।। ম্লেচ্ছযজ্ঞবৃত্তান্ত বর্ণনম্, কলিকৃতবিষ্ণুস্তুতিঃ।।
।। ম্লেচ্ছযজ্ঞ বৃত্তান্ত বর্ণন, কলিকৃত বিষ্ণু স্তুতি।।
এই অধ্যায়ে ম্লেচ্ছ হননের জন্য প্রস্তুত যজ্ঞ বৃত্তান্ত তথা কলির দ্বারা কৃত স্তুতি বর্ণন করা হয়েছে।
কথং যজ্ঞঃ কৃতস্তেন প্রদ্যোতেন বিচক্ষণ। সর্বে কথয় মে তাত ত্রিকালজ্ঞ মহামুনে।।১।। একদাহস্তিননিগরে প্রদ্যোত ক্ষেমকান্তজঃ। আস্থিত স কথামধ্যে নারদ্যোহভ্যাগমত্তদা।।২।। তং দৃষ্টাব হমিতো রাজা পূজয়ামাস ধর্মবিৎ। সুখোপবিষ্ট সমুনি প্রদ্যোতং নৃপমব্রতীৎ।।৩।।
শৌনক বললেন, হে বিচক্ষণ রাজা প্রদ্যোত কিরূপ যজ্ঞ করেছিলেন, হে তাত, হে ত্রিকালজ্ঞ কৃপাপূর্বক আপনি তা বলুন। শ্রীসূতজী বললেন, একবার হস্তিনানগরে ক্ষেমকের পুত্র প্রদ্যোত বসেছিলেন এবং কথা বলতে বলতে তিনি অস্থির হয়ে উঠছিলেন, সেই সময় দেবর্ষি নারদ সেখানে উপস্থিত হন।।১-২।।
সেই সময় নারদমুনিকে দেখে রাজা পরম হৃষ্ট হয়ে বিধিবদ্ তার পূজন করেন। সুখে আসীন হয়ে নারদমুণি রাজা প্রদ্যোতকে বলেছিলেন, দেখ ম্লেচ্ছগণ তোমার পিতা ক্ষেমককে হত্যা করেছে এবং তিনি যমলোকে চলে গেছেন। এই কারণে ম্লেচ্ছ যজ্ঞ অবশ্য করা উচিত। যার প্রভাবে তোমার পিতার স্বর্গলাভ হবে।।৩।।
ম্লেচ্ছৈহতস্তব পিতা মমলোক মতো গত। ম্লেচ্ছযজ্ঞ প্রভাবেন স্বৰ্গতিভাবিতা হি সঃ।।৪।। তচ্ছু ত্বা ক্রোধতাম্রাহ্মো ব্রাহ্মনাম্বেদবিত্তমান্। আয় স কুরুক্ষেত্রে ম্লেচ্ছযজ্ঞং সমারভৎ।।৫।। যজ্ঞকুন্ডং চতু যেকানং যোজনান্বেব যোড়শ রচিত্বা দেবতা ধ্যাত্বা ম্লেচ্ছাং শ্চজুহুয়ানুপঃ।।৬।। হারহুণান্ধর্বরাংশ্চ গুরুংডাংশ্চ শকান্থসান্। যবনাপল্লবাংশ্চৈব রোমজান্থরসংভবান্।।।। দ্বীপস্থিতাক্লামরূশ্চ চীনালাগরমধ্যগান্। প্রায় ভস্মসাৎকুর্বন্ধৈদমন্ত্রপ্রভাবতঃ।।৮।। ব্রাহ্মণান্দক্ষিণাং দত্ত্বা অভিষেকমকারয়ৎ। ক্ষেমকো নাম নৃপতি স্বৰ্গলোকং ততোঃ গতঃ।।৯।।
এই বৃত্তান্ত শ্রবণ করে প্রদ্যোত ক্রোধে রক্তচক্ষু হয়ে দ্রুত বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণগণকে আহ্বান করে ম্লেচ্ছ হননের জন্য যজ্ঞ আরম্ভ করেছিলেন।।৪-৫।।
ষোড়শ যোজন বিস্তৃত চতুষ্কোণ কুন্ড নির্মাণ করে তিনি দেবগণের ধ্যান করে ম্লেচ্ছদের আহুতি দিতে লাগলেন।।৬।।
ম্লেচ্ছগণ হার, হূণ, বর্বর, গরুড়, শক, খস, যবন, পহ্লব, রোমক, খর সম্ভব— এই প্রকার ছিলেন। তারা দ্বীপে, কামরুতে, চীন এক সাগরের মধ্যে বাস করতেন। তাদের সকলকে আহ্বান করে বেদ মন্ত্রের প্রভাবে ভস্ম করে দিয়েছিলেন।।৭-৮।।
এরপর রাজা ব্রাহ্মণগণকে দক্ষিণা দিয়ে অভিষেক করেছিলেন। এর ফলে ম্লেচ্ছগণ বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর পিতা ক্ষেমক স্বর্গবাসী হয়েছিলেন।।৯।।
ম্লেচ্ছহন্তা নাম তস্য বিখ্যাতং ভূবি সবত। রাজ্যং দশসহস্রাং কৃতং তেন মহাত্মনা।।১০।। স্বর্গলোকং গতো রাজা তৎপুত্রো বেদবানস্মৃতঃ। দ্বিসহস্রং কৃত রাজ্যং তদা ম্লেচ্ছঃ কলিঃস্বয়ম্। নারায়ণং পূজয়িত্বা দিব্য স্ততিমথাকরোৎ।। ১১।। নমোহনন্তায় মহতে সর্বকাল প্রবতিনে।।১২।। চতুযুগকৃতে তুভ্যং বাসুদেবায় সাক্ষিণে। দশাবতারায় হরে নমস্তুভৎং নমোনমঃ।।১৩।। নমঃ শস্ত্যবতারায় রামকৃষ্ণায় তে নমঃ। নমো মৎস্যাবতারায় মহতে গৌরবাসিনে।।১৪।। নমো ভক্তাবতারায় কল্পক্ষেত্রনিবাসিনে। রাজ্ঞা বেদবতা নাথ মম স্থানং বিনিনাশিতম্। মম প্রিয়স্য ম্লেচ্ছস্য তৎপিত্রা বংশনাশনম্।।১৫।।
এরপর রাজা প্রদ্যোত জগতে ম্লেচ্ছ হন্তা নামে পরিচিত হয়েছিলেন, সেই মহাত্মা দশ সহস্র বর্ষ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন এবং অন্তে স্বর্গবাসী হয়েছিলেন। তাঁর পুত্র বেদবাস দুই সহস্র বর্ষ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন। সেই সময় কলি স্বয়ং ম্লেচ্ছ ছিলেন। তিনি ভগবান নারায়ণের পূজন স্তুতি আরম্ভ করেন। কলি বললেন সমস্ত কালের প্রবর্তক, মহানন্ত স্বরূপ, চতুর্যুগের সৃষ্টিকারী সাক্ষী স্বরূপ বাসুদেব ভগবান আপনাকে প্ৰণাম।।১০-১২।।
হে হরি, দশাবতার ধারণকারী আপনাকে বারবার নমস্কার। শক্তাবতার রাম এবং কৃষ্ণ রূপধারী আপনাকে প্রণাম। মৎসাবতার রূপধারণকারী আপনাকে প্রণাম।।১৩-১৪।।
ভক্তের জন্য অবতারগ্রহণকারী তথা কল্প ক্ষেত্রে নিবাসকারী অপনাকে প্রণাম। হে নাথ, বেদবান্ রাজা আমার স্থান বিনাশ করে দিয়েছেন এবং আমার পরম প্রিয় ম্লেচ্ছগণকে তার পিতা বিনষ্ট করেছেন।। ১৫।।
ইতি স্তুতস্তু কলিনা ম্লেচ্ছস্য সহ ভাযয়া।।১৬।। প্রাপ্তবাস্ন হরি সাক্ষাদ্ভগবান ভক্তবৎসলঃ। কলিং প্রোবাচ স হরিযুষ্মদথে যুগোত্তমম্।।১৭।। বহুরূপমহং কৃত্বা তবেচ্ছাং পূরযাম্যহম্। আদমো নাম পুরুষঃ পত্নী হব্যবতী তথা।।১৮।। বিষ্ণুকদমতো জাতৌ ম্লেচ্ছবংশপ্রবধনৌ। হরিস্তদর্থে তত্র কলিংরানন্দসংকূলঃ।।১৯।। গিরিং নীলাচলং প্রাপ্য কিঞ্চিৎকালমবাসয়ৎ। পুত্রো বেদবতো জাত সুনন্দো নাম ভূপতিঃ।।২০।। পিতু স্তল্যং কৃতং রাজ্যমনপত্যো মৃতিং গত। আর্যদেশা ক্ষীনবন্তো ম্লেচ্ছবংশা বলন্বিতা।।২১।। ভবিষ্যন্তি ভৃগু শ্রেষ্ঠ তস্মাচ্চ তুহিনাচলম্। গত্বা বিষ্ণুং সমারাধ্য গমিষ্যামো হরেঃ পদম্।।২২।।
সূতজী বললেন এই প্রকার ম্লেচ্ছ ভার্যার সংগে কলি ভগবান বিষ্ণুর স্তুতি করছিলেন। তখন ভক্তের প্রতি ভালোবেসে ভগবান্ শ্রীহরি প্রকট হয়ে তাকে বলেন, দেখ, তোমার ভালোর জন্য যুগোত্তম বহুরূপ ধারণ পূর্বক তোমার ইচ্ছা পূর্ণ করব। আদম নামক পুরুষ তথা হব্যবতী নামক পত্নী রূপে জন্মগ্রহণ করব।।১৬-১৮।।
বিষ্ণু কর্দম থেকে ম্লেচ্ছের বংশ প্রবর্ধনকারী উৎপন্ন হয়েছিল। ভগবান শ্রীহরি সেখান থেকে অন্তর্ধান করেন এবং কলি আনন্দিত হন।।১৯।।
ভগবান বিষ্ণু নীলাচলে কিয়ৎকাল বাস করছিলেন রাজা বেদবানের পুত্র সুনন্দ জন্মলাভ করে এবং তিনি রাজা হন। তিনি পিতৃতুল্য রাজ্যশাসন করতে থাকেন। কিন্তু তার কোনো সন্তান ছিলনা। তিনি নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান। আর্য দেশ সেই সময় ম্লেচ্ছ দেশে পরিণত হয়।।২০-২১।।
ম্লেচ্ছযজ্ঞ বৃত্তান্ত তথা কলিকৃত বিষ্ণু স্তুতি বর্ণন ইতি শ্রুত্বা দ্বিজা সর্বে নৈমিষারন্যবাসিনঃ। অষ্টাশীতসহস্রানি গতাস্তে তুহিনাচলম।।২৩।। বিশালায়ং সমাসাদ্য বিষ্ণুগাথাং প্রচক্ষিরে। ইতি ব্যসনে কথিতং বাক্যং কলিবিশারদম্। শ্রোতারং সঃ মন কৃত্বা ভবিষ্যং সমুদীরয়ৎ।। ২৪।। মনঃ শূনু ততো গাথাং ভাবীং সূতেন বণিতাম্। কলেযুগস্য পূণাং তাং তচ্ছ্বত্বা তৃপ্তিমাবহ।।২৫।। ষোড়শাদ্বসহস্রে চ শেষে তদ্বাপরে যুগে বহুকীতিমতী ভূমিরাযদেশস্য কীতিতা।।২৬।। ক্বচিদ্বিপ্ৰাঃ স্মৃতা ভূপা ক্বচিদ্রাজ ন্যবংশজাঃ। ক্বচিদ্বৈশ্যা কচিচ্ছুদ্রাঃ কুত্রচিদ্বর্ণ সংকরাঃ।।২৭।। দ্বিশতাষ্টসহস্রে দ্বে শেষে তু দ্বাপরে যুগে। ম্লেচ্ছদেশস্য যা ভূমিভবিতা কীতিমালিনি।।২৮।। ইন্দ্ৰিয়ানি দমিত্বা যো হ্যাত্মধ্যানপরায়ন। তস্মাদাদমনামাসৌ পত্নী হব্যবতী স্মৃতা।।২৯।।
হে ভৃগুশ্রেষ্ঠ, সেই স্থান থেকে তুহিনাচলে শ্রীবিষ্ণু আরাধনা করে হরিপদ প্রাপ্ত হবে সমস্ত দ্বিজ এই কথা শ্রবণ করে নৈমিষারণ্যে বাস করতে থাকেন। তারা বিশালাতে গিয়ে বিষ্ণুগাথা প্রচার করতে থাকেন। সেখানে ব্যাসদেব কলি বিশারদের নিকট এই কথা বলেন। সেখানে তিনি মনকে শ্রোতা করে ভবিষ্য কথন করতে শুরু করেন। ব্যাসজী বললেন, হে মন, তুমি এখন শ্রবণ কর যে ভাবী গাথা সূত বর্ণিত করেছেন। সেটি কলির পূর্ণ গাথা। তা শ্রবণ করে তৃপ্তিলাভ কর।।২২-২৫।।
সূতজী বললেন, দ্বাপর যুগের শেষ ষোড়শবর্ষের পর আর্যদেশ অনেক কীর্তির দ্বারা ভূষিতা হবে।।২৬।।
আর্য হাজার দুইশত বর্ষ দ্বাপরের শেষ হলেই এই আর্যভূমি ম্লেচ্ছ দেশে পরিণত হবে। কোথাও বিপ্রগণ, কোথাও ক্ষত্রিয়গণ, কোথাও শূদ্রগণ আবার কোথাও বা বর্ণসংকর রাজত্ব করবেন।।২৭-২৮।।
ইন্দ্রিয়দমনকারী, ধ্যানপরায়ণ যিনি ছিলেন তিনি হলেন আদম ও তাঁর পত্নী–হব্যবতী।।২৯।।
প্রদাননগরস্যৈব পূর্বভাগে মহাবনম্। ঈশ্বরেন কৃতং রম্যং চতুঃ ক্রোশায়তং স্মৃতম্।।৩০।। পাপবৃক্ষতলে গত্বা পত্নীদশনতৎপরঃ। কলিস্তত্রাগতস্তনং সপরূপং হি তৎকৃতম্।।৩১।। বঞ্চিতা তেন ধূতেন বিষ্ণবাজ্ঞা ভঙ্গতাং গতা। খাদিত্বা তৎফলম রম্যং লোকমার্গপ্রদং পতিঃ।।৩২।। উদুম্বরস্য পত্রেশ্চ তাভ্যাং বায়শনং কৃতম্। সুতো পুত্ৰাস্ততো জাতাঃ সর্বেস্লেচ্ছা বভূবিরে।।৩৩।। ত্রিংশোত্তরং নবশতং তস্যায়ুঃ পরিকীতিতম্। ফলানাং হবনং কুর্বপত্ন্যা সহ দিবং গতঃ।।৩৪।। তস্মাজ্জাত সুত শ্রেষ্ঠঃ শ্বেতনামেতি বিশ্রুতঃ। দ্বাদশোত্তরবষং চ তস্যায়ু পরিকীর্তিতম্।।৩৫।। অনুহস্তস্য তনয় শতহীনং কৃতং পদম্। কীনাশস্তস্য নয় পিতামহসমং পদম্।।৩৬।।
পূর্বভাগে মহাবনযুক্ত, চতুক্রোশ বিস্তৃত নগর ঈশ্বর তাঁকে দিয়েছিলেন।।৩০।।
আদম তার পত্নী হব্যবতীকে পাপবৃক্ষের নীচে দর্শন করতে তৎপর হন। কলি সেখানে সর্পরূপ ধারণ করে চলে আসেন।।৩১।।
সেই ধূর্ত বিষ্ণুর আজ্ঞাপালন না করে তাদেরকে বঞ্চিত করেছিল। পতি আদম লোকমার্গপ্রদ রম্যফল ভক্ষণ করে। তারা দুজনে উদুম্বর পাতার দ্বারা বায়ুকে অশন করেন। এরপর সূতপুত্র হয়েও সকলে ম্লেচ্ছ হয়ে গেল।।৩২-৩৩।।
নয়শতত্রিশ বর্ষ তার আয়ু ফলের হবনকারী তিনি পত্নীর সঙ্গে মিলিত হয়ে দিব্যলোকে চলে যান। তার শ্বেত নামক শ্রেষ্ঠ পুত্র জন্মলাভ করে— যিনি পরম প্রতিষ্ঠ এবং তার আয়ু ছিল দ্বাদশোত্তর বর্ষ।।৩৪-৩৫।।
তার পুত্র অনুহ শতহীন রাজত্ব করেন। তার পুত্র কীনাহা পিতৃতুল্য পদলাভ করেন।।৩৬।
মহল্ল লস্তস্য সুত পঞ্চহীনং শত নব। তেন রাজ্য কৃতং তত্র তস্মান্মা নগরং স্মৃতম্।।৩৭।। তস্মাচ্চ বিরদো জাতো রাজ্যং ষষ্টাত্তরং সমাঃ। জ্ঞেয়ং নবশতং তস্য স্বনান্না নগরং কৃতম্।।৩৮।। হনুকস্তস্য তনয়ো বিষ্ণু ভক্তিপরায়নঃ। ফলানাং হবনং কুর্বংস্তত্ত্বং হাসি জয়ন্সদা।।৩৯।। ত্রিশতং পঞ্চষষ্টি রাজ্যং বর্ষানি তৎস্মৃতম্। সদেহঃ স্বর্গমায়াতো ম্লেচ্ছ ধর্মপরায়ণঃ।।৪০।। আচারশ্চ বিবেকশ্চ দ্বিজতো দেবপূজনম্। কৃতান্যেতানি তেনৈব তস্মাম্লেচ্ছঃ স্মৃতোবুধৈঃ।।৪১।। বিষ্ণুভক্ত্যগ্নিপূজা চ হ্যহিংসা চ তপো দম্। ধমান্যৈতানি মুনিভিম্লেচ্ছানাং হি স্মৃতানি বৈ।।৪২।। মতোচ্ছিলস্তস্য সুতো হনুকস্যৈব ভাগব। রাজ্যং নবশতং তস্য সপ্ততিশ্চ স্মৃতাঃ সমাঃ।।৪৩।।
তাঁর পুত্র মহল্লল নয়শতবর্ষের থেকে পাঁচ বর্ষ কম রাজত্ব করেছিল। রাজা মহল্ললের পুত্র বিরদষষ্ঠযুক্ত বর্ষ পর্যন্ত রাজ্য পালন করেন। অর্থাৎ নয়শ সাত বৰ্ষ পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করেন। তার নিজের নামে নগরও প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর পুত্র হনুক বিষ্ণু ভক্তি পরায়ণ ছিলেন। তিনি ফল হবন করে সর্বদা তত্ত্ব উৎপন্ন করতেন।।৩৭-৩৯।।
তাঁর রাজত্ব ছিল তিনশত পয়ষট্টি বর্ষ পর্যন্ত। তিনি স্বদেহে স্বর্গে আসেন, তিনি ম্লেচ্ছ ধর্মপরায়ণ ছিলেন।।৪০।।
আচার এবং বিবেক, দ্বিজতা এবং দেবপূজন এই সকল তিনিই করেছিলেন। এই পন্ডিতগণ তাঁকে ম্লেচ্ছ বলতেন। বিষ্ণু ভক্তি, অগ্নিপূজা, অহিংসা, তপ, দম এই ধর্ম মুণিগণ ম্লেচ্ছ সৃষ্টি করেন।।৪১-৪২।।
তাঁর পুত্র মতোচ্ছিল হক নামে পরিচিত ছিলেন। হে ভার্গব, তাঁর রাজত্বকাল নয়শত সত্তর বর্ষ।।৪৩।।
লোমকস্তস্য তনয়ো রাজ্যং সপ্তশতং সমাঃ। সপ্তসপ্ততিরেবাস্য তপ্তশ্চাৎস্বর্গতিং গতঃ।।৪৪।। তস্মাজ্জাত সুতো ন্যূহো নির্গতস্তুহ এব সঃ। তস্মান্ন্যূহঃ স্মৃতঃ প্রাজ্ঞৈ রাজ্যং পঞ্চশতং কৃতম্।।৪৫। সীমঃ শমশ্চ ভাবশ্চ এয় পুত্রা বভূবিরে। ন্যূহঃ স্মৃতো বিষ্ণু ভক্তসেসাহহং ধ্যানপরায়ন।।৪৬।। একদা ভগবান্বিষ্ণুস্তৎস্বপ্নে তু সমাগতঃ।।৪৭।। বৎস ন্যূহ শূনুষেদং প্রলয় সপ্তমেহহনি। ভবিতা ত্বং জনৈসসার্ধ নবমারুহ্য সত্বরম্।। ৪৮।। জীবনং কুরু ভক্তেন্দ্র সর্বশ্রেষ্ঠো ভবিষ্যসি তথেতি মত্বা স মুনি নাবং কৃত্বা সুপুষ্টিতাম্।।৪৯।। হস্তত্রিশতলম্বাং চ পঞ্চাশদ্বস্তবিস্তৃতাম্। ত্রিংশদ্বস্তোচ্ছ্রিতাং রম্যাং সর্বজীব সমন্বিতাম্।।৫০।।
তাঁর পুত্র লোমক সাতশতবর্ষ রাজত্ব করেন। রাজত্ব কালের সত্তর বৎসর পর তিনি স্বর্গলাভ করেন। তাঁর ন্যূহ নামক পুত্র জন্মগ্রহণ করে। প্রাজ্ঞগণ তাঁর ন্যূহ নামকরণ করেন। তিনি পাঁচশতবর্ষ পর্যন্ত রাজত্ব করেন।।৪৪-৪০।।
রাজা ন্যূহের তিন পুত্র সীম, শম এবং ভাব। তিনি বিষ্ণু ভক্ত ছিলেন এবং সর্বদা ‘সোহহং’ ধ্যান পরায়ণ থাকতেন।। ৪৬।।
একবার ভগবান বিষ্ণু স্বপ্নে তাঁকে দেখা দেন এবং বলেন, হে বৎস ন্যূহ, তুমি আমার কথা শ্রবণ কর। আজ থেকে সপ্তম দিনে প্রলয় হবে। তুমি মনুষ্যগণকে সংগে নিয়ে শীঘ্র নৌকারোহন করে জীবন রক্ষা করবে। হে ভক্তেন্দ্র, তুমি সর্বশ্রেষ্ঠ হয়ে যাবে। সেই স্বপ্নে প্রদত্ত আজ্ঞা স্বীকার করে তিনি সুপুষ্টিত নৌকা নির্মাণ করেছিলেন যা তিনশ হাত লম্বা এবং পঞ্চাশ হাত বিস্তৃত ছিল। এছাড়া সেটি ছিল ত্রিশ হাত উচ্চ এবং মনোরম ও সমস্ত জীব সমন্বিত।।৪৭-৫০।।
আরুহ্য স্বকুলৈস্মাদ্ধং বিষ্ণুধ্যানপরোহভবৎ। সাংবতকো মেঘগনো মহেন্দ্ৰেন সমন্বিতঃ।।৫১।। চত্বাবিংশদ্দিনান্যেব মহাবৃষ্টিমকারয়ৎ। সবং তু ভারতং বষং জুলৈ প্লাব্য তু সিন্ধব।।৫২।। চত্বারো মিলিতা সর্বে বিশালায়াং ন চা গতাঃ। অষ্টাশীতি সহস্রাণি মুনয়ো ব্ৰহ্মবাদিন।।৫৩।। ন্যূহশ্চ স্বকুলৈসসাধং শেষাসসর্বে বিনাশিতাঃ। তদা চ মুনয়সসর্বে বিষ্ণুমায়াং প্রতুষ্টুবু।।৫৪।। নমো দেব্যৈ মহাকাব্যৈ দেবক্যৈ চ নমো নমঃ। মহালক্ষৈন্য বিষ্ণুমাত্রে রাধা দৈব্যৈ নমোনমঃ।।৫৫।। রেবত্যে পুষ্পবত্যৈ চ স্বণবত্যে নমোনমঃ। কামাক্ষায়ৈ চ মায়ায়ৈ নমো মাত্রে নমোনমঃ।।৫৬।।
সেই নৌকায় নিজ কুলের সঙ্গে সমারোহণ পূর্বক তিনি বিষ্ণুর ধ্যানে তৎপর ছিলেন। দেবরাজ ইন্দ্রের দ্বারা সমন্বিত সংবৰ্ত্তক মেঘগণ চল্লিশ দিন মহাবৃষ্টি ঘটিয়েছিলেন। সম্পূর্ণ ভারতবর্ষ জলে প্লাবিত হয়ে মহাসিন্ধুর রূপ ধারণ করেছিল।।৫১-৫২।।
চার সাগর সেই মহাপ্লাবনে মিলে গিয়েছিল। অষ্টাশী হাজার মুণি সেখানে ব্রহ্মবাদ কথনের জন্য উপস্থিত ছিলেন এবং ন্যূহ নিজ কুলের সংগে সেখানে ছিলেন বাকী সব বিনাশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, তখন সব মুণিগণ ভগবান্ বিষ্ণু মায়ার স্তব করতে লাগলেন।।৫৩-৫৪।
মুণিগণ বললেন, হে দেবী মহাকালী, আপনাকে আমাদের সকলের প্রণাম হে দেবী দেবকী আপনাকে বার বার নমস্কার। মহালক্ষ্মী বিষ্ণুমাতা, রাধাদেবী আপনাকে বার বার আমাদের সকলের প্রণাম। দেবী রেবতী, পুষ্পবতী, স্বর্গবতী, কামাক্ষা, মায়ামাতা বারবার আপনাকে প্রণাম।।৫৫-৫৬।।
মহাবাতপ্রভাবেন মহা মেঘরবেন চ। জলধারাভিরুগরাভির্ভয়ং জাতং হি দারুণম্।।৫৭।। তস্মাদ্ভায়াদ্ভৈরবি ত্বমস্মান্সংরক্ষ কিংকরান। তদা প্রসন্না সা দেবী জলং শান্তং তয়া কৃতম্।।৫৮।। অদ্বান্তরে মহী সর্বা স্থলী ভূত্বা প্ৰদশ্যতে। আরাচ্চ শিষিণা নাম হিমাদ্রেস্তট ভূময়।।৫৯।। ন্যূহস্তত্র স্থিতো নাব মারুহ্য স্বকুলৈসসহ। জলান্তে ভূমিমাগত্য তত্র বাসং করোতি সঃ।।৬০।।
এই মহাবায়ুর প্রভাবে, এই মহামেঘের গর্জনে তথা এই পরম উগ্র জলধারাতে আমাদের মহাভয় উৎপন্ন হচ্ছে, হে ভৈরবি, এই ভয়ের থেকে তুমি এই দাসেদের রক্ষা করো। সেই সময় দেবী প্রসন্ন হয়ে জলবর্ষণ শান্ত করেছিলেন।।৫৭-৫৮।।
এক বৎসরের মধ্যে সমস্ত পৃথিবী স্থলীরূপে পরিণত হয়েছিল এবং শীঘ্র হিমাদ্রি তটভূমিতে “শিষিণা” নামক এক স্থলে নিজ কুলের সংগে রাজা ন্যূহ অবতরণ করে বাস করতে লাগলেন।।৫৯-৬০।।