বুমেরাং – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়
পারচেজ ডিপার্টমেন্টের টেণ্ডারগুলো পাওয়ার পর থেকে এই বছর তিনেক একটু সুখের মুখ দেখেছেন সুপ্রভাতবাবু। প্রথমেই ব্ল্যাক অ্যাণ্ড হোয়াইট টিভি-টা ফেলে দিয়ে ঘরে নিয়ে এলেন একটা কালার। কালার না থাকলে সবাই কেমন গরিবি-গরিবি চোখে তাকায়। তারপর রমলা কয়েকদিন ‘ফ্রিজ নেই, ফ্রিজ না থাকলে আজকাল কোন সংসার কি চলে?’—গম্ভীর মুখে কথাগুলো দু-চারবার বলতেই ঘরে চলে এল একটা একশো পঁয়ষট্টি লিটার। হালকা নীল রঙ। কিন্তু হালকা নীলের পাশাপাশি ঘরের পুরনো পর্দাগুলো কেমন ম্যাড়মেড়ে দেখাচ্ছে। সেগুলো ফেলে দিয়ে ঘরে চলে এল আকাশী রঙের নতুন পর্দা, তার মধ্যে আবার ঝরনা ডিজাইন। রমলা তখন ভুরু কুঁচকে বলল, দূর, এমন সুন্দর পর্দার সঙ্গে ঘরে ডিসটেম্পার না করলে কি মানায়? শিপ্রাদের ড্রইংরুমটা দেখেছো? যা দারুণ না— এমন করে বললো যে তৎক্ষণাৎ তিনটে ঘরই ডিসটেম্পারের ব্যবস্থা করে ফেললেন সুপ্রভাতবাবু। তারপর মনে হল ঘরের মেঝে মোজাইক না করে দেওয়াল ডিসটেম্পার করানোটা ভারি মুখামির পরিচয় দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে দুর্দান্ত ডিজাইনের টাইলস দিয়ে বাঁধানো হল ঘরের মেঝে।
কিন্তু এতসব করার পরও বাড়িটা ঠিক পছন্দ হচ্ছে না যেন! সেই কবে তার বাবা বাড়িটা তৈরি করেছিলেন মান্ধাতার প্যাটার্নে। সুতরাং বছর দুয়েকের মধ্যে নতুন ডিজাইনার ডেকে গোটা বাড়িটাই বদলে ফেললেন একেবারে। চারপাশ দিয়ে পিলার তুলে সোজা দোতলা। বাইরে হালকা বিস্কুট রঙ দিয়ে ডিজাইনারের নির্দেশমত ডিপ ম্যাজেন্টা রঙের কিছু নকশা, আর ছোটবড় কয়েকটা ভার্টিকাল লাইন টেনে দিতে একদম ছবি। দেখে দেখে চোখের পলক আর পড়ে না। রমলার এমনিতে ভারী গম্ভীর, সব সময় হেডমিস্ট্রেসের মতো মুখ, বু তারও টেয়ো উপচে ঝকমক করতে লাগল হাসির ঝিলিক।
পুরনো বন্ধু পীতাম্বর এসে বললেন, একতলা আর দোতলার কী তফাত। আমি তো ভুল করে অন্যদিকে চলে যাচ্ছিলাম। খোলনলচে একদম বদলে গেছে।
অবশ্য বাড়িটা করার পেছনে পীতাম্বরের অবদান অনেক। তিনি-ই মোজাইকের ডিজাইন, বাথরুমের জাপানি টাইলস, গিজার, জলের পাম্প সবই যোগাড় করে এনে দিয়েছেন, এখান-ওখান থেকে। বোধহয় একটু সস্তায়ও। তারপর বললেন, এবার একটা গাড়ি কিনে ফ্যাল।
খালি গ্যারেজটায় বেশ কিছুদিন ধরে সুপ্রভাতের পুরনো মোটর সাইকেলটা রক্ষিত হচ্ছিল। সেটাও প্রায় ফেলে দেওয়ার মতো বিক্রি করে দিল জলের দরে। তার বদলে গ্যারাজ আলো করে চলে এল একটা চকোলেট রঙের ঝকঝকে মারুতি ভ্যান। কিন্তু এত কিছুর পরও রেহাই দিল না পীতাম্বর। একদিন গিয়ে দেখল তখনও ড্রইংরুমে পুরনো রেকর্ড-প্লেয়ারটা রয়ে গেছে। সেটা বাতিল করে তৎক্ষণাৎ ঘরে নিয়ে এল নতুন ভি সি আর।
গোটা বাড়িটা প্রায় জমজম করতে লাগল। তিন বছর আগের সুপ্রভাত আর তিন বছর পরের সুপ্রভাতে একদম মিল নেই। বদলে গেছে গোটা লাইফ-স্টাইলই।
বুও একদিন পীতাম্বর এসে হাজিল হলেন সুপ্রভাতের অফিসে, কী রে? কেমন লাগছে।
–দারুণ, দারুণ। সুপ্রভাতের চোখমুখ থেকে উপছে পড়তে লাগল সাফল্যের হাসি। সবই এখন নতুন। এমনকি ব্যবসার কল্যাণে তার এই ছোট অফিসটাও নতুন করে সাজিয়েছেন।
পীতাম্বর এবার কৌতুক-কৌতুক মুখে গভীর করে তাকালেন সুপ্রভাতের দিকে, উঁহু, সব এখনও নতুন হয়নি। বাকি আছে একটা।
–এখনও বাকি? সুপ্রভাত আগাপাশতলা ভাবলেন, কিন্তু কোন ফাঁকই খুঁজে পেলেন না জীবনে। তারপর হেসে বললেন, হুঁ, এখন চাঁদে যাওয়াটাই বাকি।
–নাহ্, পীতাম্বর মাথা নাড়তে লাগলেন। তোর বউটাও তো বেশ পুরনো হয়ে গেছে।
–বউ? সুপ্রভাত প্রথমটা চমকে গেলেও পরমুহূর্তে হো হো করে হেসে উঠলেন। পীতাম্বর বেশ রসিকতা করতে পারে। বললেন, যা বলেছিস। প্রায় পনেরো বছরের বউ।
পীতাম্বর আবার হাসি-হাসি মুখে বললেন, তোর বউটাও এবার বদলে ফ্যাল, সুপ্রভাত।
—যাহ্, সুপ্রভাত হাসতে লাগলেন, তৎক্ষণাৎ রমলার ফুলো-ফুলো ফর্সা গাল দুটোর কথা মনে ভেসে উঠল। সুখের মুখ দেখার পর থেকে গায়ে আর একটু মেদ জমেছে। বড়লোকদের বউদের যেমন হয়ে থাকে আর কি।
–না রে, সিরিয়াসলি বলছি, পীতাম্বর তার বক্তব্য থেকে একচুলও নড়েন না। নতুন একটা বউ নিয়ে আয় ঘরে, সবসময় পরীর মতো ফুরফুর করে উড়বে, লাইফ আর কালার, ফুল হয়ে যাবে।
—তুই এখন ভাগ তো, সুপ্রভাত যেন চটে ওঠেন, আমাকে এখন একটু বেরুতে হবে।
পীতাম্বর চলে গেল বটে, কিন্তু মাথার ভেতরে একটা ফুরফুরে পরী রেখে গেল। সেদিন বাড়ি ফিরে রমলার দিকে একবার ভয়ে-ভয়ে তাকালেন। রমলা যথারীতি গম্ভীর মুখ করে ঘরদোর গোছাচ্ছে। এত বড় বাড়ি, কিন্তু বাড়ির কাজের লোকদের ওপর যে সব ছেড়ে দিতে পারে না। ওপরতলা নিচতলা মিলিয়ে সব ঘরেই সে নিজে ঘুরে-ঘুরে সাজানো-গোছানোর কাজটা করে থাকে। সুপ্রভাতকে দেখেই মেজাজি স্বরে বলল, গ্যাস কিন্তু ফুরিয়ে গেছে।
সেদিন রাতের বেলা ভারী অস্বস্তি লাগল সুপ্রভাতের। রমলা প্রায় আধখানা বিছানা জুড়ে শুয়ে থাকে। যখন পাশ ফেরে নতুন খাটেও মচমচ শব্দ হয়। বোধহয় খাটটাও ভয় পায় তাকে। সুপ্রভাতের মাথার ভেতরে দু-চারবার ঘাই দিয়ে গেল নীল ডানার একটা চমৎকার পরী। পরীটা তাকে দেখে একবার হাসলও।
কয়েকদিনের মধ্যে কাজের ঝামেলায় অবশ্য ভুলে গেলেন ব্যাপারটা। একটা বিশাল পারচেজ অর্ডার এসেছে, সেটা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। কমাস ধরে খুব ভাবছেন, কিছু টাকা পেলে একবার স্টেটস ঘুরে আসবেন। রমলা রোজ তিনবার করে শোনাচ্ছে তার কলেজের তিন-নিজন বান্ধবী তাদের হ্যাজব্যান্ডের সঙ্গে কেউ ইউরোপ কেউ আমেরিকা ঘুরে এসেছে। আর তাদের দৌড় এ-পর্যন্ত মাত্র হরিদ্বার মুসৌরি। কাশ্মীরটা পর্যন্ত তারা ঘোরেনি।
স্টেটস-এর কথাই মনে-মনে ভঁজছিলেন সুপ্রভাত। এমন সময়ে হঠাৎ আবার পীতাম্বর। মুখে আগের মতো সেই দুষ্ট হাসি, কিরে, কিছু ঠিক করলি?
–কী ঠিক করব? সুপ্রভাত বিস্মিত হলেন।
–ওই যে, জীবনটা বদলে ফেলা—
—ও, মনে পড়তে সুপ্রভাত খুব হাসতে থাকেন। ও আমার দ্বারা হবে না। এই দ্যাখ, গোঁফে পাক ধরেছে, চুল চারভাগের একভাগ সাদা হয়ে এসেছে।
পীতাম্বর যেন জাঁকিয়ে বসলেন, গোঁফটা ফ্যাক্টরই নয়। একদিন শেভ করতে বসে জম্পেস করে উড়িয়ে দে ওটা। যেমন আমি দিয়েছি।
সুপ্রভাত বিস্মিত হয়ে পীতাম্বরের গোঁফের দিকে তাকালেন। কিছুদিন আগেও পীতাম্বরের নাকের নীচে একটি মিলিটারি গোঁফ ছিল। দু’পাশে মুচড়ে তা দিত মাঝে মাঝে। কেন যে হঠাৎ অমন দশাসই গোঁফ উড়িয়ে দিয়েছে পীতাম্বর, তা এতদিনে মালুম হল।
—আর চুলের কথা বলছিস! এরকম হেয়ার ভিটামিন বেরিয়েছে যে স্বয়ং ভগবানবাবুও বুঝতে পারবেন না, তোর চুল কোনকালে পেকেছিল কিনা।
সুপ্রভাত আবার চোখ গোল করে তাকিয়ে থাকেন পীতাম্বরের মাথায় ঘনকালো চুলের দিকে। রহস্য ক্রমশ উদঘাটিত হচ্ছে।
কিন্তু এত সবের পরও হঠাৎ মাথা ঝাঁকিয়ে ওঠেন সুপ্রভাত, সে তুই যাই বলিস, আমি জীবন যেটুকু বদলেছি, ব্যস ওই পর্যন্ত। এখন আমি স্টেটস-এ যাবার জন্যে তোড়জোড় করছি।
—তাহলে তো ভালই হল। স্টেটস-এ যেতে হলে সঙ্গে ইয়ং ব্লাড নিয়ে যেতে হয়। দেখবি, একদম স্বর্গ।
সুপ্রভাত ফের ভাগিয়ে দিলেন পীতাম্বরকে, জরুরি কয়েকটা চিঠি লিখতে হবে আমাকে। এখন ওসব ভাবার সময় নেই আমার।
—ভাববি, ভাববি, পীতাম্বর উঠে দাঁড়িয়ে হাসলেন, যখন দেখবি চারপাশে ঘুরঘুর করছে একটা পরীর মতো মেয়ে। বয়সটা একদমকায় দশ-পনেরো বছদ্র কমে গেছে। জীবন আবার প্রথম যৌবনের মতো রঙিন হয়ে উঠেছে, তখন ঠিক ভাববি
সুপ্রভাত ভারী অস্বস্তিতে পড়লেন। যতবার অন্য কথা ভেবে অন্যমনস্ক হতে চাইলেন, তবার একটি ফুরফুরে চড়ুই ঘুরঘুর করতে লাগল তার মনের মধ্যে। বাড়ি ফেরার পর রমলার সঙ্গে যখন চা খেতে লাগলেন, রমলার কথায় দু’চারবার বিষম। খেয়ে ফেললেন খামোখা। রমলা ভুরু কুঁচকে বলল, কী হয়েছে তোমার? আমার কথা কানে যাচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে।
সুপ্রভাত পুনর্বার বিষম খেয়ে বললেন, কেন, কেন, শুনছি তো–
–শেষ কথাটা কী বলেছি বলো তো?
—কেন, ওই যে গয়না কিনবে বলছিলে–
রমলা চায়ের কাপ ধুপ করে সেন্টার-টেবিলে ফেলে পায়ে শব্দ করে উঠে গেল সেখান থেকে। আসলে সে তখন বলছিল, পাশের বাড়ির লাবণ্য নতুন একসেট জড়োয়া-গয়না আনাচ্ছে সেই বোম্বাই থেকে।
এরই মধ্যে আবার একদিন হুট করে পীতাম্বর হাজির হলেন অফিসে, কিন্তু এবার তিনি একা নন, সঙ্গে এক তরুণী। তরুণী রীতিমত সুন্দরী। পীতাম্বর এসে কোন ভণিতা না করেই বললেন, শুক্লা, মিট সুপ্রভাত। আমার ছোটবেলার বন্ধু। হাফপ্যান্ট পরার বয়সে একসঙ্গে ফুটপাতে ক্রিকেট খেলতাম।
শুক্লা অনায়াসে হাত বাড়িয়ে রীতিমত হ্যান্ডশেক করল। বেশ নরম তুলতুলে হাত। রমলার হাতটা এই ক’বছরে কেমন যেন দরকচা মেরে গেছে। ভাবতে না ভাবতেই শুনলেন শুক্লা কীরকম উচ্ছ্বসিত হয়ে বলছে, দারুণ হ্যান্ডসাম কিন্তু আপনি, সুপ্রভাতদা। আনার কথা পীতাম্বল্পের কাছে এত শুনেছি, অথচ এমন যে সুন্দর পুরুষ আপনি তা কিন্তু বলেনি।
সুপ্রভাত তখন বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারেননি। মেয়েটা কে, তাও বুঝতে পারছে না। তার অবাক অবাক চোখে তাকানো দেখে সেটা অনুমান করে পীতাম্বর তৎক্ষণাৎ তার ভুল শুধরে দিলেন, ওহহো, তোকে বলা হয়নি। তুই তো ডিসিশন নিতে পারলি না। আমি কিন্তু চটপট ডিসিশন নিয়ে নিলাম। এই মাসতিনেক হল শুক্লাকে বিয়ে করেছি।
–বিয়ে! সুপ্রভাত যেন চমকে উঠলেন। পীতাম্বরের বাড়ি তিনি অবশ্য প্রায় ছমাস যাননি, এর মধ্যে তলে-তলে এত ব্যাপার ঘটে গেছে।
পীতাম্বর তখন বলছে, জীবন নতুন ভাবে শুরু করাই ভাল। সবই যখন একে একে বদলে ফেলছি!
হাঁ হয়ে গেলেন সুপ্রভাত, পীতাম্বর বলে কী! এই বয়সে–
—কেন, কত আর বয়স? পঁয়তাল্লিশ। বয়সটা আসলে কোন ফ্যাক্টর নয়। বিদেশে লাইফ স্টার্ট অ্যাট সিক্সটি। আমাদের আরও পনোরো বছর দেরি আছে যাটে পৌঁছুতে। বলা যায় টু-উ ইয়ং’ লাইফ এনজয় করে নেওয়ার এখনই তো সময় আমাদের।
আমাদের কথাটা কানে খটখট করে বাজছিল সুপ্রভাতের। তারও তো পয়তাল্লিশ। কন্ট্রাক্টরির কাজে ব সাত-আট হল বেশ নাম করছে পীতাম্বর। বাড়িখানাও করেছেন তিলা প্রায় ছবির মতো অট্টালিকা। ভেতরে ঢুকলে মনে হয় সিনেমার বাড়ি। বেশ কিছু কাঁচা পয়সা দু’হাতে ওড়াচ্ছেন কিছুদিন। কিন্তু তাই বলে একটা আস্ত বউ।
শুক্লা একপাশে বসে মিটিমিটি হাসছিল। সুপ্রভাতের বিস্ময় দেখে বলল, পীতাম্বর ঠিকই বলেছে, সুপ্রভাবাবু। বয়স ধরে রাখতে হয়। আপনাকে অনায়াসে এখনো বিলো ফর্টি বলে মনে হয়।
খানিকক্ষণ দুজনের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দেবার পর মনে হল, এমন মেয়ের সঙ্গ পেলে অনায়াসে বয়স দশ বছর কমে যায়। ওরা চলে যাওয়ার প্র দু-তিনদিন শরীরে মনে একটা আলাদা ফুর্তি পেলেন সুপ্রভাবু। চলনে বলনে গতি বেড়ে গেল অফিসে, বাইব্বে কাজে। কিন্তু ঘরে ফিরতেই কেমন যেন অস্বস্তি! একদিন রমলা হঠাৎ বলে বসল, বেশ আক্রমণের ভঙ্গিতে, তোমার কী হয়েছে বলো তো?
সুপ্রভাত বেশ ঘাবড়ে গেলেন, কী আবার হবে?
অফিসে কোনরকম ঝামেলা পাকিয়েছ মনে হচ্ছে? রমলা তাঁকে ভোলাতে দেখে আরও নিঃসন্দেহ হয়েছে। তাই গলার স্বরে একদম সাঁড়াশি আক্রমণ।
ঝামেলাই বটে, তবে রমলাকে সে কথা তো আর খুলে বলা যায় না, চেপে যাওয়ার চেষ্টা করলেন, নানা, কিছু তো হয়নি–
রমলা কয়েক মুহূর্ত তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাঁকে জরিপ করল, চোখে সেই হেডমিস্ট্রেসের মতো এক্স-রে চাউনি। পনেরো বছরের পুরনো বউ, সুপ্রভাত হা করলে রমলা বুঝতে পারে তিনি হাবড়া বলতে চাইছে। তার চোখকে ফাঁকি দেওয়া ভারী কঠিন ব্যাপার।
রমলা এর আগেও বেশ কয়েকবার সতর্ক করে দিয়েছে তাকে, দেখো, খারাপ। ডিপার্টমেন্টে চাকরি করো, কোন ঝামেলায় না জড়িয়ে পড়ো।
দিন-দুয়েক পরে পীতাম্বর আবার এসে হাজির, কী রে, কেমন দেখলি শুক্লাকে?
সুপ্রভাত ঢোক গিলে বললেন, বেশ ভালই তো
—ভাল মানে–? একদম রাজা করে দিয়েছে আমাকে শুক্লা। বেঁচে থাকা যে এত সুখ তা শুক্লা আমার জীবনে আসার আগে বুঝিনি। পীতাম্বরের যেন আরামে চোখ বুজে আসছে।
সুপ্রভাত ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখেন পীতাম্বরের সুখে আবিষ্ট মুখ। তারপর আমতা-আমতা করে জিজ্ঞাসা করেন, তা কৃষ্ণার কী হল?
কৃষ্ণা মানে আগের বউ। অনায়াসে পীতাম্বর বললেন, কৃষ্ণার বদলেই তো শুক্লা। অমাবস্যার পর যেভাবে পূর্ণিমা আসে। কৃষ্ণাকে ডিভোর্স করে দিলাম। তুইও ডিভোর্স করে দে। দেখবি রমলার বদলে একজন পামেলা আসবে জীবনে।
—ডিভোর্সং সুপ্রভাত লাফিয়ে উঠলেন, তোর মাথা খারাপ? রমলাকে ডিভোর্স করব? মাথার ভেতরে তখন রমলার চোখের রঞ্জনরশ্মি চিরে ফেলছে সুপ্রভাতের ভয়ার্ত মুখ, আমাকে তাহলে আস্ত রাখবে রমলা?
সুপ্রভাতের মুখচোখ দেখে হা হা করে হাসলেন পীতাম্বর, বউকে খুব ভয় পাস মনে হচ্ছে। অবশ্য আমিও পেতাম। তবে যতক্ষণ বউ থাকে ততক্ষণই খাণ্ডারনী। তারপর যেই একটা উকিলের নোটিস ধরিয়ে দিবি অমনি দেখবি জোঁকের মুখ নুন পড়েছ আর রা-টি নেই।
সুপ্রভাত প্রবলভাবে মাথা নাড়ে, ওরে বাব্বা। তুই রমলাকে চিনিসনে তাহলে। একদম কুরুক্ষেত্র বানিয়ে দেবে জীবনটা।
–হে-স্-স্-স্, মুখে এক অদ্ভুত ধরনের শব্দ করলেন পীতাম্বর, তোর দ্বারা কি হবে না। আমি হচ্ছি ঠেকে-শেখা লোক। তোর চেয়ে ঢের অভিজ্ঞ। তোর আগে আমি বাড়ি করেছি, গাড়ি করেছি। এমনকি তোর আগে বউও। অতএব আমার। কাছেই তোকে শিখতে হবে। জীবনে একটা শুক্লা কি পামেলা এলে জীবন এমন রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে, সেই সুখ তুই কল্পনায়ও আনতে পারবি নে। এমন ফুরফুরে। তুলতুলে শরীর
বাড়ি ফেরার পর সুপ্রভাতের মনে হতে লাগল, পীতাম্বর ঠিকই বলেছে। তার জীবন এখন একেবারে মরুভূমি। সারাক্ষণ রমলা যেন দারোগার মতো ধমকাচ্ছে তাকে। একেই তো মেদ জমে শরীরটা ভারী হয়ে উঠেছে, তার ওপর হাতগুলো কেমন শক্ত-ইট। রাতের বেলা উত্তেজনার আগুন বলতে এখন আর কিছু নেই। অথচ তার কতই বা আর বয়স, মাত্র পঁয়তাল্লিশ। এই বয়সে তার বাবা মাত্র সেজদাকে জন্ম দিয়েছিলেন। তারপরও ছোড়দা, ছোড়দি, আর তিনি নিজে। আর তার মাত্র একটি সন্তান, সে-ও এখন তেরো বছরের। থাকে দার্জিলিঙ কনভেন্টে। কিন্তু ওই ডিভভার্সের ব্যাপারটিই তো ঝামেলার। রমলা এবং ঝামেলা দুটি শব্দ একে অপরের পরিপূরক।
এরপর পীতাম্বর অফিসে দেখা করতে আসতেই বললেন, কী করে ছাড়লি বল তো নোটিসটা? সে তত বেশ ঝড়ঝাপ্টার ব্যাপার।
পীতাম্বর এবার বিজয়ীর হাসি হাসলেন, বরং বলতে পারিস, ঝড়ের ধাক্কায় অপর পক্ষই ধরাশায়ী আর তারপরই অনন্ত সুখ।
বলেই যেন রেডিই ছিল এমনভাবে কোর্টের একটা কাগজ বার করলেন। নে, এখানে সই কর। তারপরের যা ধাক্কা আমিই সামলাব। আর একজন পামেলাও দেখে রেখেছি। শুক্লারই বান্ধবী। দেখলে তোর চোখ ট্যারা হয়ে যাবে। তোর জীবনের ওয়েসিস। কথা বললে মনে হবে জলতরঙ্গ বাজছে।
পীতাম্বর চলে যাওয়ার পরও সেই জলতরঙ্গ বাজতে লাগল সুপ্ৰভারে কানে। সারাক্ষণ মনের ভেত্র একটা রিমরিম সঙ্গীত, মন মোর মেঘের সঙ্গী
কিন্তু বাড়ি ফেরার সময় ছাঁত করে উঠল বুকের ভেতরটা। সই তো করিয়ে নিয়ে গেল পীতাম্বর। নোটিশ কি আজকেই দিয়ে দেবে নাকি?
বাড়ি ফিরে অবশ্য একটু স্বস্তি পেলেন। রমলা ক’দিন ধরে একটু গম্ভীর গম্ভীর আছে বটে, কিন্তু ততটা আক্রমণাত্মক মনে হচ্ছে না। শুধু ফেরার পর চায়ের টেবিলে বসে বলল, দার্জিলিঙ থেকে পনেরোদিন হল চিঠি আসছে না। অন্যমনস্ক হয়ে সুপ্রভাত কোনওক্রমে হৃদয়ঙ্গম করছে কথাগুলো। সুপ্রভাত যেন একটা ট্রাঙ্ককল করে ছেলে বুম্বার খবর নেয়। সুপ্রভাতের তো এধ্ব দিকে একদম খেয়াল থাকে না। ছেলেটাকে কনভেন্ট স্কুলে ভর্তি করেই যেন দায় সারা হয়ে গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। নাহ, নোটিস আসেনি।
কিন্তু সব তালগোল পাকিয়ে গেল দিন তিনেক পর। সুপ্রভাত অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পরও রমলার সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। জামাকাপড় ছেড়ে, বাথরুমে হাতমুখ ধুয়ে যখন তাকাচ্ছে, এদিক ওদিক, হঠাৎ দেখল, মুখে ঝড়ের আগেকার থমথমে ভাব নিয়ে ঘরে ঢুকল রমলা। হাতে চায়ের কাপ। অন্যদিন দু’হাতে দু-সেট কাপ-প্লেট থাকে, আজ একটিই। ধুপ ধাপ শব্দ করে ঘরে ঢুকে টেবিলের ওপর সশব্দে চায়ের কাপ নামিয়ে রেখেই ফের বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। কাপটা আর একটু হলেই ভেঙেছিল আর কি! বিয়াল্লিশ টাকা পেয়ার।
সুপ্রভাত গিয়ে টেবিলে বসলেন, দু-এক চুমুক দেবার পরও রমলার দেখা নেই। অন্যদিন দুজন একসঙ্গে বসে চা খান, টুকিটাকি কথা হয়। আজ একা।
শুধু তখনই নয়, রাতের বেলা খাবারের টেবিলেও দেখলেন একপ্লেট ভাত। খানিকক্ষণ উসখুস করার পর অগত্যা একাই খাওয়া শুরু করলেন। রমলা। আশেপাশেই আছে, কিন্তু তাকে এড়িয়ে চলছে। হয় ভেতরের ঘরে, না হয় কিচেনে এটা-ওটা করছে, কিন্তু অন্যদিনের চেয়ে দ্বিগুণ শব্দ করে। মুখে শব্দটি নেই, কিন্তু হাঁটাচলা কাজে-অকাজে ঝড় বইছে।
আর শোবার সময়ও দেখলেন বিছানা খালি। একটি বালিশ পাতা। রমলা তার বিছানা করেছে অন্য ঘরে।
পরদিন জানতে পারলেন, যা ভেবেছে, ঠিকই। নোটিস সার্ভড় হয়েছে। কোর্টে হাজিরা আছে দিন পাঁচেক পর। ফলে পাঁচটা দিন ঘরে একইভাবে নিঃশব্দ বিপ্লব পালিত হয়ে চলল রমলার মুখের অভিব্যক্তিতে, কাজে-কর্ম, হাঁটাচলায়। সুপ্রভাতের মনে হল, যে-কোন মুহূর্তেই সশব্দ বিস্ফোরণ শুরু হয়ে যাবে, কিন্তু হচ্ছে না। একই ছাদের তলায় মাত্র দুটি মানুষ অথচ মাঝখানে একটা কাঁচের দেওয়াল।
কোর্টে হাজিরার দিন ছুটি নিতে হল সুপ্রভাতকে। স্নান করে খাওয়ার সময় খেয়াল করলেন রমলার মান আগেই সারা। সুপ্রভাত রেডি হওয়ার আগেও সে-ও শাড়ি বদলে হনহন করে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে, বোধহয় কোর্টের দিকেই। যাওয়ার ধরনটা রীতিমত ম্যাজিস্ট্রেটের ভঙ্গিতে।
নাহ্, পীতাম্বরের কথা তো মিলল না। বলেছিল, জোঁকের মুখ নুন পড়বে। এখন দেখা যাচ্ছে, জোঁক তার লম্বা নাক নেড়ে চলেছে হনহনিয়ে।
কোর্টের মুখেই পীতাম্বরের সঙ্গে দেখা। পীতাম্বর ফিসফিস করে বললেন, রমলা এসেছে।
সে তো সুপ্রভাত জানেনই। কয়েক মুহূর্ত ফিসফিস করে কথা বলে দুজনে কোর্টে উকিলবাবুর কাছেই চললেন। কখন ডাক পড়বে কোর্টে কে জানে।
কিন্তু উকিলবাবুর ঘরে ঢুকবার মুখেই থমকে দাঁড়ালেন তারা। দেখলেন, রমলা আগেই ঢুকে পড়েছে সেখানে, এবং হাজির হয়েছে তাদের উকিলের কাছেই। এখানে রমলা কী করছে?
পর্দার আড়াল থেকে কান পেতে শুনলেন, এই যে মশাই, খুব তো ডিভোর্সের নোটিস জারি করেছে। তা করেছে ভালই। এতে আমার খুব একটা যাবে আসবে না। তবে আপনার মক্কেল কিন্তু ডাহা মারা পড়বে।
উকিলবাবু ঘোড়েল লোক। চশমার ওপর দিয়ে হাঁ করে বোঝবার চেষ্টা করছেন ব্যাপারটা। বিপক্ষের মক্কেল এসে তার কাছে চোপা করছে এ-দৃশ্য তার কাছে অভাবনীয়। চশমাটা নাকের কাছে নামিয়ে বললেন, কী রকম, কীরকম।
—সেটা আজকেই বলছি না। আমার এখনও কাগজপত্তর জোগাড় হয়নি। তবে বলে যাচ্ছি, মামলা তুলে নিন। নইলে আপনার মক্কেলের কপালে অনেক ঝঞ্ঝাট আসছে। দিন তিনেক পরে আমি কাগজপত্তর নিয়ে আসছি।
বাইরে তখন উকিলবাবুর মক্কেল দাঁড়িয়ে ঘামছে। পীতাম্বরও রীতিমত ঘাবড়ে গেছেন। ভুরু নাচিয়ে সুপ্রভাতের কাছে জানতে চাইলেন, ব্যাপারটা কোথায় দাঁড়াচ্ছে!
রমলা ততক্ষণে পর্দা সরিয়ে বেরিয়ে এল দুমদাম শব্দ করে। বেরিয়ে দুই মক্কেলকে দেখে চোখে এমন আগুন বর্ষণ করল যে তাতে দুজনেরই ঝলসে যাবার উপক্রম। তারপর রমলা বেরিয়ে যেতেই দু’জনেই বিভ্রান্ত মুখে গিয়ে ঢুকলেন উকিলবাবুর ঘরে।
উকিলবাবুও তখনও হতবুদ্ধি হয়ে বসে আছে, মক্কেলদের দেখে বললেন, কী বুঝছেন?
সুপ্রভাত তখনও কিছুই বোঝেনি, আমতা আমতা করে বললেন, ঠিক বুঝতে পারছি না।
—তাহলে কোর্টে মামলা তুলব?
–তুলবেন? সুপ্রভাত ঠিক ধাতস্থ হতে পারছে না, আমি বরং ব্যাপারটা একটু বুঝে নিই। দেখছেন তো, দারোগার মতো কথাবার্তা। তিনদিন পরেই না হয় মামলা হবে।
—ঠিক আছে, উকিলবাবু সায় দিলেন।
সুপ্রভাত বাড়ি ফিরে দেখলেন, আগের চেয়ে রমলার হাঁটাচলায় কাজেকর্মে শব্দ বেড়ে গেছে দ্বিগুণ। যেন নিঃশব্দ বিপ্লব চলছে ঘরে। রক্তপাতহীন বিপ্লব। উকিলবাবুকে রমলা প্রায় হুমকি দিয়ে এসেছে, আপনার মক্কেলকে সাবধান করে দেবেন। তা মক্কেল তো বেশ সাবধানী লোকই। তবু এমন হুমকির কারণ বুঝে উঠতে পারছেন না সুপ্রভাত।
তিনদিন অফিসে গিয়েও স্বস্তি নেই। সারাক্ষণ একটা দুশ্চিন্তা বুকের মধ্যে। রমলার চালচলন যেন কীরকম অদ্ভুত ঠেকছে। সেদিন বাড়ি ফিরে দেখলেন, রমলা কোথায় বেরিয়েছে। ফিরল বেশ দেরি করে। ডুপ্লিকেট চাবি বার করে ঘরে ঢুকে বসে রইলেন চায়ের প্রত্যাশায়। তারপর হঠাৎ খেয়াল হল, টেবিলে ফ্লাস্কের ভেতর গরম চা। পাশে ঢাকা কাপ-প্লেট।
দিন-তিনেক এরকম টেনশনে কাটানোর পর আবার উকিলবাবুর কাছে গেলেন। আগের দিনের মতোই রমলা হাজির হয়েছে কোর্টে। এবং সুপ্রভাতদের আগেই তাদের উকিলবাবুর কাছে হাজিরা দিয়েছে সে। ব্যাগ থেকে এক তাড়া জেরক্স করা কাগজ বার করে জেরার ভঙ্গিতে বলছে, আপনি ওকালতি করেন, কিন্তু মক্কেল কীসে রক্ষা পায় সে কলাকৌশল জানেন না।
উকিলবাবু আজ প্রস্তুত হয়ে আছেন লড়াই-এর জন্য। তবু প্রথম ধাক্কাতেই যেন অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন, চশমা নামিয়ে বললেন, কেন, কেন।
রমলা আরও গলা চড়িয়ে বলল, শুধু ডিভোর্সের মামলা কোর্টে তুললেই মক্কেলকে জেতানো যায় না, বুঝলেন উকিলবাবু। আরো পাঁচসাত চিন্তাভাবনা করতে হয়।
উকিলবাবুও গলা চড়ানোর চেষ্টা করলেন, সে আমি বুঝব, আমার মক্কেল বুঝবে। আপনার তাতে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। আপনি আপনার উকিলবাবুকে নিয়ে কোর্টে যান। একটু পরেই মামলা উঠবে।
রমলা বিন্দুমাত্র না ঘাবড়িয়ে বলল, একশো বার মাথা ঘামাবো। আমার স্বামীর কিসে ভাল আর কিসে মন্দ তা নিয়ে আমারই মাথা ঘামানোর দরকার, আপনার নয়। আপনাদের তো ফি নিলেই হয়ে গেল।
ফিজের কথা শুনে ভারী রাগ হয়ে গেল উকিলবাবুর, বললেন, আপনার স্বামী তো আর থাকছে না উনি। তাহলে আর মাথা ঘামিয়ে সময় নষ্ট করছেন কেন? যান, মামলা লড়ার জন্য রেডি হোন, আর সময় নেই।
–মামলা আমি এখানেই লড়ব, কোর্টে নয়। বলে কাগজের তাড়া খুলে একগাদা জেরক্স কাগজ বার করতে থাকে রমলা। আর পর্দার আড়াল থেকে তখন দুই মকেল হাঁ করে দেখছেন ভিতরের জেরা আর কাণ্ডকারখানা। রমলার মুখচোখ দেখে সুপ্রভাত তত অর্ধেক ফ্ল্যাট।
কাগজ বার করে সেগুলো টেবিলের ওপর রাখে রমলা, দেখুন উকিলবাবু, আপনার মক্কেল আমার নামে ব্যাঙ্কে প্রায় লাখ ছয়েক টাকা ফিক্সড করে রেখেছে। তার সুদ ভাঙিয়ে আমি সারাজীবন পায়ের ওপর পা দিয়ে বসে খেতে পারি। আপনার মক্কেলের ঝঞ্জাট তাহলে বইতে হয় না আমার। কিন্তু কোর্টে মামলা তুললে আপনার মক্কেল একদম মারা যাবে। এই দেখুন, তার নামে পাঁচটা ব্যাঙ্কে প্রায় লাখ পাঁচেক ক্যাশ টাকা আছে। দুটো লকারে টাকা গয়না মিলিয়ে লাখ তিনেক। তাদের ডুপ্লিকেট চাবি সব আমার কাছে। কোর্টে মামলা উঠলে যদি জজের সামনে কাগজগুলো ফেলে দিয়ে বলি, যা ব্যবসা করে, ততে তার নামে আটলাখ টাকা কোত্থেকে এল? তারপর তো গাড়ি বাড়ি আছেই। এক পয়সা ইনকামট্যাক্স দেয় না। বুঝলেন? সঙ্গে সঙ্গে হাজতে চালান করে দেবে আপনার মক্কেলকে। ভাল চান তো ভালয় ভালয় মামলা তুলে নিন এক্ষুণি। আমি চললাম। আর হ্যাঁ, আপনার মক্কেলকে বলবেন,আজেবাজে বন্ধুর সঙ্গে যেন না ঘুরে বেড়ায়। আর কোর্টের কাজ মিটিয়ে যেন সকাল-সকাল বাড়ি ফেরে।
বলেই আর একবার পর্দা সরিয়ে দুই মূর্তিমানকে প্রবলভাবে ভস্ম করে দিয়ে বেরিয়ে গেল পায়ে দুমদাম শব্দ তুলে।
উকিলবাবু আর তার দুই মক্কেল তখন ধরাশায়ী। একে-অপরের দিকে তাকাচ্ছেন পিটপিট করে।