1 of 2

সরকারের কাছে অনুরোধ

আমার এই লেখাটির শিরোনাম দেখে অনেকেরই মনে হতে পার- আমি বুঝি সরকারের কাছে নির্বাচন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, অন্তবর্তীকালীন সরকার এই ধরনের কোনো গুরুতর বিষয় নিয়ে অনুরোধ করতে যাচ্ছি। যারা এরকম ভাবছেন তাদের কাছে প্রথমেই আন্তরিকভাবে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি মোটেই দেশ কিংবা রাজনীতির কোনো গুরুতর বিষয় কথা বলতে যাচ্ছি না। গুরুতর বিষয় নিয়ে দেশের সবাই কথা বলছেন, পত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে, টেলিভিশনে টক শো হচ্ছে, খবরের কাগজগুলো নিজেদের দায়িত্বে জরিপ করতে শুরু করেছে। শুধু দেশের মানুষ নয়, মনে হয় বিদেশিদেরও রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তারাও অনবরত হুমকি-ধামকি উপদেশ দিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, চীন থেকে আমেরিকা কেউ বাকি নেই। এত জ্ঞানী-গুনী গুরুত্বপূর্ণ মানুষের এত পরামর্শ এত উপদেশ -এর মাঝে আমাদের মতো মানুষের বলার জন্যে বাকী কী আছে? আমি আর নতুন করে কী বলতে পারি? রাজনীতি নিয়ে সারা জীবন যে কথাটি বলে এসেছি, সেটি ছাড়া বলার কিছু নেই- এই দেশে জামায়াতে ইসলামী রাজনীতি করতে পারবে না। অন্যরা যেভাবে খুশি রাজনীতি করুক আমার কোনো আপত্তি নেই!

তবে সরকারের কাছে আমি এ ধরনের কোনো বিষয় নিয়ে অনুরোধ করতে যাচ্ছে না। আমি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয় অনুরোধ করতে যাচ্ছি। অনুরোধটা করার আগে একটু ভূমিকা করতে হবে, ভূমিকা এরকম :

কিছুদিন আগে বের করা হয়েছে যে, পৃথিবীর সব শহরের মাঝে সবচেয়ে বাসের অযোগ্য শহর হচ্ছে দামেস্ক। কোনো ধরনের জরিপ,বিশ্লেষণ বা গবেষণা না করেই এটা বলে দেওয়া যেত। সেই শহরে বিষাক্ত গ্যাস দিয়ে জনসাধারণকে হত্যা করা হয়। দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছে, হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহারা। সেই দেশের সরকারি বাহিনী কিংবা তার প্রতিপক্ষ কোনো দলই নৃশংসতায় কেউ কারো চাইতে কম নয়। শুধু তাই নয়, যে কোনো মূহুর্তে বাইরের মাতবর দেশগুলো এই দেশটিকে আক্রমণ করে ফেলতে পারে। এই রকম যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটা দেশের ক্ষতবিক্ষত একটা শহর তো সারা পৃথিবীর সবচাইতে বাসের অযোগ্য শহর হতেই পারে। এতে অবাক হবার কিছু নেই এবং আমার বক্তব্য সেটি নয়।

আমার বক্তব্য বাসের অযোগ্য দ্বিতীয় শহরটি নিয়ে। এতদিনে পৃথিবীর সবাই জেনে গেছে- সেই শহরটি হচ্ছে ঢাকা শহর। দামেস্ক শহরকে যদি জরিপে আনা না হতো, তাহলে ঢাকা শহর হতো সারা পৃথিবীর মাঝে সবচাইতে বাসের অযোগ্য শহর। যারা এই শহরে থাকে তারা নিশ্চিতভাবেই গর্ব করে বলতে পারে তারা কার্যত পৃথিবীর সবচেয়ে বাসের অযোগ্য শহরটি কেমন হতে পারে সেটি নিজের চোখে দেখছে, সেই শহরে বসবাস করেছে!

পশ্চিমা জগৎ পৃথিবীর মোড়ল হিসেবে নানা দেশের জন্য যে সার্টিফিকেটগুলো দেয়, সেগুলো সব যে খাঁটি এবং বিশ্বাসযোগ্য সার্টিফিকেট আমি সেটা কখনো বলি না। সারা পৃথিবীর থেকে মানুষেরা পাগলের মতো আমেরিকা ছুটে যায়। কিন্তু আমেরিকা সেই দেশের কালো মানুষদের যেভাবে রেখেছে তার পরিসংখ্যান দেখলে যে কোনো মানুষ হতবাক হয়ে যাবে। সেই দেশের মানুষ যেভাবে আগ্নেয়াস্ত্র রাখতে পারে কিংবা ব্যবহার করতে পারে সেটি পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে হওয়া সম্ভব সেটিও বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমার হিসেবে এটা পৃথিবীর সবচেয়ে আমানবিক দেশগুলোর একটি। কিন্তু আমার কথা কে বিশ্বাস করবে? আমি তো ভালো আর মন্দ দেশের সার্টিফেকেট দেই না!

তবে কেউ অস্বীকার করবে না সারা পৃথিবীর (প্রায়) সবচেয়ে বাসের অযোগ্য শহর হিসেবে ঢাকা শহরের এই সার্টিফিকেট পাওয়ার পিছনে যুক্তির কোনো অভাব নেই। এই শহরে প্রায় দেড় কোটি মানুষ থাকে। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে দেড় কোটি দূরে থাকুক চল্লিশ-পঞ্চাশ লাখ লোকও নেই। (মনে আছে একবার ডেনমার্কে গিয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করেছি, তোমার দেশের লোকসংখ্যা কত? সে বলল- পঞ্চাশ লাখের কাছাকাছি। শুনে আমি হা হা করে হেসে বললাম, তোমার দেশের সব মানুষকে আমাদের দেশে পাঠিয়ে দিলে আমরা তাদের মিরপুরে আঁটিয়ে দিতে পারব!) একটা শহরে যদি দেড় কোটি মানুষ থাকে তাহলে সেই শহরের উপর কী ভয়ঙ্কর চাপ পড়তে পারে সেটা কল্পনাও করা সম্ভব না। দেড় কোটি মানুষ এক সাথে হাঁচি দিলেই মেন হয় একটা ঘূর্ণিঝড় হয়ে যাবে! সবসময় সবজায়গা অনেক মানুষ থাকলে অপরাধীরা অপরাধ করতে একটু ভয় পায়। তারপরেও ঢাকা শহরে সন্ত্রাসের কোনো ঘাটতি নেই। ঢাকা শহরের যেসব মধ্যবিত্ত মানুষকে রাত-বিরাতে চলাফেরা করতে হয়, তাদের মাঝে মনে হয় একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না যে ছিনতাইয়ের শিকার হয়নি কিংবা মলম পার্টির খপ্পরে পড়েনি। ছিনতাই, চুরি,ডাকাতি ছাড়াও রাজনৈতিক সন্ত্রাসের কোনো ঘাটতি নেই। পথে-ঘাটে বোমাবাজি ককটেল মনে হয় এখন ঢাকাবাসীর নিত্য সঙ্গী। (হেফাজতে ইসলাম মে মাসের পাঁচ তারিখ ঢাকা শহরে যে কাণ্ড করেছিল, সে ঘটনা সারা পৃথিবীতেও কোথাও হয়েছে বলে আমার জানা নেই।) দৈনন্দিন জীবনেও মনে হয় আমাদের অনেক দুঃখের ইতিহাস আছে। যে শহরে দেড় কোটি মানুষ থাকে, সেই শহরে স্কুলের বাচ্চা নিশ্চয় দশ-বিশ লক্ষ। তাদের স্কুলগুলো দেখলে চোখে পানি চলে আসবে। চার দেয়ালে ঘেরা শুরু একটি বিল্ডিং,বাচ্চাদের দৌড়াদৌড়ি করার কোনো মাঠ নেই। তাদের একমাত্র খেলাধুলা হয় কম্পিউটারের স্ক্রিনে। সারা শহরে শুধু কংক্রিটের দালাল। সিলেট থেকে আমাকে যখন প্লেনে ঢাকা আসতে হয়, তখন ঢাকা শহরের কাছাকাছি এসে নিচের দিকে তাকিয়ে আমি আতঙ্কে শিউরে উঠি। ঘেঁষাঘেঁষি করে একটা বিল্ডিংয়ের পাশে আরেকটা বিল্ডিং। কোথাও এতটুকু ফাঁকা জায়গা নেই, একটা গাছ নেই, একটা মাঠ নেই, একটা পুকুর নেই। সেই ভয়াবহ দৃশ্য দেখলে আমাদের বুঝতে বাকি থাকে না, কেন ঢাকা শহরকে পৃথিবীর (প্রায়) সবচেয়ে বাসের অযোগ্য হিসেবে ঘোষণা দেয়াটি এমন কিছু বড় অন্যায় হয়নি।

ঢাকা শহরের সমস্যা বলা শুরু করলে চট করে থেমে যাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু ঢাকা শহরের সব মানুষকে যেটি কোনো না কোনোভাবে কষ্ট দিয়েছে সেটি হলো যানজট। (মাত্র কিছুদিন আগে আমি অতিষ্ঠ হয়ে গাড়ি থেকে নেমে টানা চার ঘণ্টা হেঁটে যানজট থেকে বের হয়ে এসেছি।) আমি সিলেটে ক্যাম্পাসে থাকি আর মাত্র পাঁচ মিনিটে হেঁটে হেঁটে আমি ক্লাস নিতে হাজির হই। চারপাশে সবুজ গাছ, ধানক্ষেত, বাতাসে বিশুদ্ধ অক্সিজেন। কিন্তু আমাকে মাঝে মাঝে ঢাকা যেতে হয়। গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে হাজির হতে গিয়ে আমি আবিষ্কার করেছি, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে কত সময় লাগতে পারে, আজকাল তার অনুমান করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। যে কোনো জায়গা থেকে যে কোনো জায়গায় যেতে কয়েকঘন্টা সময় লেগে যায়। সময়ের অপচয়ে নিশ্চয়ই আর্থিক ক্ষতি হয়। ঢাকা শহরের সব মানুষের প্রতিদিন যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, কেউ যদি সেটা হিসেব করে তাহলে নিশ্চয়ই মাথা খারাপ হয়ে যাবে। আমার ধারণা সেই টাকা বাঁচানো গেলে প্রতিমাসে একটা করে পদ্মা সেতু বানানো যেত!

আজকাল আমার ঢাকা শহরে যেতে ভয় করে। ঢাকা শহরে পৌঁছে আমি আমার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাই গভীর রাতে। যখন পথে-ঘাটে ভিড় কমে যায়। যানজট সমস্যার এটা কোনো সমাধান হতে পারে না। কিন্তু আমার ধারনা খুব সহজেই অন্য এক ধরনের সমাধান দেয়া যায়। সবার জন্যে না হলেও অনেকের জন্য, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য।

২.
কয়েক বছর আগে আমি যখন ডেনমার্কের রাজধানী কেপেনহেগেন গিয়েছি, তখন বিষয়টি প্রথমে আমার চোখে পড়েছে। সেই শহরে সবাই সাইকেলে যাতায়াত করতে পারে তার জন্য ব্যবস্থা করা আছে। ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষ সবাই সাইকেলে যাচ্ছে আসছে। আর সাইক্লিস্টরা যেন নিরাপদে যেতে পারে সেজন্যে সব গাড়ি বাস-ট্রাক ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করে আছে। হঠাৎ করে দেখলে কারো ধারণা হতে পারে যে, শহরের কিছু মানুষ বুঝি মজা করার জন্য সাইকেলে বের হয়েছে, একটু পরে সবাই বাড়ি পৌঁছে তাদের গাড়ি নিয়ে বের হবে। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। সেই দেশের অনেক মানুষের গাড়ি কেনার এবং গাড়ি চড়ার সামর্থ্য থাকার পরও তারা গাড়ি কেনে না, গাড়ী চালায় না। তারা সাইকেলে যাতায়াত করে। ডেনমার্ক যাওয়ার পর আমি সেটা আবিষ্কার করেছিলাম আমাদের কনভেনশনের সেক্রেটারি মেয়েটির কাছ থেকে। কমবয়সী হালকা ছিপছিপে মেয়ে কিন্তু সে নিজেই কথা প্রসঙ্গে আমাদের জানালো সে সন্তান সম্ভবা। আমি এর মাঝে জেনে গিয়েছি, সে সাইকেলে করে সব জায়গায় যাতায়াত করে। আমি তাকে বললাম- তার একটা শিশু সন্তান জন্ম নেওয়ার পর সে নিশ্চয়ই তার শিশুটিকে নিয়ে সাইকেলে যাতায়াত করতে পারবে না। কিন্তু মেয়েটি মাথা নেড়ে প্রবল বেগে আপত্তি করে আমাকে জানাল, তার শিশু সন্তান জন্ম নেওয়ার পরও সে সাইকেলে যাতায়াত করবে। বাচ্চাটিকে নেওয়ার জন্য সাইকেলের সঙ্গে একটা ক্যারিয়ার লাগিয়ে নেবে। শুধু তাই না, বাচ্চা ডেলিভারির জন্য সে হাসপাতালে যাবে সাইকেলে, বাচ্চা জন্মানোর পর তাকে বাসায় নিয়ে আসবে সাইকেলে!

আমি ডেনমার্ক বিশেষজ্ঞ নই, তাই এই মেয়েটিই সেই দেশের স্বাভাবিক চিত্র নাকি ব্যতিক্রম আমি সেটা জানি না। শুধু এটুকু বলতে পারি, ডেনমার্কের কোপেনহেগেন শহরে একজন মেয়ে তার শিশু সন্তানের জন্ম, বাসায় শিশুটিকে নিয়ে আসা, শহরে ঘুরাঘুরি সবকিছু পরিকল্পনা করতে পারে সাইকেল দিয়ে; সেই শহরটি শহরবাসীর জন্যে সেরকম ব্যবস্থা করে রেখেছে। সেই দেশের মানুষের গাড়ি কেনার ক্ষমতা থাকার পরও গাড়ি কেনে না! সাইকেল দিয়ে সেই শহরের মানুষ সব জায়গাতে যাতায়াত করতে পারে।

তাহলে আমাদের ঢাকা শহরে কেন সেটা হতে পারে না? আমি এখানে অনেক ছাত্রকে জানি যারা এখনই ঢাকা শহরে সাইকেল দিয়ে যাতায়াত করার চেষ্টা করে। যেহেতু শহরটিকে সাইকেলে চলাচল করার উপযোগী করে রাখা হয়নি, তাই তাদের অনেকেই নানা রকম এক্সিডেন্ট করে অল্পবিস্তর কষ্ট করেছে। যদি ঢাকা শহরে গাড়ি-বাস-ট্রাক-টেম্পুর পাশাপাশি মূল রাস্তাগুলো দিয়ে সমানভাবে সাইকেলও যেতে পারত, আমার ধারণা তাহলে যানজটের বিরাট একটা অংশ রাতারাতি নিয়ন্ত্রণে আসত। এজন্য হাজার কোটি টাকা খরচ করে ফ্লাইওভার তৈরি করতে হবে না, শুধু রাস্তার পাশে কংক্রিটের ডিভাইডার ফেলে সাইকেল যাওয়ার জন্য সরু একটা রাস্তা করে দিতে হবে। নিয়ম করে দিতে হবে রাস্তার সেই অংশ দিয়ে কেবল সাইকেল যাবে, অন্য কিছু নয়। আমার ধারণা তরুণ প্রজন্ম এটি লুফে নেবে। যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে না থেকে তারা সাইকেল চালিয়ে চোখের পলকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা চলে যাবে। আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম তখন আমি সাইকেল করে আসতাম। ঢাকার রাস্তায় তখন গাড়ি-বাস-ট্রাক অনেক কম ছিল। আমি তাদের ফাঁক দিয়ে সাইকেল চালিয়ে কলেজগেট থেকে নিয়মিতভাবে কার্জন হলে যাওয়া আসা করতাম। চল্লিশ বছর আগে আমি বড় বড় রাস্তায় যেটা করতে পেরেছি, এখন সেটি আর সম্ভব নয়। কিন্তু সাইকেলের জন্যে আলাদা লেন করে দিলে অবশ্যই সেটা সম্ভব।

কাজেই আমি সরকারের কাছে এই অনুরোধটা করতে চাই, ঢাকা শহরের সব বড় রাস্তার দুই পাশে সাইকেলের আলাদা লেন করে দেয়া হোক। পৃথিবীর অন্য সব দেশে যেভাবে সাইকেলে করে মানুষ যাতায়াত করে রাস্তাঘাটের উপর থেকে চাপ কমিয়ে এনেছে, আমাদের ঢাকা শহরেও সেটা করা হোক। এর জন্য সরকারের সত্যিকার অর্থে কোনো বাজেট লাগবে না। কিন্তু যদি করে দেওয়া হয়, তাহলে মানুষের যে সময় বাঁচবে, তার আর্থিক মূল নিশ্চয়ই মোটেও হেলাফেলার বিষয় নয়।

আমি মনে মনে কল্পনা করতে পারি- ঢাকা শহরের রাস্তার পাশে সাইকেলের আলাদা লেন। সেটি নিরাপদ, সেখানে হুট করে কোনো বাস-গাড়ি-ট্রাক-টেম্পু চলে এসে কাউকে আঘাত করতে পারবে না। তাই ঢাকা শহরের সব কমবয়সী তরুণ-তরুণী, স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা সাইকেল চালিয়ে তাদের গন্তব্যে, তাদের স্কুল কলেজে যাচ্ছে। এর থেকে সুন্দর দৃশ্য আর কী হতে পারে? সাইকেল চালাতে শরীরের মাংসপেশী ব্যবহার করতে হয়। কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা তরুণ প্রজন্ম প্রথমবার পথে নেমে আসতে পারবে, দেখতে দেখতে তাদের শরীর শক্ত সমর্থ হয়ে উঠবে, তাদের জীবনী শক্তি শতগুনে বেড়ে যাবে!
যদি সত্যি সত্যি এ ধরনের একটা পরিকল্পনা নেওয়া হয়, আমি নিশ্চিত তাহলে আমাদের তরুণ প্রজন্ম সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে। তারা ঢাকা শহরের পথ-ঘাট ঘাটাঘাটি করে, গুগল ম্যাপ দেখে, অংক কষে হিসেব করে বের করে ফেলতে পারবে, কোন কোন রাস্তার কতটুকু অংশে কত বড় লেন তৈরি করা হলে সেটি হবে সবচেয়ে কার্যকর!

যদি সত্যি সত্যি ঢাকা শহরের যানজট সাইকেল ব্যবহার করে কমিয়ে আনা যায়, তাহলে সামনের বছর যখন বাস করার অনুপযোগী শহরের তালিকা করা হবে তখন ঢাকা শহরের স্থান নিশ্চয়ই সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকবে না। বেশ খানিকটা ভালো অবস্থায় চলে আসবে।

সামনে নির্বাচন। গত নির্বাচনের ফলাফল ঠিক করেছিল তরুণেরা। এই নির্বাচনেও কী সেই তরুণদের কিছু একটা উপহার দেয়া যায় না? আমার ধারণা যানজটের হাত থেকে উদ্ধার পেতে সাইকেলের জন্য আলাদা একটি লেন চমৎকার একটা উপহার হতে পারে। এজন্য টাকা পয়সার দরকার নেই, দরকার শুধু একটা সিন্ধান্তের।

প্রায় চল্লিশ বছর হলো আমি সাইকেল চালাই না। প্রিয় শহর ঢাকায় পথে পথে সাইকেল চালানো না জানি কত আনন্দের। আমি অপেক্ষা করে আছি, কবে আবার সুযোগ পাবো । পাব কি ?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *