দ্বিতীয় খন্ড
উত্তরপর্ব
2 of 3

শকট ব্রত মাহাত্ম্য

।। শকট ব্রতস্য মাহাত্ম্য।।

যদেতত্তে সমাখ্যাতং গম্ভীর নরকার্ণবম্। ব্রতোপবাসনিয়মপ্লবেমোত্তীর্যতে সুখম্।।১।। দুৰ্ল্লভং প্রাপ্য মানুষ্যং বিদ্যুৎ পতনঞ্চলম্। তথাত্মানং সমাদধ্যাদ্ভূশ্যতে ন পুনমৰ্থা।।২।। দানব্রতময়ী কীর্ত্যিস্য স্যাদিহ দেহিনঃ। পনলোকেহপি স তয়া জ্ঞায়তে জ্ঞাতিবৰ্দ্ধনঃ।।৩।। জায়তে নেহ নামুত্ৰ ব্ৰতস্বাধ্যায়বর্জিতঃ।। পুরুষঃ পুরুষব্যাঘ্র তস্মাদ্ ব্রতপরো ভবেৎ।।৪।।

।। শকট ব্রত মাহাত্ম্য।।

এই অধ্যায়ে শংকর ব্রত মাহাত্ম্যের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণ বললেন—তোমাকে এই নরকসাগরের বর্ণনা দিয়েছি। যে সাগর ব্রত নিয়ম উপবাস প্রভৃতি দ্বারা উত্তীর্ণ হওয়া যায়। মনুষ্য জীবন অতি দুর্লভ। তাই অতি সাবধানে এই জীবন অতিবাহিত করতে হয়। এই সংসারে যে দেহধারী ব্রত, দান দ্বারা কীর্তি অর্জন করেন তিনি পরলোকে জ্যোতিবর্ধন করেন। হে পুরুষ ব্যাঘ্র, ব্রত এবং স্বাধ্যায় রহিত পুরুষ এই লোকে এবং পরলোকে জ্ঞানপ্রাপ্ত হননা সুতরাং ব্রত পরায়ণ হওয়া প্রয়োজন।।১-৪।।

অত্র তে কথয়িষ্যামি ইতিহাসং পুরাতনম্। সিদ্ধেন সহ সংবাদমবন্ত্যাং ব্রাহ্মনস্য হি।।৫।। যোগদ্ধিসিদ্ধয়া সংসিদ্ধঃ কশ্চিৎসিদ্ধোমহীতলম্। চচার বিকৃতং কৃত্বা বপুঃ পরম ভীষণম্।।৬।। নিগীর্নদত্তো লম্বোষ্ঠঃ পিংগাক্ষস্তনুমূৰ্দ্ধজঃ। ত্রুটিতৈককর্ণো দুর্বণঃ শীর্ণবস্ত্রো মহোদরঃ।।৭ ॥ চিপিটাক্ষঃ স্ফুটিত পাজ্জংখাঢ়য় কৃশকপুরঃ। দিশঃ পশ্যতি সহৃষ্টো বভ্রামোদ্ ভ্রান্তচিত্তবৎ।।৮।। মূলজালিকবিপ্রেণ দৃষ্টঃ পৃষ্টশ্চ কো ভবান্। কদা স্বর্গাৎ সমায়াতঃ কেন কার্মেন মে বদ।।৯।। কচিচু দৃষ্টা ত্বয়া রম্ভা ভাভাসিতাদিগম্বরা। চিত্ত সম্মোহনকরী দেবানামেকসুন্দরী।।১০। গত্বা মদ্বচনাদ বাচ্যা নির্বাচ্যা দোষদর্শিত্তি। আবন্ত্যস্ত্বাং কুশলিনীং পৃচ্ছতিসম দ্বিজোত্তমঃ।।১১।।

এই ব্যাপারে তোমাকে একটি রমণীয় পুরানো ইতিহাস বলছি শ্রবণ কর। অবন্তীপুরীতে এক ব্রাহ্মণের একজন সিদ্ধপুরুষের সাথে পরিচয় ছিল। সেই সিদ্ধপুরুষ নিজ সিদ্ধিতে করাল দত্ত বিশিষ্ট হয়ে, পীতদন্ত বড় কেশ সমন্বিত, দুর্বর্ণ, শীর্ণবস্ত্র, মহোদর এই রূপ ধারণ করে প্রসন্নচিত্তে ভ্রমণ করতে লাগল। মূলতালিক নামক বিপ্র তাকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন–আপনি কে? আপনি স্বর্গ থেকে কবে এলেন? আপনি কোন্ কার্যে এখানে এসেছেন সব আমাকে বলুন।।৫-৯।।

সে বলল–আপনি কি কোথাও রম্ভাকে দেখেছেন যে নিজ দীপ্তিতে দিগন্তকে শাসন করে তথা চিত্ত সম্মোহনকারী এক দৈবী নারী।।১০।।

সিদ্ধঃ প্রসিদ্ধং তং বিপ্রং প্রাছেদং বিষ্ময়ান্বিতঃ। কথং ত্বয়াহং বিজ্ঞাতঃ স্বর্গাদভ্যাগতঃ সফুটম্।। ১২।। ব্রাহ্মনস্ত মথোবাচ বিজ্ঞাতোহসি ময়া যথা। তথা তেহ হং প্রবক্ষামি ক্ষীণা ঘৌবধারয়।।১৩।। গাত্রত্রয়ং বিরূপং স্যাদ্বিতীয়ং বা স্বরূপতঃ। দৃষ্ট্বা সর্বাংগ বৈরূপ্যং বিজ্ঞাতোহসি ততো ময়া।।১৪ দুল্লংখ্যা প্রকৃতিঃ সাক্ষাদনু ভূতকরী ভবেৎ। প্রকৃতেরন্যথাভাব সর্বথা লক্ষ্যতে জনৈঃ।১৫। বিপ্রস্যৈবং বচঃ শ্রুত্বা জগামাদৰ্শণং শনৈঃ। পুনঃ কৈশ্চিদহোরাত্রৈরাজগাম সতাং পুরীম্।।১৬।। মূলজালকবিপ্ৰেণ পৃষ্টঃ প্রাহামরাবতীম্। গতোহ হং পৃষ্ঠবাংস্তত্র রম্ভা বিভ্রমকারিণীম্।।১৭।। শত্রুস্যাবসরে বৃত্তে ব্ৰজন্ত্যাঃ স্বগৃহং ময়া। ত্বৎসন্দেশঃ সমাখ্যাতঃ সাবদক্তো ন বেস্মিতম্।।১৮।। বিদ্যয়া কলয়া চাপি পৌরুষেণ ব্রতেন চ। তমসা বা পুমান্ মর্ত্যো দিবি বিজ্ঞায়তে চিরম্।।১৯।

দোষদর্শির কাছে নির্বাচ্যা সেই নারীকে গিয়ে বল, অবন্তীপুরীস্থিত এক ব্রাহ্মণ তোমার কুশল জানতে চাইছে। সেই সিদ্ধপুরুষ বিষ্ময়ের সঙ্গে বলল–আপনি কিভাবে জানলেন যে আমি স্বর্গ থেকে সরাসরি এসেছি? ব্রাহ্মণ বললেন–হে ক্ষীণপাপকারী, আমি তোমাকে কিভাবে জানলাম তা বলছি শোনো। স্বরূপতঃ ত্রিগাত্র বা দ্বিগাত্র বিরূপ হয়, কিন্তু আপনার সর্বাঙ্গ বিরূপ দেখে চিনতে পেরেছি।।১১-১৪।। সাক্ষাৎ দুলক্ষ্যা প্রভৃতি অনুভূয়মান্। প্রকৃতির অন্যভাব মনুষ্য দ্বারা জ্ঞাত হয়। বিপ্রের এই সকল কথা শ্রবণ করে সে সিদ্ধপুরুষ ধীরে ধীরে অদর্শন প্রাপ্ত হলেন। পুনঃ অহোরাত্রি পরে সেই পুরীতে তিনি এলেন। মূলজালিক বিপ্র জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, তিনি অমরাবতী গিয়ে বিভ্রমকারিণী রম্ভাকে ইন্দ্র সভা শেষ করে ফিরে যাওয়ার সময় বিপ্রের সন্দেশ দিয়েছিলেন। রম্ভা বলেছিলেন, “আমি সেই বিপ্রকে চিনি না।” বিদ্যা, কলা, পৌরুষ ও ব্রতের দ্বারা বা তপের দ্বারা মানুষ চিরকাল স্বর্গে গমন করে। এরপর ব্রাহ্মণ সেই সিদ্ধকে বললেন, দগ্ধ অগ্নি থেকে উৎপন্ন “আমি শকট ভক্ষণ করিনা”- এইব্রত থেকে জানি। সেই ব্রাহ্মণের বচনে বিশুদ্ধবুদ্ধি সিদ্ধ হেসে ব্রাহ্মণকে আমন্ত্রণ করে পুনঃ অদৃশ্য হলেন।।১৫-২১।।

ব্রাহ্মণস্তমথোবাচ মুগ্ধা দগ্ধাগ্নিসম্ভবা। ন ভক্ষয়ামি শকটং ব্রতেনৈতেন বেত্তি মাম্।।২০।। তস্যৈতদ্ বচনং শ্রুত্বা স সিদ্ধঃ সুবিশুদ্ধবীঃ। প্ৰহস্যামন্ত্র্য তং বি প্ৰং জগামাদর্শনং পুনঃ।।২১।। কদাচিচ্চরতা তেন স্বর্গমার্গং যদুচ্ছয়া।

দৃষ্ট্বা রম্ভাং দ্বিজপ্রোক্তং সর্বমেব নিবেদিতম্।।২২।। কো ন জানামি তং বিপ্রং শকটব্রতচারিণম্। মূলজালৈবতয়ন্তং মহাকালবনাশ্রয়ম্।।২৩।। দর্শনাদথ সংভাষাদুপকারাৎ সহাসনাৎ। চতুর্থা স্নেহুনির্বন্ধো নৃণাং সংজায়তেহধিকঃ।।২৪।। ন দর্শণং নসম্ভাষা কদাচিৎসহ তেন মে। নামশ্রবণমাত্রেণ স্নেহঃ সংদর্শিতো মহান্।।২৫।। ইত্যেবমুক্ত্বা রম্ভোরু রক্তা জংগভারিনোন্তিকম্। বিস্ময়োৎফুল্লস্ময়নাব্লগাম গজগামিনী।।২৬।।

কিছুপরে স্বর্গের পথে যদৃচ্ছ ভ্রমণ করতে করতে তিনি রম্ভাকে দেখে বিপ্রের সকল কথা বললেন। সেই কথা শ্রবণ করে রম্ভা বললেন, শকট ব্ৰত পালনকারী ব্রাহ্মণকে আমি চিনিনা, তিনি কে? কারণ তিনি মূলজাল অপবর্তনকারী ও মহাকাল বনে আশ্রয় গ্রহণকারী, দর্শনের দ্বারা, সম্ভাষণ দ্বারা, উপকার দ্বারা একসাথে বাস করা– এই চার প্রকারে মানুষের অধিক বন্ধন হয়। আমার তো কখনও তার দর্শন, সম্ভাষণ, একত্র বাস হয়নি। শুধুমাত্র নাম শ্রবণেই এত স্নেহ। একথা বলে রম্ভাতুল্য উপ বিশিষ্ট রম্ভা বিষ্ময়পূর্ণ নেত্রে গজের ন্যায় গমন করতে করতে চলে গেলেন।।২২-২৬।।

গত্বা নিবেদয়ামাস স্নেহব্রতবিচেষ্টিতম্। পুরতো রুদ্ধহৃদয়া ব্রাহ্মণস্য চ ধীমতঃ।।২৭।। শত্রুঃ প্রোবাচ চার্বং গীং গীর্বাণহৃদয়ংগমাম্। কিমানয়ামি তং বিপ্রং সমীপং তব সুব্রতম্।।২৮।। দিব্যমাল্যাম্বরধরং দিব্যস্রগনুলেপনম্। বিমানবরমারোপ্য দর্শয়ামাস তং পুনঃ।।২৯।। শকটব্রতমাহাত্ম্যমিত্যেতত্ত ময়োদিতম্।।৩০। রাজ্যশ্রিয়ং জগতি সর্বজনোপভোগ্যামা- প্নোতি শত্রুশিবকেশবয়োনিবাসম্।। না প্রাপ্যমস্তি ভুবনে সুদৃঢ় ব্ৰতানাং। তস্মাৎ সদা ব্রতপরেণ নরেন ভাব্যম্।।৩১।।

তিনি গিয়ে ইন্দ্রদেবকে রুদ্ধহৃদয়ে ব্রাহ্মণের স্নেহের কথা নিবেদন করলেন। ইন্দ্রদেব সেই ব্রাহ্মণকে নিয়ে আসার জন্য রম্ভাকে অনুমতি দিলেন। ব্ৰাহ্মণ সেই সময় দিব্য বস্ত্র, মাল্য, অনুলেপন দ্বারা সজ্জিত শ্রেষ্ঠ বিমানে চড়ে দেখাদিলেন।।২৭-২৯।।

এই হল শকটব্রতের মাহাত্ম্য। যার দ্বারা মনুষ্য যোগ্য রাজ্যশ্রী প্রাপ্ত হন ও সকল কিছু ভোগ করতে সমর্থ হন। এই ব্রতের প্রভাবে ইন্দ্র শিব ও কেশবের নিবাস স্থান প্রাপ্ত হওয়া যায়। দৃঢ়ভাবে ব্রত পালনকারী পৃথিবীতে সবকিছু প্রাপ্ত হন। তাই মনুষ্য সকলের এই ব্রত পালন করা উচিৎ।।৩০-৩১।।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *