2 of 3

রাজপাট – ৮৮

৮৮

আইল আশ্বিন আইল 
নদীর ধারে কাশ। 
আমার সাধু আইয়ক দ্যাশে 
চিতে লয় গো আশ ।।
ভাসিল নাও ভাসিল 
নদীত ভরা পানি। 
পাল তুলিয়া আসিল কেডা
কান্দিয়া মনো মানি ।।

.

মরালী হতে হরিহরপাড়ায় ফেরার অর্ধপথে যখন তারা, একটি ঘোড়ার গাড়ি তাদের তুলে নিয়েছিল। গাড়ির মালিক দুলু বাউলেরই চেনা। তবু লোকটি লম্বা সেলামে সম্মানিত করেছিল তাকে। এখন আর সে বিস্ময় বোধ করে না। কিন্তু এমন ঘটতে শুরু করার সময় যে আমূল লজ্জা আচ্ছন্ন করে দিত তাকে, তার থেকে মুক্তি ঘটেনি। এই সকল ঘোর লজ্জায় ফেলা সেলাম ও স্নেহ, নমস্কার ও আপনাপন—তাকে নির্দেশিত করে দেয় ঘোরতর দায়িত্বের পথে। সে- দায়িত্ব স্বীকার করেছে বলেই একমুখী যাত্রা তার। জীবনের অন্য সমস্ত দাবি পথ ছেড়ে দাঁড়িয়েছে। 

যদিও অদ্যাবধি অন্ধকারে সে। সে কী কী করবে? কীভাবে করবে? যতগুলি কাজ সে নিজের জন্য তালিকাভুক্ত করেছে, তা কেবল পৃথক সমাধান। একটি নির্দিষ্ট সমস্যার নির্দিষ্ট সমাধান। সেগুলি অবশ্য প্রয়োজন। কিন্তু তারই সঙ্গে, সে ক্রমশই, গভীর অনুধাবন করছে, প্রয়োজন সেই প্রেরণার, যার মধ্যে থেকে যায় ন্যায়-নীতিবোধ, স্বদেশপ্রেম এবং মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা। যতক্ষণ না এই সমস্তই জাতীয় চরিত্রের সম্বল না হয়ে ওঠে, ততক্ষণ সকল সমাধানই সাময়িক। সকল সমাধানই অসম্পূর্ণ। 

জাতীয় চরিত্র গঠনের ডাক দেবে কে? কে সেই বিশাল নেতৃত্বক্ষমতা? 

জানে না সে। যদি কেউ আর না থাকে? সে নিজেই হতে চায় ততখানি মহাবল। হতে চায় মানুষের কাছের মানুষ। এমন এক জাদু-সমাধানের তাগিদ সে বোধ করে ইদানীং, যার দ্বারা সকল দুর্নীতি উধাও হয়ে যাবে। 

হায়, এ জগতের বাস্তবতা কোনও জাদু দ্বারা উপকৃত নয়। শরীরের সমস্ত বিষ একটু একটু করে তুলে ফেলা, মৃতকল্প দেহে এনে দেওয়া প্রাণ, সহজ কর্ম নয়। তা হলে? কী সেই পথ? কোন সেই পথ? জানে না সে। জানে না। শুধু আস্থা রাখে। খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে যাবে কোনওদিন। হয়তো নিজেই তৈরি করে নেবে। আপাতত সে একাগ্রতা চায়, অভিনিবেশ চায়, নিষ্ঠা চায় নিজস্ব কর্তব্যের প্রতি। সে জানে, চলতে যে শুরু করেছে, পথ তাকে আপনা হতে টানে। 

বোধিসত্ত্ব বলেন—একের কর্ম অপরকে প্রাণিত করে। মানুষের মধ্যে অদ্যাবধি দৃঢ় হয়ে বসে আছে যৌথ-প্রবণতা। একের প্রবৃত্তি অপরকে চালিত করে। সুকর্ম হোক বা কুকর্ম, মানুষ দুই-ই নিতে পারে সহজেই। তবে, এর কোনও গণনা নেই, আঙ্কিক নিয়ম নেই। মানুষ স্বাভাবিক কিছু ন্যায়-নীতিবোধের অধিকারী হয়। তারই নাম বিবেক। এই বিবেকী শক্তিকে আরও বেশি করে জাগ্রত করা, আরও মহনীয় করা হল জননায়কের কাজ। দৃষ্টান্ত গড়ে দেওয়া কাজ। 

সেই জননায়ক, হতে পারেন, মাত্র একটি গ্রামে কাজ করা কোনও মানুষ। হতে পারেন কোনও দেশনায়ক। হতে পারেন কোনও ধর্মীয় সাধু-সন্ত-নবি। তাঁদের কাজ পথপ্রদর্শন। ন্যায়-নীতির পথপ্রদর্শন, প্রেম ও কর্মনিষ্ঠার পথপ্রদর্শন। যেমন রয়েছেন কুশিগ্রামের হেমন্ত কাহালি। তাঁর কর্মের পরিসর ক্ষুদ্র। কিন্তু তাতে কী? ক্ষুদ্র স্ফুলিঙ্গের শক্তিই, যথাযথ ক্ষেত্ৰ পেলে অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়ে দিতে পারে। হেমন্ত কাহালি স্বয়ং সেই স্ফুলিঙ্গ। এবং আরও শত শত ফুলকির উদ্‌গাতা। সকলের মধ্যে থাকে না এ-ক্ষমতা। কোনও কোনও মানুষ তা নিয়ে জন্মায়। ব্যয় করে সুপথে বা বিপথে। 

সিদ্ধার্থ বোধিসত্ত্বর কথা ভাবতে ভাবতে যায়। হাজার কথা তাঁর। যতখানি মনে থাকে, ততখানি তার অনুপ্রাণনা। সে জেনেছে, শিখেছে, মানুষের শক্তি এক হতে অপরে এমনকী পাঁচ-ছয় প্রজন্ম ধরে হয়ে থাকে সঞ্চরমাণ। এভাবেই সভ্যতা প্রগতি প্রাপ্ত হয়। এভাবেই স্থাপিত হয় মানুষের অধিকার। তিনি বলেন, অন্তত দশজন মানুষকেও যদি সংগঠিত করতে পারো, মানুষের জন্য ভালবাসা জাগিয়ে দিতে পারো হৃদয়ে, জানবে, তোমার শক্তির কিছু-বা অভিব্যয় হল। প্রথমে তোমার মনে হবে, পথ নেই। অরণ্যের আদিম অন্ধকার তোমাকে ঘিরে আছে। কিন্তু তোমার মধ্যেকার দীপশিখা প্রজ্জ্বলিত করো। তার দ্বারা বিদূরিত অন্ধকারে পথ করে নাও। চল, চলতে থাক, দেখবে তুমিই গড়েছ পথ। তোমার পথ দিয়ে চলেছে সহস্ৰ লোক। 

বহুবার, এমনই সমস্ত কথা তাকে দিয়েছেন বোধিসত্ত্ব। সে দেখেছিল, প্রতিবারই এমন সব কথা বলার সময়, আলোকিত হয়ে আছে বোধিসত্ত্বের মুখ। বিভাময়। দৃষ্টি চলে গেছে দুরে 

জ্ঞানী মানুষ বোধিসত্ত্ব। তাঁর সকল কথার মধ্যেই সিদ্ধার্থ খুঁজে পায় বাক্-সরস্বতীর আশীর্বাদ। সে এই সকলই বিশ্বাস করে। এই বিশ্বাসই তার শক্তি। বুকের পাঁজর-জ্বালানো আলোয় চলতে চলতে একদিন গোটা একটি পথ গড়ে তোলা হয়ে যাবে। যাবেই। 

.

তার দলকে সিদ্ধার্থ ভালবাসে আজও। দলীয় নেতৃত্বের প্রথম সারির বহু ব্যক্তিবর্গকে শ্রদ্ধা-সমীহ করে। তবু দলের ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারছে না সে। এ এক নিভৃত উপলব্ধি। এ কথা সে কাকে বলবে? এর আগেও বহুবার সে ভেবেছে এমন। 

দল মানে কিছু তত্ত্ব, কিছু মানুষ। এই মানুষেরা তত্ত্বের প্রয়োগ করে। জীবনের নিরিখে তত্ত্বের নির্দেশিত পথে বিবিধ সিদ্ধান্ত নেয়। নির্ধারণ করে উন্নয়ন ও জনকল্যাণের নীতি। এ পর্যন্ত কোথাও কোনও ভুল নেই। নেই অবিশ্বাস। কিন্তু তারপর? সেই তার পরেই সকল অবিশ্বাস। সকল অনাস্থা। তার চারপাশে কেবল আত্মকল্যাণের খেলা। সে কী করবে? তার মনে হয়, তাত্ত্বিক কথার সম্ভার, এখন, তাদের দলের পক্ষে ভেকধারণের মতো। 

এখন, এই শোকের সময়, সে এই সমস্ত ভাবছিল। নয়াঠাকুমার শোক তাকে আচ্ছন্ন করে আছে। এ পর্যন্ত, তার প্রাপ্ত যাবতীয় মৃত্যুশোক, তাকে আগ্রাস করার আগে প্রস্তুতির সময় দেয়নি। এই সমস্ত চিরবিচ্ছেদ ও অকল্যাণ অতর্কিতে এসেছে তার কাছে। সে সয়েছে। সইতে সইতে চলেছে। কত-শত গুরু দুঃখভার। ব্যক্তিগতকে প্রশ্রয় দেয় না বলে সে বারবার শোকে আছড়ে পড়ে। কিন্তু উঠে দাঁড়ায়। 

নয়াঠাকুমার এই হঠাৎ চলে যাওয়া, কারওকে না জানিয়ে এমন হঠাৎ চলে যাওয়া যে-শূন্যতা রচনা করেছে, তার সহন সহজ নয়। তার মনে পড়ছে, নয়াঠাকুমার জানালায় জমাট-বাঁধা লণ্ঠনের আলো। তখন কি ছিলেন তিনি? তাঁর মৃত্যুযন্ত্রণাকে, একান্ত ব্যক্তিগত সন্তাপসমূহ, ঘিরে রেখেছিল ওই হালকা আলোর বৃত্ত। ওই কেরোসিনবাতি! একা একা বুকে আগলে রাখা দুঃখ-অভিমান নিয়ে একা একা চলে গেলেন তিনি। 

তার বুকে ডাক দিয়ে যায়, বহু স্নেহের বাচন, বহু অন্তরঙ্গ মুহূর্ত মধুর 

জড়ামড়ি করে থাকা সে ও মোহনলাল আলগা আলগা হয়ে যাচ্ছিল ক্রমশই। তবু, নয়াঠাকুমা ও নন্দিনীকে ঘিরে, তেকোনা গ্রামে তার ছিল এক পারিবারিক বন্ধন। তারও একটি ডোর ছিঁড়ে গেল। কিন্তু নন্দিনী রইলেন। নন্দিনী! নন্দিনী! তার মাতৃপ্রতিমা! 

সহসা, তাকে বিস্মিতই করে দিয়ে, নয়াঠাকুমার মৃত্যুশোক আড়াল করে দাঁড়াল এক স্বস্তি। সেই স্বস্তি নন্দিনীর জন্য। নয়াঠাকুমার মৃত্যু নন্দিনীর মুক্তি রচনা করল না কি? 

ছোট ছোট আদেশ, নির্দেশ; ছোট ছোট অপমানের ইঙ্গিতময় মুহূর্ত তাকে তাড়া করেছে কত সময়। নন্দিনীর কাতর হতমান মুখ তাড়া করেছে। 

নয়াঠাকুমা তাঁর ব্যক্তিত্বের সকল ভার চাপিয়ে দিয়েছিলেন নন্দিনীর ওপর। বছরের পর বছর একান্তে বসবাস করা ওই দুই নারীর মধ্যে সখ্য হল না কোনও দিন। নয়াঠাকুমা শুধু এক শাশুড়িত্ব দ্বারাই ঘিরে রাখলেন নন্দিনীকে। এবার তিনি মুক্ত। স্বাধীন। এবার নিজস্ব সিদ্ধান্তগুলি তিনি নিতে পারবেন বাকি জীবন। 

নন্দিনীর কাছে যাবার এক আবেগ তাকে প্ররোচনা দেয়। সেই ইচ্ছাকে বুকের মধ্যে পালন করতে করতে সিগারেট ধরায় সে। তার মনে পড়ে মাকে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়েছিলেন বলে তার পিতার অসম্বৃত ক্রোধ মায়ের আজানুলম্বিত চুল মুড়িয়ে কেটে দিয়েছিল। মাকে তখন দেখাচ্ছিল কী যে অসহায়! তাঁর রূপের প্রতি শাপ-শাপান্ত করে দেওয়া সেই পরিস্থিতির মধ্যে ছিল ঘোর অপমান। সে তখন ছোট। ক্লাস সিক্সে পড়া, বালকবেলার গন্ধমাখা ছেলে। তবু সেই অপমান তাকেও বিদ্ধ করেছিল পুরোপুরি। ক্রোধ-তাড়িত করেছিল তাকেও। সে মনে মনে চেয়েছিল সহস্রবার, জ্যামিতিবাক্সর কাঁটা-কম্পাসের কাঁটা দু’টি দিয়ে তার বাবা বুদ্ধদেবের চোখ দু’টি অন্ধ করে দেয়। চেয়েছিল সে, সেই চোখ হতে বেরিয়ে আসুক ফিনকিধারার রক্ত, যা তার চিত্তের তাপিত অবস্থান শান্ত করে দেবে। 

এবং বালক সে, এই ইচ্ছে মায়ের কাছে প্রকাশ করেছিল। মা তাঁর হতমান চুলগুলি, অসুন্দর অসমান উঁচু-নিচু চুলগুলি আঁচলে ঢেকে বলেছিলেন-এ চিন্তা ভাল নয়। এই রাগ ভাল নয়। ওঁকে দেখো। ওঁর রাগ সুস্থ নয়। ক্রোধ ঈশ্বরের দান জানবে। তাকে উপযুক্ত পথে ব্যবহার করতে হয়। তোমার দাদুকে দেখ। ওঁর ক্রোধের প্রকাশ কত সংযত দেখ। 

সে দেখেছিল। বোধিসত্ত্ব তিনদিন অন্নগ্রহণ করেননি। পুত্রবধূর আজানু প্রলম্বিত কেশগুচ্ছের অপমৃত্যুর জন্য সেই ছিল তাঁর শোকের প্রকাশ। পুত্রের হয়ে তিনিই করেছিলেন প্রায়শ্চিত্ত। 

সিগারেট ছুড়ে ফেলে সে। এর বেশি আর ভাবতে চায় না। মা-বাবার সম্পর্কে ভাবতে চায় না এর বেশি। কখন উঠে আসবে সেই বিষ, গাঢ় নীল বিষ, সে অসহ্য জ্বালায় ছটফট করতে করতে সকলই বিস্মৃত হবে। সকল কর্তব্য বিস্মৃত হবে। 

সে এই বাজার, অঞ্চল পরিভ্রমণ শুরু করে। দুলুক্ষ্যাপাকে ঘিরে লোক জমেছে। গান শোনা ও বাউল—এমতো গভীর অনুরোধে সে দোতারায় তুলেছে শব্দ। তৌফিক ও বসির খান গিয়েছে এক ঘোড়াগাড়ির খোঁজে। ঘোড়াগাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে অন্তত গোমুণ্ডি পর্যন্ত। তারপর কলাবিবির বন পেরিয়ে, শ্মশান পেরিয়ে হাঁটাপথে ধূলামাটি গ্রাম। দূরত্ব আন্দাজ করলে হরিহরপাড়া হতে প্রায় তিরিশ-চল্লিশ কিলোমিটার। পথে পড়বে বাঘান, গোমুণ্ডি ইত্যাদি গ্রাম। কালান্তর নিম্ন-জলাভূমি অঞ্চলের অনুর্বর গ্রামগুলি সব। তারা বিভিন্ন গ্রামে থেমে থেমে যাবে। যাবে শেষ ধূলামাটি গ্রামে। কলাবিবির বন পেরিয়ে সেই গ্রামে যেতেই হবে সিদ্ধার্থকে, বলেছিল দুলুক্ষ্যাপা। সে গ্রামের কিছু-বা নদিয়ায়, কিছু মুর্শিদাবাদে। আর তার নিকটেই বর্ধমান। 

হরিহরপাড়া হতে দক্ষিণ-পশ্চিমে এগোলেই পড়ে ওই কালান্তর নিম্ন অঞ্চল। বেলডাঙা, নওদা থানার বিস্তৃত ভূমি এবং কিছু-বা হরিহরপাড়ার। দুলুক্ষ্যাপার আন্দাজ পথের দূরত্ব তিরিশ-চল্লিশ। হতে পারে তার চেয়েও বেশি। কারণ গ্রামের পর গ্রাম পেরিয়ে যেতে যেতে পথের সঠিক পরিমাপ কোনও ধারণা গড়ে নিতে দেয় না। 

হরিহরপাড়া হতে বেরিয়ে তারা প্রধান সড়ককে পাশ কাটিয়ে সোজা চলে যাবে শ্রীপুর, প্রতাপপুর পেরিয়ে তেহট্ট অবধি। এরপর বুন্দাইনগরে আবার প্রধান সড়কের ওপর দিয়ে তারা চলে আসবে দুধসর পর্যন্ত। এরপর কেবলই হাঁটাপথ। কারণ, গ্রামের পর গ্রাম চলে গেছে সড়ক- যোজনাহীন। ঘোড়াগাড়ি সম্বল করে যাওয়ার চেয়ে হেঁটে যাওয়া অনেক বেশি চিনিয়ে দেবে লোকপথ। বিশেষত সুকুরপুকুর এলাকা থেকে কলাবিবির শ্মশান পেরিয়ে দশ কিলোমিটার কলাবিবির বনাঞ্চলে হাঁটা ছাড়া ভিন্ন পথ নেই। একপাশে ডাকাতিয়াপোতা রেখে তারা এগিয়ে যাবে নদিয়া সীমান্তে। 

বহরমপুর হতে রেলে চেপে রেজিনগর স্টেশনে তারা নামতে পারত। তারপর বিকলনগর হয়ে যেতে পারত সুকুরপুকুর এলাকায়। কিন্তু তা হলে দেখা বাকি রয়ে যেত গ্রামের পর গ্রাম। তারা চায়নি তেমন। বরং অভীপ্সা তাদের, ময়না বৈষ্ণবীর মতোই পায়ে চলা, যতদূর পথ সম্ভব। 

এ যাত্রায় শেষ পর্যন্ত বসির খানকে আশা করেনি সিদ্ধার্থ। তাকে দেখে ভাল লাগছে তার। বসির খানের মধ্যে আছে তেজ একপ্রকার, গাঢ় গভীর প্রাণশক্তি। দুর্মর ক্রোধের পর অসামান্য শম তার, দেখেছিল সিদ্ধার্থ। তৌফিকের মতো রাজনৈতিক সঙ্গী নয় বসির খান। কিন্তু সে জানে, শুধু এক আদেশের অপেক্ষায় নিঃশব্দে তার পাশে পাশে হাঁটে। তার বিশাল শক্তিময় শরীরে আছে নির্ভরতার অভিব্যক্তি। 

বাজারে চলতে চলতে বসির খানকে নিয়ে ভাবে সে। রাজনৈতিক লোক বসির খানকে বলা যায় না কি? দলীয় দপ্তরে যায় না যে, সভায় উপস্থিত থাকে না, মিছিলে যে দেখায় না মুখ, সে কি হতে পারে না রাজনৈতিক? হতে পারে। কারণ স্থানীয়ভাবে হলেও বসির খান রাজনীতি- সচেতন। বিপদে রাজনৈতিক শক্তিকেই সে আশ্রয় করেছে বারংবার। হতে পারে, ব্যক্তি সিদ্ধার্থকেই সে শরণ নিয়েছিল। কিন্তু দলের বাইরে তার অস্তিত্ব কী! কতখানি! 

শেষ পর্যন্ত তার পরিচয় সে সি পি আই এম-এর সদস্য। তরুণ সদস্য একজন। এই ব্যক্তি সিদ্ধার্থর কাছে যারা আসে, তারা রাজনীতি-সচেতন নয় কেন? তার মনে হয়, ব্যাপকার্থে রাষ্ট্রীয় শক্তির অন্তর্গত প্রত্যেক নাগরিক শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক। যে-কোনও গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিকের ক্ষেত্রেই একথা প্রযোজ্য। কারণ বিবিধ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশ না নিয়ে তাদের উপায় নেই। রাজনীতির কল্যাণের দায় জনগণে বর্তায় কারণ জনগণ তার ভোক্তা। তার বাহক। রাজনীতির অপকৃতির দায়ও জনগণে বর্তায়, কারণ আজ, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের রাজনীতি জনগণের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। 

সে ভাবে। ভাবতে ভাবতে ঘোরে। বাজারে বহুজন তার কুশল প্রশ্ন করে। সালাম জানায় তাকে। নমস্কার জানায়। কেউ-বা, কোনও সমস্যা বিষয়ে আলোচনা আছে, এমন নিবেদন করে বসে। জনগণের মধ্যে, নিজেকে সে ফিরে ফিরে পায় এক অন্য সিদ্ধার্থ। এখানে শোক তার নিকটে আসে না। বিষাদ সে গ্রাহ্যও করে না। সে কথা বলে। কথা বলতে বলতে ঘোরে বহু বিচিত্র পণ্যময় এই বাজার অঞ্চলে। 

সে ভেবেছিল অমরেশ বিশ্বাসের কাছে বসবে কিছুক্ষণ। কিন্তু জানা গেছে হরিহরপাড়ায় তিনি নেই। অতএব কুশল নিতে নিতে সে বোঝারও চেষ্টা করে জনমানসের টান। কোন দিকে? কার দিকে? সে চায়, আন্তরিকভাবে চায়, অমরেশ বিশ্বাসের হাতে এ অঞ্চলের ক্ষমতা চলে আসুক আগামী নির্বাচনে। 

তখন দুলু বাউলের উদার কণ্ঠ ভেসে আসে। গানের আকর্ষণে পায়ে পায়ে সেইদিকে এগিয়ে চলে সে। চেতনায় কথা ভেসে আসে। 

যেভাবে সাঁই-এ মিশে রয় খোদা 
সিনায় সিনায় ঘুরে বেড়ায় ছপিনায় রয় জুদা ॥
দুগ্ধ যেমন দেখা দেয় ননী তাতে ছুপিয়ে রয়
হায়রে, ননী হতে ঘৃত হয়, ঘৃত লাল দুগ্ধ সাদা ।।
আসমানে সূর্যদেব আছে তার জ্যোতি লাগে কাছে
হায়রে তেমনিভাবে আল্লা মানুষে সর্বদা ॥
অধীন বাহার বলিতেছে মিশে রয় গাছে বীজে 
হায়রে, ফুলে মিশে বাস রয়েছে ফলে মিশে সুধা ।।

সরল কথার মধ্যে গূঢ় অভিব্যক্তি। শুনতে শুনতে সে এগিয়ে আসছিল। পার্শ্ববর্তী আলু-পেঁয়াজের দোকান হতে ডাকল একজন। সে তাকাল ফিরে। টাল করা আলুর পিছন হতে নেমে আসছে এক তরুণ। একটি কাঠের চৌকির ওপর আলুর স্তূপ। আলুই নিয়েছে অধিকাংশ জায়গা। পাশে রাখা আদা, পেঁয়াজ, রসুন। 

তরুণের পাশে ছিল এক প্রায়-বৃদ্ধ নারী। সে-নারীর দৃষ্টিতে তীব্র খরা নজরে পড়ল সিদ্ধার্থর। তার বুকের মধ্যে শির-শির করে উঠল। নারী তাকে দেখছিল অপলক 

আজ, এ বাজারে সকল বস্তুরই আকাশ-ছোঁয়া দাম। এমনিতেই অনাবৃষ্টির জন্য সর্বত্র বাজার চড়া। কিন্তু এখন পূজার মরশুম। তুলনামূলকভাবে বাজার ফাঁকা কারণ নিম্নবিত্ত, দরিদ্র মানুষ ক্রয়ক্ষমতা হারিয়েছে। ক্রয়ক্ষমতা আছে যাদের, বাজারের মূল্য সম্পর্কে তারা বেপরোয়া। কিন্তু দরিদ্রের সংখ্যা অধিক হওয়ায় বাজারে কিছু বা শূন্যস্থান রচিত হয়েছে। জেলা সভাধিপতি থেকে স্থানীয় বিধায়কবৃন্দ পর্যন্ত, দলমত নির্বিশেষে, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, যেমন চাল আলু নুন লঙ্কার ওপর নামমাত্র লাভ রেখে, দরিদ্রের সুবিধার্থে, ব্যবসায়ীদের বাজার চালু রাখতে অনুরোধ জানিয়েছেন। তাতে লাভ বিশেষ হয়নি। অনাবাদী ফসলের হাহাকার বাজারেই সর্বাগ্রে শোনা যায়। বাজারের পাইকাররা সাধ্যাতীত মূল্যে কিনে আনছে দ্রব্যাদি। তারা কম মূল্যে বিক্রয় করে কী প্রকারে? 

সবুজ বিপ্লবের স্বপ্নেও ঢুকে পড়ে দু চারটি এমন বছর। খাদ্যে স্বয়ম্ভর হয়ে উঠতে থাকা এ রাজ্যেও রয়ে যায় লক্ষ লক্ষ অর্ধাহারী, অনাহারী লোক। বিশেষত কামিন-কামলা। ভূমিহীন অথবা সামান্য জোতের অধিকারী। বিপ্লবের ফলাফল সর্বস্তরে পৌঁছতে কালান্তর ঘটে যায়। এমনই এ বিশ্বের নিয়ম। পৃথিবীর সর্বত্র একই সময়ে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় হয় কি? 

সিদ্ধার্থ সেই খর-দৃষ্টি হতে চোখ ফিরিয়ে তাকাল তরুণের দিকে। সবুজ লুঙ্গি ও আধময়লা সাদা শার্ট পরা ছেলেটি তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে হাসছে লাজুক। অভিবাদন করছে তাকে। সিদ্ধার্থ তাকে চিনতেও পারছে না। সে কিছু অপ্রস্তুত হাসল। এই অপরিচয় স্বীকার করবে বলেই ওষ্ঠ উন্মোচন করল যখন, ছেলেটি বলল—আমাকে চিনবেন না আপনি। আমি ইসমাইল। আমার দাদার নাম রফিক। গেল বৎসর থানায় পুলিশের গুলিতে মরেছিল। 

চমকে উঠল সিদ্ধার্থ। রফিক! রফিক! হ্যাঁ, রফিক! তার মনে আছে। এই নাম মনে আছে। সেদিনের সমস্ত মৃত নাম মনে আছে। সে এই পরিবারগুলির জন্য অনেক কিছু করার ইচ্ছে রাখে। একটি সৎ আন্দোলনের সহযোগী যোদ্ধা তারা, সৎ কর্মের শহিদ, এই সকল মৃত মানুষের প্রতি তার আছে আন্তরিক শ্রদ্ধা। সে আবেগভরে দু’টি হাত রাখে ইসমাইলের কাঁধে। বলে—যে ক্ষতি হয়ে গেছে তোমাদের, তার পূরণ হয় না। তবুও জিগ্যেস করি, সামলে নিতে পেরেছ তো? 

তরুণের চোখ দু’টি জলে ভরে আসে। সে বলে—ছোটবেলায় আব্বাকে হারিয়েছি। দাদাই আমাদের সব ছিল। খেটেখুটে ব্যবসাটা ও-ই দাঁড় করিয়েছিল। 

সিদ্ধার্থ ইসমাইলের কাঁধে চাপ দেয়। অসহায় লাগে তার। সে তার আর্ত চোখ রাখে ইসমাইলের চোখে। ইসমাইল হাতের উলটো পিঠে চোখ মোছে। বলে—আমরা মেনে নিয়েছি একরকম। একটা ভাল কাজে গিয়েছিল দাদা। ও কিন্তু রাজনীতি করত না। ময়না বৈষ্ণবীকে চিনত। খবরটা শুনে আর থাকতে পারেনি। 

সিদ্ধার্থ বলে—তোমার দাদাকে আমরা শ্রদ্ধা করি। তিনি সর্বদা আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। 

—আমরাও তাই ভাবি। মেনেও নিয়েছি একরকম। কিন্তু মুশকিল মাকে নিয়ে। মা কিছুতেই মানতে পারে না। 

—সন্তান গেলে মায়েরই তো সবচেয়ে বড় কষ্ট ইসমাইল। তোমার মাকে আমার প্রণাম…

কথা শেষ হল না তার। একটি আলু এসে সজোরে লাগল তার বুকে। তীক্ষ্ণ কণ্ঠ বেজে উঠল সকল শব্দ চিরে—মর্ মর্ মর্ তুই। তোর জন্য তোর জন্য আমার ছেলেটা মরে গেল। মর্ তুই, মর্ মর্… 

একটি পাঁচশো গ্রামের বাটখারা বাতাস কেটে ধেয়ে এল সিদ্ধার্থর দিকে। সে বিমূঢ় দাঁড়িয়ে ছিল। ইসমাইল একটানে সরিয়ে দিল তাকে। বাটখারা সোজা গিয়ে পড়ল উলটোদিকের আলুপেঁয়াজের দোকানে। ইসমাইল চিৎকার করল—মা… 

আ হা হা হা হা ও হো হো হো হো…শব্দ করছে। দুলে দুলে শব্দ করছে সেই নারী। কাঁদছে। নিজের মাথার চুল ধরে নিজেই টানছে সে। ইসমাইল মাকে জড়িয়ে ধরেছে। অসহায় আবেদন করছে সে—চুপ করো মা। শান্ত হও। 

—মেরে ফেলল! আমার রফিককে মেরে ফেলল! 

—চুপ করো মা। উনি কেন মারবেন! 

—মেরে ফেলল! মেরে ফেলল! মরুক! তোর সব ভাই মরুক! সব বোন মরুক! সম্পাত করি, সম্পাত করি! তোর মায়ের বুক খালি হয়ে যাক! রফিক, ও আমার রফিক রে…. 

সিদ্ধার্থর জামায় আলু হতে লেগে যাওয়া মাটির ছোপ। লোক ঘিরে আছে তাকে। সে অসহায় তাকাচ্ছে চারপাশে। অপমান নয়, বড় বেদনা ছুঁয়ে যাচ্ছে তাকে। হায়! ওই নারীর অতলস্পর্শ শোক বিদূরিত করে সে কী প্রকারে! 

ওই শোকার্ত মা অভিসম্পাত করতেই পারেন! এই সমস্ত ঘটনার জন্য আসলে যারা দায়ী, তারা আজও অধরা! মহতী প্রাণের মানুষ ময়না বৈষ্ণবী চলে গেল। চলে গেল আরও কত নির্দোষ প্রাণ! কিন্তু মুর্শিদাবাদ থেকে আর একজনও কমলি চলে যায়নি, অনাহার হতে এক অভিশপ্ত আঁধারে—এমন পরিস্থিতি কি তারা তৈরি করতে পেরেছে? পারেনি। সে ভেবে দেখেছে, গত এক বৎসরে, উল্লেখযোগ্য কিছুই করেনি সে। শুধু অপছন্দের বৃত্তে ঘুরেছে। ক্ষমতার অলিন্দে হেঁটেছে। প্রকৃত কাজ কবে করবে সে? কবে? 

ঘোষপাড়ার ওই পরিত্যক্ত আশ্রমে শুরু হয়েছে নতুনতর বসবাস। মহাপ্রভু গোপীদাসের প্রধান ক্ষেত্র ওই পঞ্চবুধুরি শ্রীপাটের কর্ণধার শ্রীকৃষ্ণপাদ প্রভুজি মহারাজ নিজের দায়িত্বে আশ্রমের পুনরুত্থান ঘটিয়েছেন। এখন এই আশ্রমে নারীর বসবাস নিষিদ্ধ। কিন্তু ময়না বৈষ্ণবীর নাম ওখানকার মন্দিরের গায়ে খোদিত হয়েছে। শ্রীপাটে তার সম্মান ছিল। সেই সম্মানে এই প্রাপ্তি তার। 

.

মহাপ্রভু গোপীদাসের তত্ত্বানুযায়ী, এমন নিয়ম গোপীদাসি পথসম্মত হল কি না, এ প্রশ্ন তোলেনি কেউ। সকলেরই মনে হয়েছে, এই ভাল। এই নারীবিবর্জিত সাধনক্ষেত্র গড়ে তোলা, অন্যমার্গীয়দের মতো, এই ভাল। বহু ঝঞ্ঝাট তা হলে এড়িয়ে যাওয়া যায়! 

হায়! একথা ভাবেনি কেউ, ওই ঝঞ্ঝাট ঘটিয়ে না তোলাই ছিল গোপীদাসের সাধন। নারী-পুরুষের শ্রীময় কল্যাণময় সহাবস্থানই ছিল তাঁর কাম্য। কারণ, আপন জীবনধর্মে তিনি অভিব্যক্ত করেছিলেন এই বিশ্বাস—নারী বা পুরুষ, কেউ-ই সম্পূর্ণ নয়। বিচ্ছিন্নভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় তারা। দুইয়ে মিলেই তারা মানবেতিহাসের কর্ণধার। 

কিন্তু এই বোধের পথ সহজ নয়। সহজ নয়। এত বৎসরকাল গোপীদাসি মার্গের শক্ত সাধনায় চলার ধারা ক্ষয় হতে হতে এখন বড় সরলবর্গীয়। আর সবের সঙ্গে তার আর তফাত থাকছে না। পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে সংযমের প্রদর্শন এক সহজ প্রক্রিয়া। পরিগ্রহণের ঔদার্যে সংযমের কঠিন অভ্যাস করবে, হায়, ফুরাল বুঝি সেই শক্তির কাল। 

অতএব এখন, নারীবিবর্জিত ওই মঠে হেন কেউ নেই ময়না বৈষ্ণবী যথা। নেই রামি, প্রমি, কেতকী বৈষ্ণবীর দল। নেই। তারা নেই। কিন্তু ওই নারী রয়ে গেছে। ওই মঠ ঘিরে গড়ে ওঠা গাঢ় শোক রয়ে গেছে। 

সিদ্ধার্থ ওই নারীকে মাতৃসম্বোধন করবে কি না ভাবতে থাকে। নিজেই ওই নারীর সন্তান হয়ে ওঠার বাসনার কথাও সে প্রকাশ করতে চায়। তবু সে দাঁড়িয়ে থাকে স্থাণুবৎ। এমতাবস্থায় ওই সকল বাক্য ও শব্দাবলীর ঘোর নাটকীয়তা তাকে সংকোচের শৃঙ্খলে ঘিরে রাখে। কী হবে ওসব বলে! যে যায়, সে যায়। তার দ্বারা ওই নারীর সন্তানের শূন্যতা পূরিত হয় কী প্রকারে? সে কি দিতে পেরেছে কারওকে মায়ের জায়গা? এমনকী নন্দিনীকেও কি দিতে পেরেছে সম্পূর্ণ? পারেনি। পারা যায় না। কোনও কোনও প্রিয়মৃত্যু কৃষ্ণগহ্বরেরই মতো অতল। ভয়াবহ। 

.

ইসমাইল এসে দাঁড়ায় তার কাছে। লোকে তাকে দোষারোপ করে। কেন সে ভাইয়ের প্রসঙ্গ তুলে মাকে উত্তেজিত করল? 

—মার সামনে কেউ বলে এসব? গাড়ল কোথাকার? 

—বোকা! বুদ্ধিহীন! নিকম্মা! ঘটে বুদ্ধি নেই, আলুই আছে কেবল। 

ইসমাইল করুণ মুখে ক্ষমা প্রার্থনা করে। সিদ্ধার্থ তার হাত চেপে ধরে। তার সকল অবয়বে ফুটে ওঠে এই এক অভিব্যক্তি—না। কোনও ক্ষমা চাওয়া নয়। তোমার কষ্টের বোঝা আমাকেও দাও ভাই। এই বোঝা যে আমরাই জমিয়ে তুলেছি। আমরা, মানুষের বিরোধী মানুষ! তাই এই বোঝার ভার এতখানি দুঃসহ! 

তখন, সে শুনতে পাচ্ছে, গানের পর, গানের পর, আরও একটি সংগীত পরিবেশন করছে বৈরাগী ঠাকুর। তার মধুর কণ্ঠ শুষে নিচ্ছে আকাশ-বাতাস। সে ভাবতে ভাবতে এগিয়ে যাচ্ছে জনতার সঙ্গে সঙ্গে। ভাবছে, এই মানুষ তার সঙ্গী হোক, গানে গানে ভরিয়ে দিক তাপিত প্রাণের বেদনা। দুলুক্ষ্যাপা গাইছে তখন— 

ধন্য ধন্য আসকি জনায়। 
আসক জোরে গগনের চাঁদ পাতালে নামায় 
সূর্যের ছিদ্রে চালায় হাতি, সে যে বিনা তেলে জ্বালায় বাতি 
কখনও হয় নিষ্ঠা গতি, স্থায় আর অস্থায় ।।
নামাজ পড়া কাম করে না শুদ্ধ প্রেম আসক দেয় না
আমার সাঁই রব্বানা মজুত সদায় ।।
আসক প্রেমে রাখে নিহার তাইতে রাজি সাঁই পরওয়ার 
ফকির লালন করে শিয়ালের কাজ দায় সিংহের দায়॥ 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *