১৯
আচার্য ভদ্রবাহু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে কথা বলছেন। বিষয় আত্মা। জৈনধর্মে জীব বলা হয় আত্মা- দ্রব্যকে। এটা আর পাঁচটা বস্তু থেকে আলাদা। বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে আত্মা-বস্তু আত্মগত, যা অন্য দ্রব্যে পাওয়া যাবে না। এই আত্মা প্রকৃতিগতভাবেই মুক্ত। জ্ঞান, ভোগ-উপভোগ-দুর্ভোগ—সবই হচ্ছে মুক্ত আত্মার পরিবর্তন বা সংশোধন। অবস্থাভেদে তার তারতম্য ঘটে।
ঠিক এ সময়ই সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত ও সম্রাজ্ঞী দুরধরা প্রবেশ করলেন। ভদ্রবাহুর ইশারায় শিষ্যরা সবাই উঠে গেল।
চন্দ্রগুপ্ত পদ্মাসনে বসতে বসতে বললেন, এদের সঙ্গে কথা শেষ করতে পারতেন, আচার্য, আমরাও শুনতাম।
কী নিয়ে কথা বলছিলেন, আচার্য, এ প্রশ্নটা সম্রাজ্ঞীর।
আত্মা নিয়ে কথা হচ্ছিল, বললেন আচার্য। যোগ করলেন, আত্মা অন্তর্নিহিতভাবেই নিখুঁত ও অমর। এক দেহ থেকে অন্য দেহে তার বিচরণ আছে। এখন শাস্ত্রীয় কথা থাক। বলো চন্দ্ৰ, যুদ্ধের অভিজ্ঞতা বলো।
আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, আচার্য, আপনার কাছ থেকে অনুমতি না নিয়ে যুদ্ধে গেছি।
আরে না না। এখানে তোমার কোনো ভুল নেই। আমিই তো পাটালিপুত্রে ছিলাম না। এ ছাড়া এটা একটা চলমান যুদ্ধ ছিল। তোমার জন্য আমার আশীর্বাদ সব সময়ই আছে।
মগধরাজ নন্দের সঙ্গে যুদ্ধটা শেষ হয়েছে, আচার্য।
আমি খুশি হয়েছি। মহামন্ত্রী চাণক্য কেমন আছেন?
এ যুদ্ধে তাঁর ভূমিকাই ছিল বড়। তিনি এবারও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন।
নন্দরাজের কী পরিণতি?
যুদ্ধে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর মন্ত্রী রাক্ষস ধরা পড়ায় তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
তাহলে যুদ্ধে অনেক জীবন গেছে। তুমি ভালোয় ভালোয় ফিরে এসেছ, এ আমার স্বস্তি।
সম্রাজ্ঞী এবার সম্রাটের দিকে তাকালেন। সম্রাট সম্রাজ্ঞীকেই কথা বলতে ইশারা করলেন।
আচার্য, আমি কদিন আগে আপনার সঙ্গে আমাদের অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছিলাম। আপনি সম্রাটের উপস্থিতিতে এ নিয়ে কথা বলবেন বলেছিলেন।
আমার মনে আছে। এ নিয়ে আমি আরও ভেবেছি। যা পূর্বনির্ধারিত, তা এমন এক ব্যাপার, যাকে অতিক্রম করা যায় না। কখনো কখনো একেবারেই যায় না। আপনাদের শক্ত হতে হবে।
সম্রাট উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন, বুঝলাম না, আচার্য
তুমি যুদ্ধে যাওয়ার কালে তোমার হস্তী পদতলে পিষ্ট হয়ে একটি বিড়ালের মৃত্যু হয়।
আপনি কী করে জানলেন?
এটি ছিল একটি বড় অশুভ বার্তা। তোমার যে সন্তান আসছে, সে বিড়ালের আঘাতে মারা যাবে। আমি অনেক চেষ্টা করেছি, একে পরিবর্তন করা যাচ্ছে না।
একেবারেই না?
এখনো দেখছি না।
সম্রাজ্ঞী এ কথা শুনে কাঁদতে শুরু করে দিলেন।
সম্রাট তাঁর হাত টেনে এনে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেন। ভদ্রবাহু নির্বিকারভাবে তাকিয়ে থাকলেন তাঁদের দিকে। তাঁরও কষ্ট হচ্ছে। পরে বললেন, দেখো, চেষ্টা করো। সবকিছুই পরিবর্তনশীল। তোমাদের কর্মের মাধ্যমেই তা পরিবর্তন করা সম্ভব হতে পারে।
ভদ্রবাহু ইচ্ছা করেই আশার এ আলোটুকু জ্বালিয়ে রাখলেন। সম্রাজ্ঞী তাঁর কান্না থামালেন। সম্রাট এবার গ্রিকদের বিরুদ্ধে অভিযানের কথা বললেন। গ্রিকরা সিন্ধু নদের পূর্ব তীরেও আক্রমণের কথা ভাবছে।
ভদ্রবাহু আগেই এ নিয়ে ভেবেছেন। এখন আবার চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ভাবলেন। পরে বললেন, এটা সহজেই অনুমেয় যে ওরা সিন্ধুর এ পাড়েও আক্রমণ করবে। আলেকজান্ডারের মতো সম্রাট সেলুকাসের দিগ্বিজয়ের নেশা আছে। তবে সে সফল হবে না। তোমার কিন্তু আগে আক্রমণ করতে হবে। আর এ যুদ্ধের নেতৃত্ব বা কর্তৃত্ব কোনোভাবেই অন্য কারও হাতে ছাড়া যাবে না। তুমি নিজে এ যুদ্ধের নেতৃত্ব দেবে। তার আগে তোমার সৈন্যদের সংগঠিত করো। তুমি সাধারণ সৈন্য পর্যন্ত সবার খোঁজখবর রাখবে। যুদ্ধে আমি উপসর্পিণীর প্রভাবই দেখতে পাচ্ছি। এ যুদ্ধে তোমার জয় হবে।
সম্রাট তাতে খুশি হয়ে গেলেন। সম্রাজ্ঞী খুশি হতে পারলেন না। তাঁর বুকে কাঁটার মতো বিদ্ধ হয়ে আছে বিড়াল।
প্রাসাদে সম্রাটের কক্ষে পৌঁছেই সম্রাজ্ঞী বললেন, এখন আপনার প্রধান কাজ হলো রাজ্যের সমস্ত বিড়াল নির্মূল করা। যুদ্ধ পরে হবে, সম্রাট। আমি আমার সন্তানকে হারাতে পারি না, বলে কেঁদে উঠলেন তিনি। সম্রাট সম্রাজ্ঞীর কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন যে তিনি যুদ্ধে যাওয়ার আগেই সমস্ত বিড়াল নির্মূল করবেন।
বিড়ালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। সম্রাটের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হলো, মৌর্য সাম্রাজ্যে কোনো বিড়াল থাকবে না। পাটালিপুত্র নগরে বিড়ালের একটি লোমও পাওয়া গেলে পরিণাম হবে ভয়াবহ। ফলে বিড়াল নির্মূল হয়ে গেল। মৌর্য সাম্রাজ্যের লোকালয়ে কোনো বিড়াল থাকল না। যারা পোষা বিড়ালের মৃত্যু চায় না, এরা তাদের বিড়াল গভীর জঙ্গলে পাঠিয়ে দিল। বিড়ালপ্রিয় শিশুদের কান্নাও সম্রাটের এ অভিযানকে বন্ধ করতে পারল না।
সম্রাজ্ঞী এক রাতে তাঁর কক্ষে বরাহ মিহিরকে ডেকে পাঠালেন। জানতে চাইলেন তাঁর অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ কী হবে।
মিহির বিজ্ঞের মতো বললেন, আপনার পুত্রসন্তান হবে, সম্রাজ্ঞী। যুবরাজ এক শ বছর বাঁচবেন। তাঁর কোনো রোগবালাই বা দুষ্টচক্র দেখছি না আমি। তিনিই মৌর্য সাম্রাজ্যের পরবর্তী সম্রাট।
মিহির নিজেকে তখন জৈনদের উত্তরাধিকারী ‘শ্রুতকেবলী’ দাবি করে বসলেন।
সম্রাজ্ঞী মিহিরকে নিয়ে গেলেন সম্রাটের কক্ষে। একই কথার পুনরাবৃত্তি করলেন।
সম্রাট ও সম্রাজ্ঞী উভয়েই মিহিরের কথা বিশ্বাস করলেন। এঁরা ওই ভবিষ্যৎ বাণীতে পুলকিত ও আশ্বস্ত হলেন। মিহির চলে গেলে সম্রাজ্ঞী সম্রাটকে বললেন, আচার্য ভদ্রবাহু কী বললেন? কী তাঁর উদ্দেশ্য?
আমি তা বুঝতে পারছি না, সম্রাজ্ঞী। তিনি আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী। আমার বিশ্বাসে ফাটল ধরুক, তা আমি চাই না।
কী বলছেন আপনি?
তিনি বলেছেন, কর্মে ফলাফল পাল্টাতে পারে।
কী কর্ম করতে হবে আমাদের, তা তো বলেন নি।
তিনি অনেক বাস্তববাদী মানুষ। তাঁকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে তো বাধা নেই।
আপনি যা-ই বলুন না কেন, বরাহ মিহিরই আমাদের শুভার্থী, আচার্য ভদ্ৰবাহু নন।
সম্রাটের মনেও এ রকম একটি বিশ্বাস উঁকিঝুঁকি মারছিল, কিন্তু তিনি তা ব্যক্ত করলেন না। সম্রাজ্ঞীর কথায়ও সায় দিলেন না। বললেন, অপেক্ষা করতে হবে আমাদের, আর সাবধানে থাকতে হবে।
মিহিরের মাধ্যমেই প্রাসাদের অন্দরমহলে কথাটা প্রচার পেল। এক কান দুই কান হয়ে একসময় ভদ্রবাহু ও চাণক্যের কানে গেল।
চাণক্য ভদ্রবাহুর কক্ষে এলেন। কুশল বিনিময়ের পর বললেন, পার্থিব বিষয়ে জ্ঞান অন্বেষণ করেছি আমি। বাস্তবের কঠিন বিষয়গুলোর মুখোমুখি হয়েছি, কোনো আধ্যাত্মিক শক্তি আমার নেই, বিশ্বাসও নেই। কেননা, আজীবিক ধর্ম মনে করে, সবকিছু পূর্বনির্ধারিত, ভাগ্য অপরিবর্তনশীল। আমিও তা বিশ্বাস করি এবং ধ্রুব বলে জানি। তারপরও আপনার প্রতি, আপনার আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতি আমার আস্থা ও শ্রদ্ধা রয়েছে। মিহির যা বলে বেড়াচ্ছে, তা শুনে সম্রাট-সম্রাজ্ঞীর স্বস্তি হতে পারে, আমার ভালো লাগছে না।
আচার্য ভদ্ৰবাহু হেসে দিয়ে বললেন, মিহির আমার ছোট ভাই, তার উচ্চাভিলাষ ও স্বল্প জ্ঞানবুদ্ধি তাকে অবিবেচকের মতো কথা বলতে সাহায্য করছে। এবার প্রমাণিত হয়ে যাবে তার আধ্যাত্মিক শক্তির গভীরতা কতখানি। আচার্য, আপনার শারীরিক কুশলের কথা বলুন।
যুদ্ধে এবার অনেক ঝামেলা গেছে। তবে নন্দ রাজবংশকে নির্মূল করা গেছে, এটাই আমার সাফল্য। অনেকে বলে, এটা আমার প্রতিহিংসার রাজনীতি। হয়তো তাই। আমি একেও অনিবার্য ও পূর্বনির্ধারিত নিয়তি মনে করি।
দেখুন, ধর্মীয় বিষয়ে আমি কখনো তর্ক করতে যাই নি। সব ধর্মের প্রতি আমার শ্রদ্ধা রয়েছে। আপনার আজীবিক ধর্মজ্ঞান, নীতিজ্ঞান ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং দূরদর্শিতার প্রতিও বরাবরই ভক্তি রয়েছে আমার। আমি অনেকবারই বলেছি, কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’ যুগোত্তীর্ণ মহাগ্রন্থ। আপনার মতো পণ্ডিতের জন্ম হয় হাজার বছরে একবার। আপনাকে বোঝার জন্য যে মেধা দরকার, তা অনেকের নেই বলে বিপত্তি ঘটে। আমি গর্বিত আপনি আমার কালে জন্মেছেন। চাণক্য খুব হাসলেন কথা শুনে।
চাণক্যের হাসি ভদ্রবাহুর মতো সৌম্য হাসি নয়, তাঁর চেহারার জন্য মুখমণ্ডলে হাসির রেখা মহৎ কিছু সৃষ্টি করে না, দন্ত ও কণ্ঠ সমস্যার জন্য তাঁর কথার মতোই ফেসফেসে হাসি। তা তিনি নিজেও জানেন। বললেন, আমি আপনার মতো স্বর্গীয় হাসি হাসতে পারি না, আচার্য। আমি মর্তলোকের মানুষ, মর্তলোকের কঠিন বাস্তবতা শুধু দিয়েছে। এ জন্য আমার দুঃখ নেই। আমি বরং আমার এই রূপটাকেই উপভোগ করছি।
দেহটা স্বর্গেও যাবে না, ভবিষ্যতের পথেও পা বাড়াবে না। আত্মা স্বর্গে যাবে, যদি স্বর্গ থাকে। আর মনমানসিকতা ও প্রতিভার সৃষ্টিশীলতা ভবিষ্যতের মানুষের কাছে যাবে। আমি কর্মফলে বিশ্বাসী মানুষ। আপনার কর্মই আপনাকে ভবিষ্যতের মানুষের কাছে মর্যাদার আসন তৈরি করে দেবে, বললেন ভদ্ৰবাহু।
চাণক্য বললেন, আপনি তো স্বর্গেই বাস করছেন, আচার্য। কোনো হিংসা নেই, কোনো প্রতিহিংসা নেই, বিদ্বেষ নেই, শত্রুকে ক্ষমা করার মহত্ত্ব আছে, সংকট নেই, হৃদয়জ্বালা নেই, কারও ক্ষতিতে নেই, সুখে-দুঃখে সব সময়ই আছেন। শুধু সম্রাট নয়, আমারও একমাত্র শুভার্থী আপনিই। এ রকম মানুষের জন্য এই পৃথিবীই স্বর্গ। অধ্যাত্ম-ধ্যানে তার আত্মার মুক্তি। মহামানব আর কেউ নয়, আপনি। আমি জানি আমি কত ক্ষুদ্র। যে অন্যের অনিষ্ট খুঁজে বেড়ায়, প্রতিহিংসায় জ্বলে, আঘাতে ক্ষমা নয়, প্রতিঘাত করে, দ্বৈত সত্তা নিয়ে চলে, সে আর যা-ই হোক, মহৎ ব্যক্তি নয়, পৃথিবীর নরকে তার বসবাস। এত দিন ভেবেছিলাম নন্দকে নির্বংশ করলেই আমার স্বস্তি। কই? এখন যে হাহাকার, কার জন্য তা? আর কার বিনাশের জন্য মন-প্ৰাণ জিঘাংসার বশবর্তী? অদ্ভুত চাণক্য, অদ্ভুত। হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমার কূটনৈতিক শক্তি আছে, দূরদৃষ্টি আছে, দুরভিসন্ধি আছে, জ্ঞান আছে, কিন্তু বিবেচনাশক্তি নেই, চাই আরও চাই, কী চাই, আমি আসলে তা-ও জানি না। পাওয়ায় ক্ষণিক উন্মাদনা, তারপর আবার অবসাদ, অতৃপ্তি, বিনাশের দিকে হাত বাড়ানো।
আচার্য, আজ আপনার কী হয়েছে, বলুন তো? আপনি মনে হয় অসুস্থ। বিশ্রাম প্রয়োজন।
না, আচার্য, আমি ঠিক আছি। মাঝেমধ্যেই এমন মনে হয়। মিহিরের আচরণ দেখে আমার ভেতরকার সেই মানুষটাকে যেন আবার দেখতে পেলাম, যে মানুষের কদর্য প্রবৃত্তিকে খুঁজে বের করে নিজের কাজে ব্যবহার করে, উপকারীর উপকার স্বীকার করে না, বন্ধুকে শত্রু, ভাইকে ভাইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে হিংসাকে উসকে দিয়ে, লালসাকে সীমাহীনভাবে উড়তে দিয়ে রাজনীতি করে। আমি বলেছি, যখন ছুরি শানাচ্ছ, তখন মুখে হাসতে হবে, যখন পানীয়ে বিষ মেশাচ্ছ, তখন আলাপে বিমোহিত করতে হবে, এর নামই রাজনীতি। আপনি ছাড়া আর কেউ জানে না যে কৌটিল্য আসলে আমিই। অর্থশাস্ত্রে যা বলেছি, বাস্তবে কি তা অনুসরণ করা সম্ভব? উল্টোটাই করছি আমি। এ রাজনীতির শেষ কোথায়? এ রকম আচরণ কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমাকে?
আপনি শান্ত হোন। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে নিজেকে বুঝতে পারা। তাহলেই সব অশুভ আর অমঙ্গল থেকে নিজেকে সরিয়ে আনা যায়।
তা বোধ হয় আর সম্ভব নয়। আপনার কাছে এলে শান্তি পাই। আপনাকে বলে হালকা হই। কিন্তু নিজের জায়গা থেকে ফিরতে পারি না। আবার জড়িয়ে পড়ি কূটচালে, অনৈতিক ষড়যন্ত্রে। মাঝেমধ্যে আপনার লেখা কল্পসূত্র পাঠ করি। কী মধুর তার শব্দব্যঞ্জনা, কী অসাধারণ আপনার প্রকৃতি বর্ণনা, কত মোহময় মহাবীরের প্রতি আরাধনা। চতুর্বেদ এককালে আপনিও পড়েছেন। সে বিদ্যার মহাভাব নিয়ে আপনি গেছেন জৈন ধর্মদর্শনের মর্মমূলে। কোনো কপটতা নেই, নেই কোনো শঠতা, আপনি দিগম্বর হতে পেরেছেন হৃদয়ের টানে। আর আমি নন্দের রাজপ্রাসাদ থেকে সেদিন আজীবিকের ছদ্মবেশে পলাতক হলাম কোন কৌশলে? কত পার্থক্য আমাদের। আপনার ধর্ম অন্তরে। আর আমার ধর্ম কূটকৌশলে। বেদ হজম করে আমার শান্তি হলো না। ব্রাহ্মণ একদিন ভেবে বের করল, বেদবাক্য শেষ বাক্য নয়, নিয়তিই শেষ কথা।
আচার্য চাণক্য, জগতের সব সৃষ্টিশীল প্রতিভারই ধরন তাই। ধূপ নিজেকে পুড়িয়ে গন্ধ বিলায়।
কিন্তু সে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
আপনি শুধু ধূপ নন, সেই স্বর্ণ, পুড়ে পুড়ে যে প্রতিদিন খাঁটি হচ্ছে।
আপনি সোনার মানুষ, তাই সেভাবে ভাবছেন। যাক, নিজের কথা অনেক বলে ফেললাম। ক্ষমা করবেন। যুদ্ধে আবার যেতে হবে, সে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এখন। কী অদ্ভুত ব্যাপার দেখুন, আলেকজান্ডারকে ভারতবর্ষ থেকে তাড়ানোর জন্য, সে সময় কী দেশপ্রেমই না ছিল। চন্দ্রগুপ্ত তখন কিশোর। তাঁকে পাঠালাম প্রপাগান্ডা সৃষ্টি করতে। সে দেশপ্রেমের কথা মনে হয়। আর এখন? যুদ্ধে যাচ্ছি দেশপ্রেমের জন্য নয়, দিগ্বিজয়ের জন্য। আরও কিছু বিজয় করতে হবে। সে কথা না-ই বললাম।