দিনের শেষে ঘুমের দেশে ঘোমটা-পরা ওই ছায়া
ভুলালো রে ভুলালো মোর প্রাণ।
ও পারেতে সোনার কূলে আঁধারমূলে কোন্ মায়া
গেয়ে গেল কাজ-ভাঙানো গান।
নামিয়ে মুখ চুকিয়ে সুখ যাবার মুখে যায় যারা
ফেরার পথে ফিরেও নাহি চায়,
তাদের পানে ভাঁটার টানে যাব রে আজ ঘরছাড়া—
সন্ধ্যা আসে দিন যে চলে যায়।
ওরে আয়
আমায় নিয়ে যাবি কে রে
দিনশেষের শেষ খেয়ায়।
সাঁজের বেলা ভাঁটার স্রোতে ও পার হতে একটানা
একটি-দুটি যায় যে তরী ভেসে।
কেমন করে চিনব ওরে ওদের মাঝে কোন্খানা
আমার ঘাটে ছিল আমার দেশে।
অস্তাচলে তীরের তলে ঘন গাছের কোল ঘেঁষে
ছায়ায় যেন ছায়ার মতো যায়,
ডাকলে আমি ক্ষণেক থামি হেথায় পাড়ি ধরবে সে
এমন নেয়ে আছে রে কোন্ নায়।
ওরে আয়
আমায় নিয়ে যাবি কে রে
দিনশেষের শেষ খেয়ায়।
ঘরেই যারা যাবার তারা কখন গেছে ঘরপানে,
পারে যারা যাবার গেছে পারে;
ঘরেও নহে, পারেও নহে, যে জন আছে মাঝখানে
সন্ধ্যাবেলা কে ডেকে নেয় তারে।
ফুলের বার নাইকো আর,
ফসল যার ফলল না—
চোখের জল ফেলতে হাসি পায়—
দিনের আলো যার ফুরালো, সাঁজের আলো জ্বলল না,
সেই বসেছে ঘাটের কিনারায়।
ওরে আয়
আমায় নিয়ে যাবি কে রে
বেলাশেষের শেষ খেয়ায়।
—————–
আষাঢ়, ১৩১২