।। যমদ্বিতীয়া ব্ৰতস্য মাহাত্ম্য।।
সন্তন্যাস্তিথয়ঃ পার্থ দ্বিতীয়াদ্যাঃ পরিশ্রুতা। মাসৈশ্চতুর্ভিশ্চত্বারঃ প্রাবৃচ্ছক্লাঃ ক্লমাপহাঃ।।১।। গোপিতাশ্চ সদা লোকেন প্রোক্তাশ্চ ময়াক্বচিৎ। প্রকাশায়ামি তাঃ পার্থ শৃণু সর্বা মতা হি তাঃ।।২।। একা তু শ্রাবণে মাসি অন্যা ভাদ্রপদে তথা। অপরাশ্চযুজে মাসি চতুর্থী কীর্তিকে ভবেৎ।।৩।। শ্রাবণে কলুষা নাম প্রোষ্ট পাদে গীর্মলা। আশ্বিনে প্রেতসংচারা কার্তিকে চ যমা স্মৃতা।।৪।। কস্মাৎসা কলুসা প্রোক্তা কস্মাৎসাগীর্মলা মতা কস্মাৎসা প্রেতসঞ্চরা কস্মাদ্যাম্যা প্রকীর্তিতা।।৫।। পুরা বৃত্রবধে বৃত্তে প্রাপ্তরাজ্যে পুরম্বরে। ব্রহ্মহত্যাপনোদার্থমশ্বমেধে প্ৰবৰ্তিতে।।৬।।
।। যমদ্বিতীয়া ব্ৰতমাহাত্ম্য।।
ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে পার্থ, দ্বিতীয়াদি অন্য তিথি অনেক পবিত্র। বর্ষাকাল চার মাস দ্বারা শুক্ল ক্লম হরণ করে। এটি সংসারে পরমগুপ্ত বিষয় তা কখনই প্রকাশ করবে না। হে পার্থ, আমি প্রকাশ করছি, তুমি তা শ্রবণ কর। এক তিথি শ্রাবণ মাসে হয়, অন্য ভাদ্রপদ মাসে, তৃতীয়টি আশ্বিন মাসে, চতুর্থ কার্তিক মাসে হয়। শ্রাবণের দ্বিতীয়া কলুষা, ভাদ্রের গীর্যলা, আশ্বিনের প্রেত সঞ্চারা এবং কার্তিকের যমা নামক হয়।।১-৪।।
ক্রোধাদিদ্ৰেণ ব্রজেন ব্রহ্মহত্যা নিষুদিতা। ষখন্ডা চ কৃতা ক্ষিপ্তা বৃক্ষে তোয়ে মহীতলে।।৭।। নার্যাং ব্রহ্মহনে বহ্নৌ সংবিভজ্য যথাক্রমম্। তৎপাপং শ্রাবনে ব্যূহং দ্বিতীয়ায়াং দিনোদয়ে।।৮।। নারীবৃক্ষনদীভূমিবহ্নিনব্রহ্মহনেম্বথ। নির্মলীকরণং জাতেমতোৰ্থং কলুৰ্যাস্মৃতা।।৯।। মধুকৈটভয়ো রক্তে পুরা মগ্নেতি মেদিনী। অষ্টাংগুলা পবিত্রা সা নারীণাং তু রজোর্মলম্।।১০।। নদ্যঃ পূরমলাঃ সর্বা বহ্নেধূমশিখা মলঃ। কলুষানি চরত্যস্যাং তেনৈষা কলুষা মতা।।১১।। গীর্গিরা ভারতী বাণী বাচা মেধা সরস্বতী। গীর্মলং বহুতে যস্মাদ্বিতীয়া গীৰ্মলা মতা।।১২।। দেবর্ষিপিতৃধর্মাণাং নিদকা নাস্তিকাঃ শঠাঃ। তেষাং সা বাগ্মলব্যঢ়া দ্বিতীয়াতেন গীর্মলা।।১৩।। অনধ্যায়েষু শাস্ত্রাণি পাঠয়ন্তি পঠন্তি চ। শাব্দিকাস্তার্কিকাঃ শ্রৌতাস্তেষাংশব্দাপশব্দজাঃ। মলা ব্যুঢ়া দ্বিতীয়ায়ামতোর্থং গীর্মলা চ সা।। ১৪।।
যুধিষ্ঠির বললেন — এইরূপ নামকরণ কেন? উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ বললেন, প্রাচীন কালে যখন বৃত্রাসুর বধ হল তখন ইন্দ্র নিজরাজ্য পুনরায় ফিরে পেলেন। কিন্তু ব্রহ্মহত্যাজনিত পাপ থেকে মুক্তি পেতে তিনি অশ্বমেধ যজ্ঞ করলেন। ইন্দ্র ক্রোধবশতঃ ব্রহ্মহত্যা মিষুদন করে তা ছয়ভাগে ভাগ করে ক্রমান্বয়ে বৃক্ষ-জল-মহীতল-নারী-ব্রহ্মহন অগ্নিতে প্রক্ষেপ করেছিলেন। সেই পাপ শ্রাবণ মাসের দ্বিতীয় দিনে ব্যুহরূপে নারী, বৃক্ষ, নদী, ভূমি, বহ্নি এবং ব্রহ্মহনে হয়। তা নির্মলীকরণের জন্য তা কলুষা নামে খ্যাত। পুরাকালে মেদিনী মধু কৈটভের রক্তে মগ্ন ছিল। কেবল অষ্ট অঙ্গুলি পর্যন্ত পবিত্র ছিল। নারীগণের রজ মল। সকলনদী পুরমলপূর্ণ ছিল এবং অগ্নিশিখা মলতুল্য। এতে সকলে কলুষাচরণ করত তাই একে কলুষা বলা হয়।।৫-১১।।
প্রেতাস্তু পিতরঃ প্রোক্তাস্তেষাং তস্যাং তু সঞ্চরঃ। দ্বিতীয়ায়াং চ লোকেষু তেন সা প্রেতসঞ্চরা।।১৫।। অগ্নিধাত্তা বহির্যদ আজ্যপাঃ সোমপাস্তথা। পিতৃপিতামহপ্রেতসঞ্চরাৎ প্রেতসঞ্চরা।।১৬।। পুত্রেঃ পৌত্রেশ্চ দৌহিত্রেঃ স্বধামন্ত্রৈঃ সুপূজিতাঃ।।১৭ কার্তিকে শুক্লপক্ষস্য দ্বিতীয়ায়াং যুধিষ্ঠির। যমো যমুনয়া পূর্বং ভোজিতঃ স্বগৃহে তদা।।১৮।। দ্বিতীয়ায়াং মহোৎসর্গে নারকীয়াশ্চ তপিতাঃ। পাপেভ্যো বিপ্রমুক্তাস্তে মুক্তা সর্বে বিবন্ধনা। ভ্রামিতা নর্তিতা স্তুষ্টাঃ স্থিতা সর্বে যদৃচ্ছয়া।।১৯।। তেষাং মহোৎসবো বৃত্তো যমরাষ্ট্রে সুখাবহঃ। ততো যমদ্বিতীয়া সা প্রোক্তালোকে যুধিষ্ঠির।।২০।। অস্যাং নিজগৃহে পার্থন ভোক্তব্যমতো বুধৈঃ। স্নেহেন ভগিনীহস্তাদ্ ভোক্তব্যং পুষ্টিবর্দ্ধনম্।।২১।।
গীঃ- গীরা–ভারতী–বাণী–বাচা–মেধা এবং সরস্বতী এই সকল তার অপর নাম। গীর মলবাহী বলে ভাদ্রপদ দ্বিতীয়া গীর্মলা নামে পরিচিত। দেব ঋষি পিতৃগণের ধর্ম নিন্দুক, নাস্তিক এবং শঠ লোকের বাক্মলের দ্বারা তা নষ্ট হয় তাই এর নাম গীর্মলা। অনধ্যায়ের দিনে যিনি শাস্ত্র পাঠ করেন তথা অপরকে পড়ান সেই শাব্দিক- তার্কিক এবং শ্রৌত তাদের শব্দের দ্বারা অপশব্দ উৎপন্ন মল গীর্মলা নামে পরিচিত। প্রেতকে পিতর বলা হয়। দ্বিতীয়া তিথি প্রেতের সঞ্চার হয় বলে লোকে সেই দ্বিতীয়া তিথিকে প্ৰেত সঞ্চারা বলে। অগ্নিত্বাত্ত–বর্হির্ষদ–আজ্যপ–সোমপ এবং পিতৃ পিতামহ প্রেতে সঞ্চারিত হয় বলে এই তিথি প্রেত সঞ্চারা নামে পরিচিত। পুত্র–পৌত্র–দৌহিত্র এবং স্বধা মন্ত্র দ্বারা যথাবিহিত অর্চিত হয়ে শ্রাদ্ধদানরূপী মখের দ্বারা তৃপ্ত হয়। তাই এই তিথি প্ৰেত সঞ্চারা।।১২-১৭।।
হে যুধিষ্ঠির, কার্ত্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে যমরাজ যমুনা ভগিনীর দ্বারা প্রথমে ভোজন করেছিলেন তাই এই তিথি যমা।। ১৮।।
দ্বিতীয়া তিথির মহোৎসর্গে সে সকল নারকীয় প্রাণী ছিল তারা তৃপ্ত হত এবং পাপ বিমুক্ত হয়ে সকল বন্ধন রহিত হয়ে মুক্তিলাভ করত। তারা সকলে স্বচ্ছন্দে ভ্রমণ ও নৃত্য করত। তাদের যমরাজ্যে এক বড় মহোৎসব হয়েছিল। হে যুধিষ্ঠির তখন থেকে সেই তিথি যমদ্বিতীয়া নামে পরিচিত। হে পার্থ, বুদ্ধিমান পুরুষ এই তিথিতে নিজ গৃহে ভোজন করেন না। স্নেহের সঙ্গে নিজ ভগিনীর হাতে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করেন।।১৯-২১।।
দানানি চ প্রদেয়ানি ভগিনীভ্যো বিধানতঃ। স্বর্ণালংকারবস্ত্রাদ্যৈঃ পূজাসৎকারভোজ নৈঃ।।২২।। সর্বা ভগিন্যঃ সংপূজ্যা অভাবে প্রত্তিপত্তিগাঃ। পিতৃব্য ভগিনী হস্তাৎ প্রথমায়াং যুধিষ্ঠিরা।।২৩।। মাতুলস্য সুতাহস্তাদ্ দ্বিতীয়ায়াং পুনৰূপ। পিতৃমাতৃস্বসারৌ মে তৃতীয়ায়াং তয়োঃ করাৎ।।২৪।। ভোক্তব্যং সহজায়াশ্চ ভগিন্যা হস্ততঃ পরম্। সর্বাসু ভগিনীহস্তাদ্ ভোক্তব্যং বলবর্ধনম্।।২৫।। ধন্যং যশস্যামায়ুষ্যং ধর্মকামার্থবৰ্দ্ধনম্। ব্যাখ্যাতং সকলং স্নেহাৎ সরহস্য ময়া তব।।২৬।। যস্যাং তিথৌ যমুনয়া যমরাজদেবঃ। সম্ভোজিতো জগতি সত্ত্বরসৌহৃদেন। তস্যাং স্বসুঃ করতলাদিহ যো ভুনক্তি। প্রাপ্নোতি বিওমথ ভোজ্যমনুত্তমংসঃ।।২৭।।
পুনরায় ভগিনীর জন্য বিধিপূর্বক দান প্রদান করতে হয়। তাকে সুবর্ণাদি অলংকার, বস্ত্র তথা উত্তম ভোজন দ্বারা পূজন এবং সৎকার করতে হয়। সকল ভগিনীগণকে পূজন করতে হয়। যদি নিজ ভগিনী না থাকে তাহলে পিতৃব্য কন্যার কাছ থেকে দ্বিতীয়া বা প্রথমা তিথিতে ভোজন গ্রহণ করতে হয়। মাতুল কন্যার কাছ থেকেও দ্বিতীয়া ভোজন গ্রহণ করা যেতে পারে। পিসি বা মাসীর কন্যার কাছ থেকে তৃতীয়াতে ভোজন করা যেতে পারে। সেই খাদ্য আয়ু, যশবৃদ্ধিকারী পরম ধন্য। আমি এই গুপ্তকথা স্নেহ বশতঃ বললাম বা ব্যাখ্যা করলাম। যেদিন যমরাজ তাঁর ভগিনী যমুনার কাছে ভোজন করেছিলেন সেদিন থেকে জগতে সৌহার্দের বৃদ্ধি ঘটে। সেদিন ভগিনীর হস্তে ভোজন ধন ও সুখপ্রদানকারী।।২২-২৭।।