দ্বিতীয় খন্ড
উত্তরপর্ব
2 of 3

শুভাশুভ গতি ও যমযাতনা

।। শুভাশুভ গতি চ যমযাতনা।।

অথৈভিঃ পাতকৈৰ্যান্তি যমলোকং চতুৰ্বিধৈঃ। সংত্রাসজননং ঘোরং বিবশাঃ সর্বদেহিনঃ।।১। গৰ্ভস্থৈর্জায়মানৈশ্চ বালৈস্তরুণ মধ্যমৈঃ। পুংস্ত্রী নপুংসকৈবুদ্ধৈজ্ঞাতব্যং সর্বজন্তভিঃ।।২।। শুভাশুভফলং তত্র দেহিনাং প্রতিচার্যতে। চিত্রগুপ্তাদিভিঃ সভৈমধ্যস্থৈঃ সর্বদর্শিভিঃ।।৩।। ন তেহত্র প্রাণিনঃ সন্তি যেন যাতি যমক্ষয়ম্। অবশ্যং হি কৃতং ভোক্তব্যং তদ্বিধারিতম্।।৪।। তত্র যে শুভকর্মাণঃ সৌম্যচিত্তা দয়ান্বিতাঃ। তে নরা যান্তি সৌমেন পথা যস্ননকেতনম্।।৫।। যঃ প্রদদ্যাদ্ দ্বিজেন্দ্রাণামুপানৎ কাষ্ঠপাদুকাম্। স বরাশ্বেন মহতা সুখং যাতি যমালয়ম্।।৬।। অন্নদানং বিশেষেণ ধর্ম রাজপুরে নরা। যস্মাদ্যান্তি সুখেনৈব তস্মাদ্ ধর্মং সমাচরেদ্।।৭ ॥

।। শুভাশুভ গতি ও যমযাতনা।।

এই অধ্যায়ে শুভ এবং অশুভ গতির ফল প্রাপ্তির বর্ণনা প্রসঙ্গে যমযাতনার প্রকার বর্ণন করা হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণ বললেন- মৃত্যুর পর বিবশ হয়ে সমস্ত দেহধারীলোক এই চার প্রকার পাতকের দ্বারা সন্ত্রাসজনক ঘোর যমলোক গমন করে।।১।।

গর্ভস্থিত, জায়মান, বালক, তরুণ, প্রৌঢ়, বৃদ্ধ, পুরুষ, স্ত্রী তথা নপুংসক সমস্ত প্রাণীর একথা জানা উচিৎ। এমন কোনো প্রাণী নেই যিনি যমলোকে গমন করেন না। চিত্রগুপ্তের দ্বারা সেখানে সমস্ত কিছুর বিচার হয়। মনুষ্যের কৃত সমস্ত কর্মের ফল তাকে ভোগ করতেই হয়। সেখানে শুভকর্মকারী সৌমচিত্ত, দয়াবান্ প্রাণী রামরাজ্যে গমন করে। যে ব্যক্তি ব্রাহ্মণকে কাষ্ঠ পাদুকা দান করেন তিনি অশ্বে আরোহন করে সুখপূর্বক যমরাজ্যে যান। অন্নদানকারী মহাসুখে যমরাজ্যে বাস করেন। তাই ধর্মাচরণ অবশ্য করা উচিৎ।।২-৭।

যে পুনঃ ক্ররকর্মানঃ পাপা দানবিবর্জিতাঃ। তে ঘোরেণ পথা যান্তি দক্ষিণেন যমালয়ম্।।৮ ষড়শীতিসহস্রানি যোজনানামতীত্য যৎ। বৈবস্বতপুরং জ্ঞেয়ং নানারূপব্যবস্থিতম্।।৯।। সমীপস্থমিবাভাতি নরাণাং শুভকর্মণাম্। পাপানামতিদূরস্থং পথা রৌদ্রেণ গচ্ছতাম্।।১০।। তীব্র কন্টকযুক্তেন শর্করানিচিতেন চ। ক্ষুরধারনিভৈস্ত্রীব্রৈঃ পাষানৈৰ্নিচিতেন চ।।১১। কচিৎ পঙ্কেন মহতা দূরুতারৈশ্চঘাতকৈঃ। লৌহ সূচীনিভৈদভৈঃ সংছন্নেন পথা ক্বচিৎ।।১২।। তটপ্ৰতাপবিষ্টম্ভৈঃ পর্বতৈবৃক্ষ সংকুলৈঃ। প্রতপ্তাং গারমুক্তেন যাস্তি মার্গেন দুঃখিতা।।১৩।। ক্বচিদ্বিষমগতৈশ্চ কচিলোষ্ট্রেঃ সুপিচ্ছিলৈঃ। প্রতপ্তবালুকাভিশ্চ তথা তীক্ষ্মৈশ্চ শংকুভিঃ।।১৪।।

ক্রুর কর্মকারী, পাপী, দানাদি-শুভকর্ম রহিত ব্যক্তি দক্ষিণ মার্গে গমন করেন। তিনি ছিয়াশিহাজার যোজন মার্গ পার করে নানারূপে ব্যবস্থিত বৈবস্তপুরে গমন করেন। শুভকর্মকারী ব্যক্তির কাছে বৈবস্তপুর অত্যন্ত সমীপেই অবস্থিত হয়। পাপীগণের কাছে তা দূর বলে মনে হয়, কারণ সে রৌদ্র মার্গে সেখানে গমন করে।।৮-১০।

পাপীগণের গমনমার্গ কন্টকাকীর্ণ হয়। সেই মার্গ ছুরিকার মতো ধারালো পাথরে ভরা থাকে। এই মার্গ কোথাও গহ্বর, কোথাও পঙ্কিল বেষ্টিত হয়। লৌহসূচী আচ্ছন্ন পথ কোথাও তাদের অতিক্রম করতে হয়। কোথাও পৰ্বত বৃক্ষ সংকুল, কোথাও বা প্রতপ্ত অঙ্গারযুক্ত পথ অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে পাপীদের পার করতে হয়।।১১-১৩।।

কোথাও বিষমগর্ত, কোথাও বা পিচ্ছিল পথ পরিলক্ষিত হয়। কোথাও আবার উত্তপ্ত বালুকাপূর্ণ বা তীক্ষ্ণশঙ্কুপূর্ণ মার্গ দেখা যায়।।১৪।।

অনেক তাপৈৰ্বিততৈৰ্য্যাপ্তং বংশবনং ক্বচিৎ। ক্বচিদ্ বালুকয়া ব্যাপ্তং কষ্টেনৈব প্রবেশণম্।।১৫।। ক্বচিদ্ উষ্ণাম্বুনা ব্যাপ্তং ক্বচিৎ কারীষবহ্নিনা। ক্বচিৎ সিংহৈবৃকৈব্যাপ্তং দংশেঃ কীটশ্চ দারুনৈঃ।।১৬ ক্বচিন্‌ মহাজলৌকাভিঃ কচিচ্চাজগরৈঃ পুনঃ। মক্ষিকাভিশ্চ রৌদ্রাভিঃ ক্বচিৎ সপৈর্বিমোশ্বনৈঃ।।১৭।। মত্তমাতঙ্গ যুথৈশ্চ বলোন্মত্তৈঃ প্রমাথিভিঃ। পস্থানমুল্লিখভিশ্চ তীক্ষ্মাশৃংগৈ-মহাবৃষৈঃ।।১৮।। মহাবিষানৈ সহিষেরু ষ্টেম্মত্তেশ্চ খাদকৈঃ। ডাকিনীভিশ্চ রৌদ্রাভির্বিকরালৈশ্চ রাক্ষসৈঃ।।১৯।। ব্যাধিভিশ্চ মহাঘোরৈ পীড়য়মানা-ব্রজত্তি চ। মহাধূলীবিমিশ্রেণ মহাচল্ডেন বায়ুনা।।২০।। মহাপাষাণ বর্ষেণ হন্যমানা নিরাশ্রয়াঃ। ক্বচিদ বিদ্যুৎ প্রপাতেন দীর্ঘমানা ব্ৰজন্তি চ।।২১।। মহতা বাণ বর্ষেন বিধ্যমানাশ্চ স্বশঃ। পতদ্ভিবজ্র সংঘাতৈর ল্কাপাতৈশ্চ দারুনৈঃ।।২২।। প্রতপ্তাংগারবর্ষেণ দহ্যমানা ব্ৰজন্তি চ। তপ্তেন পাংশুবর্ণেন পূর্যমান্য রুদন্তি চ।।২৩।।

কোনো জায়গায় বিবিধ প্রকার মহাজলৌকাবেষ্টিত থাকে। কোথাও পথগুলি উষ্ণ জলের দ্বারা ব্যপ্ত থাকে বা অগ্নি দ্বারা ব্যপ্ত থাকে। কোনোখানে সিংহ, বৃকো প্রভৃতি হিংস্র জন্তুরা থাকে। কোনো মার্গে জলৌকা বা মহা অজগর সর্প পরিপূর্ণ থাকে। কোথাও ভয়ানক মক্ষি, উম্মত্ত হস্তি, তীক্ষ্ণশৃঙ্গ যুক্ত বৃষ পরিপূর্ণ থাকে। আবার ভয়ানক ডাকিনী, বিকরাল রাক্ষস কোথাও থাকে। প্রচন্ড ধূলিঝড়, প্রস্তর বৃষ্টি, প্রাণসংশয়কারী বিদ্যুৎ ইত্যাদির দ্বারা পাপীগণ আক্রান্ত হয়।।১৫-২১।।

মহামে ঘরবৈ ঘোরৈবিত্রাংস্যতে মুহু মুহুঃ। নিশিতায়ুধবর্ষেণ চূর্যমানা নরৈব্রতাঃ। মহাক্ষারাম্বুধারাভিঃ সিচ্যমানাদ্ৰবস্তি চ।।২৪।। মহাশীতেন মরুতা তীক্ষ্ণণ পরুষেণ চ। সমস্তাৎপীড়য়মানাস্তে শুষ্যন্তে সংকুচন্তি চ।।২৫।। ইত্থং মার্গেণ রৌদ্রেন পাস্থৈবিরহিতেন চ। নিরালম্বেন দুর্গেন নির্জলেন সমস্ততঃ।।২৬। অবিশ্রামেন মহতা নির্গতাপাশ্রয়েণ চ। তমোরুপেন কষ্টেন সর্বদুঃখাশ্রয়েন চ।।২৭। নীয়ন্তে দেহিনঃ সর্বে যে মুঢ়া পাপকর্মিণঃ। যমদুতৈর্মহাঘোরৈস্তদাজ্ঞাকারির্ভিবলাৎ।।২৮।। একাকিনঃ পরাধীনা মিত্রবন্ধুবিবর্জিতাঃ। শোচন্তঃ স্বানি কর্মানি রুদতশ্চ মুহু মুহুঃ।।২৯।। প্রেতভূতা বিবস্ত্রাশ্চ শুষ্ককষ্ঠৈাষ্ঠতালুকাঃ। কৃষ্ণাংগা ভীতভীতাশ্চ দহ্যমানাঃ ক্ষুধাগ্নিনা।।৩০। বদ্ধা শৃংখলয়া কেচিদুত্তানাঃ পাদয়োর্নরাঃ। আকৃষ্যস্তে ঘৃষ্যমানা যমদূতৈবলো‍ কটে।।৩১।। পুনশ্চাধোমুখাশ্চান্যে ঘৃষ্যমানাঃ সুদুঃখিতাঃ কেশপাশনিবদ্ধাশ্চ কৃষ্যন্তে রজ্জুভির্নরা।।৩২।। ললাটে চাংকুশৈস্তীম্নৈভিন্নাঃ কৃষ্যন্তি দেহিনঃ। উত্তানা রটমানাশ্চ কচিদংগার বর্তনা।।৩৩।

পাপীগণ আবার মহাবাণের দ্বারা, বজ্রপাতের দ্বারা, উল্কাপাতের দ্বারা বিধ্বস্ত হয়। তপ্ত বালুকাপূর্ণ বা বর্ষাপূর্ণ রাস্তাতে গমন করতে করতে পাপীগণ রোদন করে।

বিশাল মেঘের গর্জন, তীক্ষ্ণ অস্ত্র, মহাক্ষারজল, শীতল বাতাস ও প্রচন্ড রৌদ্র দ্বারা পাপীগণ শাস্তি ভোগ করে। অবলম্বনহীন হয়ে দুর্গ ও জল রহিত হয়ে সে দুর্গতি ভোগ করে। বিশ্রামশূন্য, জলহীন, অন্ধকারময়, কষ্টপ্রদ ও সমস্ত দুঃখ পরিপূর্ণ মার্গে পাপীগণ গমন করে।।২২-২৮।।

পাশ্চাদ্বাহুং স্বদ্ধাশ্চ জঠরে চ প্রপীড়িতাঃ। পূরিতা শৃংখলাভিশ্চ হস্তয়োশ্চ প্রকীলিতা।।৩৪।। গ্রীবায়ামৰ্দ্ধচন্দ্রেন ক্ষিপ্যমানা ইতস্ততঃ। শিশ্নে চ বৃষণে বদ্ধা নীয়ন্তে চর্মরজ্জু না।।৩৫।। এবং পথাতিকষ্টেন প্রাপ্তা যমপুরং তদা। প্রজ্ঞাপিতাস্তদা দুতৈৰ্নিবেশ্যন্তে সমাগ্রতঃ।।৩৬। তত্র যে শুভকর্মানস্তাংশ্চ সম্মানয়েদ্যসঃ। স্বাগতাসনদানেন পাদ্যাঘ্ৰেণ প্রিয়েণ চ।।৩৭।। ধন্যা সূয়ং মহাত্মান আত্মনো হিতকারিণঃ। যেনদিব্যসুখার্থায় ভবাদ্ভিঃ সুকৃতং কৃতম্।।৩৮।। ইদং বিমান মারুহ্য দিব্য স্ত্রীভোগ ভূষিতম্। স্বর্গং গচ্ছধ্বমতুলং সর্বকাম সমন্বিতম্।।৩৯।। ততো ভুক্ত্বা মহাভোগানন্তে পুষ্ঠাস্য সংক্ষয়াৎ। যৎকিঞ্চিৎ অল্পামশুভং পুনস্তদিহ ভোক্ষ্যথ।।৪০ ।। তে চাপি ধর্মরাজানং নরা পুন্যানুভাবতঃ। পশ্যন্তি সৌমবদনং পিতৃভূতমিবাত্মনঃ।।৪১।।

পাপাত্মা প্রাণী পরাধীন ও মিত্র বর্জিত হয়ে রোদন করে ও নিজকৃত কর্মের কারণ চিন্তা করে। প্রেত বিবস্ত্র, কন্ঠ, তালু শুষ্ক হয়ে দুর্বল শরীরে ক্ষুধা কাতর হয়। পাপীগণকে শৃঙ্খলবদ্ধ করে যমদূতগণ টানতে টানতে নিয়ে যায়। কোথাও গলা ধাক্কা দিয়ে যমদূতগণ পাপীদের নিয়ে যায় বা চর্মর বাজুতে বন্ধন করে নিয়ে যায়।।২৯-৩৫।।

যেপুনঃ পাপকর্মাণস্তে পশ্যন্তি ভয়ানকম্। পাপাবিশুদ্ধনয়না বিপরীতাত্মবুদ্ধয়ঃ।।৪২।। দংষ্ট্রাকরালবদনং ভ্রুকুটী কুটিলেক্ষণম্। উর্দ্ধকেশং মহাশ্মশ্রুপ্রস্ফুরদধরোত্তরম্।।৪৩।। অষ্টাদশভূজং ঐদ্ধং নীলাঞ্জনচয়োপমম্।। সবাধোদ্যতকরং ব্রহ্মদন্ডেন তর্জকম্।।৪৪।। মহামহিষসারূঢ়ং দীপ্তাগ্নিসমলোচনম্। রক্তমাল্যাম্বরধরং মহামেরুমিবোচ্ছ্রিতম্।।৪৫।। প্রলয়াম্বুদনির্ঘোষং পিবন্তমিব সাগরম্। গ্রসস্তমিব লোকানামুরিস্তমিবানলম্।।৪৬।। মৃত্যুশ্চ সৎ সমীপস্থঃ কালানল সমপ্রভঃ। কালশ্চাঞ্জনসংকাশঃ কৃতান্তশ্চ ভয়ানকঃ।।৪৭।। মারী চোগ্রা মহামারী কালরাত্রি সুদারুণা। বিবিধা ব্যাধয়ঃ কষ্টা নানারূপ ভয়াবহাঃ।।৪৮।। শক্তিশূলাংকুশধরাঃ পাশচক্রাসিধারিণঃ। বজ্রদধরা রৌদ্রাঃ ক্ষুদ্রতূনীধনুধরা।।৪৯।।

এই প্রকারে অত্যন্ত কষ্টপ্রদ মার্গে পাপী মনুষ্য যমরাজ্যে গমন করে সেখানে শুভকর্মকারী, সৌমমার্গে আগমনকারী মনুষ্যকে যমরাজ সম্মানিত করেন। অর্থ, পাদ্যাদি দ্বারা প্রেমপূর্বক তাদের আসন দেওয়া হয়। তাদের “মহান আত্মা” বলে ধন্যবাদ জানানো হয় এবং দিব্যস্ত্রী শোভিত বিমানে তাদের স্বর্গে পাঠানো হয়। তাদের পুর্ণফলের অন্তঃ হলে কিছু অশুভ কর্মের ফল ভোগ করার কথা জানানো হয়। পুণ্যবান্ লোক তাদের পুণ্যের বলে যমরাজকে সাক্ষাৎ পিতৃতুল্য বলে মনে করে। অপর দিকে বিপরীত আত্মা ব্যক্তি তাঁকে ভয়ানকরূপে দেখে।।৩৬-৪২।।

পাপী প্রাণীগণ যমরাজকে করালমুখ, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিযুক্ত, উন্নত কেশযুক্ত তথা বড় শ্মশ্রুযুক্ত–এইরূপ ভীষণাকার দর্শন করে।।৪৩-৪৪।।

যমরাজকে অষ্টাদশ বাহু বিশিষ্ট, হস্তে অস্ত্রযুক্ত, ব্রহ্মদন্ডের দ্বারা তর্কনকারী, বিশাল মহিষের পৃষ্ঠে আরোহনকারী, রক্তবস্ত্রধারণকারী মেরু শিখর তুল্য বলে মনে হয়। প্রলয়কালে মেঘগর্জনকারী, সমস্ত লোক গ্রাসকারী এইরূপ ভয়ানক রূপে তাকে পাপীগণ দর্শন করে। মারী, উগ্রা, মহামারী, কালরাত্রি সুদারুণা অনেক ভয় দানকারী, দন্ড-পাশ-বর্শা, অসি, শূল, বজ্র, ধনুর্বান ধারণকারী মহাযম সেখানে উপস্থিত হয়।।৪৫-৪৯।।

অসংখ্যাতা মহাবীৰ্মাঃ ক্রুরাশ্চাঞ্জন সম্প্রভাঃ। সর্বামুধোদ্যতকরা যমদূতা ভয়ানকাঃ।।৫০।। অনেন পরিবারেণ মঞ্জুঘোরেণ সংবৃতম্। যমং পশ্যন্তি পাপিষ্ঠাশ্চিত্রেগুপ্তং চ ভীষণম্।। নির্ভৎর্সয়ন্তং চাত্যন্তং যমং সদুপকারিণম্।।৫১।। চিত্রগুপ্তশ্চ ভগবান্ ধর্মবাক্যৈঃ প্রবোধয়ন্। ভো ভো দুস্কৃত কৰ্মাণঃ পরদ্রব্যাপহারিণঃ। গর্বিতা রূপবীর্যেণ পরদারবিমর্দকাঃ।।৫২।। যৎস্বয়ং ক্রিয়তে কর্ম তৎস্বয়ং ভুজ্যতে পুনঃ। তৎকিমাতো পধাতাধং ভবদ্ভিদুস্কৃতং কৃতম্।।৫৩।। ইদানীং কিং প্রতপ্যধ্বং পীড়য়মানাঃ স্বকর্মভি। ভূধ্বং স্বানি কর্মানি নাত্র দোষোহস্তি কস্যচিৎ।।৫৪ এতে চ পৃথিবীপালাঃ সম্প্রাপ্তা মম্মীপতঃ। স্বকীয়ৈঃ কর্মভিঘোরৈদুষ্প্রজ্ঞা বলগর্বিতাঃ।।৫৫। ভো ভো নৃপা দুরাচারা প্রজাবিধ্বং সকারিণঃ। অল্পকালস্য রাজস্য কৃতে কিং দুস্কৃতং কৃতম্।।৫৬।। ভো ভোশ্চন্ড মহাচন্ড গৃহীত্বা নৃপতী নিমান্। বিশোধয়ধ্বং পাপেভ্যঃ ক্রমেন নরকাগ্নিমু।।৫৭।। ততঃ শীঘ্রং সমুখায় নৃপান্ সংগৃহ্য পাদয়োঃ। ভ্রাময়িত্বাতিবেগেন বিক্ষিপ্যোং বিগৃহ্য চ।। ৫৮।।

কাজল কালো, মহাপরাক্রমী, ক্রূর, অস্ত্রযুক্ত, অসংখ্য দূত শোভিত হয়ে যমরাজ ও চিত্রগুপ্ত মহাপাপীগণকে তিরস্কার করে। চিত্রগুপ্ত বলেন— হে মহাপাপীগণ, তোমরা স্বেচ্ছায় নিজ গর্বে গর্বিত হয়ে পরদ্রব্য হরণ, পরস্ত্রীগমন ইত্যাদি পাপকর্ম করেছ সুতরাং ফল তোমাদেরকেই ভোগ করতে হবে। হে দুরাত্মা রাজা অল্প সময় ভোগ্য রাজ্যে তোমরা প্রজাগণকে কেন পীড়িত করলে? পুনরায় যমরাজের আজ্ঞাতে দূতগণ রাজগণকে তপ্ত অগ্নিতে ফেলে তাদের শোধন করে। এরপর রাজগণ রক্তাক্ত হয়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে যায়। বায়ুর স্পর্শে তারা পুনর্জীবন লাভ করলে তাদের নরকসমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়।

সর্ব প্রাণেন মহতা সুতপ্তে তু শিলাতলে। আস্ফালয়ন্তি তরসা বজ্রেনেব মহাদ্রুমস্।।৫৯।। ততঃ স রক্তস্রোতোভিঃস্রবতে জৰ্জ্জরীকৃতঃ। স নিঃ সংজ্ঞস্তদা দেহী নিশ্চেষ্টঃ সংপ্রজায়তে।।৬০। ততঃ স বায়ুনা স্পষ্টঃ শনৈরুজ্জীবতে পুনঃ। ততঃ পাপবিশুদ্ধয়র্থ ক্ষিপ্যতে নরকার্নবে।।৬১।। অষ্টাবিংশতিরেবাধঃ ক্ষিতের্নরককোটয়ঃ। সপ্তমস্য তলস্যান্তে ঘোরে তমসি সংস্থিতাঃ।।৬২।। রৌরবপ্রভৃতীনাং চ নরকানাং শতং স্মৃতম্। চত্বারিংশৎ সমধিক মহানরকমন্ডলম্।।৬৩।। যেষু পাপাঃ প্রপচ্যন্তে নরা কর্মানুরূপতঃ। যাতনাভির্বিচিত্রাভিরাকর্মপ্রক্ষয়াদ্ ভূশম্।।৬৪।। ভূশং বুভুক্ষয়া পীড়া মূৰ্চ্ছয়াতিপিপাসয়া। অত্যুষ্ণেনাতিশীতেন পাপানাং সমরেণ চ।।৬৫।। এবমাদিমহাঘোরা যাতনাঃ পাপকারিণঃ। একৈকে নরকে চৈব শতশোথ সহস্রশঃ।।৬৬।। প্রত্যেকং যাতনাশ্চিত্রাঃ সর্বেষু নরকেষু চ। কষ্টং বর্ষশতেনাপি সোদুং সবৈশ্চ নারকে।।৬৭।। এতে চ বিবিধৈঘোরৈর্যাৎ যমানাশ্চ কর্মভিঃ। ম্রিয়ন্তে নৈব পাপিষ্ঠা বিবিধাঃ পাপকারিণঃ।।৬৮।।

এই পৃথিবীর নীচে সপ্তমতলের অন্তে আঠাশ কুঠুরিযুক্ত অন্ধকার স্থান রয়েছে। সেখানে রৌববাদি শত নরক এবং আরও ৪০ নরকমন্ডল রয়েছে।।৫০-৬৩।।

মহাঘোরাভিঘোরাখ্যাঃ কালাগ্নিসদৃশোপমাঃ শ্রুতৈরেতৈর্মহারৌদ্রেম্রিয়ন্তে মৃদুচেতসঃ।।৬৯। ততস্তেনাত্র কথিতাঃ পাপাগচ্ছন্তি তান্ স্বয়ম্। পুত্রমিত্রকলত্রার্থং যদা পুণ্যং ত্বপাকৃতম্।।9০ । একাকী দহ্যতে তেন ন চ পশ্যতি তানিসঃ। আত্মণা চ কৃতং পাপং ভোক্তব্যং ধ্রুবমাত্ননা।।৭১। তৎ কিমন্যোপধাতার্থ মূঢ় পাপং কৃতং ত্বয়া। এবং দূতৈরূপালব্ধাস্তে পৃচ্ছক্তি ততঃ পুনঃ।।৭২। কিয়ন্তং কেন পাপেন কালমত্রায়তে নরঃ। দেবদ্রব্যবিনাশেন গুরুদ্রোহাদিকর্মভিঃ। পাপাৎসর্বেষু পচ্যন্তে নরকেম্বামহাক্ষয়াৎ।।৭৩। মহাপাতকিনশ্চাপি সর্বেষু নরকেম্বিহ। আচন্দ্রতারকং যাবৎ পীড়য়তে বিবিধৈবধৈঃ।।৭৪। মহাপাতকিনশ্চান্যে নরকার্নবকোটিষু। চতুৰ্দশাসু পচ্যন্তে কলাৰ্ধং বিবিধৈবধৈঃ।।৭৫।। উপপাতকিনশ্চাপি তদর্থং যান্তি মানবাঃ। শেষপাপৈস্তদর্থং তু কালং চাপি তথ্যবিধম্।।৭৬।

নিজ কর্মানুসারে ব্যক্তি বিভিন্ন যানে করে বিভিন্ন নরকে প্রেরিত হয় কর্মক্ষয় না হওয়া পর্যন্ত তারা বারংবার দুঃখ ভোগ করে। অত্যন্ত ক্ষুধার্ত হয়ে, পিপাসার্থ হয়ে, অতি উষ্ণ ও শীতের দ্বারা পীড়িত হয়ে পাপীদের প্রত্যেক নরকে শতকোটি বা সহস্ৰকোটি বৎসর নরক যাতনা ভোগ করতে হয়। এই যাতনা বিভিন্ন প্রকারের হয়। অত্যন্ত পাপকারী প্রাণী যাতনা ভোগ করেও মারা যাননা। মহা ঘোর ও অতি ঘোর নামক অগ্নি সদৃশ মহারৌদ্রে দুর্বল চিত্ত প্রাণী মৃত্যুতুল্য যাতনা ভোগ করে। সুতরাং নিজকৃত পাপের ফল নিজেকেই ভোগ করতে হয়। পুত্র-কলত্র এক্ষেত্রে কোনোরূপ ভাগ নিতে পারে না।।৬৪-৭১।।

তস্মাৎ পাপং ন কুর্বীত চঞ্চলে জীবিতে সতি। পাপেন হি ধ্রুবং যান্তি নরকেষু নরাঃ স্বয়ম্।।৭৭। যঃ করোতি নরঃ পাপং তস্যাত্মা ধ্রুবমপ্রিয়ঃ। পাপস্যেহ ফলং দুঃখং তদ্‌ভোক্তব্যমিহাত্মনা।।৭৮।। কথং ত পাপনিরতা নরা রাত্রিষু শে রতে। মরণান্তরিতা যেষাং নারকী তীব্রযাতনা।। ৭৯। এবং ক্লিষ্ট বিশুদ্ধাশ্চ সাবশেষেণ কর্মণা। ততঃ ক্ষিতিং সমাসাদ্য জায়ন্তে দেহিনঃ পুনঃ।। স্থাবরা বিবিধাকারাস্তুণগুল্মাদিভেদতঃ।।৮০। তত্রানুভূয় দুঃখানি জায়ন্তে কীটযোনিষু। নিষ্ক্রান্তাঃ কীটযোনিভ্যো জায়ন্তে পক্ষিণস্ততঃ।।৮১। সংশ্লিষ্টাঃ পক্ষি ভাবেন ভবন্তি মৃগজাদিষু। মার্গং দুঃখমতিক্রম্য জায়ন্তে পশুযোনিষু।।৮২।। ক্রমাদ গোযোনিমাসাদ্য জায়ন্তে মানবাঃ পুনঃ এবং যোনিষু সর্বাসু পরিক্রম্য ক্রমেনতু। কালান্তরবশাদ্যান্তি মানুষ্যমতিদুলর্ভম্।।৮৩।। ব্যুৎক্রমেণ্যপি মনুষ্যং প্রাপ্যতে পুন্যগোচরাৎ। বিচিত্রা গতয়ঃ প্রোক্তা কর্মণাং গুরুলাঘবাৎ।।৮৪।। মানুষ্যং যঃ সমাসাদ্য স্বৰ্গমোক্ষ প্রসাধকম্। দ্বয়োর্ণ সাধয়ত্যেকং স মৃতস্তপ্যতে চিরম্।।৮৫।।

হে মুঢ়, তুমি অপরকে উপঘাত করে কি পাপ করেছো–যমদূতগণ এই প্রশ্ন করতে থাকেন। মানব বিভিন্ন প্রকার পাপের জন্য বিভিন্ন যাতনা ভোগ করে। দ্রব্য বিনাশ, গুরুদ্রোহ ইত্যাদির জন্য পাপক্ষয় না হওয়া পর্যন্ত নরক যাতনা ভোগ করতে হয়। এই মহাপাপের জন্য সমস্ত নরকে চন্দ্র ও তারাগণ যতদিন থাকে ততদিন বিভিন্ন ভাবে পীড়িত হতে হয়। অন্য মহাপাতকী চৌদ্দ নরকার্ণব কোটি বর্ষে বিভিন্ন ভাবে উৎপীড়িত হয়। উপপাতকী এর অর্ধভাগ সময় যাতনা ভোগ করে। শেষপাপকারী তার অর্ধভাগ সময় কষ্ট ভোগ করে। এই কারণে জীবিতাবস্থাতে কদাপি পাপ করা উচিৎ নয়। নাহলে তাকে নিশ্চয়ই নরকে যেতে হয়।।৭২-৭৭।।

দেবাসুরাণাং সর্বেষাং মানুষ্যমতিদুৰ্ল্লভম্। তৎ সংপ্রাপ্য কথাঃ কুর্মান্ন গচ্ছেন্নরকং যথা।।৮৬।। স্বৰ্গাপকালাভায় যদি নাস্তি সমুদ্যতঃ। স্বর্গস্য মূলং মানুষ্যং তদ্যৎ নাদনুপালয়েৎ।।৮৭।। ধর্মমূলেণ মানুষ্যং লব্ধা সর্বার্থসাধকম্। যদি লাভে ন যত্নস্তে মূলং রক্ষস্ব যত্নতঃ।।৮৮। মনুষ্যত্বে চ বিপ্রত্বং যঃ সংপ্রাপ্যাতিদুল্লভম্। ন করোত্যাত্মনঃ শ্রেয়ঃ কোন্যস্তস্মাদচেতনঃ।।৮৯ সর্বেষামেব দেশানাং মধ্যদেশঃ পর স্মৃতঃ। অতঃ স্বৰ্গশ্চ মোক্ষশ্চ যশঃ সংপ্রাপ্যতে নরৈঃ।।৯০।

যে মনুষ্য পাপকর্ম করেন তার আত্মা নিশ্চয়ই অপ্রিয় হয়। এইভাবে ভীষণ ক্লেশ ভোগ করে বিশুদ্ধাত্মা হয়ে পুনঃ মানব ভূমন্ডলে জন্ম গ্রহণ করে।

ভূমন্ডলে বিভিন্ন প্রকার স্থাবর, তৃণ, গুল্মাদি রূপে মানব জাত হয়। এই জীবনে দুঃখভোগ করে প্রাণী কীট-পতঙ্গাদি যোনিতে জাত হয়। অতঃপর পক্ষী, মৃগ, পশু ক্রমে মানব দেহ প্রাপ্ত হয়। বিভিন্ন যোনিতে ক্লেশ ভোগ করে মানব দুর্লভ মনুষ্য দেহ লাভ করে। পুণ্য গোচর হলে কদাপি সে মনুষ্য জীবনও প্রাপ্ত হয়। এই কর্মজাল অত্যন্ত অদ্ভূত। কর্মের গৌরবও লাঘব হয়। মনুষ্য জীবনই স্বর্গ ও মোক্ষ প্রদান করতে পারে। যিনি মনুষ্য দেহ ধারণ করেও স্বর্গ বা মোক্ষ লাভের চেষ্টা করেন না তিনি মৃত্যুর পর পীড়িত হন। সুতরাং দুর্লভ মনুষ্যজীবন প্রাপ্ত করে তার সদ্ব্যবহার করা উচিৎ। ধর্মাদি চতুবর্গ সাধন অত্যন্ত সাবধানে করতে হয়। ধর্ম হল মূল স্বরূপ সুতরাং তা রক্ষার জন্য যত্নবান হওয়া উচিৎ।।৭৮-৮৮।।

মানবজন্মে বিপ্রবংশে জন্মগ্রহণ সুদুর্লভ। যিনি এই বংশে জাত হয়েও আত্মকল্যাণকারী কোনো কর্মে লিপ্ত হন না তার থেকে চেতনা শূন্য আর কেউ নেই।।৮৯।।

এতস্মিন্ ভারতে পুন্যে প্রাপ্য মানুষ্যমধ্রুবম্। যঃ কুর্যাদাত্মণঃ শ্রেয়স্তেনাত্মা রক্ষিতঃ স্বয়ম্।। সঃ কুর্যান্নাত্মনঃ শ্রেয়স্তেনাত্মা বঞ্চিতঃ স্বয়ম্।।৯১।। ভোগভূমি স্মৃতঃ স্বর্গঃ কর্মভূমিরিয়ং মতা। ইহ যৎক্রিয়তে কর্ম স্বর্গ তদুপভুজ্যতে।।৯২।। যাবৎস্বাস্থ্যং শরীরস্য তাবদ্ধর্মং সমাচর। অস্বস্থশ্চাতিযত্নেন ন কিঞ্চিৎ কর্তুমুৎসহেৎ।।৯৩।। অধ্রুবেন শরীরেণ হ্যধ্রুবং য প্রসাধয়েৎ। ধ্রুবং তস্য পরিভ্রষ্টধ্রুবং নষ্টমেব চ।।৯৪।। আয়ুষ খন্ডখন্ডানি নিপতন্তি তবাগ্রতঃ। অহোরাত্রাপদেশেন কিমর্থং নাববুধ্যসে।।৯৫।। যদা ন জ্ঞায়তে মৃত্যুঃ কদা কস্য ভবিষ্যতি। আকস্মিকে হি মরণে ধৃতিং বিন্দেত কস্তদা।।৯৬।।

সমস্ত দেশের মধ্যে মধ্যদেশ শ্রেষ্ঠ। তাই স্বর্গ, মোক্ষ, যশ ইত্যাদি মনুষ্যগণের প্রাপ্ত করা উচিৎ। পরম পুণ্যময় ভারতবর্ষে অধ্রুব মানুষ জীবনপ্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ আত্মা ব্যক্তির নিকট নিজ আত্মাকে রক্ষা করার উপায় জানবেন। যিনি তা করেন না তিনি নিজ আত্মাকে বঞ্চিত ও প্রতারিত করেন।।৯০-৯১।।

স্বর্গে সমস্ত প্রকার সুখ রয়েছে পুণ্যের প্রভাবে মানুষ সেই সুখ অনুভব করে। এই ভূমন্ডল হল কর্মক্ষেত্র বা কর্মভূমি। এখানে শুভকর্ম করে তার ফল স্বর্গে গিয়ে ভোগ করতে হয়। সুতরাং যতদিন সুস্থ শরীর থাকে ততদিন ধর্মাচরণ করা উচিৎ। শরীর রোগ ও বার্ধক্য পীড়িত হলে ধর্মাচরণে ইচ্ছা কমতে থাকে শরীর তো অধ্রুব বা অনিত্য তাই অনিত্য বস্তুর সেবা করলে তার ফল অনিত্যই হয়। মোক্ষাদি নিত্যবস্তু থেকে মানব পরিভ্রষ্ট হয়। তাই জীবনে কোনো সারবস্তু প্রাপ্ত হয়না। ক্রমে ক্রমে আয়ুক্ষয় হয়। রাতদিন আয়ুক্ষয় কিজন্য সে জ্ঞান হয়না? মৃত্যু নিশ্চিত, মৃত্যু কখন ঘটবে তা অনিশ্চিত। সেই সময় পার্থিব সমস্ত কিছু ত্যাগ করে সকলকে পরলোকে গমন করতে হয়। এই কারণে পাথেয় স্বরূপ পৃথিবীতে দানাদি পুণ্যকর্ম করতে কে নিষেধ করেছে? অর্থাৎ দান করলে যমপুরের মহামার্গে সেই ফল কাজে লাগে। পুণ্যফল প্রাপ্তকারী সুখে সেই পথে যেতে পারে, নচেৎ অত্যন্ত ক্লেশের সঙ্গে গমন করতে হয়।।৯২-৯৮।।

পরিত্যজ্য তদা সর্বমেকাকী যাস্যসি ধ্রুবম্। ন দদাসি তদা কস্মাৎ পাথেয়ার্থমিদং ধনম্।।৯৭। গৃহীতদান পাথেয়া সুখং যান্তি মহাধ্বনি। অন্যথা ক্লিশ্যতে জন্তু পাথেয়রহিতঃ পথি।।৯৮।। যেষাং দ্বিজেন্দ্ৰ বাহিত্ৰী পূর্ণভান্ডা তুগচ্ছতি। স্বর্গদেশস্য পুরতাস্তেষাং লাভঃ পদে পদে।।৯৯।। ইতি জ্ঞাত্বা নরঃ পুণ্যং কুর্মাৎ পাপং বিবর্জয়েৎ। পুন্যেন যাতি দেবত্বমপুন্যান্নরকং ব্রজেৎ।।১০০। যে মনাগপি দেবেশং প্রপন্নাঃ শরণং শিবম্। তেপি ঘোরং ন পশ্যন্তি যমস্য বদনং নরাঃ।।১০১।। কিং তু পাপৈমহাঘোরৈঃ কিঞ্চিৎ কালং শিবাজ্ঞয়া। ভবস্তিপ্রেত রাজন স্ততো যান্তি শিবালয়ম্।। ১০২।। যে পুনঃ সর্বভাবেন প্রতিপন্না মহেশ্বরম্। ন তে লিপ্যন্তি পাপেন পখ পত্রমিবাম্ভসা।।১০৩।। তস্মাদ্বিবর্ধয়েদ ভক্তিমীশ্বরে সততং বুধঃ। তথাহাত্ম্যবিচারেণ ভবদোষবিরাগতঃ।।১০৪।। পাপানি পঞ্চ পরমার্থতয়ৈব পার্থ। দুঃখ প্রদ্যনি সুচিরং পিতৃ রাজলোকে। অন্যানি যানি চিরকালভয়ানকানি। বক্তং ন যান্তি কিল তানি পরিস্ফুটানি।।১০৫।।

দ্বিজেন্দ্রের পূর্ণভান্ড থাকলে তার লাভ তিনি পদে পদে লাভ করেন। তাই মানুষের পুণ্য করা প্রয়োজন। পুণ্যের ফলে মানব দেবত্ব প্রাপ্ত হন। পাপ থেকে নরকযন্ত্রণা ভোগ করেন। যিনি দেবেশ শিবকে ক্ষণমাত্র স্মরণ করেন তিনি যমরাজের মহাঘোর মুখ দেখেন না। কিন্তু মহাপাপ করলে শিবাজ্ঞায় কিছুকাল প্রেতরাজার জীবন যাপন করে পরে শিবা স্থান পায়।।৯৯-১০২।।

যিনি সর্বতোভাবে ভগবান্ মহেশ্বরকে স্মরণ করেন তিনি পদ্মপত্রে জলের ন্যায় পাপ থেকে নির্লিপ্ত থাকেন। সুতরাং বুদ্ধিমান্ পুরুষ ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিমান্ হবেন। ভবদোষ বিচার করে মানব শিবভক্তি পরায়ণ হবেন। হে পার্থ, পঞ্চপাপ থেকে মানব পরমার্থতা থেকে দুঃখপ্রদ ফল লাভ করে- একথা স্পষ্টরূপে বলছি।।১০৩-১০৫।।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *