1 of 2

ভয়ঙ্কর সবুজ – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

ভয়ঙ্কর সবুজ – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

ভাদুড়ী এতক্ষণ মুখ খোলেনি। এইবারে খুলল। বলল, ‘অর্থাৎ মার্ডারটা আপনাদের নাকের ডগাতেই হয়েছে। কেমন?’

প্রশ্ন শুনে শ্যামজি একটু হকচকিয়ে গেলেন। তারপর, ধাক্কাটাকে সামলে নিয়ে লজ্জিত গলায় বললেন, ‘আমি বুঝতে পারছিনে, আপনি ঠাট্টা করছেন কি না। অবশ্য, ঠাট্টাও যদি করেন, আমাদের কিছু বলবার নেই। হ্যাঁ, মার্ডারটা একেবারে একজিবিশন-হাউসের মধ্যেই হয়েছে বটে।’

‘এবং এটা একটা ক্রাইম-একজিবিশন?’

‘হ্যাঁ।’

‘এবং পুলিশ-বিভাগ থেকেই এই ক্রাইম-একজিবিশনের আয়োজন করা হয়েছিল। তাই না?’

‘ঠিক তাই।’

ভাদুড়ী তার টিন থেকে একটি সিগারেট ধরিয়ে নিল। তারপর টিনটাকে সামনে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘শ্যামজি, আমি ঠাট্টা করছিনে। পুলিশের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ঠিক ঠাট্টা-তামাশার নয়। তবু যে এত খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে প্রশ্ন করছি, তার কারণ, কয়েকটা ব্যাপারে আমি একেবারে নিঃসংশয় হতে চাই। এবং সেইজন্যেই আমি আশা করব যে, ঘটনার বিবরণটা আপনি গোড়া থেকে, আর একবার বলে যাবেন। আপনার আপত্তি আছে?’

শ্যামজি বললেন, ‘কিছুমাত্র না। কিন্তু, তার আগে এক কাপ চা খাওয়ান।’

চা এল। নিঃশব্দে চা খেলাম আমরা। তারপর শ্যামজি আবার গোড়া থেকে তাঁর গল্প বলতে শুরু করলেন।

পাঠককে এইখানে স্থান-কাল-পাত্রের একটা আভাস দিয়ে রাখা দরকার। স্থান—পশ্চিম ভারতের একটি প্রধান শহর। কাল—নভেম্বরের সন্ধ্যা। পাত্র—ভাদুড়ী, শ্যামজি এবং আমি।

না, ঘনশ্যাম ভাদুড়ীকে আমি প্রাইভেট গোয়েন্দা বলতে পারিনে। পেশায় সে অধ্যাপক। এখানকার একটি কলেজে সে দর্শনশাস্ত্র পড়ায়। তবে, অবসর সময়ে সে অপরাধ-বিজ্ঞান নিয়ে কিছু নাড়াচাড়া করে বটে। ইতিপূর্বে গুটিকয়েক মার্ডার-কেসের কিনারা করতে সে এখানকার পুলিশকে কিছু সাহায্যও করেছে। তা নইলে কি আর শ্যামজি আজ এইখানে ছুটে আসতেন? শ্যামজির পুরো নাম শ্যামনন্দন শাস্ত্রী। তিনি এখানকার পুলিশ-বিভাগের একজন মাঝারি অফিসার।

বাকি রইলাম আমি। আমার পরিচয় আর কী দেব? সুবিখ্যাত লেখক কৃতাঞ্জলি কারফর্মাকেও যদি আজ আত্মপরিচয় ঘোষণা করতে হয়, তবে তার চাইতে শোকাবহ ব্যাপার আর কী হতে পারে। সে যাক, ঘনশ্যামের আমি ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাকে নিয়ে একখানি বইও আমি লিখেছি। বইখানির নাম ”ভাদুড়ীর বাহাদুরি”। আপনারা পড়ে থাকবেন।’

শ্যামজি বললেন, ‘মিঃ ভাদুড়ী, আপনি জানেন যে, পুলিশ-বিভাগ থেকে ফি বছরই এই শহরে একটা ক্রাইম-একজিবিশনের আয়োজন করা হয়। একজিবিটগুলি নানারকমের। ডাকাতি, রাহাজানি, গুণ্ডামি ইত্যাদি ব্যাপারে যেসব অপরাধীর নাম এখন প্রায় কিংবন্তিতে পরিণত হয়েছে, এই একজিবিশনে তাদের ফটোগ্রাফ তো থাকেই, তা ছাড়া থাকে অসংখ্য রকমের অস্ত্রশস্ত্র। বলা বাহুল্য, এই অস্ত্রগুলিরও প্রায় প্রত্যেকটিরই কিছু-না-কিছু ইতিহাস আছে। বিখ্যাত ডাকাত কদম সিংয়ের কোমর থেকে যে-তলোয়ার ঝুলত; কিংবা প্রসিদ্ধ পকেটমার বিল্লু খাঁ যে-কাঁচি ব্যবহার করত; কিংবা দি গ্রেট রেডল্যাম্প ব্যাঙ্কে ডাকাতির সময় মুখোশধারী দস্যুরা যে-স্টেনগান চালিয়েছিল; কিংবা সাধু-লুঠেরা জিওনবাবার সেই ভয়ংকর চিমটে, যা দিয়ে সে কিনা অন্তত পঁচিশজন তীর্থযাত্রীর প্রাণ-সংহার করেছে, একজিবিশনে গেলে এই সমস্তই আপনি দেখতে পাবেন।

‘কিন্তু না, তলোয়ার কিংবা কাঁচি কিংবা স্টেনগান কিংবা চিমটের কথা আমি বলতে আসিনি। আমি বলতে এসেছি একগাছা দড়ির কথা। এবারকার সেরা একজিবিট ছিল এই দড়ি।’

একমিনিট চুপ করে রইলেন শ্যামজি। তারপর ধীরে-ধীরে বললেন, ‘মিঃ ভাদুড়ী, দেড়শো বছর আগে যার দৌরাত্ম্য ছিল সীমাহীন, যার দাপটে তখন শাহি সড়ক দিয়ে কেউ হাঁটতে সাহস পেত না, সেই দিলওয়ার খাঁ-র নাম আপনি শুনেছেন কি না, আমি জানিনে। এই দড়িগাছা আর কারও নয়, দিলওয়ার খাঁ-র। দিলওয়ার ছিল দস্যুরাজ। সিল্কের একটা সরু লিকলিকে দড়ি, তাই দিয়ে যে কত লোককে সে ফাঁসি দিয়েছে, তার সীমা-সংখ্যা নেই। মিউটিনিরও প্রায় বছর চল্লিশেক আগে—আনুমানিক ১৮২০ সনে—তার মৃত্যু ঘটে। মৃত্যুটা ঈষৎ রহস্যময়। অনেকে বলে, সে অসুখে ভুগে মারা যায়। আবার অনেকে বলে, তার এক শাকরেদ, ওই সিল্কের দড়ি দিয়েই তাকে হত্যা করেছিল।

‘সে যা-ই হোক, দিলওয়ারের মৃত্যুর পর এ-হাত ও-হাত ঘুরতে-ঘুরতে সেই ভয়ঙ্কর দড়িগাছা যে শেষপর্যন্ত—১৮৯০ সনে—কীভাবে পুলিশ-কর্তৃপক্ষের হাতে এসে পৌঁছয়, তা যদি জানতে হয় তো দয়া করে আপনি কর্নেল রাউটল্যান্ডের ”মাই ডেজ ইন ইন্ডিয়া” বইখানা একবার পড়ে দেখবেন। আপাতত জেনে রাখুন যে, এবারকার ক্রাইম-একজিবিশনে ওই দড়িগাছাই ছিল আমাদের সেরা একজিবিট। এবং ওই দড়িগাছাই আরও একটি মনুষ্যজীবনের সমাপ্তি ঘটিয়েছে।’

ভাদুড়ী বলল, ‘কোথায় হচ্ছিল আপনাদের একজিবিশন?’

‘বরাবর যেখানে হয়। পুলিশ-ক্লাবে।’

শুনে, এক মুহূর্ত চুপ করে রইল ভাদুড়ী। তারপর বলল, ‘পুলিশ-ক্লাবের বাড়িটা আমি দেখেছি। কিন্তু ভিতরে যাইনি। সুতরাং আমি খুশি হব, আপনি যদি এই বাড়িটার একটা নিখুঁত বর্ণনা দেন।’

শ্যামজি বললেন, ‘বর্ণনার বিশেষ কিছু নেই। সামনে একটা বড় ঘর। তার ঠিক পেছনে, ঠিক সেই মাপেরই, আর-একটা ঘর। তারপর বারান্দা। বারান্দার পেছনে আরও-একটা ঘর আছে। তবে সেটা অনেক ছোট মাপের। এবং ছোট্ট সেই ঘরটাতে এবারে আমরা একটিমাত্র একজিবিট রেখেছিলাম।’

‘অর্থাৎ সিল্কের দড়িগাছা রেখেছিলেন, কেমন?’

‘হ্যাঁ।’

‘আর কিছু ছিল না?’

এক মুহূর্ত ভেবে নিয়ে শ্যামজি বললেন, ‘ছিল। দিলওয়ার খাঁ-র একটা ছবি। বলা বাহুল্য, ফটোগ্রাফ নয়। দিলওয়ার খাঁ সম্পর্কে যেসব গালগল্প এবং কিংবদন্তি চালু রয়েছে, তাতে তার চেহারার কিছু-কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়। সেই বর্ণনার সঙ্গে মিলিয়ে, এখানকারই একজন আর্টিস্টকে দিয়ে আমরা একখানা ছবি আঁকিয়ে নিয়েছিলাম। ছোট্ট একটা টেবিলের ওপরে, সিল্কের সেই দড়ির পাশে, দিলওয়ারের ছবিখানাকেও একটা একজিবিট হিসেবে রাখা হয়েছিল।’

‘তারপর?’

‘তারপর এই খুন।’

‘কখন খুন হয়েছে?’

‘সোমবার বিকেলে। পৌনে পাঁচটার সময়।’

‘আর আজ মঙ্গলবার।’

আবার কিছুক্ষণ চুপ করে রইল ভাদুড়ী। তারপর বলল, ‘কিন্তু, একটা কথা আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিনে, শ্যামজি। একজিবিশন-বাড়ি, মানুষজনের ভিড় সেখানে লেগেই আছে, তার মধ্যে কী করে খুন হয়?’

শ্যামজি বললেন, ‘সেই কথাই বলছিলাম। একজিবিশন তো সারাদিনই খোলা থাকে, কিন্তু ভিড় সাধারণত ছ’টার আগে হয় না। তার কারণ, অফিস-কাছারি এখানে সাড়ে পাঁচটায় বন্ধ হয়। আর, এক্ষেত্রে খুন হয়েছে মোটামুটি পৌনে পাঁচটার সময়। একজিবিশন-হল তখন ফাঁকা। থাকবার মধ্যে শুধু একজন দারোয়ান ছিল। সে ছিল সামনের ঘরে, সেইখানেই তার থাকবার কথা।’

‘দারোয়ান কী বলল?’

‘তার কথায় কোনও ক্লু নেই। সে বলছে যে, বিকেল স-চারটে নাগাদ তিনজন দর্শক এসে একজিবিশন-বাড়িতে ঢোকে। দুজন এসেছিল একসঙ্গে; একজন আলাদা। সামনের ঘরটায় মারাত্মক সব অস্ত্রশস্ত্র থাকে। সেখানে তারা মিনিটদশেক ছিল। সেখান থেকে, পেছনের ঘর হয়ে, তারা ওই ছোট-ঘরটার দিকে চলে যায়। তারও মিনিটদশেক বাদে, দারোয়ান হঠাৎ শুনতে পায় যে, সেই ঘরটার দিকে থেকে একটা ধস্তাধস্তির আওয়াজ আসছে।’

‘দারোয়ান তখুনি ছুটে গিয়েছিল নিশ্চয়?’

‘তক্ষুনি। সে গিয়ে দেখতে পায়…ওঃ, সে এক বীভৎস দৃশ্য! মেঝের ওপরে টান হয়ে শুয়ে আছে একটা মানুষ। গলায় তার ওই সিল্কের দড়ি। আর…আর বাকি দুজনে পরস্পরকে জাপটে ধরে আছে। জাপটে ধরে চেঁচাচ্ছে ”খুন! খুন!” বলা বাহুল্য, দরোয়ান তাদের দুজনকেই গ্রেপ্তার করে। এবং তারপরেই সে বড় থানায় একটা ফোন করে দেয়।’

‘ফোন পেয়েই আপনি বড়-থানা থেকে পুলিশ-ক্লাবে চলে যান?’

‘হ্যাঁ।’

‘কিন্তু, অনেক জেরা করেও, কে যে আসল খুনি, তা আপনি জানতে পারেননি?’

‘শুধু জেরা নয়,’ ডান চোখটাকে অল্প একটু ছোট করে শ্যামজি বললেন, ‘অন্য কিছু ওষুধও আমি প্রয়োগ করেছিলাম। কিন্তু তাতে কোনও ফল হয়নি। দেওশঙ্কর বলছে, রঘুবীর খুনি। আর রঘুবীর বলছে, দেওশঙ্করই খুন করছে।’

‘যে-দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের বুঝি ওই নাম?’

‘হ্যাঁ।’

‘আর যে মারা গিয়েছে, তার?’

‘প্রীতম।’

‘প্রীতম কি একলা এসেছিল?’

‘না। প্রীতম এসেছিল রঘুবীরের সঙ্গে। দেওশঙ্কর এসেছিল একলা।’

‘রঘুবীর কী বলছে?’

‘বলছে যে, ছোট-ঘরটার সঙ্গে যে একটা অ্যাটাচড বাথরুম আছে, মিনিটতিনেকের জন্যে সে সেই বাথরুমে ঢুকেছিল। বেরিয়ে এসে দ্যাখে, প্রীতম ভূমিশয্যায় শুয়ে আছে, এবং দেওশঙ্কর পালাচ্ছে। তৎক্ষণাৎ সে দেওশঙ্করকে জাপটে ধরে।’

‘দেওশঙ্কর কী বলছে?’

‘দেওশঙ্করও ওই একই কথা বলছে। বলছে যে, সে বাথরুমে ঢুকেছিল। বেরিয়ে এসে দ্যাখে, একজন একেবারে মেঝের ওপর শুয়ে আছে, এবং অন্যজন পালাচ্ছে। সঙ্গে-সঙ্গেই, একটা কিছু ঘটেছে সন্দেহ করে, পলায়মান ব্যক্তিটিকে সে জাপটে ধরে।’

হতাশ ভঙ্গিতে একবার মাথা নাড়লেন শ্যামজি। তারপর বললেন, ‘আশ্চর্য! কাল বিকেল থেকে, ক্রমাগত, এই একই কথা তারা বলে যাচ্ছে। এ বলছে, ও খুনি; ও বলছে, এ। খুনের ব্যাপারে এ ছাড়া আর একটা কথাও তাদের মুখ থেকে আমি বের করতে পারিনি।’

আমি, শ্রীকৃতাঞ্জলি কারফর্মা, এতক্ষণ চুপ করে বসে ছিলাম। কিন্তু আর আমার পক্ষে নীরব থাকা সম্ভব হল না। ঘনশ্যামের টিন থেকে একটা সিগারেট ধরিয়ে, একগাল ধোঁয়া ছেড়ে, আমি বললাম, ‘কিন্তু, শ্যামজি, এমনও তো হওয়া সম্ভব যে, রঘুবীর আর দেওশঙ্করের মধ্যে কেউ খুন করেনি। এমনও তো হতে পারে যে, তৃতীয় কোনও ব্যক্তি এসে প্রীতমকে হত্যা করেছে।’

শ্যামজি বললেন, ‘না, তা সম্ভব নয়। এইজন্যে নয় যে, পুলিশ-ক্লাবের বাড়িতে ঢুকবার আর দ্বিতীয় কোনও দরজা নেই। দরজা ওই একটিমাত্র। সামনের দিকে। এবং সামনের দরজা দিয়ে যদি আর-কেউ আমাদের ক্লাবে ঢুকত, অথবা ক্লাব থেকে বেরিয়ে যেত, তা হলে দারোয়ানই তাকে দেখতে পেত। না, খুন এক্ষেত্রে তৃতীয় ব্যক্তি করেনি। করেছে ওই দুজনের মধ্যেই একজন। কিন্তু সেই একজন যে কোনজন, রঘুবীর না দেওশঙ্কর, সেইটেই আমি বুঝতে পারছিনে।’

বললাম, ‘আরও একটা অলটারনেটিভ আছে, শ্যামজি। এমনও হতে পারে যে, দুজনেই ওরা খুনি। ষড় করে, সম্মিলিত উদ্যোগে, ওরা প্রীতমকে হত্যা করেছে।’

শ্যামজি বললেন, ‘তাও সম্ভব নয়। রঘুবীর আর দেওশঙ্করের মধ্যে যদি যোগসাজশ থাকত, প্রীতমকে হত্যা করে তাহলে নির্বিঘ্নেই ওরা সরে পড়তে পারত, এবং সেইটেই হত স্বাভাবিক।’

আমি বললাম, ‘ও।’

তারপর একটু ভেবে নিয়ে বললাম, ‘কিন্তু, রঘুবীর আর দেওশঙ্করের মধ্যেই একজন যে খুনি, তাতে তো আর সন্দেহ নেই। সেক্ষেত্রে ওদের দুজনকেই আপনি ঝুলিয়ে দিচ্ছেন না কেন? দুজনকেই যদি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে নির্দোষেরও শাস্তি হবে বটে, কিন্তু দোষীরও হবে।’

শ্যামজি বললেন, ‘ছিয়া-ছিয়া, কারফর্মাজি, ঝুলিয়ে দেওয়ার আমি কে! আর তা ছাড়া, ঝুলিয়ে দেওয়ার মালিক যদি আমি হতুমও, তাহলেও ঝুলিয়ে দিতুম না। কেননা, আমি হুবার্ট-সাহেবের শিষ্য। সাহেব বলতেন, ”দোষীকে ছেড়ে দেওয়ার চাইতে নির্দোষকে শাস্তি দেওয়া আরও বড় পাপ।” না, কারফর্মাজি, পাইকিরি শাস্তিবিধানে আমার আস্থা নেই।’

আমি বললাম, ‘অ।’

তারপর নিস্তব্ধতা। আমি কথা বলছিনে; শ্যামজি কথা বলছেন না; ভাদুড়ী নীরব। করতলে থুতনি রেখে সে চুপটি করে বসে আছে। সেই নিস্তব্ধতার মধ্যেই একটা চিন্তা হঠাৎ আমার মাথায় এসে ঝিলিক দিয়ে গেল। অত্যন্তই অদ্ভুত এবং অত্যন্তই ভয়ঙ্কর একটা চিন্তা। শ্যামজির কানের কাছে মুখ নিয়ে, প্রায় অস্ফুট কণ্ঠে, আমি বললাম, ‘কিন্তু শ্যামজি, একটা কথা আপনি ভেবে দেখেননি। দিলওয়ার খাঁ হয়তো মারা যায়নি; সে হয়তো বেঁচে আছে। এবং…এবং… দারোয়ানের ছদ্মবেশে…দিলওয়ারই হয়তো…।’

‘প্রীতমকে হত্যা করেছে! কেমন?’

বলতে যাচ্ছিলাম, হ্যাঁ। কিন্তু শ্যামজি এমন জ্বলন্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন যে, আমার আর বাকস্ফূর্তি হল না। অনেকক্ষণ, প্রায় মিনিটদুয়েক, সেই একই দৃষ্টিতে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর জিগ্যেস করলেন, ‘কারফর্মাজি, আপনি অঙ্ক জানেন?’

ঢোক গিলে বললাম, ‘না।’

শ্যামজি বললেন, ‘খুবই স্বাভাবিক। কেননা, যোগ-বিয়োগের অতি সাধারণ নিয়মগুলোও যদি আপনার জানা থাকত, তাহলে আপনি বুঝতে পারতেন যে, অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষাংশে যার জন্ম, এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকেই যার অত্যাচার ছিল অবাধ, বিংশ শতাব্দীর এই ষষ্ঠ দশকে তার পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। এক যদি মন্ত্রবলে বেঁচে থাকে, তো সে আলাদা কথা। কিন্তু, আমি পুলিশের লোক, তার চাইতেও বড় কথা, আমি হুবার্ট-সাহেবের শিষ্য। মন্ত্রবলে আমার বিশ্বাস নেই।’

শুনে আমি চুপ করে গেলাম।

ভাদুড়ী তখন মুখ খুলল। বলল, ‘শ্যামজি, আর মাত্র একটা কথা আমি জানতে চাই। যে-দড়ির বয়স প্রায় দেড়শো বছর, আজও তা এত শক্ত আছে কীভাবে?’

শ্যামজি বললেন, ‘এ অতি সঙ্গত প্রশ্ন। উত্তরে বলি, সিল্কের দড়ি সাধারণত সুতোর দড়ির চাইতে অনেক মজবুত হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে যে এই সিল্কের দড়িটা আজও জীর্ণ হয়ে যায়নি, তার একটা দ্বিতীয় কারণ আছে। দড়িটা যাতে জীর্ণ হয়ে না যায়, তার জন্যে আমরা অনেক কাল থেকেই একটা কেমিক্যাল সলিউশন ব্যবহার করে আসছি।’

ভাদুড়ী বলল, ‘ব্যস, আর আমার কিছু জানবার দরকার নেই। শ্যামজি, কাল সকালে আবার আপনার সঙ্গে কথা হবে। আজ আপনি যেতে পারেন।’

রাত হয়েছিল। শ্যামজিকে বিদায় দিয়ে আমরা খেতে বসলাম। খাবার টেবিলে রোজই আমাদের মধ্যে নানারকমের কথাবার্তা হয়ে থাকে। আজ হল না। ভাদুড়ী একেবারে নীরব। খাওয়া-দাওয়া চুকিয়ে দুজনে বারান্দায় গিয়ে বসলাম। ভাদুড়ী তবু মুখ খুলল না।

মুখ খুলল একেবারে শোওয়ার ঘরে গিয়ে। বলল, ‘কৃতাঞ্জলি, তুমি তো সাহিত্যিক, ”সবুজ” কথাটার বিশেষণ তুমি জানো?’

প্রশ্নটা অতি অবান্তর তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু ভাদুড়ীকে আমি চিনি। মাঝে-মাঝে তার মস্তিষ্কে এইসব অবান্তর প্রশ্নের উদয় হয়ে থাকে। অন্য-কেউ হলে এসব প্রশ্ন শুনে হয়তো চটে যেত। কিন্তু আমি যেহেতু তার অত্যন্তই ঘনিষ্ঠ বন্ধু, অবান্তর হলেও এইসব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমার উপায় থাকে না।

বললাম, ‘কেন? সবুজের বিশেষণ তোমাকে দিয়ে কী হবে?’

‘আচ্ছা, বলোই না।’

‘এই ধরো ”গাঢ়” সবুজ, কী ”ঘন” সবুজ।’

ভাদুড়ী বলল, ‘না-না, ওসব গাঢ় কিংবা ঘন দিয়ে হবে না।’

‘কী দিয়ে হবে?’

‘এই যেমন ”টকটকে” লাল কী ”কুচকুচে” কালো। তেমন কিছু জানো?’

বললাম, ‘না। সবুজের, আমার মনে হয়, টকটকে কী কুচকুচে-র মতন কোনও বিশেষণ নেই। তবে হ্যাঁ, সবুজ যদি খুব ভয়ঙ্কর রকমের সবুজ হয়, তবে তাকে তুমি ”কটকটে” সবুজ বলতে পারো।’

ভাদুড়ী বলল, ‘শাবাশ!’

তারপর, শিয়রেই ফোন ছিল, ক্র্যাডল থেকে রিসিভারটা তুলে ফোনের ডায়াল ঘুরিয়ে বলল, ‘হ্যালো…কে? …শ্যামজি…হ্যাঁ, আমি…আমি ভাদুড়ী কথা বলছি…একটা অনুরোধ আছে…কাল সকালে, এই ধরুন আটটা নাগাদ, আপনি চলে আসুন…হ্যাঁ, দেওশঙ্কর আর রঘুবীরকেও আপনার সঙ্গে নিয়ে আসবেন…ধন্যবাদ।’

সকাল সাড়ে আটটা বাজে। ভাদুড়ীর রিডিংরুমে আমরা বসে আছি। আমি, ভাদুড়ী আর শ্যামজি। রিডিংরুমের সামনের ঘরটাই বৈঠকখানা। বৈঠকখানা থেকে রিডিংরুমে ঢুকতে হলে যে-দরজাটা পেরিয়ে আসতে হয়, অন্যদিন সেটা খোলাই থাকে। আজ ভেজানো।

বৈঠকখানায় কারা বসে আছে, আমি জানি। বসে আছে রঘুবীর, দেওশঙ্কর আর একজন পাহারাওয়ালা। বাড়ির বাইরে, সুরকি-ঢালা পথের ওপরে, কালো একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। প্রিজন-ভ্যান। যাতে করে ওরা তিনজন—রঘুবীর, দেওশঙ্কর আর পাহারাওয়ালা—এই একটু আগেই এখানে এসে পৌঁছেছে। শ্যামজি এসেছেন আলাদা গাড়িতে। জিপে। ভাদুড়ীর মুখটা যেন থমথম করছিল। আমি জানি, সারারাত সে ঘুমোয়নি। মাঝরাত্তিরে—তখন প্রায় আড়াইটে বাজে—আমার একবার ঘুম ভেঙে যায়। ঘরে তখন আলো জ্বলছিল না। কিন্তু আকাশে তখনও জ্যোৎস্না ছিল। জ্যোৎস্নার আলোয় দেখলাম, ভাদুড়ী তার বিছানার ওপরে বসে আছে। মনে হচ্ছিল, মানুষ নয়, কালো পাথরের একটা স্তব্ধ বিষণ্ণ মূর্তি। আমি তাকে ডাকিনি। বিছানা থেকে সে উঠে গেল, রিডিংরুমে গিয়ে ঢুকল, তখনও না। তার খানিক বাদে আমি শুনতে পেলাম, টাইপরাইটারের আওয়াজ আসছে। খটখট, খট—খটখট, খট—খটখট…।

ভাদুড়ী টাইপ করছিল। কী যে টাইপ করছিল, আমি জানিনে। টাইপরাইটারের সেই একঘেয়ে, ক্লান্তিকর শব্দ শুনতে-শুনতেই আমি আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

ভাদুড়ী বলল, ‘শ্যামজি, আপনি রঘুবীরকে ডাকুন।’

শ্যামজি উঠতে যাচ্ছিলেন। ভাদুড়ী তাকে বাধা দিল। বলল, ‘উঠতে হবে না। আপনি এখান থেকেই ডাকুন।’

ডাক শুনে, মাঝখানকার ভেজানো দরজাটাকে খুলে দিয়ে, সে এসে রিডিংরুমে ঢুকল। তার চেহারাটা সত্যিই দেখবার মতো। বয়েস বড়জোর পঁচিশ। দৈর্ঘ্যে প্রায় ছ’ ফুট। খড়্গনাসা। গায়ের রঙে যেন আগুন জ্বলছে। চোখ দুটি গাঢ় নীল; দৃষ্টিতে ঈষৎ কৌতুক মেশানো। শুধু, কপালের বাঁদিকে—প্রায় ছন্দপতনের মতো—মস্ত একটা ক্ষতচিহ্ন।

ভাদুড়ী বলল, ‘বোসো। তোমাকে আমি একটা প্রশ্ন করব।’

চেয়ারে বসে, হাতলে হাত রেখে, নির্লিপ্ত কণ্ঠে রঘুবীর বলল, ‘করুন। পরশু বিকেল থেকে তো শুধু প্রশ্নেরই জবাব দিয়ে যাচ্ছি।’

ভাদুড়ী বলল, ‘এতেই এত আপত্তি? এরপর যখন তোমাকে কোর্টে প্রডিউস করা হবে, পাবলিক-প্রসিকিউটর যখন জেরায়-জেরায় তোমাকে জেরবার করে দেবেন, তখন মনে হবে, পুলিশি প্রশ্নই বুঝি ভালো ছিল। সে যাক, কোনও অবান্তর প্রশ্ন আমি করব না। আমি শুধু একটি কথা জানতে চাই। তুমি যে হত্যা করোনি, তার প্রমাণ কী?”

‘আমি যে হত্যা করেছি, তারই বা প্রমাণ কী?’

‘প্রমাণ দেওশঙ্কর। সে বলেছে, বাথরুম থেকে বেরিয়ে সে দেখতে পায় যে, তুমি পালিয়ে যাচ্ছ। সে তখন তোমাকে জাপটে ধরে।’

‘বাজে কথা। আমিই বরং বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখি যে, প্রীতমকে হত্যা করে সে পালিয়ে যাচ্ছে। আমিই তখন তাকে জাপটে ধরি।’

একমুহূর্ত চুপ করে রইল ভাদুড়ী। তারপর আবার যখন সে মুখ খুলল, তখন আমি স্পষ্ট বুঝলাম যে, তার কণ্ঠস্বর একেবারে পালটে গিয়েছে।

স্পষ্ট, দৃঢ় গলায়, থেমে-থেমে—প্রতিটি শব্দকে আলাদা-আলাদা উচ্চারণ করে—সে বলল, ‘রঘুবীর, মানুষ বড় বোকা। মানুষ বোঝে না যে, প্রতিটি অপরাধেরই একটা-না-একটা প্রমাণ থেকে যায়। প্রীতমকে যে হত্যা করেছে, সেও বড় বোকা। সে জানে না যে, তার অপরাধের অন্তত একটা প্রমাণ সে রেখে গিয়েছে। সে জানে না যে, সিল্কের যে-দড়িটা দিয়ে সে প্রীতমকে হত্যা করেছে, সেই দড়িটা একটা কেমিক্যাল সলিউশনের মধ্যে ডোবানো থাকত। এবং সেই সলিউশনের এমনই গুণ যে, ও-দড়ি যে-ই ছুঁক না কেন, ছোঁওয়ার ঠিক চল্লিশ ঘণ্টা বাদে তার হাতের ওপরে একটা সবুজ দাগ ফুটে উঠবে। কটকটে সবুজ একটা দাগ। রঘুবীর, তোমার হাতের দিকে একবার তাকাও।’

নিস্তব্ধতা। ভৌতিক নিস্তব্ধতা। মেঝের ওপরে একটা পিন পড়লেও বোধহয় আমরা তার শব্দ শুনতে পেতাম। আর সেই নিস্তব্ধতার মধ্যেই আমরা দেখতে পেলাম যে, রঘুবীর তার ডান-হাতের তালুর দিকে তাকিয়ে আছে। দেখতে পেলাম যে, তার তালুর ওপরে—।

গাঢ় সবুজ একটা দাগ!

রঘুবীরের মুখের দিকে তাকালাম। সে-মুখ ছাইয়ের মতন সাদা। মনে হল, তার শরীর থেকে যেন শেষ রক্তবিন্দুটিকেও কেউ হঠাৎ নিংড়ে শুষে নিয়েছে।

বিস্ফারিত, শূন্য, উন্মত্ত দৃষ্টিতে সেই দাগটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল রঘুবীর। তারপর প্রায় পাগলের মতন সে হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল।

‘মেরেছি! আমিই মেরেছি প্রীতমকে! আমিই মেরেছি! আমিই…আমিই…আমিই…!’

ঘণ্টাখানেক পরের কথা। রিডিংরুমেই আমরা বসে আছি। ভাদুড়ী আর আমি। বৈঠকখানা আর রিডিংরুমের মধ্যবর্ত্তী দরজাটা এখনও ভেজানো। সেই ভেজানো দরজা খুলে শ্যামজি এসে ঢুকলেন। রঘুবীর আর দেওশঙ্করকে তিনি থানা-হাজতে পৌঁছে দিয়ে এসেছেন। ভিতরে ঢুকে, ভাদুড়ীর ঠিক সামনে সেই চেয়ারটায় তিনি বসলেন, একটু আগেই রঘুবীর যেখানে বসেছিল।

ভাদুড়ী বলল, ‘কনফেশন-স্টেটমেন্টটায় আপনি রঘুবীরকে দিয়ে সই করিয়ে নিয়েছেন তো?’

শ্যামজি বললেন, ‘অবশ্য। ওটা কি আপনি কালকেই টাইপ করে রেখেছিলেন?’

‘হ্যাঁ। কাল রাত্তিরেই আমার মনে হল যে, স্টেটমেন্টটা তৈরি করে রাখা দরকার।’

‘তার মানে আপনি ধরেই নিয়েছিলেন যে, রঘুবীর কনফেস করবে?’

‘না, তা আমি ধরে নিইনি। তবে রঘুবীর আর দেওশঙ্করের মধ্যে একজন-না-একজন যে খুনি, তাতে তো আর সন্দেহ ছিল না। আমি তাই দু-দুটো স্টেটমেন্ট টাইপ করে রেখেছিলাম। একটা রঘুবীরের নামে। অন্যটা দেওশঙ্করের নামে। রঘুবীর যদি কনফেস না করত, তো দেওশঙ্করকে ডেকে পাঠাতে হত। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, তার আর দরকার হল না।’

শুনে এক মুহূর্ত চুপ করে রইলেন শ্যামজি। তারপর বললেন, ‘ভাদুড়ীসাব, আপনি অদ্ভুতকর্মা মানুষ। কিন্তু…কিন্তু…একটা কথা আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিনে। দড়িটায় যে-সলিউশন আমরা ব্যবহার করে থাকি, সেই সলিউশন আমার চেনা। তাতে তো কোনও দাগ ফুটে ওঠবার কথা নয়। তাহলে?’

ভাদুড়ী বলল, ‘আপনাদের ওই কেমিক্যাল সলিউশনের খবর আমি রাখিনে। শুধু আপনাদের কেন, কোনও সলিউশনেরই খবর রাখিনে আমি। এবং পৃথিবীতে অদ্যাবধি এমন কোনও রাসায়নিক দ্রব্য আবিষ্কৃত হয়েছে কি না যাকে স্পর্শ করবার চল্লিশ ঘণ্টা বাদে স্পর্শকারীর হাতের ওপরে একটা সবুজ দাগ ফুটে ওঠে, তাও আমার জানা নেই। আমি শুধু একটি কথাই জানি। জানি যে, শুধু রঘুবীর কেন, আপনিও যদি আপনার হাতের দিকে তাকান, তাহলে আপনিও সেখানে একটা সবুজ দাগ দেখতে পাবেন। কৃতাঞ্জলির ভাষায়, ”কটকটে” সবুজ একটা দাগ।’

চমকে গিয়ে নিজের হাতের দিকে তাকালেন শ্যামজি। এবং আমি স্পষ্ট দেখলাম যে, তাঁর হাতের তালুর ওপরে—।

গাঢ় সবুজ একটা দাগ!

শ্যামজি বললেন, ‘এ কী! আমি তো ওই দড়িটাকে ছুঁইনি। তাহলে? আমার হাতে তাহলে কোত্থেকে এই দাগ এল!’

ভাদুড়ী হঠাৎ হেসে উঠল। বলল, ‘ কী, শ্যামজি, আপনার জন্যেও একটা কনফেশন স্টেটমেন্ট টাইপ করে আনব নাকি?’

শ্যামজি বললেন, ‘থামুন, ভাদুড়ীসাব! এটা রসিকতার সময় নয়। আমি বুঝতে পারছি, এর মধ্যে একটা বংগালি-ফিকির আছে। ব্যাপারটা আপনি খুলে বলুন। দোহাই আপনার।’

ভাদুড়ী বলল, ‘বলছি, শ্যামজি, বলছি। তার আগে আপনি জেনে রাখুন যে, শুধু রঘুবীর আর শ্যামনন্দন শাস্ত্রী কেন, যে-কেউই ওই চেয়ারটাতে বসুক না কেন, খানিকবাদেই তার হাতের তালুতে একটা সবুজ দাগ ফুটে উঠবে।’

‘অর্থাৎ?’

‘অর্থাৎ ওই সবুজ-স্টিলের চেয়ারটার হাতলের ওপরে আমি আগে থাকতেই কিছু সবুজ গুঁড়ো রং ছড়িয়ে রেখেছি। এবং হাতলের রংটাও যেহেতু সবুজ, সেই গুঁড়োগুলো আপনি দেখতে পাচ্ছেন না।’

আমি বললাম, ‘অর্থাৎ, ওই চেয়ারটা আসলে চেয়ার নয়, একটা ফাঁদ?’

ভাদুড়ী বলল, ‘বিলক্ষণ। মনস্তাত্ত্বিক একটা ফাঁদ। বড় মারাত্মক ফাঁদ। কিন্তু না, আমার কলেজ আছে। এবারে আমি উঠব।’*

* একটি বিদেশি গল্পের ঈষৎ ছায়া নিয়ে

মাসিক রহস্য পত্রিকা

পুজো সংখ্যা, ১৯৬০

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *