1 of 2

মহাপ্লাবন – ২৪

চব্বিশ

বেসুরো ট্রাম্পেট বাজতেই শুরু হলো চতুর্থ রাউণ্ড।

সোহেল দেখল, আগের মত তেড়ে না এসে অপেক্ষা করছে দানব। এগোলে এক ঘুষিতে খতম করবে ওকে। ব্যাটা হয়তো ক্লান্ত। অথবা, ও পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলেই নতুন এই কৌশল।

প্রতিপক্ষের চোখে তাকাল সোহেল।

এগোতে হাতের ইশারা করছে দানব।

মাথা নাড়ল সোহেল।

তাতে খাটো লাঠি বাতাসে দুলিয়ে আবারও ইশারা করল দৈত্য।

এবারও জায়গা থেকে নড়ল না সোহেল।

চালমাত অবস্থা।

দৈত্য এগোতেই একপাশে সরল সোহেল। বৃত্ত তৈরি করে ঘুরতে লাগল ওরা। হামলায় যাচ্ছে না কেউ।

শিস দিচ্ছে দর্শকরা। ধৈর্য হারালে গালি দেবে।

এরিনার ভেতর পরিবেশটা থমথমে।

হঠাৎ সোহেলের পায়ের নিচে কাত হয়ে ওপরে উঠতে লাগল মেঝে। হাইড্রলিক জ্যাক খাড়া করছে বৃত্তের বাইরের দিক। মাঝের অংশ স্থির। এবার লড়তে হবে ছোট ওই জায়গায়। সরে যাওয়ার উপায় নেই।

মেঝের বাইরের দিক ওপরে উঠছে দেখে চওড়া হাসল দানব। ধীর পায়ে এসে দাঁড়াল মাঝের বৃত্তে।

পঁয়ত্রিশ ডিগ্রি কাত হলো মেঝে। প্রায় বসে মেঝেতে একহাত রেখে তাল সামলাতে চাইল সোহেল। কিন্তু মেঝে পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রি খাড়া হতেই পিছলে যেতে লাগল পা।

খুশিতে হৈ-হৈ করে উঠল দর্শকরা। আশা করছে চাল কুমড়োর মত গড়িয়ে গিয়ে দানবের খপ্পরে পড়বে সোহেল।

যে-কোনও সময়ে ভারসাম্য হারাবে বুঝে, বাধ্য হয়ে উঠে দৌড় শুরু করল সোহেল। সরাসরি যাচ্ছে না দানবের দিকে। বাড়ছে নেমে যাওয়ার গতি। খাড়া পারে যেভাবে কাত হয়ে ছোটে দ্রুতগামী গাড়ি, সেভাবে ছুটে দানবটাকে এড়াতে চাইল সোহেল।

ওকে লক্ষ্য করে পা ঘুরিয়ে লাথি হাঁকাল দৈত্য। তবে পা টপকে গিয়ে না থেমে তার মাথার চাঁদিতে একটা ঘুষি বসাল সোহেল।

ভারসাম্য হারিয়ে হুড়মুড় করে মেঝেতে পড়ল দানব।

ঘুরে হামলা করতে চাইল সোহেল, কিন্তু তখনই কয়েক ধাপে নেমে গেল মেঝে।

হাইড্রলিকের হিসহিস গর্জন একটু দেরিতে শুনেছে সোহেল। খুলে দেয়া হয়েছে বড় কোনও ভাল্‌ভ্। তক্তা সমান হতেই তাল হারিয়ে ধুপ করে মেঝেতে পড়ল ও। বেদম ব্যথা পেয়েছে মাথায়। শরীরটা গড়িয়ে দিয়ে ভাবল, অন্যায় হচ্ছে ওর প্রতি। মুখ তুলে দেখল উঠে তেড়ে আসছে দৈত্য।

সোহেলের হাত থেকে হ্যাঁচকা টানে লাঠি কেড়ে নিল সে। পরক্ষণে সাঁই করে চালাল মাথা লক্ষ্য করে। দু’হাতে মাথা বাঁচাতে চাইল সোহেল। খটাং করে লাঠি নামল টাইটেনিয়ামের বাহুর ওপর। পরক্ষণে পিছলে লাগল মাথার পাশে।

ওর মনে হলো, রাবারের মত নরম হয়ে গেছে দু’পায়ের পেশি। বুকে কে যেন বলল, ‘উঠে দৌড়া! নইলে খুন হবি!’ কানের ভেতর ভনভন আওয়াজ।

উঠে বসতে গিয়ে চিত হয়ে মেঝেতে পড়ল সোহেল। রেফারি নেই যে সময় গুনে বলবে, ও হেরে গেছে। ছাত থেকে আসছে চোখ ধাঁধানো আলো। তারই মাঝে কালো একটা গহ্বর।

সেকেণ্ডের জন্যে উজ্জ্বল আলোকে আড়াল করল দৈত্য। খাটো লাঠির বাড়িতে ফাটিয়ে দেবে সোহেলের মাথা। কিন্তু তখনই বেজে উঠল বেসুরো ট্রাম্পেট। ঘুরে নিজের সিটের দিকে চলল দানব।

‘সৌজন্যবোধ আর বীরত্ব এখনও হারিয়ে যায়নি পৃথিবী থেকে,’ বিড়বিড় করল সোহেল। মেঝেতে পড়ে রইল চুপ করে। পায়ে পেতে হবে শক্তি। তখনই ওপর থেকে কী যেন পড়ল ওর পেটে।

জিনিসটা হাতে নিয়ে দেখল সোহেল।

হলদেটে।

মাঝে ফুটো।

পাঁচ ইয়েনের কয়েন!

সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার হয় জাপানে।

মুহূর্তে মন ভাল হয়ে গেল সোহেলের।

কাছেই কোথাও আছে রানা!

আবারও ছাতের দিকে তাকাল সোহেল।

তখনই দপ্ করে নিভে গেল চারপাশের সব বাতি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *