।। সাংসারিক জীবনস্য দোষ।।
দেবত্বং মানুষত্বং চ নির্যক্ত্রংকেন কর্মণা। প্রাপ্নোতি পুরুষঃ কেন গর্ভবাসং সুদারুণম্।।১।। গর্ভস্থশ্চ কিমশ্রাতি কথমুৎপদ্যতে পুনঃ। দত্তোখানাদিকান্দোশাঙ্কথং তরতি দুস্তরান্।।২।।
তিনি বৈকুণ্ঠ কোষ্ঠগত অশেষ তাতে খ্যাত এবং তিনি জগৎ সুর-নর- উরগ এবং সিদ্ধনদ্ধ।।
শুদ্ধ মুনিগণ অন্তর এবং বাইরে দেখেন। সেই চরাচর গুরুর কোনো অপরা মায়া।। ৩৬।।
।। সাংসারিক জীবনের দোষ।।
এই অধ্যায়ে জন্ম সংসারের দোষ আখ্যায়ন বর্ণন করা হয়েছে। যুদ্ধিষ্ঠির বললেন–পুরুষ দেবত্ব মনুষত্ব এবং তির্যকত্ব কোন কর্মের দ্বারা প্রাপ্ত হন এবং কোন্ কর্মের দ্বারা সুদারুন গর্ভে আবাস পান? ।।১। ।।
প্রাণী গর্ভে থাকা কালীন সময়ে কি ভোজন করে, কি করে এবং কিভাবে উৎপন্ন হয়। দত্ত এবং উত্থানকাদি দোষ যা অত্যন্ত দুস্থর তা কিভাবে পার করা যাবে।।২।।
বালভাবে কথং পুষ্টিঃ স্যাদ্যুবা কেন কর্মণা। কুলীনঃ কেন ভবতি সুরূপঃ সুধনঃ কথম্।।৩।। কথং দারানবাপ্নোতি গৃহং সর্বগুণৈযুতম্। পন্ডিতঃ পুত্রবাংস্ত্যাগী স্যাদাময়বিবর্জিতঃ।।৪।। কথং সুখেন ম্রিয়তে কথং ভুংক্তে শুভাশুভম্। সর্বমেবামলমতে গহনং প্রতিভাতি মে।।৫।। শুভৈদেবত্বমাপ্নোতি মিশ্রের্মানুষতাং ব্রজেৎ। অশুভৈঃ কর্মভিজ্জংতুস্তির্যগ্যেনিষু জায়তে।।৬।। প্রমাণং শ্ৰুতিবোত্র ধর্মাধর্মবিনিশ্চয়ে। পাপং পাপেন ভবতি পুণ্যং পুণ্যেন কর্মণা।।৭।। ঋতুকালে তদা ভুক্তং নির্দোষং যেন সংস্থিতম্। তদা তদ্বায়ুনা স্পষ্টং স্ত্রীরক্তেনৈকতাং ব্রজেৎ।।৮।।
বালভাবে তার পুষ্টি কিভাবে হয় এবং কোন্ কর্মের দ্বারা সে যুবাভাব প্রাপ্ত হয়? সে কুলীন -সুন্দররূপী সুধন কিভাবে হয়?।। ৩।।
স্ত্রী প্রাপ্তি কিভাবে ঘটে এবং সমস্ত গুণগণে সমৃদ্ধ ঘর কিভাবে প্রাপ্ত হয়? পন্ডিত পুত্র যুক্ত, ত্যাগী এবং যোগযুক্ত কিভাবে হয়? কিভাবে সেই জীবত্মা সুখে মৃত্যু বরণ করে এবং শুভ তথা অশুভ ফল কিভাবে ভোগ করে। এই অমল মতে সবকিছু আমার প্রভূত গহন প্রতীত হচ্ছে।। ৪-৫।।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন -শুভ কর্মে প্রাণী দেবত্ব প্রাপ্ত হন এবং যে কর্ম শুভ তথা অশুভ মিশ্রিত তার দ্বারা সে মানুষবতা প্রাপ্ত হয় এবং পুরোপুরি অশুভ কর্মের দ্বারা তির্যক যোনি প্রাপ্ত হয়। ধর্ম এবং অধর্ম বিশেষ নিশ্চয় করতে শ্রুতিই হল প্রমাণ। পাপ কর্ম থেকে পাপ এবং পুণ্য কর্ম থেকে পুণ্য হয়।।৬-৭।।
বিসর্গকালে শুক্রস্য জীবঃ করণ সংযুতঃ। ভৃত্যঃ প্রবিশতে যোনিং কর্মভিঃ স্বৈন্নিযোজিতঃ।।৯। তচ্ছুক্ররক্তমে কস্থমেকাহাৎ কললং ভবেৎ। পঞ্চরাত্রেণ কললং বুদ্বুদা কারতাং ব্রজেৎ।। ১০। বুদ্বুদং সপ্তরাত্রেণ মাংসপেশী ভবেত্ততঃ। দ্বিসপ্তাহাদ্ভবেপ্তেশী রক্তমাংসদৃঢ়াংচিতঃ।।১১। বীজস্যেবাঙ্কুরাঃ পেশ্যাঃ পঞ্চবিংশ তিরাত্রতঃ। ভবন্তি মাসমাত্রেণ পঞ্চধা জায়তে পুনঃ।।১২। গ্রীবা শিরশ্চ স্কন্ধশ্চ পৃষ্টবংশস্তথোদরম্। মাসদ্বয়েন সর্বাণি ক্রমশঃ সম্ভবন্তি চ।।১৩। ত্রিভির্মাসৈঃ প্রজায়ন্তে সদ্রব্যাংকুরসন্ধয়ঃ। মাসৈশ্চতুর্ভিরঙ্গল্যঃ প্রজায়ন্তে যথাক্রমম্।।১৪। সুখং নাসা চ কণৌ চ জায়ন্তে পশ্চ মাসকৈঃ। দন্ত পংক্তিস্তথা গুহ্যং জায়ন্তে চ নখাঃ পুনঃ।।১৫। কর্ণো চ রন্ধ্রসহিতৌ যন্মাসাভ্যন্তরেণ তু। পায়ুােমুপস্থশ্চ নাভিশ্চাপ্যুজায়তে।।১৬।।
ঋতুকালে যিনি মুক্ত তিনি নির্দোষ যারা দ্বারা সংস্থিত তার বায়ুতে পৃষ্ঠ হয়ে স্ত্রী রক্তে একতা প্রাপ্ত হয়। শুক্র বিসর্গের সময় করণের দ্বারা যুক্ত জীব ভৃত্য নিজ কর্ম দ্বারা নিয়োজিত হয়ে যোনিতে প্রবেশ করে। সেই শুক্র এবং রক্ত একস্থ হয়ে একদিনে সে কলল হয়ে যায়। সে কলল ৫ রাত্রিতে বুদবুদাকার প্রাপ্ত হয়। সেই বুদবুদ সাত রাত্রে মাংস পেশী রূপে পরিণত হয। পুনরায় দুই সপ্তাহে রক্ত মাংস দ্বারা দৃঢ়াঞ্চিত পেশী তৈরী হয়।। ৮-১০।।
২৫ রাত্রে বীজ অংকুরের ন্যায় পেশীর মাস মাত্র সময় পাঁচ খন্ডে বিভক্ত হয়। পুনরায় দুই মাসে গ্রীবা-শির -স্কন্ধ-পৃষ্ঠাংশ এবং উদর ক্রমান্বয়ে উৎপন্ন হয়। চার মাসে যথাক্রমে অংগুলি উৎপন্ন হয়।। ১২-১৪।।
পাঁচমাসে মুখ–নাসিকা-কর্ণদ্বয়–দন্ত গুচ্ছ এবং নখ উৎপন্ন হয়। ছয়মাসে সছিদ্র কর্ণ, পায়ু, মেট্র, নাভি উৎপন্ন হয়।। ১৫-১৬।।
সন্ধয়োর্যে চ গাত্রেষু মাসৈজায়ন্তি সপ্তভিঃ। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংপূর্ণঃ শিরঃ কেশসমন্বিতঃ।।১৭। বিভক্তাবয়বঃ পুষ্টঃ পুনমার্সাষ্টকেন চ। পঞ্চাৎ মকসমাযুক্তঃ পরিপক্বঃ স তিষ্ঠতি।।১৮।। মাতুরাহারবীর্যেণ ষড়বিধেন স তিষ্ঠতি। রসেন প্রত্যহং বালো বর্ধতে ভরতর্ষভ।।১৯।। তত্তোহ হং সম্প্রবক্ষ্যামি যথাশ্রুতমরিন্দম্। নাভি সূত্রনিবন্ধেন বর্দ্ধতে স দিনে দিনে।।২০। ততঃ স্মৃতিং লভেজ্জীবঃ সম্পূর্ণেহস্মিঞ্চুরীরকে। সুখং দুঃখং বিজানাতি নিদ্রাস্বপ্নং পুরা কৃতম্।।২১। মৃতশ্চাহং পুনর্জাতো জাতশ্চাহং পুনঃ। নানাযোনি সহস্রাণি ময়া দৃষ্টানি তানি বৈ।।২২।।
এই শরীরে সন্ধি সকল সাতমাসে তৈরী হয়। অঙ্গ তথা প্রত্যঙ্গে সম্পূর্ণ তথা বেশ সমন্বিত অবয়ব পূর্ণ পুষ্ট আটমাসে উদরস্থ শিশু গঠিত হয, এবং পুনরায় পঞ্চাত্মক সমাযুক্ত হয়ে গর্ভে স্থিত থাকে, যা পূর্ণরূপে পরিপক্ক।। ১৭-১৮।।
হে ভরতর্ষভ, মাতৃআহারের বীর্য দ্বারা ষড়বিধরস সংগ্রহ করে শিশু সংবর্ধিত হয়।। ১৯।।
হে অরিন্দম, এই সব আমি তোমাকে যথাযথ বলে দেব। নাভি সূত্র বিনন্ধের দ্বারা সে দিনদিনে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। অনন্তর সেই জীবাত্মা স্মৃতি প্রাপ্ত হয় কারণ তার শরীর সাঙ্গ সম্পূর্ণ হয়। সেই সময় সে দুঃখ এবং সুখ জানতে থাকে এবং পুরাকৃত নিদ্রা স্বপ্নেরও জ্ঞান হয়।। ২০-২১।। সেই সময় তার জ্ঞান হয় কি যে, আমি মারা গিয়েছিলাম পুনরায় আমি জন্ম ধারণ করেছি এবং উৎপন্ন হয়েও পুনরায় আমি মৃত্যু প্রাপ্ত হব। আমি এই প্রকারে অনেক প্রকার সহস্র যোনি দেখেছি।। ২২।।
অধুনা জাতমাত্ৰোহ হং প্রাপ্তসংস্কার এব চ। এতচ্ছেয়ঃ করিষ্যামি যেন গর্ভে ন সংশ্রয়ঃ।।২৩।। গর্ভস্থ শ্চিন্তয়ে দেবমহং গর্ভাদ্বিনিঃ সৃতঃ। অধ্যেষ্যে চতুরো বেদাস্নংসারবিনিবর্তকান্।।২৪।। এবং স গর্ভদুখেনঃ মহতা পরিপীড়িতঃ। জীবঃ কর্মবশা দাস্তে মোক্ষোপায়ং বিচিন্তয়ন্।।২৫।। যথা গিরিবরাক্রান্তঃ কশ্চিদ্দুঃখেন তিষ্ঠতি। তথা জরায়ুণা দেহী দুঃখে তিষ্ঠতি চেষ্টিতঃ।।২৬।। পতিতঃ সাগরে যদ্বদ্দুঃখৈরাস্তে সমাকুলঃ। গর্ভোদকেন সিক্তাঙ্গস্তথাস্তেব্যকুলঃ পুমান্।।২৭। লোহকুম্ভে যথা ন্যস্তঃ পচ্যতে কশ্চিদগ্নিনা। তথা স পচ্যতে জন্তুগর্ভস্থঃ পীড়িতোদরঃ।।২৮।
এই বার আমি উৎপন্ন হয়েই সংস্কার প্রাপ্ত হয়ে উত্তম কল্যাণ মাৰ্গে কার্য করব যাতে করে আমাকে পুনরায় গর্ভবাসের কষ্ট পেতে না হয়। এই প্রকার জীবত্মা গর্ভ স্থিত হয়ে দেবচিন্তন করে যে আমি এই ঘোর গর্ভ থেকে নির্গত হয়ে সংসারে বিশেষ নিবৃত্তি কারী চারবেদ অধ্যয়ন করব।। ২৩-২৪।।
এই প্রকার মহান গর্ভ দুঃখে পরিপীড়িত জীব কর্ম বশে মোক্ষ প্রাপ্তির উপায় চিন্তা করে! যেমন কোনো গিরিবর দ্বারা আক্রান্ত প্রচন্ড দুঃখে আকুল হয় তেমন সেই দেহী জরায়ু চেষ্ঠিত দুঃখে স্থিত হয়।। ২৫- ২৬।।
সাগরে পতিত জিন যেমন দুঃখে যথাকুল হয় তেমন গর্ভোদক সিক্ত অঙ্গ রূপী পুরুষ অত্যন্ত ব্যকুল হয়। যেমন কোনো লৌহ কুম্ভে ন্যস্ত অগ্নি দ্বারা পক্ক হয় ঠিক তেমন গর্ভ স্থত জন্তু পীড়িতোদর হয়ে পক্ক হয়।। ২৭- ২৮।।
সূচীভিরগ্নিবর্ণাভিবিভিন্নস্য নিরনাতরম্। যঃদ্দুখমুপজায়েত তদ্গৰ্ভেহষ্ট গুর্ণং ভবেৎ।। ২৯।। গর্ভবাসাৎপরো বাসঃ কষ্টো নৈবাস্তি কুত্রচিৎ। দেহিনাং দুঃখবদ্রাজমুঘোরো হ্যতিসঙ্কটঃ।।৩০। ইত্যেতদ্গৰ্ভ দুঃখং হি প্রাণিনাং পরিকীর্তিতম্। চরস্থিরাণাং সর্বেষাসামগর্ভানুরূপতঃ।।৩১।। গর্ভাৎকোটিগুণং দুঃখং যোনিযন্ত্রপ্রপীড়নাৎ। সম্মুচ্ছিতস্য জায়েত জায়মানস্য দেহিনঃ।।৩২। শরবৎপীড্যমানস্য যন্ত্রনৈব সমস্ততঃ। শিরসি তাড্যমানস্য পাপমুদ্রকেণ চ।।৩৩। গর্ভান্নিষ্ক্রম্যমানস্য প্ৰবলৈঃ স্মৃতিমারুতৈঃ। জায়তে সুমহদ্দুঃখং পরিত্রাণমনিন্দতঃ।।৩৪।।
অগ্নিবর্ণের ন্যায় সূচের দ্বারা নিরন্তর বিভিন্ন হতে হতে যেরূপ দুঃখ হয় গর্ভস্থিত জীব তার থেকে ৮ গুণ দুঃখ প্রাপ্ত হয়। গর্ভাবাসের ন্যায় পরকষ্ট প্রদানকারী দ্বিতীয় কেউই নেই।। হে রাজন সেই গর্ভে নিবাস দেহধারি গণকে অত্যধিক দুঃখ প্রদান করে তা সুখের এবং সংকটময়।। ২৯- ৩০।।
এই প্রকারে প্রাণিগণ যে ভাবে গর্ভ দুঃখ অনুভব করে তা আমি বললাম। এই অনভূতি চর এবং স্থির সকলের আত্মগর্ভ অনুসারে হয়। গর্ভনিবাসে যে দুঃখ হয তার থেকে কোটিগুন দঃখ হয় জন্মলাভের পর সেই সময় যোনিযন্ত্র থেকে তাকে বাইরে বার করতে সে প্রপীড়িত হয়। স্বর্ণকারের তন্ত্রী আকর্ষণের ন্যায় তার শরীর অত্যন্ত পীড়া অনুভব করে এবং জায়মান দেহী মূর্ছিত হয়ে পড়ে। সেই সময় শরের ন্যায় যে পীড়িত সে নির্গত হয়। এমন পীড়া হয়, যেমন তার শিরে পাপ রূপী মুদগরের দ্বারা তাড়ণ করা হয়।। ৩১-৩৩।।
যন্ত্রেণ পীড়িতা যদ্বন্নিঃ সরাঃ স্যুস্তিলেক্ষবঃ। তথা শরীরং নিঃসারং যোনিযন্ত্রপ্রপীড়িতম্।।৩৫।। অহো মোহস্য মাহাত্ম্যং যেন ব্যামোহিত জগৎ। জিঘ্ৰম্পশ্যস্নবকং দোষং কায়স্য ন বিরজ্জতে।।৩৬। এবমেতচ্ছরীরং হি নিসর্গাদ শুচি ধ্রুবম্। ত্বড্রমাত্রসারং নিঃসারং কদলী সারসংনিভম্।।৩৭।। গর্ভস্থস্য স্মৃতিযাসীস্তা জাতস্য প্রণশ্যতি। সম্মুচ্ছিতস্য দুঃখেন যোনিযন্ত্র প্রপীড়নাৎ।।৩৮।। বাদ্যেন বায়ুনা চাস্য মোহস্যজ্ঞেন দেহিনঃ। স্পষ্টমাত্রেণ ঘোরেড় জ্বরঃ সমুপজায়তে।।৩৯।। তেন জ্বরেণ মহতা মহামোহঃ প্রজায়তে। সন্মুঢ়স্য স্মৃতিভ্রংশঃ শীঘ্রং সঞ্জায়তে পুনঃ।। ৪০।
যখন সেই জীব গর্ভ থেকে নির্গত হয় সেই সময় প্রসব বায়ু থেকে তার মহাদুঃখ উৎপন্ন হয় এবং পরিত্রাণের জন্য সে বুদ্ধি প্রয়োগ করে। যন্ত্রের দ্বারা যেমন তিল ও ইক্ষু রস নিঃসৃত হয় তেমন জীবাত্মার সেই শরীর এক প্রকার সার রহিত যোনি যন্ত্র দ্বারা প্রপীড়িত হয়।। ৩৪-৩৫।।
অহো, মোহের কি অদ্ভূত মাহাত্ম্য যে এই সমস্ত জগৎ থেকে নিজ প্রভাবে ব্যামো হিত করে রেখেছে। নিজ দোষ যে এই শরীরের তা বুঝে দেখেও এর থেকে বিরক্ত হয় না।। ৩৬।।
এই প্রকারে এই শরীর স্বভাব দ্বারা নিশ্চয় অপবিত্র। এর সত্তর একমাত্র এবং কদলী সার সমান নিস্সার।। গর্ভে স্থিত থাকার সময় যন্ত্রের স্মৃতি তার জন্মানো মাত্র যোনিযন্ত্রের পীড়নের দ্বারাই সে সবভুলে যায়।। ৩৭- ৩৮।।
স্মৃতিভ্রংশাত্তু তস্যেহ পূর্বকর্মবশেন চ।। রতিঃ সঞ্জায়তে তুর্ণং জন্তোস্তত্রৈব জন্মনি।। ৪১।। রক্তো মূঢ়স্য লোকোহয়মকার্যে সম্প্রবর্ততে। ন চাত্মানং বিজানাতি ন পরং বিন্দতে চ সঃ।।৪২।। ন শ্রয়তে পরং শ্রেয়ঃ সতি চক্ষুষি নেক্ষতে। সমে পথি শনৈৰ্গচ্ছস্নখলতীব পদে পদে।।৪৩। সত্যাং বুদ্ধৌ ন জানাতি বোধ্যমানো বুধৈ রপি। সংসারে ক্লিশ্যতে তেন রাগলোভবশানুগঃ।।৪৪। গর্ভস্মৃতের ভাবেন শাস্ত্রমুক্তং মহর্ষিভিঃ। তদুঃখমর্থনাথায় স্বৰ্গমোক্ষপ্রসাধকম্।।৪৫।। যে সন্ত্যস্মিম্পরে জ্ঞানে সর্বকামার্থসাধকে। ন কুর্বত্যামনঃ শ্রেয়স্তদত্ৰ মহদদ্ভুতম্।।৪৬।। অব্যক্তেন্দ্রিয়বৃত্তিত্বাদ্বাল্যে দুঃখং মহৎ পুনঃ। ইচ্ছন্নপি ন সক্নোতি কর্তৃংবক্তৃঞ্চ সৎক্রিয়াম্।।৪৭।।
মোহ নামক বহিবায়ুর স্পর্শে একপ্রকার জ্বর উৎপন্ন হয়। সেই মহান জ্বরের দ্বারা মহামোহ উৎপন্ন হয়। যখন মহামোহ থেকে সহমূঢ়তা প্রাপ্ত হয তখন সেই সংমূঢ় স্মৃতি শীঘ্র ভ্রংশ হয়ে যায়। স্মৃতি যা গর্ভদশাতে ছিল তা ভ্রংশ হওয়ার ফলে জীব পূর্বজন্মে কৃত কর্মে বশীভূত হয়ে পুনঃ সেই জন্মেরতি উৎপন্ন করে।। এই লোক তো রাগানুরক্ত পুনরায় এই মুঢ়কে অকার্যে প্রবৃত করে। তার ফলে সে নিজেকে চিনতে পারে না এবং পরকেউ প্রাপ্ত হয় না।। ৩৯-৪২।।
সে এমন মূঢ় মোহান্ধ তথাবধির যে পরমশ্রের কথা শ্রবণ করেনা এবং নেত্র থেকেও কিছু দেখে না। বুদ্ধি থাকতেও বড় বড় বিদ্বান দ্বারা রুবড় বোধ্যমান্ হয়েও কিছু বোঝেনা। এই কারণে সে এই সংসারে রাগ এবং লোভের বশীভূত হয়ে ক্লেশ প্রাপ্ত হয়।। ৪৩-৪৫।।
গর্ভে যে স্মৃতি ছিল তার অভাব হলে মহর্ষি মহানুভব শাস্ত্র কথন করেছেন যা, সেই দুঃখ মথন করার জন্য এবং স্বর্গ প্রদানের জন্য।। ৪৫।।
দন্তোস্থানে মহদ্ দুঃখং মোলেন ব্যধিনা তথা। বালরোগৈশ্চ বিবিধৈঃ পীড়া বালগ্রহৈরপি।।৪৮। তৃড্রবুভুক্ষাপরীতাঙ্গঃ কশ্চিত্তিষ্ঠতি রারটন। বিমূত্রভক্ষণমপি মোহাদ্বলঃ সমাচরেৎ।।৪৯।। কৌমারে কর্ণবেধেন মাতাপিত্রোশ্চ তাড়নাৎ। অক্ষরাধ্যয়নাৎ পুংসাং দুঃখং স্যাদ্ গুরুশাসনাৎ।।৫০। প্রসন্নোন্দ্রিয়বৃত্তিশ্চ কামরাগপ্রপীড়নাৎ। রোগোদ্ধতস্য সততং কুতঃ সৌখ্যং চ যৌবনে।।৫১।। ইষ্যয়া চ মহদ্ দুঃখং মোহদ্রক্তস্য জায়তে। নেত্রস্য কুপিতস্যৈব রাগো দুঃখায় কেবলম্।।৫২। ন রাত্রৌ বিন্দতে নিদ্রাং কোপাগ্নিপরি পীড়িতঃ। দিবা বাপি কুতঃ সৌখ্যমর্থোপার্জনচিত্তয়া।।৫৩।। জরাভিভূতঃ পুরুষঃ পত্নী পুত্রাদি বাঞ্ছবৈঃ। অশক্ত ত্বাদুরাচারৈভূত্যৈশ্চ পরিভূয়তে।।৫৪।।
এই পরজ্ঞান হলেও সমস্ত কাম এবং অর্থ সাধক যারা এই দুঃখপূর্ণ সংসারে মোহের বশীভূত এবং নিজ আত্মার শ্রেয় সম্পাদন করেন না। এ এক বিচিত্র কথা। ইন্দ্ৰিয় বৃত্তি অব্যক্ত হওয়ার ফলে বাল্যে মহাদুঃখ পেলে তার থেকে নিবৃত্ত হওয়ার ইচ্ছা বা তৎকথা শ্রবনের ইচ্ছা জীব করেনা। দন্ত বিকশিত হলে মহাদুঃখ হয়, শিরপীড়ায় অসহ্য কষ্ট হয়। অনেক প্রকার অন্য বলি রোগে বলিগ্রহ হয় পীড়া সহ্য করতে হয়। ক্ষুধা, তৃষ্ণাতে পরীত অংগ কেউ রচন করে। মোহর যারে বরিক বিষ্টা এবং মুত্র ভক্ষণ করে।। ৪৬-৪৯।।
যখন কৌমার অবস্থা আসে তখন কর্ম ভেদ তথা মাতা-পিতার তাড়ন এবং পাঠশালাতে অধ্যায়ন এবং গুরুর শাসনেও পুরুষের দুঃখ হয়।। ৫০।।
ধর্মমৰ্থ চ কামং চ মোক্ষং চ নজরী যতঃ। শক্তঃ সাধয়িতুং তস্মাচ্ছরীরমিদমাত্মনঃ।।৫৫।। বাতপিত্তকফাদীণাং বৈষম্যং ব্যধিরুচ্যতে। তস্মাদ্ব্যাধিমযজ্ঞেয়ং শরীরমিদমাত্মনঃ।।৫৬। রোগৈনানাবিধৈয়ানি দেহদুঃখান্যনেকধা। তানি চ স্বাত্মাবেদ্যানি কিমন্যক্ত থয়াম্যহম্।।৫৭। একোত্তরং মৃত্যুসতম্স্মিন্দেহে প্রতিষ্ঠিতম্। তত্রৈকঃ কালসংযুক্তঃ শেষাশ্চ গন্তবঃ স্মৃতাঃ।।৫৮। যেত্বিহাগন্তবঃ প্রোক্তাস্তে প্রশাম্যন্তি ভেষজৈঃ। জপহোমপ্রদানৈশ্চ কালমৃত্যুৰ্ন শাম্যতি।।৫৯।। যদি চাপি ন মৃত্যুঃ স্যাদ্বিষমদ্যাদশঙ্কিতঃ। ন সস্তি পুরুষে তম্মাদপমৃত্যুবিভীতয়ঃ।।৬০।
প্রসন্ন ইন্দ্রিয় বৃত্তি যুক্ত কিন্তু কামরাগ প্রপীড়িত সতত রাগোদ্ধত পুরুষের যৌবনেও সুখ কোথায়? মোহের ফলে রক্তের ঈর্ষা হওয়ার ফলে মহাদুঃখ উৎপন্ন হয়। কুপিত নেত্রের রাগও কেবল দুঃখের জন্যই হয়। কোপাগ্নি পীড়িত পুরুষ রাত্রে নিদ্রা প্রাপ্ত হন না এবং দিনে অর্থ চিন্তায় মগ্ন তার সুখ কোথায়? যখন মনুষ্য বৃদ্ধা বস্থাতে পুত্র -পত্নী প্রভৃতি বন্ধনেতথা দুরাকারী ভূতের দ্বারা অশক্ত হওয়ার কারণে তিরস্কার প্রাপ্ত হন। বৃদ্ধপুরুষ ধর্ম-অর্থ-কাম এবং মোক্ষ বাধনে আশক্ত হন। বাত-কফ এবং পিত্ত আদি বিঘ্নতা ব্যাধি নামে পরিচিত এই কারণে নিজশরীর ব্যাধিমহ জানা উচিৎ।। ৫১-৫৬।।
বাতাদ্য ব্যতিরিক্তত্ব হওয়ার ফলে ব্যাধির দ্বারা পঞ্জরের নানা প্রকার রোগে দেহ দুঃখ প্রাপ্ত হয় একথা নিজ আত্মা দ্বারা জানা উচিৎ। আমি অলা কি আর বলব।। ৫৭।।
এই দেহে ১০১ মৃত্যু প্রতিষ্ঠিত। তন্মধ্যে এককালে সংযুক্ত এবং শেষ আগন্তুক একথা বলা হয়েছে।। ৫৮।।
আগন্তুক মৃত্যু ভেষজ দ্বারা প্রশান্ত হয় এবং জপ হোম তথা দানাদি কর্ম দ্বারা তার প্রশমন হয়। কিন্তু কালমৃত্যু কোনো প্রকারেই শান্ত হয়না। যদি কালমৃত্যু যোগ না থাকে তাহলে কোনো ব্যক্তি নিঃশঙ্কচিত্তে বিষগ্রহণ করলেও তার অপমৃত্যু ঘটেনা।।৫৯-৬০।।
বিবিধা ব্যাধয়ঃ শস্ত্রং সর্পাদ্যাঃ প্রাণিনস্তথা। বিষানি জঙ্গমাদ্যানি মৃত্যোদ্বারানি দেহিনাম্।।৬১। পীড়িতং সর্বরোগাদ্যৈরপি ধন্বন্তরিঃ স্বয়ম্। স্বস্থীকর্তুং ন সক্নোতি প্রাপ্তমৃত্যুং চ দেহিম্।।৬২। নোষধং ন তপো দানং ন মন্ত্রা ন চ বান্ধবাঃ। শকুবত্তি পরিত্রাতুং নরং কালেন পীড়িতম্।।৬৩। রসায়নতপোজপ্যৈর্যোগসিদ্ধৈ মহাত্মভিঃ। কালমৃত্যুরপি প্রাজ্ঞৈস্তীর্যতে নালসৈন্নরৈঃ।।৬৪। নাস্তি মৃত্যুসমং দুঃখ নাস্তি মৃত্যুসমং ভয়ম্। নাস্তি মৃত্যুসমন্ত্রাসঃ সর্বেষামেব দেহিনাম্।।৬৫।। সম্ভার্যাপুত্র মিত্রাণি রাজ্যৈশ্চর্যধনানি চ। অবদ্ধানি চ বৈরানি মৃত্যুঃ সর্বাণি কৃন্ততি।।৬৬।
দেহধারীগণের মৃত্যু অনেক প্রকারে ঘটে। যেমন অনেক প্রকার রোগ, শস্ত্র, সর্পাদি বিষধর প্রাণীর দংশন ইত্যাদি দ্বারা ঘটে। সমস্ত রোগের দ্বারা পীড়িত দেহধারীগণের মধ্যে যার কালমৃত্যু যোগ রয়েছে স্বয়ং ধন্বন্তরি ও তাকে সুস্থ করতে পারেনা। কালমৃত্যু দ্বারা পীড়িত ব্যক্তিকে রক্ষা করার উপযুক্ত ঔষধ, তপ, দান, মন্ত্র এবং বান্ধব কিছুই নেই।।৬১-৬৩।। রসায়ন, তপ, জপের দ্বারা সিদ্ধ মহাত্মাগণের মধ্যে পরমপ্রাজ্ঞ ব্যক্তি কালমৃত্যু রোধ করতে সমর্থ হন। কিন্তু আলস্য পরায়ণ ব্যক্তি সেই কার্যে সফল হননা।।৬৪।।
এই সংসারে মৃত্যুতুল্য দুঃখ এবং মৃত্যুতুল্য কোনো প্রকার ভয় নেই। সমস্ত দেহধারীগণের কাছে মৃত্যুতুল্য ত্রাস নেই। ৬৫।।
সুন্দরী সতী ভার্যা, পুত্র, মিত্র, রাজ্য, বৈভব, ঐশ্বর্য, ধন এবং অবদ্ধ শত্রুতা সকল কিছুকেই মৃত্যু কর্তন করে।।৬৬।।
হে জনাঃ কিং ন পশ্যধ্ব সহস্রস্যাপি মধ্যতঃ। জনাঃ শতায়ুষঃ পঞ্চভবতি ন ভবন্তি চ।।৬৭।। অশীতিকা বিপদ্যন্তে কেচিৎসপ্ততিকা নরাঃ পরমায়ুষঃ স্থিতং ষষ্টিস্তচ্চৈ বানিশ্চিতং পুনঃ।।৬৮।। যস্য যাবদ্ভেদায়ুদোহিনাং পূর্বকর্মভিঃ। তস্যার্দ্ধমায়ুষো রাত্রিহরতে মৃত্যুরূপিনী।।৬৯। বালভাবেন মোহেন বার্দ্ধক্যে জরয়া তথা। বর্ষাণাং বিংশতির্যাতি ধর্মকামার্থবর্জিতা।।৭০।। আগন্তুকৈ বয়েঃ পুংসাং ব্যাধিশোকৈরনেকধা।। ভক্ষ্যতেহৰ্দ্ধং চ তত্রাপি যচ্ছেষং তচ্চ জীবতি।।৭১। জীবিতান্ত চ মরণং মহাঘোরমপুয়াৎ। জায়তে জন্মকোটীষু মৃতঃ কর্মবশাৎপুনঃ।।৭২।
হে মনুষ্য, তুমি কি দেখতে পাচ্ছনা সহস্র পুরুষের মধ্যে শতায়ু হন কেবলমাত্র পাঁচজন এবং ভবিষ্যতেও এর অধিক হবে না। কিছু ব্যক্তি তো আশী বছর বয়সেই বিপন্ন হয়ে যান আবার কারও সত্তর বছর বয়সেই তো জীবন সমাপ্ত হয়ে যায়। বর্তমানে মানুষের গড় পরমায়ু তো ষাট বছর বলে মান্য করা হয়। এরও কোনো নিশ্চয়তা নেই।।৬৭-৬৮।।
দেহধারীগণ পূর্বকর্মানুসারে যে আয়ুপ্রাপ্ত হন, মৃত্যুরূপ রাত্রি তার অর্ধভাগ হরণ করে। বাল্যকালে মোহ বশতঃ এবং বৃদ্ধ বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে মানুষ প্রায় কুড়ি বৎসর ধর্ম-কাম-অর্থাদি বর্জিত থাকে অর্থাৎ জীবনকালের প্রায় কুড়ি বৎসর সে কোনোরূপ ধর্মাদি সাধন করতে পারে না।।৬৯-৭০।।
আগন্তুক মৃত্যুভয়ে প্রাণী ব্যাধি ও শোকগ্রস্ত হয় এবং তাতে করে তার অর্ধভাগ আয়ু বিনষ্ট হয়। অবশিষ্ট অংশ সে জীবিত থাকে। জীবনান্তে সে অত্যন্ত ভয়ংকর কষ্টপ্রাপ্ত হয় এবং পুনঃকার্যানুসারে সে কোটি জন্মলাভ করে।।৭১-৭২।।
দেহভেদেন যঃ পুংসাং বিয়োগঃ কর্মসংক্ষয়াৎ। মরণং তদ্বিনির্দিষ্টং নান্যথা পরমার্থতঃ।।৭৩।। মহাতপপ্রবিষ্টস্য চ্ছিদ্যমানে, মর্মসু। যদ্ দুঃখং মরণে জন্তোন তস্যেহোপমা ক্বচিৎ।।৭৪। হা তাত মাতঃ কান্তোতি রুদ্রন্নেবং হি দুঃখিতঃ। মন্ডু ক ইব সর্পেণ গ্রস্যতে যুমুনাজনঃ।।৭৫। বান্ধবৈঃ সম্পরিক্তঃ প্রিয়ৈঃ স পরিবারিতঃ। নিঃশ্বসন্দীর্ঘমুপষ্ণং চ মুখেন পরিশুষ্যতি।।৭৬।। ক্রন্দতে চৈব ঘটায়াং পরিবর্তমুহুর্মুহুঃ। সম্পূঢ়ঃ ক্ষিপতেহ ত্যর্থং হস্তপাদাবিবস্ততঃ।।৭৭। খট্টান্তো কাংক্ষতে ভূমিং ভূমেঃ খটাং পুনর্মহীম্। বিবশস্ত্যক্তলজ্জশ্চ মূত্রবিষ্ঠানুলেপিতঃ।।৭৮।
আত্মা দেহান্তর প্রাপ্ত হলে দেহ কার্যশূন্য হয়, একেই মৃত্যু বলা হয়। নচেৎ মৃত্যু বলে পরমার্থে কিছুই নেই, কারণ আত্মাতো অবিনশ্বর, নিত্য। তার মৃত্যু কদাপি হয়না।।৭৩।।
মহাতপে প্রবিষ্ট পুরুষের মৃত্যুকালীন যে দুঃখ তার কোনো উপমা নেই।।৭৪।।
যাচমানশ্চ সলিলং শুষ্ককঠোষ্ঠতালুকঃ। চিন্তয়ানশ্চ বিত্তানি কস্যৈতানি মৃতে ময়ি।।৭৯। পঞ্চাবটানখন্যমানঃ কালপাশেন কৰ্ষিতঃ। ম্রিয়তে পশ্যতামেব জননাং ঘুঘুর স্বনঃ।।৮০। জীবস্তৃণজলৌকেব দেহাদ্দেহ বিশেৎক্রমাৎ। সম্প্রাপ্যোত্তরকালং হি দেহং ত্যজতি পৌর্বকম্।।৮১ মরণাৎ প্রার্থনাদুঃখমধিকং বিবেকিনঃ। ক্ষণিকং মরণাদুঃখমনন্তং প্রার্থনাকৃতম্।।৮২।। জগতাং পতিরথিত্বাদ্বিষ্ণুবামনতাং গতঃ। অধিকঃ কোহপরস্তস্মাদ্যো নয়া স্যতি লাঘবম্।।৮৩ জাতং মযেদমধুনা মতং ভবতি যদ্গুরু। ন পরং প্রার্থয়েয়স্তৃষ্ণা লাঘবকারণম্।।৮৪।
হা তাত! হা মাত! হা কান্ত — এইরূপ রোদনকারী পুরুষকে সর্পের ভেক গ্রহণের ন্যায় মৃত্যু গ্রাস করে। বান্ধবগণের দ্বারা সংপরিষ্যক্ত এবং প্রিয়জনের দ্বারা চতুর্দিক বেষ্টিত হয়ে দীর্ঘশ্বাস গ্রহণ করতে করতে এই সময় মুখমন্ডল পরিশুষ্ক হয়ে যায়। শয্যাশায়ী সেই ব্যক্তি রোদন করেন এবং বারবার বদল করেন। মূঢ় সেই পুরুষ হস্তপাদাদি ইতস্তত ক্ষেপণ করতে থাকেন। কখন শয্যা থেকে ভূমিতে পতনেচ্ছা হয় আবার কখনও বা ভূমি থেকে শয্যাতে শয়নের ইচ্ছা হয়। সেই ব্যক্তি মৃত্যুর কাছে সম্পূর্ণরূপে বিবশ হয়ে যায়, তখন আবার মলমূত্রাদির দ্বারা অনুলেপিত হয়ে থাকে। কখনও সেই ব্যক্তি জলপান করতে ইচ্ছা করে। মৃত্যু নিকটবর্তী হলে কণ্ঠ, ওষ্ঠ ও তালু শুষ্ক হয়ে যায়। সে চিন্তা করতে থাকে যে তার মৃত্যুর পর ধনসম্পদাদি কার অধীনে থাকবে? এইভাবে পঞ্চাবটের দ্বারা খন্যমান হয়ে মনুষ্য কালপাশে কর্ষিত হয়। আবার কণ্ঠে ঘর্ঘর ধ্বনি করতে করতে সমস্ত মনুষ্যগণকে নিজপার্শ্বে দেখতে দেখতে মারা যায়।।৭৫-৮০।।
জীব তৃণজলের ন্যায় ক্রমান্বয়ে দেহান্তরে গমন করে।উত্তর কাস সমাপ্ত করে পৌর্বক দেহ ত্যাগ করে।।৮১।।
বিবেকীগণের মরণের থেকে প্রার্থনা অধিক হয়, কারণ মৃত্যুর দুঃখ তো ক্ষণিকের জন্য কিন্তু প্রার্থনীকৃত দুঃখ অনন্ত।।৮২।।
সংসারের সর্বেশ্বর অর্থী (প্রার্থী) হওয়ার জন্য বামন রূপধারণ করেছিলেন। তাঁর থেকে অধিক আর কে আছে যিনি লঘুত্ব প্রাপ্ত হবেন না।।৮৩।।
ঋষি বললেন, পুনরায় অপরের কাছে প্রার্থনা করতে নেই, কারণ আমি জেনেছি যে গুরুমতই নিবারণের কারণ।।৮৪।।
আদৌ দুঃখং তথা মধ্যে দুঃখমন্তে চ দারুণম্। নিসর্গাৎ সর্বভূতানামিতি দুঃখপরস্পরা।।৮৫।। বর্তমানান্যতীতানি দুঃখান্যেতানি যানি তু। নরা ন ভাবয়ন্ত্যজ্ঞা ন বিরজ্যন্তি তেন তে।।৮৬।। অত্যাহারান্মহদুঃখমনাহারান্মহত্তমম্। তুলিতং জীবিতং কষ্ট মন্যেহপ্যেবং কুতঃ সুখম্।।৮৭। বুভুক্ষা সর্বরোগাণাং ব্যাধিঃ শ্রেষ্ঠতম্ঃ স্মৃতঃ। স চান্নৌষধিলেপেন ক্ষণমাত্রাং প্রশাম্যাতি।।৮৮। ক্ষুদ্বয়াধিবেদনাতুল্যা নিঃশেষবল কর্তনী। তয়াভিভূতো ম্রিয়তে যথান্যৈব্যধিভিন হি।।৮৯।। তদ্ৰসোপি হি কামাদ্বা জিহ্বাগ্রে পরিবর্ততে। ততক্ষণাদ্বাকালেন কন্ঠং প্রাপ্য পিবর্ততে।।৯০। ইতি ক্ষুদ্বয়াধিতপ্তা নামন্নমৌষধবৎ স্মৃতম্। ন তৎসুখায় মন্তব্যং পরমার্থেন পন্ডিতৈঃ।।৯১।
সমস্ত প্রাণীবর্গের স্বভাবানুসারে দুঃখের পরম্পরা হয়। বর্তমানে প্রাণীবর্গ যে দুঃখভোগ করে তা সে মনে রাখে না। তাতে করে সে বিরক্তও হয়না।।৮৫- ৮৬।।
প্রচুর আহার গ্রহণ ও অনাহার উভয় থেকেই মহাকষ্ট হয়। তুলিত জীবনও কষ্টময় হয়ে যায়। সুতরাং সে বুঝতে পারে যে প্রকৃত মুখবলে কিছু হয়না। ক্ষুধা সমস্ত ব্যাধির মধ্যে শ্রেষ্ঠতম ব্যাধি এবং সেই ব্যাধি অন্নগ্রহণ রূপ ঔষধের দ্বারা ক্ষণমাত্র প্রশমিত হয়। ক্ষুধারূপ ব্যাধি বেদনাদায়ক। তা পূর্ণবলকে সমাপ্ত করতে পারে। ক্ষুধাভিভূত প্রাণী মারাও যায়, যা অন্য ব্যাধিতে নাও হতে পারে। ক্ষুধারস বা কাম জিহ্বাগ্রের স্বদ পরিবর্তন করে। তা ক্ষণমাত্ৰ বা অর্ধকালের মধ্যে কণ্ঠে গিয়ে নিবৃত্ত হয়।।৮৭-৯০।।
এই প্রকার ক্ষুধাব্যাধি দ্বারা তপ্ত ব্যক্তি কাছে অন্ন ঔষধ সমান হয়। পন্ডিতগণ একে মুখ বলে মানেন না। তা পরমার্থ স্বরূপ।।৯১।।
মৃতোপমো যশ্চেক্ষেত সর্বকার্যবিবর্জিতঃ। তত্রাপি চ কুতঃ সৌখ্যং তমসাচ্ছাদিতাত্মনঃ।।৯২। প্রবোধোহপি কুতঃ সৌখ্যং কার্যেরূপহতাত্মনঃ। কৃষিগোরক্ষবাণিজ্যসেবাধ্বাদিপরিশ্রমৈঃ।।৯৩। প্রাতর্মুত্রপুরীষাভ্যাং মধ্যাহ্নে তু বুভুক্ষয়া। তৃপ্তাঃ কামেন বাধ্যন্তে জন্তবোঽপি বিনিদ্ৰয়া।।৯৪।। অর্থস্যোপার্জনে দুঃখমর্জিতস্যাপি রক্ষণে। আযে দুঃখং ব্যয়ে দুঃখমর্থেভ্যশ্চ কুতঃ সুখম্।।৯৫। চৌরেভ্যঃ সলিলাদগ্নেঃ স্বজনাৎপার্থিবাদপি। ভয়মর্থবতাং নিত্যং মৃত্যেঃ প্রাণভূতামিব।।৯৬। খে যাতং পক্ষিভিমার্সং ভক্ষ্যতে শ্বাপদে ডুবি। জলে চ ভক্ষ্যতে মৎস্যেস্তথা সর্বত্র বিত্তবান্।।৯৭।।
সমস্ত কার্য রহিত হয়ে একপ্রকার মৃত ব্যক্তি তুল্য তমোগুণাচ্ছাদিত আত্মাকে সুখ বলে না। কৃষি-গোপালন-বাড়িজ্য-সেবা এবং গমন ইত্যাদি পরিশ্রমী কার্য দ্বারা উপহত আত্মা প্রবুদ্ধ হলেও তাকে সুখ বলে না।।৯২-৯৩।।
প্রাতঃকালে মূত্র এবং পূরীষ তথা মধ্যাহ্ন কালে ক্ষুধা থেকে সুখের অভাব হয়। যদি কাম দ্বারা প্রাণী তৃপ্ত হয় তাহলেও বিনিদ্রা দ্বারা বোধিত হয়, একে সুখ বলে না। ধন দ্বারাও সুখ প্রাপ্তি ঘটে না। প্রথমে অর্থ উপার্জনে কষ্ট হয় তৎপরে তা রক্ষা করতে কষ্ট হয়। অতএব অর্থ উপার্জন ও ব্যয় উভয় ক্ষেত্রেই কষ্ট হয়। অর্থের দ্বারা এই সংসারে সুখ বস্তুতঃ লাভ করা যায় না।।৯৪-৯৫।
অর্থবান্ লোকের চোরের থেকে, জলের থেকে, অগ্নি থেকে, নিজ আত্মীয়দের থেকে এবং রাজার থেকে নিত্য মৃত্যুতুল্য ভয় হয়। আকাশে গমন করলে পক্ষিগণের দ্বারাস ভূমিতে গমন করলে শ্বাপদ প্রাণীদের দ্বারা, জলে গমন করলে মৎসের দ্বারা নিজ মাংস ভক্ষিত হবে এরূপ ভয় অর্থবান্ লোকের থাকে। এর তাৎপর্য হল বিত্তবান্ লোককে সমস্ত জগৎ ভক্ষণ করে।।৯৬-৯৭।।
বিমোহয়ন্তি সম্পৎসু তাপয়ন্তি বিপত্তিষু। খেদয়ন্ত্যর্জনাকালে কদা হ্যর্থাঃ সুখাবহাঃ।।৯৮।। যথার্থপতিদুঃখী সুখী সর্বার্থনিঃ স্পৃহঃ।। যতশ্চার্থপতিদুঃখী সুখী সর্বার্থনিঃ স্পৃহঃ।।৯৯।। শীতেন দুঃখং হেমন্তে গ্রীষ্মে তাপেন দারুণম্। বর্ষাস বার্তবর্ষাভ্যাং কালেহপ্যেবং কুতঃ সুখম্।।১০০ বিবাহবিস্তারে দুঃখং তদর্ভোদ্বহনে পুনঃ। প্রসবেঽপত্যদোষৈশ্চ দুঃখং দুঃখাদিকর্মভিঃ।।১০১। দত্তাক্ষিরৌগৈঃ পুত্রস্য হা কষ্টং কিং করোম্যহম্। গাবো নষ্টাঃ কৃষিভগ্না বৃষাঃ ক্বাপি পলয়িতাঃ।।১০২। অমী প্রাঘূর্ণকাঃ প্রাপ্তা ভক্তচ্ছেদে চ মে গৃহে। বালাপত্যা চ মে ভার্যা কঃ করিষ্যতি রন্ধনম্।।১০৩। প্রদানকালে কন্যায়াঃ কীদৃশশ্চ বরো ভবেৎ। ইতি চিন্তাভিভূতানাং কুতঃ সৌখ্যং কুটুম্বিনীম্।। ১০৪।
যখন মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি হয় সেই সময় সম্পদ প্রাণীকে বিমোহিত করে দেয়। বিপত্তির সময় সে পরিতাপ করে আবার করার সময়ও খেদ করে। এই সম্পত্তি প্রাণীকে কখনো সুখ দেয়?।।৯৮।।
অর্থপতি ব্যক্তি সদা উদ্বিগ্ন থাকে এবং সদা দুঃখী থাকে। হেমন্ত কালে শীত ও গ্রীষ্মে তাপের ফলে প্রচন্ড দুঃখ কষ্ট হয়। তথা বর্ষাতে বাতাস ও বৃষ্টির ফলে দুঃখ হয়। সুতরাং কোনো কালেই সুখ নেই। বিবাহের বিস্তারে দুঃখ তথা তার থেকে গর্ভ উৎপাদন ও প্রসবেও দুঃখ হয়। সন্তানের কর্মেক দ্বারাও দুঃখ উৎপন্ন হয়। গার্হস্থ্য জীবনে দাঁত ও নেত্রের রোগ থেকে পুত্রের কষ্ট উৎপন্ন হয়। গবাদি পশু বিনষ্ট হওয়া, কৃমিজ ক্ষতি, বৃষ কোথাও চলে গেলে, গৃহে অতিথির আগমন ঘটলে গৃহে শিশুপুত্রের মাতা কিভাবে তার রন্ধন করবে— এ বিষয়ে দুঃখ উৎপন্ন বা কন্যা দান কালে বর কেমন হবে এই চিন্তা কুটুম্বদিগকে কদাপি সুখ দেয়না।।৯৯-১০৪।।
কুটুম্বচিন্তাকুলিতস্য পুংসঃ শ্রুতং চ শীলং চ গুণাশ্চ সর্বে। অপক্ককুম্ভে নিহিতা ইবাপ প্ৰয়ান্তিদেহেনসমং বিনাশম্।।১০৫। রাজ্যোপি চ মহদ্ দুঃখসন্ধিবিগ্রহচিন্তয়া। পত্রাদপি ভয়ং যত্র তত্র সৌখ্যং হি কীদৃশম্।।১০৬। সজাতীয়াদ্বধঃ প্রায়ঃ সর্বেষামেব দেহিনাম্। একদ্রব্যাভিলাষিত্বাচ্ছুনামিব পরস্পরম্।।১০৭। নাপ্রধৃষ্যবলঃ কশ্চিন্নমূপঃ খ্যাতোস্তি ভূতলে নিখিলং যস্তিরস্কৃত্য সুখং তিষ্ঠতি নিৰ্ভয়ঃ।।১০৮। আজন্মনঃ প্রভৃতি দুঃখময়ং শরীরং। কর্মাত্মকং তব ময়া কথিতং নরেন্দ্র। দানোপবাসনিয়মৈশ্চ কৃতৈস্তদেব। সর্বোপভোগমুখভাগ্ধতীহ পুংসাম্।।১০৯।
কুটুম্ব চিন্তনে আকুল পুরুষ শ্রুত শীল ও সমশতগুণ কাঁচা ঘড়ায় রাখা জলের ন্যায় দেহের সঙ্গে বিনাশপ্রাপ্ত হয়।। ১০৫।।
সন্ধি ও বিগ্রহের চিন্তন থেকে রাজ্যেও মহাদুঃখ উৎপন্ন হয়। যেখানে পুত্র থেকে ভয় হয় সেখানে কোন্ প্রকার সুখ পাওয়া যায়।।১০৬।।
একমাত্র দ্রব্য প্রাপ্তির অভিলাষী সমস্ত দেহধারীব্যক্তি কুকুরের ন্যায় নিজ সজাতীয়দের দ্বারা বধ্য হয়। প্রধর্ণিত না করার যোগ্য বলযুক্ত কোনো নৃপ ভূতলে খ্যাত হন না। যিনি এই সহ কিছুকে তিরস্কার করতে পারেন তিনি নির্ভয় হয়ে সুখপূর্বক থাকতে পারেন।।১০৭-১০৮।।
জন্ম থেকে এই শরীর দুঃখপূর্ণ। হে নরেন্দ্র, কর্মাহক এই শরীরদান- উপবাস- নিয়মপালন দ্বারা সামসারিক বিভিন্ন সুখ উপভোগ বর্জন করতে পারে। একথা আমি আপনাকে বলেছি।।১০৯।।