শিবব্রত
বৈশাখ মাসের ব্রত
ব্রতকাল ও ব্রতচারিণী—চৈত্র সংক্রান্তি (চৈত্র মাসের শেষ দিন), অর্থাৎ চড়কপূজার দিন শিবব্রত আরম্ভ করে বৈশাখ সংক্রান্তি, অর্থাৎ বৈশাখ মাসের শেষ দিন অবধি রোজ ভোরে (অথবা সকালবেলায়) ব্রত করতে হবে। রোজই গড়তে হবে নতুন শিব, রোজই দিতে হবে আলপনা। পাঁচ বৎসর বয়সে কুমারী প্রথম নেবে এই ব্রত; তারপর চার বৎসর ব্রত পালন করে নয় বৎসর বয়সে করবে ব্রত উদযাপন। ব্রত উদযাপনের সময় চাই সোনার বেলপাতা (অভাবে কাঞ্চন মূল্য)। ব্রাহ্মণ ভোজন করিয়ে দক্ষিণার সঙ্গে সেই সোনার বেলপাতাও দান করতে হবে তাঁকে।
ব্রতের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি—ব্রতের জন্য দরকার:
১. শিব গড়বার গঙ্গামাটি (যেখানে গঙ্গা নেই সেখানে পুকুর কি অন্য কোনো ভালো জায়গার এঁটেল মাটি হলেই চলবে);
২. শিব বসাবার তামার টাট একখানি;
৩. আকন্দ ফুল;
৪. ধুতুরা ফুল;
৫. বেলপাতা;
৬. দূর্বা;
৮. শ্বেত চন্দন;
৯. আলো চাল ও
১০. নৈবেদের আলো চাল আর কলা।
মূর্তি গঠন ও মূর্তি স্থাপন—নিজের বুড়ো আঙুলের মাপে কুমারী নিজ হাতে শিব গড়বে।
পুজোর জায়গা বেশ করে ধুয়ে-পুঁছে পিটুলি দিয়ে নিজ হাতের মাপে আঁকতে হবে একটি (চৌকো) বর্গক্ষেত্র, তার মধ্যে থাকবে একটি (গোল) মন্ডল, সেই মন্ডলের মধ্যে থাকবে একটি ত্রিভুজ (ত্রিকোণ)।
এবার তামার টাটখানিকে ঠিক তার মাঝখানে বসিয়ে তার মধ্যে পেতে দেবে একটি বেলপাতা। শিবকে বসাবে সেই বেলপাতার উপর।
শিবপূজা—মূর্তি স্থাপনের পর বেলের খোলায় করে তিনবার মন্ত্র পড়ে শিবের মাথায় জল ঢেলে দেবে।
শিবের মাথায় জল দেবার মন্ত্র:
শিল শিলাটন শিলে বাটন শিল অঝঝর ঝরে।
স্বর্গ হতে মহাদেব বলেন গৌরী কি বের্ত করে।।
আশ নড়ে পাশ নড়ে নড়ে সিংহাসন।
হরগৌরী কোলে করে গৌরী আরাধন।।
এইভাবে জল ঢেলে শিবকে স্নান করানো হলে পর ফুল, বেলপাতা, দূর্বা, চন্দন, আলো চাল, সব একসঙ্গে নিয়ে মন্ত্র পড়ে তিনবার অঞ্জলি দেবে।
অঞ্জলির মন্ত্র:
কাল পুষ্প তুলতে গেলাম সেখানে লতা পাতা।
শিবের চরণ দেখা হল শিবের মাথায় জটা।।
অখন্ড বিল্বপত্র তোলা গঙ্গাজল।
এই পেয়ে তুষ্ট হলেন ভোলা মহেশ্বর।।
অঞ্জলি দানের পর ‘নমঃ শিবায় নমঃ’ বলে নৈবেদ্যতে ফুল আর বেলপাতা দেবে।
তারপর প্রণাম করবে।
প্রণামের মন্ত্র:
নমঃ শিবায় নমঃ নমঃ শিবায় নমঃ।
নমঃ শিবায় নমঃ নমঃ হরায় বজ্রায় নমঃ।
শিবব্রত সমাপ্ত।