1 of 3

সাংসারিক

সাংসারিক

পনেরো দিন বাড়িটা মিস্ত্রিদের হাতে ছেড়ে দিয়ে গেস্টহাউসে থাকতে হয়েছিল কমলেন্দুকে, সস্ত্রীক। স্ত্রী-র ইচ্ছা ছিল তার বোনের বাড়িতে গিয়ে থাকার। অনেক জায়গা, ওরাও চেয়েছিল কিন্তু কমলেন্দু রাজি হননি। স্ত্রী-র বাপের বাড়ি বলে নয়, আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে থাকাটা তাঁর পছন্দ নয়।

পনেরোদিন পরে একতলা বাড়িটার সবকটা ঘরের চেহারা পালটে নতুন করে মিস্ত্রিরা যখন বিদায় হল তখন ফিরে এলেন ওঁরা। বাড়ির যাবতীয় জিনিসপত্র ছাদের বিশাল ঘরে তুলে রাখা হয়েছিল। মিস্ত্রিরাই সেগুলো নামিয়ে দিয়ে গিয়েছে। সেগুলো যথাস্থানে সাজাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিলেন বনানী। কমলেন্দু যখন বাঁধানো ছবির প্যাকেট খুলছেন তখন বনানী বললেন, না। ওগুলো নিচে নামাবে না।

মানে?

এখন নিচের দেওয়ালগুলো কী দারুণ দেখতে লাগছে। সেখানে পেরেক পুঁতে ওই বিবর্ণ ছবিগুলোকে টাঙাতে হবে না। ওগুলো এখানেই থাক।

কী বলছ তুমি? এই বাড়ি বানিয়েছিলেন আমার ঠাকুরদা। বাবা এখানেই জন্মেছিলেন। তাঁদের ছবি দেওয়ালে টাঙাব না? কমলেন্দু প্রতিবাদ করেছিলেন।

ওগুলো আগের দেওয়ালের সঙ্গে মানাত। তা ছাড়া, সত্যি বলতে গেলে বলতে হয়, তুমি চলে গেলে ওগুলোর কোনও দাম থাকবে না। বনানী নিচে নেমে গেলেন।

স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলেন কমলেন্দু। তুমি চলে গেলে–আজ কথাটা স্বচ্ছন্দে বলতে পারল বনানী! কিন্তু এই সেদিন পর্যন্ত বলত, আমি যেন তোমার আগে যাই! তুমি নেই অথচ আমি আছি এরকম শাস্তি ভগবান যেন না দেন।

ছবিগুলো কাগজের মোড়ক থেকে বের করলেন কমলেন্দু। ঠাকুরদার ছবি। লাঠি হাতে চেয়ারে বসে আছেন। গলাবন্ধ কোট। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তাঁর দিকে, স্কুলজীবন পর্যন্ত ওঁকে দেখেছেন কমলেন্দু। খুব রাশভারী মানুষ ছিলেন। পরের ছবিটা বাবার। কোট পরা। ভালোমানুষ-ভালোমানুষ চেহারা। ঠাকুরদা যতদিন ছিলেন ততদিন বাবা তাঁর ব্যক্তিত্বের আড়ালে চাপা পড়েছিলেন। তৃতীয় ছবিটা মায়ের। ঢলঢল মুখ। ঠোঁটে এক চিলতে হাসি। যে শাড়ি পরে এই ছবিটা তুলিয়েছিলেন সেটা এখনও আলমারিতে ভোলা আছে। চতুর্থ ছবি। পিসিমার। বাল্যবিধবা! অন্ধের মতো ভালোবাসতেন কমলেন্দুকে।

হাতুড়ি আর পেরেক জোগাড় করে ছবি চারটেকে দেওয়ালে তুললেন কমলেন্দু। ঠাকুরদা, বাবা, পিসিমা আর মা। কমলেন্দুর জন্ম হওয়ার পর যে চারজনকে দেখে এসেছে তাঁরা এখন ছাদের ঘরের চার দেওয়ালে। এই ঘরটির সংস্কার হয়নি। বনানী বলেছিলেন, দেওয়ালে যখন ক্র্যাক হয়নি আর বাইরের লোক তো ওই ঘরে যাবে না তখন মিছিমিছি পয়সা খরচ করার কী দরকার। ঠাকুরদার ছবির দিকে তাকিয়ে মাথা নামালেন কমলেন্দু। একটি পিতৃতান্ত্রিক পরিবার কী করে এমন মাতৃতান্ত্রিক হয়ে গেল!

নিচে নামবার সময় বনানীর চিৎকার শুনতে পেলেন তিনি, কী বললি? তিনকেজি ওজন এক একটার? তোর বাবা বাজারে গেলে এককেজির বেশি নিয়ে আসে না। কিন্তু শোন, তিন পিসের বেশি খাবি না। আর খাওয়ার আগে অ্যান্টাসিড খেয়ে নিবি তোরা। ইলিশমাছকে বিশ্বাস করবি না। টুকান কোথায়? হ্যাঁ দে। এইসময় স্বামীকে দেখতে পেয়ে তাঁর দিকে পেছন ফিরে দাঁড়ালেন বনানী, টুকান, শোনো, অত বড় ইলিশ একসঙ্গে রান্না কোরো না। কী বলছ?হ্যালো! বাড়িতে। পার্টি আছে। আটজন আসবে? স্বামী-স্ত্রী। তাহলে তো তোমার খুব পরিশ্রম হবে। বাবান কোথায়? ও যখন ঘুমায় তখন তোমরা কেন টেলিফোন করো? বাবা? হ্যাঁ, তিনি আছেন। ও। আবার পেছনে ফিরে ইশারায় ঘুরলেন বনানী, এক মিনিটের বেশি কথা বলবে না। আমার অনেক কথা আছে।

দ্রুত চলে এসে রিসিভার ধরলেন কমলেন্দু, হ্যালো!

ছেলের গলা, কেমন আছ বাপি?

ভালো। তোরা কেমন আছিস?

ভালো। শোনো, তুমি একটা গাড়ি কেনো। মারুতি জেন। আমি টাকা পাঠাচ্ছি।

গাড়ি। গাড়িতে কী হবে? হকচকিয়ে গেলেন কমলেন্দু।

সারাজীবন বাসে মিনিবাসে ঘুরেছ, এবার একটু আরাম করো। শুনেছি সাড়ে চারের মধ্যে হয়ে যাচ্ছে। কালই টাকা পাঠাচ্ছি।

দূর। পাগলামি করিস না। গাড়ির পেছনে কত খরচ জানিস?

জানি। ড্রাইভার, তেল, মবিল নিয়ে আট হাজারের বেশি হবে না। প্রত্যেক মাসে মায়ের টাকার সঙ্গে ওটা যোগ করে দেবে। বাবা, প্লিজ না বোলোনা।

ছেলের কথার মধ্যেই বনানী বললেন, দাও।

রিসিভার দিয়ে দিলেন তিনি। তারপর স্ত্রীর গলা শুনলেন, তুই যখন দিতে পারছিস তখন নেবে না কেন? তোর বাবা সারাজীবন পুতুপুতু করে বেঁচে থাকল। দিতে যেমন জানতে হয় তেমনি নিতেও শিখতে হয়। গাড়ি থাকলে ভালোই হবে। একটু দূরের কারও বাড়িতে যেতে পারি না। একা, এখন যাব। আমার কোনও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাওয়ার কথা বললে তোর বাবার মুখ তো হাঁড়ি হয়ে যায়। তুই গাড়ি দিলে–।

শ্রবণসীমার বাইরে চলে এলেন কমলেন্দু।

ব্যাপারটা তিনি মানতে পারছেন না। ওই পুতুপুতু করে বেঁচে না থাকলে, অবসর জীবনে দু-বেলা মাছ-মাংস খেয়ে থাকা সম্ভব হত না। তার মধ্যে একমাত্র ছেলেকে ইলেকট্রনিক্স পড়িয়েছেন, বিদেশে চাকরি করতে যাওয়ার সময় প্লেনের ভাড়া দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত নিজের পয়সায় সংসার চালাচ্ছেন। ছেলের সাহায্য নেননি। যে টাকা পাঠায় তার মায়ের শখ, মায়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকার পরিমাণ কত হয়েছে তা জানতেও চান না তিনি। ছেলেকে বলেছেন, যেদিন আমি চালাতে পারব না সেদিন তোমাকে বলব, ততদিন আমার স্বাধীনতায় হাত দিও না। ছেলে প্রতি সপ্তাহে ফোন করে আর তার মা একঘণ্টা ধরে অবান্তর কথা বলে যান, একবারও ভাবেন না কত খরচ হচ্ছে। প্রথম দিন কথাটা বলে শুনেছিলেন, খরচটা আমার ছেলের হচ্ছে, তোমার গায়ে। লাগছে কেন? ও আয় করছে ভালো খরচও করছে। তোমার মতো লোকাল কল দু-মিনিটে শেষ করার জন্যে বিদেশে যায়নি!

এখন এই গাড়ি কেনার প্রস্তাবটা তিনি গ্রহণ না করলেও বনানী করবেন। ছেলেকে যদি বলেন তিনি গাড়ি কিনবেন না তাহলে সে তার মাকে কিনতে বলবে। সেই গাড়ি কেনা থেকে ড্রাইভার খোঁজার তদারকি তো তাঁকেই করতে হবে। কিছুতেই অস্বস্তি সরাতে পারছিলেন না কমলেন্দু।

বিকেলবেলার মধ্যে নৈহাটি থেকে বজবজের যাবতীয় আত্মীয়স্বজন জেনে গেল কিছুদিনের মধ্যেই বনানী গাড়ি নিয়ে তাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন।

কমলেন্দু বললেন, ছেলে ফোন করলে বলে দিও তোমার নামে যেন টাকা পাঠায়, গাড়ি তোমার নামেই কেনা হবে।

বলে দিয়েছি।

ও।

একবার যখন গোঁ ধরেছে তখন গাড়ি নেবে না বুঝে গিয়েছি। ওকে দুঃখ দিয়ে লাভ নেই। তাই বলে দিয়েছি আমার নামে টাকা পাঠাতে। বনানী জানিয়ে দিলেন। কথাটা শুনলেন কিন্তু অস্বস্তিটা তবু থেকেই গেল।

রাত সাড়ে নটার মধ্যে খাওয়াদাওয়ার পাট চুকিয়ে ফেলতে হয়। নটা পর্যন্ত বাংলা সিরিয়াল, সাড়ে নটা থেকে হিন্দি। বিশেষ করে শাঁস ভি না দেখলে বনানীর ঘুম আসবে না। ওইসময় কথা বলা দূরে থাক শব্দ করতেই বিরক্ত হন। পাশের ঘরে বই নিয়ে শুয়ে থাকেন কমলেন্দু। আজ হঠাৎ কী মনে হল চুপচাপ ছাদের ঘরে চলে গেলেন। ভেবেছিলেন ছাদে যাবেন কিন্তু বৃষ্টি নেমে গেল। ছাদের ঘরের আলো জ্বেলে একটা চেয়ার টেনে বসতেই ঠাকুরদার মুখোমুখি। এই মানুষটি তাঁকে সেই বাল্যকালে একটি গল্প শুনিয়েছিলেন। ক্লাস ফাইভ থেকে সিক্সে ওঠার রেজাল্ট বেরুলে আনন্দে নাচতে-নাচতে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির বারান্দায় অবিবাহিত জ্যাঠামশাই বসেছিলেন। বললেন, এদিকে এসো। এবার অঙ্কে কত পেয়েছ? গর্বিত ভঙ্গিতে উত্তর দিয়েছিলেন, একশোতে একশো।

ঠাস করে একটা চড় এসে পড়েছিল তাঁর গালে।

তিনি অবাক হয়ে তাকালেন। জ্যাঠামশাই বললেন, একশোর কম পেলে যে মার খেতে তা মনে

করিয়ে দেওয়ার জন্যে তার টেন পার্সেন্ট নমুনা দিলাম। যাও।

গল্পটি শেষ করে ঠাকুরদা বলেছিলেন, খারাপটা কী জানলে ভালো করার জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা করবে।

হঠাৎ মনে হল তিনি এখন বসে আছেন তাঁর প্রিয়জনের মধ্যে। ছেলেবেলায় ঠাকুরদা এবং বাবা যখন কথা বলতেন তখন তিনি তাঁদের মাঝখানে এসে বসতেন। পিসিমা এসে দাঁড়ালেন। ঠাকুরদার পাশে, মা ভেতরের দরজায়। ঘোমটা দিয়ে। এখন যেন তেমনই হচ্ছে। পিসিমার ছবির দিকে তাকাতেই তিনি বলে উঠলেন, তোর বড্ড বেশি জেদ পুনা। ছেলেটা বিদেশে থাকে, বাপমায়ের জন্যে কিছু করতে ওর ভালো লাগে এটা বুঝিসনা কেন?

সঙ্গে-সঙ্গে ঠাকুরদা ধমক দিলেন, চুপ করো। ও আমার নাতির মতোই কাজ করেছে। কেন ছেলের কাছে হাত পাতবে? আমি কখনও পেতেছি ওর বাপের কাছে। কি পেতেছি?

শেষ প্রশ্ন বাবাকে করায় তিনি নীরবে মাথা নাড়লেন।

মা বললেন, তবে বউমাকে বাধা দেওয়া উচিত নয়। বেচারার এক ছেলে। বিদেশে থাকে, মন তো কেমন করবেই।

ঠাকুরদা বললেন, বউমা, তোমার বিবেচনা বুদ্ধির ওপর আমার আস্থা আছে। পুনার বউকে যখন তোমরা এনেছিলে তখন আমি পৃথিবীতে নেই। কিন্তু ইদানিং সে অকারণে পুনাকে অবজ্ঞা করে। ছেলের গর্বে যেন মাটিতে পা পড়ে না।

বাবা বললেন এবার, এ জন্যে এই হতভাগাই দায়ী। আমি যখন সম্বন্ধ করে বউমাকে এনেছিলাম তখন সে ছিল বড় কোমল। আমরা চলে আসার পর বউমাকে আঘাত দিয়ে-দিয়ে ওরকম করেছে, বেশিদিন অত্যাচারিত হলে বোবাও কথা বলতে শেখে।

চুপ কর। পিসিমা ধমকালেন, ছেলের নিন্দে করার সুযোগ পেলে তোর জিভ চুলবুল করে। চিরটাকাল দেখে এসেছি।

ঠাকুরদা বললেন, যাক গে, আমাদের তো ছাদের ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছ?নিচে কী হচ্ছে দেখতে যাব না। গাড়ি এলে তুমি আবার গদগদ হয়ে তাতে বেরিও না পুনা।

বাবা বললেন, এ হয় না বাবা! বাড়ির বউ সর্বত্র একা হইহই করে ঘুরবে না। ও যাবে তবে ড্রাইভারের পাশে বসবে। বউমা একা পেছনে বসবেন।

কেন? তোর ছেলে কি বাড়ির কাজের লোক যে সামনে বসবে। পিসিমার কথা শেষ হওয়ামাত্র নীচ থেকে গলা ভেসে এল, তুমি ওপরে একা-একা কী করছ। নিচে এসো।

মা বললেন, যা পুনা। তাড়াতাড়ি যা নইলে বউমা আবার বিরক্ত হবে।

ঠাকুরদা বললেন, তুমি স্ত্রৈণ হয়ে গেলে পুনা!

কমলেন্দু সিঁড়িতে পায়ের শব্দ পাওয়ামাত্র উঠে পড়ল, দরজা খুলে নামতে লাগল। বনানী অনেকটা উঠে এসেছিলেন, বলল, কী করছিলে ওপরে?সতুদা এসে বসে আছে।

কে সতুদা? গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞাসা করল কমলেন্দু।

ওমা! তুমি কী গোবিনতার ভাসুরের পো, ভুলে গেলে কী করে?

মনে পড়ল। বিনতা বনানীর মাসতুতো বোন। থাকে চেতলায়। তার ভাসুরকে কয়েকবার দেখেছেন বটে কিন্তু মনে রাখার মতো মানুষ বলে মনে হয়নি।

তিনি হঠাৎ এ বাড়িতে?

আমি আসতে বলেছিলাম। তোমার দ্বারা কতদূর কী হবে তাতে সন্দেহ আছে।

বাইরের ঘরে বসেছিলেন সতুদা। কোনও-কোনও মানুষকে বৃদ্ধ হলেও ঠিক বোঝা যায় না। আজকাল। চুলে কলপ এবং দাঁত বাঁধানো বলেই মনে হল। কমলেন্দু নমস্কার করলেন।

বনানী বললেন, সতুদা গাড়ির সব খবর রাখেন।

খুব রোগা, পরনে পাজামা পাঞ্জাবি, সতুদা বললেন, বাড়িটা বেশ সুন্দর হয়েছে এখন।

বনানী বললেন, নিজে দাঁড়িয়ে থেকে করালাম।

এখন এই বাড়ির সঙ্গে মানানসই গাড়ি চাই। তাই তো? সতুদা বললেন।

হ্যাঁ। ওর নামে। কমলেন্দু না বলে পারল না।

আরে ভাই, যে-কোনও বুদ্ধিমান পুরুষ নিজের নামে কিছু জমায় না। সব স্ত্রীর নামে, হ্যাঁ, গাড়ি তো এখন অনেক, বাজেট কত? সতুদা জিজ্ঞাসা করলেন।

কমলেন্দু স্ত্রী-র দিকে তাকালেন। বনানী বললেন, বেশিদামি নয়। মাঝামাঝি!

অ। তাহলে স্যান্টোস, ওয়াগনার, জেন। সতুদা মনে করার চেষ্টা করলেন।

জেন, জেন। বনানীর মনে পড়ল।

হয়ে যাবে। তবে দিন কুড়ি অপেক্ষা করতে হবে। লাইন আছে। সতুদা বললেন।

কীসের লাইন? বনানী বুঝতে পারলেন না।

গাড়ি যা আসছে তার থেকে চাহিদা বেশি। তোমাদের টাকা জমা দিয়ে অপেক্ষা করতে হবে। আমার যা সোর্স আছে তাতে কুড়ির বদলে দশদিন করতে পারব। তাহলে কালই চলে এসো।

হ্যাঁ, ইন্সস্টলমেন্টে না ক্যাশ ডাউনে নেবে? সতুদা হাই তুললেন।

না, একসঙ্গেই টাকা দেব। চেকে দিলে হবে না?

বনানী জিজ্ঞাসা করল। নিশ্চয়ই হবে। এবার কফি খাওয়াও।

এক্ষুনি খাওয়াচ্ছি। কিন্তু দাদা আপনাকে আর একটা উপকার করতে হবে।

শোনা যাক।

একজন ড্রাইভার দিতে হবে। বনানী বললেন।

কীরকম ড্রাইভার চাই? বেশ স্মার্ট, ভালো চালায়, গাড়ির ছোটখাটো সমস্যার সমাধান নিজেই করে, তিন হাজার টাকা মাইনে, আটঘণ্টা হয়ে গেলে ওভারটাইম। অথবা খুব অলস, গাড়ির কোনও কাজ জানে না, কিন্তু গাড়িটা ভালো চালায়, তেইশ-শো, তে পাবেন।

না, না, অলস চাই না। আর আমরা তো বেশি গাড়িতে উঠব না যে ওভারটাইম দিতে হবে। স্মার্টই ভালো। বনানী বললেন।

একটা কথা বলে রাখি, স্মার্ট যে সে কিন্তু স্মার্টলি চুরি করবে। খালি গাড়ি পেলেই শেয়ারে প্যাসেঞ্জার তুলবে। দশ লিটার তেল কিনতে টাকা নিয়ে আট লিটার কিনবে। কিন্তু গাড়িটাকে খুব যত্নে রাখবে। আর অলস যে তার চুরি করারও সাহস নেই, কোনও গাড়ি যদি তার গাড়িতে টোকা মারে তাহলে সিট থেকে নামবে না। বলবে নেমে কী হবে, শুধু ঝগড়াই হবে। এখন বলো কীরকম ড্রাইভার চাই তোমাদের। সতুদা পা দোলালেন।

বনানী সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে বললেন, তুমি কিছু বলো, তখন থেকে মুখে সেলাই করে বসে আছ। আচ্ছা পুরুষ মানুষ।

সতুদা ঘড়ি দেখলেন। ওরে বাবা। এত রাত হয়ে গিয়েছে খেয়ালই করেনি। আমি এখন উঠছি। আর বাস পাব না মনে হচ্ছে। তোমরা ভেবেচিন্তে কাল জানিও।

সতুদা চলে গেলে কমলেন্দু বললেন, তোমার আজ শাঁস ভি দেখা হল না।

কাল দেখব। আজকের এপিসোড কাল দুপুরে দেখাবে। কিন্তু সতুদা কফি খেতে চেয়েছিল। খাওয়ানো হল না। আমাকেই কথা বলতে হবে আবার কফি বানাতেও হবে। খোকা তো চমৎকার রান্না করতে পারে অথচ তুমি যে অলস সেই অলসই থেকে গেলে। উঠলেন বনানী, ঘড়ি দেখলেন। কলকাতা আর মেরিল্যান্ডের সময় তাঁর মুখস্থ! ছেলের অফিসে ফোন করলেন তিনি। এই ফোন একবারেই বাজে, শুনলে মনে হয় পাশের ঘর থেকে কথা বলছে। খুব সংক্ষেপে বলতে চেষ্টা করেও মিনিট পাঁচ সময় নিলেন সতুদার বক্তব্য ছেলেকে বোঝাতে। ছেলে হাসল, এ তো। তোমরাই ঠিক করে নিতে পারতে। ওই স্মার্ট ড্রাইভারকে রাখো।

সে কী? সে চুরি করবে। বনানী চেঁচালেন।

মা ইনএফিসিয়েন্ট অনেস্টের থেকে এফিসিয়েন্ট ডিস-অনেস্ট অনেক বেশি উপকারে আসে। যে গোরু দুধ দেয় তার চাঁট তো সহ্য করতে হয়ই। ছেলে বলল, ওর মাইনেটা আমি পাঠিয়ে দেব। রাখছি। বনানী রিসিভার রেখে স্বামীর দিকে তাকালেন, ছেলের বক্তব্য জানালেন না। দশদিনের মাথায় গাড়ি এসে গেল। দেখে মনে হল বেগুনি রঙের চকোলেটের বাক্স। সতুদা ড্রাইভারকে নিয়োগ করে বনানীকে নিয়ে গিয়েছিলেন ডিলারের শোরুমে। বাড়ির দরজায়। দাঁড়িয়েছিলেন কমলেন্দু। বনানী গাড়ি থেকে নামার আগেই একটি সুদর্শন স্মার্ট ছেলে তাঁর। দরজা খুলে দিল। সগর্বে গাড়ি থেকে নামলেন বনানী। নেমে বললেন, বাবুকে একটু ঘুরিয়ে নিয়ে এসো।

ঠিক আছে ম্যাডাম।

কমলেন্দু মাথা নাড়লেন, না-না। ঘোরার কী আছে! বেশ ভালো হয়েছে। বেশ।

বনানী বললেন, ওর নাম লিটন। খুব ভালো চালায়।

লিটন হাসল।

এ বাড়িতে দীর্ঘকাল যে প্যাসেজটা খালি পড়ে থাকত তার ওপর ছাদ তুলে গ্যারাজের ব্যবস্থা করেছেন বনানী। গাড়ি সেখানেই রাখা হল।

ম্যাডাম, আজ কি গাড়ি বের হবে? লিটন জানতে চাইলেন।

হ্যাঁ। আজ চেতলায় যাব। এই বিকেল সাড়ে চারটের সময়।

ওকে ম্যাডাম।

তুমি অনেকক্ষণ থাকবে কোথায়? কিছু খেয়েছ?

এমন কিছু নয়।

এক কাজ করো, আজ প্রথম দিন, ওই গলির মোড়ে একটা খাবারের দোকান আছে। গিয়ে খেয়ে এসো। ব্যাগ খুলে কুড়িটা টাকা দিলেন বনানী।

থ্যাঙ্ক ইউ ম্যাডাম। টাকা নিয়ে লিটন চলে গেল।

ঠিক সাড়ে চারটের সময় বনানীর গাড়ি বেরিয়ে যেতেই ফোন বাজল। রিসিভার তুললেন কমলেন্দু। হ্যালো।

গাড়ি পেয়ে গেছ? ছেলের গলা।

হ্যাঁ। তোর মা এনেছে। এখন চেতলায় গিয়েছে দেখাতে।

তুমি তো জানো বাবা মা একটু এইরকম। ওঁকে ওঁর মতো থাকতে দাও, তুমি কিছু বোলো না। তবে তুমি গাড়ি ব্যবহার না করলে খুব দু:খ পাব। ছেলে বলল।

কমলেন্দু বললেন, ঠিক আছে, তোমাকে দুঃখ দিতে চাই না।

আর একটা কথা–। ছেলে বলল, আমার কাছে এসে কিছুদিন থাকো।

আমি? আমাকে বলছ?

হ্যাঁ। এর আগে মাকে যতবার বলা হয়েছে শুনেছি বাড়ি তালাবন্ধ করে যাওয়া যাবে না। আসলে মা এখানে আসতে চাইছে না। এখন এখানে চমৎকার আবহাওয়া, একটুও ঠান্ডা নেই, তুমি এসে ঘুরে যাও।

দেখি।

দু-দিন পরে ফোন করব। ছেলের লাইন কেটে গেল।

সারাজীবন যে চাকরি করেছেন তাতে বিদেশে যাওয়ার সুযোগই হয়নি। পকেটের টাকা খরচ করে যাওয়ার মতো অবস্থা তাঁর কোনওদিনই ছিল না। ছেলে ও-দেশে যাওয়ার পর পাশের বাড়ির দত্তবাবু বলেছিলেন, এবার তো ঘনঘন আমেরিকায় যাবেন। কিন্তু গত তিন বছরেও যাওয়ার কথা ওঠেনি। আজ সন্ধেবেলায় কমলেন্দু খালি বাড়িতে বসে আমেরিকার ম্যাপ দেখছিলেন। কত কী দেখার আছে! নায়গ্রা, গ্রান্ড ক্যানিয়ন, হোয়াইট হাউস। টেলিফোন বাজল।

রিসিভার তুলে কমলেন্দু বললেন, হ্যালো।

কী মশাই, গাড়ি এল? খোকার শ্বশুরের গলা।

কমলেন্দু অস্বস্তিতে পড়লেন। এই লোকটিকে পছন্দ করেন না। টাকা ছাড়া জীবনে আর কিছু চেনেননি। অথচ বউমা ঠিক বাবার উলটো।

হ্যাঁ। খোকা বলেছে বুঝি!

না-না। আপনার ছেলে কি মুখ খুলবে? মেয়েকে জেরা করে জানলাম। তা কী গাড়ি কেনা হল? বেয়াই জিজ্ঞাসা করলেন।

জেন।

সে কী! অন্যের পয়সায় গাড়ি কিনলেন যখন তখন আরও দামি কিনলেন না কেন? আরে মশাই চিরকাল পাইস হোটেলে খেয়ে এলেন তাই তাজ বেঙ্গলে খাওয়ার কথা ভাবতে পারলেন না, হে হে। তা কত পড়ল?

আমি জানি না। আমার স্ত্রী জানেন।

অ। তার মানে বেয়ানের নামে গাড়ি? ভালো।

আপনি কী বলতে চাইছেন? কমলেন্দুর গলা গম্ভীর।

না-না। কিছু না। এ ব্যাপারে কিছু বলা আমার পক্ষে অনুচিত। হ্যাঁ, মেয়ে বলছিল আপনারা। আগে ওখানে যাবেন তারপর আমরা। অর্থাৎ আপনারা না ঘুরে এলে আমাদের যাওয়া হবে না। তা যাচ্ছেন কবে?

কোনও ঠিক নেই। ছেলের শ্বশুরের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে পারেন না কমলেন্দু। শ্বশুরের মেয়েটা তো ভালো।

তাড়াতাড়ি ঠিক করুন দাদা। আমি তো দু-মাসের বেশি ছুটি পাব না কিন্তু হিসেব করে দেখেছি চারমাস থাকলে আর্থিক লাভ হবে।

মানে?

দু-মাস উইদআউট পে হব বটে কিন্তু চারমাসের সংসার খরচ বেঁচে গেলে লাভই হবে। তার ওপর ছোট মেয়েটাকে নিয়ে যাব। ওর বিয়ের সম্বন্ধ ওখানে গিয়ে করলে হাতে-হাতে ফল পাব।

তিনজনে যাবেন? অনেক ভাড়া। কমলেন্দু বলে ফেললেন।

ওসব মেয়ের দায়িত্ব। যত ভাড়া হোক জেন গাড়ির দামের চেয়ে নিশ্চয়ই বেশি হবে না। এখন

আপনি ঠিক করুন কবে যাবেন। আচ্ছা!

রিসিভার রেখে গুম মেরে রইলেন কমলেন্দু।

বনানী ফিরলেন উচ্ছ্বসিত হয়ে। গাড়িটা নাকি দারুণ। ড্রাইভারের হাতও চমৎকার।

তারপর স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে থমকালেন, কী হয়েছে?

বেয়াই-এর কথাগুলো স্ত্রীকে বললেন কমলেন্দু।

সঙ্গে-সঙ্গে ঘড়ি দেখলেন বনানী। তারপর উঠে ফোনের নম্বর টিপতে লাগলেন।

কমলেন্দু জিজ্ঞাসা করলেন কী করছ?

থামো তো! চাপা গলায় বললেন বনানী। কান পাতলেন রিসিভারে, হ্যাঁ, খোকা, আমরা যদি চিরকাল পাইস হোটেলে খেয়ে আসি তাহলে সেই খাবারে নিশ্চয়ই তৃপ্তি পেয়েছি। কিন্তু সে ব্যাপারে অন্য কারও কথা শুনতে রাজি নই। আমি সতুদাকে বলেছি গাড়িটাকে বিক্রি করে দিতে। তোর গাড়ির আর দরকার নেই আমাদের।

কী হল বলবে তো?

টুকান তার বাবাকে বলেছে তুই আমাদের গাড়ি কেনার টাকা দিয়েছিস। তিনি তোর বাবাকে ফোন করেছেন ছেলের পয়সায় যখন গাড়ি কিনেছি তখন বেশি দামের গাড়ি কিনলাম না কেন? আমরা কি ভিখিরি?

তুমি ফোনটা রাখো, আমি দশ মিনিট পরে ফোন করছি।

রিসিভার রেখে বনানী স্বামীর দিকে তাকালেন, তুমি লোকটাকে কথা শোনাতে পারলে না? আর কতদিন চুপ করে থাকবে?

দ্যাখো, খোকার শ্বশুর বলে কথা–!

চুপ করো! বনানী শোওয়ার ঘরে চলে গেলেন।

ঠিক দশ মিনিট পরে ফোন এল খোকার, মা, এ নিয়ে আর চিন্তা কোরো না। যা বলার আমি বলে দিয়েছি, রাখলাম!

কমলেন্দু আশঙ্কা করছিলেন এখনই ভদ্রলোকের ফোন আসবে। কিন্তু এল না।

রাত্রে শোওয়ার পরে বনানী বললেন, শোনো, তুমি খোকার ওখান থেকে ঘুরে এসো। তোমার ভালো লাগবে।

কমলেন্দু স্ত্রীর দিকে তাকালেন। এই স্বরে অনেকদিন কথা বলেননি বনানী। তিনি কিছু বললেন না। বনানী বললেন, টুকান আমাকে যেতে বলেছিল। ওর বাচ্চা হবে। সে সময় আমাকে থাকতে বলেছিল।

সে কী? আমাকে বলেনি কেন? কমলেন্দু উঠে বসলেন।

তোমাকে এখনই বলতে নিষেধ করেছিল, সারপ্রাইজ দেবে বলে।

তাহলে তো তোমার যাওয়া উচিত।

একসঙ্গে দুজন তো যেতে পারব না। ভেবেছিলাম তুমি ঘুরে এলে ঠিক সময়ে আমি যাব। কিন্তু টুকানের মা-বাবা-বোন যাচ্ছে তখন আমার যাওয়ার দরকার নেই। দ্যাখো, ছেলেটা ফোন করল কিন্তু কী বলেছে সে তা জানাল না। বনানী দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। কমলেন্দু শুয়ে পড়লেন কিন্তু ঘুম আসছিল না।

ভোর চারটের সময় ফোন বাজল। ধড়মড়িয়ে উঠে রিসিভার তুললেন কমলেন্দু। হ্যালো। সঙ্গে সঙ্গে টুকানের গলা শুনতে পেলেন, বাবা, আমি কী করব?

কেন, কী হয়েছে?

ও আমাকে এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিয়ে গিয়েছে। বলেছে টিকিট কেটে দেশে ফিরে যেতে টাকাও দিয়ে দিয়েছে। টুকান কাঁদছিল।

সে কী! কেন? বিচলিত হলেন কমলেন্দু।

আমি জানি না। বিশ্বাস করুন আমি কিছু জানি না।

তোমার বাবাকে জানিয়েছ?

না। আমাদের ব্যাপার বাবাকে কেন জানাব?

তুমি আমাকে মিনিট পনেরো বাদে ফোন করতে পারবে?

হ্যাঁ, পারব।

লাইন বিচ্ছিন্ন হতেই ছেলেকে ফোন করলেন কমলেন্দু, তুই কী ভেবেছিস? আমরা মরে গেছি, তোর যা ইচ্ছে তাই করবি?

কী বলছ? ছেলের গলায় বিস্ময়।

আমাদের বাড়ির বউকে এয়ারপোর্টে ফেলে দিয়ে এসেছিস একা? সে টিকিট কেটে দেশে ফিরবে? তার বাবা যদি কোনও অন্যায় করে থাকে তাহলে সে শাস্তি পাবে?

আমি তো তাকে বলিনি কে কী অন্যায় করেছে! আমি ভদ্রলোককে বলেছি এখন থেকে আপনি আমাদের পারিবারিক ব্যাপারে নাক গলাবেন না। তিনি বললেন, তাঁর মেয়ে যতদিন আমার স্ত্রী হয়ে থাকবেন ততদিন তিনি দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।

ব্যস সঙ্গে-সঙ্গে তুই ঘরের বউকে বের করে দিলি। আমি কোনও কথা শুনতে চাই না। এখনই এয়ারপোর্টে গিয়ে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যা। নইলে আমাদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক থাকবে না তোর। রিসিভার রাখতেই কমলেন্দু দেখলেন বনানী উঠে এসে তাঁর কথা শুনছে।

কমলেন্দুর মাথা ঝিমঝিম করছিল। বনানী কাছে এসে ওঁর হাত ধরে বলল, বিছানায় এসে বসো। উত্তেজিত হয়ো না।

কমলেন্দু বললেন, গর্দভটার এত সাহস!

বনানী হাসলেন, দু-হাতে কমলেন্দুকে জড়িয়ে ধরলেন।

কমলেন্দু বললেন, এ কী!

বনানী বলেন, চুপ করো।

কিছুক্ষণ বাদে ফোন বাজতেই কমলেন্দু ধরলেন, হ্যাঁ, শোনো, তুমি এয়ারপোর্টের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াও। সে আসছে তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। বাড়িতে পৌঁছে আমাকে ফোন করবে। বুঝেছ। আচ্ছা।

রিসিভার রাখার পর আর ঘুম এল না। ফরসা হয়ে গেল খানিক পরেই। বনানী চা করে নিয়ে এলেন। চুপচাপ চা খেয়ে গেলেন ওরা। ঘণ্টাতিনেক পরে ফোন এল, বাবা!

হ্যাঁ। বল।

ও আমাকে বাড়িতে নামিয়ে চলে গেছে কাজে। রাস্তায় একটা কথাও বলেনি। বাড়িতে পৌঁছে বলেছে, এখন থেকে তুমি তোমার মতো এখানে থাকবে। ব্যস।

বাঃ ভালোই তো। নিজের খুশিমতো খাওদাও চাকরি করো। ওকে কেয়ার কোরো না।

না-না, বাবা।

ও, তাহলে?

তোমরা এসো। তোমরা এলে ও ঠিক হয়ে যাবে।

তোমার বাবা মা বোন তো যাচ্ছে!

ওরা পরে আসুক। ওরা এখন এলে ও আরও দূরে সরে যাবে।

ঠিক আছে, দেখছি।

রিসিভার নামিয়ে কথাগুলো স্ত্রীকে বললেন কমলেন্দু। বনানী চুপ করে ছিল। কমলেন্দু বলেন, ওর গলা শুনে বউমা বলে মনে হচ্ছিল না। যেন নিজের মেয়ে কথা বলছিল।

বনানী আচমকা বললেন, আচ্ছা আমরা দুজনে একসঙ্গে গেলে কী হবে?

চুরি হবে। তালা ভাঙবে চোর। কমলেন্দু জবাব দিলেন।

চুরি করে কী পাবে?কী নিতে পারে চোর। ফ্রিজ, টিভি, জামাকাপড়। টাকাপয়সা গয়নাগাটি তো ব্যাঙ্কে থাকবে। তাই না!

হ্যাঁ, কিন্তু জেনেশুনে চোরের জন্যে সব ফেলে যাবে?

সব আর কোথায়? আমরা ওখানে গেলে যে স্বামীকে নিজের করে পাবে বলে ভাবছে তার পাওয়ার চেয়ে এই ফ্রিজ টিভি কি খুব মূল্যবান?

না। একদম নয়। একসঙ্গে যাবে? আনন্দিত হলেন কমলেন্দু! পাশের বাড়ির দত্তবাবুকে বলে যাব চোখ রাখতে। আর ওখানে গেলে শুধু ওরাই পাবে না, আমিও পাব।

কী পাবে তুমি?

আনন্দ। এই বয়সে একা-একা কিছু ভালো লাগে না। কমলেন্দু বললেন।

স্বামীর হাতে হাত রাখলেন বনানী।

কীরকম শিরশির করে উঠল তাঁর শরীর।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *