।। ব্রহ্মানন্দ কা বিবাহ বৃত্তান্ত।।
কৃষ্ণাংশেৎষ্টাদশাব্দে তু যথাজাতং তথা শৃণু। মৃতে কৃষ্ণমুরারে তু ভূপতৌ রত্নভানুনা।।১।। মহীরাজঃ সুদুঃখাতো লক্ষচন্ডীমকারয়ৎ। হোমান্তে তু তদা দেবী বাগুবাচ নৃপং প্রতি।।২।। বর্ষেবর্ষে তু তে সপ্ত ভবিষ্যম্ত্যঙ্গ সম্ভবাঃ। কুমারাঃ কৌরবাংশাশ্চ দ্রৌপদ্যংশা সুতা নৃপ।।৩।। ইত্যুক্তে বচনে তস্মিন্নাজ্ঞী গর্ভমথো দধৌ। কর্ণাংশশ্চ সুতো জায়স্তারকো বলবত্তরঃ।।৪।। দ্বিতীয়াব্দে তথা জাতে দুঃশাসনশুভাংশতঃ। গৃহরিরিতি বিখ্যাতস্তৃতীয়াব্দে তু চাভবৎ।।৫।। উদ্বার্ষাংশঃ সরদনো দুর্মুখাংশস্ত মর্দনঃ। বিকর্ণাংশঃ সূৰ্য্যকর্মা ভীমশ্রাংশো বিবিংশতে।।৬।।
।। ব্রাহ্মণন্দের বিবাহ বৃত্তান্ত।।
এই অধ্যায়ে পৃথ্বীরাজের সপ্ত কৌরবাংশ পুত্র প্রাপ্তি বৃত্তান্ত বর্ণন তথা ব্রহ্মানন্দের বিবাহ বর্ণন করা হয়েছে। শ্রীসূতজী বললেন — কৃষ্ণাংশ অষ্টাদশবর্ষীয় হলে কি হয়েছিল তা শ্রবণ কর। রত্নভানুর দ্বারা কৃষ্ণকুমার ভূপতি মৃত হলে সুদুঃখার্ত মহীরাজ লক্ষচন্ডীর অনুষ্ঠান করেছিলেন। হোমের পর রাজাকে দেবী বললেন–প্রত্যেক বর্ষে সপ্ত অঙ্গ সম্ভূত কুমার জন্মলাভ করবে। হে নৃপ, তারা কৌরবাংশ এবং দ্রৌপদ্যংশের পুত্র হবে।।১-৩।।
রাজাকে এ কথা বলার পর রাণী গর্ভধারণ করলেন। অধিক বলশালী কার্ণাংশ পুত্র তারক সমুৎপন্ন হলেন।। দ্বিতীয় বর্ষে দুঃশাসনের শুভাংশে নৃহরি জন্মলাভ করলেন। তৃতীষবর্ষে উদ্ধার্য্যাংশ সরদন, দুর্মুখাংশমর্দন, বিকৰ্ণাংশ সীর্যবর্ষা এবং ভীমাংশ বিবিংশত উৎপন্ন হলেন।।৫-৬।।
বৰ্দ্ধনশ্চিত্রবাণাংশো বেলা তদনু চাভবৎ। যথা কৃষ্ণা তথাসৈব রূপচেষ্টাগুণৈমুনে।।৭ ॥ ভূবি তস্যাং চ জাতায়াং ভূকম্পো দারুণোহ ভবৎ। অট্টাট্টহাসমশিবং চামুন্ডা খে চকার হ। রক্তবৃষ্টিঃ পুরে চাসীদ স্থিশর্করয়া যুতা।।৮।। ব্রাহ্মণাশ্চ সমাগত্য জাতকর্মাদিকাং ক্রিয়াম্। কৃত্বা নাম তথা চক্রে শৃণু ভূমিপ সাক্ষরম্।।৯।। ইলা চ শশিনো মাতা বিকাপ্লেনাহ ভবস্তুবি। তস্মাদ্বেলেতি বিখ্যাতা কন্যেয়ং রূপশালিনী।।১০।। জাতায়াং সুতায়াং স পিতা বিপ্রেভ্য উত্তমম্। দদৌ দানং মুদা যুক্তো বাসাংসি বিবিধানি চ।।১১।। দ্বাদশাব্দবয়ঃ প্রাপ্তে সা সুতা বরণিনী। উবাচ পিতরং নম্রা শৃণু ত্বং পৃথিবীপতে।।১২।।
চিত্রবার্ণাংশ থেকে বিবর্দ্ধন এবং এরপর বেলা সমুৎপন্ন হন। তিনি কৃষ্ণার ন্যায় ছিলেন, তিনি রূপলাবণ্য, চেষ্টা এবং গুণের আধার ছিলেন।।৭।।
এই ভূমন্ডলে তিনি জন্মগ্রহণ করা কালে এক মহাদারুণ ভূকম্প হয়েছিল এবং চামুন্ডা দেবী আকাশ থেকে অশিব অট্টাট্টহাস্য করেছিলেন। পুরমধ্যে রক্তবৃষ্টি হয়েছিল যা ছিল অস্থি শর্করা যুক্ত।।৮।।
ব্রাহ্মণগণ তাঁর জাতকর্মাদি ক্রিয়া সম্পন্ন করে তার নামকরণ করেছিলেন। হে ভূমিপ, সাক্ষর সেই নাম শ্রবণ কর। ইলাশশীর মাতা বিকল্পো ভূমি থেকে জন্মলাভ করে বেলা নামে বিখ্যাত হন। এই রূপ শালিনী তোমার কন্যা বেলা নামধারিণী হলেন।।৯-১০।।
সেই কন্যার জন্মের পর তার পিতা প্রসন্নতার সঙ্গে ব্রাহ্মণদের প্রভূত উত্তমদান তথা প্রচুর বন্ধু দিয়েছিলেন।।১১।।
মন্ডপে রক্তধারাভির্যো মাং সংস্থাপয়িষ্যতি। দ্রৌপদ্যা ভূষণং দাতা স মে ভর্তা ভবিষ্যতি।।১৩।। স্বর্ণপত্রে তদা রাজা পদ্যং বেলামখোদ্ভবম্। লিখিত্বা তারকং প্রাহ ত্বমন্বেষয় তৎপতিম্।।১৪।। সার্দ্ধং লক্ষত্রয়ং দ্রব্যং গৃহীত্বা লক্ষসৈন্যকঃ। নৃপান্তরং যযৌ শীঘ্রং তারক পিতুরাজ্ঞয়া।। ১৫।। সিন্ধুস্থানে চার্যদেশে ভূপং ভূপং যযৌ বলী। ন গৃহীতং নৃপৈঃ কৈশ্চিত্তদ্বাক্যং ঘোরমুল্বণম্। মহীপতিং স সংপ্রাপ্য মাতুলং তদ্বচোহব্রবীৎ।।১৬।। শ্রুত্বা স আহ ভো বীর ব্রহ্মানন্দো মহাবলঃ। স চ বাক্যং প্রগৃহীয়াদাহ্লাদদৌ সুরক্ষিতঃ।।১৭।। কিং ত্বয়া বিদিতং নৈব চরিতং তস্য বিশ্রুতম্। ভবানষড়বন্ধু সহিতঃ কৃষ্ণাংশাদ্যৈবিবাহিতঃ।।১৮।।
সেই বরবর্ণিনী কন্যা দ্বাদশবর্ষ প্রাপ্ত হলে বিনম্র হয়ে পিতাকে বললেন–হে পৃথিবীপতে, শ্রবণ করুন মন্ডপে রক্ত ধারার দ্বারা যে ব্যক্তি আমাকে সংস্থাপন করাবেন তিনি দ্রৌপদীকে বস্ত্রদানকারী আমার স্বামী হবেন।।১২-১৩।।
রাজা তখন সুবর্ণপত্রে বেলার কথিত পদ্য লিখে তারককে তার পতি খুঁজতে নির্দেশ দিলেন।।১৪।।
তারক তিনলক্ষ ধনসম্পদ এবং একলক্ষ সেনা নিয়ে পিতার আজ্ঞাতে অন্য রাজাদের নিকট শীঘ্র চলে গেলেন। সেই বলবান্ সিন্ধু দেশে, আর্য দেশে প্রত্যেক রাজার কাছে গেলেন কিন্তু রাজাদের কেউই সেই পরম ঘোর উল্বন বাক্য গ্রহণ করলেন না। তিনি পুনরায় মাতুল মহীপতির কাছে গিয়ে সেই বচন বলেছিলেন।।১৫-১৬।।
সেই কথা শ্রবণ করে তিনি বললেন হে বীর, ব্রহ্মানন্দ মহাবলবান্ তিনি এই বাক্য গ্রহণ করবেন, কারণ তিনি আহ্লাদাদির দ্বারা পূর্ণরূপে সুরক্ষিত। তুমি কি তার বিশ্ব প্রসিদ্ধ চরিত্র সম্পর্কে জান না। তোমরা ছয় বন্ধুগণের সঙ্গে কৃষ্ণাংশাদির দ্বারা বিবাহিত।।১৭-১৮।।
তে সর্বে বরাগাস্তস্য ব্রহ্মানন্দস্য ধীমতঃ। নাস্তি ভূমন্ডলে কশ্চিত্তদ্বলেন সমো নৃপঃ।।১৯।। ইতি শ্রুত্বা যযৌ তূর্ণং তারকঃ স্ববলৈঃ সহ। তৎপাদ্যং কথয়িত্বাগ্রে হস্তবদ্বস্তদা ভবৎ।। ২০।। কৃষ্ণাংশস্তু গৃহীত্বাশু পদ্যং বাক্যমুবাচ হ। অহং বিবাহয়িষ্যামি ব্রহ্মানন্দং নৃপোত্তমম্।।২১।। তৃষ্ণীং ভূতাস্তদা সর্বে তারকঃ স দ্বিজৈঃ সহ। অভিষেকং তদা কৃত্বা স্বগেহং পুনরাযযৌ।।২২।। মাঘমাসে সিতে পক্ষে ত্রয়োদশ্যাং সুবাসরে। বিবাহলগ্নং শুভদং বরকন্যার্থয়োস্তদা।।২৩।। সপ্তলক্ষবলৈঃ সার্দ্ধং লক্ষণশজচ সতালনঃ মহাবন্তীং পুরীং প্রাপ্তো বলী পরিমলাদিভিঃ।।২৪।। আহ্লাদো লক্ষসৈন্যাঢয়ঃ কৃষ্ণাংশেন সমন্বিতঃ। বলখানিলক্ষসৈন্যঃ সংযুতঃ সুখখানিনা।।২৫।।
সেই সকল ধীমান্ ব্রহ্মানন্দের বশীভূত, এই ভূমন্ডলে তার তুল্য কোনো নৃপতি নেই।।১৯।।
একথা শ্রবণ করে তারক নিজ সেনাগণকে সাথে নিয়ে শীঘ্র সেখানে পৌঁছে গেলেন। সেই পত্র নিয়ে কৃতাঞ্জলী পূটে কৃষ্ণাংশের কাছে উপস্থিত হলেন। কৃষ্ণাংশ সেই পত্র গ্রহণ করে পদ্য পাঠ করলেন এবং বললেন, আমি নৃপোত্তম ব্রহ্মাণদের বিবাহ দেব।।২০।।
সেই কথা শুনে সকলে নিশ্চুপ রইলেন, তখন তারক দ্বিজগণের সাথে অভিষেক করে শীঘ্র গৃহে ফিরলেন।।২১।।
নেত্ৰসিংহো লক্ষসৈন্যো যোগভোগসমন্বিতঃ। রণজিচ্চ বলী বালো দ্বিলক্ষবল সংযুতঃ।।২৬।। এবং দ্বাদশলক্ষাণাং সৈন্যনামধিপো বলী। তালনঃ সিংহনীসংস্থো বড়বাং প্রযযৌ সহ।।২৭।। সৈন্যৈদ্বদিশলক্ষৈশ্চ সহিতস্তালনো বলী। আযযৌ দেহলীগ্রামে মহৌরাজানু পলিতে।।২৮।। দেবো মনোরথারূঢ়োবিন্দুলস্থঃ স কৃষ্ণকঃ। বড়বামৃতমাসাদ্য স্বর্ণবত্যা সুতো গতঃ।।২৯।। রূপনশ্চ করালস্থ আহ্লাদশ্চ পপীহকে। বলখানিঃ কপোতস্থো হরিণস্থোহনুজস্ততঃ।।৩০।। রণজিন্মলনাপুত্রঃ সংস্থিতো হরিনাগরেঃ। পঞ্চশব্দগজারূঢ়ে মহাবত্যধিপো গতঃ।।৩১।। বিমানবরমারূহ্য ধীবরৈঃ শতবাহিকৈঃ। মণিমুক্তাস্বর্ণময়ং সহস্ৰৈবাদ্যকৈযুতম্।।৩২।।
মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে সুবাসরে বর ও কন্যার শুভ লগ্ন বিবাহ নিশ্চিত হল। তালনের সঙ্গে লক্ষণ সাতলক্ষ সেনা নিয়ে পরিমলাদি মহাবলীর সঙ্গে মহাবীরপুরীতে উপস্থিত হন। আহ্লাদ একলক্ষ সেনা ও কৃষ্ণাংশকে নিয়ে, বলখানি একলক্ষ সেনা ও সুখখানিকে সঙ্গে নিয়ে এবং একলক্ষ সেনা ও যোগ ও ভোগকে নেত্রসিংহ এবং রণজয়ী বাল দুইলক্ষ সেনা নিয়ে -সাকুল্যে বারলক্ষ সেনার সেনাপতি বলবান্ তালন মহারাজের দ্বারা সুরক্ষিত দেহলীনগরে সিংহিনী নামক ঘোটকী নিয়ে এসে উপস্থিত হন।।২২-২৮
মনোরথ নামক অশ্বে দেব এবং বিন্দুল নামক অশ্বে কৃষ্ণাংশ সমারোহণ করেছিলেন। স্বর্ণবতীর পুত্র বড়ামৃতে আরোহণ করে সেখানে গিয়েছিলেন। রূপণ করাল নামক অশ্বে এবং আহ্লাদ পপীহক নামক অশ্বে, বলখানি কপোতক নামক অশ্বে, তার অনুজ হরিণ নামক অশ্বে সমারোহণ করেছিলেন। মলনা পুত্র রণজিৎ হরিনাগর বাহনে আরূঢ় হয়েছিলেন। মহাবলীর স্বামী পঞ্চশব্দ নামক বাহনে স্থিত ছিলেন।।২৯-৩১।।
অযুতৈশ্চ পতাকৈশ্চ বেত্ৰপানিসহক্রকৈঃ। সহস্রৈ শিবিকাভিশ্চ পঞ্চসাহস্ৰকৈ রথৈঃ।।৩৩।। শকটেমহিষোঢ়ৈস্তু তথা পঞ্চসহস্ৰকৈঃ। সর্বতোপস্কৃতং রম্যং ব্রহ্মানন্দং সমাগতঃ।।৩৪।। শ্রুত্বা কোলাহলং তেষাং মহীরাজো নৃপোত্তমঃ। বিস্মিতঃ স বভূবাত্র শিবিরানি মুদা দদৌ।।৩৫।। দুর্গদ্বারি ক্রিয়াং রম্যাং কৃত্বা বিধিবিধানতঃ। দ্রৌপদ্যা ভূষণং দেহি বেলায়ৈ স তমব্রবীৎ।।৩৬।। ইন্দুলস্ত যযৌ স্বর্গং বাসবং প্রতি চাব্রবীৎ। দ্রৌপদ্যা ভূষণং সর্বং দেহি মহ্যং সুরোত্তম্।।৩৭।। কুবেরাস্ত সমানীয় দিব্যমাভূষণং দদৌ। ইন্দুলঃ প্রহরান্তে চ প্রাপ্ত পিত্রে ন্যবেদয়ৎ।।৩৮।। আহ্লাদস্ত স্বয়ং গত্বা বেলায়ৈ ভূষণং দদৌ। প্রাপ্তে ব্রাহ্মে মুহূর্তে তু বিবাহস্তত্র চা ভবৎ।।৩৯।।
শতবাহিক ধীবরগণের সাথে শ্রেষ্ঠ বিমানে আরোহণ করেছিলেন, যেটি মণি-মুক্তা, সুবর্ণ এবং সহস্র বাদ্যে পরিপূর্ণ ছিল। দশসহস্র পতাকা, সহস্র বেত্রপাণি, একসহস্র শিবিকা তথা পঞ্চসহস্র রথের দ্বারা সমাযুক্ত, মহিষদের দ্বারা সমূঢ় পঞ্চসহস্র শকট যুক্ত সুসংস্কৃত রমণীয় বিমানে ব্রহ্মানন্দ এসেছিলেন। তাদের কোলাহল শ্রবণ করে মহীরাজ প্রভৃত বিস্মিত হয়েছিলেন এবং প্রসন্নতার সঙ্গে তাদের থাকার জন্য শিবির প্রদান করেছিলেন।।৩২-৩৫।।
দুর্গ দ্বারে পূর্ণ বিধি বিধানের সাথে রম্য ক্রিয়া সম্পন্ন করে মহীরাজ তাদের কাছে কন্যা বেলার জন্য দ্রৌপদী ভূষণ সমূহ প্রার্থনা করলেন। সেই সময় ইন্দুল স্বর্গে গিয়ে দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে দ্রৌপদীর সমস্ত ভূষণ প্রার্থনা করলেন।।৩৬-৩৭।।
দেবরাজ ইন্দ্র সেই সময় কুবেরের থেকে দ্রৌপদীর পরম দিব্যভূষণ প্ৰদান করলেন। ইন্দুল একপ্রহরের মধ্যে প্রত্যাবর্তন করে সমস্ত আভূষণ পিতাকে প্রদান করলেন।।৩৮।।
আহ্লাদ স্বয়ং বেলাকে সেই আভূষণ দিয়ে এসেছিলেন। পুনরায় ব্রহ্মমুহূর্ত প্রাপ্ত হলে সেখানে বিবাহ হয়েছিল।।৩৯।।
সংপ্রাপ্তে প্রথমার্বতে তারকঃ খড়্গমাদৌ। আহ্লাদস্তং সমাসাদ্য যুযুধে বহুলীলয়া।।৪০।। নৃহরিস্তু দ্বিতীয়ে চ কৃষ্ণাংশং প্রতি চারূধৎ। তথা সরদনং বীরং বলখানিরূপাযযৌ।।৪১।। মর্দনং সুখখানিস্তু চতুর্থাবর্তকেহ রূধৎ। রণজিৎ সূর্যবর্মানং স ভীমং রূপণো বলী। দেবস্তুবর্ধনং বীরং সপ্তাবর্তে ক্রমাদ্যযৌ।।৪২।। শতভূপানখড়্গা ধরাঙ্গজসেনাদিকাংস্তদা। লক্ষণাদ্যা সমাজমন্ডপে বহুবিস্তুতে।।৪৩।। ভগ্নভূতং নৃপবলং রাজা দৃষ্ট বা রুষান্বিতঃ। মহীরাজো যযৌ রূঢ়ো গজং চারিভয়ঙ্করম্।।৪৪।। জিত্বা তা ন্নেত্রসিংহাদীঞ্ছব্দবেধী নৃপোত্তমঃ। লক্ষণং প্রযযৌ শীঘ্রং বৌদ্ধিনীং হস্তিনীং স্থিতম্।। ৪৫।।
প্রথমাবর্তে তারক নিজ খড়গ গ্রহণ করলে আহ্লাদ তার কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন এবং বহু প্রকারে যুদ্ধ করেছিলেন। দ্বিতীয়াবর্তে নৃহরি কৃষ্ণাংশের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। বলখানি বীর সরদনের সাথে যুদ্ধ করেছিল। চতুর্থ আবর্তে সুখখানি মর্দনের সাথে যুদ্ধ করেছিল। এইভাবে রণজিৎ সূর্যবর্মার সঙ্গে এবং বলবান্ রূপণ ভীমের সাথে তথা দেব বীরবর্ধনের সাথে ক্রমান্বয়ে সপ্ত আবর্তে যুদ্ধ করার জন্য গিয়েছিলেন। এই প্রকারে লক্ষণাদি গজসেনাদি শতখড়্গধারী নৃপতিগণকে সেই বহু বিস্মৃত মন্ডপে এসে ঘিরে ফেলেছিলেন এবং যুদ্ধ করতে লাগলেন।।৪০-৪৩।।
রাজা নিজবল ভগ্ন হতে দেখে রোষান্বিত হয়ে শত্রুর প্রতি মহাভয়ংকর হাতীতে আরোহণ করে স্বয়ং এসে উপস্থিত হন।।৪৪।।
শিবং মনসি সংস্থাপ্য জিত্বা বদ্ধা রুষান্বিতঃ। অগমত্তমুপগৃহ্য দর্শয়ামাস তং নৃপম্।।৪৬।। শ্রুত্বা পরিমলো রাজা কৃষ্ণাংশং ভীরুকো যযৌ বৃত্তান্তং কথায়মাস চাহ্লাদাদিপরাজয়ম্।।৪৭।। অজিতঃ স চ কৃষ্ণাংশো নভোমার্গেন মন্দিরম্। গত্বা জগর্জ বলবান্যোগিন্যানন্দদায়কঃ।।৪৮।। তদা স লক্ষনো বীরস্ত্যক্ত্বা বন্ধনমুত্তমম্। বিষ্ণুং মনসি সংস্থাপ্য মহীরাজং সমাযযৌ।।৪৯।। গৃহীত্বা চাগমাং দোলাং স্বয়ং শিবিরমাপ্তবান্।।৫০।। এতস্মিন্নন্তরে সর্বে ত্যক্ত্বা মূৰ্চ্ছাং সমস্ততঃ। খড়্গগযুদ্ধেন তচাঞ্জিত্বা বদ্ধা তান্নিগড়ৈদৃঢ়ৈ।। ৫১।। সান্বযাঞ্ছতভূপাংশ্চ হত্বা তদ্রুধিকারবহৈঃ। দ্রৌপদীং স্নাপয়ামাসুবেলারূপাং কলোত্তমাম্।।৫২।। বিবাহান্তে চ তে সৰ্বে শিবিরানি সমাযঃ। সমুৎসৃজ্য সুতাস্নপ্ত সুভোজ্যৈস্তে হ্যভোজয়ন্।।৫৩।।
সেই রাজা শতভেদী ছিলেন, তিনি নেত্র সিংহাদিকে জয় করে বৌদ্ধিনী হস্তিতে স্থিত লক্ষণের কাছে পৌঁছালেন। মনে মনে ভগবান্ শিবের ধ্যান করে রোষান্বিত হয়ে তাকে জয় করলেন এবং তাকে বেঁধে নিয়ে রাজাকে দেখালেন। রাজা পরিমল ভয়ভীত হয়ে কৃষ্ণাংশের কাছে চলে গেল। সেখানে আহ্লাদাদির পরাজয় বৃত্তান্ত বললেন।।৪৫-৪৭।।
সেই অজিত কৃষ্ণাংশ আকাশ মার্গে মন্দিরে গিয়ে পুনঃপুনঃ গর্জন করেছিল।।৪৮।।
সেই সময় বীর লক্ষণ উত্তম বন্ধন ত্যাগ করে মনে মনে বিষ্ণুকে সংস্থাপিত করে মহারাজের কাছে গমন করল। সেখানে অগমদোলা গ্রহণ করে স্বয়ং শিবিরে চলে গেলেন।।৫০।।
ইতিমধ্যে সকলে মূৰ্চ্ছা ত্যাগ করে খড়্গযুদ্ধে তাকে জয় করে নিগড়ের দ্বারা দৃঢ়ভাবে বেঁধে ফেলল এবং শত নৃপতিকে হত্যা করে তাদের রুধির ধারাতে বেলা স্বরূপে সমাস্থিত দ্রৌপদীর স্নপন করেছিল।।৫১-৫২।।
বিবাহ সমাপ্ত হলে তারা সকলে নিজ নিজ শিবিরে ফিরে এসেছিল। সাতজন পুত্রকে সুভোজ্যের দ্বারা ভোজন করার জন্য সেখানে রেখে আসা হল।।৫৩।।
ভুক্তবৎস সুবীরেষু সাহস্ৰাস্তৈঃ সুতৈঃ সহ। রুরুধুঃ সর্বতো জন্ধুরস্ত্রশস্ত্রেঃ সমস্ততঃ।।৫৪।। সহস্রশূরাংস্তাহ্নত্বা পুনর্বদ্ধা মহাবলান্। শিবিরানি সমাজগুস্তেষাং হাস্যবিশারদাঃ।।৫৫।। দশলক্ষসুবর্ণানি গৃহীত্বা নৃপতিবলী। বেলাং নবোঢ়ামাদায় গত্বা নত্বা তমব্রবীৎ।।৫৬।। প্রদ্যোতসুত হে রাজঁল্লক্ষণোহসৌ মহাবলঃ। মম পত্নীং সমাদায় দাসীং কর্তং সমিচ্ছতি।।৫৭।। ইতি শ্রুত্বা পরিমলঃ সর্ব ভূপসমান্বিতঃ। বহুধা বোধিতশ্চৈব ন বুবোধ তদা নৃপঃ।।৫৮।। তদা মহাসতী বেলা বিললাপ ভূশং মুহুঃ! তচ্ছুত্বাস চ কৃষ্ণাংশঃ সহিতো বলখানি না। তামাশ্চাস্য তদা বেলাং নভোমার্গেন চাযযৌ।।৫৯।। লক্ষণং তর্জয়িত্বাসৌ গৃহীত্বা চাগমন্মদা। নভোমার্গেন গেহে তং কৃষ্ণাংশঃ সমপেষয়ৎ।।৬০।।
সেই সুবীরগণ ভোজন করলে সহস্রবীর তাদের রোধ করল। এবং অস্ত্র- শস্ত্র দিয়ে তাদের মারল। সেই সহস্র শূরদের মেরে এবং মহাবলদের বেঁধে হাস্যবিশারদ শিবিরে সপ্তবীর চলে এলেন।।৫৪-৫৫।।
বলী নৃপতি দশলক্ষ সুবর্ণ মুদ্রা গ্রহণ করে এবং নবোঢ়া বেলাকে নিয়ে নমস্কার করে বললেন–হে প্রদ্যোত সূত, হে রাজন্, এই লক্ষণ মহাবলবান্। আমার পত্নীকে গ্রহণ করে সে দাসী করতে চায়।।৫৬-৫৭।।
একথা শ্রবণ করে সমস্ত ভূপতিগণের সঙ্গে পরিমল অনেকভাবে বোঝালেন কিন্তু সেই সময় রাজা বুঝতে পারলেন না। তখন মহাসতী বেলা বারংবার বিলাপ করতে লাগলেন। একথা শ্রবণ করে বলখানির সাথে কৃষ্ণাংশ সেই বেলাকে সমাশ্বাসন করে আকাশমার্গে এসে উপস্থিত হন। তারা লক্ষণকে তর্জন করে তাকে নিয়ে প্রসন্নতাপূর্বক গৃহে ফিরে এসে কৃষ্ণাংশ তার কক্ষে পাঠিয়ে দিলেন।।৫৮-৬০।।
পুনস্ত্যক্ত্বা সপ্ত সুতানসহি তান্নপতেস্তু তে। শপথং কারয়ামাসুদভং প্রতি মহাবলাঃ। উষিত্বা দশরাত্রান্তে দধ্যগর্তমনো মুনে।।৬১।। মহীরাজস্তু বলবা গৃহীত্বা ভূপতেঃ পদৌ। স উবাচাশ্রুস্ফূর্ণাক্ষস্তদা পরিমলং নৃপম্।।৬২।। মহারাজ বধূস্তে চ বেলেয়ং দ্বাদশাব্দিকা। পিতৃমাতৃবিয়োগং চ ন ক্ষমন্তী তু বালিকা।।৬৩।। তস্মাত্তাং ত্বং পরিত্যজ্য গচ্ছ গেহং সুখী ভব। পতিযোগ্যা যদা ভূতাত্তদা ত্বাং পুনরেষ্যতি।।৬৪।। ইত্যুত্ত্বা চ বচো রাজা স স্নেহাদঙ্কমস্পৃশৎ। চূর্ণীভূতে পরিমলে চাহ্লাদস্তত্র দুঃখিতঃ। মহীরাজং স পস্পর্শ স রাজা চূর্ণতাঙ্গতঃ।।৬৫।। ভগ্নাস্থী ভূপতি চোভৌপাবকীয়ৈশ্চিকিৎসকৈঃ। সুখবতৌ গৃহং প্রাপ্য কৃতকৃত্যত্বমাগতৌ।।৬৬।।
পুনরায় সপ্তপুত্রকে ত্যাগ করে মহাবলী দম্ভের প্রতি শপথ করালেন। দশরাত্রির পর তারা সেখান থেকে চলে যাবার জন্য মনস্থ করল।৬১।।
বলবান্ মহীরাজ ভূপতির চরণ গ্রহণ করে অশ্রুপূর্ণ নেত্রে রাজা পরিমলকে বললেন–হে মহারাজ, আপনার বধূ বেলা কেবলদ্বাদশ বৎসরের, সে অল্পবয়স্কা, মাতা-পিতার বিয়োগ সহ্য করতে পারবে না। এইজন্য আপনি তাকে এখানেই ছেড়ে দিয়ে গৃহে চলে যান, সুখী থাকুন। যখন সে পতির যোগ্য হয়ে উঠতে পারবে তখন তাকে আপনার কাছে পাঠিয়ে দেব।।৬২-৬৪।।
একথা বলে রাজা স্নেহবশতঃ তাকে ক্রোড় গ্রহণ করে চূর্ণীভূত হলেন। রাজা পরিমল চূর্ণীভূত হলে আহ্লাদ অত্যন্ত দুঃখিত হলেন। তিনি মহীরাজকে স্পর্শ করলে মহীরাজও চূর্ণতা প্রাপ্ত হলেন।।৬৫।।
মলনা স্বসুতং দৃষ্ট্বাদ্বা প্রাপ্তমুহিতং গৃহে। কৃত্বোৎসবং বহুবিধং বিপ্রেভ্যশ্চ দদৌ ধনম্। হোমং বৈ কারয়ামাস চন্ডিকায়া প্রসাদতঃ।।৬৭।। সভায়াং লক্ষণো বীরো যাত্রাকালে তমব্রবীৎ। অগমাং জয়চন্দ্রায় মত্বাজিত্বা হৃতাং তু তাম্। নভোমার্গেন সংপ্রাপ্তৌ যোগিনৌ চ শিবাজ্ঞয়া।।৬৮।। জহতুস্তৌ চ মাংজিত্বা তত্তীনভয়মোহিতম্। অদ্যাহং ধাত গচ্ছামি চিরঞ্জীব নৃপোত্তম। ইত্যুক্তবন্তং তং নত্বা যযুভূপাঃ স্বমালয়ম্।।৬৯।।
ভগ্ন অস্থি দুই নৃপতির পাবকীয় চিকিৎসকের দ্বারা সুখী করা হল। তারপর তাঁরা গৃহে গিয়ে কৃতকৃতাত্ব হলেন। মলনা নিজপুত্রকে প্রাপ্ত হয়ে বড় উৎসব করলেন এবং বিপ্রদের প্রচুর সম্পদদান করলেন। দেবী চন্ডিকার অনুগ্রহে তিনি হোমানুষ্ঠানও করিয়েছিলেন।।৬৬-৬৭।।
যাত্রাকালে সভাতে বীরলক্ষণ তাদের বললেন–জয়চন্দ্রের পক্ষে অগমাতাকে জয় করে শিবের আজ্ঞাতে দুইজন যোগী আকাশ মার্গে আকাশ মার্গে বিচরণ করতে থাকলে তাদের ভয়ে আনি ভীত হলাম। আমাকে জয় করে তারা আমাকে ত্যাগ করলেন। হে ধাত, হে নৃপোত্তম আজ আমি চললাম আপনি চিরকাল জীবিত থাকুন। এই কথা বলে তাঁকে প্রণাম করে সেই রাজা চলে গেলেন।।৬৮-৬৯।।