৫
কার্তিক মাস গেল কন্যার
উঠিতে বসিতে।
কত পাষাণ বাইন্ধ্যাছ পতি
অই মনেতে ॥
রাত্রি ঘন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পায়ের পাতা ফুলে উঠল। ঘুম এল না তার। আর ঘুম না এলে মানুষের স্বভাব হল এপাশ-ওপাশ করা। সেটুকুও সে করতে পারছিল না মনের মতো করে। কারণ পাশ ফিরতে গেলে নড়া-চড়া চাই পায়েরও। আর পা এতটুকু নড়লেই মাথা পর্যন্ত ঝনঝন করছে ব্যথায়।
সে অল্প শব্দ করল মুখে আর ব্যথা-পা তুলে দিল ভাল পায়ের ওপর। যেমন এক ব্যথিত হৃদয় চলে যায় অন্য এক ব্যথিতের সংলগ্নে। যদিও সে হৃদয় সমব্যথীর আসঙ্গে মহৎ অনুভব পেয়ে যায় অন্যান্য প্রত্যঙ্গগুলির সঙ্গে এই তার বিরাট তফাৎ।
সুতরাং ভাল-পা ব্যথা-পাকে দিতে পারল না তেমন আরাম। সে তখন উঠে বসল। ঘরের এখানে-ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমিয়ে আছে রামি, প্রমি ও কেতকী বোষ্টুমি। কেউ কাত হয়ে, কেউ চিৎ হয়ে। কারও শাড়ি হাঁটু অবধি উঠে গেছে। কারও মুখে জ্যোৎস্নার আলোয় মাধবীলতার ছায়ার আলপনা। প্রমি বোষ্টুমির বুকের কাপড় সরে গেছে। সেফটিপিন লাগানো, ব্লাউজের অভ্যন্তর হতে উঁকি মারছে উথালি বুক।
এই ব্যথাতেও ময়না বৈষ্ণবীর হাসি পেল। এই মুহূর্তে এই ঘর ফাঁদ হয়ে আছে। এমন সব দৃশ্য দেখলে যে-কোনও চিরব্রহ্মচারী পুরুষেরও কামপ্রবৃত্তি জেগে উঠবে। ঘুমন্ত মেয়ের শিথিল পেট-বুক-হাত, অসাবধানী পোশাক আর বাহুল্য বিবর্জিত মুখ-চোখ বড় মনোরম। সব মিলিয়ে কী রকম স্বপ্নের মতো লাগে। এই দেখে, হতে পারে কোনও পুরুষের কাম জাগে, কারও জাগে স্নেহ। স্নেহের সঙ্গে মিশে যাওয়া সামান্য কাম এক কোমল পরিমণ্ডল রচনা করে যায়।
আর স্নেহ জেগে উঠলে পুরুষ আলতো স্পর্শে তার সঙ্গিনীর চুল সরিয়ে দেয় কপাল থেকে। কাপড় সরে যাওয়া একান্ত অঙ্গগুলি যত্নে ঢেকে দেয়। দু’চোখে মায়া মাখিয়ে নিরীক্ষণ করে মুখ। কামাতুর পুরুষের কম্পিত, তীব্র, স্বার্থপর আচরণের বিপরীত এই ধরণ। পুরুষের এই স্নেহময় রূপ যে দেখেনি সে পুরুষকে সর্বস্ব দিয়ে ভালবাসতে পারবে না কোনওকালে।
ময়না বৈষ্ণবী দেখেছিল সেই স্নেহময় পুরুষকে যখন সে ছিল ময়নামতী। অনেক রাত্রে তার ঘুমের মধ্যে সে টের পেয়েছে, এক লাঙল-ধরা খসখসে হাতের মোলায়েম স্পর্শ। সেই স্পর্শে সে একবার গাঢ় ঘুমে তলিয়ে গেছে, পরক্ষণে ভেসে উঠেছে জাগরণে। সেই স্পর্শের সচেতন অনুভূতির প্রলোভন তাকে ঘুমের ছলে রেখেছে জাগরণে, আবার সেই অনুভূতির অপরূপ লাবণ্যে সে গভীর নিদ্রিত হয়েছে।
এ ছিল এক খেলার মতো। এই মায়ার খেলা ভাঙলেই শুরু হত অন্য এক খেলা যখন সে সত্যিই দু’চোখ মেলে স্বামীর বুকের কাছ ঘেঁষে আসত। আর স্বামীটি তখন হয়ে উঠত কামুক পুরুষ। কী যে আশ্চর্য সেইসব দিনরাত্রি! সেইসব আঁধারবিছানা! সেখান থেকেই ময়না বৈষ্ণবী জেনেছে, পুরুষকে কামে চিনলে হয় না। তাকে স্নেহে চিনতে হয়। সেখানেই আছে তার প্রেমের আখর। সেখানেই দিয়ে দেওয়া যায় সকল হৃদয়। নইলে হৃদয় দেবে কীসে? বিষে আর সর্বনাশে? তা কি আর হয়? হৃদয় কি বিষে দেবার জিনিস?
এত বছর পরেও তার স্বামীর কথা মনে পড়ে যায়। স্বামীর মুখ আর ভাবে না আলাদা করে। চোখ বন্ধ করলে কেবল কৃষ্ণ, কেবল হরি। স্বামীর ধারণার সঙ্গে সেই মুখ মিলেমিশে গেছে। মাঝে মাঝে তার সব গোলমাল হয়ে যেতে চায়। সে কি স্বামীরূপে কৃষ্ণের ভজনা করে, নাকি কৃষ্ণরূপে স্বামীর? ভেবে যখন কূলকিনারা পায় না তখন বিশ্বময় হরির অস্তিত্বকেই সে প্ৰণাম জানায়। শক্তি ভগবতীতে প্রণত হয়।
শিয়রের কাছে রাখা ঝুলিখানি হাতড়ে একখানি সাজা পান মুখে পুরল সে। তারপর চুনের ডিবে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। কোনও অবলম্বন ছাড়া উঠতে গিয়ে সে প্রথমে দু’হাতের ভর রাখল মেঝেয়, তারপর কোমর তুলে আস্তে আস্তে সোজা হল। ঘুম না হতে চাওয়াকে ব্যথায় জড়িয়ে সে উঠোনে গাছ-গাছালির কাছে যাবার সিদ্ধান্ত নিল। যদিও দোতলা থেকে নেমে উঠোনে যেতে এবং ফের দোতলায় উঠে আসতে তার ব্যথাবোধ হবে বেশি। সে তবু নীচে যাওয়াই সঠিক মনে করছে কারণ নীচেকার রান্নাঘরের থেকে একটুকু হলুদ ও নিজস্ব ভাঁড়ার থেকে একটুকু চুন নিয়ে গরম করে সে লাগাতে পারবে পায়ের পাতায়।
সে নিজের পায়ের পাতার দিকে তাকায় আর হাসে। কী অপরিসীম শক্তি এই ব্যথার! সমস্ত প্রাণমন সে হরণ করেছে। ব্যথা হতে মন তুলে শ্রীহরিতে সমর্পণের জন্য সে কীর্তনের সুর ধরল। একথা ঠিক যে ময়না বৈষ্ণবীর কণ্ঠ সুমধুর নয়। কিছু ভারী। কিছু-বা খসখসে। কিন্তু সে-কণ্ঠ সুরেলা। আর সুরের সঙ্গে ভাবেরও সম্বন্ধ সে ঘটিয়ে থাকে নিবিড় করে। তার ওই ভারী, খসখসে গলায় সে আখর ধরে যখন, ভাবুকের মন হরিচরণে না গিয়ে পারে না। লোকে বলে, বাঃ কী মিষ্ট তোমার স্বর। ময়না বৈষ্ণবী স্বয়ং তন্ময় তখন। সেই তন্ময়তা এই ব্যথাতুর রাত্রি-আঁধারে সে ফিরিয়ে আনতে চায়। ফুলে-ওঠা পা টেনে টেনে চলে আর অন্ধকারে চোখ সইয়ে নিতে চায়। গভীর তার তন্ময়তা এমন যেন এ তাকে পরখ করা। যেন এক ব্যথার সীমায় পৌঁছেও সে হতে পারে কি না হরিচরণে নিবেদিত— পরীক্ষা তারই। সে সুর ধরছে তাই। সেই সুর মঠের ঘুমন্ত মানুষগুলির শ্রবণে পৌঁছে যাচ্ছে। কিন্তু ঘুম ভাঙছে না কারও। কারণ কোনও কোনও মধ্যরাতে এই সুর হয়ে ওঠা সময়ে তারা অভ্যস্ত।
হাঁপ ধরে যাচ্ছে ময়না বৈষ্ণবীর, তবু সে গানের ভিতর দিয়ে সিঁড়ি ভাঙছে এক-এক ধাপে দুই পা রেখে।
কে তুমি রাম নও
তোমায় চিনতে পারি নাই বলে
মনে কিছু কইরো না
তুমি রাম নও
তবে তুমি কি সেই গুণের বঁধু
আমার প্রাণের বঁধু তুমি হে
প্রভাতকালে যদি এলে নাথ
তবে আর ওখানে দাঁড়ায়ে কেন
নাথ ওখানে কেন
ভাল হইল আরে বন্ধু আইলে সকালে
প্রভাতে হেরিলাম মুখ
দিন যাবে ভালে
সে সিঁড়ি ভাঙে আর এক-এক কলি গায়। গানের সুরের মধ্যেই সে রান্নাঘরের দরজার কাছে দাঁড়ায়। রান্নাঘরে কোনও শেকল লাগানো নেই। তালাও না। দুটি কড়ায় দড়ি বেঁধে রাখা। সে দড়ি খুলে ঢুকল ভিতরে। আলো জ্বালল। মরা উনুনের ওপর হাত দিয়ে অনুভব করে নিল আঁচ। আঁচ নেই। কেবল গুলের ভস্ম পড়ে আছে সংবেদনশীলতাহীন অতীতের মতো। ঘরের কোণে জমে থাকা নারকোলের খোলায় চুন নিল সে। হলুদ নিল। সামান্য জল দিয়ে গুলে নিল আঙুলে নেড়ে।
এখন আর গান নেই তার গলায়। এইসব জাগতিক কর্ম, আপনাকে আপনি সেবা, বড় মনোযোগ দাবি করে। উনুন ধরাবার কাজে ব্যবহৃত কাগজের ঠোঙা ইত্যাদি হতে সে তুলে নিল একটি আর দিয়াশলাই জ্বেলে আগুন ধরাল। উবু হয়ে বসেছে সে এখন। ফোলা পায়ে চাপ লেগে টনটন করছে। আগুনের উল্লাস জলে গোলা চুন-হলুদকে ফুটিয়ে তুলছে। শব্দ হচ্ছে চিটপিট চিটপিট। যতটুকু প্রয়োজন তার চেয়ে বেশিই গরম হয়েছে। সে পোড়া কাগজের লম্বা হয়ে পাকিয়ে ওঠা ছাই উনুনে ফেলে নারকোলের মালা রাখল সংলগ্ন বারান্দায়। আলো নিভিয়ে দরজার কড়ায় দড়ি বেঁধে নারকোলের পাত্র হাতে সিঁড়ির দিকে গেল। ধাপে বসে লাগিয়ে নেবে চুন-হলুদ। এতক্ষণ আঁচল দিয়ে ধরে ছিল পাত্রখানি। এবার সিঁড়ির ধাপে বসে সেই আঁচলের কোণে গিঁট বেঁধে নিল তার চুনের কৌটো।
হালকা শীতল হাওয়া স্পর্শ করে গেল ময়না বৈষ্ণবীকে। গরম চুন-হলুদ ঠান্ডা হয়ে আসছে দ্রুত। ডানহাতের তিন আঙুলের ডগায় তুলে ফোলা পায়ে আলতো করে চুন-হলুদ মাখাচ্ছে সে। নিস্তব্ধ রাত্রে এই জেগে ওঠার মধ্যে সে নিজেকে নিজের কাছে পায় অনেক আপন করে। অতএব এই.মুহূর্তগুলি তার ভাললাগায় ভরে উঠছে। ভাবছে সে, সারা রাত্রি এমন করে না- শুয়ে না-ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেবে কি না। এই ভাবনার ভিতর সে অতি সন্তোষে গুনগুনিয়ে উঠল। নিজেই শিল্পী, নিজেই শ্রোতা সে তখন। রসের লীলা আস্বাদনের জন্য অপূর্ব মাধুর্যমণ্ডিত রসের ভাণ্ডারে সে একাই অবগাহন করছে। শ্রীকৃষ্ণের ধীরললিত ভাব তার প্রিয়। যদিও তার এত গান, এত ভাব নেই যে সে ধীরোদাত্ত, ধীরোদ্ধত বা ধীরশান্ত ভাবের সঙ্গে ধীরললিতকে সচেতনভাবে পৃথক করতে পারে। তার মন যা বলে, সে তাতেই সায় দেয়। মনে যা পড়ে, তেমনি গায়। এই মুহূর্তে এই গানই হবে সুপ্রযুক্ত— এমন ভেবে বাছাবাছি করে না। শুধু তার অন্তরে যে-মূর্তি ধ্যেয়, তা হল শ্রীকৃষ্ণের ধীরললিত মূর্তি। সে এই মাত্র জানে, নিত্যলীলাদি প্রকটনের সূত্রেই ভক্তগণের প্রতি ভগবান অনুগ্রহ করে থাকেন। সে এই মাত্র শুনেছে, ভগবান লীলাবিলাসী, নিরন্তর লীলা করছেন। এ লীলার শেষ নেই, আদি নেই, খেদ নেই, ক্লান্তি নেই। এ লীলার বৃদ্ধি আছে কেবল। হ্রাস নেই। পূর্ণামৃত আস্বাদনের তৃপ্তি আছে কেবল, অতিতৃপ্তির অতৃপ্তি নেই। সে শুনেছে। শুনেছে এই মাত্র। জানে না, তৃপ্তি লোল্য বৃদ্ধি করে। ক্ষুধা বৃদ্ধি করে। আরও আরও আকর্ষণের মোহে নিক্ষেপ করে হৃদবৃত্তি। এই পুনরাস্বাদনের স্পৃহার নাম অনুগ্রহ। ঈশ্বর স্বয়ং ভক্তকে এ অনুগ্রহ করেন। নিজেও এই অনুগ্রহে পুনরাস্বাদনের লীলায় আবির্ভূত হন। ময়না বৈষ্ণবী এ গূঢ় তত্ত্বের খোঁজ জানে না। সে ভক্তি জানে। লীলা জানে। কৃষ্ণ জানে। কীর্তন জানে। সিঁড়ির ধাপে বসে পুষ্পসৌরভের আবেশ মেখে সে গায়। আর অন্ধকার স্বয়ং খোলের বাণী হয়ে বেজে ওঠে চতুর্দিকে।
স্বেচ্ছাময় প্রভু ধরে মানুষের দেহ।
কেবল ভকত হেতু অনুগ্রহ সেহ ॥
ভজত তাদৃশী ক্রীড়া মানুষ যেমন।
যা শুনিয়া সর্বলোক ভজিবে চরণ ॥
এই যে কহিল ক্রীড়া এই অনুগ্রহ।
ইহা ছাড়ি কেমন তার মায়া হয় গ্রহ ॥
হঠাৎই তার শ্রবণে সুরের সঙ্গে বেসুর হয়ে বাজে এক ধ্বনি। সে গুনগুনানি থামিয়ে দেয়। কান পেতে শোনে। কোথাও উৎসারণ ঘটছে চাপা, বুক-নিংড়ানো শ্বাস-পতনের। অশ্রুময়। হাহাকার হয়ে বেরিয়ে আসতে চেয়েও তা কেবল থেকে যাচ্ছে এক গুঙিয়ে ওঠা হয়ে। ময়না বৈষ্ণবী শোনে আর চারপাশ দেখে। চাপা শব্দ বড় নিকটবর্তী মনে হয়। কিন্তু কোথায়, কোথায়! ঠাহর হয় না। সে স্বর ছুড়ে শুধোয়— এই রেতের ব্যালা কান্দে কেডা? বসিয়া আছ কুনঠে? বাইর এসো।
কিছুক্ষণ স্তব্ধ। ময়না বৈষ্ণবী সিঁড়ির ধাপ হতে নেমে এল। কিছু-বা চুন-হলুদ গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ছড়িয়ে পড়ল মেঝেয়। একটি চাপা কান্নার হিক্কা উঠেই থেমে গেল। সে আবিষ্কার করল তখন, সিঁড়ির পেছনে, যেখানে রাখা থাকে বড় অনাদরের অদরকারি বস্তু, সেখানেই। সে পা হেঁচড়ে এগিয়ে যায়। দেখে, আলো যেখানে আড়াল হয়ে রচেছে আরও অন্ধকার, সেখানে পিণ্ডবৎ বসে আছে একজন। তার মুখের আভাসমাত্র দেখা যাচ্ছে না কারণ সে বসে আছে পেছন ফিরে। তবু পোশাকে আর আকারে বোঝা যায়, সে মেয়ে, মেয়েমানুষ। ময়না বৈষ্ণবী তাকে ডাকে আবার কেডা গো তুমি? ক্যাজরা গুহালে সেঁধ্যে আছ? পেছ্যায় সাপ আছে না কী আছে! বাইর এসো!
মেয়েমানুষটি বেরিয়ে এল না। বরং সেঁধোতে চাইল আরও বেশি অন্ধকারে। ময়না বৈষ্ণবী ভাবল কিছুক্ষণ। মেয়েমানুষ অন্ধকারে সেঁধোতে চায় কখন? ভয় পেলে আর কলঙ্কিত হলে। এই মেয়ে, সে হিসেব মেলায়, হয়তো-বা কলঙ্কিতই। কারণ শুধুই ভীত হলে সে এই বাড়ির অন্য মহিলাদের কাছে আশ্রয় খুঁজতে পারত। তার সঙ্গের মেয়েটির কাছে থাকার চেষ্টা করতে পারত। এসব কিছুই না করে অন্ধকারে আবর্জনার মাঝে সে যে কেবল গুঙিয়ে উঠছে আর আলোর দিকে পিঠ করে মুখ লুকিয়েছে, তাতে মেয়েটির কলঙ্ক সম্পর্কে ময়না বৈষ্ণবী প্রায় নিঃসন্দেহ হয়ে উঠল। তার মন ভরে গেল মমতায়। আহা মেয়ে! কোথা হতে এল, কী-বা ঘটাল, যাবে কোথা! নাকি সে সেবাপরায়ণা হয়ে ঘর ছেড়েছে, আর যাবে কোন অজানায়, তাই ঘরের জন্য তার মন পোড়ে। সে আবার ডাকে- বেরিয়ে এসো। ও মেয়ে! কোনও ভয় নেই তোমার। কাঁদো কেন? এসো। শুনি তোমার দুঃখের কথা।
মেয়েটি ফুঁপিয়ে ওঠে আবার। নড়ে-চড়ে না। ময়না বৈষ্ণবী বলে— মুখ যখন অন্ধকারে লুকিয়েছ তখন জানি তুমি লোক ডাকতে চাও না। কিন্তু দেখো, আমি তোমার সঙ্গে কথা বলছি, তোমার কান্নার শব্দও ছড়াচ্ছে অল্প-স্বল্প। লোক জেগে উঠলে আমার কিছু করার থাকে না। আর দেখো, তুমি কাঁদছ, তাই তোমাকে ছেড়েও যেতে পারি না আমি। তোমার কী দুঃখ জানি না। তোমার দুঃখ দূর করার সামর্থ্যও আমার নেই। সে করবেন দুঃখহরণ শ্রীহরি। কিন্তু দেখো, আমি তোমার চোখের জল তো মুছিয়ে দিতে পারি।
মেয়েটি নড়ে উঠল এবার। পেছন ফিরেই মুখ নিচু করে বেরিয়ে এল সিঁড়ির তলা থেকে। ময়না বৈষ্ণবীর দিকে চাইল না। চোখ রাখল না চোখে। মেয়েটির কাঁধে হাত দিয়ে তাকে নিজের দিকে ফেরাল ময়না বৈষ্ণবী। দেখল তাকে। দিঘে চমৎকার। আড়ে কম। রোগা যাকে বলে। আলুথালু শাড়ির তলায় দেখা যায় কণ্ঠার উঁচু হাড়। কুচো-কুচো চুল অবিন্যস্ত কিন্তু মোটা বিনুনি কাঁধ ছাপিয়ে পড়েছে বুকের বাঁ পাশে। পানপাতা ডৌলের মুখের রং কালো। মেয়েটিকে ভাল লেগে গেল ময়না বৈষ্ণবীর। সে আলতো ছুঁল মেয়েটির গাল। চাপা স্বরে প্রশ্ন করল— নাম কী তোমার?
মুখ নিচু করেই মেয়েটি বলল— কমলি।
অশ্রুবিন্দু নেমে আসছে চোখ থেকে। আঁচলে দ্রুত মুছে নিল সে। সরু সরু হাত নিরলংকার। ময়না বৈষ্ণবী তার কাঁধে হাত দিয়ে বলল— চলো। ওই সিঁড়িতে বসি। আমার পায়ে বড় ব্যথা গো। এই দেখো।
সে পা এগিয়ে দেয়। মেয়েটি নতমুখেই পায়ের দিকে দেখে। এবং সিঁড়ির দিকে এগোয়। সবচেয়ে নীচের ধাপে সে বসে পড়ে। যেন সে বুঝতে পারছে ওখানে বসলেই সবচেয়ে ভাল মুখ লুকোনো যায়।
মেয়েটির এক ধাপ ওপরে বসল ময়না বৈষ্ণবী আর পা ছড়িয়ে দিল সামনে। শীত চেপে বসছে তার শরীরে। শুধু পায়েই নয়, সারা শরীর জুড়ে আক্রমণ করছে বেদনা। সে শাড়িখানা ভাল করে জড়িয়ে নিল গায়ে। তারপর প্রশ্ন করল— বাড়ি কোথায়?
মেয়েটি চোখ মুছে জবাব দিল— পেতনির চর।
—হুঁ। তা হলে নাম তোমার কমলি। থাকো পেতনির চরে। তা কাঁদছিলে কেন? ঘোর রাত্তিরে সিঁড়ির তলায় বসে কাঁদছ! সে কি ভাল কথা!
কমলি জবাব দিল না। নতমুখে বসে রইল কেবল। ময়না বৈষ্ণবী শুধল— শংকরের সঙ্গে এখানে এসেছ?
কমলি ঘাড় নাড়ল।
—শংকর তোমার কে হয়?
—কেউ না। আমার বাবারে ট্যাহা দিছে। কইছে কইলকাত্তায় মেলা কাম আছে। লাগাইয়া দিব।
—কী কাম?
—কয় বলে মঠ-মন্দিরত কাম দিব।
—ওকে চিনলে কোথা থেকে?
—আমি তো চিনি না। চেনে আমার বাবা। কী করে চেনে বলতে পারব না।
—কাজ করতে অত দূরে যাচ্ছ কেন তুমি?
—কাজ পাব কোথায়? চরে কাজ নেই।
—তোমরা বৈষ্ণব?
—তা তো জানি না।
—এখন কাঁদছিলে কেন? বাড়ির জন্য মনখারাপ করছে?
কান্নার বেগ রুদ্ধ হয়েছিল খানিক। আবার তা ঢলে নামল। বলল সে— এখানে মন টিকছে না। শংকরকাকা কবে আসবে, কবে নিয়ে যাবে!
ময়না বৈষ্ণবী থামল কিছুক্ষণ। কেন ভাল লাগছে না জিগ্যেস করল না তখনই। ঠিক যতটুকু প্রশ্ন ততটুকুই জবাব দিচ্ছে মেয়েটা। তবে এটুকু সে বুঝতে পারছে, এই মেয়েটির কান্না বাড়ির জন্যই নয় একান্তভাবে। তা হলে সে শংকরের সঙ্গে চলে যাওয়াকেই সমাধান বলে ভাবত না। এবং মেয়েটি চাপা স্বভাবের। সে কী-ই বা করতে পারে! যদি সে জানতেও পারে মঠে কোনও অনর্থ ঘটেছে, তা হলে তার করার কিছু নেই। নাকি আছে কোনও পথ, যিনি দেখাবার, দেখাবেন। সে আলতো স্বরে গুনগুন করল-
খুলে বল, খুলে বল সখারে
বল
তোর মরমের কথা
বল
বেদনা আজিকে বাঁটিয়া লব হে
বেদনা
বুক ফেটে যাইছে, তোর মুখ দেখে
বুক
ও কানাই রে, ও কানাই, কানাই
বল
খুলে বল সখা, খুলে বল সখা
বল
গান থামিয়ে নরম স্বরে সে প্রশ্ন করে এবার— বিয়ে-শাদি হয়েছিল রে মেয়ে?
কমলি গালে হাত রেখে বসে ছিল। হাত সরিয়ে মাথা নাড়ল। ময়না বৈষ্ণবী বলল— তা মেয়ের তো এখন বিয়ে করে ঘর-সংসার করার কথা। কলকাতায় কাজ করতে পাঠাচ্ছে কেন বাবা?
কমলি মুখ খুলল— বড় অভাব গো দিদি। আমার পরে আছে আরও চারজন। চরে তো তেমন কাজকর্ম নেই। যত না কাজ তার চেয়ে লোক বেশি। এ-পারে এসে কাজ করে অনেকে। বাবার সে সাধ্য নেই কেন-না তার রুগণ শরীর। এক ছটাক জমির ওপর কাঁচা ঘর করে কোনওক্রমে টিঁকে আছে তারা। কাজ না করে উপায় কী!
ময়না বৈষ্ণবী যথার্থই দুঃখিত বোধ করে। বলে- আহা! বড় দুঃখ গো আমার মেয়ের। কমলি চুপ করে থাকল। ময়না বৈষ্ণবী ভাবছে, যেসব মেয়ে আসে শংকরের সঙ্গে, তাদের সকলেরই বুঝি এমনই ইতিহাস। সকলেরই আগমনের হেতু ওই দারিদ্র্য। চরম দারিদ্র্য না হলে বাবা-মা যুবতী মেয়েকে কাছছাড়া করে কাজ করতে দূরে পাঠায় না। সব মেয়েই এই প্রয়োজন বুঝে সম্মত হয়ে আসে কি না সে জানে না। তবে কমলি এসেছে। কিন্তু কমলির বাবাকে শংকর টাকা দিয়েছে কেন তা ময়না বৈষ্ণবীর বোধগম্য হল না। এ কি কমলির উপার্জনের অগ্রিম? নাকি এ-ও একধরনের ক্রয়? মেয়ে যদি রোজগার করে টাকা পাঠায় সে একরকম। কিন্তু সে কোথায় যাবে কী কাজ করবে কোনও ঠিক নেই, মেয়ের বাবা টাকা পেয়ে গেল! সহসা এক দুর্ভাবনা ময়না বৈষ্ণবীকে গ্রাস করে। এই যে মেয়েটি লুকিয়ে কাঁদছিল, তা কি আক্রান্ত হয়েছিল বলে? কে আক্রমণ করতে পারে? পারে অনেকেই। তবে শংকরের রেখে যাওয়া মেয়েকে প্রথম রাত্রেই ব্যবহার করার ক্ষমতা ধারণ করে নিঃসন্দেহে একজন। ময়না বৈষ্ণবী জানে, এই রাতে সে কোনও ব্যবহৃত নারীকে আহ্বান করেনি। সে এবার সরাসরি প্রশ্ন করে- দেখো মেয়ে, তোমার কষ্ট আমি বুঝি। কিন্তু তোমার এই লুকিয়ে কান্না কেন? বলতে না ইচ্ছা হয়, বোলো না। কিন্তু এমন অন্ধকারে একলা বসেও থেকো না। অচেনা জায়গা তোমার। ধর্ম নষ্ট হলে মুখ দেখাবে কোথা?
কমলি হাঁটুতে মাথা রেখে গুঙোয়। যেন মাথা হাঁটুর শক্ত হাড়ের ধাক্কায় ভেঙে ফেলবে— এমনভাবে ঠোকে। ময়না বৈষ্ণবী তার পিঠে হাত বুলিয়ে বলে— আয় দেখি, আমার কাছে এসে বোস।
শোকগ্রস্ত মেয়েটির কাছে এখন এই ডাক বড় মধুর লাগল। ঘর ছেড়ে আসা মেয়ে এক দরদিয়া মানুষের কোলে মুখ রাখার জন্য সরে এল এক ঝটকায়। ময়না বৈষ্ণবী তাকে সাপটে নিলে সে আকুল কান্নায় ভেঙে পড়ল তার কোলে। তার চিৎকৃত কান্নার আবেগ বৈষ্ণবীর ত্বক, পেশি, অস্থি ও পোশাকসমূহে বাধা পেয়ে গুমরোনো শব্দ করল। কমলিকে সময় দিল বৈষ্ণবী। দীর্ঘ সময়ের গুঙনো কান্না সবেগে প্রবাহিত হলে চিত্তে আরাম প্রলেপ দেবে, বৈষ্ণবী তার প্রতীক্ষা করল।
অবশেষে উঠে বসল কমলি নামের মেয়েটি। তার ভেজা গালে ও কপালে চুল লেপ্টে আছে। চোখ লাল হয়েছিল আগেই। এবার ফুলে উঠেছে। ময়না বৈষ্ণবী চারপাশ দেখে নিচ্ছে একবার। কেউ কি জেগে উঠল? উঠলে অন্য কিছু নয়। মধ্যরাত্রে দুটি নারীর পাশাপাশি বসে থাকা, তারা পরস্পর অচেনা হলেও অস্বাভাবিক নয়। সেক্ষেত্রে কমলির কথাগুলি আর শোনা হবে না। সে বুঝতে পারছে, কমলি এখন বলতে উদ্যত। আর সে কৌতূহলে টান-টান। সে টের পাচ্ছে, এ কৌতূহল বর্ষকালের পুরনো। সে বোঝেনি। জানেনি তার অন্তরে এত জিজ্ঞাসা। কোথা হতে আসে এই মেয়েরা। যায় কোথা! আজ হোক। সব জিজ্ঞাসার নিরসন হোক। কিন্তু হবে কি?
কমলি ঘোরের মধ্যে থেকে বলল— শংকরকাকা যাবার সময় বলে গেল, এখানে থাক দু’- চারদিন। বাবাজির সেবা-যত্ন কর। আমি এসে নিয়ে যাব।
তার ঠোঁট কেঁপে-কেঁপে উঠছে। বেঁকে যাচ্ছে বর্ণনার কষ্টে। ময়না বৈষ্ণবী তাকে স্পর্শ করে থাকছে। সে বলছে— রাতে খাওয়ার পর ঘরে গেছি, এক দিদি এসে ডাকল। বলল, বাবাজি ডাকছে।
—কোন বাবাজি?
—ওই যে, বড় ঘরে থাকে। যেখানে আমরা ছিলাম তার নীচের ঘর।
—তোর সঙ্গে আরেকজন এসেছে?
—সে আলাদা। সে আমার চেনা নয়। শংকরকাকার চেনা।
—হুঁ! তা কী বলল বলরাম বাবাজি?
—বলে, মা আমার মাথাটা একটু টিপে দিবি আয়। আমি মাথা টিপলাম কিছুক্ষণ। আমার হাত ধরে বলে, আয় দেখি, বোস আমার সামনে। বাড়ির জন্য মন খারাপ করছে? বাঃ! কী নরম হাত! আর একটু সেবা কর তো মা। যা আলোটা নিবিয়ে দিয়ে এসে মাথাটা আর একটু টিপে দে। আমার কোনও সন্দেহ আসেনি দিদি। বাপের বয়সি মানুষ। আলো নিবিয়ে যেই না মাথায় হাত দিয়েছি, অমনি আমায়…
কথা শেষ না করে হাউহাউ করে কাঁদছে মেয়েটা, নাকের জল, চোখের জল সব ময়না বৈষ্ণবীর কোলে সঁপে দিচ্ছে। একটু সামলে নিয়ে ফের বলছে— আমি বললাম, ছাড়ো ঠাকুর! করো কী! আমি চ্যাঁচাব। বলে, চ্যাঁচালে কেউ আসবে না। সেবা করতে বেরিয়েছ, করো। আমার শাড়ি-কাপড় সব… কী আর বলব দিদি!
ময়না বৈষ্ণবীর চোয়াল শক্ত হয়ে উঠছে। কী ব্যভিচার। এই তবে চলে! যে-সব মেয়ে আনে শংকর, তারা সব এমনই সেবায় লাগে! সে তীক্ষ্ণকণ্ঠে বলে জানা নেই, শোনা নেই, কেন যে এলি মরতে!
কী করব বলো! বাড়িতে খেতে পাই না। পরের থেকে চেয়ে-চিন্তে ভিখিরির মতো বাঁচা। তা সে গরিবের চরে ভিক্ষেও কি সহজ? পরনের কাপড় নেই। ভাইবোনগুলি না খেতে পেয়ে শুকিয়ে কাঠি। কাজ-কাম রোজগার না করলে একদিন হয়তো না খেতে পেয়ে মারা যাব সক্কলে।
—যে-কাজের সন্ধানে যাচ্ছ, তার চেয়ে না খেতে পেয়ে মরা ভাল।
কমলি কেঁপে ওঠে। বলে— কী হবে দিদি!
ময়না বৈষ্ণবী তাকে জড়িয়ে ধরল। কিছুক্ষণ কেউ কোনও কথা বলল না। দু’ ভাষায় ভাবনা করে তারা কিন্তু তাদের প্রাণের জবানে কোনও তফাৎ নেই।
গোটা মুর্শিদাবাদকে ভাগীরথী যে দুভাগে ভাগ করেছে, সেই রাঢ় ও বাগড়ির ভাষায় ও সংস্কৃতিতেও সে ঘটিয়ে দিয়েছে পার্থক্য। ময়নামতী রাঢ়ের মেয়ে। তার ভাষায় রাঢ়ী টান। তাদের বাঁশুলি গ্রাম বীরভূমের লাগোয়া ছিল বলে, বীরভূমের ধরনও কিছু ঢুকে আছে। কিন্তু কমলি চরের মানুষ। বাগড়ির এ চর বড় বেশিদিনের নয়। এখানে চলেও বাগড়ির ভাষা। সংস্কৃতি এখানে খুব স্পষ্ট হয়ে দেখা দেয় না। নিত্যকার প্রাণধারণেই এখানকার অধিকাংশ মানুষের শক্তি ক্ষয়ে যায়। সকল সমব্যথী মানুষের হৃদয়ের ভাষা যেহেতু এক সেহেতু কমলি ও ময়না বৈষ্ণবীর ভাষা মিলেমিশে যাচ্ছে। ময়না বৈষ্ণবী এই রোগা সরল দরিদ্র মেয়েটিকে রক্ষা করার মমতা মনে মনে বোধ করছে এখন। সে চাইছে এই ব্যভিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে। কিন্তু কোথায় এবং কীভাবে করবে ভেবে পাচ্ছে না। সে নরম করে বলল— কমলি বাড়ি যাবি? আমি তোকে দিয়ে আসব।
কমলি মাথা নাড়ে। যাবে। আহ্লাদী গলায় বলে- তুমি আমাদের বাড়িতে থাকবে তো দিদি? গরিব বলে আমাকে রেখেই চলে আসবে না?
ময়না বৈষ্ণবী বলে— তুই আমার মেয়ের মতো। মা কি মেয়ের ধন দেখে রে পাগলি!
কমলি শঙ্কিত গলায় বলে— কিন্তু এইসব… কেউ যদি জানে…
ময়না শান্ত করল তাকে। বলল— আমি বলব না কারওকে রে মেয়ে। আর সব কথা যে সবাইকে বলতে নেই তা নিশ্চয়ই তোমাকে বুঝিয়ে বলতে হবে না!
—কিন্তু শংকরকাকা বাবাকে যে-টাকা দিয়েছে, সে তো খরচ করে ফেলেছে বাবা।
—সে আমি কথা বলব শংকরের সঙ্গে। এর মধ্যে শংকর এলে তুই যাবি না। বলবি শরীর খারাপ। আর রাত্তিরের খাওয়া হলেই আমার কাছে চলে আসবি। বলবি আমার সঙ্গে চেনা বেরিয়েছে তোর। আমার পা-টা কেমন ফুলেছে দ্যাখ। সারুক একটু। তারপর তোকে নিয়ে যাব। এখন শো গিয়ে। ঘরে গিয়ে আর কান্নাকাটি কোরো না যেন।
লক্ষ্মী মেয়েটির মতো ঘাড় নাড়ল কমলি। আকাশে নীলের ছোপ ধরেছে। দু’-একটি কাক জেগে উঠছে তখন। জড়ানো স্বরে ডাকছে। ময়না বৈষ্ণবী উঠতে গিয়ে টের পেল তার শরীর তপ্ত হয়েছে। মাথায় ব্যথা। পা যেন আর চলতে চাইছে না। এতক্ষণ ঝুলিয়ে বসে থেকে পায়ে রস জমিয়েছে। জ্বরের তীব্র লক্ষণে সে শঙ্কিত হল। সুস্থ থাকলে সে দুনিয়াকে ডরায় না। কিন্তু আধি-ব্যাধি হলেই বড় মুশকিল। অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়।
পা টেনে-টেনে উঠছে যখন, কমলি সাহায্য করল তাকে। তাকে জড়িয়ে ধরল যেন কত আপন। বলল- দিদি, তোমার যে জ্বর আসছে। গা গরম।
—তা আসছে।
—আর তুমি এতক্ষণ এই হিমে বসে রইলে!
—সর্দিজ্বর নয়। এ হল ব্যথার জ্বর। ঠাণ্ডায় কিছু হবে না রে মা।
—কিন্তু কষ্ট তো হল তোমার! মাসি!
—দিদি বলতে ভাল লাগল না বুঝি!
—তোমার গায়ে মা-মা গন্ধ।