। দু-পার ভাঙার মতো, নতুন দ্বীপ সৃষ্টি করার মতো, অথবা সবুজ বনভূমি—যা কিছুই হোক না, সুদক্ষিণা তখন সহজেই নিজে থেকে আরোগ্য লাভে উন্মুখ হয়ে ওঠে। অবেলায় সে খোঁপা বাঁধে। উচ্ছল হয়ে পড়ে অতি সহজে। এসব দেখলেই কনকেন্দু টের পায়, নদীর দু-পাড় আবার ফুলে ফুলে ভরে উঠবে। তখন সেও কেমন সকাল সকাল অফিস থেকে ফিরে আসতে বড়ো বেশি আকর্ষণ বোধ করে। দু-চার দিন, তারপর একজন পুরুষ মানুষের যা হয়, ক্লান্তিকর। কারণ তার শরীরে যে রক্ত প্রবাহ সেখানে বোধ হয় অত শুক্রকীটের জন্ম হয় না। অথবা রোজ রোজ সরবরাহ করা একটা বড়ো রকমের শারীরিক দায় হয়ে ওঠে।
সুতরাং কনকেন্দুর কেন জানি ইচ্ছে হল, আজ সে সুদক্ষিণার ডাকে সাড়া দেবে না। সুইট সিকসটিন, কিংবা টুয়েনটিও বলবে না। তোমার ইচ্ছে সব আমি পূরণ করে যাব, আমার উষ্ণতার দাম দেবে না। দীর্ঘকাল এটা চলতে পারে না। সে এ ভাববার সময়ই দেখল, সুদক্ষিণা নিজেই দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে।
এই বাড়িতে সিঁড়িতে ওঠার মুখে দোতালায় কলাপসিবল গেট আছে। মাত্র তারা পাঁচজন মানুষ। মা তাদের ঘরে কখনোই আসে না। তাদের ঘরটায় মাত্র দুজন আসে। পাপু আর ঝুমকি। তার ঘরটায় আছে বড়ো ড্রেসিং টেবিলের আয়না। সুদক্ষিণা চায় না তার এই ঘরে কেউ এসে বসুক। সে যত নিজের আত্মীয় কিংবা মা-মাসি হোক। কনকেন্দু বুঝে উঠতে পারে না সুদক্ষিণার এত জেদ কেন। পাপু ঝুমকি বাদে কেউ তার ঘরে ঢুকলেই রাগ করে। এই ঘরটায় কী আছে? একটা লকার, বড়ো একটা ড্রেসিং টেবিল এবং তার চেয়েও বড়ো বেলজিয়াম কাচের আয়না। ঘরের যে, কোনো জায়গায় দাঁড়ালেই আয়নাটা প্রতিবিম্ব ভাসিয়ে রাখে। আসলে কী সুদক্ষিণা জানে এই দর্পণে তার এবং কনকেন্দুর নগ্ন শরীরের নানারকম ভঙ্গিতে ডজন ডজন অ্যালবাম রাখা আছে। আত্মীয়-অনাত্মীয় যে কেউ আসুক বড়ো আয়নাটা দেখলেই টের পায়, অথবা খুলে দেখতে পারে নরনারীর মধ্যে বীজ বপনের ক্ষেত্রটি কত সরস।
অবশ্য কনকে সুদক্ষিণার এই গোপন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কোনোদিন কোনো প্রশ্ন করেনি। প্রশ্ন করে জানতে চায়নি, এই বেডরুমে কেউ ঢুকলে সে এত রাগ করে কেন। ছোটো শ্যালক এলে একদিন কনকে তাকে নিয়ে এসে এই ঘরে বসিয়েছিল। সেই নিয়ে সুদক্ষিণার কী মুখ ভার। বলেছিল, তোমার বড়ো বুদ্ধিসুদ্ধির অভাব। আর কোনোদিন কাউকে এ-ঘরে এনে বসাবে না।
কী বলছ! সানু তোমার ছোটো ভাই।
সে যাই হোক। বসাবে না বলেছি। শুধু এইটুকু মনে রেখো।
এসব সহস্যের সে কিনারা করতে পারত না। বলত, বসালে কী হয়।
কী হবে আবার। তুমি বুঝবে না, তোমাকে বোঝাতে পারব না।
সেই জন্যই তো বুঝিয়ে বলার দরকার।
বারে, ঘরে ঢুকলে টের পাবে না।
কী টের পাবে।
তোমার মুণ্ড। তারপর খিল খিল করে হেসে দিয়েছিল। বড়ো আয়নাটায় দুজনের প্রতিবিম্ব ভাসছে। চোখ ছিল সুদক্ষিণার সে-দিকে। দেখ তোমার হাত!
হাতে কী আছে!
কী লোম হাতে।
তাতে কী হয়েছে।
আয়নায় বড়ো বেশি প্রকট।
প্রকট কথাটাই সুদক্ষিণা বলেছিল। কেমন সাধু বাংলায় কথাটা বলে যেন বোঝাতে চেয়েছিল, আয়নাটা বড়ো নির্লজ্জ। কোনো কিছু গোপন করতে জানে না।
অ এই! কনকে বুঝতে পেরে বলল, সত্যি এটা মনে হবার কথা। শচীন বিশ্বাসের বাড়িতে এক রবিবার তারা দুজনই আমন্ত্রিত হয়েছিল। আলাদা বসার ঘর তাদের নেই। শচীন তাকে এবং সুদক্ষিণাকে টেনে নিয়ে একেবারে নিজেদের বেডরুমে বসিয়েছিল। সুদক্ষিণা দেখেছিল তেমনি ওদের ঘরে একটা বড়ো আয়না। মুচকি হাসছিল। শচীনের বৌ বলে উঠেছিল, না ভাই তুমি কেন মুচকি হাসলে বলতে হবে। এমন করে ধরেছিল যে সুদক্ষিণার চোখ মুখ কেমন সব গোপন করতে গিয়ে লাল হয়ে গেছিল।
বাস-স্টপে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করেছিল, কী হয়েছিল বলতো? শচীনের বৌ তোমাকে এমন করে জানতে চাইল কেন?
বোঝ না!
কী বুঝব!
দেখলে না শচীন ঠাকুরপো উঠে চলে গেল। ঘরে লোকে এত বড়ো একটা আয়না কেন রাখে সবাই বোঝে। মা-বাবারা তো বোঝে সব। সঙ্গে আর কিছু না দিন আসবাব পত্রের মধ্যে এই একখানা বড়ো আয়না দরকার।
বা, সাজগোজ করতে হলে মেয়েদের তো বড়ো আয়নার দরকার হতেই পারে।
বেডরুমে তাই বলে থাকবে কেন?
কোথায় থাকবে! সাজগোজ তো সবাই বেডরুমেই করে থাকে। কার কটা আলাদা ঘর আছে। এটা অজুহাত। আসল উদ্দেশ্য অন্য।
সুদক্ষিণা খোলামেলা কথা বলতে ভালোবাসে না। আড়ালে আবডালে সব বুঝিয়ে দিয়েছিল। সানুকে কেন, সে আর এখন নিজেকেও এই ঘরে নিয়ে আসতে সংকোচ বোধ করে।
সুদক্ষিণা বুঝিয়ে দেয়, এই দর্পণে যে প্রতিবিম্ব আছে তা নরনারীর স্বপ্নের পৃথিবী। অথবা রাজকন্যার সেই ভ্রমরের কৌটার মতো। একমাত্র কোনো রাজপুত্রই তা খুলে দেখতে পারে।
তারপর বলেছিল, তবে বল, অন্য কেউ এলে তোমার লজ্জা হয় না। আমার তো হয়।
কনকেন্দুর মনে হয়েছিল, সুদক্ষিণার এই ভাবনা মিছে নয়। তারও হয়েছে। বিয়ের আগে সম্পর্কে এক দাদার বাড়িতে গেলে ঠিক এমনি একটি দর্পণের মুখোমুখী হয়েছিল। দর্পণে সে উলঙ্গ ছবি দেখেছে। মানুষের মগজে যে তরল পদার্থ থাকে তার মধ্যে কত আদ্ভুত সব ছবি যে ভেসে বেড়ায়। দর্পণে বৌদি এবং অন্য কেউ, বৌদিটি তার সমবয়সী, সুন্দরী, ছিমছাম, ঠিক অতসী ফুল ফুটলে যে লাবণ্য থাকে, তার গায়ে ছিল সেই লাবণ্য। সে আয়নার দিকে যতবার তাকিয়েছে এমন ছবি ভেসে উঠেছে। সে মনে করেছিল, এমন সে শুধু একলাই ভাবে। সান কিংবা যে কেউ ভাবতে পারে এটা তার মনে হয়নি। সুদক্ষিণার কথায় টের পেয়েছিল, বাথরুমে কিংবা বেডরুমে আয়না সত্যি বড়ো অশোভন। অথচ এটা সরিয়ে ফেললে কোথায় যেন জীবনের প্রতি একটা বড় অবিচার করা হয়।
কনকেন্দুর এই হয়—একটা থেকে আর একটা। সুদক্ষিণা বিছানায় উঠে হাত পা ছড়িয়ে শুল।
কনকেন্দু বলল, জান শরীরটা ভালো নেই। ঘুম পাচ্ছে।
ঘুমোও না। পাশে শুয়ে ঘুমোও। আমিতো কিছু করছি না।
পাপু যদি এসে ডাকে।
আমরা ঘুমিয়ে পড়েছি। ডাকবে কেন!
জান আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, আজ ওরা ডাকবে।
ডাকলে উঠবে না। দরজা খুলবে না বলছি।
কেন দরজা খোলা যাবে না কনকেন্দু বোঝে। আলোটা না নিভিয়ে শুয়ে পড়েছে যখন তখন তার নিস্তার নেই। নিস্তার কথাটাই মনে এল। কারণ, ক-দিন থেকে রোজ রোজ এই যাত্রার সখিটি তাকে নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছে। রোজ সাজা এবং মঞ্চে উঠে আসা। তারপর সায়ার দড়ি আলগা করে রাখা। তার কপালে বড়ো টিপ, সিথিতে চওড়া সিঁদুর—সতীলক্ষ্মী কিংবা সীতা-সাবিত্রীর মতো মুখ। সায়ার দড়ি টেনে খোলার একটা বিশেষ শব্দ হয়। কনকেন্দু তখন যতই অন্যমনস্ক থাকার চেষ্টা করুক, শব্দ রক্তের মধ্যে সহসা ঝড় তুলে দেয়। সে দেখেছে, কখনও যদি আগে শুয়ে পড়ে এবং ঘুম লেগে আসে, বিছানায় ওঠার নামে তাকে ডাকবে।–এই একটু পা দুটো সরাও না। আমি উঠব।
এইসব কথা বলে তাকে জাগিয়ে দেওয়া এমন সব অজুহাতে তাকে সতর্ক করে দেওয়া—যেন যতই ঘুমাও আমি তোমাকে রেহাই দিচ্ছি না।
কনকেন্দু বলল, জান আজ অফিসে একটা কাণ্ড হয়েছে।
কী কাণ্ড!
আমাদের রাধাবাবুর বিরুদ্ধে নালিশ দিয়েছে নীলিমা।
সুদক্ষিণা দুজনকেই চেনে। বিবাহ বার্ষিকীতে একবার তারা এসেছিল। মুখরোচক একটা খবর তখনই সুদক্ষিণা পেয়ে গেছিল।
সুদক্ষিণা পাশ ফিরে শুল। অফিসের কোনো মজার খবর তার এখন শুনতে ভালো লাগছে না। পাশ ফিরে শুয়ে কনকেন্দুর বুকের উপর হাত রাখল।
কনকেন্দু বলল, নীলিমার নালিশ….
সুদক্ষিণা ধীরে ধীরে কনকেন্দুর হাতটা তুলে নিচ্ছে।
কনকেন্দ্র আয়নায় দেখছে, সুদক্ষিণা হাতটা নিয়ে খেলা করছে। উঠে বসেছে। চোখ অলস।
ঝুমকি তখনই দরজায় হুমড়ি খেয়ে এসে পড়ল, ডাকল—মা মা! দাদা আমাকে বিছানায় উঠতে দিচ্ছে না।
সুদক্ষিণা তাড়াতাড়ি শাড়ি দিয়ে শরীর ঢেকে বলল, এই রা করবেন না।
মা শুনছ।
সুদক্ষিণা কনকেন্দুর হাত চেপে ধরছে।
ঝুমকি দরজা ধাক্কাচ্ছে।–মা মা।
কনকেন্দু কী করবে বুঝতে পারছে না। একটা চাদর টেনে সুদক্ষিণার শরীর ঢেকে বলল, কী হল তোদের!
মার গলা তখন, দেখ, পাপু ঝুমকি কী শুরু করেছে!
ঝুমকি বলছে, দাদা আমাকে মেরেছে। আমি দাদার সঙ্গে যোব না। কিছুতেই শোব না।
কনকে উঠে প্রথমে আলোটা নিভিয়ে দিয়ে দরজা খুলল। অন্ধকার ঘরে কনকেন্দু ফিস ফিস করে বলল, চিৎকার করে না। মা ঘুমোচ্ছে। তোমাদের মাকে কত সকাল সকাল উঠতে হয়—এমন করলে চলে। আসলে কনকেন্দু মজা পাচ্ছে। প্রতিশোধটা জববর নেওয়া হচ্ছে। কারণ সুদক্ষিণা এখন কূট কামড়ে পাগল। শরীর তার অলস হয়ে পড়ে আছে। রাগ দুঃখ ক্ষোভ অভিমান সব একসঙ্গে নড়ে চড়ে বেড়াচ্ছে শরীরে। কনকেন্দু মজাটা উপভোগ করতে থাকল। আমার বেলায় একই কষ্ট যেন বলতে চাইল। তখন তুমি অনায়াসে পেট ব্যথা কিংবা ঘুম পাচ্ছে–কখনও হাই তুলে, ইমা—কত রাত হয়ে গেছে, ঘুম না আসতেই সকাল হয়ে যাবে, হাজারটা তোমার অজুহাত। হাত দিলেই তখন তোমাকে বিরক্ত করা হয়। আমার শরীরে তখন এই একই হাজার জোনাকি দপ দপ করে জ্বলে। তুমি সেটা কিছুতেই বুঝতে চাও না।
মা বৌমাকে এ-ব্যাপারে খুব ভয় পায়। বৌমাটির কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে গেলে সংসারে সেদিন নানা রকমের অনর্থ সৃষ্টি হয়। মাথা ধরে। বমি পায়। মা তার নাতনিকে বগলদাবা করে, এই চুপ, তোমাদের মা ঘুমোচ্ছে—কথা বলিস না, লক্ষ্মী সোনা বলে টানতে টানতে দরজার ভেতরে ঢুকিয়ে নিতেই কনকেন্দু ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল, কেমন বেপরোয়া ভঙ্গি পাপুর।-না আমার সঙ্গে শোবে না।
কোথায় শোবে।
আমি কী জানি। আমাকে ও লাথি মারে। ঘুমোতে দেয় না।
কী সব বাজে বকছিস কনকে ধমকে উঠল।
ওর আলাদা বিছানা করে দাও। আমার সঙ্গে ও শোবে না। ও শুলে মাটিতে শুয়ে থাকব আমি।
কনকে অন্য সময় হলে কড়া ধমক দিতে পারত। কিন্তু ওর মা তো ঘুমোচ্ছে। ওর মা সোনার কৌটা খুলে শুয়ে আছে। সে পাপুর সঙ্গে মিছে কথা বলছে মা ঘুমোচ্ছে, আস্তে কথা বল। সবটাই বানানো—নিজের দুর্বলতা টের পেয়ে কনকে কেমন ছেলের সামনে অসহায় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকল। এবং নিজের মধ্যে যেন কোনো অনুশোচনা, অনুতাপ—সন্তানকে এত ছোটো বয়েস থেকে আলগা করে দিলে বোধ হয় ব্যবধানটা খুব তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে যায়। সে দেখল মা, ঝুমকিকে নিজের খাটে তুলে নিচ্ছে তখন। তার দিকে তাকিয়ে মা বলছে, ঠিক আছে, ঝুমকি আমার সঙ্গে শোবে।
মার সাদা বিছানা, মার শরীরে সাদা থান, ধর্মগ্রন্থের মাঝখানে নিকেলের চশমা–মা কি টের পায়, বৌমা ঘুমোয়নি। বৌমা মটকা মেরে শুয়ে থাছে। নিজের সন্তানের কথাও তার এখন মনে পড়ে না! কেমন বিচলিত হয়ে পড়ছে কনকেন্দু।
ঘরে এসে ঢুকতেই সে সুদক্ষিণার ফিসফাস গলা পেল।—এই এস। দরজাটা বন্ধ কর।
বদলা নেবার কথা কনকেন্দুর আর মনে নেই। সুদক্ষিণার আচরণে কেমন এক বেহায়া মেয়েমানুষের আভাস পাচ্ছে। শরীরে কেমন তার বমি বমি ভাব। শরীরটা যে সত্যি মুহূর্তে চুপসে যাচ্ছে। মার সাদা বিছানা, সাদা থান, ধর্মগ্রন্থের মাঝখানে নিকেলের চশমা। মা ঝুমকিকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে আছে। তার কিছু ভালো লাগছিল না। ঝুমকিকে বুকে নিয়ে শুতে পারলে আজ যেন তার বেশি আরাম বোধ হত।
কী হল দরজাটা বন্ধ করলে না।
করছি।
সে দরজা বন্ধ করে জল খেল। তারপর খাটে উঠতেই আবার সুদক্ষিণার আবদার, লক্ষ্মী আলোটা জ্বেলে নাও।
কনকেন্দুর চিৎকার করে উঠতে ইচ্ছে হল। না না, আলো না, আমার ভাল্লাগে রোজ রোজ। কিন্তু সে কিছু বলতে পারে না। যেন বললে সুদক্ষিণাকে অপমান করা হবে। নারী মহিমাকে অপমান করা হবে। নারীর যে আসল রহস্য এবং সরস উর্বরা জমি সে তো কটা বছর—তারপর, সাদা বিছানা, সাদা থান, ধর্মগ্রন্থের মাঝখানে নিকেলের চশমা। সে এসব ভেবেও জোর পাচ্ছে না। তার কোনো ইচ্ছে জাগছে না। আলোটা জ্বালতেও দ্বিধা করছে। যেন আলোটা জ্বালালেই সুদক্ষিণার শরীর বড়ো কুৎসিত দেখাবে। সে কিছুতেই আজ সেটা দেখতে চায় না। সে শুয়ে পড়ে বলল, আজ থাক।
মুহূর্তে সুদক্ষিণা কেমন ক্ষেপে গেল। সে উঠে বসল। নিজে উঠে আলোটা জুেলে, জল খেল। শরীর ঢেকে ঢুকে বলল, আমিতো তোমার কেউ না। আমার জন্য আর তোমার টান নেই। সব বুঝি। আমাকে তুমি একদম ভালোবাস না।
ভালোবাসব না কেন!
না, না, তুমি আমাকে একদম ভালোবাস না!
কনকে আয়নায় সুদক্ষিণার মুখ দেখতে পাচ্ছে। ফুঁসছে সুদক্ষিণা।
কনকে পাশ ফিরে শুয়ে বলল, আস্তে মা শুনতে পাবে। আয়নায় নিজেকে দেখ।
কী দেখব!
দেখই না।
সুদক্ষিণা আয়নায় নিজেকে দেখতেই কেমন ঘাবড়ে গেল। বাইজি মেয়ের মতো তার সাজ গোজ। কনকেন্দুর ঠাট্টা বুঝতে পেরে তার মাথা কেমন আরও গরম হয়ে গেল। সে কাঁপছে। তাকে এত নীচ ভাবে কনকেন্দু। সে ক্ষোভে দুঃখে অপমানে জলের গ্লাসটা পাগলের মতো আয়নায় ছুঁড়ে মারল।
ঝন ঝন শব্দ। কনকেন্দু হকচকিয়ে উঠে পড়ল। এসে জড়িয়ে ধরল সুদক্ষিণাকে। এই ছিঃ কী করলে! কী হয়েছে তোমার। মা, ঝুমকি পাপু ছুটে এসেছে—বাবা বাবা!
মা মা!
কনকেন্দু বলল কিছু হয়নি। হাত থেকে পড়ে কাচের গ্লাসটা ভেঙ্গে গেল। জল খাচ্ছিলাম।
কনকে যখন টের পেল দরজার ও পাশে কেউ নেই, তখন হাত ধরে বলল, ছি এই পাগলামি করার অর্থ কী বলত! তোমার কী হয়েছে।
আমার কিছু হয়নি। আমি তো বাজারে মেয়ে। আমার কী হবে। বলে হাউ হাউ করে কেঁদে দিল।
কনকে আহাম্মক। সে এত বুঝে কিছু করেনি। জড়িয়ে ধরে বলল, এস। ভেতরে তুমি এত ভেঙে পড়বে সত্যি বুঝতে পারিনি।
ছাড় তুমি আমাকে। বাজারে মেয়েকে ছুঁলে তোমার পাপ হবে।
সে এবার নিজেই সুদক্ষিণার বসন আলগা করে দিতে থাকল। জড়িয়ে ধরে বলল, তুমি আমার সতী লক্ষ্মী। তারপর সহবাসে মগ্ন হবার সময় ভাঙা আয়নায় দেখল, তাদের শরীর বড়ো তেড়া-বেতেড়া। এ শরীর যেন কোন এক কালে সুঠাম থাকে—ধীরে ধীরে কাল তাকে এক সময় হরণ করে নেয়।
সকালে ভাঙা আয়নাটা আজ প্রথম সুদক্ষিণা একটা কালো পর্দায় ঢেকে দিল। তারপর চলে গেল মার ঘরে। ঝুমকিকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে এল বাথরুমে। হাত মুখ ধুইয়ে দিল। মুখ মুছিয়ে দিল। যেমন করে একজন মায়ের স্বভাব পড়তে বসানো, টাসক দেখা, চা, দাঁত মাজার ব্রাশ সব ঠিক ঠাক করে দেওয়া, দিনমানের কাজ এ ভাবে সকাল থেকে সুদক্ষিণার শুরু হয়ে গেল।
নারীর অন্য আর এক রূপ আছে। সে জননীই হোক, আর চটুল বাজারে মেয়েই হোক। এটুকু আছে বলেই কনকেন্দুর মনে হয় নারী পুরুষের কাছে এত রহস্যময়ী। চা দিতে এসে সুদক্ষিণা ভাঙা আয়নাটায় দিকে তাকাল না আজ। চোখ টেনে শুধু বলল, তুমিই তো আমাকে ক্ষেপিয়ে দিয়েছিলে। আমার কী দোষ। কেমন সংকোচে এবং লজ্জায় কথাটা বলে বের হয়ে গেল সুদক্ষিণা! আয়নার কালো পর্দাটা তুললেই যেন কনকে আজ এই ঘরে একটা সাদা থান, সাদা বিছানা, ধর্মগ্রন্থের মাঝে নিকেলের চশমা দেখতে পাবে। কনকেন্দুর কেমন একটা ভয় ধরে গেল।