অধ্যায় সাতচল্লিশ – বর্তমান সময়
বন্দর এলাকা, সিলেট
‘জালাল ভাই,’ নাইট গ্লাসে চোখ রাখা তানভীর মৃদু স্বরে পাশে বসা ওসি জালালকে ডাক দিল। কোনো উত্তর নেই। ‘জালাল ভাই,’ আবারো একই স্বরে বলে উঠল ও। এবারও কোনো জবাব নেই। নাইট ভিশন থেকে চোখ সরিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখল জালাল উদ্দিন হাতে জ্বলন্ত সিগারেট ধরে মৃদু নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। ‘এই মিয়া,’ বলে ও নিজের কনুই দিয়ে একটা খোঁচা দিল জালালের পাঁজরে।
প্রায় লাফ দিয়ে উঠে বসল জালাল, হাতের জ্বলন্ত সিগারেট টপ করে পড়ে গেল কোলের ওপরে। থাবা দিয়ে সিগারেটা তুলে নিয়ে ফেলে দিল জানালার বাইরে। তারপর হাতের উলটোপিঠ দিয়ে ছাই ঝাড়তে লাগল কোল থেকে। ‘ধূর মিয়া, দিলা তো সিগারেটটা ফেলাইয়া। ‘
‘আরে ভাই, আপণে কি পাগল নাকি?’ তানভীর রাগের সঙ্গে বলে উঠল। ‘আমি এইখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিগত কয়েক বছরের ভেতরে সবচেয়ে বড়ো ম্যান হান্ট অপারেশন চালাতে যাচ্ছি-তাও আবার অফিশিয়াল অনুমতি ছাড়া, আর আপণে আছেন আপনার বিড়ি নিয়া!’
‘ওহহো, বেহুদা বিড়ি লইয়া চিল্লাইলাম, ঘুমটা যে ভাঙাইছো সেইটা তো মাথায়ই আসে নাই,’ বলে সে হেসে উঠল।
‘জালাল ভাই, ফাইজলামি রাখেন, সত্যি কথা বলেন। কাজটা কি ঠিক হলো?’ তানভীর আবারো চোখের সামনে নাইট গ্লাস তুলল। ওদের থেকে শ-পাঁচেক গজ দূরেই আলোর বন্যায় ভাসছে সিলেট শহরের প্রমোদতরী ‘টাইটানিক’।
ওটার দিকে তাকিয়ে তানভীর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিল আরেকবার। কনফারেন্স রুমে সব পরিকল্পনা করার পর অপারেশন শুরু করতে যাবার আগে কিছু ঝামেলা হয়েছে। ওরা সব ঠিক করার পর পাশা স্যারকে জানানোতে সে ওদেরকে মৌখিকভাবে বলে দেয় ওদের কাছে যেটা ভালো মনে হয় সেটাই করার জন্যে। কিন্তু ইএএফের প্রধান বাবুল আহমেদ সব শোনার পর বেঁকে বসে। সে জানায় ইএএফের সহায়তা ছাড়া জেড মাস্টারের মতো একজন অপরাধীকে ধরতে যাওয়াটা ওদের জন্যে একেবারেই ঠিক হবে না। সঙ্গে সে শর্ত দিয়ে দেয়, ইএএফের মাধ্যমে অপারেশনটা তখনই চালানো হবে, যতক্ষণ না সে সিলেট শহরে এসে পৌঁছাচ্ছে, বাবুল আহমেদের সঙ্গে কথা বলে তানভীর বুঝতে পারে আজ রাতের ভেতরে তার সিলেট পৌঁছানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। বাবুল আহমেদ সরাসরি ওদেরকে নির্দেশ করে যে টাইটানিকের ওপরে শুধু নজর রাখা আর অথরিটিকে ইনফর্ম করা ছাড়া ওরা যেন আর কিছু না করে।
তাৎক্ষণিকভাবে বাবুল আহমেদের নির্দেশ মেনে নেয়া ছাড়া তানভীরের কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু তার সঙ্গে কথা শেষ হবার পর গা জ্বলতে থাকে ওর। তখনই হুট করে সে সিদ্ধান্ত নেয়, জাহান্নামে যাক বাবুল আহমেদ। অপারেশন ওরা চালাবেই। দলের সবাই এক বাক্যে মেনে নেয় ওর কথা। ওরা অথরিটিকে ইনফর্ম না করেই টাইটানিকে পরিস্থিতি বুঝে অপারেশন চালানোর ব্যাপারটা একরকম পাকা করে বন্দরে চলে আসে দুটো গাড়িতে করে। একটা গাড়ি টাইটানিকের কাছেই আছে। আরেকটা গাড়ি কিছুটা দূরে রেখে গত এক ঘণ্টা ধরে নজর রেখে চলেছে ওরা টাইটানিকের ওপরে।
‘জালাল ভাই, কিছু বলেন। জীবনের প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে এভাবে উপরওয়ালার নির্দেশ ভঙ্গ করতে যাচ্ছি, ব্যাপারটা কি ঠিক হচ্ছে?’ জালালের দিকে ফিরে তাকাল তানভীর। সে অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে নতুন একটা সিগারেট ধরাতে ব্যস্ত। জালাল উদ্দিনের বুক পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা টেনে নিয়ে নিজেও একটা ঠোঁটে লাগাল তানভীর।
‘হায়না চিনো তানভীর?’ জালাল উদ্দিন খুব দার্শনিক ভঙ্গিতে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলতে লাগল।
‘ধূর মিয়া, রাখেন আপনার দার্শনিক মার্কা কথাবার্তা, আমি আছি টেনশনে,’ বলে তানভীর কড়া করে টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে গিয়ে খক-খক করে কেশে ফেলল। আর কী সব সিগারেট রাখেন, এমন কড়া সিগারেট খান ক্যামনে? বেনসন রাখতে পারেন না?’
‘শোন, দার্শনিক মার্কা কথা না, দুনিয়াটা কেমন জানো? দুনিয়াটা হইলো এমন এক জায়গা যে তোমারে অনেক ভালো ভালো কথা শেখাবে, আর তুমি যদি সেই সব ভালো কথাগুলা শুইন্না সেইমতো চলতে থাকো, তোমাকে বলবে বলদ। আর তুমি যদি সব ভালো কথা শুইন্না তোমার নিজের মতো চলো আর সফল হও তাইলে তোমারে স্যালুট দিব ওই ভালো কথা শিখাইছে যে মানুষগুলা তারাই,’ বলে সে তানভীরের দিকে ফিরে যোগ করল। ‘কাজেই নিজের কাম করো। যেইটা ভালো বুঝছো করো। যদি সফল হও তাইলে তুমি নায়ক, আর যদি বিফল হও তাইলে তুমি তো তুমি, আমগোরও খবর আছে। হা-হা।’
‘হুমম, বুঝেছি,’ তানভীরের কপালে চিন্তার ভাঁজে আরেকটা নতুন রেখা যোগ হলো। এতক্ষণ এই ব্যাপারটা ঠিক ওর মাথাতে আসেনি। এতক্ষণ ভাবছিল ওর নিজের ক্যারিয়ার ঝুঁকিতে ফেলেছে, এখন জালালের কথায় বুঝতে পারল নিজের সঙ্গে সঙ্গে পুরো টিমের ক্যারিয়ারেরও বারোটা বাজবে যদি ওরা কোনো ভুল করে।
জালাল ভাই, এই ব্যাপারটাই আমার বেশি খারাপ লাগছে, যদি উল্টা-পাল্টা কিছু হয় তবে আমি তো ডুববই সঙ্গে আপনাদেরকে নিয়ে ডুবব,’ তানভীরের মুখ থেকে বেরিয়ে আসা ধোঁয়ার সঙ্গে তীব্র দুশ্চিন্তাও যেন বাতাসে পাখা মেলছে।
‘তুমি এত নরম মন নিয়া পুলিশে আসলা কিভাবে?’ জালাল তার স্বভাবসুলভ টিটকিরির ভঙ্গিতে জানতে চাইল।
‘আমি তো পুলিশ না ভাই,’ তানভীর সামান্য হেসে জবাব দিল।
‘রাখো মিয়া,’ জালাল ছাই ফেলল জানালার বাইরে। ‘ওই ক্রিমিনাল অ্যানালিসিস-ফ্যানালিসিস যাই কও, বেলা শেষে সবাই আমরা পুলিশ। তবে একটা কথা বলি তানভীর, তুমি আসলেই ভালো মানুষ। দুনিয়া যতই চাপ সৃষ্টি করুন না ক্যান নিজের ভেতরের এই সত্তাটা নষ্ট হইতে দিও না। আমি এইটা সবচেয়ে ভালো বুঝি। কারণ আমি যখন ফোর্সে জয়েন করি আমিও তোমার মতোই ছিলাম। দিন গেছে আর চারপাশে দেখছি দুনিয়ার যত দুঃখ কষ্ট, যন্ত্রণা আর ঝামেলা সব ভালো মানুষগুলার কান্ধে আইসা পড়ে। তাই একটা সময় সচেতনভাবে আমি খারাপ হইতে শুরু করি। এর ফলে কী হইছে জানো, আমি পরিবার থাইক্কা দূরে সইরা গেছি, সমাজ থাইক্কা দূরে সইরা গেছি, সবচেয়ে বড়ো কথা আমি নিজের কাছ থিইক্কা নিজে দূরে সইরা গেছি। একটা কথা কি জানো, চিটিংবাজি-বাটপারি- ধান্দাবাজি রক্তের ভেতরে না থাকলে খারাপ হইয়াও তুমি খুব বেশি দূরে যাইতে পারবা না। তোমার বিবেক হইয়া যাবে তোমার সবচেয়ে বড়ো শত্রু। আমারে দেখ, আমি এমনে যেমনই আছিলাম, ভেতরে ভিতরে ছিলাম একটা ভালো মানুষ। সচেতনভাবে খারাপ হইতে গিয়া না থাকছি ভালো মানুষ, না হইতে পারছি খারাপ। নিজেই হইয়া গেছি নিজের সবচেয়ে বড়ো শত্রু। হা-হা,’ প্রাণ খুলে হেসে উঠল জালাল।
তার সঙ্গে হাসিতে যোগ দিলেও মনের ভেতরে ভাবনার ঝড় বয়ে চলেছে তানভীরের। হাসতে হাসতেই ওর দিকে ফিরে জালাল বলে উঠল, ‘তুমি কি জানো কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কারের সময়ে কী করছিল? তার লঞ্চ তখন আটলান্টিকের এমন এক জায়গায় যেখান থিইক্কা ফিরা যাবার মতোও খাবার লঞ্চে নাই। মানে ফিরতে গেলেও মরতে হবে আর সামনে কী আছে কেউই জানে না। তখন সে কি করছিল জানো?’ বলে সে একটু চুপ হয়ে রইল। মাথা নাড়ল তানভীর, জানে না ও।
‘তখন সে করল কি, আরো বেশ কিছু খাবার পানিতে ফালায়া দিল,’ বলে হেসে উঠল জালাল।
‘কেন?’ অবাক হয়ে জানতে চাইল তানভীর।
‘এর উত্তর খুব ভয়ংকর। কলম্বাস তার নাবিকদেরকে এমন এক অবস্থায় নিয়া গেল যাতে তারা খুব ভালো কইরা জানে তারা ফিইরা যাইতে পারব না। কাজেই তখন একটাই রাস্তা খোলা থাকল হেগো সামনে-’
‘সামনে এগোনো,’ আনমনে বলে উঠল তানভীর। তারপর ফিরে তাকাল জালালের দিকে।
‘একদম ঠিক, এইটা দেইখাই সব শ্রমিক প্রাণপণে ঝাঁপায়া পড়ল যাতে…’ জালাল কথা শেষ না করে তাকিয়ে রইল তানভীরের দিকে। খর-খর করে উঠল তানভীরের রেডিও।
‘বস, লঞ্চে মুভমেন্ট দেখা দিয়েছে। ভাব দেখে মনে হচ্ছে যেকোনো মুহূর্তে ছেড়ে দিতে পারে ওটা,’ সুলতানের ভেসে আসা কথাগুলো শোনামাত্রই নাইট গ্লাসে চোখ লাগিয়েছে তানভীর। লঞ্চে লোকজন ওঠা কমে গেছে। ভাব দেখে মনে হচ্ছে অনুষ্ঠানের লোকজন বেশির ভাগই লঞ্চে উঠে গেছে। সুলতান, তুমি লঞ্চের আশপাশেই থাকো। যেকোনো সময় যাতে লঞ্চে উঠে বসতে পারো। বলেই ও টমিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল, ‘টমি, তোমার থারমাল স্ক্যান কী বলে?’
টমির কোনো জবাব পাওয়া গেল না। ‘টমি, টমি।’
‘ওহহ, বস থার্মাল স্ক্যানে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। আমার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এই মুহূর্তে ইকবাল আপনাকে দিতে পারবে।’
‘ইকবাল, অস্বাভাবিক কিছু?’
‘না, স্যার কিছুই তো…’ ইকবালের কথা শেষ হবার আগেই লঞ্চের ভেঁপু বেজে উঠল, প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তানভীর নাইট ভিশন থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকাল। লঞ্চটা আস্তে-আস্তে নড়তে শুরু করেছে। বন্দর ছেড়ে যাবার সিগন্যাল। ‘কমান্ডার, ওরা লঞ্চে ওঠার তক্তা সরিয়ে ফেলছে। আমি কি…
‘এক্ষুণি উঠে পড়ো, সুলতান। আমি আর জালাল তোমাকে অনুসরণ করছি,’ কথা বলতে বলতেই জালালের দিকে ইশারা করল ও বের হবার জন্যে। ‘টমি, তুমি লাইনে থাকো, ইকবাল তোমার লঞ্চে ওঠার দরকার নেই। বরং আমাদের সাহায্য লাগতে পারে। কাজেই তুমি কোস্ট গার্ডকে খবর দিয়ে রাখো, প্লাস লোকাল থানাতেও ইনফর্ম করে রাখো,’ কথা বলতে বলতেই দৌড়াতে শুরু করেছে তানভীর। ওদের থেকে হাজারখানেক গজ দূরে লঞ্চটা নড়তে শুরু করেছে। টকিতে আর কথা বলা যাবে না। হেডসেট লাগাও সবাই, টকি আর অস্ত্র সামলে রাখো, যেন কেউ কোনো সন্দেহ না করে লঞ্চে—’ প্রাণপণে দৌড়াতে শুরু করেছে ওরা। জালাল এগিয়ে গেছে ওর থেকে বেশ খানিকটা। কথা বলতে বলতে পিছিয়ে পড়েছে তানভীর।
টকিটা কোমরে রাখার সময় নেই, তানভীর ওটা ফেলে দিয়ে সর্বোচ্চ গতিতে দৌড়াতে লাগল। এভাবে গাধার মতো দেরি করাতে মনে-মনে গালি দিচ্ছে নিজেকে। এখন যদি সময়মতো লঞ্চে উঠতে না পারে তবে ব্যাপারটা কী দাঁড়াবে, অপারেশন শুরু হবার আগেই খতম। সব চিন্তা বাদ দিয়ে দৌড়ানোতে মনোযোগ দিল ও। লঞ্চটা এখনো পুরোপুরি চালু হয়ে উঠতে পারেনি। ওর থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে যাওয়া জালালকে দেখতে পেল পায়ে চলা পথটা ধরে দৌড়াতে- দৌড়াতে ফুটপাতের রেলিং টপকে অন্যপাশে চলে গেল। তারপর এক লাফে চড়ে বসল লঞ্চের পেছনের ডেকে।
দৌড়ের গতি আরো বাড়িয়ে দিল তানভীর। লঞ্চটা এখন প্রায় পুরোদমে পানি কেটে সরে যেতে শুরু করেছে। ঠিক জালালের মতো করেই রেলিং টপকালো ও। লঞ্চটা অনেকখানি সরে গেছে, লাফিয়ে পেরুতে পারবে কি না ভাবতে গিয়ে মূল্যবান আরো একটা সেকেন্ড নষ্ট করে ফেলল ও। তানভীর ফুটপাতের রেলিংয়ের অন্যপাশের সরু জায়গাটাতে কয়েক পা পিছিয়ে এলো-তারপর প্রাণপণে দৌড় দিয়ে শূন্যে লাফিয়ে পড়ল।
থিওরি অব রিলেটিভিটি বলে সময়ের নাকি অনেক রকমফের হয়। ভ্রমের বশে মানুষ একই সময়কে অনেক অল্প সময় মনে করে। আবার কখনো কখনো একই সময় মনে হয় যেন অনেক লম্বা হয়ে গেছে। লাফ দেয়ার পর তানভীরের কাছেও তাই মনে হলো। ও যেন টাইম লুপের ভেতরে চলে গেছে। অনন্তকাল ধরে লাফিয়ে পার হচ্ছে রাস্তা আর লঞ্চের মাঝখানের দূরত্বটুকু। ওর হাত জায়গামতো পৌছানোর আগে ধাম করে মাথা বাড়ি খেল লঞ্চের ডেকের একেবারে নিচের প্রান্তে। সঙ্গে সঙ্গে রক্ত বেরিয়ে এলো ভ্রুর ওপর থেকে। একটা চোখ প্রায় বন্ধ হয়ে এলো ওর। কিন্তু খপ করে ডান হাতে রেলিং ধরে ফেলার আগেই হাতটা পিছলে গেল ওর রেলিং থেকে। হাত সরে যেতেই শরীরটা নিচের দিকে পিছলে যেতে শুরু করল। আনমনেই ওর দৃষ্টি চলে গেল নিচের দিকে।
প্রায় ঝড়ের বেড়ে ঘুরতে-ঘুরতে পানি কাটতে থাকা প্রপেলারগুলো যেন দাঁত বের করে হাসছে ওকে গিলে খাবার জন্যে। নিজের অজান্তেই তানভীরের গলা দিয়ে বেরিয়ে এলো চিৎকার।