ভাল-খারাপ
হিব্রু ভাষায় একটা প্রবাদ আছে, হঠাৎ প্রভাকরবাবু বললেন।
নানা কারণে আমাদের সন্ধ্যাসমিতির সভ্যেরা প্রায় কেউই প্রভাকরবাবুকে পছন্দ করেন না। প্রভাকরবাবু আমাদের এ পাড়ায় এসেছেন প্রায় পনেরো বছর কিন্তু আগাগোড়া আমাদের এড়িয়ে গেছেন। পুজো-পার্বণে চাঁদা-টাঁদা দিয়েছেন; কিন্তু সন্ধ্যাসমিতির ক্লাবঘরে, যেখানে প্রায় প্রতি সন্ধ্যায় আমাদের জমাট আড্ডা বসে, তাস খেলা হয়, সেখানে তিনি ভুলেও কোনও সন্ধ্যায় পা মাড়াননি।
আসলে প্রভাকরবাবুর ঝোঁক ছিল অন্যত্র। আমাদের তরল আড্ডার চেয়ে তরলতর দ্রব্য অর্থাৎ শক্ত পানীয়ের প্রতি তার টান ছিল অনেক, অনেক বেশি।
আমরা সন্ধ্যাসমিতির সদস্যেরা অনেকদিন রাতে তাস এবং আড্ডার শেষে যখন ক্লাবঘরে তালা দিচ্ছি, দেখেছি প্রভাকরবাবু টলতে টলতে ট্যাকসি বা রিকশা থেকে নামছেন এবং তারপর ভাড়া মিটিয়ে স্থলিত চরণে নিজের বাড়িতে ঢুকছেন।
সন্ধ্যাসমিতি কোনও উঠতি মাস্তানদের ঠেক কিংবা রাজনৈতিক দলের ছদ্মবেশী প্রতিষ্ঠান নয়; পুরনো, বনেদি কলকাতার আদি ও অকৃত্রিম সমিতিগুলোর একটা। প্রতিটি সন্ধ্যায় অফিসকাছারির শেষে বাড়ি ফেরত ভদ্রলোকেরা এখানে বসে একটু গল্পগুজব করেন, তাস-টাস খেলেন। তবে সে সবই নিতান্ত নিরামিষ ব্যাপার।
এতকাল এসব নিরামিষ ব্যাপার প্রভাকরবাবুর মোটেই পছন্দ ছিল না। তিনি এক সওদাগরি প্রতিষ্ঠানের মাঝারি সাহেব। সন্ধ্যায় চা খাওয়া তাঁর পোষায় না। তিনি আমাদের এড়িয়েই চলতেন। সন্ধ্যায় তার যাওয়ার জায়গা ছিল অন্যরকম।
কিন্তু সম্প্রতি প্রভাকরবাবু এক দুর্বিপাকে পড়েছেন। তাঁর লিভার না কী যেন খারাপ হয়েছে। সব রকম দুমূল্য পানীয় ডাক্তার নিষেধ করে দিয়েছেন। বাধ্য হয়েই তিনি আমাদের সন্ধ্যাসমিতির আড্ডায় ভিড়েছেন। সন্ধ্যাবেলায় দূরদর্শনের প্রোগ্রাম বা বই পড়া, এসব কিছুই তাঁর সহ্য হয় না। কী আর করবেন, দু-চারদিন ইতস্তত করার পরে সন্ধ্যাসমিতিতে অনুপ্রবেশ করেছেন।
বলা বাহুল্য, সন্ধ্যাসমিতির সাবেকি সদস্যেরা প্রায় কেউই প্রভাকরবাবুকে পছন্দ করেন না। তার উন্নাসিকতার ইতিহাস এত সহজে বিস্মৃত হবার নয়। তবে ভদ্রলোকের দুটো গুণ আছে।
প্রথম গুণ হল, কথা বলায় ওস্তাদ। যেকোনও বিষয়ে যেকোনও কথা বলতে পারেন। শুধু কথা নয়, অনর্গল চটকদার বাক্যের নকশা, তার মধ্যে কল্পনার সোনালি ফুল মেশানো।
প্রভাকরবাবুর দ্বিতীয় প্লাস পয়েন্ট হল, তিনি অমায়িক, দিলদরিয়া ব্যক্তি। নিজে আজকাল চা-সিগারেটও কদাচিৎ খান, কিন্তু সন্ধ্যাসমিতির আড্ডায় এই সব রসদ ঘুষ দিয়ে তিনি নিজের পূর্বকর্মের প্রায়শ্চিত্তই হয়তো করেন।
অনেকদিন পরে এ বছর খুব জমাট শীত পড়েছে। তার ওপরে আজ সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা মেঘলা। এখন সন্ধ্যার দিকে একটু ঝিরঝির করে বৃষ্টিও শুরু হয়েছে, খুব জোর নয়, বর্ষাকালে যে বৃষ্টিকে ইলশেগুঁড়ি বলে সেই রকম। তবে বেশ জোর উত্তুরে হাওয়া সঙ্গে আছে।
কথা হচ্ছিল এই অসময়ের বৃষ্টি নিয়ে। আমাদের এই সন্ধ্যাসমিতি বসে একটা পুরনো বাড়ির একতলার প্যাসেজের পাশে একটা বড় ঘরে। প্যাসেজ পেরিয়ে সামনে রাস্তার পাশেই একটা চায়ের স্টল। চা ছাড়া চানাচুর, বিস্কুট, সিগারেট, পান প্রায় সব কিছু আনুষঙ্গিক জিনিসই পাওয়া যায়। দোকানটা চালান এক কর্কশকণ্ঠী মহিলা, তার নাম কেউ জানে না। তবে তার ছেলের নাম জগা। জগাই দোকানের বয়ের কাজ করে এবং জগার সূত্রেই মহিলাকে সবাই জগার মা বলে।
জগার মার ভূমিকা অবশ্য এ কাহিনিতে তেমন জোরদার নয়, তবু সূত্রপাত করে রাখলাম। এবার বৃষ্টির মধ্যে ফিরি।
অকালের বৃষ্টি, জমাটি ঠান্ডা তার ওপরে উত্তুরে হাওয়া। সুতরাং আবহাওয়া নিয়ে একটু কথাবার্তা হবেই। তা ছাড়া অন্যান্যবার শীতকালে মোটেই লোডশেডিং হয় না কিন্তু এ বছর শীতকালেও ভয়াবহ বৈদ্যুতিক গোলমাল। আবহাওয়ার দুর্যোগের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এসেছে ঘুটঘুঁটে অন্ধকার।
সন্ধ্যাসমিতির ঘরের দরজা জানলা সব বন্ধ। ইলেকট্রিকের বিকল্প একটা কেরোসিন লণ্ঠনের বন্দোবস্ত ছিল, কিন্তু অনেকদিন কাজে না লাগায় সেটা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঘরের এক প্রান্তে একটা মোমবাতি জ্বালানো হয়েছে, কিন্তু কেউ ঘরে ঢুকলে বা বেরিয়ে গেলে যেই দরজা খুলতে হচ্ছে দমকা হাওয়া ভিতরে ঢুকে সঙ্গে সঙ্গে মোমবাতিটাকে ঘরের কোনা থেকে খুঁজে বার করে ধরে হুস করে নিবিয়ে দিচ্ছে।
একটু আগে প্রভাকরবাবুর ফরমায়েস মতো জগা চা দিতে এসেছিল, তখন দরজা খুলে দিতেই মোমেবাতি নিবে গিয়েছিল। এখন আবার কে যেন দরজাটা ঠুকঠুক করে নাড়ছে, বোধহয় জগাই গেলাস ফেরত নিতে এল। সবাই ঠান্ডায় জড়সড় হয়ে আছে। আবার দরজা খুলতে হবে, কনকনে হাওয়া ঢুকবে, মোমবাতি নিববে। কেউই উঠে দরজা খুলতে যায় না। দরজার কাছেই আমি বসেছিলাম, বাধ্য হয়েই আমাকেই উঠে দরজা খুলতে হল।
না, জগা নয়। বিলাসবাবু। বিলাসবাবু সন্ধ্যাসমিতির একজন স্থায়ী সদস্য। প্রতি সন্ধ্যাতেই আসেন। বিলাসবাবু চাকরি করেন আবহাওয়া দপ্তরে। তাঁর গলাবন্ধ ফুলহাতা সোয়েটারে এবং মাফলারে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি গুঁড়ো লেগে রয়েছে। বিলাসবাবুর দুর্ভাগ্য এই যে আবহাওয়া একটু এদিক ওদিক হলেই সবাই তাঁর সঙ্গে আবহাওয়া নিয়ে রসিকতা করেন।
আমিও অবশ্য তাই করলাম আজকে। তাকে ঘরে ঢুকতে দেখে ঠাট্টা করে বললাম, কী, বৃষ্টিটা নামিয়ে এলেন বুঝি।
এ কদিন ধরে শৈত্যপ্রবাহ চলছিল বলে সবাই অল্পবিস্তর আবহাওয়া বার্তার দিকে নজর রাখছিল। আবহাওয়া দপ্তরের আজকের পূর্বাভাসে বৃষ্টির কথা একেবারেই ছিল না এবং বলা ছিল শীত কমবে।
এরকম ভুল আবহাওয়া বার্তায় অনেক সময়েই হয়ে থাকে এবং সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিলাসবাবু নিজে খুব সুরসিক লোক। তিনি ঘরে ঢুকে রুমাল দিয়ে মাথা মুছে একপাশে বসলেন। এর মধ্যে মোমবাতিটা নিবে গিয়েছিল, আবার সেটাকে দরজা বন্ধ করে জ্বালানো হল।
বিলাসবাবু শক্ত হয়ে বসে প্রশ্ন করলেন, আপনারা ঘরের মধ্যে কী নিয়ে যেন গোলমাল করছিলেন? আমি বললাম, আপনার বিষয়েই, ওই আবহাওয়া নিয়ে কথা হচ্ছিল।
হঠাৎ আমাকে থামিয়ে দিয়ে প্রভাকরবাবু ঘরের অন্য প্রান্ত থেকে বললেন, এই নিয়ে তৃতীয়বার বললেন কথাটা, আমি বলছিলাম, হিব্রু ভাষায় একটা প্রবাদ আছে।…
আমরা সবাই জানি যে প্রভাকরবাবু হিব্রুভাষা জানেন না এবং প্রভাকরবাবু এখন যে প্রবাদের কথাটা বলবেন, সেটা হিব্রুভাষায় কেন, পৃথিবীর কোনও ভাষাতেই হয়তো নেই। কিন্তু সেই জন্যেই তার কথাবার্তা এত আকর্ষণীয় এবং তাকে অপছন্দ করা সত্ত্বেও তার গল্প শুনতে আমাদের খারাপ লাগে না।
প্রভাকরবাবুর কায়দা হল এক-একটি বাক্য বলে কিছুক্ষণ থেমে থাকা। এতে ওঁর সুবিধে হয়, অনেক কিছু ভেবে নিতে পারেন; আমাদেরও সুবিধে হয় টিকাটিপ্পনি করার।
সে যা হোক, আজকের আলোচনার গোড়ায় ফিরে যাই। শীতের বৃষ্টি নিয়ে কথা হচ্ছিল। উকিল নরেশবাবু বলছিলেন এই বৃষ্টি খুব খারাপ। ধান নষ্ট হবে, আমের বোল, লিচুর মুকুল, কঁঠালের মুচি সব কিছুর ক্ষতি হবে। উকিলবাবুর দেশে জমিজমা আছে, তার এই বক্তব্যের গুরুত্ব আছে। কিন্তু অন্য একজন, পরেশবাবু, ভারিক্কি ধরনের হেডমাস্টার মানুষ। এককালে রীতিমতো বখা ছিলেন এখন মেয়েদের স্কুলের হেডমাস্টার। একটু গম্ভীরভাবে সামলে সুমলে চলতে হয়, তার কথাবার্তায়ও হেডমাস্টারি ভাবটা এসে গেছে, তিনি বললেন, এ বৃষ্টি খুব ভাল ব্যাপার। এতে ফল ফসলের কোনও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বরং উপকার হবে। তিনি খনার বচন উদ্ধৃত করে রীতিমতো প্রত্যয়ের সঙ্গে বললেন, স্বয়ং খনা বলেছেন, যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্য রাজার পুণ্য দেশ।
সত্যিই সময়টা মাঘের শেষ চলছে, খনা পক্ষে থাকায় পরেশ হেডমাস্টারের একটু সুবিধে হল। কিন্তু উকিলবাবুও ছাড়ার পাত্র নন, গত সপ্তাহেই তিনি গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরেছেন। সদ্য দেখে এসেছেন, আম গাছে বোল এসেছে, রবি ফসলে দানা বেঁধেছে। বৃষ্টি আর সেই সঙ্গে মেঘলা ভাবটা এক আধদিন থাকলেই সমূহ সর্বনাশ হবে, তখন কেতাবি বিদ্যা বা খনার বচনে মোটেই কাজ হবে না।
তুমুল তর্ক বেধে গেল। শীতের অকাল বৃষ্টি ভাল না খারাপ, এই প্রশ্নে সদস্যেরা দুই দলে ভাগ হয়ে রীতিমতো হইহল্লা শুরু করে দিল। বলা বাহুল্য এদের কারওরই এ বিষয়ে বাস্তব জ্ঞান অভিজ্ঞতা কিছুই নেই, সবাই মোটামুটি কলকাতার লোক, শুধু একজন ছোটবেলায় কয়েক বছর কাকদ্বীপে ছিলেন, তিনি বললেন, বৃষ্টি হলে তরমুজ খুব বড় বড় হয়।
এরই মধ্যে খনার বচনের সুবাদে প্রভাকরবাবু পরপর দুবার হিব্রু প্রবাদের উল্লেখ করেছেন। এখন বিলাসবাবু ঘরে ঢুকতে তিনি আরেকবার বললেন, হিব্রুভাষায় একটা প্রবাদ আছে।
আমরা জানি প্রভাকরবাবু যখন ধরেছেন প্রসঙ্গটা শেষ পর্যন্ত ধরে থাকবেন। তার আগে বিলাসবাবু একটা মজার কথা বললেন। বিলাসবাবু বললেন যে, এই হঠাৎ বৃষ্টিটা এসে গেল এটা তারা আবহাওয়া অফিসেও চব্বিশ ঘণ্টা আগে টের পাননি। কোথাও সহসা একটা নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে, তারই জের টেনে এই বৃষ্টি।
অতঃপর বিলাসবাবু যা বললেন তা প্রণিধানযোগ্য। এই অকালবৃষ্টি। মাঘের শেষের বর্ষণ ভাল কি খারাপ, এমনকী হিব্রু প্রবাদের অবতারণার প্রচেষ্টা চাপা পড়ে গেল কিছুক্ষণের জন্যে।
পাবলিক আর খবরের কাগজ আজ কিছুদিন হল যাচ্ছেতাই হেনস্তা করছে আবহাওয়া দপ্তরকে। বছরে তিনশো পঁয়ষট্টি দিনের মধ্যে অন্তত সাড়ে তিনশো দিন আবহাওয়া অফিস যা বলে তা মিলে যায় কিন্তু ওই যে বছরে দিন দশ পনেরো ভুলভাল হয় তাই নিয়ে সবাই কটুকাটব্য, তিক্ত ও বক্র মন্তব্য করে। হাসাহাসি করে।
বিলাসবাবু বললেন, তাদের ওপরওয়ালারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এখন থেকে আর ওরকম হবে না, আবহাওয়া বুলেটিন এখন থেকে শতকরা একশো ভাগ শুদ্ধ হবে। এমনকী ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড এই সব দুর্যোগও আবহাওয়া বুলেটিনে পরিষ্কার এবং শুদ্ধ থাকবে।
আমরা সবাই বুঝলাম, এটা সম্পূর্ণ বাজে কথা। এরকম হতেই পারে না, এর মধ্যে বিলাসবাবুর কোনও চালাকি বা রসিকতা আছে।
অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই বিলাসবাবু নিজেই ব্যাপারটা ভাঙলেন, বিলাসবাবু বললেন, ঠিক হয়েছে যে, এখন থেকে আমরা আর পরবর্তী চব্বিশ ঘণ্টার আবহাওয়ার বুলেটিন না দিয়ে পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘণ্টার আবহাওয়াবার্তা দেব। তাতে আর কোনও ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
একথা শুনে আমরা সবাই অল্পবিস্তর হাসলাম। তবে আমরা বিলাসবাবুর রসিকতা যতটা জোরালো হবে ভেবেছিলাম তা একেবারেই হয়নি।
এই সুযোগে, প্রভাকরবাবু আবার আত্মপ্রকাশ করলেন। চতুর্থ বার বললেন, হিব্রু ভাষায় একটা প্রবাদ আছে।
বিলাসবাবুর গল্পটা প্রায় মাঠে মারা যাওয়ায় এবার আর প্রভাকরবাবুর দিকে নজর না দিয়ে পারা গেল না। আমিই বললাম, প্রভাকরবাবু, আপনার ওই হিব্রু প্রবাদের ব্যাপারটা কী? আর তার সঙ্গে জল, বৃষ্টি, আবহাওয়ার কী সম্পর্ক? বিলাসবাবু বললেন, আবহাওয়া সম্পর্কে কোনও হিব্রু প্রবাদ আছে। নাকি?
ইতিমধ্যে জগা এসে চায়ের কঁকা গেলাসগুলো তুলে নিয়ে গেল। আরেকবার মোমবাতি নিবল, আরেকবার জ্বালানো হল। জগার মা এসে বলল, বাদলার জন্যে আজ তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করবে। যদি আর চা লাগে এখনই দিয়ে যাবে।
প্রভাকরবাবু সঙ্গে সঙ্গে সকলের জন্যে আরেক রাউন্ড চা এবং চানাচুর আদেশ করলেন। তারপর বললেন, আপনারা এতক্ষণ এই বৃষ্টিটা ভাল না খারাপ তাই নিয়ে তর্ক করলেন। তাই শুনে আমার ওই হিব্রু প্রবাদটার কথা মনে পড়ল। আর সেই সঙ্গে একটা গল্প।
উকিলবাবু জেরার ভঙ্গিতে প্রশ্ন করলেন, হিব্রু প্রবাদে এই বৃষ্টি সম্পর্কে কী বলেছে, ভাল না খারাপ? প্রভাকরবাবু বললেন, বৃষ্টি সম্পর্কে হিব্রু প্রবাদে কিছু বলা নেই। প্রবাদটার কথা হল, যা ভাল তাই খারাপ আর যা খারাপ তাই ভাল। যেমন এই বৃষ্টিটা ভাল আবার খারাপও বটে।
বিলাসবাবু আর আমি সমস্বরে বললাম, এ আবার কী হেঁয়ালি?
প্রভাকরবাবু বললেন, দেখুন হেঁয়ালি-পেঁয়ালি নয়। প্রবাদটা বোঝাবার জন্যে আমি একটা ঘটনা বলছি।
আমরা এটাই আশা করেছিলাম, এবার চুপ করে প্রভাকরবাবু কী বলেন শুনতে লাগলাম।
প্রভাকরবাবু বলতে লাগলেন, ধর্মতলার পূর্বদিকের শেষ মাথায় সানরাইজ বার বলে একটা জায়গা ছিল আমাদের মদ খাওয়ার আড্ডা।
আমি বললম, সানরাইজ বার নামে কোনও কিছু ওদিকে দেখিনি তো। প্রভাকরবাবু বললেন, আগে গল্পটা শুনুন। এটা অনেকদিন আগের কথা। যে জায়গায় বারটা ছিল সে জমিতে এখন এগারোতলা বাড়ি উঠেছে।
প্রভাকরবাবুকে আমরা আর বাধা দিলাম না। তিনি বললেন, ওই সানরাইজে একসময় আমি সন্ধ্যা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত আড্ডা দিতুম। আড্ডা মানে মদ্যপান। তবে কখনও মাতাল হতুম না।
আমরা কেউ কেউ তাঁর এ কথায় মুচকিয়ে হাসলাম, কিন্তু মোমবাতির সামান্য আলোয় প্রভাকরবাবু হয়তো সেটা দেখতে পেলেন না।
যা হোক, চা এসে গিয়েছিল, চায়ের গেলাসে চুমুক দিতে দিতে প্রভাকরবাবু বলতে লাগলেন, সানরাইজে বসন্ত সেন বলে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়েছিল। দুজনে এক টেবিলে বসে প্রতিদিন সন্ধ্যায় মদ খেতাম। বেশ হৃদ্যতা হয়েছিল। শুনেছিলাম সে কোথায় এক কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্কে কাজ করে। হঠাৎ একদিন বসন্ত এল না। তারপর, সে আর এলই না। কানাঘুষো শুনলাম, সে নাকি কোঅপারেটিভ থেকে লাখখানেক টাকা সরিয়ে উধাও হয়েছে। এরপরে তার আর খোঁজ পেলাম না। তাকে ভুলেই গিয়েছিলাম। হঠাৎ গতবার আগ্রায় বেড়াতে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা। স্টেশনের থেকে তাজমহলে যাওয়ার পথে বাজারের মোড়টায় একটা মদের দোকান আছে, সাজাহান ওয়াইন শপ, সেখানে এক পাঁইট রাম কিনতে গেছি। দেখি কাউন্টারে বসন্ত সেন। এতদিন বাদে হলেও আমি তাকে একবার দেখেই চিনতে পারলাম। সেও চিনতে পারল, মোটেই আত্মগোপনের চেষ্টা করল না। বরং সন্ধ্যায় তার বাড়িতে নিমন্ত্রণ করল। হোটেলে উঠব ভেবেছিলাম। সুটকেসটা হাতেই ছিল, সেটা তার দোকানে নামিয়ে বাড়ির ঠিকানা নিয়ে রিকশায় করে তাজমহল দেখতে চলে গেলাম। বললাম তাজমহল দেখেশুনে সরাসরি তার বাড়িতে সন্ধ্যায় চলে যাব।
ইতিমধ্যে চা পান এবং চানাচুর খাওয়া শেষ হয়েছে। বাইরে বৃষ্টির জোর আরেকটু বেড়েছে। শীতের রাতের বৃষ্টি সহজে হয়তো ছাড়বে না। আমরা কেউ কেউ উঠি উঠি করছিলাম। বাড়িতে যদি আবহাওয়ার মেজাজ বুঝে খিচুড়ি-টিচুড়ি রান্না হয় তাহলে সময়মতো না পৌঁছালে গোলমাল আছে।
কিন্তু প্রভাকরবাবু গল্পটা ভাল ধরেছেন। বসন্ত সেনের গল্পটা জমবে বলেই মনে হচ্ছে, তা ছাড়া গল্পের মধ্যপথে ওঠাটা ঠিক ভদ্রতাও নয়।
সন্ধ্যায় গেলাম বসন্ত সেনের বাড়িতে। প্রভাকরবাবু বলতে লাগলেন, বসন্ত আগেই চলে এসেছিল। দেখলাম বাসায় সে একাই থাকে। এক মধ্যবয়সি দেহাতি কাজের মেয়ে আছে, নাম বোধহয় জানকী। জানকী সধবা না বিধবা না অবিবাহিতা কিছুই বোঝা গেল না। তবে বুঝলাম রান্না বান্না থেকে সংসারের সব কিছুই সে করে।
একটা ছোটগলির একদম শেষে একটা ছোট একতলা বাড়ি, গেটে নেমপ্লেট রয়েছে এস বসন্ত (S. Vasanta)। বুঝলাম নামটা একটু ঘুরিয়ে দিয়েছে সে, সেনকে এস করে বসন্ত নামটাকে উপাধি বানিয়েছে। আত্মরক্ষার জন্যে বোধহয় এটা প্রয়োজন ছিল। নেমপ্লেটে নামের নীচে লেখা রয়েছে ওয়াইন মার্চেন্ট।
বসন্ত কিন্তু খুব সমাদর করল। বাড়িতে আসার পথে একটা দোকান থেকে মাংসের বড়া আর কাবাব নিয়ে এসেছে। আমি পৌঁছে যাওয়ার পর সে সেগুলো উঠোনে একটা ছোট জনতা স্টোভে গরম করতে লাগল। জানকী মাছ-মাংস ছোঁয় না, শুদ্ধাচারী। তাই এই ব্যবস্থা।
সে যা হোক, বসন্ত বড় এক বোতল ফৌজি রামও এনে রেখেছিল। একটু পরে গেলাস, বোতল, জল এই সব নিয়ে দুজনে পরিপাটি করে বসলাম। প্লেটে প্রচুর পরিমাণে মাংসের বড়া এবং কাবাবও রইল।
কোনও কিছুরই অভাব নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই দুজনের অন্তরঙ্গ আড্ডা জমে উঠল। কথায় কথায় পুরনো প্রসঙ্গও উঠল। বসন্ত কিছুই রাখঢাক না করে নিজের কথা সব বলতে লাগল।
এই সময় হঠাৎ আলোটা জ্বলে উঠল, বিদ্যুৎ ফিরে এসেছে। সন্ধে কাবার করে রাতের দিকে এগোচ্ছে সময়। আলো জ্বলতে অনেকেই হাতঘড়ির দিকে তাকাল। সন্ধ্যা সমিতির দেয়ালেও একটা ওয়াল-ক্লক আছে। অভ্যাসমতো সেটার দিকে তাকিয়ে নিজের হাতঘড়ির সময় মনে মনে মিলিয়ে দেখা আমার অনেকদিনের অভ্যেস। দেখলাম দুটোতেই প্রায় সাড়ে আটটা বাজে। বৃষ্টির সন্ধ্যায় এর চেয়ে বেশি দেরি না করাই ভাল। যেকোনও সময় আরও বৃষ্টি আসতে পারে।
আমি উঠতে যাব এমন সময় হেডমাস্টার পরেশবাবু প্রভাকরবাবুকে ধরলেন, আপনি যে তহবিল তছরুপের গল্প ধরেছেন মশায়, তার মধ্যে আবার মদও এনে ফেলেছেন। গোড়ায় বললেন যা ভাল তাই খারাপ, এই বৃষ্টিটা ভালও বটে, খারাপও বটে। এখন অন্য গল্প ধরলেন কেন?
পরেশবাবু আমাদের সকলের মনের কথাই বলেছেন। আমরাও এই কথাই ভাবছিলাম।
প্রভাকরবাবু পরেশবাবুর কথার জবাবে বললেন, যা ভাল তাই খারাপ। যা খারাপ তাই ভাল। সেই কথাই তো বলছি। বুঝতে পারছি বৃষ্টির জন্যে আপনাদের বাড়ি যাওয়ার তাড়া আছে। অল্প একটু ধৈর্য ধরুন। গল্পটা এখনই গুটিয়ে আনছি।তারপর প্রভাকরবাবু একটু ইতস্তত করে বললেন, আরেক কাপ চা হলে ভাল হত, তাই না?
কিন্তু চায়ের আর উপায় নেই। একটু আগে জগা এসে আগের খালি গেলাসগুলো নিয়ে চলে গেছে। তাদের দোকান এখন বন্ধ।
তবু প্রভাকরবাবুর আন্তরিকতা দেখে আরেকটু বসে গেলাম। যদি দশ-পনেরো মিনিটের মধ্যে গল্পটা মিটে যায়, দেখাই যাক না।
প্রভাকরবাবু বললেন, চা তো হল না। আপনারা যদি অনুমতি করেন এবার তবে গল্পটা হোক। বলেছিলাম না, যা ভাল তাই খারাপ। এবার গল্পটায় সরাসরি যাচ্ছি। বুঝতে পারবেন কথাটার মানে।
আমরা আর বাধা দিলাম না। এখন যত তাড়াতাড়ি শেষ করে ততই মঙ্গল।
প্রভাকরবাবু আমাদের মনোভাব বুঝতে পেরেছিলেন। জানকী আর বসন্ত সেনকে নিয়ে একটা রসালো গল্প বোধহয় তার জিভের ডগায় সুড়সুড় করছিল। প্রভাকরবাবু বললেন, জানকীর ব্যাপারটা আজ না হয় থাক। বসন্তের সেই ভাল খারাপের ব্যাপারটা বলি।
ভাল খারাপের ব্যাপারটা আমরা যত সোজা ভেবেছিলাম প্রভাকরবাবুর গল্পে কিন্তু ব্যাপারটা জটিল হয়ে গেল।
আমি কারুকার্য করতে যাব না। প্রভাকরবাবুর লাইনেই গল্পটা বলি। সে লাইনটা আমার লাইনের চেয়ে খারাপ নয়।
প্রভাকরবাবু বললেন, বসন্তের সঙ্গে নানা সুখদুঃখের গল্প হল। সে বলল, তহবিল তছরুপ না করে কোনও উপায় ছিল না। কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্কে যা মাইনে-টাইনে পেতুম তাতে কায়ক্লেশে খাওয়া-দাওয়া চলে যেত কিন্তু এই মদের নেশাটা ধরে বেকায়দায় পড়ে গেলুম। সামান্য চাকরির টাকায় তো আর মদের খরচা চলে না। আমি অল্প অল্প ক্যাশ ভাঙতে লাগলুম। বছর খানেকের মধ্যে টাকার অঙ্কটা প্রায় তিরিশ হাজারে পৌঁছল। তখন রেস খেলতে শুরু করলাম এই আশায় যে রেসে জিতে যদি টাকাটা তুলতে পারি। সে তো হলই না বরং আরও হাজার কুড়ি টাকা গচ্চা গেল। তখন দেখলাম আর বেশিদিন ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখা যাবে না, ধরা পড়বই, জেলে যাবই; সব রকম। ভেবেচিন্তে ক্যাশে বাকি যা হাজার পঞ্চাশেক টাকা ছিল সেটা নিয়ে কেটে পড়লাম।
প্রভাকরবাবু থামলেন। গল্পটা শেষমেশ মোটেই জমল না। আমরা উঠতে যাচ্ছিলাম। এই এক মামুলি টাকা চুরির গল্পের জন্যে এত সব কায়দা, যা-ভাল তাই-খারাপ, হিব্রু প্রবাদ। আমি মনে মনে ঠিক করলাম আগামীকাল থেকে প্রভাকরবাবু গল্প আরম্ভ করলেই বাধা দেব।
কিন্তু প্রভাকরবাবুর মুখ দেখে মনে হল, আজকের গল্পটাই এখনও শেষ হয়নি। তিনিও নিঃশব্দে হাত তুলে আমাদের একটু অপেক্ষা করতে বললেন, জানালেন যে এর পরে আর গল্প বিশেষ নেই শুধু তার সঙ্গে সেই রাতে বসন্ত সেনের যা বাক্যালাপ হয়েছিল সেটুকু শুনলেই হয়ে যাবে।
.
প্রভাকরবাবুর গল্প লিখছি আমি। প্রভাকরবাবু বলছেন বসন্ত সেনের কথা। ব্যাপারটা খুব জটিল হয়ে যাচ্ছে। তাই আমি এরপর পাঠক পাঠিকাদের সুবিধার্থে সরাসরি প্রভাকরবাবু কথিত বসন্তবাবুর ও প্রভাকরবাবুর বাক্যালাপ তুলে ধরছি।
প্রভাকরবাবু: বসন্ত তুমি ওই টাকা নিয়ে কোথায় গেলে? পুলিশে তোমাকে ধরার চেষ্টা করেনি?
বসন্তবাবু: দেখুন প্রভাকরদা, নিজে থেকে ধরা না দিলে কিংবা আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব ধরিয়ে না দিলে এসব কেসে পুলিশ কাউকে ধরার চেষ্টা করে না। আমি টাকা নিয়ে চলে এলাম এখানে আগ্রায়। পাশেই একটা দেহাতে ঘরভাড়া নিয়ে চুরির টাকায় দশটা দুধেল গোরু কিনলাম। দুধের ব্যবসা শুরু করে দিলাম।
প্রভাকরবাবু: ভাল।
বসন্তবাবু: ভাল আর কী বলছেন দাদা। দুধের ব্যবসায় খুব লাভ হতে লাগল।
প্রভাকরবাবু: খুব ভাল।
বসন্তবাবু: কিন্তু হঠাৎ গোমড়ক শুরু হল। সে এক সাংঘাতিক ব্যাপার। এক রাতে আমার দশটা গোরুই মরে গেল।
প্রভাকরবাবু: খুব খারাপ।
বসন্তবাবু: কিন্তু কিছুই ক্ষতি হল না আমার। তাজা গোরুর চেয়ে মড়া গোরুর চামড়ার দাম বেশি। ওই মরা গোরুগুলো কশাইয়ের কাছে বেচে ষাট হাজার টাকা পেলাম।
প্রভাকরবাবু: ভাল।
বসন্তবাবু: তা ছাড়া সরকার থেকে কয়েক মাস পরে ক্ষতিপূরণ পেলাম।
প্রভাকরবাবু: খুব ভাল।
বসন্তবাবু: তখন আর দুধের ব্যবসায় গেলাম না। চোলাই মদের ব্যবসা আরম্ভ করলাম। রমরমা কারবার শুরু হল।
প্রভাকরবাবু: ভাল।
বসন্তবাবু: একদিন পুলিশ এসে আমাকে থানায় ধরে নিয়ে গেল।
প্রভাকরবাবু: খুব খারাপ।
বসন্তবাবু: খারাপ আর কী? থানার বড়বাবুকে ব্যবসার পার্টনার করে নিলাম। ব্যবসা আরও জমে উঠল।
প্রভাকরবাবু: ভাল। খুব ভাল।
বসন্তবাবু: এবার ঠিক করলাম বিয়ে করব। খুব সুন্দরী এখানকার একটা পাত্রী দেখে বিয়ে করেই ফেললাম।
প্রভাকরবাবু: খুব ভাল।
বসন্তবাবু: কিন্তু মেয়েছেলেটা বড় দজ্জাল। বিয়ের সাত দিনের মধ্যে গালাগাল ঝগড়াঝাটি, এক মাসের মধ্যে মারধোর শুরু করল, ঝাটা দিয়ে, খুন্তি দিয়ে, চেলা কাঠ দিয়ে, এখনও শরীরে কালশিটের দাগ আছে।
প্রভাকরবাবু: খারাপ। খুব খারাপ।
বসন্তবাবু: এর মধ্যে একটা বাড়িও তৈরি করে ফেলেছিলাম। খুব সুন্দর দোতলা বাড়ি। ফুল গাছ, লন।
প্রভাকরবাবু: খুব ভাল। ব
সন্তবাবু: কিন্তু বউয়ের যন্ত্রণায় বাড়িতে টিকতে পারতাম না। বাড়িতে ঢুকতে গেলেই চেলাকাঠ ছুঁড়ে মারত, দোতলা থেকে গরমজল গায়ে ফেলার চেষ্টা করত। আর চেঁচামেচি, চৌদ্দপুরুষ উদ্ধার, মোগলাই গালিগালাজ, জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠল। এক মুহূর্ত বাড়িতে টিকতে পারছিলাম না।
প্রভাকরবাবু: খারাপ।
বসন্তবাবু: বাড়িটায় হঠাৎ একদিন আগুন লেগে গেল। আগুনে বাড়িটা সম্পূর্ণ পুড়ে গেল।
প্রভাকরবাবু: খুব খারাপ।
বসন্তবাবু: কিন্তু বাড়িটা ইনসিওর করা ছিল। দু লাখ টাকা পেয়ে গেলাম।
প্রভাকরবাবু: ভাল।
বসন্তবাবু: বাড়িটার সঙ্গে দজ্জাল বউটাও পুড়ে মরল। তার ইনসিওর থেকে আরও দেড় লাখ টাকা পেলাম।
প্রভাকরবাবু: খুব ভাল।
.
এই ভাল, খুব ভাল, খারাপ, খুব খারাপ কতক্ষণ ধরে চলত বলা কঠিন। এই সময়ে হঠাৎ আবার লোডশেডিং হল, আলো নিবল। আমরা প্রভাকরবাবুকে আর সুযোগ না দিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম।
এ বৃষ্টি সহজে থামবে বলে মনে হচ্ছে না। অন্ধকার রাস্তায় ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে তাড়াতাড়ি বাড়ির দিকে যেতে যেতে রাস্তায় বিলাসবাবুকে বললাম, এই বৃষ্টিটা ভাল না খারাপ কিছুই জানা গেল না। পিছনেই প্রভাকরবাবু ছিলেন, অন্ধকারে টের পাইনি, তিনি বললেন, একটা হিব্রু প্রবাদে আছে। ..তাকে কথা শেষ করতে দিলেন না বিলাসবাবু, দ্রুত পা চালাতে চালাতে বললেন, খুব ভাল, না খুব খারাপ?