২৮
পৌষ মাসে পৌষা আন্ধি
দেশাচারে দোষ।
এই মাস গেলে হইব
বিয়ায় সন্তোষ।।
কীভাবে সে বেরিয়ে এল স্টেশন থেকে, সে জানে না। কখন সে পেয়ে গেল ফেরার বাস, তার মনে নেই। সে শঙ্কিত। সন্দিগ্ধ। বারবার তাকাচ্ছে চারপাশে। কেবলই মনে হচ্ছে তার—স্টেশনের সমস্ত লোক দলে দলে ছুটে আসছে তাকে ধরার জন্য। সে এক পলাতক মানুষ, চতুষ্কোনার নির্দিষ্ট বাস দাঁড়াবার জায়গা আসার আগেই বাস থামিয়ে নেমে পড়ল। ঘুরপথে হেঁটে দ্রুত পায়ে পৌঁছল বাড়ি। এই সুদীর্ঘ সময় সে চায়নি কারও চোখে তার চোখ পড়ুক। তাকে কুশল জিগ্যেস করুক কেউ। কেউ তার কণ্ঠ রুদ্ধ করা শ্বাস-প্রশ্বাস সম্বলিত গতি অবরোধ করে বলুক – ‘তা অনু, গিয়েছিলে কোথায়? শহরে নাকি?’ না, চায়নি সে এসব। উদ্বেগে, যন্ত্রণায়, ভয়ে সে উন্মাদ প্রায়। তার মধ্যে কোনও শোক নেই। শুধু ভীত পলায়নবৃত্তি। আত্মরক্ষার আকুল প্রবণতা।
বাড়ির উঠোনে পা দেবার সঙ্গে সঙ্গে তার এতক্ষণ ধরে রাখা স্নায়বিক শক্তি অন্তর্হিত হয়েছিল। সে তাদের খোলা দাওয়ায় বসে পড়ল আর সর্বশক্তি দিয়ে ডাকল —মা!
সুমিত্রা রান্নাঘরে। সুকুমার পোদ্দার খালি গায়ে তেল ঠাসছেন উঠোনের রোদ্দুরে দাঁড়িয়ে। অনির্বাণের বসার ধরনে কোনও অস্বাভাবিকতা তাঁর চোখে পড়ল। তিনি দ্রুত এগিয়ে এলেন। ব্যগ্রভাবে জিগ্যেস করলেন—কী? কী হয়েছে অনু? শরীরটা খারাপ লাগে?
সুমিত্রা ছেলের ডাক শুনেছেন। কিন্তু বোঝেননি এত কিছু। বেলা পড়ে আসছে। শীতের বেলা, কাজ ফুরোতে না-ফুরোতে পড়ে আসে। এত বড় সংসারের কাজ—তিনি দ্রুত হাতে গুছিয়ে তুলছেন। ছেলে বাড়িতে থাকলে হাজার প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে মা-মা করে। সব সময় কাজ ফেলে আসা যে যায় না। কাজ থেকে ছেলের মুখ দেখে আতঙ্কিত বোধ করলেন সুকুমার পোদ্দার। কর্কশ স্বরে বললেন—শুনছ, কী করো কী এতক্ষণ! আসো একবার।
সুমিত্রাও ছুটে এলেন তখন। আর এল ঘরের কাজে বহাল কয়েকজন। কয়েকজন মুনিষ, যারা দুপুরে সুকুমার পোদ্দারের গৃহে আহারাদি সারে।
অনির্বাণ একটি খুঁটিতে এলিয়ে বসে আছে। তার চোখে কোনও ভাষা নেই। এই ভরা পৌষেও সে ঘামছে। তার হাঁ-মুখ থেকে লালা বেরিয়ে আসছে। সারা মুখে কালি পড়া। চোখে নির্বোধ দৃষ্টি। কালো মণিদুটি যেন লুকোবার অবকাশ খুঁজছে ওপরের পাতার আড়ালে। এলিয়ে বসে থাকতেও সে পারছে না। টলে পড়ে যাচ্ছে। তাকে দেখাচ্ছে বিকারগ্রস্ত কিংবা বিষে ক্লিষ্ট মানুষ। সুকুমার পোদ্দার তাকে ধরে ঝাঁকুনি দিলেন। সুমিত্রা ঠান্ডা জল ছিটিয়ে দিলেন চোখে-মুখে। সে কেবল অস্ফুটে বলতে পারল— মা… তুলতুলি… মা….
কোনও এক উপলব্ধিতে সুকুমার পোদ্দারের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল। তিনি স্বয়ং অনির্বাণের কাঁধ ধরে তুললেন। যেন এই মুহূর্তে ছেলেকে একবার অন্তত দাঁড় করিয়ে দিতে পারাটাই তাঁর জীবনের মহত্তম লক্ষ্য। কিন্তু অনির্বাণ মেরুদাঁড়াহীনের মতো পড়ল ভাঁজ হয়ে।
রমাপদ নামে যে-লোকটা পেতনির চর থেকে জন খাটতে আসে, সুকুমার তাকে নির্দেশ দিলেন পায়ের দিকটা ধরতে। সঙ্গে হাত লাগাল আরও দু’জন। ধরাধরি করে অনির্বাণকে দোতলায় নিয়ে তার নিজের বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হল। সুমিত্রা একবার বলতে গিয়েছিলেন- এখন না হয় একতলাতেই শুইয়ে দাও।
—না।
দৃঢ় স্বরে বলেছিলেন সুকুমার পোদ্দার। তারপর উঁচু গলায়, সকলকে শুনিয়ে বলেছিলেন- সকাল থেকেই তো ওর শরীর খারাপ। এই দশ মিনিট আগে বেরুল। রোদ্দুরে অজ্ঞান হয়ে গেছে।
সুমিত্রা বড় বড় চোখ করে শুনছিলেন। তিনি নিজে জানেন, অনির্বাণ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল অন্তত সাড়ে ন’টায়। কিন্তু তিনি প্রতিবাদ করলেন না। এ পর্যন্ত যতখানি চিনেছেন স্বামীকে, বুঝেছেন, এই কথাগুলি বলার পেছনে তাঁর কোনও উদ্দেশ্য আছে। কোনও উদ্দেশ্য ছাড়া বেফাঁস কোনও কথা বলার লোক তাঁর স্বামী নন। জগতের সকল কর্মেই আছে তাঁর সূক্ষ্ম হিসেব। নিটোল জাল বোনা। সুমিত্রা শুনেছেন, অল্প বয়সে এই মানুষেরই কাব্যচর্চার শখ হয়েছিল।
রান্না-বান্না পড়ে রইল। তিনিও দোতলায় উঠে গেলেন। এক আশঙ্কা ঘন হচ্ছে তাঁর মধ্যেও। কী হয়েছে! কী বলতে চাইছিল অনু! সাংঘাতিক কিছু না হলে সে কি বাবার সামনেই তুলতুলির নাম উচ্চারণ করতে পারত!
অনির্বাণকে শুইয়ে দিয়ে নেমে এল রমাপদ ও অন্যান্যরা। সুমিত্রা সিঁড়ির উপরের ধাপে দাঁড়িয়ে কাজের লোকগুলিকে বিবিধ নির্দেশ দিয়ে ছেলের ঘরে এলেন। সুকুমার পোদ্দার চোখের ইশারা করলেন দরজা বন্ধ করার জন্য। সুমিত্রা দরজা বন্ধ করলেন। অনির্বাণ একবার ঘোলাটে চোখে চারপাশ দেখল। থেকে থেকে কাঁপুনি আসছে তার। কোনও বোধ সঠিকভাবে কাজ করছে না ভেতরে, কেবল বাঁচার আকাঙ্ক্ষা। সে বাবাকে দেখতে পেল। মাকে দেখতে পেল। তার মনে হল, তার পেছনে ধাবমান লোকগুলিকে ঠেকাতে পারেন তার বাবা। অসীম ক্ষমতাধর, প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন তার বাবাই একমাত্র। সে ছটফট করতে করতে বলল—বাবা, ওরা কি এসে গেছে?
—কারা?
—ওই… ওই… লোকগুলো?
—কারা? কোন লোক? —স্টেশনের… স্টেশনের…
—কেউ আসেনি। আমরা ছাড়া এখানে কেউ নেই। তোর কী হয়েছে?
— মা… মা…
সুমিত্রা ছেলেকে স্পর্শ করলেন। তাঁর স্বর কাঁপছে। দেহ কাঁপছে। বিহ্বল হয়ে যাচ্ছে উচ্চারণ।
—তুই কোথায় গিয়েছিলি অনু? তোর কী হয়েছে?
—মা… আমি আর তুলি স্টেশনে…. স্টেশনে গিয়েছিলাম… বহরমপুর… ও লাফ দিল… ট্রেন আসছিল… ও… ও…
—সর্বনাশ! তুলি কোথায় এখন অনু?
—ও নেই মা… ও নেই… আত্মহত্যা… আত্মহত্যা…
এতক্ষণে শোকগ্রস্ত হল তার চেতনা। জাগ্রত হল। নিরাপদ বেষ্টনীতে, সমবেদনা ভাগ করে নেবার পরিবেশে, এতক্ষণে সে বোধ করতে পারল যে তার বেঁচে থাকার কথা ছিল না কিন্তু সে বেঁচে আছে। ভয়ঙ্করভাবে বেঁচে আছে। হায়! এই বেঁচে থাকা কী জঘন্যভাবে গ্লানিময়। সে ডুকরে কাঁদল। কাঁদতে থাকল। সুমিত্রার কোলেই সে বমি করল একবার। সুমিত্রা আঁচল দিয়ে ছেলের মুখ মুছিয়ে দিলেন। বমির জন্য তাঁর কোনও ঘৃণাবোধ জাগল না। সুকুমার পোদ্দার তেলমাখা শরীরে বসে পড়েছেন বিছানায়। সুমিত্রা কাঁদছেন। আর অনির্বাণের কান্না তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই কান্নার নির্দিষ্ট কারণ সে জানে না। সে মরে যেতে পারল না বলে কাঁদছে কি? নাকি বেঁচে থাকতে পারল বলে কাঁদছে? সে কি তুলতুলির জন্য শোকগ্রস্ত হয়ে কাঁদছে? নাকি আত্মগ্লানি-কারণ সে-ই আত্মহত্যার জন্য তুলতুলিকে প্ররোচিত করেছিল।
সুকুমার পোদ্দার প্রায় আদেশের গলায় সুমিত্রাকে বললেন— কান্না থামাও। এখন কাঁদার সময় নয়। তুমি যে রাতে মাঝে মাঝে ঘুমের বড়ি খাও তার দু-একটা আছে?
—আছে।
—যাও দুটো বড়ি নিয়ে এস। একটু দুধ এনো সঙ্গে।
সুমিত্রা ভাল করে চোখ-মুখ মুছে বেরুলেন। পেটের কাছে বমি লেগে যাওয়া শাড়ি গুছি করে ধরে নিয়েছেন। এ শাড়ি আগে ছাড়তে হবে তাঁকে। বেদনায় আশঙ্কায় বুক ফেটে যাচ্ছে তাঁর।
বংশীর মা দাঁড়িয়েছিল বারান্দায়। সুমিত্রা বললেন—একটা শুকনো শাড়ি দাও বংশীর মা। শিগগির।
—কী হয়েছে গো?
সুমিত্রা বললেন—অনু বমি করেছে।
বংশীর মা তাড়াতাড়ি শাড়ি নিয়ে এল। সুমিত্রা ঘরের দরজা বন্ধ করে দারুণ ভাবনায় ডুবে গেলেন। তিনি বুঝতে পারছেন তাঁকে স্বাভাবিক থাকতে হবে। গ্রামে খবর এসে পৌঁছনো পর্যন্ত কিছুই প্রকাশ করা চলবে না। ঝড় আসছে। বড় ঝড়। সুমিত্রা মনে মনে ঈশ্বরকে ডাকেন। মনে মনে দশপুতুলের ব্রত মানত রাখেন। ছোটবেলা থেকে সকল কামনা-বাসনার জন্য দশপুতুলের ব্রত করেছেন। ইতু, মাঘমণ্ডল করেছেন। ছেলে হওয়া পর্যন্ত নিয়ম করে করেছেন। এখন আর ব্রত করা হয়ে ওঠে না। লক্ষ্মীর পুজো, সত্যনারায়ণ, ক্ষেত্রপূজা, অলক্ষ্মী পালন –এরই মধ্যে আছেন। আজ তাঁর মন আবার সেই ব্রতর কাছে চলে যাচ্ছে। তিনি বিড়বিড় করছেন— ঠাকুর! এ যাত্রা রক্ষা করো। হায় হায়! কেন মেনে নিলাম না। না হয় হত, গরিবের মেয়ে বউ হত! হায় হায়!
তাঁর খেয়াল হল, দশপুতুলের ব্রত পালন করতে এখনও তিনমাস বাকি। সেই বৈশাখে পূজা। তিনি দুধ গরম করতে করতে, ওষুধ খুঁজতে খুঁজতে সেই ব্রতকথা বিড়বিড় করতে লাগলেন—
এবার মরে মানুষ হব, রামের মতো পতি পাব।
এবার মরে মানুষ হব, সীতার মতো সতী হব।
এবার মরে মানুষ হব, লক্ষ্মণের মতো দেবর পাব।
এবার মরে মানুষ হব, কুন্তীর মতো পুত্রবতী হব।
এবার মরে মানুষ হব, দ্রৌপদীর মতো রাঁধুনি হব।
এবার মরে মানুষ হব, দুর্গার মতো সোহাগী হব।
এবার মরে মানুষ হব, পৃথিবীর মতো ভার সব।
এবার মরে মানুষ হব, ষষ্ঠীর মতো জেঁওজ হব।
হায় হায়! আজ এক বঞ্চিত কুমারীর আত্মহত্যার দিনে, তিনি, এক মধ্যবয়সিনী রমণী, কুমারীর ব্রত পালন করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। সেই মেয়েটির আত্মাই কি তাঁকে দিয়ে বলিয়ে নিচ্ছে এইগুলি? এবারের ভ্রষ্ট জীবন, অসম্পূর্ণ জীবনের সকল সাধ তার, রেলের চাকায় পিষ্ট হওয়ার পর মিশে গেছে হাওয়ায়, মিশে গেছে মাটিতে। সেই সবই ফিরে ফিরে প্রস্ফুটিত হয়ে উঠছে সুমিত্রার গোপন উচ্চারে। তুলতুলির ইচ্ছা সকল, সুমিত্রার ইচ্ছা হয়ে যাচ্ছে। এই ব্রতের মধ্যে যেন তাঁর এ জন্মের সকল অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা আছে। এভাবে ভেবে দেখেননি কখনও সুমিত্রা। তিনি শিউরে উঠলেন। যা পেয়েছেন, তাকে অস্বীকার করার এমন অনর্থব্রত তাঁর মনে পড়ল কেন! ছেলেকে দুধের গ্লাস ও ঘুমের বড়ি এগিয়ে দিতে দিতে তিনি আবার কাঁদতে থাকলেন। এরকম তিনি চাননি। জীবনে প্রেম-ভালবাসা একটু-আধটু সকলেরই হয়। তার জন্য একেবারে প্রাণ দিয়ে দেয় ক’জন!
তখন সুকুমার পোদ্দারের কণ্ঠ বাজল—অনু শোন, সুমিত্রা শোনো। ঘটনা যা ঘটে গেছে তা আর ফেরানো যাবে না। অনু সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল একথা কখনও বলবে না।
—কিন্তু বংশীর মা যে দেখল।
—দেখুক। তুমি বলবে বেরোয়নি। উঠোনে ঘোরাফেরা করছিল। কাল রাত থেকে শরীর খারাপ। বমি-পায়খানা করছে। আমি ডাক্তার ডাকতে যাচ্ছি।
—কোথায়? কোথায় যাবে?
—বহরমপুর। কেউ এলে দেখা করবে না। বলবে ছেলে অসুস্থ। মনে থাকবে?
—বহরমপুর যাবে? আমি একা থাকব?
—হ্যাঁ থাকবে। মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছি। রমাপদকে বলে যাচ্ছি। থাকবে। বাকিরা যেন খাওয়া হলেই মাঠে চলে যায়। বাড়িতে ভিড় জমানোর দরকার নেই।
সুকুমার পোদ্দার তেলগায়েই শার্ট চাপিয়ে নেমে এলেন। অনির্বাণের কান্নার বেগ কিছুটা কমে এসেছে। প্রাণপণে এক নির্বিঘ্ন, নিরুপদ্রব জীবনকে সে আঁকড়ে ধরতে চাইছে এখন। সুমিত্রা তার শিয়রে বসেছেন। এক জটিল ভয় তাঁর শরীর ছেয়ে আসছে। অবশ লাগছে। তিনি ছেলের মাথায় হাত রেখে বললেন—অনু। আমার কাছে লুকোস না। তুই-ও কি আত্মহত্যা করতে গেছিলি বাবা?
অনির্বাণ কোনও কথা না বলে চেপে চোখ বন্ধ করল। মুখ বিকৃত হয়ে গেল তার। সে-মুখের রেখায় রেখায় আঁকা গভীর যন্ত্রণা।
—হায় ভগবান! কী সর্বনাশ হতে যাচ্ছিল আমার! সর্বনাশী আমার ছেলেটাকেও মরার জন্য সঙ্গে নিয়েছিল?
ক্ষোভে দাঁতে দাঁত চাপলেন সুমিত্রা। এতক্ষণ ধরে তুলতুলির জন্য যে শোক ও সহানুভূতি তাঁর হৃদয় জুড়ে ছিল, সেইসব অন্তর্হিত হল। মন শক্ত করলেন তিনি। স্থির করলেন, ছেলেকে বাঁচাবার জন্য যতখানি মিথ্যে প্রয়োজন, বলবেন। অনির্বাণের চোখের পাতায়, গালে, বুকে আঙুল ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে তাপ নিলেন তিনি। সন্তানের বেঁচে থাকার তাপ। এবং সঙ্গে সঙ্গে সহদেব দাসের বউটির কথা মনে পড়ল। মনের মধ্যকার সদা জাগ্রত প্রহরী সেই মানুষটির কথা ভাবতে বাধ্য করল তাঁকে। আর তখন অনির্বাণের বন্ধ চোখের তলায় নেমে এল সেই দৃশ্য। ঝাঁপ দিচ্ছে তুলতুলি। তার সবুজ চাদর খসে পড়ছে। কাঁধের ব্যাগ ছিটকে পড়ছে। তীক্ষ্ণ স্বর বেরুচ্ছে তার গলা দিয়ে-আ-আ-আ-আ। তার মনে হচ্ছে সে যেন বলেছিল— অনুদা-আ-আ-আ।
সে কি ডেকেছিল? তাকে ডেকেছিল? হায়, সে কেন ঝাঁপ দিতে পারল না? সে কেন স্থবির হয়ে গেল! কেন তুলতুলিকেও পারল না আটকাতে! ট্রেন চলে যাচ্ছে তার সামনে দিয়ে আর লোক ছুটে আসছে। একজন তাকে বলল—আপনার সঙ্গে ছিল না মেয়েটা?
সে মাথা নাড়ছে। চেনে না। মেয়েটাকে চেনে না। আর চিনতে চায় না সে। তুলতুলি নামের কারওকে চিনতে চায় না। ঘুম এসে যায় তার। ক্লান্ত মস্তিষ্কে ওষুধ ক্রিয়া করে। উপরের পাতা ধপ্ করে নেমে আসে নীচের পাতার ওপর।