মৃৎপ্রদীপ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত
ঘোষক : একটি কাহিনি আজ আপনাদের শোনাব। বিশ্বাস করবেন কি না জানি না। না-ই বা যদি বিশ্বাস করেন তো মনে করবেন না হয় স্বপ্ন। রাত্রি এগারোটা। (ঢং ঢং করে রাত্রি এগারোটা বাজার শব্দ শোনা যাবে) একাকী সুমিত্রা স্বামীর অপেক্ষায় জেগে বসে আছে। আর ভাবছে। এমন সময়—
সুমিত্রা : (স্বগত) এত রাত হয়ে গেল এখনও ফিরছে না কেন? সত্যি, কী সুন্দর প্রদীপটা! এমন চমৎকার জিনিসটা, অথচ মিউজিয়াম ঘরের কিউরিয়োর মধ্যে ফেলে রেখেছিল! আশ্চর্য! আমারও এতদিন নজরে পড়েনি! সত্যি! প্রদীপের আলো তো নয়, মনে হচ্ছে যেন স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নায় সমস্ত ঘরটা ভরে গিয়েছে—!
বাইরে মোটরের হর্ন শোনা যায়। গাড়ির শব্দ।
ওই বুঝি এল এতক্ষণে। সত্যি চমকে দেব। অবাক হয়ে যাবে।
গাড়ি থামার শব্দ : সিঁড়িতে মচমচ জুতোর শব্দ। Music-solo।
ওই আসছে।
সমীর : এ কী, বারান্দায় আলো জ্বালোনি! অন্ধকার! কী ব্যাপার? ভূতের মতো বন্ধ দরজার সামনে অমন চুপটি করে দাঁড়িয়ে কেন, সুমি?
সুমিত্রা : আজ তোমাকে একটা surprise দেব।
সমীর : সত্যি! কী বলো তো?
সুমিত্রা : যদিও তোমারই প্রথম আবিষ্কার, কিন্তু নতুন করে আজ তাকে আবার আমি আবিষ্কার করেছি।
সমীর : তোমাকেও যেন মনে হচ্ছে সুমি, নতুন করে আজ রাত্রে আবার আবিষ্কার করলাম। কই, কোথায় তোমার আবিষ্কার, চলো দেখি! ওই ঘরে নাকি—?
সুমিত্রা : না। জুতো খোলো, তারপর ঘরে—।
সমীর : (হাস্য) বেশ! যথা আজ্ঞা দেবী। নাও, এই পাদুকা মোচন করলাম।
জুতো খোলার শব্দ। দরজা খোলার শব্দ।
সুমিত্রা : এসো—দ্যাখো। সত্যি বলো এখন, আবিষ্কার করেছি কি না নতুন কিছু?
সমীর : ও কী! ও-প্রদীপ তুমি কোথায় পেলে—! নিভিয়ে দাও। নিভিয়ে দাও ও-প্রদীপ। অভিশপ্ত ওর আলো—নিভিয়ে দাও—।
প্রদীপটা ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দেয় সমীর।
সুমিত্রা : ও কী করলে? অমন চমৎকার আলোটা নিভিয়ে দিলে?
সমীর : (ব্যাকুল স্বরে) তুমি তো জানো না কী নিদারুণ অভিশাপ আছে ওই প্রদীপের আলোয়! ও আলো নয়—মৃত্যুর হাতছানি!
সুমিত্রা : কী বলছ তুমি?
সমীর : হ্যাঁ। তাই তো মিউজিয়াম ঘরে সংগোপনে রেখে দিয়েছিলাম ওই প্রদীপটা!
সুমিত্রা : কিন্তু কী সুন্দর নীল আলো!
সমীর : নীল আলো নয় সুমিতা, ও বিষাক্ত নীল মৃত্যু—!
সুমিত্রা : মৃত্যু—!
সমীর : হ্যাঁ। আমার মিউজিয়াম ঘরে যে-ছবিটি আছে তিনি আমার শিক্ষাগুরু ডক্টর রুদ্র। দশ বৎসর আগের কথা। নতুন চাকরি। ডক্টর রুদ্রের সহকারী হিসাবে দক্ষিণ ভারতে খননকার্য চলেছে। মাস দুই বাদে হঠাৎ একদিন অকাল বর্ষা নামল টিপটিপ করে। তার মধ্যেই খনন চলেছে। আমি আর ডক্টর রুদ্র তাঁবুতে বসে আছি, হঠাৎ কুলিদের একটা গোলমাল কানে এল। কী ব্যাপার! গিয়ে দেখি ছিন্ন মেঘের আড়াল থেকে বৈকালী রোদ সিক্ত প্রকৃতির ‘পরে ঝলমল করছে। যে-জায়গাটা ওই সময় খোঁড়া হচ্ছিল সেটা বোধহয় ছিল একটা মন্দির। খুঁড়ে বের করা সেই অতীতের মন্দিরের একটা ভগ্ন গম্বুজের পাদমূলে—।
সুমিত্রা : কী?
সমীর : ওই প্রদীপটা। আর ওই প্রদীপটাকে বেষ্টন করে আছে একটা ভয়ঙ্কর বিষধর কালসাপ।
সুমিত্রা : কালসাপ!
সমীর : হ্যাঁ। ডক্টর রুদ্রও আমার সঙ্গে ছিলেন। তাঁরই পরামর্শ মতো আগুন জ্বেলে সাপটাকে তাড়িয়ে প্রদীপটা তাঁবুতে নিয়ে আসা হল। কুলিরা সাপটাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল, কিন্তু ডক্টর রুদ্র তা করতে দিলেন না। আমারও মনটা কেমন যেন খুঁতখুঁত করতে লাগল। সাপটাকে মেরে ফেললেই হত—!
সুমিত্রা : তারপর?
সমীর : ভূতত্ত্ববিদ ডক্টর রুদ্রর নাম তখন সারা ভারতে। তাঁর মুখেই একদিন শুনেছিলাম প্রথম যৌবনে একটি মেয়েকে তিনি ভালোবেসেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিবাহের মাত্র কয়েক দিন আগে হঠাৎ সর্পদংশনে সেই মেয়েটি মারা যায়।
সুমিত্রা : সর্পদংশনে?
সমীর : হ্যাঁ। আর তিনি বিবাহ করেননি। সেই মৃতার একটি ফটোই ছিল যেন তাঁর জীবনের সমস্ত সান্ত্বনা। কিন্তু যা বলছিলাম। সেইদিন সন্ধ্যার পর ডক্টর রুদ্রর তাঁবুতে গিয়ে দেখি হ্যাজাক আলোর পরিবর্তে তাঁবুতে সেদিন তিনি ওই প্রদীপটি জ্বেলেছেন। স্নিগ্ধ একটা জ্যোৎস্নার মতো নীল আলোয় তাঁবুটা যেন স্বপ্নসুন্দর হয়ে উঠেছে—আজও ভুলিনি সে-রাতটার কথা! সেই রাত—।
বলতে-বলতে সমীর থেমে যায়। Music শোনা যায় কয়েক সেকেন্ড।
ডক্টর রুদ্র : কে? ও, সমীর, এসো!—দ্যাখো, প্রদীপটা জ্বেলেছি! কী চমৎকার নীল আলো দিচ্ছে দ্যাখো!
সমীর : নীল আলো!
ডক্টর রুদ্র : হ্যাঁ। নীল আলো। দেখতে পাচ্ছ না?
সমীর : বাইরের চাঁদের আলো তাঁবুর মধ্যে এসে পড়েছে বলে—।
রুদ্র : না—না—ওটা ওই প্রদীপেরই আলো। বোসো, সমীর। দাঁড়িয়ে রইলে কেন? আশ্চর্য! জানো সমীর, ওই প্রদীপের আলোর দিকে এতক্ষণ চেয়ে থাকতে-থাকতে আমার কী মনে হচ্ছিল জানো?
সমীর : কী, স্যার?
রুদ্র : একটা হারিয়ে যাওয়া সুর—অস্পষ্ট একটা অনুভূতি—অনেক—অনেক দিন বাদে যেন আবার হঠাৎ খুঁজে পেয়েছি। দক্ষিণ ভারতের এক প্রান্তে এই খোলা নির্জন প্রকৃতি—চারিদিকে অতীতের ভগ্নস্তূপ—এতকাল যা মাটির অন্ধকার বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে ছিল আচমকা যেন তার ঘুম ভেঙেছে। কী যেন ওরা বলতে চায়। কী যেন ওরা জানাতে চায়—।
ভৃত্য রামরূপের প্রবেশ
রাম : সাব—!
রুদ্র : কে! রামরূপ—!
রাম : হাঁ, সাব। খানা তৈয়ার হো গিয়া—।
সমীর : চলুন, স্যার!
রুদ্র : না, সমীর। তুমি খেয়ে নাও গে যাও। আমি আজ আর কিছু খাব না।
সমীর : খাবেন না! কেন, স্যার—?
রুদ্র : শরীরটা যেন একটু—না হে, চিন্তার কোনও কারণ নেই! যাও!
রামরূপ ও সমীর চলে গেল। Silence; Music।
আশ্চর্য! কেন? কেন মনে হচ্ছে ওই প্রদীপ—প্রদীপের নীল শিখাটি আমার বড় পরিচিত? যেন কত—কতকালের চেনা নীল ওই শিখার মধ্যে কার—কার ওই মুখ ভেসে উঠছে! কে?
শাড়ির খসখস আওয়াজ। চুড়ির রিনঝিন মিষ্টি শব্দ। কে? কে?
প্রতিমা : (মৃদুকণ্ঠে) আমি!
রুদ্র : কে! কে—কাছে এসো! সামনে এসো!
প্রতিমা : আমায় চিনতে পারছ না?
রুদ্র : না তো! কে তুমি?
প্রতিমা : চিনতে পারছ না! আমিই তো সেই! জন্মে-জন্মে যাকে তুমি কামনা করে এসেছ! জন্ম হতে জন্মান্তরে আজও যার জন্য চলেছে প্রতীক্ষা! এই মুহূর্তেও যাকে তুমি ভাবছিলে—?
রুদ্র : কে—কে তুমি? তুমি কি—?
প্রতিমা : হ্যাঁ, আমিই সে-ই!
রুদ্র : তুমিই যদি সে-ই তবে সামনে আসছ না কেন? এসো—।
প্রতিমা : আমি তো তোমার পাশে-পাশেই আছি। তোমায় ছেড়ে যাব কেমন করে! এ যে জন্ম-জন্মান্তরের বন্ধন!
রুদ্র : চিনেছি! চিনেছি—তুমি প্রতিমা! কিন্তু—কিন্তু সর্পদংশনে কি তোমার মৃত্যু হয়নি?
প্রতিমা : না—!
রুদ্র : প্রতিমা। প্রতি—তুমি—তুমি সত্যিই—!
প্রতিমা : না, প্রতিমা মরেনি—রঞ্জাও মরেনি! সুন্দর—সুন্দর—শিল্পী সুন্দর—।
রুদ্র : (চেঁচিয়ে) রঞ্জা! রঞ্জা!—
Clashing music for a while. সেই music-এর মধ্যে ক্রমে-ক্রমে ‘রঞ্জা’ ডাকটা যেন হারিয়ে গেল।
ঘোষক : রঞ্জা মরেনি—সুন্দরও মরেনি। কিন্তু কোথা থেকে এল তারা! কোথায় ছিল? কবেকার কথা? কতদিনকার কথা? হে অতীত, কথা কও! অনাদি অতীত কথা কও—!
Music চলতে থাকে। ঘোষকের কণ্ঠ মিলিয়ে যায়। ক্রমে নর্তকীর রুণুঝুনু নূপুর নিক্কণ শোনা যায় আর শোনা যায় তার সঙ্গে বীণের সুর-ঝংকার।
মহারাজ আদিত্য : বাঃ, বাঃ! সত্যি! অপূর্ব নৃত্য তোমার রঞ্জা! সুন্দর—সার্থক তোমার বীণ-সাধনা!
সুন্দর (রুদ্র) : মহারাজের অশেষ করুণা—!
Music—কিছুক্ষণ। লোহার গায়ে হাতুড়ি ধাবনের শব্দ ও হাপরের শব্দ শোনা যায়। নদীতীরে অস্ত্র-উদ্ভাবক অর্জুনের কুটির। অর্জুন অস্ত্র তৈরি করছে। হঠাৎ দুয়ারে করাঘাত শোনা যায়। হাতুড়ি থামিয়ে প্রশ্ন করে।
অর্জুন : কে?
সুন্দর : দুয়ারটা খোলো, অর্জুন। আমি সুন্দর।
ঝাঁপ খোলার শব্দ।
অর্জুন : আরে, বীণবাদক সুন্দর! কী ব্যাপার, এত রাত্রে এই নির্জন শহর-প্রান্তে নদীতীরে? তাই তো, এই দীনের কুটীরে তোমায় কোথায় বসতে দিই বলো তো! বোসো—ওই প্রস্তরখণ্ডের ‘পরেই বোসো। তারপর কী সংবাদ! মুখখানা অত গম্ভীর কেন যন্ত্রবিদ?
সুন্দর : অর্জুন, আমাকে একটা জিনিস তৈরি করে দিতে পারো?
অর্জুন : নিশ্চয়ই। বলো।
সুন্দর : একটি তীক্ষ্ন ছোট ছুরিকার প্রয়োজন আমার!
অর্জুন : ছুরিকা! বীণবাদক—যন্ত্রশিল্পী তুমি, অস্ত্রের প্রয়োজন কেন তোমার? ব্যাপারটা কী বলো তো? উহুঁ। এ তো ভালো ঠেকছে না!
সুন্দর : করে দেবে কি না বলো! আর কত পারিশ্রমিক দিতে হবে বলো?
অর্জুন : পারিশ্রমিকের প্রয়োজন নেই। এমনিই তোমাকে আমি একটি ছুরিকা তৈরি করে দেব, যন্ত্রবিদ!
সুন্দর : কবে আসব বলো? কবে পাব?
অর্জুন : কয়েকটা দিন দেরি করতে হবে। হাতে কিছু কাজ আছে।
সুন্দর : খুব শীঘ্র চাই।
অর্জুন : আগামী সপ্তাহে পাবে।
সুন্দর : বেশ! আসব আমি। এখন তাহলে উঠি।
অর্জুন : এখুনি যাবে?
সুন্দর : হ্যাঁ।
বিরতি—music—রাজপ্রাসাদ। মহারাজ আদিত্য ও তাঁর বয়স্য ভার্গব।
মহারাজ : বীণবাদক সুন্দর তো এল না, ভার্গব?
ভার্গব : খোঁজ নিয়েছিলাম মহারাজ। আজকাল গৃহে সে বড় একটা থাকেই না। প্রায়ই নদীতীরে একা-একা নাকি ঘুরে বেড়ায়। সেদিন সন্ধ্যায় তাই নদীতীরে গিয়ে তাকে ধরেছিলাম।
মহারাজ : তারপর? বললে আমার কথা?
ভার্গব : বলেছিলাম। তাতে সে বললে বীণ নাকি আর সে বাজাবে না। বীণ-বাদন ছেড়ে দিয়েছে।
মহারাজ : তাকে দেখা করে বলো আগামী বাসন্তী পূর্ণিমা উৎসবে তাকে বীণ বাজানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছি। বুঝেছ?
ভার্গব : নিশ্চয় জানাব, মহারাজ।
Music—মন্দির-সংলগ্ন কালভৈরবের কুটীর। রঞ্জা ও তার সখী মিত্রা।
রঞ্জা : সংবাদ পেলি তার, মিত্রা?
মিত্রা : হ্যাঁ সখী, পেয়েছি। মহারাজের নৃত্যশালায় সে আর বীণ বাজাতে যায় না। বাড়িতে থাকে না। একা-একা শুনি কেবল নদীতীরে ঘুরে বেড়ায়।
রঞ্জা : সামনের বাসন্তী পূর্ণিমা উৎসবেও তাহলে হয়তো সুন্দর রাজপ্রাসাদে যাবে না। তবে কী হবে, মিত্রা!
মিত্রা : তুমি যাবে শুনলে হয়তো যাবে।
রঞ্জা : কিন্তু যদি না যায়! একটা সংবাদ দিতে পারিস তাকে?
মিত্রা : এখানে ডেকে আনব!
রঞ্জা : না। কালভৈরব দেখলে সর্বনাশ হবে। শুধু একটা সংবাদ দিস তাকে : আগামী বাসন্তী পূর্ণিমা উৎসবে যেন সে যায়—আর।
মিত্রা : আর কী—?
রঞ্জা : আর বলিস, উৎসবের শেষে রাজোদ্যানে বকুলবৃক্ষমূলে রাত্রি তৃতীয় প্রহরে তার অপেক্ষায় আমি থাকব। পারবি সখী এ-সংবাদটা তাকে দিতে?
মিত্রা : কেন পারব না? নিশ্চয়ই পারব।
রঞ্জা : কেউ যেন না জানতে পারে। বিশেষ করে ওই ভৈরবের অনুচর শকুনি—ওই শল্যটা।
মিত্রা : ভয় নেই। সন্ধ্যা হয়েছে, এখুনি যাচ্ছি।
Music—মিত্রা চলেছে। পশ্চাতে শল্যের ডাক শোনা গেল।
শল্য : আরে—শোনো! শোনো—প্রিয়ে মিত্রা, অত চঞ্চল চরণে কার অভিসারে চলেছ প্রিয়দর্শনা—?
মিত্রা : আ মরণ মিনসে! পিছু ডাকলে কেন বলো তো! কী? হয়েছে কী?
শল্য : এই অত্যাসন্ন সন্ধ্যায় কোথায় চলেছ, প্রিয়দর্শিকা। অভিসারে বুঝি?
মিত্রা : না! যমালয়ে। যাবে?
শল্য : আহা—হা—ও-কথা কেন? তুমি বিহনে যে আমার জগৎই অন্ধকার।
মিত্রা : অন্ধকারই যদি হয় তো একটা মশাল জ্বেলে নিয়ো—।
শল্য : হায় রে! মনের সে-অন্ধকার কি মশালের আলোয় দূর হয়, প্রিয়ভাষিণী? তুমিই যে আমার হৃদয়ের আলো! তোমা বিনে যে সব অন্ধকার।
মিত্রা : (সকৌতুকে) সত্যি?
শল্য : এখনও কি তা বুঝতে পারোনি, মিত্রা—তোমারই আলোয় যে আমি আলোকিত।
মিত্রা : আ-হা-হা! চু চু—চ—এতবড় প্রেম এ-অভাগিনীর কি সইবে—?
শল্য : সইবে না কি! বুকে করে রাখব তোমায়—।
মিত্রা : তাই রেখো—তবে তোমার বক্ষদেশে বড় কর্কশ রোমের প্রাচুর্য—কুটকুট করবে। (টানা হাসি)
শল্য : উৎপাটন করব। সব সমূলে উৎপাটন করে ফেলব।
মিত্রা : তাই তবে আগে করো—ততক্ষণ আমি একটু ঘুরে আসি—।
হাসতে-হাসতে মিত্রার পলায়ন।
শল্য : (দীর্ঘশ্বাস) হায় নারী!
বিরতি—music সহযোগে।
রুদ্র : তারপর?
রঞ্জা : তারপর এল সেই কালরাত্রি তোমার আমার জীবনের—সেই মধু বাসন্তী পূর্ণিমা উৎসব রাত্রি। মহারাজ আদিত্যদেবের নৃত্যশালায় সে-রাত্রে হয়েছে বিরাট নৃত্য-গীতের আয়োজন। নৃত্যশালার একধারে উচ্চাসনে আসীন স্বয়ং মহারাজ আদিত্য। পার্শ্বেই তাঁর রুদ্রেশ্বরের পূজারি কালভৈরব। নৃত্যশালায় সে-রাত্রে দর্শকের শ্রোতার দল যেন ভিড় করে এসেছে। তানপুরা সহযোগে গায়ক রঘুনাথ বসন্তরাগ আলাপ করছে।
তানপুরায় বসন্তরাগ আলাপ চলেছে। একটু পরে শেষ হতেই—।
সকলে : বাঃ! বাঃ! বাঃ!
মৃদু গুঞ্জন শোনা যায় দর্শকজনের। সহসা ভার্গব বলে।
ভার্গব : এবারে রঞ্জার নৃত্য! স্থির হন। আপনারা চুপ করুন।
ঘোষক : নৃত্যশালার সমস্ত আলো নিভিয়ে দেওয়া হল একে-একে। জ্বলতে লাগল কেবল একটি প্রদীপ। কিন্তু সেই একটি মাত্র প্রদীপের আলোয় যেন স্বপ্নের মতো একটা নীল দ্যুতি নৃত্যশালায় ছড়িয়ে গেল। ওই আসছে রঞ্জা। ওই শোনা যায় তার নূপুর নিক্কণ।
রঞ্জার নূপুরের শব্দ শোনা যায়। সভামধ্যে একটা অস্পষ্ট গুঞ্জনও শোনা যায়।
রঞ্জা : দাসীর প্রণাম গ্রহণ করুন, মহারাজ।
রঞ্জার নৃত্য শুরু হল। তার চরণাঘাতে নূপুর বেজে ওঠে।
মহারাজ : কী সুন্দর, বীণ তোমার নীরব কেন? যন্ত্রবিদ, যন্ত্রে তোমার সুরঝংকার তোলো।
সুন্দরের বীণ তার করাঙ্গুলি স্পর্শে টিং-টিং করে ওঠে। নৃত্য শুরু হয়। বীণ ও নৃত্য যেন পরস্পরের মধ্যে হারিয়ে যায়। সহসা বীণ মুহূর্তের জন্য থেমে যায়—একটা আর্ত চিৎকার কালভৈরবের কণ্ঠ হতে বের হয়। রঞ্জার নূপুর থেমে যায়।
সকলে : কী হল! কী হল!
কালভৈরব : আঃ!
মহারাজ : কী হল! কী হল প্রভু! আলো। আলো। সব আলো জ্বেলে দাও নৃত্যশালার।
কালভৈরব : (যন্ত্রণাকাতর কণ্ঠে) উঃ! গোপন ছুরিকাঘাত। আঃ—।
নৃত্যশালায় বহুকণ্ঠের একটা কাঁপা গুঞ্জনধ্বনি।
সুন্দর : (চাপা কণ্ঠে) রঞ্জা! রঞ্জা!
রঞ্জা : (বিস্ময়ে) অ্যাঁ—!
সুন্দর : চুপ! এসো—শিগগিরি চলে এসো!
রঞ্জা : কোথায়?
সুন্দর : দেরি কোরো না। এ প্রশ্নের সময় নয়, এসো। হাত ধরো আমার!
নৃত্যশালায় গোলমাল ক্রমে অস্পষ্ট হয়ে যায়—।
রঞ্জা : কোথায় চলেছ, সুন্দর?
সুন্দর : শীঘ্র চলো, আপাতত নদীতীরে অর্জুনের গৃহে—।
রঞ্জা : কিন্তু কালভৈরবকে হত্যা করলে কে?
সুন্দর : আমি—!
রঞ্জা : তুমি?
সুন্দর : হ্যাঁ। আমি! কিন্তু সময়ক্ষেপের অবসর নেই এখন—চলো পালাই!
রঞ্জা : কিন্তু মৃত্যুর আগে কালভৈরব যদি বলে দিয়ে থাকে। কিংবা মহারাজ যদি সন্দেহ করেন?
সুন্দর : তার আগে দূরে, বহু দূরে চলে যাব—!
এদিকে নৃত্যশালায় কালভৈরব মৃত্যু-কাতর কণ্ঠে বলছে—।
কালভৈরব : উঃ, নিশ্চয় বলছি মহারাজ, এ সেই যন্ত্রবিদ সুন্দর—সে-ই ছুরিকা নিক্ষেপ করেছে আমায়—আর রঞ্জা—!
মহারাজ : সে কী! সুন্দর! সুন্দর কই?
ভার্গব : সুন্দর! সুন্দর!—তাই তো মহারাজ, নৃত্যশালায় সুন্দরকে তো কই দেখতে পাচ্ছি না। রঞ্জাও নেই।
মহারাজ : দ্রুতগামী অশ্বারোহী সৈনিক এক্ষুনি প্রেরণ করো ভার্গব, দিকে-দিকে। যেমন করে হোক জীবিত বা মৃত তাদের দুজনকে ধরে আনা চাই—।
নদীতীর। সুন্দর ও রঞ্জা।
রঞ্জা : আর তো চলতে পারছি না, সুন্দর!
সুন্দর : আর সামান্য পথ। ওই সামনে অর্জুনের কামারশালা দেখা যাচ্ছে—আর একটু!
দূরে অশ্বক্ষুরধ্বনি অস্পষ্ট শোনা যায়।
রঞ্জা : ও কী! ও কীসের শব্দ?
সুন্দর : মনে হচ্ছে অশ্বক্ষুরধ্বনি! শিগগিরি চলো রঞ্জা। ওই যে! ওই যে অর্জুনের কামারশালার আলো দেখা যায়। আমরা এসে পড়েছি।
অর্জুনের দরজায় করাঘাত।
অর্জুন! অর্জুন!
অর্জুন : কে?
সুন্দর : শীঘ্র দোর খোলো অর্জুন…!
দরজা খোলার শব্দ। অশ্বক্ষুরধ্বনি স্পষ্ট হয়।
অর্জুন : এ কী! যন্ত্রবিদ সুন্দর! সঙ্গে এই নারীই বা কে?
সুন্দর : সব বলব। আগে দুয়ার বন্ধ করো।
দুয়ার বন্ধ করার শব্দ।
আজ রাত্রের মতো আশ্রয় দিতে হবে ভাই। রাজসৈন্যরা আসছে আমাদের ধরবার জন্য।
অর্জুন : কিন্তু—।
সুন্দর : বন্ধু, কালভৈরবকে হত্যা করে রঞ্জাকে আমি তার কবল থেকে ছিনিয়ে এনেছি।
অর্জুন : কালভৈরব শয়তানটাকে হত্যা করেছ! বেশ করেছ। ভয় নেই। নির্ভয়ে এখানে থাকো তোমরা, কেউ তোমাদের সন্ধান পাবে না!
দরজায় এমন সময় করাঘাত।
সৈনিক : দুয়ার খোলো। দুয়ার খোলো।
অর্জুন : কে?
সৈনিক : রাজসৈনিক!
দুয়ার খোলার শব্দ।
অর্জুন : কী চান আপনারা?
সৈনিক : এ-পথ দিয়ে যন্ত্রবিদ সুন্দর আর নর্তকী রঞ্জাকে যেতে দেখেছ?
অর্জুন : না তো! কেন?
সৈনিক : পূজারি কালভৈবরকে সুন্দর হত্যা করে পালিয়েছে। যদি দেখতে পাও অবিলম্বে রাজদ্বারে সংবাদ দেবে।
অর্জুন : নিশ্চয়ই।
সৈনিক : চলো হে। আরও এগিয়ে চলো।
অশ্বক্ষুরধ্বনি ক্রমে দূর-দূরান্তে মিলিয়ে গেল। বিরতি—Music।
রঞ্জা : তারপর মনে পড়ে, সুন্দর—স্থান হতে স্থানান্তরে আমরা কেবল ছুটে-ছুটে বেড়িয়েছি। পশ্চাতে আসছে তাড়া করে আদিত্যদেবের অশ্বারোহী সশস্ত্র সৈনিকের দল। যে—সুখের ঘর আমরা বাঁধতে চেয়েছিলাম, তা আর বাঁধা হল না। মৃত কালভৈরবের সেই অভিশাপ আমাদের তাড়া করে ফিরতে লাগল। ওদিকে ক্লান্ত সৈনিকের দল ফিরে গেল ব্যর্থ হয়ে।
সৈন্য : কোথাও তাদের সন্ধান পাওয়া গেল না, মহারাজ।
মহারাজ : খোঁজো। যেমন করে হোক খুঁজে বের করতেই হবে।
ভার্গব : আমার একটা নিবেদন ছিল, মহারাজ।
মহারাজ : বলো!
ভার্গব : সুন্দরকে আপনি ক্ষমা করুন।
মহারাজ : ক্ষমা করব! কী বলছ তুমি, ভার্গব! রুদ্রেশ্বরের পূজারি কালভৈরবকে সে হত্যা করেছে।
ভার্গব : তা সত্য। তবু বলব মৃত্যু দিয়ে মৃত্যুর শোধ তোলা যায় না। তা ছাড়া, সমস্ত ব্যাপারটারই আমি খোঁজ নিয়েছি। সুন্দর আর রঞ্জা পরস্পর পরস্পরকে ভালোবেসেছিল। কালভৈরব সেটা সহ্য করতে পারলে না। তার কারণ—।
মহারাজ : কারণ?
ভার্গব : কারণ কালভৈরব মনে-মনে রঞ্জাকে চেয়েছিল। তাই সে—।
মহারাজ : বলো কী ভার্গব! এ-কথা কি সত্য? রুদ্রেশ্বরের পূজারি। আজন্ম ব্রহ্মচারী—।
ভার্গব : হ্যাঁ, সত্য—রঞ্জার সখী মিত্রাই আমায় সে-কথা বলেছে—তা ছাড়া কালভৈরবের ব্যভিচারের কথা সবাই জানে এ-রাজ্যে! এতকাল ভয়ে স্বর ফোটেনি কারও। কিন্তু এখন সব প্রকাশ্যেই বলাবলি করে।
মহারাজ : সত্য বলছ তুমি, ভার্গব! ওই কুৎসিত পুরোহিতটা!
ভার্গব : সত্য। তাই তাদের প্রেমের অন্তরায় কালভৈরবকে সুন্দরের পক্ষে হত্যা করা ভিন্ন উপায় ছিল না। প্রেমের যুদ্ধে এ তো অন্যায় নয়, মহারাজ! আপনি ভেবে দেখুন—।
মহারাজ : কিন্তু সে নিজ হাতে বিচারের ভার তুলে নিল কেন? আমায় জানাল না কেন?
ভার্গব : তাতে করে তার চিরন্তন পৌরুষ কি অপমানিত হত না, মহারাজ! শুধু কি তাই, নিজেও কি সে তার প্রেমিকার কাছে ছোট হয়ে যেত না? নিজের প্রেমকে সে লজ্জা দিত না?
মহারাজ : তা হলে—?
ভার্গব : তাকে আপনি ক্ষমা করুন। ফিরিয়ে আনুন সুন্দর আর রঞ্জাকে। রঞ্জার মতো নর্তকী আর সুন্দরের মতো বীণবাদক এ-দেশের শিল্পের গৌরব। কে বলতে পারে হয়তো তাদের মিলনের মধ্যে দিয়ে তাদের শিল্প-প্রতিভা আরও সুন্দর হয়ে উঠবে। এতবড় দুটো সম্ভাবনাকে অকালে এমন করে নষ্ট করে দেবেন না। মহারাজ, রাজদণ্ডের তরবারি-মুখে—।
মহারাজ : বেশ। তবে তাই হোক। সর্বত্র ঘোষণা করে দাও, সুন্দর ও রঞ্জাকে আমি ক্ষমা করেছি। তারা ফিরে আসুক। নিজ হাতে তাদের হাতে আমি মিলন-রাখি বেঁধে দেব।
Music—বিরতি।
ঘোষক : সেই ঘোষণা শুনে আনন্দে সুন্দর আর রঞ্জা ফিরে এল আদিত্যদেবের রাজ্যে একটি বৎসর পরে। এতদিনে সত্যি বুঝি তাদের সুখের ঘর বাঁধা হবে। কিন্তু হায় রে নিয়তি! কিন্তু থাক সে-কথা। এক বৎসর পরে আজ আবার সেই মধু বাসন্তী পূর্ণিমা রাত্রি। উৎসব অন্তে তাদের প্রথম মিলন রাত্রির মধ্যে দিয়ে তারা নিজেদের পরস্পরকে আরও কাছে আরও নিবিড় করে পাবে। রাজার নৃত্যশালায় আজ সেই বাসন্তী পূর্ণিমা উৎসব—সেই প্রদীপ জ্বালা হয়েছে। স্বপ্নময় প্রদীপের নীল আলোয় লাস্যময়ী রঞ্জা নৃত্য করে। সুন্দর বাজায় বীণ!
নৃত্যের-নূপুর ধ্বনি। বীণের ঝঙ্কার শোনা যায়। হঠাৎ নূপুর থেমে গেল। রঞ্জার আর্তকণ্ঠ শোনা গেল।
রঞ্জা : উঃ!
সুন্দর : কী! কী হল রঞ্জা! ও কী, সাপ! সাপ—!
রঞ্জা : (যন্ত্রণাকাতর কণ্ঠে) হ্যাঁ, দংশন করেছে। বিদায় প্রিয়তম—(মৃত্যু)।
সুন্দর : রঞ্জা! রঞ্জা…!
মহারাজ : সুন্দর। সুন্দর—সরে যাও! সরে যাও—সাপটা তোমায় দংশন করল—!
সুন্দর : আঃ, দংশন করেছ বন্ধু! রঞ্জা! রঞ্জা—আমিও যাছি—আমিও যাচ্ছি। দাঁড়াও। দাঁড়াও—।
মহারাজ : এ কী! এ কী—সমস্ত পৃথিবী যেন কাঁপছে।
সকলে : (ভয়ার্ত কণ্ঠে) ভূকম্প! ভূকম্প!
একটা মিলিত গোলমাল। ভূমিকম্পের শব্দ। ঘরবাড়ি ভাঙার শব্দ। মানুষের আর্ত চিৎকার। Music।
বিরতি—Music! দূর হতে যেন একটা কণ্ঠস্বর ভেসে আসে।
সুন্দর : রঞ্জা। রঞ্জা।
রঞ্জা : সুন্দর। সুন্দর। কোথায় তুমি! কোথায়?
সুন্দর : সত্যি তুমি ফিরে এসেছ রঞ্জা! সত্যি এসেছ?
রঞ্জা : সুন্দর। সুন্দর—সাপ! সাপ—!
সুন্দর : কোথায়?
রঞ্জা : ওই। ওই যে—পালাও। পালাও—।
সাপটা যেন রূপান্তরিত হয় কালভৈরবে।
কালভৈরব : হাঃ হাঃ—।
রুদ্র : কে! কে!
রঞ্জা : কে! কে!
আবার হাসি। হাঃ হাঃ হাঃ।
রুদ্র : এ কী! এ কী—কালভৈরব!
রঞ্জা : কালভৈরব!
আবার হাসি : হাঃ হাঃ হাঃ—।
কালভৈরব : হ্যাঁ, তোদের নিয়তি।
রুদ্র : নিয়তি!
ফোঁস! সাপের গর্জন ও ছোবল।
রঞ্জা : আঃ!
রুদ্র : (চিৎকার করে ওঠে) রঞ্জা! রঞ্জা! প্রতিমা …..!
হাঃ হাঃ একটি হাসির অট্টরবে ‘রঞ্জা’ ডাকটা যেন হারিয়ে গেল।
Music চলবে কিছুক্ষণ—বিরতি।
সুমিত্রা : তারপর?
সমীর : তারপর পরদিন সকালে বেচারা রামরূপের ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙে উঠে তাঁবুতে গিয়ে দেখি মেঝেয়—ডক্টর রুদ্রের প্রাণহীন দেহটা পড়ে আছে। সর্বাঙ্গ নীল। সর্পদংশনে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
সুমিত্রা : সর্পদংশনে?
সমীর : হ্যাঁ। কারণ সামনেই মাটির ‘পরে প্রদীপটা পড়েছিল আর প্রদীপটাকে চক্রাকারে বেষ্টন করেছিল একটা ভয়ঙ্কর বিষধর কালসাপ। কিন্তু এবারে আর সাপটাকে রেহাই দিলাম না। রামরূপ ও আমি লাঠির ঘায়ে সাপটাকে যমালয়ে পাঠালাম। তাই বলছিলাম সুমিত্রা, ওই প্রদীপ অভিশপ্ত—ওর নীল আলোর মধ্যে আছে মৃত্যু-বিষ।
সুমিত্রা : তোমার ধারণা, সেই সাপটার দংশনেই ডক্টর রুদ্রের মৃত্যু হয়েছিল?
সমীর : নিশ্চয়ই। তাতে কোনও ভুল নেই।
সুমিত্রা : আশ্চর্য! কিন্তু কেন?
সমীর : ডক্টর রুদ্রের সর্পদংশনে মৃত্যু, কালসাপ ও প্রদীপটার সত্য স্পষ্ট ছিল। কেবল স্পষ্ট হল না সেই রাত্রির মধ্যখানের কয়েক ঘণ্টার রহস্যটা। চিরদিন অন্ধকারাবৃত অস্পষ্টই থেকে গেল। তাই ওই ‘কেন’র জবাব পাওয়া যাবে না।
সুমিত্রা : তোমার কী মনে হয়?
সমীর : আমার! আমার কী মনে হয় জানো, সুমি! ডক্টর রুদ্রের মৃত্যু, মাটি হতে খুঁজে পাওয়া ওই প্রদীপটা, আর সেই কালসাপের সঙ্গে হয়তো জড়িয়ে আছে একটা স্বপ্ন—একটা অতীতের হারিয়ে-যাওয়া কাহিনির ছিন্ন পৃষ্ঠা। ঘুম-ভাঙা স্বপ্নের মতো যা হারিয়ে গিয়েছে, যার কোনও সন্ধান আর পাওয়া যাবে না। তাই তো ওই প্রদীপটি সবার চোখের আড়ালে গোপন করে রেখে দিয়েছিলাম। একটা স্বপ্ন—একটা স্মৃতি!
Music।
মাসিক রহস্য পত্রিকা
পুজো সংখ্যা, ১৯৫৫