2 of 2

ভূতুড়ে বিজ্ঞাপন – কল্যাণ মৈত্র

ভূতুড়ে বিজ্ঞাপন – কল্যাণ মৈত্র

কলকাতার খুব বড়ো একটি বাংলা কাগজের সাতের পাতায় নীচের দিকে বেরিয়েছিল বিজ্ঞাপনটা। বয়ানটাও ছিল চমৎকার। তবে সাতের পাতায় হারানো প্রাপ্তি নিরুদ্দেশের টুকরো টুকরো বিজ্ঞাপনের ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছিল।

ভূত গবেষণা কেন্দ্র

গবেষক, লেখক, আর্টিস্ট, ভ্যাগাবন্ড, বেকার (পুরুষ ও মহিলা) চাই। ফ্রিলান্স ক্যামেরাম্যান, লাইটম্যান, মেকাপম্যান যোগাযোগ করুন। ৯৮৩০০১০০০

পচাদা খেয়াল করেছিল প্রথম। হারানের সেলুনে কাগজ পড়তে গিয়ে। তারপর একপ্রকার ছুটতে ছুটতে ঘর্মাক্ত অবস্থায় হাজির হল ক্লাবে।

রবিবার। সাতসকালে চাঁদের হাট বসেছে। পচাদাকে ছুটে আসতে দেখে ভজা ক্যারামবোর্ডে স্ট্রাইকারটা কোনোরকমে হিট করেই উঠে দাঁড়ায়, আরে পচাদা যে, কি ব্যাপার? বিপদ নাকি?

হোয়্যার ইজ ব্রজ, কল হিম। আই ওয়ান্ট হিম ইমিডিয়েটলি—পচাদা উত্তেজিত। ব্রজ এই মুহূর্তে নেই। তিনু, পিন্টু ছুট দিল।

ভজা বলল, পচাদা, সকাল সকাল পণ্ডিতকে কি দরকার? কোনো খাস খবর, টিউশনি আছে? ভজার কৌতূহলের সীমা নেই। একের পর এক প্রশ্ন করে চলেছে।

পচাদা বরং স্বভাববিরুদ্ধভাবে আজ বেশি গম্ভীর। বলে, একটা রেড ডটপেন দে।

টেবিলের উপর পচাদা কাগজটা মেলে ধরে। তারপর লালকালিতে মার্ক করল বিজ্ঞাপনটা। ভজাও মার্ক করছে পচাদাকে।

ইতিমধ্যে দেখা গেল তিনু, পিন্টু হন্তদন্ত হয়ে ব্রজকে নিয়ে আসছে। ঠিক যেন পুলিশে চোর ধরেছে।

বিজ্ঞাপনটা পড়।

ভজা পড়ে বলল, তা না হয় হল। কিন্তু ঠিকানা কই?

তুই একটা গাধা। ঠিকানাটা ওতেই আছে। তোকে কি ক্যাওড়াতলা বা নিমতলায় ইন্টারভিউ নিতে ডাকবে?

নীচের সংখ্যাগুলো আসলে মোবাইল নাম্বার—ব্রজ কথাটা শেষ করতে পারলে না।

দ্যাটস রাইট। দশটা সংখ্যা। ওখানে যোগাযোগ করতে হবে।

ব্রজ বুঝতে পারছে না ওই বিজ্ঞাপনের সঙ্গে তার কি সম্পর্ক। ভূত গবেষণা কেন্দ্রের কি উপকারে সে লাগতে পারে, বিজ্ঞাপনে যা যা চাওয়া হয়েছে তার কোনোটাই সে নয়। লেখা—টেখার একটু অভ্যাস আছে যা এই মাত্র।

ভজা বলল, ইনটারেস্টিং কেস। ভূত নিয়ে গবেষণা। আগে তেমন শুনিনি। ঘোস্ট রিসার্চ সেন্টার। অভিনব।

পচাদা হঠাৎ হঠাৎ চটে যায়। চেঁচিয়ে বলল, শাট আপ। কাজের সময় আজেবাজে কথা পছন্দ করি না। দেখছিস একটা সিরিয়াস ব্যাপার নিয়ে ডিল করছি। পেটে এখনও দানাপানি পড়েনি।

এবার ভজা বলল, তিনু, মেজদার দোকানে আটটা হাফ বলে আয়। সঙ্গে নোনতা। না, পচাদার জন্য ফুল। আমাদের হাফ, লিকার। আমার অ্যাকাউন্টে।

পচাদা একটা সংশোধনী দিল, আমার জন্য তার আগে চারটে লাল—লাল জিলিপি—বড্ড খিদে পেয়েছে রে—

সকলে আবার বিজ্ঞাপনটা নিয়ে পড়ল।

ব্রজ তুই যাবি। তুই লেখকও বটে, আবার ভূত—টুত নিয়ে তোর পড়াশোনাও আছে। আমার মনে হয় তোর থেকে ভালো ক্যানডিডেট আর হয় না। যোগাযোগ কর। চাকরিটা হয়ে যাবে, বসে থাকার চেয়ে একটা অভিজ্ঞতা হয়ে থাকা ভালো। ভালো না লাগলে ছেড়ে দিতে কতক্ষণ।

ব্রজ কিংকর্তব্যবিমূঢ়। বাড়িতে লুচি—পায়েস হচ্ছিল, তা ছেড়ে এখানে—পচাদার পাল্লায়! আজ কার মুখ দেখে যে উঠেছিল।

ভজা অনেকক্ষণ চুপচাপ ছিল। এবার সে বলল, পচাদা, ‘ভ্যাগাবন্ড চাই’—তা না হয় হল—ওরা ক্যামেরাম্যান, লাইটম্যান নিতে চাইছে কেন?

ছবি—টবি করবে বোধহয়।

ইতিমধ্যে আরও দশ—বারোজন জুটে গেছে। ভিড় জমছে। তিনু জিলিপির ঠোঙা থেকে রস চাটতে চাটতে বলল, সেই সত্যজিৎ রায় ছবি করেছিলেন—গুপী গাইন বাঘা বাইন—তারপর ভূতের আর ভালো ছবি হল কই।

তিনু বলল, এটা মনে হচ্ছে লাইভ হবে। মানে টাটকা ভূতের ছবি।

ভজা বলল, আমার ঠাকুরদা দু—চারটে ছবিতে কাজ করেছিলেন। বাড়িতে একটা ছবির পরিবেশ ছিল, আমি আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা না হোক, বংশপরম্পরা থেকে বলতে পারি—কী হতে চলছে।

কী যেন ভাবছে পচাদা। ব্রজ চুপচাপ। ভজা বলে চলেছে, তিনুর কাঁধে তার হাত, যেমন ধর একটা পুরোনো রাজবাড়ি দুশো বছরের বেশি—বাঁশঝাড়, ভাঙা ঘাট। পুরোনো আসবাবপত্র, মাকড়সার জাল, ঝুল—স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ—ভূত—ভূত গন্ধ, শ্যাওড়া গাছ—এই ধরনের একটা সেট—নকল বা বানানো নয়, আসল। ক্যামেরাম্যান গোপন জায়গা থেকে শট নিচ্ছে—ভূতের কাহিনি—জ্যান্ত ভূত নড়ছে—চড়ছে। তারপর সেটা সিনেমা হলে, দূরদর্শনের মাধ্যমে ঘরে ঘরে দেখানো হচ্ছে। একটা সিরিয়াল হলে সোনায় সোহাগা। ভাবতে পারছিস কি থ্রিলিং হবে ব্যাপারটা। যে বা যারা বিজ্ঞাপন দিয়েছে তারা সত্যিই বুদ্ধিমান। ব্যাপারটা নামাতে পারলে যা মুনাফা হবে, যা পপুলারিটি পাবে তা ভাবতে পারছি না। ইংরিজিতে সাব—টাইটেল দিয়ে ‘কান’ চলচ্চিত্র উৎসবে আসল ভূতের ছবি দেখানো। ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার—একে একে সব হয়ে যাবে। স্বপ্নে বিভোর হয়ে ওঠে ভজার চোখ। যেন সে—ই ছবির প্রযোজক—পরিচালক।

পচাদা বলল, ব্রজ, তুই তোর ভূতের গল্পগুলোও নিয়ে যাস। রিসার্চের কাজে লাগবে। তৈরি ইন্টারভিউয়ের জন্য। আমি দেখি মোবাইলে যোগাযোগ করতে পারি। লেট আস গেট ক্র্যাকিং—যে যার বাড়ি চলে যাও। ‘সন্ধে সাত ঘটিকায় পুনরায় হাজিরা।’

মুড ভালো থাকলে পচাদা ইংরেজি এবং সাধু বাংলায় কথা বলে।

পচাদা চলে গেল।

ভজার হাতে এবার লিডারশিপ। কেউই আর বাড়ি যাবার নাম করে না।

ব্রজর দিকে তাকিয়ে ভজা বলল, তোর ইন্টারভিউ হবে এখনই—মহড়া দে। একটু ঝালিয়ে নে। এই যেমন ধর গিয়ে—গুপি ও বাঘার আসল নাম কী ছিল?

তিনু বলল, গুপী গাইন, বাঘা বাইন।

রাসকেল। কিছু জানো না। কানু কাইনের ছেলে গুপী কাইন, পরে গুপী গায়েন—সে গান গাইতে পারত। আর পাঁচু পাইনের ছেলে বাঘা। সে ঢোলক বাজাত, তার নাম হল বাঘা বায়েন। গল্পটা উপেন্দ্রকিশোরের।

এইভাবে চলতে লাগল ব্রজর ওপর দ্বিপ্রাহরিক প্রহার। সকলেই নিজ নিজ বিদ্যে ফলাতে ব্যস্ত।

তিনু বলল, ভূতের ছায়াছবি করার মতলবটা কার উর্বর মস্তিষ্ক থেকে বের হল সেটাও জানার বিষয়। যেই হোক, লোকটা গ্রেট। বাণিজ্য ভালো বোঝে। যা খাবে না বাজারে!

ভজা তিনুকে সেখানেই থামাতে বলল, এই তুই, তুই বল দেখি রবীন্দ্রনাথের একটা ভূতের গল্পের নাম—

তিনু বলল, মণিহার।

ইডিয়েট। অনেকটা কাছাকাছি বলেছিল তাই তোকে ছেড়ে দিলাম। রেগেমেগে ভজা বলল।

ব্রজ বলল, ওটা ‘মণিহারা’ হবে।

ব্যাপারটা বেশ জমে উঠেছে। নানারকম গল্পের সঙ্গে চলেছে প্রশ্ন—উত্তর পর্বও। পচাদা ব্রজকে সিলেক্ট করেছে। বাংলা সাহিত্যের ছেলে ব্রজ। এই পরিস্থিতিতে সে কিছুটা বেমানান। কিন্তু উপায় নেই।

পিন্টু এতক্ষণ তেমন কোনো কথা বলেনি। সে ফুট কাটল, ভূতের দফা গয়া। এসবই ভূতের ভবিষ্যৎ বাঁচানোর চেষ্টা। বিদেশ থেকে এবার ভূত—প্রেত রপ্তানিও করা হবে দেখে নিয়ো। বিজ্ঞাপনটা দেখে মনে হচ্ছে পেছনে একটা গভীর ষড়যন্ত্র আছে। ভূত—টুত বলে আমাদের খেপিয়ে তোলার চেষ্টা। এমনিতেই বাঙালি এইসব ভূত—প্রেত ভালোবাসে। ভয়ও পায় আবার বিশ্বাসও করে না। বাংলাদেশে ভূতের আকাল পড়েছে। কোথায় ভূত। রাতের অন্ধকার নেই। গলির মোড়ে মোড়ে আলো। বনবাদাড়ে বাঁশঝাড় নেই। খোলা মাঠ নেই। জলাভূমি শেষ হয়ে যাচ্ছে। পুরোনো বাড়ি প্রোমোটাররা খেয়ে ফেলছে। ভূতগুলো আর যায় কোথায়, তবে যদি ছবি—টবিতে সুযোগ পায়। ওদের দর বাড়ে। বড় কষ্টে আছে বেচারিরা।

পচাদা সন্ধের আসরে আসতে পারেনি। খবর পাঠিয়েছে, সামনের শনিবার পাথুরেঘাটায় ব্রজকে যেতে হবে। দুটোর সময়। সে যেন তৈরি থাকে।

শনিবার বারবেলায়! ব্রজ কিঞ্চিৎ ভয় পেল। ভজা বলল, ভালো তো ইন্টারভিউটা জমবে।

কয়েকশো লোকের কালো মাথার ভিড়ে ব্রজেন রায় ওরফে চড়কডাঙার ব্রজ আজ আর হারিয়ে যায়নি। এই মুহূর্তে তার কোনো টেনশন নেই। অনেক কষ্টে বাড়িটা খুঁজে পেয়েছে সে। গলির এক কোণে পুরোনো সেকেলে বাড়ি। জীর্ণ, পরিত্যক্ত। ভেতরটা কেমন ভ্যাপসা, গুমোট।

দরজার বাইরে লাল আলো জ্বলছে। ইন্টারভিউ চলছে বোধহয়। সে ভাবল। একটি লোক অনেকক্ষণ বাদে বেরিয়ে এসে বলল, এখানে অপেক্ষা করুন। সময় হলেই ডাকা হবে।

কাল রাতেও ব্রজেন ভেবেছিল আসবে না। কিন্তু গোলমাল পাকালো ওই পিন্টু। চড়কডাঙার মোড়ে হারুদের বাড়ির লেট নাইট আড্ডায় বসার পর থেকে তার সব কিছু গোলমাল পাকিয়ে গেল। শুভানুধ্যয়ীর ভঙ্গিতে বলল, শোন ব্রজ, তুই একটা অভিজ্ঞ লোক। কালকের ইন্টারভিউটা তুই দিয়ে আয়। আর কিছু না হোক তোর রেকর্ডটা হয়ে যাবে। এক হাজার বার ইন্টারভিউ দেওয়া মুখের কথা! অন্য দেশের সরকার হলে লজ্জায় তোকে চাকরি দিত। বলা কি যায় ‘গিনিস বুক’—এ তোর নামও উঠতে পারে।

ব্রজেনের ডাক আর আসে না। উসখুস করছে সে। উঠে চলে যেতেও পারছে না। দিনকাল যা পড়েছে সামান্য চাকরির জন্য পিএইচ ডি ডিগ্রিধারীও এসে হাজির হয়। এবারটায় তেমন ভিড় নেই। পচাদার প্রতি সে মনে মনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল।

এবার আলো নিভল। একমাথা টাক, সাদা উর্দি পরা একজন দারোয়ান ব্রজেনকে ইশারায় ডাকল। সবই কেমন নিঃশব্দে হচ্ছে। থমথমে ভাব। নিস্তব্ধ চারপাশ। বাইরে জামগাছের ওপর কতকগুলো কাক ঝগড়া করছে। একটা কালো বেড়াল ব্রজেনকে দেখে যেন কী ভাবল, তারপর সেও চলে গেল তিনতলার সিঁড়ির দিকে। এই ভরদুপুরেও বাড়ির ভেতরটা কেমন মৃদু আলো আর অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। প্রথম দিকে ব্রজর এতটা খেয়াল হয়নি। দেওয়ালে বড়ো বড়ো টিকটিকি ছুটোছুটি করছে। বাড়িটা সত্যিই ঠিক ভূতের বাড়ির মতো।

আসুন স্যার এই দিকে। দরজাটা ঠেলুন।

দরজা ঠেলে ভেতরে মুখ বাড়িয়ে ব্রজেন একটু দেখে নিল। না, কেউ তাকে আসতে অনুরোধ করল না। ঢুকেই পড়ল সে। ঘরের কোণে একটা আলো জ্বলছে। স্যাঁতসেঁতে চারপাশ। চল্লিশ ইঞ্চির দেয়াল। ঘরের মাঝখানে একটা বড়ো টেবিল। তার ওপর একটা ফোন। কালো রঙের। ফোনের রিসিভারটা শূন্যে ঝুলছে।

টেবিলের কাছেই একটা চেয়ার। ব্রজেন ঠায় দাঁড়িয়ে। ওপ্রান্তে একজন বসে। বেঢপ মোটা। ঘাড়ে গর্দানে। মনে হচ্ছে মাথাটা কেটে কেউ যেন বুকের ওপরে বসিয়ে দিয়েছে। তার গায়ের রং কয়লার মতো কালো। শ্বেতবস্ত্র দাঁতের ফাঁকে হাসির ঝিলিক। ব্রজেনের দিকে চাইলেন তিনি। কে যেন তার কানে কানে বলল, ইনি গবেষণা কেন্দ্রের ডিরেক্টার, ওমপ্রকাশ তামাকুওয়ালা। ব্রজেন জোড় হাতে বাঙালি কায়দায় নমস্কার জানাল। ওমপ্রকাশ বসতে বললেন।

এবার তার চোখ পড়ল আরেক জনের ওপর—শিবেন বিশ্বাস। একসময় তার প্রাইভেট টিউটর ছিলেন। নামকরা ঔপন্যাসিক ছিলেন।

শিবেনবাবু পান চিবুতে চিবুতে বললেন, আজও চাকরি পাসনি। তোকে তখনই বলেছিলাম কিস্যু হবে না। কী হল অত পড়াশোনা করে।

ব্রজেনের মনে পড়ে গেল ‘রামেরা তিন ভাই’ ট্রানস্লেশন না পারার জন্য শিবেনবাবু একবার তাকে রামদাওয়াই দিয়েছিলেন।

তামাকুওয়ালা বললেন, উনি আমাদের লেখক। নামজাদা স্ক্রিপটরাইটার। চেনেন নিশ্চয়ই। ভূতের কাহিনি নিয়ে আমরা যে ছবি আর সিরিয়াল করব উনি তার চিত্রনাট্য লিখবেন। আমাদের একজন কপিরাইটার মানে লেখকই ধরুন, আর তথ্য অনুসন্ধানের লোক চাই। আপনি রাজি থাকলে বলুন। কত মাইনে চান তাও বলুন। প্রথমে আমরা কুড়ি—পঁচিশ জনের একটা ইউনিট করে এ বাড়িতেই কাজ চালাব। শুটিং—টুটিং সব এখানেই হবে। নায়ক—নায়িকাদের খোঁজখবর চলছে, বুঝলেন না। মানুষ দিয়ে তো আর ভূতের অভিনয় করানো চলে না। আমরা সত্যি ভূতেদের নিয়ে কিছু করতে চাই। তাদের দিয়েই অভিনয় করাব। আমাদের কনসেপটা আলাদা। মানুষ দিয়ে ভূতের ছবি বোগাস। ভূতের ছবিতে ভূতেরাই অভিনয় করবে। আপনি টাইটানিক দেখেছেন? না দেখলে আমাদের স্টুডিয়োতে দেখে নেবেন। ওইরকম কায়দায় আমরাও একটা সেনসেটিভ ছবি করব। মানে প্ল্যানিংটা তাই—ই।

…আপনি জানতে চাইছেন তাহলে আপনাকে দরকার কেন? তাইতো? আমরা আপনাকে দিয়ে গবেষণার কাজটা, তথ্য অনুসন্ধানের কাজটা করাতে চাই। আপনি পয়সা পাবেন। আপনার বায়োডাটা যা দেখলাম তাতে আপনি ওই কাজ পারবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস। এবার ভেবে দেখুন কী করবেন। আমরা যে দু—চারজন জ্যান্ত মানুষ নেব তাদেরকে কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখানেই আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে। আমাদের কাজটা শুরু হবে রাতের বেলা।

…ছবি রিলিজ করলে টাকাপয়সা মিটিয়ে ছুটি করে দেব।

…হ্যাঁ, আর একটা কথা। বাইরের কিছু কাজ আপনাকে করে দিতে হবে। সঙ্গে একজন অ্যাসিস্টেন্ট পাবেন। তিনি অবশ্য আমাদের লোক।

ব্রজেনের মনে পড়ল, শিবেনবাবু বছর দশেক আগে দার্জিলিং—এ পাহাড়ের ধসে প্রাণ হারিয়েছিলেন। কাগজে সে খবর ছাপাও হয়েছিল। তিনি ভূত হয়েও তাঁর সেই নেশা ছাড়তে পারেননি। আশ্চর্য! ব্রজেনের হাত—পা ক্রমশ ঠান্ডা হতে থাকে। সে ঘামতে শুরু করেছে। ভয়ে সে কাঠ হয়ে গেছে।

এরপর শিবেনবাবু বললেন, ওর আর কি। বেকার। কাজ নেই। থাকুক আমার সঙ্গে। ভালো টাকা পাবে। ওর লেখা—টেখার রোগ আছে। অভিজ্ঞতা হলে পরে কাজে দেবে।

রাতে কাজ যথারীতি শুরু হল। প্রথম পর্ব—ভূতের জন্ম। পুরাকালের ভূত। পর্বের নামকরণ তখনও হয়নি। ওমপ্রকাশ বললেন, এটা হচ্ছে মহড়া। আসল শুটিং আর কিছুদিন পরে হবে। আজ রাতটা আপনি দেখুন। আরও অনেকে এসে পড়ল বলে। আমরা যতদিন না ক্যামেরাম্যান পাচ্ছি ততদিন এদিকের কাজটা চলুক।

এবার খেয়াল হল ব্রজেনের। তার চোখ দুটো বন্ধ। চোখে হাত দিয়ে সে দেখল—হ্যাঁ তাই। তাহলে সে দেখছে কি করে?

চড়কডাঙার মোড়ে পুলিশের গাড়ি। ব্রজেনের বাবা—মা—দিদি কাঁদছে।

পাথুরেঘাটার একটি বাড়িতে তাকে অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া গেছে।

হঠাৎ বাইরে পচাদার গলা। মাসিমা, ও মাসিমা! জানলার বাইরে থেকে ডাকছে সে। —ব্রজ ফিরেছে? ওর না আজ কলকাতায় যাবার কথা ছিল। ইন্টারভিউ….

ও তো বাড়িতেই। সেই দুপুর থেকে ঘুমোচ্ছে। দেখ না সন্ধে হয়ে এল। এ ছেলের যে কি হবে!! বড্ড ঘুমকাতুরে।

আধো ঘুমের ভেতর ব্রজ পচাদার গলা শুনতে পেল। এতক্ষণ তা হলে সে কী দেখল? উঃ কি ভয়ই সে পেয়েছিল!

ব্রজ ওপাশ ফিরে ফের ঘুমোতে চেষ্টা করল। আজ সে পচাদার মুখোমুখি কিছুতেই হবে না।

একটু কাঁচা মাছ পেলেই সব ঠিক হয়ে যেত। এই এক মুশকিল এদের নিয়ে। যত খিদে পাবে তত তাদের ওজন বাড়বে

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *