বঙ্গ আমার জননী
আমার দোয়েল পাখি দুটোর দিকে তাকিয়ে ইমনের হঠাৎ মনে হল ওরা যে-কোনও মুহূর্তে ডানা নেড়ে আকাশে উড়ে যাবে। তারপর শূন্যে ভাসতে-ভাসতে বাংলা অ্যাকাডেমির চত্বরে গিয়ে বইমেলা দেখে নিতে পারে। মনে হওয়ামাত্র তার বেশ মজা লাগল। মাটিতে দাঁড়ানো মানুষেরা এই বিশাল পাখিদুটোকে জীবন্ত দেখলে দোয়েল বলে ভাবতেই পারবে না, আতঙ্কে ছুটোছুটি করবে।
দিনের-পর-দিন, রাতের-পর-রাত নিষ্প্রাণ পাখিদুটো এ ওর ডানার ছায়ায় চুপচাপ বসে থাকে। যদি কথা বলতে পারত, কী কথা বলত ওরা?
আজকাল ইমনের মাথায় প্রায়ই এইসব উদ্ভট ভাবনা ঢুকে পড়ছে। কোনওকিছু দেখলে হঠাৎই তার চেহারাটা অন্যরকম হয়ে যায়। সেদিন একটি ছবি দেখছিল ম্যাগাজিনে। পাহাড়ি উপত্যকায় মেষপালকেরা মেষ চরাচ্ছে। সঙ্গে-সঙ্গে সে নিজের অজান্তে একটা অন্য ছবি তৈরি করে নিল। পাঁচিলঘেরা চত্বরে একটার-পর-একটা মেষকে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মেষগুলো আনন্দে ঢুকছে। কিন্তু ক্রমশ জায়গাটা ভরাট হয়ে গেল। এ ওর শরীরের সঙ্গে লেপটে দাঁড়িয়ে। বেরুবার অন্য দরজাগুলো একদম বন্ধ। তাদের ওপর লেখা আছে, সেসন জট।
ইমনের বয়স তেইশ। রোগা এবং লম্বা। চোখদুটো খুব উজ্জ্বল, সহজেই চোখে পড়ে। গায়ের রং শ্যামলা। ইমনের বাবা সাধারণ চাকরি করেন, ঘুষ নেন না। এখনও ওদের বাসায় টিনের ছাদ, উঠোনে কাঁঠাল গাছ। যদিও একটা টিভি কোনওমতে কেনা হয়েছে। গাড়ি কেনার স্বপ্ন ওর বাবার নেই। সামর্থও। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই ইমন শুনে এসেছে, ওর বাবা উনিশশো বাহান্ন সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তারিখে যে সব মানুষ শহীদ হয়েছিলেন তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে তাঁকে বেশ কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। সেইসময়ের একটা খবরের কাগজ বাসায় এখনও সযত্নে মা রেখে দিয়েছেন যাতে বাবার নাম ছাপা হয়েছিল। তখন বাবা ছাত্র ছিলেন। এখন তিনি সাধারণ কর্মচারী। অবসর নেওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। রাজনীতি করেননি কখনও। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক মাস ঘরছাড়া ছিলেন। কিন্তু ফিরে এসে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলে ঘোষণা করেননি। নিজের কথা বাবা কখনও বলেন না। ইমন এসব শুনেছে মায়ের কাছে।
ইমন জানে তার ওপর সবাই অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষা করছে। বাবা অবসর নেওয়ার পরই সংসারে ঝড় উঠবে। সেইসময় তার আয় খুবই জরুরি। সে যদি পাশ করতে পারত, একটা চাকরি পেত কিন্তু পাশ করলেই তো চাকরি পাওয়া যায় না। মাস্টার্স করে কত ছেলে বেকার। পিওনের চাকরির জন্যে এখন গ্র্যাজুয়েটরাও লোভীর মতো অপেক্ষা করে। তাহলে? দিলারা বলেছিল, আপনি কানাডায় চলে যাচ্ছেন না কেন?যদি সেখানে যেতে চান তাহলে আমি আমার আব্দুকে বলতে পারি।
দিলারা আজিজের বান্ধবী। বইমেলায় রোজ বেড়াতে আসে অথচ বই কেনে না। ওর ব্যাগে অনেকগুলো পাঁচশো টাকার নোট থাকে। দিলারা সুন্দরী, মোমের মতো গায়ের রং। আজিজের বেশ কয়েকজন বান্ধবী আছে, দিলারা তাদের একজন। কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, কোনও অনুষ্ঠানে আজকাল এইসব মোমরঙা সুন্দরীদের খুব দেখা যায়। তাদের মুখ, চোখ, গড়ন এবং রং যেন কোনও স্বপ্নের জাদুকরের তুলির ছোঁয়ায় তৈরি। ইমনের মা অথবা আপা, তার পাড়ার। বেশিরভাগ মেয়েদের সঙ্গে এদের একটুও মিল নেই। সেইসব মেয়েরা হয় শ্যামলা, নয় সাধারণ গৌরবর্ণ। দিলারাদের মতো টকটকে গায়ের রং তাদের নয়। মাঝেমাঝেই মনে হয় এরা স্বপ্নসুন্দরী। একটু বেশি ভাবলেই তার চোখের সামনে আর একটা ছবি তৈরি হয়ে যায়। একজন মানুষের অনেকগুলো আমের বাগান ছিল। এক-একটা জায়গায় এক-এক জাতের আম। ল্যাংড়া, হিমসাগর থেকে ফজলি। গাছগুলো ঝড় সহ্য করে, বৃষ্টিতে ভেজে, কিন্তু ফাগুনেই যে মুকুল ধরে, তা বৈশাখের শেষে খোকা-থোকা আম হয়ে ঝোলে। বাগানের মালিকের কিন্তু তাদের দিকে লক্ষ। নেই। সে জানে ওইসব আম পেতে কোনও অসুবিধে হবে না। সে সচেতন থাকে একটি ছোট্ট বাগানের জন্যে। সেখানে গাছ অল্প কিন্তু প্রতি পদে তাদের যত্ন করতে হয়। আম পাকার সময় থেকে সতর্ক হতে হয়। পাকলে তুলোর বাক্সে ভরতে হয়। বড় দামি আর দামি বলেই তাদের। জন্যে যত্নটাও বেশি। অন্য বাগানের আমেরা কাঠের বাক্সে ঢোকার সময় দূর থেকে এই দামি আমদের দেখে আর ঈর্ষান্বিত হয়। ছবিটা এইরকম।
কী ভাবছেন, একা-একা?
চমকে ফিরে তাকাল ইমন, দিলারা তার পাশে দাঁড়িয়ে।
কিছু না। লজ্জা পেল ইমন। কিছু একটা ভাবছিলেন। মেলায় যাবেন না?
নাঃ। মেলায় গেলে কষ্ট হয়। বই কিনতে পারি না।
দিলারা তাকাল। তারপর নিচু গলায় বলল, আমার জন্যে না হয় আজ কষ্ট করলেন।
অতএব হাঁটতে হল। দোয়েল চত্বর থেকে মেলার গেটের মুখে পৌঁছবার রাস্তার দু-পাশে আধুনিক গান আর আবৃত্তির মিলিত শব্দের ঝড় ওদের ওপর আছড়ে পড়ছিল। কয়েক পা হাঁটবার পর আর সহজে এগোনো যাচ্ছিল না। মানুষ আর মানুষ। প্রত্যেকেই নবীন যুবক। হয় তারা মেলায় যাচ্ছে। নয় মেলা থেকে ফিরছে। এই ভিড়ের স্রোতে মিশে এক-পা, এক-পা করে তাদের এগোতে হবে। দিলারা ইমনের একেবারে কাছে চলে এল, কত মানুষ। একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ।
ওরা এগোচ্ছিল। দু-কানে শব্দের ঝড়। হঠাৎ সামনে কয়েকজন যুবক নিজেদের মধ্যে কপট মারামারি শুরু করতেই জমাট ভিড়টা ছিটকে উঠল। দিলারাকে নিয়ে ইমন একপাশে সরে আসার চেষ্টা করছিল। সামুদ্রিক ঢেউ-এর মতো সেই ধাক্কা সামলানো মুশকিল। হঠাৎ দিলারা চিৎকার করতেই ইমন ফিরে তাকাল। একটি তরুণ সেই সময় দিলারার শরীর থেকে হাত
সরিয়ে নিচ্ছে। নিজের ঊর্ধ্বাঙ্গ দুই হাতে আড়াল করতে-করতে আর্তনাদ করে উঠেছে দিলারা। তার চারপাশে মেলা দেখতে যাওয়া মানুষ কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করছে না। সেই যুবক নির্লিপ্তের। মতো দিলারার কাছ থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ল ইমন। যুবকের শার্ট টেনে ধরে চিৎকার করল, একী করলি তুই? তোর বাসায় মা-বোন নাই? বদমাশ, ইতর! উত্তেজনায় তার গলা চিরে গিয়েছিল।
যুবকটি ফিরে তাকাল। তার চোখে নাৎসিদের চাহনি। আচমকা ঘুষি মারল সে ইমনের মুখে। ইমন পড়ে গেল ভিড়ের নিচে। এবং তারপরেই পেছনের মানুষের ঠেলায় এগিয়ে আসতে বাধ্য হল তার পাশের মানুষেরা। চেষ্টা করেও অনেকে পা সরাতে পারল না।
ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত ইমনকে যখন দিলারা তুলতে পারল তখন সেই যুবক ধারে-কাছে নেই। কিছু ছেলে এগিয়ে এল সাহায্যের হাত বাড়িয়ে। সামান্য ক্ষতি নামের একটি চায়ের স্টলে ইমনকে বয়ে লম্বামতো একটি কালো ছেলে পানি এনে দিল দিলারাকে, ভাইকে পরিষ্কার করে দেন। আপা। আমার নাম রঞ্জু। গত বছর মাস্টার্স করেছি। বেকার। এই স্টল আমার। আর কোনও ভয় নেই আপনাদের।
তার পরের সময়টা খুব স্বাভাবিকভাবে কাটল। রক্ত পরিষ্কার করা, ফার্স্ট এইড দেওয়া ইত্যাদি কাজ যখন শেষ হল তখন ইমন ঝুম মেরে বসে। তার চোখের সামনে তখন আলাদা ছবি। ছবিটাকে দেখতে-দেখতে শিউরে উঠল সে। দিলারা জিজ্ঞাসা করল, কী হল?কী হয়েছে?
সম্বিৎ ফিরে পেল ইমন। বলল, কিছু না, কিছু না।
দিলারা বলল, চলেন, আপনাকে বাসায় পৌঁছায় দিই।
ইমন তাকাল। তার মুখের এখানে-ওখানে প্লাস্টার। মুখ ফোলা। সে মাথা নাড়ল, মেলায় যাব।
মেলা? দিলারা জিজ্ঞাসা করল, পারবেন?
ইমন উঠে দাঁড়াল, অবশ্যই।
গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই ইমনের মনে হল তার সব যন্ত্রণা দূর হয়ে গেল। চারপাশে বই আর বই। বাংলা শব্দের বাগান। তার মা তাকে শৈশবে অ আ ই ঈ উচ্চারণ করতে শিখিয়েছিলেন। বাবা তখন মুক্তিযুদ্ধে নিরুদ্দেশ। সেই বর্ণ দিয়ে তৈরি শব্দের মিছিল বই-এর পাতায়-পাতায়। দিলারা জিজ্ঞাসা করল, কী বই কিনবেন?
ইমন হাসল, কিনব না, দেখব!
ওরা স্টলগুলোর সামনে দিয়ে হাঁটছিল। অনেকেই ইমনের বদলে যাওয়া চেহারাটা অবাক হয়ে দেখছিল। হঠাৎ দিলারা জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা, আমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনলেন কেন?
ইমন বলল, কী জানি!
দিলারা বলল, আপনার বন্ধু আজিজ থাকলে চুপচাপ থাকত। আমাকে বাঁচাতে সে আপনার মতো আহত হতে চাইত না, তাতে অন্যান্য বান্ধবীদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হত।
আপনি সব জানেন?
জানি। ওর মধ্যে অন্য গুণ আছে। ও ভালো কথা বলতে পারে। তা ছাড়া–। দিলারা চুপ করে গেল।
তা ছাড়া–?
আমার কোনও বন্ধু নেই। স্কুলে পড়ার সময় আব্বা আমাকে প্রায় বন্দি করে রাখত। আম্মা বলত শরীরে রোদ লাগালে আমি নষ্ট হয়ে যাব। তাই কারও সঙ্গে মিশতাম না। একাত্তর সালের পর। যারা বড়লোক হয়েছে আব্বা তাদের সহ্য করতে পারে না। বলে তাদের আভিজাত্য নেই। কলেজে ওঠার পর আবিষ্কার করলাম, আমি বাংলাদেশের মেয়ে অথচ আর পাঁচটা মেয়ের মতো নই। এইসময় আজিজ আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। সে সৎ নয় তবু তো বন্ধু। দিলারা বলল।
হঠাৎ চিৎকার উঠল। দূরের একটি স্টলের সামনে উন্মত্ত যুবকদের ভিড়। প্রতিরোধের চেষ্টা হতেই স্টলটা লুট হয়ে গেল। ইমনের মুখ থেকে বেরিয়ে এল, হায় আল্লা! তারপরেই সে এগিয়ে যাচ্ছিল স্টলটির দিকে। দিলারা তাকে আটকাল, না, প্লিজ যাবেন না। ওরা অতজন, আপনি। একা। কিছুই করতে পারবেন না।
কিন্তু দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে দেখব? ওরা বাংলাভাষায় লেখা বই লুট করছে! ইমন পাগল হয়ে গেল।
একটু শান্ত হন। পুলিশ আছে, আশেপাশে অনেক মানুষ আছে–।
কিন্তু কেউ আসছেনা। দেখুন, স্টলটার বাতি নিভে গেল, সাইনবোর্ড ভেঙে পড়ল—
ততক্ষণে বই নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে হানাদাররা। একটু পরেই সব শান্ত, যেমনটি আগে ছিল।
ইমন বলল, আমার এখানে দাঁড়াতে ভালো লাগছে না। আমি বাইরে যাব।
বাইরে তখন সন্ধ্যা নামছে। বাতাসে হিমের ছোঁয়া। কদিন আগের বৃষ্টি শীতকে আবার টেনে এনেছে। সেই সময় তারা শুনতে পেল কেউ অথবা কারা যেন শহীদ বেদির লাল সূর্যটাকে পুড়িয়ে দিয়েছে।
ইমন বলল, অসম্ভব। হতে পারে না। মায়ের মুখে শুনেছি আমাদের পূর্বপুরুষরা ভাষা আন্দোলন করলে আজ আমরা স্বাধীন হতাম না। তাকে অপমান কেউ করতে পারে না।
দিলারা বলল, আজ রাত বারোটায় একুশে ফেব্রুয়ারি। আমি কখনও সেইসময় যাইনি। এখন যাবেন?
ইমন বিস্মিত, সেকি? আপনি কখনও যাননি?
না! মাথা নাড়ল দিলারা, আব্বা বলে মেয়েরা নাকি ওই সময় নিরাপদ নয়। তাই আমার যাওয়া নিষেধ।
আপনার বাবা ভাষা আন্দোলন করেননি?
না। তিনি তখন মুসলিম লিগ করতেন। গ্রাম থেকে শহরে এসেছিলেন পঞ্চাশ সালে।
একাত্তরে, স্বাধীনতা আন্দোলনে–?
আমি জানি না। তখন আমি জন্মাইনি।
ওরা হাঁটছিল। চারধার থমথমে। তবু কিন্তু মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে শহীদ বেদির দিকে।
ইমন বলল, আজিজ থাকলে আমার ভাই-এর রক্তে রাঙানো গানটা গাইত। চমৎকার গায় ও।
হ্যাঁ। কিন্তু সে আজ পর্যন্ত শহীদ মিনারে ফুল দেয়নি। হাততালি পাওয়ার জন্যে গায়।
আপনি ওর ওপর রেগে আছেন।
দিলারা কিছু বলল না।
অনেক মানুষের ভিড় দূর থেকে নজরে এল। সবাই চুপচাপ, যেন মৃত মানুষের সমাধির সামনে সমবেত হয়েছেন সবাই। এইসময় দিলারা চিক্কার করে উঠল। অবিকল সেই চিৎকার যা সে ভিড়ের মধ্যে করছিল। কিন্তু এখন তো তারা হাঁটছে একদম ফাঁকায়। ওর দৃষ্টি অনুসরণ করতেই। দেওয়ালটার দিকে নজর গেল ইমনের। দেওয়ালে বাঙালির বুকের রক্ত দিয়ে লেখা যে সব লাইন ছড়ানো ছিল, তার ওপর কেউ বা কারা রঙের প্রলেপ দিয়ে মোছার চেষ্টা করেছে। রবীন্দ্রনাথ নজরুল থেকে শুরু করে আজকের কবির কলম থেকে উঠে আসা শ্রদ্ধাঞ্জলিকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে গেছে ঘাতকেরা।
দিলারা ডুকরে উঠল, দেখেছেন, দেখেছেন–আঃ!
ইমন কথা বলতে পারছিল না। তার সমস্ত শরীরের রক্ত যেন লহমায় জমে গেছে। তার চোখের সামনে দেওয়াল নেই, কোনও লেখা নেই। ধীরে-ধীরে অন্য একটা ছবি তৈরি হয়ে উঠছে। শত শত মুখোশ-পরা মানুষ একটা রমণীকে ঘিরে ধরে বলাকার করছে। রমণীটি নির্বাক ছিল এতক্ষণ। চূড়ান্ত অত্যাচারের সময় সেই নারকীয় উল্লাসকে ছাপিয়ে হঠাৎ তিনি কেঁদে উঠলেন, ওরে, আমি তোদের মা, তোদের মা। তাঁর মুখ দেখা গেল। সেই মুখ ইমনের নিজের মায়ের অথবা দিলারার এবং শেষপর্যন্ত মিলেমিশে একুশে ফেব্রুয়ারির।
সেই কল্পিত ছবির দিকে তিরের মতো ছুটে গেল বরকত-সালাম-রফিকের সন্তান ইমন, দু-হাত দু-পাশে ছড়িয়ে। নিজের জন্যে, নিজেদের জন্যে।