ব্রাহ্ম পর্ব
মধ্য পর্ব
প্রতিসর্গ পর্ব
1 of 3

শতানন্দ ব্রাহ্মণ কথা বর্ণন

।। শতানন্দব্রাহ্মণ কথাবর্ণনম্।।

কৃপয়া ব্রাহ্মণদ্বারা প্রকটীকৃতবাস্বকম্। ইতি হাসমিমং বক্ষ্যে সংবাদং হরিবিপ্রয়োঃ।।১।। কাশীপুরীতি বিখ্যাতা তত্রাসাদ ব্রাহ্মণো বরঃ। দীনো গৃহাশ্রমী নিত্যং ভিক্ষুঃ পুত্রকলত্রবান্।।২।। শতানন্দ ইতি খ্যাতো বিষ্ণুতপরায়ণঃ। একদা পথি ভিক্ষার্থং গচ্ছতস্তস্য শ্রীপতিঃ।।৩।। বিনীতস্যাতিশন্তস্য স বভূবাক্ষিগোচরঃ। বৃদ্ধব্রাহ্মণবেষেন পপ্রচ্ছ ব্রাহ্মণং হরিঃ। ক্ব যাসীতি দ্বিজশ্রেষ্ঠ বৃত্তিঃ কামেন কথ্যতাম্।।৪।। ভিক্ষাবৃত্তিরহং সৌম্য কলত্রাপত্যহেতবে। যাচিতুং ধনিনাং দ্বারি ব্রজামি ধনমুত্তমম্।।৫।।

।। শতানন্দ ব্রাহ্মণ কথা বৰ্ণন।।

এই অধ্যায়ে নারায়ণ ব্রত কথা পালনকারী কাশীস্থ শতানন্দ ব্রাহ্মণ কথা বর্ণনা করব।

শ্ৰী সূতজী বললেন— ব্রহ্মণ দ্বারা আপনাকে প্রকট করেছি। এখন আমি হরি-বিপ্র সংবাদ শ্রবণ করতে উৎসুক। কৃপাপূর্বক আপনি তা বলুন।।১।।

কাশীপুরী পরম বিখ্যাত, সেখানে শ্রেষ্ঠ কিন্তু দরিদ্র ও নিত্য ভিক্ষাকারী সদার পুত্র গৃহস্থ ব্রাহ্মণ ছিলেন। তার নাম শতানন্দ, তিনি ভগবান্ বিষ্ণুর সেবা পর১৭ায়ণ ছিলেন। একদিন যখন তিনি পথে ভিক্ষা করতে যাচ্ছিলেন তখন শান্ত, বিনীত সেই ব্রাহ্মণকে শ্রীপতি প্রত্যক্ষ দেখা দিলেন। হরি এক ব্রাহ্মণের বেশ ধারণ করে তার সামনে এসে তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন দ্বিজশ্রেষ্ঠ আপনি এই সময় কোথায় যাচ্ছেন। আপনি কি করেন তা বলুন।।২-৪।।

ভিক্ষাবৃত্তিস্ত্বয়া দীর্ঘকালং দ্বিজ সদা ধৃতা। তদ্বারক উপযোযং বিশেষেণ কলৌ কিল।।৬।। মমোপদেশতো বিপ্ৰ সত্যনারাণং ভজ। দারিদ্রযশোকশমনং সন্তাপহরণং হরেঃ। চরণং শরণং যাহি ভোক্ষদং পদ্মলোচনম্।।৭।। এবং সম্বোধিতো বিপ্রো হরিণা করুমাত্মনা। পুনঃ পপ্ৰচ্ছ বিপ্রোসৌ সত্যনারায়ণৌ হি কঃ।।৮।। বহু রূপ সত্যসন্ধঃ সর্বব্যাপী নিরঞ্জনঃ। ইদানীং বিপ্ররূপেণ তব প্রত্যক্ষমাগতঃ।।৯।। দুঃখোদধিনিমন্ত্রণাং তরনিশ্চরণৌ হরেঃ। কুশলাঃ শরণং যান্তি নেতরে বিষয়াত্মিকাঃ।।১০।।

শতানন্দ বললেন, হে সৌম্য, স্ত্রী পুত্রের ভরণ পোষণের নিমিত্ত আমি ভিক্ষাবৃত্তি করি। ধনী ব্যক্তির গৃহে ধন সম্পদ প্রর্থনা করলে উত্তম সম্পদ পাওয়া যাবে, তাই সেখানে যাচ্ছি। নারায়ণ বললেন হে দ্বিজ, আপনি দীর্ঘদিন ধরে এই ভিক্ষাবৃত্তি করছেন। এখন এই বৃত্তি ত্যাগ করার উপায় আছে।।৫-৬।।

হে বিপ্র, আমার উপদেশে ভগবান্ সত্য নারায়ণ দেবের পূজা করুন। তাঁকে সেবা করলে দারিদ্র, শোক প্রশমিত হয় এবং সন্তাপ দূর হয়। তুমি সত্যনারায়ণ দেবের শরণে চলে যাও। সেই পদ্মলোচন মোক্ষ প্রদানকারী।।৭।।

ভগবান্ সত্য নারায়ণ সম্পর্কে এই প্রকার পরিপূর্ণ জ্ঞান সেই ব্রাহ্মণকে করুণাত্মা শ্রীহরি প্রদান করলেন। তখন বিপ্র সেই ব্রাহ্মণকে জিজ্ঞাসা করলেন সত্য নারায়ণ দেব কে?।।৮।

বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ বললেন, সত্য নারায়ণের অনেক রূপ আছে, সত্য প্রতিজ্ঞ, সর্বব্যাপী এবং নিরঞ্জন–এই সময় বিপ্ররূপে তোমার প্রত্যক্ষ গোচর।।৯।। শ্রীহরি চরণ দুঃখ রূপী সমুদ্রে নৌকার ন্যায়। কুশল পুরুষ তাঁর শরণে চলে যান। অন্য বিষয়ে লিপ্ত মানুষ তা করেন না।।১০।।

আহৃত্য পূজায়সম্ভারাহ্নিতায় জগতাং দ্বিজ। অচয়ংস্তমনুধ্যায়ং স্বমেৎপ্রকটী কুরু।।১১।। ইতি ধ্রুবন্তং বিপ্রাসৌ দদর্শ পুরুষোত্তমম্। জলদশ্যামলং চারুচতুৰ্বাহুং গদাদিভিঃ।।১২।। পীতাম্বরং নবাম্ভোজলোচনং স্মিতপূর্বকম্। বনমালামধুব্রাত চুম্বিতাংস্রিসরোরুহম্।।১৩।। নিশম্য পুলকাঙ্গোসৌ প্রেমপূর্ণসুলোচনঃ। স্তবগ্নদগদয়া বাচা দন্ডবৎপতিতো ভুবি।।১৪।। প্রণমামি জগন্নাথং জগৎকারণকারকম্। অনাথনাথং শিবদং শরণ্যমনঘং শুচিম্।।১৫।। অব্যক্তং ব্যক্ততাং যাতং তাপত্রয়বিমোচণম্।।১৬।।

হে দ্বিজ। পূজা সামগ্রী নিয়ে সংসারী লোকের কল্যাণের উদ্দেশ্যে সত্য নারায়ণের অর্চন এবং তার ধ্যান করে তুমি এই ব্রতাচন প্রচার কর।।১১।।

ভগবান্ শ্রীহরি এরূপ বলে সেই বিপ্রকে দর্শন দিলেন। ঘনশ্যাম গাত্র, সুন্দর চতুর্ভূজযুক্ত গদা পদ্মাদি বিভুষিত, কমলনয়নযুক্ত, স্মিত হাস্য, বনমালাধারী সেই ভ্রমরের দ্বারা চুম্বিত পদযুগল বিশিষ্ট শ্রীহরির অপরূপ রূপ সেই ব্রাহ্মণ দর্শন করলেন।।১২-১৩।।

ভগবানের মুখে একথা শ্রবণ করে শতানন্দের শরীর পুলকিত হয়েছিল এবং প্রেমাবেশে চক্ষু অশ্রুপূর্ণ হয়েছিল। শতানন্দ ভগবানের স্তব করে এবং গদ্‌গদ কণ্ঠে স্তুতি করে দন্ডের ন্যায় ভগবৎচরণে পতিত হলেন।।১৪।।

শতানন্দ বললেন–এই জগৎকারণের কারক, বিশ্বনাথ, অনাথের নাথ, কল্যাণ প্রদানকারী, শরণ্য, অনঘ এবং শুচি আপনাকে প্রণাম করছি।।১৫।।

ত্রিতাপ বিমোচনকারী আপনি অব্যক্তস্বরূপ হয়েও ব্যক্ততা প্রাপ্ত হয়েছেন।।১৬।।

নমঃ সত্যনারায়ণায়াস্য কত্রেনমঃ সুদ্ধ সত্ত্বায় বিস্বস্য ভর্তে। করালায় কালায় বিশ্বস্য হত্রে নমস্তে জগন্মঙ্গলায়ত্মমূর্তে।।১৭।। ধন্যোস্ম্যযদ্যকৃতী ধান্যে ভবোদ্য সফলো মম। বানোগোচরো যস্ত্বং মম প্রত্যক্ষমাগতঃ।।১৮।। দিষ্টং কিং বৰ্ণয়াম্যাহো ন জানে কস্য বা ফলম্। ক্রিয়াহীনস্য মন্দস্য দেহোয়ং ফলবাঙ্কৃতঃ।।১৯।। পূজনং চ প্রকর্তব্যং লোকনাথ রমাপতে। বিধিনা কেন কৃপায় তদাজ্ঞাপয় মাং বিভো।।২০।। হরিস্তমাহ মধুরং সস্মিতং বিশ্বমোহনঃ। পূজায়াং মম বিপ্রেন্দ্র বহু নাপেক্ষিতং ধনম্।।২১।। অনায়াসেন লব্ধেন শ্রদ্ধামাত্রেণ মাংযজ। গ্রাহগ্রস্তোজামিলো বা যথাহভূন্মুক্তসঙ্কটঃ।।২২।।

হে সত্যনারায়ণদেব, আপনাকে প্রণাম, হে জগৎকর্তা আপনাকে প্ৰণাম, শুদ্ধ, সত্ত্ব এবং বিশ্ব ভরণকারী আপনাকে প্রণাম। করালকাল স্বরূপ মঙ্গ লের জন্য আপনাকে বার-বার প্রণাম।।১৭।

আজ আমি পরমধন্য আমার জন্মগ্রহণেও সার্থক কারণ আপনি আজ আমার সামনে প্রকট হয়েছেন।।১৮।।

অত্যন্ত সৌভাগ্য এবং পরমানন্দের এই কথা আমার কাছে অনির্বচনীয়। না জানি কার সৌভাগ্য আমি প্রাপ্ত হয়েছি। আমার এই শরীর ক্রিয়াহীন এবং পরম মন্দ। হে ভগবান্ আপনি আজ এই শরীরকে ফলবান্ করুন।।১৯।।

হে রমাপতি, হে লোকনাথ, আপনার পূজা কোন্ বিধিতে করব তা কৃপাপূর্বক বলুন। অতঃপর বিশ্ব বিমোহিতকারী শ্রীহরি স্মিত হাস্যে তাকে বললেন- হে বিপেন্দ্ৰ, আমার পূজাতে প্রচুর ধনসম্পদ লাগেনা।।২০-২১।।

বিনা আয়াসে প্রাপ্ত সম্পদ এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে আমাকে যজন কর। গ্রাহগ্রস্থ গজ অথবা অজামিল সংকটমুক্ত হয়েছিলেন সেই প্রকার তুমিও সংকটমুক্ত হয়ে যাবে।।২২।।

বিধানং শূনু বিপ্রেন্দ্র কাময়ে ফলম্। পূজাসম্ভূত সম্ভারঃ পূজাং কুৰ্যাদ্যথা বিধি।।২৩।। গোধূমচূর্ণং পাদাদ্ধং সেটকাদিপ্ৰমাণতঃ। দুগ্ধেন তাব তা যুক্তং মিশ্রিতং শকরাদিভিঃ।।২৪।। তচূর্ণং হরয়ে দদ্যাদ্ ঘৃতযুক্তং হরিপ্রিয়ম্।। গোদুগ্ধেনৈব দধিনা গোঘতেন সমন্বিতম্।।২৫।। গঙ্গাঁজলেন মধুনা যুক্তং পঞ্চামৃতং প্ৰিয়ম। পঞ্চামৃতেন সংস্নাপ্য শালগ্রামোদ্ভবাং শিলাম্।।২৬।। গন্ধপুষ্পাদি নৈবেদ্যৈবেদবামণোহরৈঃ। ধূপৈদীপৈশ্চ নৈবেদ্যৈস্তাম্বুলাদিভিরচয়েৎ।।২৭।। মিষ্টান্ন পানসন্মানৈৰ্ভ ক্ষ্যৈভোজ্যৈঃ ফলৈস্তথা। ঋতুকালোদ্ভবৈঃ পুষ্পৈঃ পূজয়েদ্ভক্তিতৎপরঃ।।২৮।। ব্রাহ্মণৈঃ স্বজনৈশ্চৈব বেষ্টিতঃ শ্রদ্ধয়ান্বিতঃ। ত্বয়া সার্দ্ধং মম কথাং শূনুয়াৎ পরমাদরাৎ।।২৯।।

হে বিপেন্দ্ৰ, এখন পূজা বিধান শ্রবণ কর। প্রথমে মনে মনে ফল কামনা করে পূজা সম্ভার সম্ভূত করে যথাবিধি পূজা করবে।।২৩।।

সেটকাদি প্রমাণ পাদার্থ গোধূমচূর্ণ, এই পরিমাণ দুগ্ধ এবং শর্করাদি ঘৃত মিশ্রিত করে শ্রীহরিকে সমর্পিত করতে হয়। এই নৈবেদ্য শ্রীহরির অত্যন্ত প্রিয়। গোদুগ্ধ। মধু, গোত। গোদধি এবং গঙ্গাজল দ্বারা প্রস্তুত পঞ্চামৃত দ্বারা শালগ্রাম শিলাকে স্নান করাবে।।২৪-২৬।।

গঙ্গাক্ষত। পুষ্পাদি, নৈবেদ্য এবং মনোহর বেদবাদ্য তথা ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, তাম্বুলাদি দ্বারা দেবনারায়ণের অর্চনা করবে।।২৭।।

ভক্তিভাবে মিষ্টান্ন, পান, সম্মান, ভক্ষ্য, ভোজ্য, ফল এবং পুষ্পের দ্বারা পূজন করবে।।২৮।।

ব্রাহ্মণ এবং স্বজন বেষ্টিত হয়ে পরম শ্রদ্ধায়, পরম আদরে সকলকে আমার কথা শ্রবণ করাবে।।২৯।।

স গত্বা স্বগণানাহ মাহাত্ময়ং হরিসেবনে। তে হৃষ্টমনসঃ সর্বে সময়ং চক্র রাদৃতাঃ।।৩০ ।। সত্যনারায়ণে পূজাং কাষ্ঠলধ্বেন যাবতা। বয়ং কুলৈঃ করিষ্যামঃ পুণ্যবৃক্ষবিধানতঃ।।৩১।। ইতি নিশ্চিত্য মনসা কাষ্ঠং বিক্রীয় লেভিরে। চতুর্গুণং ধনং হৃষ্টাঃ স্বং স্বং ভবনমাযযুঃ।।৩২।। মুদা স্ত্রীভ্যসমাচখ্যুবৃত্তান্তং সর্বমাদিতঃ। তাঃ শ্ৰুত্বাহৃষ্টমনসঃ পূজনং চক্রয়াদরাৎ।।৩৩ ।। কথান্তে প্রণমম্ভক্ত্যা প্রসাদং জগৃহুস্ততঃ। স্বজাতিভ্যঃ পরেভ্যশ্চ দদুস্তচূর্ণমুক্তমম্।।।৩৪।। পূজাপ্রভাবতো ভিল্লাঃ পুত্রদারাদিভির্যতাঃ। লদ্ধা ভূমিতলে দ্রব্যং জ্ঞানচক্ষুমহোত্তমম্।।৩৫।। ভুক্তা ভোগান্যথেষ্টন্তে দরিদ্রান্ধা দ্বিজোত্তম্। জগ্মস্তে বৈষ্ণবং ধাম যোগি নামপি দুর্লভম্।।৩৬।।

সেই কথা শ্রবণ করে শতানন্দ নিজ লোকেদের হরি সেবন মাহাত্ম্য বললেন। তারা সকলে প্রসন্ন হয়ে পরমাদরে এই ব্রত পালনের প্রতিজ্ঞা করল।।৩০।।

কাষ্ঠ বিক্রয় করে অর্জিত সম্পদের দ্বারা সত্যনারায়ণের পূজা করব। সকলে মনে এই নিশ্চয় করে কাষ্ঠ বিক্রয় করে চতুর্গুণ ধনপ্রাপ্ত হল। তারা প্রসন্ন হয়ে নিজ নিজ গৃহে ফিরে এল এবং সানন্দে সকল কৃত্তান্ত নিজ নিজ স্ত্রীদের কাছে বর্ণনা করল। স্ত্রীগণও পরম প্রসন্ন হয়ে পরমাদরে পূজন করেছিল।।৩১-৩৩।।

কথাতে প্রণাম করে পুনঃ ভক্তিভাবে সকলে প্রসাদ গ্রহণ করলেন। পূজার প্রভাবে ভিন্ন দারাপুত্রাদি প্রাপ্ত হলেন। এই ভূমণ্ডলে দ্রব্যসহ মহান জ্ঞানচক্ষু লাভ করলেন।।৩৪-৩৫।।

হে দ্বিজোত্তম, যেখানে যথেষ্ট ভোগ করার পর সেই দরিদ্রান্ধ যোনিগ মতার পর বৈষ্ণব ধাম প্রাপ্ত হলেন।।৩৬।।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *