প্রথম খণ্ড (শ্রদ্ধেয় ফণিভূষণ আচার্যকে)
1 of 2

ফুলে ফুলে ভ্রমরা

ফুলে ফুলে ভ্রমরা

 আমি একজন বিবাহিত মানুষ। ধরা যাক দশ-পনেরো বছর ধরে আমি নিষ্ঠার সঙ্গে আমার সাংসারিক কর্তব্য পালন করে চলেছি। আমি জীবনে মোটামুটি সুপ্রতিষ্ঠিত। আমার একটি ছেলে, একটি মেয়ে। আমার পিতা ও মাতা দুজনেই জীবিত। আমার পিতা ছিলেন আদর্শবান শিক্ষক। আমরা পঞ্চাশ কি ষাট বছর ধরে একই পাড়ায় বাস করছি। আমাদের পরিবারের যথেষ্ট সুনাম আছে। প্রতিবেশীরা আমাদের শ্রদ্ধা করে। আমাদের বংশের একটা নিজস্ব ধারা তৈরি হয়েছে। তৈরি হয়েছে একটি মূল্যবোধ। অর্থ নয়, আমাদের একটা সংস্কৃতি আছে। ভারতীয় প্রাচীন আদর্শের ওপর যা প্রতিষ্ঠিত।

এইরকম একটা পরিবারের ছেলে হয়ে হঠাৎ যদি এমন হয়, আমি আমার বন্ধুপত্নীকে দেখে আত্মহারা হয়ে গেলাম। ঘনঘন দীর্ঘশ্বাস। দেহের উত্তাপ বেড়ে গেল। মনে হতে লাগল, ‘জীবন আমার বিফলে গেল লাগিল না কোনও কাজে।’ রাতে সবাই ভোঁস-ভোঁস ঘুমোচ্ছে, আমি ড্যাবাড্যাবা চোখ খুলে শুয়ে আছি। দেখতে-দেখতে চোখ গর্তে ঢুকে গেল। কাকতাড়ুয়ার মতো চেহারা হয়ে গেল। কেউ বলে সুগারটা একবার মাপাও। কেউ বলে প্রেসারটা একবার চেক করাও। কেউ বলে ইসিজি। আমি সাহস করে বলতে পারি না, আমার কী হয়েছে! আমাকে রাধা ব্যাধিতে ধরেছে। মন আনচান। চোখ বুজলেই, চোখের সামনে বন্ধুপত্নী। আমার স্ত্রী অসুন্দরী নয়। আমাকে ভালোবাসে কিনা জানি না, তবে অবহেলা করে না। তবু আমার কী মতিভ্রম। শেষে একদিন দুপুরে দামি একটা শাড়ির প্যাকেট বগলে চলে গেলুম বন্ধুর ফ্ল্যাটে। জানতুম ওই সময়ে আমার বন্ধু থাকবে না। কলিংবেল টিপতেই দরজা খুলে সামনে এসে দাঁড়াল সে। পিঠে ছড়িয়ে আছে একরাশ এলোচুল। ঘরোয়া চালে পরা হালকা রঙের শাড়ি। খাটো হাতা ব্লাউজ গড়িয়ে নেমে এসেছে শালুক ফুলের কাণ্ডের মতো সুললিত গৌর দুটি হাত। সে অবাক হয়ে বলবে, ‘একী, আপনি, এই অসময়ে! ও তো অফিসে!’

আমি তার পাশ দিয়ে ভেতরে যেতে-যেতে বলব, ‘তাতে কী হয়েছে? তুমি তো আছ। আমার দরকার তোমার সঙ্গে। তাই তো আমি এই সময়টা বেছে নিয়েছি। তুমি আমাকে পাগল করেছ গোপা।’

গোপা দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে রইল। আমি একটা উল্লুকের মতো সোফায় বসে আছি। আমার পাশে সিল্কহাউসের সুদৃশ্য প্যাকেটে মোড়া শাড়ি। গোপা দরজার কাছ থেকে ভুরু কোঁচকানো মুখে বললে, ‘আপনার মতলবটা কি বলুন তো?’

‘আমি তোমাকে ভালোবাসি গোপা। এই দ্যাখো তোমার জন্যে ফাইন সিল্কের শাড়ি এনেছি।’

‘আমার পায়ে কী দেখেছেন?’

‘স্লিপার গোপা। সুন্দর পায়ে সুন্দর স্লিপার। যদি পটাপট মারো, আমি মনে করব প্রেমের দান।’

‘আপনার ভীমরতি হয়েছে বিপুলবাবু। আপনি দয়া করে বেরিয়ে যান, তা না হলে চিৎকার করে লোক জড়ো করব। তারপর তারা যা পারেন, তাই করবে। আমি এক থেকে তিন গুনব। এক, দুই…।

বর্ষার ব্যাঙের মতো তড়াং করে এক লাফ মেরে আমি সোফা ছেড়ে লাফিয়ে উঠব। তিন বলার আগেই ঘরের বাইরে। সেই কথায় আছে, জাতে মাতাল, কিন্তু তালে ঠিক। ওঠার সময় সাতশো টাকা দামের শাড়ির প্যাকেটটা বগলে নিতে ভুলিনি। গোপা দরজা বন্ধ করতে-করতে বলবে, ‘অসভ্য, জানোয়ার।’

কান লাল করে আমি পথে নেমে আসব। উদ্দেশ্যহীন বিভ্রান্তের মতো হাঁটতে-হাঁটতে আমি হয়তো একটা পার্ক পেয়ে যাব। এই শহরের কোনও একটি পার্ক, যা এখনও অক্ষত আছে। সেই পার্কের একটি গাছের ছায়ায় বসামাত্রই ফিরে আসবে আমার আত্মসম্মান বোধ। আসবে ভয়। গোপা নিশ্চয় আমার বন্ধুকে বলবে। মুখে- মুখে রাষ্ট্র হয়ে যাবে উজবুকের মতো আমার এই আচরণের কথা। প্রতিবেশীর উনুনের ধোঁয়ার মতো আমার এই ভীমরতির সংবাদ ঢুকে পড়বে আমার বাড়িতেও। সকলেই আমার দিকে ঘৃণার চোখে তাকাবে। আমার স্ত্রী আমার কাছ থেকে সরিয়ে নেবে ছেলেমেয়েকে, যেন আমি কোনও ছোঁয়াচে অসুখে ভুগছি।

প্রকৃতই তাই, এও একধরনের অসুখ। প্রায় দুরারোগ্য। এ হল মনের অসুখ। আমার স্ত্রী, আমার বন্ধুর স্ত্রীতে তফাত কোথায়! দুজনেই মহিলা। প্রায় সমান উচ্চতা, ওজন, গাত্রবর্ণ, ভাইট্যাল স্ট্যাটিসটিকস। দুজনেই সমান শিক্ষিতা। তাহলে আমার পাগলামির অর্থটা কী? নি:সন্দেহে এ প্রেম নয়। প্রেম কৈশোরের পবিত্রতা। প্রেম যৌবনের শক্তি, যৌবনের গতি, যৌবনের স্বপ্ন। বিবাহ হল সংসারে স্থিতি। সংসার হল জীবনের দুর্গ। যে দুর্গে অবস্থান করে মানুষ এই কামনা-বাসনার পৃথিবীর সঙ্গে লড়াই করে। বিবাহিত মানুষ যখন পরনারীর দিকে হাত বাড়ায়, সেটা প্রেম নয় লাম্পট্য। ইংরেজ লেখক কলিন উইলসন এই প্রসঙ্গে যা বলেছেন, ভেবে দেখা যেতে পারে, ‘সেক্স ইজ লাইক রাইডিং এ বাইসাইকেল’। যে একবার সাইকেল চাপতে শিখেছে, সাইকেল দেখলেই তার মন উসখুস করে, চেপে বসতে ইচ্ছে করে। ওটা আর কিছুই নয়—অভ্যাস। যে সাইকেল চাপেনি, চাপতে শেখেনি, সাইকেল দেখলে তার কিছুই হবে না।

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের প্রখর অবলোকন ক্ষমতা ছিল। কোনও এক উৎসবে, দক্ষিণেশ্বরে ভক্ত সমাগম হয়েছে। সপার্ষদ ঠাকুর বসে আছেন। ঈশ্বর প্রসঙ্গ হচ্ছে। ঠাকুর পরমানন্দে মাতোয়ারা। হঠাৎ একটি লোককে দেখিয়ে ঠাকুর ভক্তদের বললেন, ‘দ্যাখ, দ্যাখ, মেয়েদের দিকে কেমন আড়ে-আড়ে তাকাচ্ছে। বিবাহিত কিনা, তাই অমন তাকানোর ছিরি।’ মেয়েরা পুরুষের এই দৃষ্টির ভাষা সহজেই বুঝতে পারে। নিরুচ্চার একটি সংকেত থাকে। এই দৃষ্টি মনে-মনে নারীকে উলঙ্গ করে। দূর থেকেও ভাবে সম্ভোগ করে। মেয়েরা বলে, ‘লোকটার নজর মোটেই ভালো নয়। এমন মানুষের কাছ থেকে মেয়েরা সরে যেতে পারলেই স্বস্তি পায়। প্রেমিকের চোখ আর লম্পটের চোখে অনেক তফাত। লম্পটের চোখে লোলুপতা, প্রেমিকের চোখে উপাসনা। প্রেম আর পূজায় কোনও তফাত নেই। গীতগোবিন্দে জয়দেব শেষে কৃষ্ণকে দিয়ে বলালেন, ‘দেহি পদপল্লবমুদারম’। প্রবাদ বলে, স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ নিজে এসে চরণটি লিখে গিয়েছিলেন। কবি শুরু করেছিলেন এইভাবে—

স্মরগরলখণ্ডনং মম শিরসি মণ্ডনং

কলম থেমে গেল। কবির মনে ভীষণসংশয়, ‘কৃষ্ণ চাহে পাদপদ্ম মস্তকে ধরিতে। কেমনে লিখিব ইহা বিস্ময় এই চিতে।’ পুথি গুটিয়ে রেখে, কবি উঠে গেলেন গঙ্গাস্নানে। ভাবতে লাগলেন, তা কেমন করে হয়, কৃষ্ণ কেমন করে বলবেন, রাধা আমি তোমার পা দুটি আমার মস্তকে ধারণ করতে চাই। কবি ভাবছেন আর স্নান করছেন, এদিকে শ্রীকৃষ্ণ জয়দেবের রূপ ধারণ করে কবির অভিপ্রেত পদটি লিখে শ্লোকের পাদপূরণ করে দিয়ে গেলেন। স্নান সেরে এসে পুথি খুলে দেখলেন লেখা রয়েছে।

স্মরগরলখণ্ডনং মন শিরসি মন্ডনং

দেহিপদপল্লবমুদারম।

জয়দেবের পক্ষে তখন সহজ হল পরের দুটি পদ লেখা,

জ্বলতি ময়ি দারুণো মদন-কদনারুণো

হরতি তদুপাহিত-বিকারম!!

শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, ‘রাধে! কাম আর কামনায় আমার ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে। তোমার থেকে তোমার শরীর আমার কাছে বড় হয়ে উঠছে। তোমার চরণদুটি আমার মাথায় রাখো। আমার বিকার দূর হোক। কামনার বদলে আসুক উপাসনার ভাব!’ শাক্তের চণ্ডীও সেই একই কথা বলেছেন, স্ত্রীয়া: সমস্তা সকলা জগৎসু। বিকারগ্রস্ত না হলে কে আর সুখে থাকতে ভূতের কিল খেতে যায়।

ইঙ্গমার বার্গম্যানের সুন্দর একটি ছবি দেখেছিলুম। বেশ কিছুকাল আগে। পুরাতত্বের এক প্রবীণ অধ্যাপক আর তাঁর যুবতী স্ত্রী। অধ্যাপকের কাছে গবেষণা করতে এলেন এক যুবক ছাত্র। অধ্যাপক তাঁর গবেষণাতেই ব্যস্ত। স্ত্রীর সঙ্গে প্রেম করবার সময় নেই তাঁর। গবেষক ছাত্র গবেষণার অবসরে অধ্যাপকের স্ত্রী সঙ্গে বেড়াতে যায়, গল্প করে। একদিন দুজনে গল্প করতে-করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ল। শেষে অধ্যাপক-পত্নী জিগ্যেস করল, ‘এরপর কী হবে? সব কথাই তো ফুরিয়ে গেল।’ ছাত্র উদাসমুখে বললে, ‘সত্যিই তো কী হবে?’ মহিলা অল্পক্ষণ চুপ করে থেকে বললে, ‘লেট আস গো টু বেড, অ্যান্ড, সি হোয়াট হ্যাপনস নেকস্ট।’

চলো বিছানায় গিয়ে দেখি কী হয়! দুজনে তখন লেপের তলায় চলে গেল, যা হওয়ার তা হয়েও গেল। ছাত্রটি উদাসপ্রকৃতির আত্মভোলা হলেও, মেয়েটি তার আকর্ষণে পাগল হয়ে গেল। অধ্যাপক দুজনের চালচলন দেখে ব্যাপারটা অনুমান করে নিতে পারলেন। কিছু বললেন না, কারণ তিনি এমন এক জগতের মানুষ যে জগতে একটি নারীকে নিয়ে ঈর্ষার কোনও অবকাশ নেই। তা ছাড়া স্বামী-স্ত্রীর বয়সের তফাতের জন্যে, স্ত্রীর প্রতি অধ্যাপকের পিতাসুলভ একটা স্নেহ ছিল যা কামের বিপরীত। শেষে এমন একটা সময় এল, যখন ছাত্রটি তার অপরাধবোধ নিয়ে অধ্যাপকের সামনে দাঁড়াবার সাহস হারাল। স্থির করল সে চলে যাবে। বিদায়ের ক্ষণ উপস্থিত। ছাত্র অধ্যাপকের সম্মতি নিয়ে চলে যাওয়ার জন্যে বাগানের পথ ধরে হাঁটছে। অধ্যাপকের স্ত্রী তার অনুগামী। ছেলেটি অবশ্য ফিরেও তাকাচ্ছে না। হনহন করে হাঁটছে। মেয়েটি তাকে ডাকছে। বলছে, দাঁড়াও, আমিও তোমার সঙ্গে যাব। আমাকে তোমার সঙ্গে নাও। ছেলেটির দৃকপাত নেই। দুজনের ব্যবধান বাড়ছে। একসময় ছেলেটি অদৃশ্য হয়ে গেল পথের বাঁকে। প্রত্যাখানের অপমানে মেয়েটি কান্নায় ভেঙে পড়ল। এখন সে কী করবে। কোন মুখে ফিরে গিয়ে দাঁড়াবে তার শান্ত নির্বিরোধী স্বামীর সামনে। জলভরা চোখে সে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখল পেছনে দাঁড়িয়ে অধ্যাপক। মুখে স্মিত হাসি। স্ত্রীর দিকে প্রসারিত দুটি হাত। মেয়েটি ছুটে এসে অধ্যাপকের বুকে মুখ লুকাল।

যে দেশের বাণী, ‘ওয়ান ইজ নট এনাফ।’ সেই ইওরোপের ছবিতে একী ভাব। এ তো বিবাহিত সম্পর্কের জয়গান। হিন্দুদের প্রাচীন বিশ্বাস যার সঙ্গে যার গাঁটছড়া বেঁধে দেওয়া হল, সেই বন্ধন হয়ে গেল জন্মের বন্ধন।

তাইতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে, কারণ জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ এই তিনটির ওপর মানুষের কোনও হাত নেই। তখন পাগলা মনটারে তুই বাঁধ। কেন রে তুই যেথায় সেথায় পড়িস প্রেমের ফাঁদ। যে চরিত্রটিকে এতক্ষণ পার্কে বসিয়ে রেখেছি, তার কাছে ফিরে যাই। তার অবস্থা সেই দ্রাক্ষাফলের নাগাল না পাওয়া শৃগালটির মতো। সে গুটিগুটি ফিরে চলল বাড়ির দিকে, যেখানে তার স্ত্রী আছে। আছে ছেলেমেয়েরা। তারা বাবা, বাবা, বলে ছুটে এল! স্ত্রী উদ্বিগ্ন মুখে জিগ্যেস করল, ‘কী, তুমি এত আগে অফিস থেকে ফিরে এলে? শরীর ঠিক আছে তো?’

চরিত্রটি সেই মুহূর্তে উপলব্ধি করল, ‘ম্যারেড ব্লিস’ কাকে বলে। শাড়ির প্যাকেটটি সে তুলে দিল স্ত্রীর হাতে।

অপ্রস্তুত মহিলা প্রশ্ন করল, ‘হঠাৎ!’

‘ইচ্ছে হল। পুজো ছাড়া তোমাকে তো তেমন কিছু দেওয়া হয় না।’

মহিলা প্যাকেটটি খুলে বললে, ‘উ: কী সুন্দর! নিশ্চয় অনেক দাম।’

‘দামের প্রশ্ন ছাড়ো। তোমার পছন্দ কিনা বলো?’

‘বাবা, এমন শাড়ি কার না পছন্দ হবে।’

প্রিয়জনের আনন্দে যে নিজেরও আনন্দ হয়, চরিত্রটি ঠেকে শিখল।

কালিদাসের কথা মনে পড়ল, ‘গৃহিণী সচিব: সখী মিথ:। প্রিয়শিষ্যা ললিতে কলাবিধৌ।। মহানাটকে পতি-পত্নীর সম্বন্ধ বর্ণনা আরও সুন্দর, ‘কার্যেষু মন্ত্রী করণেষু দাসী। ধর্মেষু পত্নী ক্ষময়া ধরিত্রী। স্নেহেষু মাতা শয়নেষু রামা। রঙ্গে সখী লক্ষণ। সা প্রিয়া মে।।’ এমন মধুর একটা ব্যাপার নিতান্ত ব্যাধিগ্রস্ত না হলে তছনছ করা যায় না। করে সুখও হয় না।

মনু এবং কুল্লুক দুজনেই এক কথা বলে গেছেন। মনু বলেছেন তাঁর সংহিতায়, ‘দেবদত্তাং পতির্ভাযাং বিন্দেত নেচ্ছয়াত্নন:।।’ আর কুল্লুক বলেছেন, ‘যা দেবৈর্দত্তা ভার্যা তাং পতির্লভতে, ন তু স্বেচ্ছয়া।’ অর্থাৎ ‘পুরুষ স্বেচ্ছায় ভার্যা লাভ করে না, দেবতার ইচ্ছায় লাভ করে।’ যে কথা ইংরেজরাও বলে থাকেন, ‘ম্যারেজেস আর মেড ইন হেভেন।’

মনু বলেছেন, পুরুষের একজায়াই সাধারণ নিয়ম। তবে অসাধারণ ‘বিশেষ’ স্থলে দ্বিতীয় জায়া গ্রহণে মনুর অনুমতি আছে। কারণটা কী, ‘যে স্ত্রী মদ্যপা, দুষ্টচরিত্রা, পতিপ্রতিকুলা, দুষ্টব্যাধিযুক্ত, হিংসা ও সর্বদা ধনক্ষয়কারিণী—সে থাকা সত্বেও দ্বিতীয় দার গ্রহণ অবিধেয় নয়।’ স্ত্রী বন্ধ্যা হলে আট বছর অপেক্ষার পর, মৃতবৎসা হলে দশ বছর, কেবল কন্যার জননী হলে এগারো বছর অপেক্ষার পর পুরুষ আবার বিবাহ করতে পারে। কিন্তু স্ত্রী যদি অপ্রিয়বাদিনী হয় তবে সদ্য-সদ্য পুনর্বিবাহ অপ্রশস্ত নয়। মনুর নির্দেশ শেষোক্ত ক্ষেত্রে এইরকম, ‘মাতা যস্য গৃহে নাস্তি ভার্যা চ প্রিয়বাদিনী। অরণ্যং তেন গন্তব্যং যথারণ্যং তথা গৃহম।।’ যার গৃহে মাতা নেই, আর ভার্যা অপ্রিয়বাদিনী, তার অরণ্যবাসই শ্রেয়—কারণ তার গৃহই তো অরণ্যতুল্য।

মনু ক্ষেত্র বিশেষে পুনরায় দার গ্রহণের কথা বলেছেন, ব্যাভিচারী হওয়ার পরামর্শ দেননি। বলেননি পরস্ত্রীর সঙ্গে অ্যাডভেঞ্চার করো। গিয়ে বলো, ‘লেট আস গো টু বেড অ্যান্ড সি হোয়াট হ্যাপনস।’ একটা কথা আছে—পরক্ষেত্রে বীজবপন। যার ইংরেজি হল সোয়িং অফ ওয়ালইড ওটস। ফ্রি লাভ। যত্রতত্র গেলুম। কসরত করে একজনকে পাকড়ালুম। বিছানায় লড়াই করে একটা দংশিত মন নিয়ে ফিরে এলুম সুস্থ স্বাভাবিক সমাজজীবনে। অবাধ প্রেম। পশ্চিম যার সমর্থক। অথচ সেই দেশেরই এক পন্ডিত বলেছেন, লাস্ট ক্যান বি ফ্রি বাট নেভার লাভ, ফর লাভ ইমপ্লাইজ মিউচ্যুয়াল অবলিগেশন। লালসা অবারিত হতে পারে, মুক্ত হতে পারে। যেখানে কোনও দায়দায়িত্ব নেই পরক্ষেত্রে বীজবপন ছাড়া। প্রকৃত প্রেম কিন্তু অবারিত নয়, প্রেমের বন্ধনে উভয়ক্ষেত্রেরই অনেক দায়দায়িত্ব। এদেশে আমরা অনেক আগেই সেই উপলব্ধিতে উপনীত হয়েছি, ‘অতএব কাম প্রেমে বহুত অন্তর। এক অন্ধ তম: অন্য উজ্জ্বল ভাস্কর।।’ এই ব্যাপারে আমাদের বিশ্বত্রাস হিটলারও অত্যন্ত গোঁড়া ছিলেন। আধুনিক কামবিকারের শ্বাসরোধকারী সুগন্ধ থেকে জীবনকে মুক্ত করতে হবে।

শাস্ত্রের কড়া বিধান, সামাজিক অনুশাসন, এমনকী কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা থাকা সত্বেও মানুষের স্বাভাবিক কতকগুলি বিকার কালও ছিল, আজও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। মনু যে শাস্তির বিধান দিয়ে গেছেন এই প্রসঙ্গে শুনিয়ে রাখি—’যে নারী দর্পভরে নিজ পতি লঙ্ঘন করিয়া পরপুরুষে সঙ্গতা হয়—রাজা সর্বসমক্ষে তাকে কুকুর দ্বারা দংশন করাইবেন, আর পরস্ত্রীগামী পুরুষকে রাজা অগ্নিতপ্ত লৌহশয্যায় শয়ন করাইয়া দগ্ধ করাইবেন—যাবৎ সে পাপিষ্ঠ, ভস্মসাৎ না হয়, তাবৎ অগ্নিতে ইন্ধন যোগ করিবেন।’

সামান্য একটু স্ত্রী কি পুরুষসঙ্গের জন্যে এত ক্লেশ মনুর কালে কে স্বীকার করতে রাজি ছিলেন জানি না। হয়তো ছিলেন নয় তো এমন আইন, এমন শাস্তির বিধান থাকবে কেন? ইংরেজিতে একটা শব্দ আছে ‘পিপিং টমস’। মেয়েদের নগ্নতা যেসব পুরুষ হাঁ করে তাকিয়ে দেখতে ভালোবাসে। আনন্দ পায়। কোনও নগ্ন মহিলা পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে তাকিয়ে দেখবে না এমন পুরুষ কোটিতে গুটিক মিলবে। শিক্ষা ও রুচির ব্রেক কষে যদি কেউ তার ভ্রাম্যমান চোখদুটিকে ভূমিলগ্নে রাখে, পরে মনে-মনে তার একটা আপশোষ থেকেই যাবে, আহা। কী সুযোগ হারালাম। সভ্য মানুষের জন্যে আজকাল মেয়েদের নগ্ন ছবি সম্বলিত বিলিতি ম্যাগাজিন পাওয়া যায়। যাঁরা নীতিবাগীশ অনেকের সামনে সেই সব ম্যাগাজিন নাড়াচাড়া করতে চাইবেন না, কারণ লজ্জা। লোকে কী ভাববে। কিন্তু নির্জন ঘরে, লোকচক্ষুর অন্তরালে বেশ আয়েস করেই হয় তো দেখবেন, আর কারুর পায়ের শব্দ পেলেই বিছানার তলায় ঢুকিয়ে দেবেন; কারণ কোনও মানুষই সাহস করে তাঁর চারিত্রিক দুর্বলতা প্রকাশ করতে চাইবে না। নিজের ভাবমূর্তিকে মলিন হতে দেবে না। অথচ মনস্তাত্বিকেরা বলেছেন, সব মানুষই ‘পিপিং টম’। সেই অর্থে সব মানুষই ‘পারভারটেড’। পশু আর মানুষে এই তফাত। পশুর পালিশ নেই। মানুষের চরিত্রে শিক্ষা, সংস্কৃতি, দেশাচার, লোকাচারের পালিশ থাকায় সে অবদমনে অভ্যস্ত। সভ্য মানুষ ধরা পড়ে যাওয়ার ভয় না থাকলে চরিত্র হারাতে রাজি আছে।

সমর সেন তাঁর ‘বাবু বৃত্তান্তে’ বাঙালি-চরিত্রের বর্ণনা দিয়েছেন, ‘আরও একটা ব্যাপার মনে আছে। উত্তর দিকে অসচ্ছল ব্রাহ্মণ পরিবারের একটি মেয়েকে দেখবার জন্য সন্ধেবেলায় আমাদের চারতলার নেড়া ছাদে ভিড় হত। মেয়েটির নাম, ইতি। পাকা সোনার মতো রং, দেহের গড়ন দেখার মতো, বিশেষ করে সাঁঝের বেলায় গা ধোওয়ার পর যখন শাড়ি মেলে দিতে আসত।’ আরও একটি অভিজ্ঞতার কথা তিনি লিখেছেন। সেই দৃশ্যটি দেখা যেত ওই বাড়িরই পশ্চিম দিকে। পশ্চিম দিকের বাড়িতে তেতলা ঘরে রাত্রে নীল আবছা আলোয় একজন অ্যাটর্নি তাঁর নধর স্ত্রীর সঙ্গে ভারতচন্দ্রীয় রতিরঙ্গে মত্ত হতেন, বড়রা বলত, রোলিং স্টোন গ্যাদারস নো মস।’ টলস্টয় বলেছেন, যারা কায়িক পরিশ্রম করে, যেমন শ্রমিক, সৈনিক, পেশাদার খেলোয়াড়, তারা ‘সেকস’ নিয়ে আদিখ্যেতা করে না। কারণ তাদের অত মাথা ঘামাবার সময় নেই। তাদের যৌনজীবন অতি স্বাভাবিক। একজন কৃষক সপ্তাহে একবার তার স্ত্রীতে উপগত হয়, আর বছরে একটি করে সন্তান হল তার পুরস্কার। এই স্বাভাবিক আচরণ থেকে বিচ্যুত হয়ে যে পুরুষ নিজের স্ত্রীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে অন্য নারীর কাছে যায় সে বিকারগ্রস্ত। আর সেইটাই তার জীবনের ‘পারভারসান’। বুদ্ধিজীবী মানুষের জীবনে ‘সেকসের’ চেয়েও ‘পারভারসান’ বড়। মহাকবি গেটে বা গয়েথে চুয়ান্ন বছর বয়েসে খ্রিস্টিন ভালপিয়াসকে বলেছিলেন, তোমার ব্যবহৃত একজোড়া চটি আমাকে দাও। মাঝে মাঝে আমি সেই চটি জোড়া আমার বুকের কাছে চেপে ধরব। টেলিভিশানে তারকা হিসাবে মারঘানিতা লাস্কির যখন খুব নাম হল তখন তাঁর কাছে গাদা গাদা চিঠিতে অনুরোধ আসতে লাগল, আমাকে আপনার ব্যবহৃত ময়লা একটি অন্তর্বাস পাঠান। যৌনবিকার পুরুষদের মধ্যেই বেশি।

উচ্চপদস্থ এক সরকারি অফিসারের কথা আমি বলতে পারি। সংসারে তার সুন্দরী স্ত্রী ছিল, পুত্র কন্যা ছিল। তাঁর পকেটে একটা ডায়েরি থাকত। ডায়েরিতে বন্ধুদের টেলিফোন নম্বর। বেলা দুটোর সময় এক একদিন এক এক বন্ধুকে ফোন করে তার স্ত্রীর সঙ্গে রসালাপ করতেন। সেই সময় তাঁর ঘরের বাইরে জ্বলত লাল আলো। আর এক উচ্চপদস্থ মধ্যবয়সি ভদ্রলোককে আমি জানতুম, যাঁর সমস্ত কাজ শুরু হত সন্ধে ছ’টার পর। অফিসের প্রায় অধিকাংশ বাবুই তখন গৃহমুখী। সেই শিক্ষিত সংসারী, দায়িত্বশীল ভদ্রলোক তখন তাঁর স্টেনোগ্রাফার মহিলাটিকে নিয়ে চেম্বারের দরজা বন্ধ করে দেশের দশের কাজ করতেন। ভদ্রলোকের অর্ডারলি বসে থাকত বাইরের টুলে। মাঝে-মাঝে সে বেচারা কাজের নমুনা দেখে অবাক হয়ে যেত। ঘরে অনেক চেয়ার থাকা সত্বেও দিদিমণি বসে আছে সায়েবের কোলে। আর মাঝে-মাঝে গলা দিয়ে একটু খুঁতখুঁত একটা শব্দ বেরোচ্ছে। সে বেচারা জানত না দেশের কাজ কাকে বলে। সেই মহিলাটি হয়তো প্রমোশনের আশায় ওই ভাবে সায়েবের ডিকটেশান নিতে বাধ্য হতেন, খাতায় নয় সারা শরীরে। ওই সময়ে কলেজে পড়া মেয়ের ফোন এলে অপত্য স্নেহ একেবারে উতলে উঠত, ‘বলো মামণি। মাম্মি কী করছে।’ তাঁর কাজে মুগ্ধ হয়ে সরকার তাঁকে অন্যত্র বদলি করে দিলেন। তখন সেই স্টেনো মহিলা বললেন, ‘বুড়োভাম। শয়তান।’ সেই মহিলা এখন সুস্থ সংসারী। তাঁর স্বামী হয়তো জানেনই না অতীতের সেই সব ঘটনা। এদেশও ক্রমশ: বিদেশের মতো হতে চলেছে। সেখানে বিয়ের আগে বরবধূর চালচর্যার খবর নেওয়াকে অসভ্যতা বলে মনে করা হয়। অভদ্রোচিত, ইজ কনসিডার্ড ব্যাড ফর্ম। আর এক জাঁদরেলকে জানতুম। শিকারী। বন্দুক নিয়ে বাঘ শিকার নয়। পরের বউ শিকারই ছিল তাঁর খেলা। বহু সংসার তিনি ভেঙেছেন। রয়্যাল বেঙ্গলের মতো মুখ। লম্পটের চোখ যেমন হয়। গর্তে ঢোকা। চারপাশে কালো রিং। ম্যাচো। তিনি যে অফিসে ডান্ডা ঘোরাতেন তার নীচের তলায় একটা ইনফরমেশান অফিস ছিল। সেই অফিসের ভারপ্রাপ্তা ছিলেন সুশ্রী, সুন্দরী, সুভদ্র, শিক্ষিতা এক মহিলা। সেই ম্যাচো টাইপের লম্পটটি করতেন কী, নি:শব্দে দরজার বাইরে ফ্যান্টমের মতো সামনের দুটি দাঁত বের করে দাঁড়িয়ে থাকতেন। ওই দাঁড়িয়ে থাকাটা এত অর্থবহ ছিল। মহিলার সারা শরীর জরিপ করতেন। যেন খাদ্য আর খাদক। অসীম ক্ষমতাশালী সেই লম্পটের উপদ্রবে মহিলাকে চাকরি ছাড়তে হল। আর এক ভামের কথা মনে পড়ছে। তিনি স্ত্রীকে ত্যাগ করে পরস্ত্রীর সঙ্গে বাসা বাঁধলেন। শরীরের প্যাকেট খুলে যৌবন একদিন ঝরে গেল। চরিত্রহীনদের শরীর তাড়াতাড়ি ক্ষয়ে যায়। ষাটের আগেই দেহে বাসা বাঁধে নানা রোগ। জরাজীর্ণ স্বামীটিকে তাঁর মিসট্রেসের অবহেলা থেকে তুলে আনলেন তার স্ত্রী। দুহাতে সেবা করে একদিন তুলে দিলেন পারের খেয়ায়। আবার এমনও দেখলুম, এক বিদূষী সুন্দরী মহিলা, পরপর বারতিনেক স্বামী পালটালেন, শাড়ী পালটানোর মতো। শেষ স্বামীর এই নীলাটি সহ্য হল না। তিনি বহুতল বাড়ির ছাদ থেকে নীচে ডিগবাজি খেয়ে প্রমাণ করলেন তিন নম্বর স্বামী হওয়ার বিড়ম্বনা। এদিকে সেই বিদূষী সুন্দরী কিন্তু প্রতিদিন প্রথম স্বামীর বাড়িতে রাতের বেলা গিয়ে মশারি ফেলে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আসতেন। প্রথম স্বামীর প্রতি তাঁর একটা সন্তান-স্নেহ জন্মে গিয়েছিল। কিন্তু আমাকে কেউ প্রশ্ন করবেন না, সেই ভদ্রমহিলার ইদানিং কী অবস্থা অথবা তার সন্তানসন্ততিদেরই বা কী অবস্থা? অবশ্য এই ধরনের মহিলারা সন্তান তেমন পছন্দ করেন না। টলস্টয় বলেছেন, মানুষের অবসর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে আলস্য আর আলস্যের মস্তিষ্কেই খেলা করে যত উদ্ভট যৌন চিন্তা। জন্মায় পারভারশান, আসে সমকামিতা ফেটিচিসম। সুস্থ মানুষ সংসার চায়, স্বামী, সন্তান চায়। আরব অয়েল কিং হারেম চায়, চিত্রাভিনেতা বছর বছর বউ পালটাতে চায়। ম্যাড, ইরটিক পারভার্টেড ওয়ার্লড। মেরিলিন মনরোর পোশাক কোটি টাকায় নিলাম হল।

অ্যালবেয়ায় কামু সুন্দর বলেছেন, আধুনিক মানুষের ভাগ্য! স্ত্রী পালঙ্কে শুয়ে আছেন এলিয়ে। স্বামী মেঝেতে শুয়ে স্বমৈথুনে রাত কাটাচ্ছেন। নিমফোম্যানিয়াক বা স্যাটিরিসিসদের জগতে আমরা সুস্থ মানুষরা বাস চাই না। নারী নিয়ে ইয়ারকিও আমাদের ধাতে সইবে না। আমাদের নারী অ্যানিম্যাল নয়, দেবী শক্তি, সন্তানের জননী। সেই কারণে আমাদের সংসার পরিবার এখনও বজায় আছে। ফ্যামিলি ট্রিতে দাঁড়কাকের কপচানি নেই। আমাদের দেশে পরিবেশ বাধ্য না করলে জাস্ট আউট অফ ফান কোনও নারী কোনও ষণ্ডের কাছে সহসা আত্মসমর্পণ করবেন না। ব্যতিক্রমটা বাস্তব অবস্থা নয়। বিকার একটি রোগ। আমাদের জীবনে একটু খুনসুটি থাকবে; কোনও দূর সম্পর্কের আত্মীয়কে ভয়ে-ভয়ে একটি চুমু খাব। কিংবা সমর সেনের মতো, ‘নগেন বসুর রকে সকালে-বিকালে উঠতি বয়সিদের ভিড় জমত। আমিও বসতাম। কলতলায় দিনে-ঝি রাতে-বারবধূদের জমায়েত হত। অনেকের চেহারা ও স্বাস্থ্য খাসা ছিল, রসালাপে কলতলা মুখর হয়ে উঠত। এই রক, কলতলা, ছাদের আলসে, বারান্দা, বাসের লেডিজ সিট, বিয়ের বাড়ির গা ঘষাঘষি, উষ্ণছবি নাড়াচাড়া এই পর্যন্তই আমাদের গতি। আমাদের নীতি হল, জাতে মাতাল তালে ঠিক। আমরা সেই মেড়া যে খোঁটার জোরে লড়াই করে। বউয়ের হাতের রান্না খেয়ে তার অনুমতি নিয়ে আমরা পরস্ত্রীর সঙ্গে একটু ইয়ে করতে পারি।

1 Comment
Collapse Comments

KI ANALYSIS

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *