দ্বিতীয় খন্ড
উত্তরপর্ব
2 of 3

মঙ্গলাচরণ

।। মঙ্গলাচরণ।।

কল্যাণানি দদাতু বো গণপতির্যস্মিন্নতুষ্টে সতি। ক্ষোদীযস্যপি কর্মণি প্রভবিতুং ব্রহ্মাপি জিহ্মায়তে। ভেজে যচ্চরণারবিন্দমসকুস্তৌবাগ্যদয়ৈস্তে। নৈষা জবতি প্রসিদ্ধি মগমদ্দেবেন্দ্রলক্ষ্মীরপি।।১।। শশ্চৎ পুণ্যহিরণ্যগর্ভ রসনাসিংহাসনাধ্যাসিনী। সেয়ং বাগধিদেবতা বিতরতু শ্রেয়াংসি ভয়াংসি বঃ। যৎপাদামলকোলাঙ্গুলি নখজ্যোস্নাভিরুদ্বেল্লিতঃ।। শব্দব্রহ্মসুধাংবুধিবুধমনস্যুচ্ছৃংখল খেলতি।।২।। নমস্তস্মৈ বিশ্বোদয়বিলয়রক্ষাপ্রকৃতয়ে শিবায়। ক্লেশোমচ্ছিদুরপদ পদ্মপ্ৰণতয়ে। অমন্দস্বন্দপ্রথিতপৃথুলীলাত ভূতে। ত্রিবেদীবাচামপ্য পথনিজতত্ত্বাস্থিতিকৃতে।।৩।

উত্তরপর্ব ।। মংগলা চরণ।।

মঙ্গলাচরণম্ গণপতি আপনার কল্যাণ করুন। যিনি অতুষ্ট হলে ছোট কার্য ও ব্রহ্মা করতে অসমর্থ হন। যার চরণারবিন্দ বার বার সেবন ব্ৰহ্ম করেন দেবেন্দ্র লক্ষ্মীও তাঁর দ্বারা জগতে প্রসিদ্ধি প্রাপ্ত হন। সবদা পরম পবিত্র হিরন্যগর্ভের রসনা রূপী সিংহাসনোপরি অধ্যাস কারী বাগদেবী আপনাকে প্রভূত শ্রেয় বিতরণ করুন। যাঁর চরন অমল এবং কোমল অঙ্গুলির নখজ্যোৎস্না থেকে উদ্বেলিত শব্দব্রহ্ম রূপী সুধা সমুদ্র বধুগণের মনে উচ্ছৃঙ্খলতা পূর্বক খেলা করে। বিশ্ব উদয় বিলয় এবং রক্ষা প্রকৃতি রূপী সেই ভগবান শিবকে বার বার নমস্কার। যিনি ক্লেশ সমূহ ছেদনকারীক পাদপদ্মপ্রণতি রূপী। সেই শিব আনন্দ এবং স্বচ্ছন্দ প্রথিত প্রভূত লীলাকারী শরীর ধারণ কারী এবং ত্রিবেদী বাসমূহ অপথ নিজতত্ত্বে স্থিতিকারী, যার গন্ডতলে বিমলভ্রমর পংক্তি শোভিত এবং তিনি অক্ষের মালার ন্যায় বিমলা সেই গণপতি আমাদের রক্ষা করুন।। ১-৪।।

যস্য গন্ডতলে ভাতি বিমলা ষট্‌পদাবলী। অক্ষমালেব বিমলা স নঃ পায়াণধিপঃ।।৪।। ওঁ নমো বাসুদেবায় সশাঙ্গায় সকেতবে। সগদায় স চক্ৰায় সশঙ্খায় নমো নমঃ ॥ ৫। নমঃ শিবায় সোমায় সগণায় সসূনবে। সব্‌ষায় সশূলায় সকপালায় সেন্দবে।।৬।। শিবং ধ্যাত্বা হরিং স্তত্বা প্রণম্য পরমেষ্ঠিনম্। চিত্রভানুং চ ভানুং চ নত্বা গ্রন্থমুদীরয়েৎ।।৭।। ছত্রাভিষিক্তং ধর্মজ্ঞং ধর্মপুত্রং যুধিষ্ঠিরম্। দ্রষ্টমভ্যাগতা হৃষ্টা ব্যাসাদ্যাঃ পরমষয়ঃ।।৮।। মার্কন্ডেয়ঃ সমান্তব্যঃ শাণ্ডিল্য শাকটায়নঃ। গৌতমো গালবো গার্গ্য শাতাতপপরাশরৌ।।৯।

এবং শংখ ধারণকারী ভগবান্ বাসুদেবকে বার বার প্রণাম।। ৬।। সদাশিবের ধ্যান করে হরিস্তুতি করে এবং পরমষ্ঠেীকে প্রণাম করে তথা চিত্রভানু এবং ভানুকে নমস্কার করে গন্থ উদীরিত করছি।। ৭।।

একসময় ছত্রাভিষক্ত ধর্মের পূর্ণজ্ঞাতা ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরকে দর্শন করতে পরমহর্ষিত হয়ে ব্যাসাদি পরমর্মিগণ এসেছিলেন।। ৮।।

জামদগ্ন্যো ভরদ্বাজো ভৃগু ভাগুরিরেব চ। উত্তঙ্কঃ শঙ্খলিখিতৌ শৌনকঃ শাকটায়নিঃ।।১০।। পুলস্ত্যঃ পুলহো দান্ড্যো বৃহদশ্চঃ সলোমশঃ। নারদঃ পর্বতো জহ্ন রপাবসুপরাবসু।।১১।। তানুষীনাগতাদৃষ্টাব বেদবেদাঙ্গপারগান্। বক্তিমাভ্রাতৃভিঃ সার্দ্ধং কৃষ্ণধৌম্য পুরঃ সরঃ।।১২।। যুধিষ্ঠিরঃ সংপ্রহৃষ্টঃ সমুখায়াভিবাদ্য চ। অর্ঘ্য্যমাচমনং পাদ্যমাসনানি স্বয়ং দদৌ।।১৩।। উপবিষ্টেযুতেম্বেব তপস্বিষু যুধিষ্ঠিরঃ।। বিনয়াবনতো ভূত্বা ব্যাসং বচনমব্রবীৎ।।১৪।। ভগবংস্ত্বৎ প্রসাদেন প্রাপ্তং রাজ্যং মহন্ময়া বিক্রম্য নিহতঃ সংখ্যে সানুবন্ধঃ সুযোধনঃ।।১৫।। সরোগস্য যথা ভোগঃ প্রাপ্তোহসি ন সুখাবহঃ। হত্বা জাতীং স্তথা রাজ্যং ন সুখং প্রতি ভাতি মে।।১৬ যৎসুখং পাবনং প্রীতিবন মূলফলাশি নাম্। প্রাপ্য গাং চ হতারাতিং ন তদন্তি পিতামহ।। ১৭।।

সেই মহর্ষিগণের মধ্যে মার্কন্ডেয় মান্ডব্য শান্ডিল্য শাকটায়ন গৌতম পালব গার্গ্য শাতাতপ পরাশর জামনগ্ন্য ভরদ্বাজ ভৃগু ভার্গুরি উত্তংক শংখ লিখিত শৌনিক শাকটায়নি পুলস্ত্য পুলহ দান্ড্য বৃহদশ্ব সলোমন নারদ পর্বত জহ্নু অয়াবসু পরাবসু সকলে ছিলেন। এই ঋষিগণ বেদ তথা বেদাঙ্গে পারদর্শী মহা মনীষিগণকে রাজা যুধিষ্ঠির নিজ ভ্রাতাদের সঙ্গে নিয়ে তথা কৃষ্ণ ধৌম্যকে অগ্রে নিয়ে পরম প্রহৃষ্ট চিত্তে সমুপস্থিত হয়েছিলেন এবং সকলকে অভিবাদন করে স্বয়ং অর্ঘ্য আচমন পাদ্য এবং আসন সকলের জন্য রাজ প্রদান করেছিলেন।। ৯-১৩।।

এই সকল তপস্বীগন যখন সেই স্থানে উপবিষ্ঠ হলেন তখন বিনয়ে বিনম্র হয়ে যুধিষ্ঠির ব্যাসজীকে বললেন–হে ভগবান্ আপনার প্রসাদে আমি এই মহান্ রাজ্য প্রাপ্ত হয়েছি। বিক্রমের সাথে নিজ অনুবন্ধের সঙ্গে সুযোধন যুদ্ধে নিহত হয়েগেছে। রোগযুক্ত ব্যক্তি যদি ভোগপ্রাপ্ত হয় তাহলে সে যেমন সুখপ্রাপ্ত হয় না, তেমন আমিও জ্ঞাতি হনন করে এই রাজ্যে সুখ প্রাপ্ত হচ্ছি না।। ১৪-১৬।

হে পিতামহ বনের ফল-মূল ভক্ষণ করে যে পাবন সুখ তা এই রাজ্য প্রাপ্ত করে, শত্রু হনন করে লাভ করছি না।। ১৭।।

যো নো বন্ধুগুরুগোপ্তা সদাশৰ্ম চ বর্ম চ। স ময়া রাজ্যলোভেন ভীষ্মঃ পাপেন ঘাতিতঃ।।১৮।। অবিবেকমহং ধাস্যে মনো মে পাপপঙ্কিলম। ক্ষালয়িত্বা তব গিরা বহুদর্শিতবারিণা।। ১৯।। সংশ্রুতানি পুরাণানি বেদাসাঙ্গাঁ ময়াবিভো। মমাদ্য দর্মসর্বস্বং প্রজ্ঞাদীপেন দর্শয়।।২০। এতে সধর্মগোপ্তারো মুনয়ঃ সমুপাগতাঃ। পিবন্তো নেত্রভ্রমরৈ ভবতো মুখপঙ্কজম্।।২১।। অর্থশাস্ত্রানি যাবন্তি ধর্মশাস্ত্রানি যানি বৈ। শ্রুতানি সর্বশাস্ত্রানি ভীষ্মাদ্ভাগীরথী সুতাৎ।। ২২।। স্বর্গং গতে শান্তনবে ভবানকৃষ্ণোহথ যাদবঃ। সুহৃত্বাদ্বন্ধু ভাবাচ্চ নান্যঃ শিক্ষয়িতা মম।।২৩।।

পিতামহ ভীষ্ম যিনি আমাদের সকলের বন্ধু গুরু এবং রক্ষক ছিলেন, তথা সদাকল্যাণকারী এবং বৃদ্ধরূপে ছিলেন, সেই ভীষ্মকে রাজ্য লোভে হত্যা করেছি। আমি অত্যন্ত অধিক অবিবেক বানীতে তা ক্ষালন করুন। হে বিভো, আমি পুরাণ এবং সাঙ্গবেদ শ্রবণ করেছি আজ আপনি আমাকে নিজ প্রজ্ঞাদীপ দ্বারা ধর্মস্বরূপ দেখান।। ১৮-২০।।

এই সকল ধর্মরক্ষা কারী বানী মুনিমন্ডল, যাঁরা এখানে আগত হয়েছেন, তাঁরা আপনার মুখপংকজের মধু নেত্ররূপী ভ্রমরের দ্বারা পান করতে উৎসাহী। যতপ্রকার অর্থ শাস্ত্র আছে এক বলার যোগ্য যা কিছু শাস্ত্র আছে সেই সকল শাস্ত্র ভাগীর ক্ষপুত্র ভীষ্ম প্রপিতামহের মুখ থেকে শ্রবণ করেছি।। ২১- ২২।।

মহারাজ শান্তনু পুত্র স্বর্গে চলে গেলে এক ভগবান্ যাদব কৃষ্ণের সৌহার্দ্য এবঙ বন্ধুত্ব বশতঃ আমাকে শিক্ষা দেবার কেউ নেই।। ২৩।।

সত্যং সত্যবতী সূনুর্দ্ধর্মরাজায় বক্ষ্যাতি। বিশেষধমানখিলান্মুনী নাম বিশেষতঃ।।২৪।। যদাখ্যেয়ং তদাখ্যাতং ময়া ভীষ্মেণ তেহনঘ। মার্কন্ডেয়েন ধৌম্যেন লোমশেন মহর্ষিণা।।২৫।। ধর্মজ্ঞো হ্যসি মেধাবী গুণবাপ্রজ্ঞসত্তমঃ। ন তেহসত্যবিদিতং কিঞ্চিদ্ধধর্মবিনিশ্চয়ে।।২৬।। পার্শ্বস্তিতে হৃষীকেশে কেশবে কেশিসূদনে। কস্যচিৎকথনে জিহ্বা তত্র সম্পরিবর্ততে।।২৭।। কর্তাপালয়িতা হর্তা জগতাং যো জগন্ময়ঃ।। প্রত্যক্ষদশী সর্বস্য দমান্বক্ষ্যত্যসৌ তব।।২৮।। সমাদিশ্যেতিকর্তব্যং ভগবান্বাদরায়ণঃ। পূজিতঃ পান্ডুতনয়ৈজগগাম স্বতপোবনম্।।২৯।। স্বাভাষ্য ভারতবিধাতরি সংপ্রয়াতে তে কৌতু–কাকুলধিয়ো মুনয়ঃ প্ৰশান্তাঃ। কিং পৃচ্ছতি ক্ষপিতভারতলোকশোকঃ। কিং বক্ষ্যতীহ ভগবান্যদুবংশবীরঃ।।৩০

সত্যবতী পুত্র ধর্মরাজের জন্য সত্যবলবেন, যা বিশেষ রূপে ধর্ম এবং মুনিগণ যা পালন করেন।। ২৪।।

শ্রীব্যাসজী বললেন- হে অনঘ, যা কিছু আমার বলার ছিল সেই সকলই ভীষ্ম তোমাকে বলেছেন। মার্কন্ডেয়, ধৌম্য এবং লোমশ মুণিগণ ও তোমাকে তা বলেছেন। আপনি তো ধর্মজ্ঞাতা এবং মেধাসমন্বিত তথা গুণবান্ এবং প্রাজ্ঞগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। ধর্ম এবং অধর্মের স্বরূপ কি তা বিশেষ রূপে নিশ্চয় করার বিষয়ে আপনার কিছুই অবিদিত নয়।। ২৫-২৬।।

হৃষীকেশ ভগবানের কাছে স্থিত হলে, যিনি কেশি দৈত্য সুদন এবং কেশব তাঁকে জিহ্বা কিছু বলার জন্য সংপরিবর্তিত হয়ে। যিনি জগৎ রচনা কারী পালনকারী এবং সংহরণ কারী এবং জগন্ময় তিনি সকলের প্রত্যক্ষদর্শী। তিনিই আপনাকে ধর্মের কথা বলবেন।। ২৭-২৮।।

ভগবান্ বাদরায়ন ইতি কর্তব্য সমাদেশ করে পান্ডুপুত্র গণের দ্বারা পূজিত হয়ে নিজে তপস্যা করতে বনে চলে গেলেন।। ২৯।।

ভারত রচনাকারী এই কথা বলে চলে গেলেন সেই সমস্ত মুনিগণ কৌতুকাকুল হয়ে প্রশান্ত হলেন। তারা সকলে কৌতুক নিজ হৃদয়ে রেখেছিলেন যে, ভারত মহাযুদ্ধ শোকক্ষপিতকারী ধর্মরাজ যুধিষ্টির কি জিজ্ঞাসা করবেন এবং যদুবংশ বীর ভগবান্ কি উত্তর দেবেন।। ৩০।।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

মঙ্গলাচরণ

মঙ্গলাচরণ

মঙ্গলাচরণ

রঙনের রঙে রাঙা হয়ে এল শীতের কুহেলি-রাতি,
আমের বউলে বাউল হইয়া কোয়েলা খুঁজিছে সাথি।
  
                    সাথে বসন্ত-সেনা
আগে অজানার ঘেরা-টোপে তব চিরজনমের চেনা ।
পলাশ ফুলের পেয়ালা ভরিয়া পুরিয়া উঠেছে মধু,
তব অন্তরে সঞ্চরে আজ সৃজন-দিনের বধূ –
  
                    উঠিছে লক্ষ্মী ওই
তোমার ক্ষুধার ক্ষীরোদ-সাগর মন্থনে সুধাময়ী।
হারাবার ছলে চির-পুরাতনে নূতন করিয়া লভি,
প্রদোষে ডুবিয়া প্রভাতে উদিছে নিত্য একই রবি।
  
                    তাই সুন্দর সৃষ্টি
একই বরবধূ জনমে জনমে লভে নব শুভদৃষ্টি।
আদিম দিনের বধূ তব ওই আবার এসেছে ঘুরে
কত গিরিদরি নদী পার হয়ে তব অন্তর-পুরে।
  
                    কী দিব আশিস ভাই
তোমরা যে বাঁধা চির-জনমের – কোথাও বিরহ নাই।
না থাকিলে এই একটু বিরহ – এ জীবন হত কারা,
দুই তীরে তীরে বিচ্ছেদ তাই মাঝে বহে স্রোত-ধারা।
গত জনমের ছাড়াছাড়ি তাই এ মিলন এত মিঠে
সেই স্মৃতি লেখা শুভদৃষ্টির সুন্দর চাহনিতে।
ওগো আঙিনার সজিনা-সজনি,করো লাজ বরিষন
তব পুষ্পিত শাখা নেড়ে সখী, খইয়ে নাই প্রয়োজন।
আমের মুকুল আকুল হইয়া ঝরো গো দুকূলে লুটি,
বধূর আলতা চরণ-আঘাতে অশোক উঠো গো ফুটি।
  
                    বাজা শাঁক দে লো হুলু,
হারা সতী ফিরে এলে উমা হয়ে – উলু উলু উলু উলু!
Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *