১১৮
হাইড্র্যান্ট খুলে দিয়ে কুষ্ঠরোগী চেটে নেয় জল;
অথবা সে হাইড্র্যান্ট হয়তো বা গিয়েছিল ফেঁসে।
এখন দুপুর রাত নগরীতে দল বেঁধে নামে।
একটি মোটরকার গাড়লের মতো গেল কেশে
অস্থির পেট্রল ঝেড়ে—সতত সতর্ক থেকে তবু
কেউ যেন ভয়াবহভাবে প’ড়ে গেছে জলে।
তিনটি রিক্শ ছুটে মিশে গেল শেষ গ্যাসল্যাম্পে
মায়াবীর মতো জাদুবলে।
.
কেউ নেই আশেপাশে। মাথার ওপর আশ্বিনের এক আকাশ তারা। সামনে ভরাট জলঙ্গী শুয়ে আছে। পিছনে শাপগ্রস্ত ধুলামাটি গ্রাম। ওই দূরে ঘিরে আছে নদী ভাগীরথী।
তারা বসে আছে পাশাপাশি। দুই চোখে নিবিড় স্বপ্ন ভরা দু’জন যুবক। রাষ্ট্র তাদের দু’ভাবে অভিযুক্ত করেছে। একজন খুনি। শৃঙ্খলাভঙ্গকারী। একজন সন্ত্রাসবাদী।
তারা বসে আছে পাশাপাশি। দু’জনের দুই-দুই চোখ পরস্পর গভীর পাঠে রত। তারা, দুই পৃথক সত্তা, তবু একই স্বপ্ন ও বোধের অধিকারী। তবু তো পরস্পরে জানাজানি, দেয়ানেয়া, বিতর্ক-তর্ক আজও হয় নাই! বাহিরের আবরণ ফেলে দুইজন এখনও দেখায়নি বুক চিরে— অন্তরে লেখা কার নাম!
নীলমাধব বলছিল—তুমি যা চাও সিদ্ধার্থ, আমিও তাই চাই। সুন্দর, সমৃদ্ধ ভারত। বৈষম্যহীন, দুর্নীতিহীন এক দেশ। যেখানে রাষ্ট্র প্রকৃতই মানুষের জন্য সংগঠিত হবে।
সিদ্ধার্থ বলল—সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে কিছু গড়ে তোলা যায় বলে আমি মনে করি না নীলমাধব। এক সন্ত্রাস আরেক সন্ত্রাস ডেকে আনে।
নীলমাধব বলছে—সন্ত্রাস? কাকে সন্ত্রাস বলো তুমি? আত্মরক্ষার জন্য আমরা অস্ত্র নিয়েছিলাম। আমাদের কী ক্ষমতা! বলো! আমরাই তো সাধারণ মানুষ! একটি আদর্শ রাষ্ট্রই শেষ পর্যন্ত অহিংসার কথা বলার অধিকার রাখে। কিন্তু সে কোন রাষ্ট্র? যে-রাষ্ট্র দেশের নবজাতকের ওপর চাপিয়ে দেয় ঋণের সহস্ৰ একক? চাপিয়ে দেয় ধর্ম? চাপিয়ে দেয় অনাহার ও মরণ? যে-রাষ্ট্র নিজেই সন্ত্রাস সৃষ্টি করে, তার বিরুদ্ধে অহিংস লড়বে কী করে তুমি? ছ’টি গ্রাম নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। তাদের শিক্ষিত করে তোলা। বোঝানো। দেশ মানে কী! সরকার মানে কী! রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকের সম্পর্ক ঠিক কেমন! নাগরিক অধিকার বলতে কী বোঝায়? হাতে অস্ত্র ছিল না কিছু। শুধু ছিল বই-পড়া বিদ্যা। বোধ। একদিন এক রাজনৈতিক দলের কর্মীরা শাসিয়ে গেল। বলল, বিপ্লব মাড়ানোর ইচ্ছে থাকলে জিভ ছিঁড়ে নেবে। থামলাম না। কাজ চালিয়ে গেলাম। এরপর পুলিশ এল। ঘরে ঘরে ঢুকে শুরু করল তল্লাশি। বলল, এখানে অস্ত্রের চালান আসে। খুঁজল। পেল না কিছুই। শুরু করল মার। যাকে পেল মেরে পিঠ ফাটিয়ে দিল। আমরা সাবধান হতে শুরু করলাম। সিদ্ধার্থ, এভাবেই সাধারণ মানুষের বুকে ক্রোধ জন্মায়। এভাবেই হাতে বেআইনি অস্ত্র উঠে আসে।
—কোথাকার গ্রাম নীলমাধব? কোথাকার পুলিশ?
—ভারতের গ্রাম সিদ্ধার্থ। ভারতীয় পুলিশ। এই কি যথেষ্ট নয়? এই কি যথেষ্ট নয় যে তোমাকে মিথ্যে অভিযোগে ধরে জেলে পুরে দেবার চেষ্টা হয়েছিল?
—হুঁ! যথেষ্ট!
—তুমিই তো বলো, সিদ্ধার্থ! রাষ্ট্রীয় শক্তির বিরুদ্ধে কথা বললে রাষ্ট্র একেক সময় তার একেক নাম দেয়! রাজশক্তির বিরুদ্ধে তার নাম ছিল রাজদ্রোহিতা! ব্রিটিশের আমলে ছিল রাষ্ট্রদ্রোহিতা! এখন হয়েছে সন্ত্রাসবাদ!
—হ্যাঁ। কিন্তু নীলমাধব, সত্যিই সন্ত্রাস ছড়ায়, এমন সংগঠন কি নেই? ধর্মের জিগির তুলে হানাহানি জারি রাখে যারা, তাদের সন্ত্রাসবাদী বলা তো দোষের নয়। তারা সমর্থনযোগ্যও নয়! শুধুই কি আত্মরক্ষা? তারা প্রকৃতই ভয় দেখাতে অস্ত্রের সাহায্য নেয়। এমনকী টিকিয়ে রাখে অস্ত্রব্যবসায়। সন্ত্রাসের আড়ালে থাকে নানা লোভে লোভাতুর ব্যক্তিবর্গ। অস্ত্র যারা নির্মাণ করে, যারা বিক্রি করে, যারা দালালি করে, বিদ্রোহ টিকে থাকলে, যুদ্ধ লেগে থাকলে তাদের লাভের শেষ নেই। তা কি অস্বীকার করতে পারো তুমি?
—না। পারি না। কিন্তু একটা পথ, কিছু অশুভ শক্তির দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছে বলে আমরা কি ন্যায়ের পক্ষে থেকে যুদ্ধ করব না? সংগ্রাম করব না? শুধুমাত্র অস্ত্রের দালালের হাতে ক্রীড়নক হয়ে যেতে না হয় যাতে, তার জন্যই কি তোমার আমার একত্র হওয়ার প্রয়োজন নেই? আমাদের সুচেতনা কি সক্রিয় রাখতে সক্ষম থাকব না আমরা? সিদ্ধার্থ, বঞ্চিত অবহেলিত মানুষের কাছে, প্রয়োজনে অস্ত্র ধরার কথা কেন বলেছিলে তুমি? কোন প্রেরণায়?
—এ কথা আমি বলেছি, তুমি জানলে কী করে!
—জেনেছি! কারণ আমরা তোমার কথা জানতে চেয়েছিলাম।
—তোমরা কারা নীলমাধব?
—আমরা অনেক। অনেক এখন। পশ্চিমবঙ্গে আমরা তোমাকে চেয়েছি। তোমার অনেক শক্তি। সিদ্ধার্থ, তুমি মালদহে যাও, জলপাইগুড়ি যাও, দার্জিলিং যাও, কোচবিহার, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া যাও। যাও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায়। দেখো! দারিদ্র কী ভয়াবহ! কী বীভৎস!
—কিন্তু কী চাও তোমরা? রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল? তাতে কী লাভ? ক্ষমতা দখল করলেও তো ওই একই যন্ত্রের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। ওই দুর্নীতিগ্রস্ত রাজপুরুষ, ওই অশিক্ষার অন্ধকার, ওই দারিদ্রজনিত বিবেকবুদ্ধিহীনতা! তাতে কী লাভ?
—প্রকৃত নেতৃত্বের মাধ্যমে এই অপরিণত যন্ত্র নিয়েই এগিয়ে চলা যায়। এ কি তুমি মানো না? বিদ্রোহ করার জন্য স্পার্টাকাস সবজি কাটার ছুরি আর কাঁটাচামচকেও অস্ত্র করে নেয়নি?
.
স্পার্টাকাস! স্পার্টাকাস! সিদ্ধার্থ তাকায় নীলমাধবের দিকে। নীলমাধব কী? বাঙালি? বিহারি? ওড়িয়া? দক্ষিণী? গুজরাতি? মরাঠি? সে জানে না। নীলমাধবের পরিচয়, সে ভারতীয়। সে দেখে, তারার আলোয় নীলমাধবের বুদ্ধিদীপ্ত প্রত্যয়ী চোখ। ওই অপূর্ব চোখ ওই কালো শাণিত অভিব্যক্তি, ওই বলিষ্ঠ দীর্ঘ শরীরের অধিকারী মানুষটির কথার যুক্তি সে অস্বীকার করে না। সে-ও তো একই অভিজ্ঞতায় বিদগ্ধ। তবু সে প্রশ্ন করে। প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে নিজেরও ভাবনার অস্বচ্ছতা দূর করতে চায়। ইচ্ছে করে নীলমাধবকে উত্তেজিত করে বিরুদ্ধ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে। সে বলে মানি।
—তবে?
—আমি হত্যা চাই না অকারণ। রক্তপাত চাই না।
—আমিও চাই না। কিন্তু সিদ্ধার্থ, রাষ্ট্র যখন হত্যা করে তখন? এক দেশের সেনা যখন অন্য দেশের সেনা নিধন করে, বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়, জ্বালিয়ে দেয় মানুষ, তখন? বিচারক যখন ঠান্ডা মাথায় অপরাধীকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন? আমি আর তুমি রক্তপাত বন্ধ করতে চাইলেই তো হবে না। সমগ্র মানবজাতিকে একযোগে এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু তাতে কী? যুদ্ধ কি থেমে থাকবে তাতে? মানুষ মানুষের প্রতি জৈব অস্ত্র প্রয়োগ করবে না তখন? বিমান থেকে ছড়িয়ে দেবে না মারণ রোগের ভাইরাস? হ্যাঁ! রক্তপাত হবে না। কিন্তু রক্তদূষণ হবে। পচে গলে মরবে মানুষ! জানো না তুমি? জানো না? মির্জা তোমাকে অস্ত্র দিয়েছে। তোমার দিকে অস্ত্র তাক করলে তুমি মারবে না আমাকে? সিদ্ধার্থ, যতদিন একটিও শিশু বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে, অভুক্ত মারা যাবে, ততদিন বিদ্রোহ করে যাবে মানুষ। যতদিন একটিও মানুষের হাতে মারণাস্ত্র থাকবে, ততদিন দ্বিতীয় আরেকটি মানুষও অস্ত্র তুলে নিতে বাধ্য হবে। এই ভবিতব্য মানুষের। রাষ্ট্রের হাতে সামরিক শক্তি আছে সিদ্ধার্থ। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার হস্তান্তর হিংস্রতা বিনা হয় না। তুমি ক্ষমতা চেয়ে গাল পেতে দিলে রাষ্ট্রনায়ক চুম্বন দেবে না, কষাবে থাপ্পর। তুমি ক্ষমতা চেয়ে পিঠ পেতে দিলে রাষ্ট্রনায়িকা ওই পিঠে আলপনা আঁকবে না। কষাবে চাবুক। ষাটের দশকে যে বামপন্থীরা নিঃসংশয়ে সশস্ত্র সংগ্রামকেই বলত একমাত্র পথ, তারা আজ আপসকামী। সত্তরের যে নকশাল দল সশস্ত্র সংগ্রামেরই কথা বলত তারা বলে, বামফ্রন্ট জনগণকে বিপ্লববিমুখ করছে। অন্য রাজ্যে বিপ্লব শব্দটারই গর্ভপাত ঘটানো হয় যেন-তেন প্রকারেণ! রাষ্ট্রব্যবস্থা পালটায় সিদ্ধার্থ। ইতিহাস তার সাক্ষী! কিন্তু সেই পরিবর্তন ভুঁইফোড় নয়। প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থার থেকে পাওয়া অসাম্য ও বঞ্চনার সকল যন্ত্রণা স্তূপ হতে হতে একদিন বিস্ফোরণ হয়। হতে বাধ্য। কিন্তু প্রাণপাত বিনা, রক্তপাত বিনা, আজ পর্যন্ত কোনও অধিকার অর্জিত হয়নি। মানবেতিহাসের এ এক করুণ পরিণতি। অনিবার্য, ব্যতিক্রমহীন।
সিদ্ধার্থ অল্প হাসে। নীলমাধব হাতে হাত রাখে তার। বলে— তোমাকে দরকার।
সিদ্ধার্থ প্রশ্ন করে- কার?
—দেশের। তুমি এসো। যোগ দাও আমাদের সঙ্গে। তোমার বিরাট জনসমর্থন আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলে আমরা কী না করতে পারি? তা ছাড়া, তোমারও তো প্রয়োজন একটি সংগঠিত দল। নইলে তুমি খুন হয়ে যাবে।
সিদ্ধার্থ চুপ করে থাকে। হিংস্রতা কি হিংস্রতা নাশ করতে পারে? সে ভাবে। পারে না। বীজের ভিতর ফলের মতোই সুপ্ত থাকে নতুন হিংস্রতা। মানুষ তা জানে না? জানে। মানুষের বহু জ্ঞান, বহু প্রাচীন জ্ঞান, তার দ্বারা জানে। তবু হিংস্রতা দ্বারা হিংস্রতা নাশ করতে চায়। মহাভারতের যুদ্ধের মতো।
সে আকাশের দিকে তাকায়। অজস্র তারার ভিতর প্রিয়জনকে খোঁজে। প্রিয় প্রিয় প্রিয় নক্ষত্রদের খোঁজে। একটি তারা বড় হয়। বড় হয়। বড় হতে হতে হয়ে যায় ময়না বৈষ্ণবী। ভরাট অপলক চোখে সে তাকায় সিদ্ধার্থর দিকে। বলে বাবা! তোমার মুখের দিকেই আমরা চেয়ে আছি!
সিদ্ধার্থ দেখে ময়না বৈষ্ণবীর চারপাশে জ্যোতি-জ্যোতি! সেই জ্যোতির মধ্যে তার মা! সে ডাকতে চায়—– মাগো! মা!
.
তখন দোতারার শব্দ ভেসে আসে। তাকে জড়িয়ে সুরধ্বনি। সে-ধ্বনি যত স্পষ্ট হয়, সিদ্ধার্থ আবেগে বিস্ময়ে সোজা হয়ে বসে। এই সুর, এই স্বর তার চেনা। তার প্রিয়। তার নির্ভরতা। কিন্তু ওই শ্রীকণ্ঠের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অন্য এক স্বর। স্ত্রীলোকের কণ্ঠ! এ কে? এরা কে?
তখন ধ্বনি স্পষ্ট করে উদয় হয় দু’টি অবয়ব। নারী ও পুরুষ।
পুরুষ গায় ॥
আসমানের চন্দ্র ঢালে
মাটিতে জোছনা
মাটির বুকের মাঝে
ফলিয়াছে
কোটি ধানের সোনা রে
কোটি ধানের সোনা
নারী গায় ॥
দেলহুজুরে বলেছিল
শ্রী চাঁদ সুন্দরী
অমাবস্যা রাতে
উদয় বিনা আমি মরি
ওগো বিনা আমি মরি
—বৈরাগীঠাকুর!
সিদ্ধার্থ শান্ত উদ্ভাসে বলে। দুলক্ষ্যাপা দু’হাত জড়ো করে নত হয়। বলে—জয় গুরু! এ যে নক্ষত্রের অধিবেশন! এই দর্শনের লোভ কী ছাড়া যায়!
সিদ্ধার্থ নীলমাধবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় দুলুক্ষ্যাপার। বলে—ইনি আমাদের সহায়।
দুলক্ষ্যাপা হাসে। জাহিরাকে দেখিয়ে বলে—ইনি আমার সহায়িকা!
তার বলার ভঙ্গিতে সিদ্ধার্থ ও নীলমাধব দু’জনেই হাসে। জলঙ্গী নদীও এমনকী তোলে কিছু কলধ্বনি। তথাপি সিদ্ধার্থ সকলের অগোচরে বিষাদে অন্যমনা হল একটিবার। কারণ সে দেখেছিল, দুলুক্ষ্যাপা ময়নাবৈষ্ণবীর ভিটে হতে মাটি খুঁটে তুলে নিচ্ছে আপন ঝুলিতে! সে একটি প্রলম্বিত নিশ্বাস গোপনে ফেলল তার ভেবে নিল মহানিরপেক্ষতায়! কী উপসংহার দাঁড়ায়, যদি জাহিরা নামের নারী দুলুক্ষ্যাপার ইহকালের সঙ্গিনী হয়ে ফেরে? সে বিচিত্র, বর্ণময়। যেমন দুলুক্ষ্যাপা স্বয়ং। বিচিত্র, বর্ণময় তার বৈরাগীঠাকুর।
সে, অতঃপর দুলুক্ষ্যাপার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি সম্পাত করে। দুলুক্ষ্যাপা সিদ্ধার্থর মুখোমুখি নতজানু বসে। ঝোলা হতে বার করে ছোট একটি ঝুলি। সিদ্ধার্থর সামনে রাখে। বলে—তুমি এখানে এসেছ জেনে আর স্থির থাকতে পারলাম না বাবা। একটিবার দর্শন করতে সাধ গেল। সিদ্ধার্থ জিগ্যেস করে—আমি এখানে জানলে কী করে? দুলুক্ষ্যাপা রহস্যময় হাসে। বলে- যে জানতে চায়, সে আপনি জানে। তুমিই তো আমাদের পথ দেখাবে বাবা। তোমার টানে টানে আমরাও তোমার পিছু ছাড়ব না। যাক, এখন গুরুতর কথা কইছ, বেশি সময় নেব না। শুধু এই আমার অঞ্জলি দিলাম। এ না দিলে সাধনা শুরু করা যাচ্ছিল না। এ তোমার জন্য সিদ্ধার্থ।
সিদ্ধার্থ জিগ্যেস করে— এ কী?
দুলুক্ষ্যাপা বলে-ওই যে ব্যাখ্যান দিলাম, অঞ্জলি আমার। আমার নিবেদন। আমার জমিয়ে তোলা জগদ্দল সঞ্চয়। যা সঞ্চয় করেছি এতকাল, আমার তরে তা অপচয়ই ছিল। এ বোঝা আমার নামাও বন্ধু। নইলে বড় দায়।
সে দোতারায় আঙুল ছুঁইয়ে সুর সাধে—
তুমি যত ভার দিয়েছ সে ভার
করিয়া দিয়েছ সোজা
আমি যত ভার জমিয়ে তুলেছি
সকলই হয়েছে বোঝা।
এ বোঝা আমার নামাও বন্ধু, নামাও—
এক সুরেলা আর্তনাদ আছড়ে পড়ে চরাচরে। অব্যক্ত বেদনায় সিদ্ধার্থর বুক টনটন করে। দুলুক্ষ্যাপা সমস্ত শ্বাসবায়ু, সমস্ত প্রাণ, সমস্ত কষ্ট ও অক্ষমতার যন্ত্রণা উজাড় করে সুর তোলে বারংবার—না-মা-আ-আ-আ-ও। তার মুখ আকাশের দিকে, চোখে সুদূরের গাঢ় মায়ার আবেশ…! তার সমর্পণের আর্তিতে, সুরের ধারায় নীলমাধব শিহরিত হয়। তার সংগ্রামী চোখদুটি বাষ্পে ভরে ওঠে। মুহূর্তে নদী মিশে যায় মাটির সঙ্গে, মাটি মিশে যায় মানুষের সঙ্গে, মানুষ আকাশ একাকার হয়ে যায়। সে সিদ্ধার্থর জানু স্পর্শ করে। সিদ্ধার্থ তার হাতে চাপ দেয়। শব্দ যা দিতে পারে, স্পর্শ দিতে পারে তারও চেয়ে বেশি। সিদ্ধার্থ ও নীলমাধব, পরস্পরের নিকট দুই নতুন মানুষ, অতএব, স্পর্শ মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে নতুন এক জন্ম লাভ করে। আর দুলুক্ষ্যাপা আকাশ হতে ফিরে আসে মাটির সংলগ্ন। বলে – বড় আনন্দ আজ! বড় আনন্দ! মহাশক্তির সঙ্গে মহাশক্তির মিলনে কী না করা যায়! জগৎগুরু আজ সে কাজটি সমাধা করলেন। এখন উঠি বাবারা। রাত্তিরে মুস্তাকিমের আঙিনায় আজ মহাসভা! বড় আসর হবে গো! তোমরা এসেছ, তোমরা হলে এ গ্রামের রোগের মহৌষধি!
সিদ্ধার্থ বলে—অনেক গাইতে হবে বৈরাগীঠাকুর!
দুলুক্ষ্যাপা বলে—গাইব না? তোমার তৌফিক দাওয়াত দিয়ে রেখেছে। তা ছাড়া, কী জানো, এখন পূর্ণানন্দে আছি, সুর সাধতে হচ্ছে না, সাধন আপনি এসে কন্ঠে বসেছে। এখন চলি তবে?
সিদ্ধার্থ ফের জানতে চায়-এ কী দিয়ে গেলে?
—দেখো। পরে দেখো। এ আমায় পূর্ণ বৈরাগ্য হতে বঞ্চনা করছিল। আজ তোমার জিনিস তোমায় ফেরৎ দিলাম। বোষ্টুমি একটা কথা কী কইত জানো?
—কী?
—খালি পায়ের তলার মাটি, সেই মাটিতে তিলক কাটি। মানে কী জানো, নগ্ন পায়ে হেঁটে গেলে তবেই এ জগতের মহিমা তোমায় ধরা দেবে।
সিদ্ধার্থ হাসে। বলে—বেশ তো! এ তো বেশ স্বার্থপরতা!
দুলুক্ষ্যাপা চলে যেতে যেতে বলে— হ্যাঁ বাবা! তোমার জন্য আমি স্বার্থপর হতে রাজি। যার যা কাজ। তুমি হলে বোষ্টুমির আরাধ্য।
দোতারার শব্দ গ্রামের ভেতরে মিলিয়ে যেতে থাকল। দুলুক্ষ্যাপার সঙ্গে ছায়ার মতো চলে গেল তার নারী। সিদ্ধার্থ হাতে নিল দুলুক্ষ্যাপার ঝুলি। ভেতরে কিছু কাগজপত্র। কী আছে এতে? বৈরাগীঠাকুরের পাগলামি। পরে দেখবে—এই ভেবে সে কোলের ওপর রেখে দিল ঝুলিটি। ময়না বৈষ্ণবীর স্পর্শের মতো এই সন্ধ্যা, বোধিসত্ত্বের স্নেহের মতো নিবিড়, মায়াবী। দাদুর জন্য তোলপাড় উঠল তার ভেতরে। সে চুপ করে রইল। নির্জনতায় আবার তারা দু’জন। সে আর নীলমাধব।
.
এতক্ষণ যত কথা তাদের মধ্যে হয়েছে, তার রেশ ফিরে আসছে। সিদ্ধার্থ সিগারেট বার করে। শেষ দুটো। এ গ্রামে সিগারেট মেলে না। শুধু বিড়ি। এরপর হয়তো সে বিড়ি খাবে। একটি সিগারেট সে নীলমাধবের দিকে এগিয়ে দেয়। নীলমাধব হেসে মাথা নাড়ে। বলে – আমার কোনও নেশা নেই। চায়েরও নয়।
সিদ্ধার্থ তার দিকে নীরবে দৃকপাত করে সিগারেট ধরায়। টানে। ধোঁয়া ছাড়ে। নদীর হাওয়ায় হু-হু পুড়ে যায় কুচনো তামাক।
তাকে চুপ দেখে নীলমাধব বলে—আমাকে দিয়ে এত কথা কেন বলালে বলো তো? তুমি তো জানো এগুলো সিদ্ধার্থ।
সিদ্ধার্থ বলে—বিপ্লবের মধ্যেও থাকে অনৈতিক উত্থান। তুমি কি সে-বিষয়ে সচেতন?
—হ্যাঁ।
—বিপ্লবও একপ্রকার ক্ষমতা, আর ক্ষমতা মানেই তার মধ্যে নিহিত থাকে পীড়নভূত, তা জানো?
—জানি!
—তুমি আমার নিরুপায়ের কথা বলছিলে।
—হ্যাঁ।
—আমি নিরুপায় বলেই তোমাদের সঙ্গে যোগ দিলে তা আমার পক্ষে সম্মানজনক নয়। তোমাদের পক্ষেও কল্যাণকর নয়।
—ঠিক! আমি ক্ষমা চাইছি! তোমার বিচারবুদ্ধির ওপর আমার ভরসা আছে। তুমি ভাবো।
—আমি ভাবব।
—ভাবো।
তারা বসে থাকে পাশাপাশি। নদী বয়ে যায়। জলঙ্গী নদী। পদ্মা থেকে বেরিয়ে এ নদী হুগলিতে মিশেছে। শরতের স্নিগ্ধ হাওয়া জলঙ্গী হতে উঠে এসে দু’জনের চিত্তে দেয় শান্তিময় হাতের পরশ। নীলমাধব ধীরে ধীরে বলে—এই মুহূর্তে কার দিকে তাকিয়ে আছ সিদ্ধার্থ?
সিদ্ধার্থ বলে—মায়ের দিকে।
—আকাশে?
—হ্যাঁ।
—কী হয়েছিল?
সিদ্ধার্থ চুপ করে থাকে। তার নীরবতা নদীর জলকে ধাক্কা দেয়। জলে শব্দ ওঠে ছলাৎ ছলাৎ ছল, ছলাৎ ছলাৎ ছল। সেই ছলোচ্ছল প্রতিধ্বনিত হয় নীলমাধবের বুকে। সে বলে – সিদ্ধাৰ্থ, তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি।
সিদ্ধার্থ নীলমাধবের হাতে চাপ দেয়। বলে—আমিও।
—যদি আমার পথ না মেলে তবুও…
—তবুও…নীলমাধব…পথ যদি আলাদাও হয়, আমাদের স্বপ্ন এক হলে, সকল পথ সেই স্বপ্নেই তো মিলবে
—হ্যাঁ! সিদ্ধার্থ!
—বলো!
—তোমাকে দরকার।
—কার?
নীলমাধব নীরবে হাসে। তার হাসি প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায়। সিদ্ধার্থ বিস্তৃত অন্ধকারের দিকে চেয়ে থাকে। সেখানে প্রতীক্ষা করে আছে মহাকাল, তার উত্তরের জন্য। জীবন তাকে এক উত্তরের নিকটে এনেছে। স্পর্ধিত বর্তমান তাকে এক দায়িত্বের মুখোমুখি এনেছে। ইতিহাস তাকে এক সত্যের সম্মুখে এনেছে। সে জানে না কী অপেক্ষা করে আছে। নাকি জানে! সকলই অবগত হলেই সকলই অজ্ঞাত লাগে যে! সশস্ত্র সংগ্রামের অন্তিম শোণিতস্রোতে যায়। অগণিত মৃত্যুর ভিতর তার পদক্ষেপ। সেই মৃত্যুর পক্ষে সমর্থন পাওয়া কঠিন। রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের প্রতি আসমুদ্রহিমাচল শ্রদ্ধা আশা করা যায় না কখনও। এমনকী বর্তমান নির্মম দেখে তাকে। তার প্রতি অসম্মত হয়। তবু এই সংগ্রাম সভ্যতাকে কিছু দেয়। দিয়েছে চিরকাল। তাৎক্ষণিক ফলাফলে নয়। দিয়েছে ধীরে। বর্তমানের রক্ত পায়ে মেখেই ভবিষ্যের প্রগতি!
মানুষের দুর্ভাগ্য, আজও মৃত্যু ও ধ্বংসের রুধিরসিক্ত মাটিতেই তাকে গড়ে তুলতে হয় শান্তি ও প্রেমের ললিত আবাস।
সিদ্ধান্তের প্রস্তুতির মধ্যে সে শুনতে পায়, নীলমাধব বলছে জীবনানন্দ দাশের কবিতা—
ইতিহাস অর্ধসত্যে কামাচ্ছন্ন এখনো কালের কিনারায়
তবুও মানুষ এই জীবনকে ভালবাসে; মানুষের মন
জানে জীবনের মানে: সকলের ভাল ক’রে জীবনযাপন
কিন্তু সেই শুভ রাষ্ট্র ঢের দূরে আজ।
চারিদিকে বিকলাঙ্গ অন্ধ ভিড়— অলীক প্ৰয়াণ।
মন্বন্তর শেষ হ’লে পুনরায় নব মন্বন্তর;
যুদ্ধ শেষ হ’য়ে গেলে নতুন যুদ্ধের নান্দীরোল;
মানুষের লালসার শেষ নেই
উত্তেজনা ছাড়া কোনো দিন ঋতু ক্ষণ
অবৈধ সংগম ছাড়া সুখ
অপরের মুখ ম্লান ক’রে দেওয়া ছাড়া প্রিয় সাধ
নেই।
কেবলি আসন থেকে বড়ো, নবতর
সিংহাসনে যাওয়া ছাড়া গতি নেই কোনো।
মানুষের দুঃখ কষ্ট মিথ্যা নিষ্ফলতা বেড়ে যায়।
.
শুনতে শুনতে পুনর্বার বোধিসত্ত্বকে মনে পড়ে সিদ্ধার্থর। ব্যথায় বুক টনটন করে। তার ঘোর কান্না পায়। প্রবাহিণী গঙ্গা বাতাসে বারতা দেয় সিদ্ধার্থর বেদনায় সহানুভূতিশীল—আছেন, তিনি আছেন!
.
তখন গঙ্গার বাতাস হতে কুপির আলোটুকু আড়াল করছিল তীর্থ! তার হাতে খাতা কলম। সড়কের ওপর তাদের প্লাস্টিকের আস্তানায় সে। যেটুকু টাকা ছিল ব্যাঙ্কে, তাই দিয়ে বহরমপুরের বস্তিতে একটা ঘর নেওয়া যেত, তার পর? সে ভাবে না! করবে কিছু! করতে হবে। কেবল সুমিকে নিয়ে যেতে পেরেছেন তাদের মামা। ভাঙা সড়কে প্লাস্টিকের ছাউনি দেওয়া গৃহে ওই কিশোরী মেয়েটি নিরাপদ নয়। সাধারণ চাষি তিনি। সাধারণ ঘর। তবু সকলকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বলাই মণ্ডল যেতে রাজি নন। বলেন—নিজের ঘর বাড়ি ছেড়ে কোথায় যাব?
সারাদিন ঠায় বসে থাকেন জলের দিকে চেয়ে। যাকে পান, আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলেন— ওইখানে ঘর ছিল! ওইখানে জমি! দেখতে পাচ্ছ? দেখো!
মায়া বলেন—থাক! যেতে যখন চায় না! বর্ষা এলে দেখা যাবে।
কী দেখা যাবে? কী? চতুর্দিকে অনিশ্চিত অন্ধকার। তবু ওই অন্ধকারে নদীগর্ভে আলো মিটমিট করে জ্বলে। জলে নিমজ্জিত বিদ্যুতের খুঁটি প্রেত হয়ে দাঁড়ায় সটান। বাতি জ্বালে। বাতি নিভে যায়। সে আলো আড়াল করে আর কথা শুনতে পায়। আলোচনা।
সিধুবাবুই নাকি খুনটা করেছে।
আমার বিশ্বাস হয় না।
আমারও না।
এগুলো হল চক্রান্ত। লোকটাকে নিকেশ করার চক্রান্ত।
তা যা বলেছ।
ওই একজনই তো ছিল, ভাবত।
হুঁ! ভাবত আমাদের জন্য!
সে-ই বলেছিল ঠিক কথা। বোল্ডার দিয়ে পাড় বাঁধাতে বারণ করেছিল।
তোমরাই তো চ্যাঁচালে! দিতে হবে, দিতে হবে!
তুমি যেন মুখটি বুজে ছিলে।
কী করে বুঝব ভাই! বুঝতে বুঝতেই কবরে যাবার দিন ঘনিয়ে এল।
হ্যাঁ। সে কবর আমরা নিজেরাই খুঁড়লাম।
এখন এসব নিয়ে কাজিয়া করে কী লাভ? কী করে খাবে, তা ভাবো।
সিধুবাবু থাকলে ব্যবস্থা একটা হত।
শুনি এখন পালিয়ে রয়েছে।
তা না গিয়ে করবে কী? আগে তো বাঁচতে হবে। ঠাকুর তারে সুস্থ রাখুক। ফিরে আসতেও পারে।
আসবে! ফিরে আসবে!
আসুক! ফিরে আসুক! আমাদের তাকে দরকার!
.
দূর হতে কান্না ভেসে আসে। কোন ঝোপড়িতে কে কাঁদে! সারাক্ষণই কেউ-না-কেউ। এর কান্না ও তুলে নেয়, সে ক্লান্ত হলে তুলে নেয় অপরজন।
তীর্থ দপদপে শিখার দিকে তাকায়। দপদপে শিখা। হাত দিয়ে হাওয়া আড়াল করে। দেখে শিখা! দেখে শিখার পশ্চাতে থাকা জমাট আঁধার! আর অনুভব করে! কী অনুভব করে? কী কী কী?
আজ এই সড়কের বস্তিতে একজন সাংবাদিক এসেছিলেন। সঙ্গে ক্যামেরা নিয়ে লোক। একজন অসামান্য কবির সর্বহারা জীবনের ছবি তুলে নিতে। সংগ্রহ করতে, তাঁর বক্তব্য, সাক্ষাৎকার!
তীর্থ খবর দিল যখন, বলাই মণ্ডল এলেন, খালি গা, লুঙ্গি পরা, উশকোখুশকো চুল। দাঁড়ালেন। সাংবাদিক আপন পরিচয় দিতেই তিনি একটানে খুলে ফেললেন পরনের লুঙ্গি। সর্বসমক্ষে, খোলা আকাশের নীচে, সূর্যের প্রভূত আলোয় কবি দাঁড়ালেন উলঙ্গ-উদোম।
মুখ লুকিয়ে তারা চলে গিয়েছিল। মায়া ডুকরে কেঁদেছিলেন। সারাদিন। তীর্থ কাঁদেনি। বাবাকে সে চেনে। চেনে। সে বোঝে এ কোন যন্ত্রণা যা তাঁকে নগ্ন অবধি করে দেয়!
এবং তার পর থেকেই তার মস্তিষ্কে সে শুনতে পাচ্ছে পদধ্বনি। তাঁর পদধ্বনি। যাঁকে শুনতে পেতেন বলাই মণ্ডল। যাঁকে দেখতে পেতেন আমবাগানে, জলে, ভূমিগর্ভে।
সে কিনে এনেছে খাতা-কলম। এবং অপেক্ষা করেছে। তাঁর আগমন অপেক্ষা করেছে। এখন, সে টের পাচ্ছে উপস্থিতি তাঁর। এই মুহূর্তে তাঁর উষ্ণ নিশ্বাস তার কাঁধের ওপর, তার মুখের ওপর, ক্রমে ছেয়ে যাচ্ছে বুকে, ছেয়ে যাচ্ছে মাথায়, তাকে অধিকার করে নিচ্ছে সর্বাংশে, শুষে নিচ্ছে তার তরুণ কোমল ওষ্ঠ—সে, লিখছে, অক্ষর অক্ষর লিখছে, লিখছে তার জীবনের প্রথম কবিতার প্রথম স্তবক।
গঙ্গা, দেবী কল্যাণী গঙ্গা, সকল কলুষপাপতাপবিনাশিনী এ দৃশ্যে বিমোহিতা, এতদ্দর্শনে শান্তিতে, মহাকাল মহারুদ্রের অসীম কোলে ঘুমিয়ে পড়লেন! তাঁদের ঘিরে প্রস্তুত হলেন উদয়ভানু। আবার ভোর হবে। তিনি আহ্বান করবেন—অয়ি গঙ্গে! আইস! কাল বহিয়া যায়…
(সমাপ্ত)