দ্বিতীয় খন্ড
উত্তরপর্ব
2 of 3

মহীরাজ পরাজয়াদি বৃত্তান্ত বর্ণন

।। মহীরাজপরাজয়াদি বৃত্তান্ত।।

দশাব্দে চ বয়ঃ প্রাপ্তে বিষ্ণোঃ শক্ত্যবতারকে। বসন্ত সময়ে রম্যে যযুস্তে প্রমাদাবনম্।।১। ঊষুস্তত্র ব্রতাচারে মাধবে কৃষ্ণবল্লভে। স্নাত্বা চ সাগরে প্রাতঃ পূজয়ামাসুরং বিকাম্।।২।। এমৃতুকালোদ্ভবৈঃ পুষ্পৈদুপৈদী পৈবিধানতঃ। জত্বা সপ্তশতীস্তোত্রং দধ্যুঃ সর্বকরীং শিবাম্।।৩।। কন্দমূলফলাহারা জীবহিংসাব্বির্জিতাঃ। তেষাং ভক্তিং সমালোক্য মাসান্তে জগম্বিকা।।৪। দদৌ তেভ্যো বরং তচ্ছধ্বং সমাহিতাঃ। আহ্নদায় সুরত্বং চ বলত্বং বলখানয়ে।। ৫।। কালজ্ঞত্বং চ দেবায় ব্রহ্মজ্ঞত্বং নৃপায় চ। কৃষ্ণাংশয়ৈব যোগত্বং দত্ত্বা চান্তদর্ধে শিবা।।৬।। কৃতাকৃত্যাস্তদা তে বৈ স্বগেহং পুনরাযঃ। তেষাং প্রাপ্তে বরে রম্যে মলনা পুত্রমূজিতম্।।৭।। শ্যামাঙ্গং সাত্যকেরংশং সুষুবে শুভলক্ষণম্। স জ্ঞেয়ো রনজিচ্ছুরো রাজন্যপ্রিয়কারকঃ।।৮।।

।। মহীরাজ পরাজয়াদি বৃত্তান্ত।।

এই অধ্যায়ে কৃষ্ণাংশ মহীরাজ পরাজয়াদি বৃত্তান্ত বর্ণনা করা হয়েছে। শ্রীসূতজী বললেন–বিষ্ণু অবতার দশবর্ষপ্রাপ্ত হলে পরমরম্য বসন্তকালে প্রমদা বনে গিয়েছিলেন। সেখানে কৃষ্ণবল্লভ মাধব ব্রতাচারে ছিলেন। প্রাতঃকালে সাগরে স্নান করে অম্বিকা দেবীর পূজন করতেন। সেই ঋতুতে উৎপন্ন পুষ্প এক ধূপ, দীপ দ্বারা পূজন করে বিধিপূর্বক সপ্তশতী পাঠ পূর্বক পুণ্যকারী শিবার ধ্যান করতেন।।১-৩।।

কন্দ, মূল এবং ফলাহার করে তিনি জীবহিংসা রহিত ছিলেন। এইভাবে তাঁর ভক্তিভাবে তুষ্ট অম্বিকা একমাস পরে তাঁকে বর দিয়েছিলেন। এখন একাগ্র চিত্তে তা তোমরা শ্রবণ কর।

দেবী অম্বিকা আহ্লাদকে দেবত্বের বর দিয়েছিলেন। বলখানিকে বলত্বের বর দিয়েছিলেন। দেবকে কালত্ব জ্ঞান ও নৃপকে ব্রহ্মজ্ঞত্বের বর দিয়েছিলেন। কৃষ্ণাংশকে যোগত্বের বর দিয়ে দেবী শিবা অন্তর্হিত হলেন।।৪-৬।।

তখন তারা কৃতকৃত্য হয়ে নিজ গৃহে ফিরে এলেন। এই বর প্রাপ্তির পর মলনা এক পরম অর্জিত, শ্যামাঙ্গ, শুভলক্ষণযুক্ত সাত্যকির অংশ পুত্র প্রসব করলেন। সেই পুত্র রণজিৎ শূর ছিলেন, যিনি রাজগণের প্রিয় ছিলেন।।৭-৮।।

আষাঢ়ে মাসি সম্প্রাপ্তে কৃষ্ণাংশো হয়বাহনঃ উর্বীয়াং নগরীং প্রাপ্ত একাকী নির্ভয়ো বলী।।৯।। দৃষ্ট্বা স নগরীং রম্যাং চতুর্বর্ণ নিষেবিতাম্। দ্বিজশালাং যযৌ শূরো দ্বিজধেনুপ্র পূজকঃ।।১০।। দত্তা স্বর্ণং দ্বিজাতিভ্যঃ সন্তৰ্প দ্বিজদেবতাঃ। মহীপতি গৃহং রম্যং জগাম বলবত্তরঃ।।১১।। নত্বা স মাতুলং ধীমাস্তথান্যাঁশ্চ সভাসদঃ।।১২।। তদা নৃপাজ্ঞায়া শূরা বন্ধনায় সমুদ্যতাঃ। খড়্গহস্তা সমাজৰ্যথা সিংহং গজাঃ শশাঃ।।১৩।। মোহিতং তং নৃপং কৃত্বা দুষ্টবুদ্ধির্মহীপতিঃ। কৃত্বা লোহময়ং জালং তস্যোপরি সমাদধেঃ।।১৪।। এতস্মিন্নন্তরে বীরো বোধিতো দেবমায়য়া। আগস্কৃতান্নিপূঞ্জাত্বা খড়্গহস্ত সমাবধীৎ।।১৫।। হত্বা পঞ্চশতং শূরো হয়ারূঢ়ো মহাবলী। উর্বীয়াং নগরীং প্রাপ্য জলপানে মনো দধৌ।।১৬।।

আষাঢ় মাসে কৃষ্ণাংশ অশ্বারূঢ় হয়ে একাকী নির্ভয় এবং বলবান্ উর্বীয়ানগরীতে গিয়ে পৌঁছালেন। তিনি অত্যন্ত রম্য সেই নগরীতে চারবর্ণের লোকেদের দেখলেন। সেই শূর সেখানে দ্বিজশালাতে দ্বিজ ও ধেনু প্রপূজক দেখলেন। সেখানে দ্বিজাতিগণকে স্বর্ণদান করে ও তাঁদের দ্বিজ দেবতাগণকে তর্পণ দিয়ে রম্য গৃহে চলে গেলেন। সেই ধীমান মাতুলকে নমস্কার করে তথা অন্য সভাসদ্‌ণকে প্রণাম করে নৃপাজ্ঞাতে শূরবন্ধনের জন্য উদ্যত হলেন। খড়্গ হস্তে ধারণ করে শশ যেমন সিংহের কাছে আসে তেমন সেই শূরগণ আসতে লাগলেন। দুর্বুদ্ধি মহীপতি সেই রাজাকে মোহিত করে লৌহময় জাল বিস্তার করে তার উপর চাপিয়ে দিলেন। ইতিমধ্যে দেবগণের মায়াতে সেই বীর বোধিত হয়ে তিনি অগ্রস্থিত শত্রুগণকে খড়্গহস্তে মেরে দিলেন। সেই শূরবীর পাঁচশ সৈন্যকে হত্যা করে অশ্বারূঢ় হয়ে উর্বীয় নগরীতে গিয়ে জলপান করলেন।।৯-১৬।।

কূপে দৃষ্ট্বা শুভ নাযো ঘট পূতিকরীস্তদা। উবাচ মধুরে বাক্যং দেহি সুন্দরি মে জলম্।।১৭।। দৃষ্ট্বা তাঃ সুন্দরং রূপং মোহনায়োপচক্রিরে। ভিত্ত্বা তাসাং তু বৈ কুম্ভাপয়য়িত্বা হয়ং জলম্।।১৮।। বনং গত্বা রিপুং জিত্বা বদ্ধা তমুভয়ং বলী। চন্ডিকাপার্শ্বমাগম্য তদ্বধায় মনোদধে।।১৯।। শ্রুত্বা স করুণং বাক্যং ত্যক্ত্বা স্বনগরং যযৌ। নৃপন্তিকমুপাগম্য বৰ্ণয়ামাস কারণম্।।২০।। শ্রুত্বা পরিমলো রাজা দ্বিজা তিভ্যো দদৌ ধনম্। সমাঘ্রায় স কৃষ্ণাংশং কৃতকৃত্যেহ ভবপঃ।।২১।। সম্প্রাপ্তৈকাদশদ্বে তু কৃষ্ণাংশে যুদ্ধ দুমদে। মহীপতিনিরুৎসাহঃ প্রযযৌ দেহলীং প্রতি।।২২।। বলিং যথোচিতং দত্ত্বা ভগিন্যৈ ভয়কাতরঃ। রুরোদ বহুধা দুঃখং দেশরাজাত্মজপ্রজম্।।২৩।।

কূপের মধ্যে ঘটপূর্ণকারী সুন্দরী স্ত্রীগণকে তিনি দেখেছিলেন। তাঁদের দেখে মধুর বাক্যে বললেন হে সুন্দরী, আমাকে জলপান করাও। সেই স্ত্রীগণ পরমসুন্দর মোহনরূপ দেখে বিবশ হয়ে গেলেন। তাদের ঘট নিয়ে জলপান করে, অশ্বদের জলপান করিয়ে বনমধ্যে শত্রুগণকে জয় করে সেই বলী সেই দুইজনকে বন্ধন করে চন্ডিকাদেবী সমীপে নিয়ে গেলেন এবং তাদের বধ করার কথা চিন্তা করলেন।।১৭-১৯।।

তাদের বারুণ বচন শ্রবণ করে তাদের ত্যাগ করে নিজনগরে চলে গেলেন। রাজার কাছে গিয়ে সমস্ত কারণ বর্ণনা করলেন। রাজা পরিমল তা শ্রবণ করে ব্রাহ্মণদের প্রভূত ধনদান করলেন এবং কৃষ্ণাংশের মস্তক আঘ্রাণ করে কৃতকৃত্য হলেন।।২০-২১।।

অগমা ভগিনী তস্য দৃষ্ট্বা ভ্রাতরমাতুরম্। স্বপতিং বর্ণয়ামাস শ্রুত্বা রাজাব্রবীদিদম্।।২৪।। অদ্যাহং স্ববলৈঃ সার্দ্ধংগত্বা তত্র মহাবতীম্। হনিষ্যামি মহাদুষ্টং দেশরাজসুতং রিপুম্।।২৫।। ইত্যুক্ত্বা ধুন্ধুকারং চ সমাহৄয় মহাবলম্। সৈন্যমাজ্ঞাপয়ামাস সপ্তলক্ষং তনুত্যজম্।।২৬।। কেচিচ্ছুরা হয়ারূঢ়া উষ্ট্রারূঢ়া মহাবলাঃ। গজারূঢ়া রথারূঢ়া সংযযুশ্চ পদনয়ঃ।।২৭।। দেবসিংহস্তু কালজ্ঞঃ শ্রুত্বা চাগমনং রিপোঃ। নৃপপার্শ্বং সমাগম্য সর্বং রাজ্ঞে ন্যবেদয়ৎ।।২৮।। শ্রুত্বা পরিমলো রাজা বিহ্বলোহ ভূওয়াতুরঃ। বলখানিস্তমুখায় হর্ষযুক্ত ইবাহ চ।।২৯।। অদ্যাহং চ মহীরাজং ধুন্ধুকারং সসৈন্যকম্। জিত্বা দন্ডযং চ ভবতঃ করিষ্যামি তবাজ্ঞয়া।।৩০।। ইত্যুক্ত্বা তং নমস্কৃত্য সেনাপতিঃ ভূন্মুনে। তদা তু বির্ভয়া বীরা দৃষ্ট্বা রাজানমাতুরম্।।৩১।।

সেই কৃষ্ণাংশ যখন এগারো বর্ষের ছিলেন, তখন যুদ্ধ দুর্মদ তাকে দেখে মহীপতি উৎসাহহীন হয়ে দেহলীনগরে চলে গেলেন। যথোচিত বলী দিয়ে ভয়কাতর ভগিনীকে দেখে দেশরাজ পুত্রের আচরণে দুঃখিত হয়ে অত্যন্ত রোদন করেছিলেন। তাঁর অগমা ভগিনী ভ্রাতাকে ভয়কাতর দেখে নিজ পতির কাছে তা বর্ণনা করেছিলেন। সে কথা শুনে রাজা বললেন,–আজই আমি সৈন্যসহ মহাবতী গিয়ে সেই দেশরাজ পুত্রকে মারব। একথা বলে তিনি ধুন্ধুকারকে ডেকে মহাবল বালী সেনাকে আদেশ দিয়েছিলেন, নিজ শরীরের প্রতি মায়া না করে সাতলক্ষ সেনা সেই আদেশ পালন করেছিল।। ২২-২৬।।

সেই সেনা দলে অশ্বারোহী, গজারূঢ়, উষ্ট্রারূঢ়, পদাতিক সকল সেনা ছিল। দেবসিংহ বরদানী কালের জ্ঞাতা ছিলেন। তিনি শত্রুর আগমন শ্রবণ করে রাজার সমীপে গিয়ে সকল বৃত্তান্ত রাজাকে বর্ণন করলেন।।২৭-২৮।।

চতুলক্ষবলৈঃ সার্দ্ধং তে যুদ্ধায় সমাযযুঃ। শিংশপাখ্যং বনং ঘোরং ছেদয়িত্বা রিপোস্তদা।।৩২।। ঊষুস্তত্র রণে মত্তাঃ শর্বশত্রুভয়ঙ্করা। এতস্মিন্নন্তরে তত্র ধুন্ধুকারাদয়ো বলাঃ।।৩৩।। কৃত্বা কোলাহলং শব্দং যুদ্ধাযু সমুপাযঃ। পূর্বাহ্নে তু ভৃগুশ্রেষ্ঠ সন্নদ্ধাস্তে শতঘ্নিপাঃ।।৩৪।। শতঘ্নীভিস্ত্রিসাহস্রৈঃ পঞ্চসাহস্ৰকা যঃ। দ্বিসহস্রশতঘ্নীভিঃ সহিতা শ্চন্দ্রবংশিনঃ।।৩৫।। সৈন্যং ষষ্টিসহস্ৰং চ স্বর্গলোকমুপাযযৌ। তদৰ্দ্ধং চ তথা সৈন্যং মহীরাজস্য সংক্ষিপ্তম্।।৩৬।। দুদ্রুবুভীরুকাঃ শূরাঃ বলখানেদিশো দশ। রথা রথৈ রণং ইনর্গর্জাশ্চৈব গজৈস্তথা।।৩৭।।

পরিমল রাজা সকল কিছু শ্রবণ করে ভয়বিহ্বল হলেন। বলখানি তাকে উঠিয়ে হর্ষিত হয়ে বললেন–আজ আমি মহীরাজ, ধুন্ধুকার ও সকল সেনাকে জয় করে যোগ্য দন্ড প্রদান করব। একথা বলে তাকে নমস্কার করে সেই সেনাপতি চলে গেলেন। তখন বীর রাজাকে আতুর দেখে নির্ভয় হয়ে গেলেন তারা সকলে চারলক্ষ সেনা সহিত যুদ্ধের জন্য চলে গেলেন। সেই সময় শিংশয়া নামক ঘোর রিপু বনছেদন করে সেখানে রণে মত্ত হয়ে সমস্ত শত্রুর প্রতি ভয়ংকর হলেন। সেই সময় ধুন্ধুকার প্রভৃতি মহাবল প্রভূত কোলাহল পূর্বক যুদ্ধের জন্য সেখানে এসে উপস্থিত হল। হে ভৃগুশ্রেষ্ঠ, পূর্বাহ্নে তারা শতঘ্নী সন্ধস্ত হয়ে গেল। তিন সহস্র ও পাঁচ সহস্র শতঘ্নী পরস্পর যুদ্ধ করতে লাগল। চন্দ্রবংশীগণ সহস্র শতঘ্নীর সঙ্গে ছিলেন।।২৯-৩৫।।

হয়া হয়েস্তথা উষ্টা উষ্টপৈশ্চ সমাহনন্। এবং সুতুমুলে জাতে দারুনে রোমহর্ষণে।।৩৮।। হাহাভূতাস্বকীয়াংশ্চ সৈন্যাদৃষ্ট্বা মহাবলান্। অপরাহ্ণে ভৃগুশ্রেষ্ঠ পঞ্চ শূরাঃ সমাযঃ।।৩৯।। ব্রহ্মানন্দঃ শবৈঃ শত্ৰুননয়দ্যমসাদনম্। দেবসিংহস্তথা ভল্লৈরাহ্রাদস্তত্র তোমরৈঃ।।৪০ । বলখানি স্বশঙ্খেন কৃষ্ণাংশস্তু তথৈব চ। দ্বিলক্ষাক্ষত্রিয়াঞ্জঃ সর্বসৈন্যৈ সমস্ততঃ।।৪১।। দৃষ্ট্বা পরাজিতং সৈন্যং ধুন্ধুকারো মহাবলঃ। আহ্লাদং চ স্বভল্লেন গজারূঢ়ঃ সমাবধীৎ।।৪২।। আহ্লাদে মূৰ্চ্ছিতে তত্র দেবসিংহো মহাবলঃ। ভল্লেন ভ্রাতরং তস্য দংশয়ামাস বেগতঃ।।৪৩।।.. স তীক্ষ্ণব্রণমাসাদ্য গজস্থঃ সম্মুমোহ বৈ। আগতাঃ শতরাজানো নানাদেশ্যা মহাবলাঃ।।৪৪।। শস্ত্রাণ্যস্ত্রানি তেষাং তু ছিত্তাং খড়েন বৎসজঃ। স্বখনে শিরাং স্যেষাং পাতয়ামাস ভূতলে।।৪৫।।

এইভাবে ষাটহাজার সেনা মারা গেলে মহীরাজের সৈন্যবল অর্ধেক হয়ে গেল। বলখানির ভয়ে শূরবংশ দশদিকে পলায়ন করল। রথের দ্বারা রথ, গজের দ্বারা গজ, অশ্বের দ্বারা অশ্ব, উষ্ট্রের দ্বারা উষ্ট্র মারা গেল। এইভাবে সেখানে তুমুল রোমাঞ্চকারী যুদ্ধ হল। মহান বলবান্ হাহাভূত নিজ পাঁচহাজার শূর সৈন্য নিয়ে অপরাহ্নে এলেন।।৩৬-৩৯।।

ব্রহ্মানন্দ শরাঘাতে শত্রুগণকে যমরাজ্যে প্রেরণ করলেন। এইভাবে দেবসিংহ ভল্লের দ্বারা, আহ্লাদ তোমরের দ্বারা শত্রুগণকে যমপুরে পাঠালেন। বলখানি ও কৃষ্ণাংশ খর্গ দ্বারা চতুর্দিকে সমস্ত সৈন্যসহ দুই-তিনলক্ষ ক্ষত্রিয়ের বধ করলেন। মহাবল ধুন্ধুকার সেনাদের পরাজিত হতে দেখে গজারূঢ় হয়ে ভল্লের দ্বারা আহ্লাদকে বধ করলেন। আহ্লাদকে মূর্ছিত হতে দেখে বলী দেবসিংহ অত্যন্ত বেগে ধুন্ধুকারের অগজকে ভল্লের দ্বারা দংশিত করল। তিনি আহত হয়ে গজের উপর মূর্ছিত হয়ে গেলেন। তখন বিভিন্ন দেশের একশত মহাবলী রাজা যুদ্ধে উপস্থিত হলেন। বৎসজ নিজ খর্গ দ্বারা তার মস্তক খন্ডিত করলেন।।৪০-৪৫।।

হতে শত্রুসমূহে তু তচ্ছেষাস্তু প্রদুদ্ৰুবুঃ। মহীরাজস্তু বলবান্দৃষ্ট্বা ভগ্নং স্বসৈন্যকম্।।৪৬।। আজগাম গজারূঢ়ঃ শিবদত্তবরো বলী। রৌদ্রেণাস্রেন হৃদয়ে চাবধীদ্বৎ সজং রিপুম্।।৪৭।। আহ্লাদং চ তথা বীরং দেবং পরিমলাত্মজম্। মূৰ্চ্ছয়িত্বা মহবীরাঞ্ছক্রসৈন্যমুপাগমৎ।।৪৮।। পূজয়িত্বা শতঘ্নীশ্চ মহাবধমকারয়ৎ। রোপণস্বরিতো গত্বা রাজ্ঞে সর্বমবর্ণয়ম্।।৪৯।। এতস্মিন্নস্তরে বীরঃ সুখখানিমহাবলঃ। কপোতং হয়মারুহ্য নভোমার্গেণ চাগমৎ।।৫০।।

এইভাবে সমস্ত শত্রু হত হয়ে গেলে অবশিষ্ট জীবিতগণ পলায়ন করল। মহীরাজ নিজ সেনাদের রণেভঙ্গ দিতে দেখে শিবদত্ত বলবান্ হাতীতে চেপে রৌদ্র অশ্বের দ্বারা বৎসজ সেনাদের হত্যা করলেন। তথা আহ্লাদও দেবসিংহকে মূর্ছিত করে শত্রুসেনা দলে চলে এলেন।।৪৬-৪৮।।

মূৰ্চ্ছয়িত্বা মহীরাজং স্ববন্ধুংশ্চ সবাহনান্। কৃত্বা নৃপাত্তমাগম্য বন্ধনায় সমুদ্যতঃ।।৫১।। তদোত্থায় মহীরাজো মহাদেবেন বোধিতঃ। পুনস্তানস্বশরৈ রৌদ্রেমূৰ্চ্ছয়ামাস কোপবান্।।৫২।। সুখখান্যদিকাচ্ছুরাস্নংবধ্য নিগড়ৈদুঢ়ৈঃ। নৃপং পরিমলং প্রাপ্য পুন যুদ্ধমচীকরৎ।।৫৩।। হাহাভূতং স্বসৈন্যং চ দৃষ্ট্বা স উদয়ো হরিঃ। নভোমার্গে হয়ং কৃত্বা তাঃ শতঘ্নী নাশয়ৎ।।৫৪।। মহীরাজ গজং প্রাপ্য বদ্ধা তং নিগডৈবলী। আহ্লাদপার্শ্বমাগম্য ভ্রাত্রে ভূপং সমৰ্পয়ৎ।।৫৫।। তদা তু পৃথিবীরাজো লজ্জিতস্তেন নির্জিতঃ। পঞ্চকোটিধনং দত্ত্বা স্বগেহং পুনরাযযৌ।।৫৬।। দেবসিংহাজ্ঞয়া শূরো বলখানির্হি বৎসজঃ। তৈদ্রব্যৌনগরীং রম্যাং কারয়ামাস সুন্দরীম্।।৫৭।। .

পূজা করে শতঘ্নীগণকে বধ করলেন। গোপন অতি শীঘ্র এইসব বৃত্তান্ত কাজাকে বললেন। ইতিমধ্যে মহাবলবাবীর মুখখানি নিজ কপোত নামক অশ্বে সমারোহণ করে আকাশ মার্গে সেখানে পৌঁছালেন। তিনি মহীরাজকে মূর্ছিত করে নিজবন্ধুদের বাহন দিয়ে রাজাকে পাশ দ্বারা বেঁধে ফেললেন। সেই সময় মহাদেব মহীরাজকে বোধিত করলে তিনি ক্রোধিত হয়ে পুনরায় রুদ্র শরের দ্বারা সুখখানিকে মূর্ছিত করলেন। সুখখানি প্রভৃতি শূরদের দৃঢ় নিগড়ে বেঁধে রাজা পরিমলের সঙ্গে নিজ সেনাদের দেখে নিজ অশ্বে আরোহণ করে সেই শতাঘ্নীগণকে নাশ করলেন।।৪৯-৫৪।।

গজারোহী মহীরাজের কাছে গিয়ে তাঁকে নিগড়ে বন্ধন করলেন ও আহ্লাদের কাছে গিয়ে রাজাকে সমর্পণ করলেন।।৫৫।।

শিরীষাখ্যাং পুরং নাম তেন বীরেন বৈ কৃতম্। সর্ববর্ণসমাযুক্তং দ্বিক্রোশযামসংমিতম্।।৫৮।। তত্রৈব ন্যবসদ্বীরো বৎসজঃ স্বকুলৈঃ সহ। ত্রিংশৎক্রোশে কৃতং রাষ্ট্রং তত্রৈব বলখানিনা।।৫৯।। শ্রুত্বা পরিমলো রাজা তত্রাগত্য মুদান্বিতঃ। আঘ্রায় বৎসজং শূরং দেবরাজ সুতং তথা।।৬০।। ব্রহ্মানন্দেন সহিতঃ স্বগেহং পুনরাযযৌ।।৬১।।

তখন পৃথ্বীরাজ নির্জিত হয়ে লজ্জিত হলেন। তিনি পাঁচকোটি ধনসম্পদ দিয়ে মুক্তিলাভ করে নিজ গৃহে ফিরে এলেন। দেবসিংহের আজ্ঞায় বৎসজশূর বলখানি নিজ নগরীকে পরমসুন্দর ও রম্য করেছিলেন। সেই নগরীর নাম রেখেছিলেন শিরীষ। সেই নগরীতে সমস্ত বর্ণের লোক নিবাস করতেন এবং তা ছিল দ্বিক্রোশ আয়ামযুক্ত। সেখানে বীর বৎসজ নিজ বংশের লোকেদের সঙ্গে নিবাস করতেন। বলখানি সেখানে তিন ক্রোশ ব্যাপী রাষ্ট্র নির্মাণ করেছিলেন। রাজা পরিমল একথা শুনে আনন্দিত চিত্তে সেখানে এলেন। শূরবৎসজ তথা দেশরাজ পুত্রের মস্তক আঘ্রাণ করে ব্রহ্মানন্দের সঙ্গে নিজগৃহে ফিরে গেলেন।। ৫৬-৬১।।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *