ওগো বর , ওগো বঁধু , এই - যে নবীনা বুদ্ধিবিহীনা এ তব বালিকা বধূ । তোমার উদার প্রাসাদে একেলা কত খেলা নিয়ে কাটায় যে বেলা , তুমি কাছে এলে ভাবে তুমি তার খেলিবার ধন শুধু , ওগো বর , ওগো বঁধু । জানে না করিতে সাজ কেশ বেশ তার হলে একাকার মনে নাহি মানে লাজ । দিনে শতবার ভাঙিয়া গড়িয়া ধুলা দিয়ে ঘর রচনা করিয়া ভাবে মনে মনে সাধিছে আপন ঘরকরণের কাজ— জানে না করিতে সাজ । কহে এরে গুরুজনে , ‘ ও যে তোর পতি , ও তোর দেবতা ' — ভীত হয়ে তাহা শোনে । কেমন করিয়া পূজিবে তোমায় কোনোমতে তাহা ভাবিয়া না পায় , খেলা ফেলি কভু মনে পড়ে তার ‘ পালিব পরানপণে যাহা কহে গুরুজনে ' । বাসকশয়ন ' পরে তোমার বাহুতে বাঁধা রহিলেও অচেতন ঘুমভরে । সাড়া নাহি দেয় তোমার কথায় , কত শুভখণ বৃথা চলি যায় , যে হার তাহারে পরালে সে হার কোথায় খসিয়া পড়ে বাসকশয়ন ' পরে । শুধু দুর্দিনে ঝড়ে— দশ দিক ত্রাসে আঁধারিয়া আসে ধরাতলে অম্বরে— তখন নয়নে ঘুম নাই আর , খেলাধুলা কোথা পড়ে থাকে তার , তোমারে সবলে রহে আঁকড়িয়া—হিয়া কাঁপে থরথরে দু : খদিনের ঝড়ে । মোরা মনে করি ভয় তোমার চরণে অবোধজনের অপরাধ পাছে হয় । তুমি আপনার মনে মনে হাস , এই দেখিতেই বুঝি ভালোবাস , খেলাঘর - দ্বারে দাঁড়াইয়া আড়ে কী যে পাও পরিচয় । মোরা মিছে করি ভয় । তুমি বুঝিয়াছ মনে , একদিন এর খেলা ঘুচে যাবে ওই তব শ্রীচরণে । সাজিয়া যতনে তোমারি লাগিয়া বাতায়নতলে রহিবে জাগিয়া , শতযুগ করি মানিবে তখন ক্ষণেক অদর্শনে , তুমি বুঝিয়াছ মনে । ওগো বর , ওগো বঁধু , জান জান তুমি—ধুলায় বসিয়া এ বালা তোমারি বধূ । রতন - আসন তুমি এরি তরে রেখেছ সাজায়ে নির্জন ঘরে , সোনার পাত্রে ভরিয়া রেখেছ নন্দনবনমধু— ওগো বর , ওগো বঁধু ।