শৃগাল ও কণ্টকবৃক্ষ।
এক শৃগাল, বন্যশূকরের নিকট তাড়া খাইয়া, এক বেড়া ডিঙ্গাইয়া, পলাইতে চেষ্টা করিয়াছিল। কিন্তু বেড়া ডিঙ্গাইতে গিয়া, সে যখন পড়িয়া যাইবার উপক্রম করিল, তখন সে বেড়ায় সংলগ্ন এক কাঁটাগাছের ডাল ধরিয়াছিল। উহাতে তাহার হাতে কাঁটা ফুটিয়া গেল, হস্তে রক্তপাতও হইল, সে যন্ত্রণায় চীৎকার করিয়া উঠিল। কেবল যে কাঁটা ফুটিল তাহা নহে, কাঁটাগাছের হাল্কা ডাল ভাঙ্গিয়া যাওয়াতে সে ভূতলে পড়িয়া গেল।
তখন, শৃগাল যন্ত্রণায় ও ব্যথায় অধীর হইয়া, মহা ক্রুদ্ধ হইয়া কণ্টকবৃক্ষকে ভৎসনা করিয়া বলিল, “রে দুর্বৃত্ত! তোকে অবলম্বন করিতে গিয়াই আজ আমার এ দশা ঘটিল। তোর মরণই মঙ্গল!”
কণ্টকবৃক্ষ এই কথা শুনিয়া বলিল, “ভাই হে! এ বড় মজার কথা। আমি তোমাকে ত আমার সাহায্য লইতে আহ্বান করি নাই, তুমি আমায় অবলম্বন করিলে কেন?”
শৃগাল অধিকতর ক্রুদ্ধ হইয়া বলিল, “বাঃ! তুই ক্ষুদ্র অতি নীচ। এই বেড়া কত মহৎ! উহাকে অবলম্বন করিয়া আমি ত কষ্ট পাই নাই, সে ত আমার যথেষ্ট সাহায্য করিযাছে।”
কণ্টকবৃক্ষ বলিল, “বেড়া মহৎ, সন্দেহ নাই, কেন না সে আমাকেও আশ্রয় দিয়াছে। কিন্তু তুমি আমা হইতেও নীচ, কেননা তুমি আমাকে অবলম্বন ও আশ্রয় মনে করিয়া জড়াইয়া ধরিয়াছ! আমি স্বয়ং যখন অন্যকে জড়াইয়া থাকি, তখন আমাকে জড়াইয়া তুমি কি তোমার বুদ্ধিহীনতার পরিচয় দেও নাই?”
যে অন্যের উপর নির্ভর কবে, সে অপরকে সাহায্য করিতে পাবে না।