রাজপাট – ১০৯

১০৯ 

আষাঢ় মাস বাপ-মায়ের 
আশায় আশায় যায়। 
বিয়া নাই সে হইল কন্যার 
কি করে উপায় ।। 
আষাঢ়ে আকাশ ভরে 
মেঘের গুঙানি গুঙানে। 
এ ভরা যৈবন কন্যার 
বৃথা দিন গোনে ॥ 

.

সিদ্ধার্থ এসেছে খবর গিয়েছিল দুলুক্ষ্যাপার কাছে। সে বিস্মিত হয়নি এ খবরে। বরং এমতই প্রত্যাশিত তার। আসবেই। সিদ্ধার্থ আসবেই। যদিও সে রাখে খবর, মোহনলাল সিদ্ধার্থর প্রতি এখন প্রসন্ন নয়। তবু, সে জানে, এই অপ্রসন্নতাকে স্বাগত জানিয়ে চলে আসতে পারে সিদ্ধার্থই একমাত্র। 

বৃষ্টি ধরতেই মোহনলালের গৃহে চলে এসেছে দুলুক্ষ্যাপা। সিদ্ধার্থ দেখল আসর জমেছে। মোহনলালের সঙ্গে রয়েছে আরও চারজন। সকলের সঙ্গে মিশে বসে আছে রেজাউল। সে ঢুকতে মোহনলাল কোনও কথা বলল না। পরিচয় করিয়ে দিল না কারও সঙ্গে। সে সপ্রতিভই রইল তবু। রেজাউল বলল—কোথায় ছিলি এতক্ষণ? 

হাসল সে। জবাব কিছু দিল না। দুলু বাউল বলল—এসো বাবা, এসো। তুমি এসেছ শুনেই ছুটে এলাম। তোমার দর্শন পেলে প্রাণ জাগে। 

সিদ্ধার্থ বলল—আজ সন্ধ্যায় গান ছাড়া আর কিছু ভাবা যায় না। খুব ভাল হল আপনি এসেছেন। 

দুলুক্ষ্যাপা স্মিত হেসে বলে—পথ আমাকে সে-ই দেখায় গো, যে আমাকে চায়। তার দেখানো পথেই না আমি তোমার পর্যন্ত এসেছি। এবার হল মেলানোর অপেক্ষা। 

মোহনলাল বলে উঠল—বাবাজি, বাড়িটা আমার। আপনি আমার বাড়িতে এসেছেন। তা-ও অনাহূত। স্বেচ্ছায়। এখানে আমি আছি। অন্য বন্ধুরা আছেন। আপনি এভাবে কথা বললে অন্যদের অপমান করা হয়। 

.

ঘরে নৈঃশব্দ্য বিরাজে। সিদ্ধার্থর শ্রবণে তবু প্রদাহ ধরা দেয়। তীব্র হলাহলের জ্বালা ছড়িয়ে পড়ে দেহে এবং আত্মাকে স্পর্শ করা মাত্র আত্মা স্বগুণে স্বজ্ঞানে তাকে অমৃত করে ফিরিয়ে দেয় ফের। সে আরাম বোধ করে। ধীরে ধীরে আরাম বোধ করে। শুচি আত্মা রক্ষা করছে তাকে। শুচি আত্মা। সে লণ্ঠনের প্রজ্বলিত শিখার মাঝে চায়। তার মনে পড়ে বোধিসত্ত্বকে। তিনি বলেছিলেন—আত্মশক্তি জাগাও। বড় করো। বড় করো। বড় হও। প্রসরমাণ হও। তোমার মধ্যে যিনি আত্মা, তিনি বিরাট, তিনি অসীম। তাঁকে আশ্রয় করো। 

কে আত্মা? কে? 

আত্মা! তিনি আত্মা! তিনি দেহাতীত! তিনি সর্বশক্তিমান! তিনি গরলকে করেন অমৃত। হলাহলে দেন প্রাণসুধা। তিনি সকল পাপকে করেন নাস্তি, আর পুণ্যকে চিরপ্রজ্জ্বলিত রাখেন। 

সে জিগ্যেস করেছিল, কেন মৃত্যুর পর অশৌচ পালন করা হয়! 

কারণ, তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন, কারণ, দেহ জৈববস্তুর মণ্ড। পচনশীল। মরণশীল। নশ্বর। তাই অশুদ্ধ। আত্মা অবিনশ্বর। আত্মা অপরিমেয়। আত্মা শুদ্ধ। যতক্ষণ আত্মা দেহকে আশ্রয় করে আছে, ততক্ষণ দেহ, আত্মার স্পর্শে শুদ্ধ। আত্মা দেহকে ত্যাগ করে গেলে দেহ সামান্য জড় বস্তু। অশুদ্ধ। অপবিত্র। অগ্রাহী। 

সে ভাবতে থাকল এইসব। ভাবতেই থাকল। কেন সে জানে না। তবু ভাবতেই থাকল কারণ প্রাণে সে পেয়ে যাচ্ছিল অদ্ভুত আরাম। 

.

তখন দুলুক্ষ্যাপা জোড়হাত ঠেকাল কপালে। বলল— অপরাধ নেবেন না কেউ। আপনারা সকলেই প্রণম্য আমার। পক্ষপাত-দোষে দুষ্ট আমি। ক্ষমা করে দিন নিজ গুণে। এ দুনিয়ায় কেউ-ই যে নিরপেক্ষ হয় না গো। কেউ-ই হয় না অপক্ষপাত। এমনকী মা যে, সেও মনে মনে কোনও এক সন্তানকে অধিক স্নেহ করেন। 

আর কোনও কথার সুযোগ সে দিল না। সকল যন্ত্র সরিয়ে রেখে চোখ বন্ধ করে ধরল গান। সিদ্ধার্থর গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। দুলু বাউল বৈরাগীঠাকুরের গান সে তো শুনেছে বহুবার, তবু এমন মহিমান্বিত আগে কখনও লাগেনি সংগীত। তার মনে হল, যেন কোনও গিরিকন্দরে গাইছেন সর্বত্যাগী কোন সন্ন্যাসী! অথবা সর্বোত্তম সর্বমধুরে গম্ভীরে পূর্ণসুরে গাইছেন সুরের দেবতা দুর্গেশ শ্রীশ্রীমহাদেব স্বয়ং। শরীরের সকল দিয়ে, হৃদয়ের সকল দিয়ে শুনতে লাগল সে গান। 

আষাঢ়সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল, গেল রে দিন বয়ে 
বাঁধন-হারা বৃষ্টিধারা ঝরছে রয়ে রয়ে ।। 
একলা বসে ঘরের কোণে কী ভাবি যে আপন-মনে, 
সজল হাওয়া যূথীর বনে কী কথা যায় কয়ে ।।

গান ফুরল। কথা ফুরল। যারা এসেছিল, গেল চলে। দুলুক্ষ্যাপাও সকল কথা সেরে চলে গিয়েছে কখন। তবু তার গান সিদ্ধার্থকে ছেড়ে গেল না। তার সঙ্গে সঙ্গে ফিরতে লাগল কথা। সকল কথা। বৈরাগীঠাকুর এক মহান শিল্পী, সে মান্য করেছে। কিন্তু আজ তার নিকটে বৈরাগীঠাকুর অতুল। অনুপম। আজ যেন শিল্পী স্বয়ং শিল্প হয়ে উঠল। 

সে ঘুরল ফিরল, তার সঙ্গে সঙ্গে চলতে লাগল গান। সে কথা কইল, গানও কথা কইল তার কানে কানে। যখন খেতে বসল তারা একত্রে, তখন, জুঁইফুলের পাপড়ির মতো শ্বেতশুভ্র সুগন্ধী অন্নের মধ্যে সে পেল ওই গান— 

হৃদয়ে আজ ঢেউ দিয়েছে, খুঁজে না পাই কূল—
সৌরভে প্রাণ কাঁদিয়ে তোলে ভিজে বনের ফুল। 

খাওয়া শেষ হলে, সকলকে স্তব্ধ অসাড় করে দিয়ে মোহনলাল যখন বলল—আমি চাই না তুই আর এ গ্রামে আসিস-তখনও গান তাকে ছেড়ে গেল না। শুনতে পেল সে, সকল সুরের সকল ধ্বনি— 

আঁধার রাতে প্রহরগুলি কোন সুরে আজ ভরিয়ে তুলি, 
কোন্ ভুলে আজ সকল ভুলি আছি আকুল হয়ে ।।

সে তখন বলল, হেসে, সম্পূর্ণ প্রসন্ন হেসে—কেন রে? কোনও অসুবিধে?

মোহন তাকাচ্ছে না তার দিকে। চোখ তুলছে না। বলছে—আমি চাই না। 

—কেন চাস না? 

—তুই আমাদের পার্টির শত্রু। তাই আমারও শত্রু। 

—তোর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়েছিল কী করে মোহন? পার্টির সূত্রে তো নয়। 

—তাতে কী এসে যায়? সম্পর্কের অর্থ পাল্টায়। এত কথা তোর সঙ্গে বলতেও চাই না আমি। শুধু শুনে রাখ, তোর সঙ্গে এবং তোর যারা ঘনিষ্ঠ তাদের কারও সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। তোকে যেন এ গ্রামে আর না দেখি। 

—তুই কী করে একটা গ্রামে আমার আসা নিষেধ করতে পারিস মোহন? 

— পারি, তার কারণ এখানে আমি যা চাইব, তা-ই হবে। 

মোহনলাল উত্তেজিত হয়ে উঠছে। তার উত্তেজনার সাক্ষী হয়ে থাকছে রেজাউল। সাক্ষী থাকছেন নন্দিনী। 

সিদ্ধার্থ শান্ত। শান্ত এবং ধৈর্যশীল। এই বিশ্বচরাচর, নন্দিনী ও রেজাউল সমেত সাক্ষী থাকছে তার মমতার। সে বলছে—এটা অগণতান্ত্রিক নয়? পার্টিনীতির বিরোধী নয়? 

—সেটা তোকে দেখতে হবে না। এই গ্রামে, এই বাড়িতে তোকে কাল থেকে আর দেখতে চাই না, ব্যস। 

এতক্ষণে নন্দিনীর কথা শুনল ধরণী। তিনি বললেন-এ গ্রামও তোর নয়, এ বাড়িও তোর নয়। তুই এখানে ওকে আসতে নিষেধ করার কে? 

মোহনলাল ক্রুদ্ধ তাকাল নন্দিনীর দিকে। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল—তোমার বুকে ঠুকরোয় কেন মা? সিদ্ধার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় তোমার কে? 

—তুই যেমন এক ছেলে, তেমনি ও-ও আমার ছেলে। ওকে তোর থেকে আলাদা করে দেখি না আমি। 

—ছেলে? বাঃ! হারাধনের মতো ছেলে? চমৎকার! 

নন্দিনী অবাক হয়ে তাকাচ্ছেন। বলছেন—তার মানে কী? মোহন? এ কথার মানে কী? দাঁতে দাঁত পিষছে সিদ্ধার্থ। কঠিন হাতে চেপে ধরছে মোহনলালের ঘাড়। চাপ দিচ্ছে। শক্ত করছে। চাপ দিচ্ছে। ঊর্ধ্বমুখে তাকিয়ে আছে সে মোহনলালের দিকে, কারণ মোহনলাল দীর্ঘতর। তবু, তার থাবার নীচে অসহায় লটপট করছে মোহনলাল। 

—ছাড়। ছেড়ে দে। ছেড়ে দে। আঃ! ছেড়ে দে সিধু! 

আর্তনাদ করছে সে। সিদ্ধার্থ বলছে—কাকিমার ছেলে বলে বেঁচে গেলি। অন্য কারও ছেলে হলে এতক্ষণে মাছের খাবার হয়ে যেতিস। ক্ষমা চা। ঠেলে দিল সে মোহনলালকে নন্দিনীর দিকে।

—ক্ষমা চা। বল, যা বলেছিস, অন্যায় বলেছিস। 

নন্দিনী দাঁড়িয়ে আছেন বিমূঢ়। সিদ্ধার্থ এতখানি ক্রুদ্ধ হল কেন তিনি জানেন না। এত ক্রোধ ছিল তার ভেতরে, তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। ছেলের জন্য করুণা হচ্ছে তার। কষ্ট হচ্ছে। তবু, এ বিশ্বাস তাঁর আছে, সিদ্ধার্থ অন্যায় করছে না। 

মোহনলাল হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মায়ের হাঁটুর কাছে। বলছে—মা, ক্ষমা করো।

বলছে আর উঠে চলে যাচ্ছে তৎক্ষণাৎ। দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে নিজের ঘরের। 

সিদ্ধার্থ ও রেজাউলের জন্য আলাদা ঘরে শোবার ব্যবস্থা করে দিলেন নন্দিনী। এই প্রথম। মোহনলালের বাড়িতে এসে, তারা শুচ্ছে পৃথক। তারা কেউ কোনও কথা বলছে না। এবং রেজাউল শুয়ে পড়ল সিদ্ধার্থর পাশে, নীরবে। বড় বিষণ্ণ সে আজ। দুখী। সে এসেছিল নিৰ্মল আড্ডার প্রত্যাশায়। কিন্তু এ কী! এ কী! তারা সব ছিঁড়ে ছিঁড়ে যাচ্ছে। খুলে খুলে যাচ্ছে। কেন? কেন এরকম? সে দু’চোখ বন্ধ করল। তার মনে হল সন্তানগুলির কথা। বিবির কথা। আঃ! এই মুহূর্তে সন্তানগুলিকে বুকে জড়িয়ে ধরার শান্তি সে পেতে চাইল। সেই অনুভূতি পাবার আশায়, অন্ধকারে, সে বন্ধ করল চোখ। 

কিন্তু চোখ খোলা রইল সিদ্ধার্থর। সে চাইল না শান্তি। চাইল না সান্ত্বনা। এই বিচ্ছেদ সমাগত সে জেনেছিল। তবু তা কতখানি মর্মান্তিক সে জানত না। জানত না সে। জানে না। জানিত না, জানিত না এ হৃদয় এমনই বিদারে! জানিত না, জানিত না! ভোঁতা ছুরি দ্বারা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তোলা বুকের পাঁজর! 

হাহাকার বাজে চরাচরে। হাহাকার। হা হা হা হা হা হা রব ঢুকে পড়ে ভূমিগর্ভে উথালে-পাথালে ফুঁড়ে দেয় বিধ্বংসী মেদিনী-কম্পন। 

তবু তাকে ছেড়ে যায় না গান সেই। সে বাজে। বাজে। বেজে যায়। এবং এক চাপা রোদনধ্বনি, মাঝে মাঝে প্রকাশিত মেঘমন্ত্র ভেদ করে পৌঁছে যায় তাহার নিকট। সে উঠে বসে। কান পাতে। শোনে। মা মা মা! 

সে পায়ে পায়ে আসে। নন্দিনীর ঘরের সামনে দাঁড়ায়। শুনতে পায়। রোদন ক্রন্দন। কান্না শুনতে পায়। মোহনলাল। সে বলছে মা, মাগো, আমি হেরে যাচ্ছি মা। 

নন্দিনী বলছেন—কীসের হার বাবা? আমাকে বল। 

—মা তুমি থাকো। তুমি থাকো। এখান থেকে যেয়ো না। মা। 

ফিরে এল সিদ্ধার্থ। তার কান্না পাচ্ছে। খুব কান্না পাচ্ছে। এই মুহূর্তে নন্দিনীকে তারও প্রয়োজন ছিল বড়। সে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরল। গরম জল অবিরল নেমে আসছে চোখ হতে। ঘেরা বারান্দার ধারে এল সে। আকাশে তাকাল। ফিসফিস করে বলল—মা! 

কাঁধে স্পর্শ পেল সে। রেজাউল উঠে এসেছে। তারা ঘরে এল। জড়িয়ে ধরল পরস্পরকে। কাঁদল। সিদ্ধার্থ বলল —বাইরে বৃষ্টি নেই। রেজাউল। যাবি? 

—চল। 

—ব্যাগটা? 

—নিয়ে নিচ্ছি। 

নিঃশব্দে নেমে এল তারা। বেরুনোর পদ্ধতি জানে সিদ্ধার্থ। বেরুল। ভেজা অন্ধকার অপরিচ্ছন্ন পথে হাঁটতে লাগল পাশাপাশি। আরও একজন যোগ দিল তাদের সঙ্গে। সফি। 

সিদ্ধার্থ বলল— সফি, তুমি জেগে আছ এখনও? 

সফি মৃদু কণ্ঠে বলে—জি, নজরদারি রাখতে তো হবে।

রেজাউল বিস্মিত হল। জানতে চাইল—কে? সিধু? 

—আমার ভাই। আমার কোনও ক্ষতি না হয়, তাই সঙ্গে এসেছে। 

রেজাউল সিদ্ধার্থর হাত চেপে ধরল। জানতে চাইল না কী ক্ষতি, কেমন ক্ষতি। সে বুঝে গেছে। 

ইসমাইলের দোকান পেরিয়ে, মাতিন শেখের বাড়ি পেরিয়ে এগিয়ে গেল তারা। গাঢ়তর অন্ধকার হতে বেরিয়ে এল আরও একজন। বলল— দাদা! এই অন্ধকারে কোথায় যান? 

সফি দ্রুত সিদ্ধার্থর গা ঘেঁষে দাঁড়াল। সিদ্ধার্থ তার হাতে চাপ দিল। এখন কিছুটা সুস্থ সে। সংযত। বলল—চলে যাচ্ছি নিসার। 

—এত রাতে?— চলে যাচ্ছি। 

—আমি যাই কিছুদূর? 

—চলো। 

মাসুদার বাড়ির কাছে এক মুহূর্ত দাঁড়াল সিদ্ধার্থ। শিশুর ক্ষীণ কান্না বুঝি-বা সে শুনতে পায়। নিসার বলল—ইদরিশের জোড়া বাচ্চা হয়েছে দাদা। 

—বাঃ! 

খুশি হল সিদ্ধার্থ। জীবনের শূন্যতা এভাবেই ভরে ওঠে আস্তে আস্তে। সকল বিচ্ছেদ-বেদনার ভার এভাবেই প্রশমিত হয়। তাই জীবন এত সুন্দর। বছরে একবার বসন্ত আসে। বসন্ত আসে। কাল ছিল ডাল খালি। আজ ফুলে যায় ভরে। যায়। যায়-ই তো! 

সে বলে—নিসার ভাই, তুমি এখনও এ কাজ করো? 

—জি, চুরি করি না। 

—আর ওই কাজ। 

—জি, যা দেখি, নিজের মনে রাখি। বলবার দরকার পড়ে না। চুরি বন্ধ, নজরদারিও বন্ধ। দুই-ই বড় গুনাহ্ দাদা। ধৰ্ম্ম তো করলাম না। অধম্ম না করে দিলটাকে সাফা-সুতরা রাখছি। কিন্তু না বেরুলেও চলে না। আপনি তো সবই জানেন। 

—নিসার? মুক্তি পেলে কী করে? 

—জি, আপনার মিছিলে গিয়েছিলাম। 

—সেকথা থাক নিসার। 

—জি, সেজন্য মোহনদা আমাকে কাজ দেয় না। 

—সে কী! তোমার চলে কী করে? 

—জি, সেনবাবুরা ফিরিয়ে নিয়েছেন। 

—বাঃ! তোমার বিবি-বাচ্চার সুসমাচার তো নিসার ভাই?

—জি। সবই আগের মতো। তবে বেশিদিন থাকবে না। 

—কেন নিসারভাই? 

—খুব বন্যা হবে। খুব বৃষ্টি হবে। বানে সব ভেসে যাবে। তখন কে বাঁচবে কে মরবে, কে বলতে পারে দাদা? কিছুই আর আগের মতো থাকবে না। দেখবেন আপনি, দেখে নেবেন। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *