।। বলখানি বিবাহ বৃত্তান্তবর্ণন।।
প্রাপ্তে সপ্তদশাব্দে চ কৃষ্ণাংশে তত্র চাভবৎ। শৃণু ত্বং মুনিশার্দূল হৃষ্টং যদোগদর্শনাৎ।।১।। রত্নভানৌ মৃতে রাজ্ঞি মরুধন্বমহীপতিঃ। গজসেন স্তদা বিপ্র পৃথ্বীরাজয়াতুরঃ।।২।। আরাধ্য পাবকং দেবং যজ্ঞধ্যানব্রতাচনৈঃ। দ্বাদশব্দং সদাচারঃ প্রেমভক্তা হাতোষয়ৎ।।৩।। তদা প্রসন্নো ভগবান্ পাবকীয়ং হয়ং শুভম্। দদৌ তস্মৈ সুতৌ চোভৌ কন্যাং চ গজমুক্তিকাম্।।৪।। পাবখাস্তে হি চত্বারঃ সমুদ্ভূতা মহীতলে। অগ্নিবর্ণা মহাবীরাঃ সর্বলক্ষণ লক্ষিতাঃ।।৫।।
।। বলখানি বিবাহ বৃত্তান্ত বৰ্ণন।।
এই অধ্যায় কৃষ্ণাংশের সপ্তদশবর্ষের অবস্থাতে বলখানির বিবাহ বৃত্তান্ত বর্ণনা করা হয়েছে।
শ্ৰী সূতজী বললেন, কৃষ্ণাংশ সপ্তদশবর্ষ প্রাপ্ত হলে সেখানে যা কিছু হয়েছিল তা শ্রবণ কর। হে মুনি শার্দূল, এই বৃত্তান্ত যোগদর্শনের দ্বারা দৃষ্ট।। ১।।
রাজা রত্নভানুর মৃত্যুর পর মরুধন্বের রাজা গজসেন রাজত্ব শুরু করেন। হে বিপ্র, তিনি পৃথ্বীরাজের ভয়ে ভীত ছিলেন। তিনি অগ্নিদেবের যজ্ঞ-ধ্যান- ব্রত এবং অর্চনা দ্বারা আরাধনা শুরু করেন। এইভাবে দ্বাদশবর্ষ পর্যন্ত সদাচার দ্বারা এবং প্রেম ভক্তি ভাবে অগ্নিদেবকে প্রসন্ন করলেন।।২-৩।।
অগ্নিদেব প্রসন্নতাপূর্বক তাকে একটি পাবকীয় অশ্ব দিয়েছিলেন। তথা দুইপুত্র এবং একটি গজ মুক্তিকা কন্যা দিয়েছিলেন।।৪।।
সেই চারটিই পাবক ছিল, যেগুলি এই পৃথিবী থেকে সমুৎপন্ন হয়েছিল। তারা অগ্নির ন্যায় বর্ণবিশিষ্ট, মহানবীর এবং সমস্ত শুভ লক্ষণে লক্ষিত ছিল।।৫।।
অষ্টাদশবয়োভূতাঃ সর্বৈ তে মুনিপুংগব। জাতমাত্রা দেবসমাঃ সর্বাবিদ্যাবিশারদাঃ।।৬।। আষ্টাদশাব্দবয়সা সা কন্যা বরবর্ণিনী। দুর্গায়াশ্চ বরং প্রাপ্ত ধর্মান্তশস্ত্বাং বরিষ্যতি।।৭।। শার্দূলীবংশী স নৃপঃ কৃতবাম্বৈ স্বয়ং বরম্। নানাদেশয়া নৃপাঃ প্রাপ্তাঃ সুতায়া রূপমোহিতা।।৮।। মার্গশীর্ষে সিতে পক্ষে চাষ্টম্যাং চন্দ্রবাসরে। তস্যা স্বয়ংবরশ্চাসীৎ সানৃপাল প্রতি চাযযৌ।।৯।। বিদ্যুদ্বর্ণ মুখং তস্যাশ্চঞ্চলায়াস্তথাগতম্। দৃষ্ট্বা চ তং বীরং মুমোহ গজমুক্তিকা।১০। বুদ্ধা তস্মৈ দদৌ মালাং বৈজয়ন্তীং শুভাননা।১১।। তারকাদ্যাশ্চ ভূপালাঃ সর্বশাস্ত্রসংযুতাঃ। রুরুধুঃ সর্বতো বীরং তে বলাৎ কন্যাকাথিনঃ।।১২।।
হে মুনি শ্রেষ্ঠ, তারা সকলে আঠারো বর্ষের ছিল এবং জন্মানোর পর থেকে সমস্ত বিদ্যায় সুপন্ডিত ছিল।।৬।।
সেই বর বর্ণিনী কন্যা অষ্টাদশ বর্ষের ছিলেন। দেবী দুর্গা তাকে বর দিয়েছিলেন যে, ধর্মাংশ তাকে বরণ করবেন।।৭।।
শার্দূলবংশের সেই রাজা স্বয়ম্বর সভা করেছিলেন। সেইসময় সেই কন্যার রূপলাবণ্যে মোহিত হয়ে অনেক দেশের রাজা সেখানে উপস্থিত হন। ৮।।
অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে সোমবার সেই কন্যার স্বয়ম্বর অনুষ্ঠিত হয়, তিনি রাজগণকে বরণ করতে সেখানে এসেছিলেন।।৯।।
সেই চঞ্চলা কন্যার বিদ্যুৎবরণ রূপ দেখে ধর্মাংশ মহীপতি বলখানি মোহিত হন। সেই গজমুক্তাও বলখানিকে দেখে মুগ্ধ হন। সেই শুভাননা বরণের জন্য বৈজয়ন্তী মালা বলখানির গলায় পরিয়ে দিলেন।।১০-১১।।
তারকাদি সমস্তভূপাল যাঁরা সেখানে ছিলেন তাঁরা সকলে শস্ত্র এবং অস্ত্রের দ্বারা তা রোধ করলেন, কারণ তারা সকলে সেই কন্যাকে গ্রহণ করার ইচ্ছা করেছিলেন।। ১২।।
তথাবিধান নৃপান্ দৃষ্ট্বা ভূপান পঞ্চশতান্ বলী। স শীঘ্রং খংগমুৎসৃজ্য শতভূপশিরাংস্যহম্।।১৩।। সর্বতো বধ্যমানং তং বলখানিং স তারকঃ। তদ ভূজাভ্যাং খংগং স তদংগে দ্বিধাভবৎ।।১৪।। মহীরাজসুতো জ্যেষ্টো দৃষ্ট্বা খংগং তথাগতম্। অপোবাহ রণাচ্ছ্বরস্তৎ পশ্চাতে নৃপা যযুঃ।।১৫।। পরাজিতে নৃপবলে বলখানিমহাবলঃ। তাং কন্যাং শিবিকারুঢ়া স্বগেহং সোহনয়দ্বলী।।১৬।। তাং গচ্ছন্তীং সুতাং দৃষ্ট্বা গজসেনো মহীপতিঃ। মহীপত্যাজ্ঞয়া প্রাপ্তো জ্ঞাত্বা তং ক্ষত্রিয়াধম্।।১৭।। জম্বুকধং মহাবীরং মায়য়া তখমোহয়ৎ। জাতে নিদ্রাতুরে বীরে দুর্গায়া শাপমোহিতে।।১৮।। নিৰ্গড়ৈস্তং ববন্ধাশু দৃঢ়ৈলোহময়ৈ রুষা। লৌহদুর্গং চ সমপ্রাপ্য গ্রামরূপং মহীপতিঃ।।১৯।।
সেই বলবান্ বলখানি যখন দেখলেন যে, পাঁচশত রাজা তার থেকে গজমুক্তিকে বলপূর্বক হরণ করতে উদ্যত তখন তিনি শীঘ্র নিজ খড়গ গ্রহণ করে একশত রাজার মস্তক ছিন্ন করলেন।।১৩।।
সেই বলখানি সকলকে বধ করতে থাকলে সেই তারক তাঁর হস্তে খড়্গ তুলে দিলেন এবং নিজে বলখানির দ্বারা দ্বিধাবিভক্ত হলেন।।১৪।।
মহীরাজের জ্যেষ্ঠ পুত্রকে ঐরূপ খড়্গহস্তে দেখে সকল বীর অপোবাহিত হয়ে গেলেন এবং রাজাও চলে গেলেন।।১৫।।
সমস্ত নৃপতিগণকে পরাজিত করে মহান্ বলবান্ বলখানি সেই কন্যাকে নিয়ে শিবিকা রূঢ় হয়ে নিজ গৃহে চলে গেলেন।।১৬।।
চান্ডালাংশ্চ সমাহুয় কঠিনাং স্তত্রবাসিনঃ। বধায়াজ্ঞাপয়ামাস তস্য দন্ডৈরনৈকশঃ।।২০।। তে রৌদ্রাস্তং সমাবধ্য তাড়য়ামাসুরূজ্জিতাঃ। তত্তাড়নাওদা নিদ্ৰা তত্রৈব বিলয়ংগতা।।২১।। দৃষ্ট্বা ততস্তু চন্ডালান্ বলখানিরতাড়য়ৎ। তলমুষ্টিপ্রহারেণ চান্ডালা মরণং গতাঃ।।২২।। মৃতে পঞ্চাশতে রৌদ্রে তচ্ছেষা দুর্দূবুর্ভয়াৎ। কপাটং সুদৃঢ়ং কৃত্বা নৃপান্তিক মুপাযঃ।।২৩।। স নৃপঃ কারণং জ্ঞাত্বা হস্তবদ্ধো মহাবলী। উবাচ তত্র গত্বাসৌ বচনং কার্যতৎপরঃ।।২৪।। ভবান্ মহাবলো বীর চান্ডালৈবন্ধনং গতঃ। দস্যুভিলুণ্ঠিতস্তত্র নিদ্রাবশ্যো বনং গতঃ।।২৫।।
সেই কন্যাকে চলে যেতে দেখে মহীপতি গজসেন তাঁকে ক্ষত্রিয়াধম ভেবে মহীপতির আজ্ঞাতে সেখানে এলেন এবং জম্বুকের হত্যাকারীকে মায়ার দ্বারা মোহিত করলেন। দুর্গা শাপে মোহিত নিদ্রাতুর সেই বীর বলখানিকে এরপর ক্রোধান্বিত হয়ে গজসেন লৌহ নিগড়ে শীঘ্র বেঁধে ফেললেন। মহীপতি তাঁকে গ্রামরূপ লৌহদুর্গে তাঁকে পৌঁছে দিলেন। সেখানে কঠিন চান্ডালদেব তাঁকে বধ করার আদেশ দিলেন।।১৭-২০।।
সেই মহারৌদ্র বলশালী চান্ডালগণ তাকে ভালোভাবে বেঁধে প্রহার করতে শুরু করলেন। তাদের তাড়নের ফলে বলখানি নিদ্রাবিহীন হলেন। এরপর বলখানি সেই চান্ডালদের দেখে তাদের প্রহার করতে শুরু করলেন। মুষ্ঠাঘাতে সেই চান্ডালগণ মারা গেল। পাঁচশত রৌদ্র মারা গেলে অবশিষ্ট রৌদ্র ভয়ে পালিয়ে গেল এবং কপাট দৃঢ়ভাবে বন্ধ করে রাজার পাশে চলে গেলেন।।২১-২৩।।
মৎসুতা ভবনে প্রাপ্তা দিষ্টয়া ত্বং জীবিতং গতঃ। উদ্বাহ্য মৎসুতাং শীঘ্রং স্বগেহং যাতুমর্হসি। ইতি শ্রুত্বা প্রিয়ং বাক্যং তং প্রশস্য তথাকরোৎ।।২৬। মন্ডপে বেদকর্মাণি বিবাহার্যং চকার সঃ। জাতায়াং মন্ডপার্চায়াং পত্রমাহ্লান্দহেতবে।।২৭।। তদাজ্ঞায়া লিখিত্বাসৌ গজসেনোহগ্নিসেবকঃ। উষ্ট্রারুঢ়ং সমাহূয় শীঘ্রং পত্রমচোদয়ৎ।।২৮।। বলখানেবিবাহোহত্র ভবাসৈন্যসমন্বিতঃ। সম্প্ৰাপ্য যোগ্যদ্রব্যানি ভুক্ত্বা ত্বং তৃপ্তিমাবহ।।২৯।। ইত্যুক্তে নিশি জাতায়াং বলখানিমহাবলঃ। ভোজনং কৃতবান্ স্তত্র বিষজুষ্টং নৃপার্পিতম।।৩০। গরলং তেন সংভুক্তং ন মমার বরাচ্ছুভাৎ। ততঃ কালে চ সংপ্রাপ্তে দৃষ্ট্ববা মোহত্বমার্গতম্। পুনর্ববন্ধ নির্গড়েস্তাড়য়ামাস বৈতসৈঃ।।৩১।।
রাজা কারণ জেনে কৃতাঞ্জলিপুটে বলখানির নিকট গিয়ে বললেন, হে বীর, আপনি মহাবলবান্, চান্ডালগণের দ্বারা বদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, নিদ্ৰাবশ্য আপনাকে দস্যুগণ লুন্ঠন করে বনে নিয়ে গিয়েছিল। আমার পুত্রী ভবনেই রয়েছে আপনি যে জীবিত রয়েছেন তা অত্যন্ত প্রসন্নতার কথা। আপনি শীঘ্ৰ আমার পুত্রীকে বিবাহ করে নিজ গৃহে নিয়ে যান, কারণ আপনিই এই বিবাহের যোগ্য। বলখানি এইরূপ পরমপ্রিয় বচন শ্রবণ করে রাজার প্রশংসা করে বিবাহ করলেন।।২৪-২৬।।
রাজা একটি মন্ডপ নির্মাণ করে সেখানে বিধিবৎ বিবাহকর্মাদি করলেন। মন্ডপ অর্চনার পর তাঁর আজ্ঞাতে একপত্র লিখে অগ্নিসেবক গজসেন এক উষ্ট্রারূঢ়কে ডেকে শীঘ্র সেই পত্র প্রেরণ করলেন।।২৭-২৮।।
সেই পত্রে লিখলেন, এখানে বলখানির বিবাহ, সুতরাং আপনি সৈন্য নিয়ে শীঘ্র এখানে চলে আসুন এবং দ্রব্যসকল উপভোগ করে তৃপ্ত হোন।।২৯।।
বিষদোষ মসৃক্ দ্বারাত্রি স্মৃতং স্বদেহতঃ। তদা বুবোধবলবান্ ভূপতি প্ৰাহ নম্ৰধীঃ।।৩২।। রাজন্ কিমীদৃশং জাতং ত্বৎসৈন্যং তাড়নে রতম্। স আহ ভো মহাবীর মকুলে রীতিরীদৃশী। যাতনাং প্রথমং প্রাপ্য তদনূদ্বাহিতো ভবেৎ।।৩৩।। ইত্যক্ত্বা সতি ভূপালে গজমুক্তা সমাগতা। পিতরং প্রাহ বচনং কোহযং তত্তাড়নে গতঃ।।৩৪।। নৃপঃ প্রাহ সুতে শীঘ্রং যাহি ত্বং নিজমন্দিরে। কৃষিকরয়োমায়াতো দ্রব্যার্থন তাড়নে গতঃ।।৩৫।। ইতি শ্রুত্বা বচো ঘোরং বলখানিমহাবলঃ। ছিত্বা তদ্বন্ধনং ঘোরং খংগহস্তঃ সমাযযৌ।।৩৬।। শূরান্_ পঞ্চশতং তং চ রুদধবা শস্ত্রৈ সমং ততঃ। প্রজমতস্তু তা সর্বান্ বলখানিব্যনাশয়ৎ।।৩৭।।
পত্র প্রেরণের পর রাত্রে রাজার দ্বারা সমর্পিত বিষমিশ্রিত খাবার বলখানি ভোজন করলেন। তিনি বিষ ভোজন করলেও শুভবর হেতু মারা গেলেন না। কালক্রমে তিনি মোহত্বপ্রাপ্ত হলে তাঁকে নিগড়ের দ্বারা বেঁধে বেত্রাঘাত করা হল। তাঁর শরীরের সকল বিষ দেহের রক্তের সাথে বেরিয়ে গেল। তখন সেই বলবান্ জ্ঞান লাভ করে নম্রবুদ্ধি হয়ে রাজাকে বললেন, হে রাজন, আপনার সৈনিক আমাকে তাড়ন করছে, এরকম কেন হল। রাজা তখন তাঁকে বললেন, আমার কুলের এই প্রকার রীতি, প্রথমে পূর্ণ যাতনা দিয়ে পরে বিবাহ দেওয়া হয়।।৩০-৩৩।।
রাজা এইপ্রকার বলার পর গজমুক্তা এসে পিতাকে কাকে তাড়ন করা হচ্ছে–জিজ্ঞাসা করলেন। প্রত্যুত্তরে রাজা বললেন, তুমি শীঘ্র মন্দিরে যাও, দ্রব্য হরণকারী ঐ কৃষিকরকে সৈনিকগণ তাড়ন করতে গেছেন।।৩৪-৩৫।।
এইপ্রকার ঘোর বচন মহাবলী বলখানি শ্রবণ করে বন্ধন ছিন্ন করে হাতে খড়্গ নিয়ে সেখানে এসে উপস্থিত হলেন এবং পাঁচশত শূর তাঁকে অবরুদ্ধ করলে তিনি সকলকে বিনষ্ট করেন।।৩৬-৩৭।।
গজসেন সুতো জ্যেষ্ঠঃ সূর্যদ্যুতিরুপাগতঃ। বদধ্বা পুনস্তং বলিনং গর্তমধ্যে সমাক্ষিপৎ।।৩৮। তথাগতং গতিং দৃষ্ট্বা গজমুক্তা সুদুঃখিতা। নিশি তত্র গতা দেবী দত্ত্বা দ্রব্যং তু রক্ষকান্।।৩৯।। পতিং নিষ্কাশ্য রুদতী ব্যজনং পতয়ে দদৌ। রাত্রৌরাত্রৌ তথা প্রাপ্তা ব্যতীতং পক্ষমাত্রকম্।।৪০।। এতস্মিন্নন্তরে বীরশ্চাহ্লাদঃ সপ্তলক্ষকৈঃ। সৈন্যৈঃ সহাযযৌ শীঘ্রং শ্রুত্বা তত্রৈব কারণম্।।৪১।। বলখানির্গতো গর্তে রুরোধ নগরীং তদা। গজৈঃ ষোড়শাহস্মৈর্গর্জসেনো রণং যযৌ।।৪২।। ত্ৰিলক্ষৈশ্চ হয়ৈঃ সার্দ্ধং সূর্যদ্যুতিরুপাযযৌ। কাত্তামলস্তদা প্রাপ্তস্ত্রিলেক্ষৈশ্চ পদাতিভিঃ।।৪৩।। তয়োশ্চাসীন্ মহদ যুদ্ধমহোরাত্রং হি সৈন্যয়োঃ। রক্ষিতে তালনাদৈ চ গজসেনাদ্যকে তদা।। ৪৪।
গজসেনার জ্যেষ্ঠপুত্র সূর্যদ্যুতি তখন এসে বলখানিকে বেঁধে এক গর্তে ফেলে দিলেন। নিজ পতিকে ঐরূপ অবস্থায় দেখে গজমুক্তা অত্যন্ত দুঃখ পেলেন। দেবী গজমুক্তা রাত্রে সেখানে গিয়ে রক্ষকগণকে উৎকোচ প্রদান করে রোদন করতে করতে নিজ পতিকে বাহির করে নিয়ে এসে ব্যঞ্জন দিলেন। এইভাবে তিনি প্রত্যহ রাত্রে সেখানে সমাগত হতেন।। এইভাবে একপক্ষকাল গত হলে আহ্লাদ সাতলক্ষ সেনা নিয়ে সেখানে শীঘ্র এসে উপস্থিত হন। বলখানি যে গর্তের মধ্যে পতিত আছে, তিনি তাও শুনেছিলেন।
সেই সময় সূৰ্য্যদ্যুতি তিনলক্ষ অশ্ব ও কান্তসেন তিনলক্ষ পদাতিক বাহিনী নিয়ে সেখানে এসে উপস্থিত হন। সেই দুই সেনাদলের মধ্যে এক অহোরাত্র মহাযুদ্ধ হয়েছিল। তালন এবং গজসেনার সৈন্যগণের মধ্যে মহাযুদ্ধ হয়েছিল।।৩৮-৪৪।।
দ্বিতীয়েহহ্নি সমায়াতে গজসেনো মহাবলঃ। প্রভগ্নং স্ববলং দৃষ্ট্বা পাবকীহয়ং সমারুহৎ। দাহয়ামাস তৎসৈন্য তালনাদ্যৈশ্চ পালিতম্।।৪৫।। ভস্মীভূতং বলং দৃষ্ট্বা তালনঃ শত্রুসম্মুখে। গত্বা ভল্লেন ভূপালং তাড়য়ামাস বেগতঃ।।৪৬।। মূৰ্চ্ছিতং নৃপমাজ্ঞায় সুর্যদ্যুতিরুপাযৌ। পাবকীয়ং সমারুহ্য দাহয়ামাস তালনম্।।৪৭।। এতস্মিন্নন্তরে শূরৌ দেবৌ চাহ্লাদ কৃষ্ণকৌ। ববন্ধত্ব রুষাবিষ্টৌ সূর্যদূতিমরিন্দমম্।।৪৮।। সুবদ্ধং ভ্রাতরং হয়ং কান্তামলোহরুহৎ। দেবসিংহং চ সংমোহ্যকৃষ্ণাংশং প্রতিসোহ গমৎ।। গৃহীত্বা তং স কৃষ্ণাংশং তস্য তেজঃ সমাহরৎ।।৪৯।। সপ্তলক্ষবলং সর্বং বহ্নিভূতমভূত্তদা। আমরত্বাৎ স আহ্লাদস্তদা তু সমজীবয়ৎ।।৫০।।
দ্বিতীয় দিনে গজসেনা নিজ সৈনিকদের ভঙ্গ হতে দেখে অগ্নিকে সমারোহণ করলেন। তালনের দ্বারা রক্ষিত সেনাদেরকে তিনি জ্বালিয়ে দিলেন। শত্রুর সম্মুখে নিজ সেনাদলকে ভস্মীভূত হতে দেখে তালন ভল্লের দ্বারা ভূপতির উপরে আঘাত করলেন। রাজা মূর্ছিত হলে সূর্যদ্যুতি সেখানে এসে উপস্থিত হন। তিনি পাবকীয়কে সমারোহণ করে তালনকে বদ্ধ করলেন। ইতি মধ্যে দেবশূর আহ্লাদ কৃষ্ণক রোষাবিষ্ট হয়ে অরিন্দম সূর্যদ্যুতিকে বেঁধে ফেললেন। ভ্রাতাকে বদ্ধ দেখে কান্তামল অশ্বে সমারোহণপূর্বক দেবসিংহকে সম্মোহিত করে কৃষ্ণাংশের দিকে গেলেন। তিনি কৃষ্ণাংশকে ধরে তার সমাহৃত করলেন।।৪৫-৪৯।।
সেই সময় সাতলক্ষ সেনা বহ্নিভূত হয়ে গেল। তখন অমরত্বের দ্বারা সেই আহ্লাদ তাদের জীবিত করলেন।।৫০।।
গজসেনস্যাৰ্দ্ধ সৈন্যং তৈশ্চ সর্বৈবিনাশিতম্। বিজয় নৃপতিঃ প্রাপ্য হৰ্ষিতো গেহমাযযৌ।।৫১। বহির্ভূতং চ কৃষ্ণাংশং দৃষ্ট্বাহ্লাদঃ সুদুঃখিতঃ। দুর্গাং দেবীং স তুষ্টাব মনসা রণমূর্দ্ধনি।।৫২।। তদা দেবী বচঃ প্রাহ্ বৎস তে পুত্র এব চ। স্বর্গাদাগত্য সর্বাণি পুনরুজ্জীবয়িষ্যতি।।৫৩।। ইত্যুক্তে বচনে দেব্যা ইন্দুলো বাসবাজ্ঞয়া।
দ্বাদশাব্দসমং রূপং বৃত্বা বিদ্যাবিশারদঃ বড়বামৃতমারুহ্য হয়ং তত্ৰ সমাগতঃ।।৫৪।। তদংগাদুদধৃতা বাহা মেখা ইব সমস্ততঃ। পাবকং শমখামা সুস্ত্রয়স্তে দেবতোপমাঃ।।৫৫।। শমীভূতে তদা বহ্নৌ স্বমুখাৎ সহয়ো মুদা। লালামুদ্বাহয়ামাস তয়া তে জীবিতাস্ততঃ।।৫৬।। জীবিতে সপ্তলক্ষে তু শমীভূতে হি পাবকে। গজসেনঃ সুতাভ্যাংচ প্রয়াতঃ সর্বতোদিশম্।।৫৭।।
গজসেনার অর্ধেক সেনা আহ্লাদ বিনষ্ট করলেন। বিজয় লাভ করে সেই নৃপতি হৃষ্ট হয়ে নিজগৃহে ফিরে এলেন। কৃষ্ণাংশকে বহ্নিভূত দেখে আহ্লাদ অত্যন্ত দুঃখিত হলেন। তিনি রণমূদ্ধায় দেবী দুর্গার স্তুতি করেছিলেন। তখন দেবী বললেন, হে পুত্র, তোমার পুত্র স্বর্গ থেকে এসে এদেরকে পুনরায় জীবিত করবে। দেবীর এইকথা শুনে ইন্দ্রের আজ্ঞায় সেই ইন্দুল দ্বাদশবর্ষ বয়সের ন্যায় রূপ প্রাপ্ত হয়ে বিদ্যা বিশারদ হয়ে বড়ামৃত অশ্বে আরোহণ করে সেখানে এসেছিলেন।।৫১-৫৪।।
সেই সময় অগ্নিকে শান্ত করতে সেই অশ্ব মুখ থেকে মেঘকে নির্গত করল। যারফলে সকল মৃত সৈনিকগণ জীবিত হয়ে গেল।।৫৬।।
পাবকশান্ত হয়ে সাতলক্ষ সেনা জীবিত হলে গজসেন সূতের চতুর্দিকে ঘিরে ফেলল। তার যে একলক্ষ সেনা জীবিত ছিল তারা সকলে ভয়াতুর হয়ে গেল।
লক্ষ্যং সৈন্যং তু যে শিষ্ঠাস্তে সর্বেহপি ভয়াতুরাঃ। দুদ্রুবুভার্গবশ্রেষ্ঠদিব্য রূপত্ব ধারিণঃ।।৫৮।। কেচিৎসন্ন্যাসিনো ভূত্বা কেচিদ্বৈ ব্রহ্মচারিণঃ। জীবত্বং প্রাতবস্তস্তে তথান্যে সংক্ষয়ং গতাঃ।।৫৯।। বদধ্বা তান্ গজসেনাদীস্ত্রীঞ্ছরান স চ তালনঃ। কৃষ্ণাংশেন সমাযুক্ত হদ্রদুর্গং সমাযযৌ।।৬০ । বলখানিং চ নিষ্কাশ্য তালনস্তাদনন্তরম্। পৃষ্ঠবান্ কারণং সর্বং শ্রুত্বা তন্ মুখতো বচঃ। তান্ বীরাং স্তাড়য়ামাস বৈতসৈঃ স্তম্ভবন্ধনৈঃ।।৬১।। গজমুক্তাজ্ঞয়া বিপ্ৰ সেনাপতিরুদারধীঃ। তালনস্তান সমুৎসৃজ্য বিবাহার্থং সমাযযৌ। বলখানিইয়ারুঢ়ো গজমুক্তাচ মন্ডপে।।৬২।।
হে ভার্গবশ্রেষ্ঠ, সেই রূপত্বধারীগণ কেউ কেউ সন্ন্যাসী হয়ে গেল, কেউ কেউ ব্রহ্মচারী হয়ে গেল। এইভাবে তারা রূপধারণ করে প্রাণ বাঁচিয়েছিল। অন্য সকলে ক্ষয় প্রাপ্ত হল।।৫৭-৫৯।।
তারপর তালন গজসেন প্রভৃতি তিনজন শুরকে বেঁধে নিয়ে কৃষ্ণাংশের সঙ্গে ইন্দ্ৰ দুর্গে এলেন। সেখান থেকে বলখানিকে বার করে নিয়ে এসে সমস্ত কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। তার মুখ থেকে সমস্ত বৃত্তান্ত জ্ঞাত হয়ে সেই বীরগণকে স্তম্ভে বন্ধন করে বেত দিয়ে প্রহার করেছিলেন। হে বিপ্র, এরপর গজমুক্তার আজ্ঞাতে সেই উদার বুদ্ধি সেনাপতি তাদের ছেড়ে দিয়ে বিবাহের জন্য মন্ডপে এলেন। বলখানি অশ্বে সমারোহণ করলেন এবং গজমুক্তা বিবাহ মন্ডপে ছিলেন।।৬০-৬২।।
গজসেনস্তাদাদিধ্যৈভোজনৈ স্তানভোজয়ৎ। নিবাস্য লৌহদুর্গে তান্কপাটঃ সুদৃঢ়ীকৃতঃ। লক্ষশূরান্ স সংস্থাপ্য স্বয়ং রুদ্ধপুরং যযৌ।।৬৩।। তে রাত্রৌ লোহদুর্গেষু হু্যষিত্বা যত্নতোবলাৎ। প্রভাতে চ কপাটে ন দ্বারং দৃষ্ট্বা তদাব্রবীৎ। দ্বারমুদ্ ঘাটয়াশু ত্বং নো চেপ্রানাং স্ত্যজিষ্যসি।।৬৪।। ইতি সেনাপতিঃ শ্রুত্বা লক্ষশূরান সমাদিশৎ। নানাযত্নৈশ্চ হন্তব্যা শত্রবো ভয়কারিণঃ।।৬৫।। ইতি শ্রুত্বা তু তে শূরাঃ শতঘ্ন্যস্তৈ সুরোপিতাঃ। একেকং ক্রমশো জঘুবৃন্দং তে বৈরতৎ পরাঃ।।৬৬।। হতে দশসহস্রে তু কৃষ্ণাংশো বিন্দুলং হয়ম্। সমারুহ্য জঘানাশু স্বখংগে মহদ্ বলম্।।।৬৭।। হতশেষা ভয়াতাশ্চ সহস্রাশীতিসক্ষিতাঃ। ইন্দ্ৰদুর্গং প্রতি প্রাহু্যথা জাতো বলক্ষয়ঃ।।৬৮।।
গজসেন পুনরায় তাঁকে দিব্য ভোজন করালেন এবং লৌহ দুর্গে তাদেরকে রেখে সুদৃঢ় কপাট দিয়ে দিলেন। একলক্ষ শূরকে সেখানে সংস্থাপিত করে স্বয়ং রুদ্রপুরে চলে গেলেন।।৬৩।।
রাত্রে তারা লৌহ দুর্গে অতিবাহিত করে প্রভাতে দ্বার রুদ্ধ দেখে বললেন, শীঘ্র দ্বার খুলে দাও না হলে প্রাণত্যাগ করব। সেনাপতি একথা শ্রবণ করে একলক্ষ সেনাকে আদেশ দিলেন যে, এই ভয়ংকর শত্রুকে মেরে ফেলা উচিৎ।।৬৪-৬৫।।
একথা শুনে শূর বলখানি বৈর তৎপর হয়ে শতঘ্নীর দ্বারা এক এক বৃন্দ সৈন্য মেরে ফেললেন। এইভাবে দশসহস্র সৈন্য হত বীর কৃষ্ণাংশ বিন্দুল অশ্বে সমারূঢ় হয়ে নিজ খড়্গের দ্বারা বিশাল সেনাদের হনন করলেন। যারা বেঁচে রইলেন তারা সহস্র অশীতিগণের সঙ্গে সমাযুক্ত হয়ে ইন্দ্রযুক্ত হয়ে ইন্দ্ৰদুর্গে গিয়ে বিশাল সেনাবাহিনীর ক্ষয়ের কথা জানালেন।।৬৬-৬৮।।
শ্রুত্বা ভয়াতুরো রাজা স্বসুতাভ্যাং সমন্বিতঃ। গজমুক্তাং পুরস্কৃত্য বহুদ্রব্যসমন্বিতাম্। স্বপাপং ক্ষালয়ামাস দত্ত্বা কন্যা বিধানতঃ।।৬৯।। ষোড়শোষ্টানি স্বর্ণানি গৃহীত্বাহ্লাদ এবসঃ। যযৌ স্বগেহং মহিতং পুত্ৰভ্ৰাতৃসমন্বিতঃ।।৭০। সংপ্রাপ্তে গেহমাহ্লাদে দেবী স্বর্ণবতী স্বয়ম্। ইন্দুলং স্বাংকমারোপ্য ললাপ করুণং বহু।।৭১।। মৃতাহংশ্চ ত্বয়া পুত্র পুনরুজ্জীবিতা খলু। ধন্যাহং কৃত কৃত্যাস্মি জয়ন্ত তব দর্শনাৎ।।৭২।। ইতি শ্রুত্বেন্দুলো বীরো নত্বাহং জননীং মুদা। অনুণং নাধিগচ্ছামি ত্বতো মাতঃ কদাচন।।।৭৩।। সংপ্রাপ্তে গেহমাহ্লাদে রাজা পরিমলঃ সুধীঃ। বাদ্যানি বাদয়ামাস বিপ্রেভ্যশ্চ দদৌ ধনম্।।৭৪।।
সেকথা শ্রবণ করে রাজা ভয়াতুর হয়ে নিজ দুই পুত্রের সাথে প্রভূত ধন সম্পদ দ্বারা গজমুক্তাকে সম্প্রদান করে পাপ ক্ষালন করলেন।।৬৯।।
আহ্লাদ ষোড়শ স্বর্ণময় উষ্ট্র গ্রহণ করে পূজিত হয়ে পুত্রও ভ্রাতাকে নিয়ে নিজগৃহে ফিরে এলেন।।৭০।।
আহ্লাদ গৃহে ফিরে এলে স্বর্ণবতী দেবী স্বয়ং ইন্দুলকে নিজ ক্রোড়ে বসিয়ে প্রচুর করুণালাপ করেছিলেন। হে পুত্র, আমি তো মরেই গিয়েছিলাম। তুমি আমাকে পুনর্জীবিত করলে, আমি পরম ধন্য এবং অত্যন্ত কৃতকৃত্য হলাম। জয়ন্ত তোমার দর্শনে আজ সুফল পেলাম।।৭২।।
একথা শ্রবণ করে বীর ইন্দুল নিজ মাতাকে সানন্দে প্রণাম করে বললেন—হে মাতা, আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও কখনও যাব না।।৭৩।।
আহ্লাদ গৃহে ফিরে এলে সুচীরাজা পরিমল প্রচুর বাদ্য বাজালেন এবং ব্রাহ্মণদের ধনদান করলেন।।৭৪।।