মনেরে আজ কহ যে , ভালো মন্দ যাহাই আসুক সত্যেরে লও সহজে । কেউ বা তোমায় ভালোবাসে কেউ বা বাসতে পারে না যে , কেউ বিকিয়ে আছে , কেউ বা সিকি পয়সা ধারে না যে , কতকটা যে স্বভাব তাদের কতকটা বা তোমারো ভাই , কতকটা এ ভবের গতিক— সবার তরে নহে সবাই । তোমায় কতক ফাঁকি দেবে তুমিও কতক দেবে ফাঁকি , তোমার ভোগে কতক পড়বে পরের ভোগে থাকবে বাকি , মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম— তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম ! মনেরে আজ কহ যে , ভালো মন্দ যাহাই আসুক সত্যেরে লও সহজে । অনেক ঝঞ্ঝা কাটিয়ে বুঝি এলে সুখের বন্দরেতে , জলের তলে পাহাড় ছিল লাগল বুকের অন্দরেতে , মুহূর্তেকে পাঁজরগুলো উঠল কেঁপে আর্তরবে— তাই নিয়ে কি সবার সঙ্গ ঝগড়া করে মরতে হবে ? ভেসে থাকতে পার যদি সেইটে সবার চেয়ে শ্রেয় , না পার তো বিনা বাক্যে টুপ করিয়া ডুবে যেয়ো । এটা কিছু অপূর্ব নয় , ঘটনা সামান্য খুবই— শঙ্কা যেথায় করে না কেউ সেইখানে হয় জাহাজ - ডুবি । মনেরে তাই কহ যে , ভালো মন্দ যাহাই আসুক সত্যেরে লও সহজে । তোমার মাপে হয় নি সবাই তুমিও হও নি সবার মাপে , তুমি মর কারো ঠেলায় কেউ বা মরে তোমার চাপে— তবু ভেবে দেখতে গেলে এমনি কিসের টানাটানি ? তেমন করে হাত বাড়ালে সুখ পাওয়া যায় অনেকখানি । আকাশ তবু সুনীল থাকে , মধুর ঠেকে ভোরের আলো , মরণ এলে হঠাৎ দেখি মরার চেয়ে বাঁচাই ভালো । যাহার লাগি চক্ষু বুজে বহিয়ে দিলাম অশ্রুসাগর তাহারে বাদ দিয়েও দেখি বিশ্বভুবন মস্ত ডাগর । মনেরে তাই কহ যে , ভালো মন্দ যাহাই আসুক সত্যেরে লও সহজে । নিজের ছায়া মস্ত করে অস্তাচলে বসে বসে আঁধার করে তোল যদি জীবনখানা নিজের দোষে , বিধির সঙ্গ বিবাদ করে নিজের পায়েই কুড়ুল মার , দোহাই তবে এ কার্যটা যত শীঘ্র পার সারো । খুব খানিকটে কেঁদে কেটে অশ্রু ঢেলে ঘড়া ঘড়া মনের সঙ্গ এক রকমে করে নে ভাই , বোঝাপড়া । তাহার পরে আঁধার ঘরে প্রদীপখানি জ্বালিয়ে তোলো— ভুলে যা ভাই , কাহার সঙ্গে কতটুকুন তফাত হল । মনেরে তাই কহ যে , ভালো মন্দ যাহাই আসুক সত্যেরে লও সহজে ।