।। ব্রহ্মান্ড কী উৎপত্তি ঔর বর্ণন।।
কস্য প্রতিষ্ঠা নির্দিষ্টা কো হেতুঃ কিংপরায়ণম্। কস্মিন্নৈতল্লয়ং যাতি কস্মাদুৎপদ্যতে জগৎ।।১। কতি দ্বীপাঃ সমুদ্রাশ্চ কিয়স্তো হি কুলাচলাঃ। কিয়ৎপ্রমাণ বনেৰ্ভূবনানি কিয়ন্তি চ।।২।।
।। ব্রহ্মাণ্ড উৎপত্তি এবং বর্ণন।।
এই অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ এবং যুধিষ্ঠির সংবাদ শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা যুধিষ্ঠিরের প্রতি সমস্ত ব্রহ্মান্ডের উৎপত্তি বৃত্তান্ত বর্ণন করা হয়েছে।
রাজা যুধিষ্ঠির বললেন হে ভগবান্ কার প্রতিষ্ঠা নির্দিষ্ট আছে, তার হেতু কি এবং পরায়ণ কি? এই জগৎ কিসে লয় প্রাপ্ত হয় এবং কি থেকে উৎপন্ন হয়।। ১।।
এই বিশ্বে কতগুলি দ্বীপ আছে? কতগুলি সমুদ্র এবং কতগুলি কুলাচল আছে? এই ভূমির কত গুলি প্রমান আছে? এবং কতগুলি ভবন আছে? ২।।
পৌরাণশ্চৈব বিষয়ো যৎপৃষ্টোহ হং ত্বয়ানঘ। শ্রুতোহ নুভূতশ্চ ময়া সংসারে সরতা চিরম্।।৩ অজায় বিশ্বরূপায় নির্গুণায় গুণাত্মনে। নমস্তস্মৈ ভগবতে বাসুদেবায় বেধসে।।৪ অত্র তে বর্ণয়িষ্যামি শৃণু পার্থ পুরাতনম্। যাজ্ঞবন্ধ্যেন মুনিনা ভবিষ্যং ভাস্বতাম্পতিঃ। পৃষ্টো যদুত্তরং প্রাদাদৃষিভ্যস্তন্ময়া শ্রুতম্।।৫ ধন্যং যশস্যমায়ুষ্যং সর্বাশুভবিনাশম্। ভবিষ্যোত্তরমেতত্তে কথায়মি যুধিষ্ঠির।। একাত্মকং ত্রিদৈবত্যং চতুঃপঞ্চসু লক্ষণম্। গুণকালদিভেদেন সদত্মম্প্রদর্শিতম্।।৭ এক এর জগদ্যোনিঃ প্রতিযোনিষু সংস্থিতঃ। একধা বহুধা চৈব দৃশ্যতে জলচন্দ্রবৎ।।৮।
শ্রী কৃষ্ণ বললেন–হে অনঘ, তুমি পুরাণের বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছ। তা আমি এই সংসারে স্মরণ করতে শুনেছি এবং তা আমি অনুভব করি। সেই অজন্মা বিশ্বরূপ নির্গুন স্বরূপ এবং গুণাত্মা বেধা ভগবান্ বাসুদেবের জন্য। হে পার্থ, তখন এখানে তোমাকে পুরাতন বর্ণনা করব। আপনি তা শ্রবণ করুন।। ৩-৪।।
যাজ্ঞবল্ক মুনি ভাস্বন্তা পতিকে ভবিষ্য বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। সেই সময়ে তিনি ঋষিগণকে যে উত্তর দিয়েছিলেন, তা আপনি শ্রবণ করছি। হে যুধিষ্ঠির সেই ভবিষ্য পরমধন্য প্রদানকারী আয়ুবৃদ্ধিকারী এবং সম্পূর্ন অশুভ নাশকারী এখন আমি তোমাকে তা বলছি।। ৫-৬।।
ত্রিদেব গণের একাত্মা চার-পাঁচ সুলক্ষণ এবং গুন তথা কালাদি ভেদ থেকে সৎ এবং অসৎ সম্যক্ রূপে প্রদর্শিত।। ৭।।
ব্ৰহ্মা বিষ্ণুষাঙ্কশ্চ ত্ৰয়ো দেবাঃ সতাং যতাঃ। নামভেদৈঃ ক্রিয়াভেদৈভিদ্যন্তে নাত্মনা স্বয়ম্।।৯। প্রক্রিয়া চানুষঙ্গশ্চ উপোদ্ধাতস্তথৈব চ। উপসংহার ইত্যেতচ্চতুষ্পাদং প্রকীর্তিতম্।।১০। সম্মতা প্রতিসর্গশ্চ বংশো মন্বন্তরাণি চ। বংশানুচরিতং চৈক পুরাণং পঞ্চলক্ষণম্।।১১। এষ বক্তব্যবিষয়ঃ সুমহাম্প্রতি ভাতিমে। তথাপ্যুদ্দেশতো বমি সর্গং প্রতি তবানঘ।।১২। মহদাদিবিশেষান্তং সবৈরূপ্যং সলক্ষণম্। পঞ্চপ্রমাণং ষট্ক্ষং পুরুষাধিষ্ঠিতং জগৎ।।১৩। অব্যক্তাজ্জায়তে বুদ্ধিমহানিতি চ সা স্মৃতাঃ। অহংকারাস্ত মহতস্ত্রিগুণঃ স চ পঠ্যতে।।১৪। তন্মাত্রাণি চ পঞ্চাহুর হঙ্কারাচ্চ সাত্ত্বিকাৎ। জাতানি তেভ্যো ভূতানি ভূতেভ্যঃ সচরাচরম্।।১৫।
এই সমস্ত জগতের একই যোনি স্থান যা প্রতিযোনিতে সংস্থিত। তা একপ্রকার এবং বহু প্রকারে জলে চন্দ্রিকার ন্যায় প্রদর্শিত।। ব্রহ্মা-বিষ্ণু এবং বৃষাংক এই তিন দেবতা সৎপুরুষগণ মনে করেন। তাঁরা নাম তথা কর্মভেদ ভিন্ন কিন্তু স্বরূপে তাঁরা ভিন্ন নন। প্রক্রিয়া অনুষঙ্গ উৎপাদ্ধাত এবং উপসংহার এই চার পাদ কথিত।। ৮-১০।।
সমযাত-প্রতিমার্গ -বংশ-মন্বন্তর এবং বংশানুচরিত এই পাঁচ হল পুরাণের লক্ষণ।। এটাই হল বক্তব্য বিষয়। তোমর প্রতি আমি ‘সৰ্গ’ বিষয়ে উপদেশ প্রদান করব।। ১১-১২।।
মহদাদি বিশেষান্ত রূপ, বৈরূপ্য সহিত, লক্ষণযুক্ত, পাঁচপ্রমাণ স্বরূপ তথা যটকক্ষ পুরুষে অধিষ্ঠিত এই জগৎ।। ১৩।।
অব্যক্ত থেকে বুদ্ধি উৎপন্ন হয়েছে, যা মহান এই নামে পরিচিত। পুনরায় অহংকার মহান্ থেকে উদ্ভূত এবং তা ত্রিগুণমুক্ত।।১৪।।
জলমূৰ্তিময়ে বিষ্ণৌ নষ্টে স্থাবরজঙ্গমে ভূতাত্মকমভূদন্ডং মহত্তদুদকেশয়ম্।।১৬। সৃষ্টয়া শক্ত্যা চ নির্ভিন্নং তদন্ডমভবদ্দিধা। ভূকপালমথৈকং তদিদ্বতীয়মভবন্নভঃ।।১৭। উল্বং তস্যাভবন্মেরুজরায়ুঃ পর্বতাঃ স্মৃতাঃ। নদ্যো ধমন্যঃ সঞ্জাতাঃ ক্লেদঃ সর্বত্রগ পয়ঃ।।১৮। যোজনানাং সহস্রাণি ষোড়শাধঃ প্রতিষ্ঠিত। উৎসেধে চতুরাশীতিদ্বাত্রিংশধ্ববিস্তৃতঃ। ভূমিপঙ্কজবিস্তীর্ণা কণিকা মেরুরুচ্যতে।।১৯। আদিত্যশ্চাদিদেবত্বা তত্ৰাভূত্রিগুণাত্মকঃ। প্রাতঃ প্রজাপতিরসৌ মধ্যাহ্নে বিষ্ণুরিষ্যতে। রুদ্রোহপরাহু সময়ে স এবৈকস্ত্রিধামতঃ।।২০। স্বায়ংভূবো মনুঃ পূর্বং ততঃ স্বারোচিষাহ ভবৎ। উত্তমস্তামসশ্চৈব রৈবতশ্চাক্ষুষেতি ষট্।।২১।
তন্মত্রা পাঁচপ্রকার— তা সাত্ত্বিক অহংকার থেকে জাত। সেই পঞ্চতন্মাত্র থেকে পঞ্চভূত জাত এবং পুনরায় পঞ্চমহাভূত থেকে এই জগৎ জাত হয়। জলরূপ মূর্তি ভগবান্ বিষ্ণুতে সমগ্র স্থাবর এবং জঙ্গম জগৎ বিনষ্ট হয়ে গেলে ভূতাত্মক মহদনু সেই জলে শয়ন করেছিল। সৃষ্টি এবং শক্তি থেকে নির্মিত তা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল। তার একভাগ ভূকপাল এবং দ্বিতীয় ভাগ নভ তার উল্বমেরু জরায়ু হয়েগেল তা পর্বত নামে পরিচিত। নদী সকল যা ছিল তা ধমনী হয়ে গেল এবং সর্বত্র গমনশীল পয় ক্লেদ হয়েগেল। নিম্নভাগ ষোড়শ সহস্র যোজন ছিল। চুরাশি সহস্র উচ্চ এবং ত্রিশসহস্র উর্দ্ধ বিস্তার ছিল। ভূমি পংকজের বিস্তীর্ণ কণিকা মেরু নামে পরিচিত। আদিত্য আদিদেব হওয়ার জন্য সেখানে ত্রিগুণাত্মক ছিল। সেখানে প্রাতঃকালে প্রজাপতি মধ্যাহ্নে বিষ্ণু এবং দ্বিপ্রহরের পরে রুদ্র রূপ একই ত্রিস্বরূপাত্মক ছিল।। ১৫-২০।।
বৈবস্বতোহয়মধুনা বর্ততে মনুরুত্তমঃ। যস্য পুত্রৈঃ প্রপৌত্রেশ্চ বিভক্তেয়ং বসুন্ধরা।।২২।। আদিত্যা বসবো রুদ্রা একাদশ তথাশ্বিনৌ। উষস্ত্রয়ঃ সমাখ্যাতাদেব বৈবস্বতেহন্তরে।।২৩। বিপ্রচিত্তিহিরণ্যাখৌ দৈত্যদানবসত্তমৌ। তয়োবংশে তু বহুবো দৈত্যদানবসত্তমাঃ।।২৪। পঞ্চাশদ গুণিতকোটিযোজনানাং মহত্তয়া। সদ্বদ্বীপসমুদ্রায়াঃ প্রমাণমবনেঃ স্মৃতম্।।২৫।। পিন্ডেন চ সহস্রাণি সপ্ততিৰ্জলমধ্যতঃ। গৌরিবৈষা সুমহতী ভ্রাজতে ন চ লীয়তে।।২৬। লোকা লোকঃ পরতরঃ পর্বতোহ গ্রমহোচ্ছয়ঃ। দ্বৈতমর্থংস নিয়তো যোহসৌ রবিরু চামপি।।২৭। নৈমিত্তিকঃ প্রাকৃতিকস্তথৈবাত্যন্তিকো লয়ঃ। নিত্যশ্চতুর্থো বিজ্ঞেয়ঃ কালো নিত্যাপহারকঃ।।২৮।
পূর্বে স্বায়ম্ভূ মনু জাত হন, তারপর স্বারোচিষ হন। পুনরায় ক্রমান্বয়ে উত্তম তামস রৈবত এবং চাক্ষুষ এই ছয় মনু জাত হন।।
এই সময় বর্তমান মনু বৈবস্বত মনু, তিনি সর্বোত্তম। তার পুত্র এবং পৌত্র ক্রমে এই বসুন্ধরা বিভক্ত।। ২১-২২।।
আদিত্য -বসুগণ-একাদশরুদ্র -অশ্বিনীকুমার এবং তিন ঊষা বৈবস্বত মন্বন্তরে দেব নামে পরিচিত। বিপ্রচিত্ত এবং হিরন্যাক্ষ শ্রেষ্ঠ দৈত্য দানব ছিল। তাদের বংশে অনেক দানব জাত হয়েছিল।। ২৩-২৪।।
পঞ্চাশ গুণিত কোটি যোজন মহৎ সাতদ্বীপ এবং সাতসমুদ্র যুক্ত ভূমিপ্রমা স্বরূপ ছিল। পিন্ড থেকে ৭০ হাজার জলমধ্য থেকে গোতুল্য ভ্ৰাজমান্ জাত হয়েছিল এবং তা লীন ছিল।। ২৫-২৬।।
অগ্রভাগে মহান উচ্ছ্রয় লোকালোক পর্বত পরচর ছিল। দ্বৈত অর্থে তা নিয়ত ছিল যা রবি কিরণেও ছিল। লয় নৈমিত্তিক প্রাকৃতিক এবয়ং আত্যন্তি ক এবং নিত্য। কাল নিত্যের অপহারক।। ২৭-২৮।।
উৎপদ্যতে স্বয়ং যস্মাত্তত্তস্মিন্নেব লীয়তে। রক্ষতি চ পরে পুংসি ভূতানামেষ নিশ্চয়ঃ।।২৯।। যথর্তাবৃতুলিঙ্গানি নানারূপাণি পর্যয়ে। দৃশ্যন্তে তানি তান্যেব তথা ভাবা যুগাদিষু।।৩০। প্রতিলীনেষু ভূতেষু বিবুদ্ধঃ সকলং জগৎ। বেদশব্দেভ্য এবাদৌ নির্মমে স মহেশ্বরঃ।।৩১।। হিংস্রাহিংসে মৃদুত্তুরে ধর্মাধর্মাবৃতানৃতে।। তে ত বিনা প্রপদ্যতে পুনস্তেম্বেব কর্মসু।।৩২। ভূদশগুণেন পয়সা সংবৃতা তচ্চ তেজসা। তেজোহনিলেন নভসা তদ্গুণেনানিলো বৃতঃ।।৩৩। ভূতাদিনা তথাকাশং ভূতাদিমহতাবৃতঃ। মহাম্পরিবৃতস্তেন পুরুষেণাবিনাশিনা।।৩৪। এবং বিধানামন্ডনাং সহস্রাণি শতানি চ। উৎপন্নানি বিনষ্টানি ভাবি তানি মহাত্মনা।। ৩৫।। বৈকুণ্ঠকোষ্ঠগতমেতদশেষতায়াং খ্যাতং। জগৎ সুরনরোরগসিদ্ধানদ্ধম্। পশ্যন্তি শুদ্ধমুনয়ো বহিরন্তরে চ মায়া। চরাচরগুরোরপরেব কাচিৎ।।৩৬।।
যা থেকে স্বয়ং উৎপন্ন হয় এবং তাতেই বিলীন হয় এবং পরপুরুষ রক্ষাকারী তা নিশ্চয় স্বরূপ।। ২৯।।
যে প্রকারে ঋতুলিংগ আছে এবং তা পর্যয়ে নামাচারী তথা তাই সময় সময় দেখা যায় ঠিক তার মত যুগাদিত্তে ভাবও দেখাযায়। ভূতগণের প্রতিলীন হওয়ারপর বিরুদ্ধ মহেশ্বর প্রভৃতিতে সমস্ত জগৎ বেদ শব্দে নির্মিত।। ৩০-৩১।।
হিংস্র এক অহিংস্র, মৃদু এবং ক্রুর, ধর্ম এবং অধর্ম, আবৃত এবং অনাবৃত সকলেই সেই বর্ম প্রাপ্ত হয়।। ৩২।।
এই ভূমি দশাগুণ জল সংস্কৃত, জল তেজ থেকে এবং তেজ বায়ু থেকে এবং সেই অনিল তদ্রূপ আকাশে সংবৃত।। তথা ভূতাদি আকাশ এবং ভূতাদি মহতত্বে আবৃত। সেই মহান অবিনাশী পুরুষ দ্বারা পরিবৃত মহাত্মা উৎপন্ন হন, বিনষ্ট হন, পূর্বেও হয়েছেন এবং পরেও হবেন।। ৩৩- ৩৫।।