শকওয়েভ – ৭৫

পঁচাত্তর

‘হোয়াট দ্য ফাক!’ বসের সামনেই ভব্যতা ভুলে চেঁচিয়ে উঠল সামসা।

কমপিউটার কনসোল ধরে নিজেকে সামলে নিয়েছে নিকলসন। হাঁ করে তাকিয়ে আছে দেয়ালের স্ক্রিনের দিকে। পর্দায় দেখা যাচ্ছে, উজ্জ্বল কমলা শিখার ঝলকানি নিয়ে বিস্ফোরিত হয়েছে ডেকের একটা অংশ। ব্যাঙের ছাতার মত আগুনের কুণ্ডের মাঝে গড়াগড়ি খাচ্ছে ভাঙাচোরা কনটেইনার আর নানা ধরনের জঞ্জাল। পাহাড়ের মত আকাশে মাথা তুলেছে কালো ধোঁয়া, শুষে নিচ্ছে সূর্যের উজ্জ্বলতা। পাগলাঘণ্টি বেজে চলেছে গোটা জাহাজ জুড়ে।

‘হামলা হয়েছে জাহাজে!’ নিশ্চিত বিশ্বাসের সঙ্গে মন্তব্য করল চিফ।

‘ক্-কিন্তু কীভাবে, স্যর?’ তোতলামিতে পেয়েছে গ্রেগর সামসাকে। এখনও বিস্ফারিত চোখ জোড়া। ‘ক্-কারা করল কাজটা?’

‘গাধার মত দাঁড়িয়ে আছ কেন?’ ধমকে উঠল বৃদ্ধ। ‘যতজনকে সম্ভব, নামিয়ে দাও অস্ত্র হাতে। তন্ন তন্ন করে সার্চ করো সবাই উপর থেকে নিচ পর্যন্ত।’

‘বিজ্ঞানীদেরকেও খুঁজতে পাঠাব, স্যর?’

‘ট্রিগার টিপতে পারে, এরকম প্রত্যেকটা লোককে নামিয়ে দেবে মাঠে!’ বলল চিফ চিবিয়ে চিবিয়ে। ‘পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে চাই আমি। যে ব। যারাই ঘটিয়ে থাকুক এটা, জ্যান্ত চাই তাদের! বুঝতে পেরেছ:— জ্যান্ত! যাও এখন, শুরু করো তল্লাশি! তিন মিনিটের মধ্যে রিপোর্ট চাই আমি… সুখবর হয় যেন সেটা।’

ছুটল সামসা দরজার দিকে।

কন্ট্রোল রুমে একা হয়ে পড়ল বয়স্ক মানুষটা।

সিকিউরিটি পার্সোনেল আর ক্রুদের খুদে খুদে অবয়বগুলোকে বিস্ফোরণের জায়গায় জড়ো হতে দেখা যাচ্ছে পর্দায়। এমার্জেন্সি হোস থেকে বেরোনো ফেনা আর পানি নিয়ে লড়ছে ওরা আগুনের বিরুদ্ধে। বিধ্বস্ত কনটেইনারগুলোর এক অংশে দাউ দাউ নাচছে লেলিহান শিখা।

আচমকা ব্রিজের কাছে দ্বিতীয় আরেকটা বিস্ফোরণ হতেই নিজেকে খাড়া রাখার জন্য চেয়ারের হাতল ধরতে হলো চিফকে। এক ঝলক কমলা আগুন আর উড়ন্ত জঞ্জাল দেখতে পেল স্ক্রিনে। পরক্ষণে শ্যাপনেলের আঘাতে ক্যামেরা অচল হয়ে কালো হয়ে গেল পর্দা।

দ্বিতীয় বিস্ফোরণটার শকওয়েভের ধাক্কায় চুরমার হলো সুপারস্ট্রাকচারের জানালাগুলো। ডেক বরাবর ছুটে আসা কাঁচের বৃষ্টি ছত্রভঙ্গ করে দিল সিকিউরিটি পার্সোনেলদের। ফায়ারহোসের সহায়তায় প্রথম এক্সপ্লোশনের আগুন আয়ত্তে এসেছে অনেকটা, এরই মধ্যে নতুন এই বিস্ফোরণ হুমকিতে ফেলে দিল ব্রিজটাকে।

‘কয়েকটা মিনিট ব্যস্ত থাকবে, কী বলো?’ পেঁচার মুখে দাঁত কেলানো হাসি।

বাইরের লোক উঠেছে জাহাজে, ভালো মতই চাউর হয়ে গেছে। কারোরই কোনও সন্দেহ নেই এতে। তীক্ষ্ণ সুরে অ্যালার্ম বাজছে সর্বত্র।

কিন্তু ঘন ঘন অবস্থান পাল্টানোয় জীবিত কেউ এখন পর্যন্ত চোখে দেখেনি রানাদের। এক আড়াল থেকে অন্য আড়াল নিয়ে এগিয়ে চলেছে ওরা হ্যাচওয়ের উদ্দেশে। জাহাজের প্ল্যান অনুযায়ী নিচের দিকে গেছে ওটা।

কনটেইনারের শেষ কলামটার পাশ ঘুরতেই দেখা গেল হ্যাচওয়ে। খানিকটা দৌড়ে যেতে হবে শুধু খোলা ডেকের উপর দিয়ে।

প্রথমে ডানে, তার পর বাঁয়ে তাকাল রানা। আরেক বার ডানে দেখে নিয়ে সঙ্কেত দিল: ‘চলো।’

বেরিয়ে এল ওরা আড়াল থেকে। সকলের অজান্তে ঢুকে পড়ল হ্যাচওয়েতে। জোর কদমে, কিন্তু নিঃশব্দে চলেছে ছোট এক প্যাসেজ ধরে।

ইস্পাতের আরও দুটো বন্ধ হ্যাচ প্যাসেজের শেষ প্রান্তে। একটা সিঁড়ি বেয়ে নিচে গেছে, অপরটা বাঁয়ে।

সামনের, অর্থাৎ নিচেরটা নির্দেশ করল রানা।

কিন্তু কম্প্যানিয়নওয়েতে পৌঁছুনোর আগেই ছুটন্ত পদশব্দ শুনতে পেল ওরা।

বাঁয়ের হ্যাচ খুলে গেল আচমকা। এমফোর কারবাইন উঁচিয়ে হুড়হুড় করে বেরিয়ে এল এক দঙ্গল সিকিউরিটি গার্ড।

চারের বিরুদ্ধে পাঁচ। কিন্তু চমকে দেয়ার সুযোগটা পেল রানার টিম। প্রহরীরা কাঁধে কারবাইন তোলার আগেই সামনের দু’জনের উপর পর পর দু’বার আগুন ঝরাল রানা সাইলেন্সার লাগানো অস্ত্র থেকে।

ডানের দু’জনের ব্যবস্থা করেছে ফরাসি পেঁচা।

টম হার্ডি দায়িত্ব নিয়েছিল বাঁয়ের প্রহরীর। মিস করল ও। গুলি লেগেছে, কিন্তু ভিন্ন জায়গায়। গার্ডের রাইফেলের মুখ ঘুরে গেল উপরদিকে।

পয়েন্ট টু-টু-থ্রি থেকে গুলি বেরিয়ে গেলে জাহাজের অর্ধেক লোকের কাছেই ফাঁস হয়ে যেত ওদের অবস্থান। সেটা আর ঘটল না সিআইএ এজেন্ট গুলি করায়।

মেঝেতে পড়ে কুঁকড়ে গেল লোকটা।

‘ভালো দেখিয়েছেন।’ কোহেনের কাঁধ চাপড়ে দিল হার্ডি।

‘এগোনো যাক।’ লাশগুলো ডিঙিয়ে আগে বাড়ল রানা। জাহাজের আরও গভীরে চলল সবাই ওর পিছু নিয়ে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *