যযাতি

ভরত বংশের মহারাজা যযাতি হচ্ছেন নহুষের পুত্র ও পাণ্ডবদের একজন আদিপুরুষ। শুক্রের কন্যা দেবযানীকে যযাতি একবার কূপের নিচ থেকে উদ্ধার করেছিলেন। দেবযানীকে কূপের ভেতরে ফেলে দিয়েছিলেন অসুররাজ বৃষপর্বার কন্যা শর্মিষ্ঠা। এই অন্যায় কাজের জন্য অসুররাজ শর্মিষ্ঠাকে চিরদিনের জন্য দেবযানীর দাসী করে দেন। এর কিছু কাল পরে যখন শুক্র দেবযানীর সঙ্গে যযাতির বিয়ে দেন, তখন তিনি যযাতিকে সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, দাসী শর্মিষ্ঠাকে যাযাতি যেন কখনও বিয়ে না করেন। যযাতি সেই সাবধানবাণী না মেনে গোপনে শর্মিষ্ঠাকে বিয়ে করেন। দেবযানী গর্ভে যযাতির দুই পুত্র – যদু তুর্বসু এবং শর্মিষ্ঠার গর্ভে তিন পুত্র – দ্রুহ্যু অনু ও পুরু হয়। শর্মিষ্ঠার গোপন বিবাহের কথা দেবযানী জানতে পারার পর শুক্রাচার্যের অভিশাপে যযাতি অকালে জরাগ্রস্থ হন। পরে যযাতি শাপ প্রত্যাহারের জন্য শুক্রকে অনেক অনুনয় করায় শুক্র বললেন যে, যযাতি ইচ্ছে করলে নিজের জরা অন্যকে দিতে পারবেন। যযাতি স্থির করলেন যে-পুত্র যযাতির নিযে যযাতিকে তাঁর যৌবন দান করবেন, তাকেই তিনি রাজ্য দেবেন। চার পুত্রের মধ্যে শুধু কনিষ্ঠ পুত্র যযাতির জরা নিতে রাজি হলেন। পুরুকে জরা দিয়ে যযাতি সহস্র বছর ধরে বিষয় ভোগ, প্রজাপালন, ধর্ম-কর্ম করলেন, তারপর পুরুকে রাজত্ব দিয়ে বনবাসে গেলেন। সেখান থেকে কিছুকাল পরে সুরলোকে গেলেন। সুরলোকে থাকাকালীন আত্মপ্রসংসা করার জন্য ইন্দ্রের আজ্ঞায় তিনি স্বর্গচ্যূত হন। ভূতলে না পরে তিনি কিছুকাল অন্তরীক্ষে অষ্টক, প্রতর্দন, বসুমান (বা বসুমনা) ও শিবি – এই চারজন রাজর্ষির সঙ্গে বিবিধ ধর্মালাপ করেন। এঁরা সকলেই ছিলেন যযাতির কন্যা মাধবীর পুত্র। ধর্মালোচনা কালে মাধবী ও গালব মুনি এসে ওঁর সঙ্গে যোগ দেন। ওঁরা সকলে নিজেদের তপস্যার কিছু ভাগ যযাতিকে দান করায় তিনি আবার স্বর্গে ফিরে যেতে পারলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *