রাজপাট – ১১৫

১১৫ 

চিরকাল ইতিহাসবহনের পথে 
রক্ত ক্ষয় নাশ ক’রে সে এক জগতে 
মানুষের দিকচিহ্ন মাঝে মাঝে মুক্ত হ’য়ে পড়ে;
তা কোনো প্রশান্তি নয়, মৃত্যু নয়, অপ্রেমের মতো নয়, 
কোনো হেঁয়ালির শেষ মীমাংসার বার্তা নয়,
অচিহ্নিত সাগরের মতন তা, দূরতর আকাশের মতো;
পেছনের পার্শ্বের দ্রুতগতি চিহ্ন ও বলয় 
অন্তর্হিত হয়ে গেলে কূলহীন পটভূমি জেগে ওঠে; 

.

বিষণ্ণ হয়ে আছে সে। বড় দীর্ঘ এ বিষণ্ণতা। যদিও আকাশ নির্মল। মেঘ কেটে গেছে। বন্যাবিধ্বস্ত সব ডাঙাজমি ছেয়ে গেছে কাশফুলে। সমস্ত নাশকতা ঢেকে দিতে চেয়ে সে ধরণীরে করেছে বড় মনোরম। শিউলির গন্ধে মুছে গেছে মৃত গলিত পশুশবের উৎকট দুর্গন্ধের শেষতম রেশ। 

প্রকৃতি আপনার বিধ্বংসী খেয়াল ধুয়ে-মুছে দিতে চায়, মানুষকে ভুলিয়ে দিতে চায় বিনাশের প্রেতমূর্তি অমল ধবল সব মেঘ এনে, আকাশে ছড়িয়ে দিয়ে মুঠো মুঠো নীল আর শস্যবিনষ্ট ক্ষেত্রে সাদা শুভ্র কাশফুল দোলায় দোলায় জীবনেরে দেয় হাতছানি সৌগন্ধে আমোদিত শারদীয় সুষমায়। 

কিন্তু মানুষের স্মৃতি বড় সাংঘাতিক। সে কুরে কুরে খায় যাবতীয় বিচ্ছেদ-যন্ত্রণায় ভরা দিনগুলি রাত্রিগুলি নিরন্তর। তবুও জীবনের ধর্ম! তাকে অস্বীকার করে কে! 

জল নেমে গেছে। নদীকে দেখায় এখন ভরাট তৃপ্ত স্নিগ্ধ কল্যাণী। অস্থায়ী আস্তানা ছেড়ে চলে গেছে লোক। স্বগৃহ সন্ধানে গেছে স্বস্থানে। গৃহ নাই। আছে শুধু শূন্যতার হাহাকারে ইট কাঠ খিলানের স্তম্ভিত স্মৃতি। গড়ে নিতে হবে ফের। এই এইটুকুন সম্বল করে গড়ে নিতে হবে। 

অধিকাংশ বাঁশের বেড়ায় ঘিরছে ঘর। যাদের মেরামত করলে চলে যায়, তারা মেরামত করে নিচ্ছে। সরকারি সাহায্য এসেছে তাদের জন্য। অনুদান এসেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হবে কিছু সহায়তা। 

চতুষ্কোনায় অর্ধসমাপ্ত বোল্ডারের কাজ পড়ে আছে। এইবার হবে। সম্বৎসর ধরে ভবিষ্যের নিরাপদ দেওয়াল। 

তারও কাজ শুরু হবে এবার। অনেক অসমাপ্ত কাজ পড়ে আছে। অনেক প্রকল্প শুরুই হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা, ভবিষ্যৎ নিয়ে, সংগঠন নিয়ে, এইবার ভাবতে হবে তাকে। কাজ করতে হবে। অনেক অনেক। 

অথচ বিষণ্ণতা ঘিরে আছে তাকে। তীব্র শোকে দগ্ধে মরা দেখেছে সে। রেজাউল, রেজাউল! রেজাউলের জন্য তার বুক ফেটে যায়। অসহায় মানুষের জন্য প্রাণ কাঁদে। এই শতেক যন্ত্রণা দেয় তাকে কাজের উদ্যম। এ নয়, এ বেঁচে থাকা নয়। পোকামাকড়ের মতো এই জীবনযাপন! স্বপ্নতাড়িত সে, চায়, মানুষের সুনিশ্চিত, সুপরিকল্পিত, নির্মল, নিরাপদ, আনন্দ জীবন! 

হায়! দেখেছে সে ক্ষুধার তাড়না। সরকারি ত্রাণসামগ্রী পথে পথে লুট হয়ে গেছে। বিধ্বস্ত মানুষ হয়েছে হিংস্র, উন্মত্ত, সন্দিহান। সর্বত্র তাদের নিয়ন্ত্রণ করার মতো সহমর্মিতা নেই। 

এ অঞ্চলে ত্রাণ সাহায্য যতটুকু পৌঁছেছিল, তা যথেষ্ট ছিল না। সে দল নিয়ে চালের আড়তে গিয়েছিল। মালিকের অনুমতি বিনাই বস্তা বস্তা চাল সে প্রায় লুঠ করেছিল আশ্রিতের খাদ্যাভাব ঘুচিয়ে দেবে বলে। সমস্ত আড়তদার ব্যবসায়ী মালিকের ক্রোধ তার ওপর। হোক ক্রোধ-সে পরোয়া করে না। অন্ধকারে সে সকলই দেখেছে। নিয়মিত অন্ধকারে পৌঁছচ্ছে ত্রাণের সামগ্রী আর সকালের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক থেকে নির্দ্বিধ পাচার হচ্ছে চিনি, টারপোলিন চাদর, ডাল, আটা, এমনকী মোটা চাল অতি নিম্নস্থ মানের দিক দিয়ে। 

প্রথম রাত্রে এমন পাচারের খবরে সে মর্মাহত হয়েছিল। সে জানে, এই কাণ্ডে ছিল নেতৃবৃন্দ দ্বারা আহ্লাদিত জন। তারা দিনে ত্রাণকর্মী, রাত্রে লুঠেরা। দিনে চাঁদাবাজ, রাত্রে ডাকাত। দিনের দেবদূত, রাত্রির অন্ধকারে হাত টানে আশ্রিতা যুবতী মেয়ের। নির্মম, অকরুণ, ত্রাণতৎপর চামড়ার নীচে লালন-পালন করে ঘৃণার্হ লোলুপতা। 

সে তখন বাছা বাছা ছেলে নিয়ে পাহারাদারি সমিতি গড়ে দিল। অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা সেইসব সচেতন সদস্যের তাড়নায় লুঠতরাজ বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু সে জানে, সে হয়েছে চক্ষুশূল। সে পরোয়া করে না। সাধারণ মানুষের চোখে ভালবাসা দেখেছে সে। সেই তার পরম সম্পদ! কেউ ভালবাসে, কেউ ঈর্ষা করে, কেউ ঘৃণা—এ নিয়েই চলছে জীবন। তার রাজনৈতিক বীক্ষণে সে দেখেছে অনেক। কখনও সে কষ্ট পায়, তার চেয়ে নিস্পৃহ হয়ে থাকে অধিক সময়। কিন্তু নিস্পৃহতা ব্যক্তিজীবনে থাকা ভাল। সামাজিক নয়। তারও অতএব এই তীব্র প্রতিক্রিয়া। 

এইসবই বিষণ্ণ করেছে তাকে। এই শঠতা। চৌর্যবৃত্তি। নারীলোভ। মানুষের চরম বিপদে ত্রাতার ছদ্মবেশে লুঠপাট। কবে এর থেকে তারা মুক্তি পাবে হায়! কীভাবে পাবে! সে জানে না। কী সেই পথ, যার দ্বারা নৈতিকতা নির্ধারিত হয়। নাকি এই এক ভবিতব্য! এই মাত্ৰ নিয়তি মানুষের! কিছু লোক সৎ থাকবে! কিছু-বা অসৎ! 

এইসবই বিষাদময় করে রাখছে তাকে। এবং এক কবির শূন্য হাহাকার। বদরুদ্দিন চিনিয়েছিল তাঁকে। বলাই মণ্ডল। অসামান্য কবিতাভর্তি খাতা তাঁর, সমস্ত গিয়েছে জলে। একটিও হয়নি উদ্ধার! সবহারা সে-মানুষ স্তব্ধ হয়ে আছেন। তাঁর ছেলে তীর্থ, সিদ্ধার্থর কর্মীদলে যোগ দিয়েছিল। সে বলেছিল—বাবা অসম্ভব কষ্ট পেয়েছেন। আমবাগান নদীগর্ভে চলে যাবার পর বাবার মধ্যে কীরকম পাগলামি দেখেছিলাম। আমার ভয় করছে সিধু কাকা 

সে বলেছিল—ভয় পেয়ো না। উনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। আবার কবিতা লিখবেন। 

সে জানে, এ সমস্তই লঘু বাক্য। যায় যার, তারই যায়। অন্যেরা লঘুবাক্যে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করে। তাতে লাভ হয় না কিছু। আপনাতে আপনি যদি শক্তি জাগরিত না হয়, তবে সকল বাক্যস্রোত খড়কুটোরই মতো! 

বলাই মণ্ডল ফিরে গেছেন গ্রামে। একটিই ভরসা, বদরুদ্দিন বলেছিল, তাঁর আছে গ্রন্থ একখানি। তাতে শ’খানেক কবিতা ধরা আছে। সিদ্ধার্থ পড়েনি সে গ্রন্থ। বদরুদ্দিনের মতে, বাংলা কাব্যের ইতিহাসে, এই গ্রন্থ এক অতি অমূল্য সংযোজন। সে আশা প্রকাশ করেছিল, এই কবির জন্য, সে এনে দেবে রাজমুকুট। সরকারি তকমা এনে দেবে। রাসুদাকে বলেছে সে। রাসুদা কবিতা পড়ে মুগ্ধ হয়েছেন। সে যথাসম্ভব তদ্বির-তদারক করছে। ইদানীং বামফ্রন্ট বঙ্গসংস্কৃতির অতি মঙ্গলজনক সুহৃদ এবং যথাবিধি পৃষ্ঠপোষক। সেই পোষণার কিছু অংশ, বদরুদ্দিনের মতে, পাওয়া উচিত বলাই মণ্ডলের। যদিও কৃষিকবি বলাই মণ্ডল কোনও রাজনৈতিক দলের সমক্ষ সদস্য নন। কিন্তু একজন কৃষকের যোগ্য মর্যাদা তারা ছাড়া আর কে-ই বা দিতে পারবে! তাঁর মতো শিক্ষিত ও প্রতিভাবান কৃষক সারা ভারত ছুঁড়লে পাওয়া যাবে ক’জন? অতএব বদরুদ্দিনের মতে জেলার গর্ব বলাই মণ্ডল। জেলার পরম সম্পদ। বাংলার দরবারে তাঁকে যোগ্য স্থান দেওয়া চাই! 

তার সন্দেহ আছে, যা হারিয়েছেন বলাই মণ্ডল, তার পরিপূরণ সম্ভব কি না! বলাই মণ্ডলের জন্য তার অন্তর ব্যথিয়ে উঠেছে বারংবার। সেই সর্বরিক্ত মৌনতার প্রতি নত হয়েছে মাথা। আপনা হতে। 

তীর্থ গল্প করেছিল—বাবা ভেবেছিল, কাকা আসবে আমাদের নিতে। আসেনি তো! বাবার সেটাও লেগেছে! বাবা পালটে যাচ্ছে খুব। বোনকে সবার সামনে মেরেছে। 

—কেন? 

সে জিগ্যেস করেছিল। তীর্থ বলেছিল—বোনটা তো ছোট। আর খুব সরল। কিছুই বোঝে না। বর্ষাদিদির সঙ্গে দাঁড়িয়ে একটা অচেনা লোকের সঙ্গে কথা বলছিল। 

—অচেনা লোক? কে সে? 

—জানি না। গ্রামের নয়। আমিও চিনি না। 

—কী বলছিল বোনকে? 

—নাম কী, বাবার নাম কী, কোন গ্রামে বাড়ি জিগ্যেস করছিল। বোন উত্তর দিচ্ছিল। বাবা তখন দেখতে পেয়ে বোনকে প্রচণ্ড মেরেছে। বলছিল, ‘জানিস না! দালাল ঘুরে বেড়ায়!’ কীসের দালাল সিধু কাকা? 

সিদ্ধার্থ তীর্থকে বোঝাতে পারেনি! বলাই মণ্ডলের আশঙ্কা মিথ্যে নয়। তীর্থর বোনের কোনও দোষ নেই। কিন্তু দালাল তো সত্যি সর্বত্র ঘুরে বেড়ায়। বিপন্নতার সুযোগে নানারকম লোভ দেখিয়ে প্রতারণা করে। সে শুধু বলেছিল তখন—বোনকে সাবধানে দেখে রেখো! কত খারাপ লোক তো সত্যি আছে। 

তীর্থ আর প্রশ্ন করেনি। সিদ্ধার্থর কষ্ট হয়েছিল। এখন তীর্থর বড় করুণ বয়স। স্বপ্ন ভাঙার বয়স। সারল্য দগ্ধাবার চূড়ান্ত সময়। এখন থেকেই পুড়ে পুড়ে সোনা হয় কেউ। কেউ শুধু পড়ে থাকে অঙ্গার ও ছাই। ভেতরের বস্তু যার যেমন, তার তেমনই প্রকাশ। তা হলে কি মানুষ কীরকম হবে তা জন্মগতভাবে নির্ধারিত! সঠিক জানে না সে। জেনেটিক ভাষা অনেকখানি ভবিতব্য নির্ণয় করে দেয়। বাকিটা পরিবেশ-পরিস্থিতির অবদান। আত্মগুণের সঙ্গে সময় ও চারিভিতের সংযোগেই চরিত্র নির্ণয়-তবে এই আত্মগুণও প্রোটিন তন্তুর খেলা! জেনেটিক অভিব্যক্তি। 

তীর্থ কীরকম হবে? সে দেখেছে তীর্থর চোখে স্বপ্নের গভীর উৎসার! কে জানে, সে-ও বাবার মতো কবি হবে কি না। যদি না-ও হয়, তবু, এই পৃথিবীকে স্বপ্নের রঙে সে রাঙাবে বলে আশা করে সিদ্ধার্থ, এ ভুবনে কল্যাণের তরে স্বপ্নময়দের বড় প্রয়োজন, এমনই বিশ্বাস তার। 

যেমন বোধিসত্ত্ব! কী আশ্চর্য স্বপ্ন তাঁর চোখে! জীবনের প্রতি কী প্রগাঢ় দ্যুতিময় ভালবাসা! 

.

বোধিসত্ত্ব! তার প্রিয়তম জন! অথচ বোধিসত্ত্বের জন্যই সে হয়ে আছে বিষণ্ণতর। কেন না বোধিসত্ত্বের শরীর ভাল নেই। কোনও অসুখ নেই তাঁর। তবু ভাল নেই। 

জল জমে বাগানের গাছগুলির কিছু মরে গেছে। কিছু বিবর্ণ হলুদ। তিনি আর যাননি পরিচর্যা রচনায়। অধিক সময় তাঁর কেটে যাচ্ছে ঘরে। রোগী আসে। ওষুধ দিয়ে দেন। রোগীর আত্মীয়রা আসে। রোগীর সংবাদ দেয় নিয়মিত। তিনি সমস্ত শোনেন। ফেরান না কারওকেই। তবু সংবাদ রটে গেছে। বোধিসত্ত্বের শরীর ভাল নেই। দুরান্ত হতে দর্শনপ্রার্থীরা আসে। বসে। চলে যায়। কেউ বলে-বাবু! আপনি সকলের রোগ সারান। নিজেকে চিকিৎসা করেন বাবু। 

বোধিসত্ত্ব ক্লান্ত হাসেন। বলেন—আমার তো রোগ নেই। সারাব কী! সম্পূর্ণ নীরোগ এ দেহ। তবে কিনা যন্ত্রপাতি পুরনো হয়ে গেছে। দেহের কারখানা তো নতুন যন্ত্রে সারানো যায় না বাবা! 

সিদ্ধার্থর বিষণ্ন মুখে তিনি হাত বুলিয়ে দেন। বলেন—উতলা হয়ো না। কত কাজ তোমার। তোমাকে তো বলেছি আগেই। ডাক আসছে। ডাক শুনতে পাচ্ছি। 

সে বোধিসত্ত্বর হাত আঁকড়ে ধরে। তার মুখে কথা ফোটে না। শুধু আবেগে থির থির করে বুক। বোধিসত্ত্ব বলেন—শোনো। আত্মা অবিনশ্বর। জানবে, যেখানেই থাকো, তোমার আত্মার সংলগ্ন আছি আমি। এ তো এক জীবন হতে অন্য জীবনের দিকে যাওয়া। দেহাবসানকে ডেথ বলে মনে করি না আমি। মৃত্যু বলে মানি না। ডেথ হল সিজেশন। থেমে যাওয়া। পূর্ণচ্ছেদ টেনে দেওয়া জীবনের। তা তো নয়। মৃত্যু আমার কাছে সাঁকো। এক জীবন থেকে অন্য জীবনে যাওয়া। একখানে শেষ করে অন্যখানে শুরু। সেই কবিতাটা মনে আছে? মনে রেখো! যেখানে যা ভাল বাক্য পাবে, ধরে রাখবে। বাক্-এর মধ্যে আছে অফুরন্ত শক্তির ভাণ্ডার! যখন তুমি একেবারে একা, কেউ নেই তোমার সঙ্গে, তখন জেনো, বাক্য তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছে। বাণী তোমার শিয়রে জেগে আছে। শোনো, টেনিসনের সেই কবিতাটা শোনো— 

I can not rest for travel, I will drink 
Life to lees 
Old age hath yet his honour and his toil;
Death closes all; but something are the end.
Some work of noble note may yet be done
Come my friends 
“Tis not too late to seek a newer world. 
Push off and sitting well in order smile 
The sounding furrows; for my purpose holds
To sail beyond the sunset and the baths—
Of all the western stars, until I die. 

এতদসত্ত্বেও তার বিষাদ কাটে না। ডায়রি নিয়ে আঁকিবুকি করছিল সে। সময় নেই সময় বৃথা নষ্ট করবার। বৃথা কি? সারাক্ষণ বোধিসত্ত্বের কাছে কাছে থাকার ইচ্ছে তার। ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকার ইচ্ছে। কিন্তু কাজ তাকে হাতছানি দেয়। একের পর এক দাঁড়ায় দুয়ারে এসে। সে ভাবে, বাইরে কত দুঃখ, কত কষ্ট! সেইসব দিয়ে ঢাকা থাক তার দুঃখটুকু। দুঃখ দিয়ে দুঃখ ঢাকা থাক। সে তাই বসে বসে পরিকল্পনা সেরে নিচ্ছিল। হাঁপাতে হাঁপাতে তৌফিক এল তার কাছে—সিধুদা! শুনেছ! 

— কী রে! 

জিগ্যেস করল সে। 

—চতুষ্কোনা ভেঙে পড়ছে। 

—ভেঙে পড়ছে? 

—সকাল থেকে পাড় ভাঙছে। বোল্ডার লাগানো ছিল। পড়ে গেছে। সব গেছে। যাবে? 

—চল। 

—সফি কোথায়? 

—আজ বেরুব না ভেবেছিলাম। সফিকে ছুটি দিয়েছি। 

—সফিকে ছাড়া যাবে? 

—বেরিয়ে পড়ল তারা। সিদ্ধার্থ বলল—কীসে যাবি? 

—বাসে। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *