প্রজাপতি
‘কীহল তোর?’ মুখে একটা চাপা উত্তেজনা? ফুটবল ফাইনালে মাঠে নামার আগে গোলকিপারের মুখে যেমন দেখা যায়! হাপ উদ্বেগ, হাফ উত্তেজনা!
কিছুক্ষণ গুম মেরে থাকার পর বিকাশ বললে, ‘জীবনের একটা টার্নিংপয়েন্টে এসে দাঁড়িয়েছি। যেকোনও দিন একটা ম্যাডাগ্যাসকার কাণ্ড ঘটে যেতে পারে।’
অক্ষয়বাবু বিকাশের এক বয়স্ক প্রাণের বন্ধু—অক্ষয়দা। নিজের বাড়ি আছে। সেই বাড়ির নীচের তলায় ছোট্ট একটি ঘরে নিজের মতো থাকেন। বহুকাল আগে স্ত্রী মারা গেছেন। একটি ছেলে, একটি মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে তার বউ নিয়ে ওই বাড়িতেই বেশ সরবে আছে। সকাল, সন্ধে নিয়মিত ঝগড়া। ঘটি বাটি ছোঁড়াছুঁড়ি। সারা বছরই শ্বশুর বাড়ির কেউ না কেউ থাকেন, মেয়ের তরফে লড়াই করার জন্যে। মাঝে মাঝে, দুটো কথা প্রায়ই শোনা যায়—নারী কন্ঠে—’ভিটেয় ঘুগু চরিয়ে ছেড়ে দেব তোমার।’ আর পুরুষ কণ্ঠে—’একদিন খোঁটা সমেত টেন্ট উপড়ে দেব।’
অক্ষয়বাবু নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে এনেছেন। মন তুলে নিয়েছেন। নানা কথা কানে এলেও গ্রাহ্য করেন না। কোনও প্রতিক্রিয়াও নেই। আগে চেষ্টা করতেন। ব্যর্থ চেষ্টা। পরে বুঝে গেলেন, এইটাই ওদের বেঁচে থাকার ধরন। কাঠঠোকরা কাঠে ঠোঁট ঠুকবেই। কাকাতুয়া লঙ্কা খাবেই। বেড়াল আদরে ঘড়ঘড় করবে আবার পরক্ষণেই আঁচড়াবে। অক্ষয়বাবু একটা বড় ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে চাকরি করতেন। সেখানে তাঁর ওপরওয়ালা এক বিলেত ফেরত ইঞ্জিনিয়ার। একটি ইংরেজি সারা দিনে অন্তত একশোবার বলতেন—নো ম্যাটার। সেইটি অক্ষয়বাবু রপ্ত করেছেন সব ম্যাটারই নো ম্যাটার।
বিকাশের অক্ষয়দাদা বললেন, ‘আমাদের জীবনের আবার টার্নিংপয়েন্ট কী রে! স্ট্রেট লাইন, রেল লাইনের মতো পড়ে আছে। এদিক দিয়ে ঢুকবি ওদিক দিয়ে বেরিয়ে যাবি। মাঝের পথটুকুতে তাইরে নাইরে নাই করবি। অনেক ভাগ্য করলে মানুষ বাঙালি হয়। তিন ছটাকি খোল। সামান্য দানাপানি, ধুঁকতে ধুঁকতে পথ চলি, সম্বল শুধু একমাত্র সম্বল—অম্বল। আমাদের জাতীয় ফল, আমড়া। আমাদের জাতীয় পক্ষী হল, কাক। আমাদের জাতীয় পশু হল, লেড়ি কুত্তা। আমাদের জাতীয় অস্ত্র হল, বাঁশ। আমাদের শাস্ত্র হল, পরচর্চা। আমাদের সাধনা হল, পেছনে লাগা। আর আমাদের ধ্রুবতারা হল, বউ। গীতা উপনিষদ নয়, বইয়ের বাণী নয়, বউয়ের বাণী। ওই যে, কান দুটো খাড়া করে শোনো!’
বিকাশ শুনতে পাচ্ছে—দোতলায় দক্ষযজ্ঞ। ফাটা বাঁশের মতো, চেঁচারি চেরা গলায় অক্ষয়দার পুত্রবধূ, অক্ষয়দার ছেলেকেই শাসন করছে, ‘তোমাকে আমি কী বলেছিলুম, কী বলেছিলুম তোমাকে আমি! কারও ব্যাপারে নাক গলাবে না। কেমন হাম্পু! কেমন হাম্পু দিয়েছে! আমার উপদেশ শুনেছিলে! বারবার বলেছিলুম, বার বার, বার বার।’
অক্ষয়দা নিজের মনেই বললেন, ‘দে না, মাথাটা কামিয়ে দে না, ‘বারবার’ ডেকে এনে মাথা কামিয়ে ঘোল ঢেলে দে। বিয়ে করে নিত্যানন্দ!’ খাট থেকে উঠে গিয়ে ভেতর দিকের জানলা দুটো বন্ধ করে দিলেন। নানা রকম শব্দ আসতে লাগল, তবে কথা বোঝা যাচ্ছে না। একবারই মাত্র কানে এল, ‘যেমন বাপ তার তেমন ছেলে!’
অক্ষয়বাবু জিগ্যেস করলেন, ‘তোমার সমস্যাটা কী? চাকরিবাকরি করছ, খাচ্ছদাচ্ছ, ঘুরে বেড়াচ্ছ। এই ভাবেই চালিয়ে যাও। স্ট্রেট ড্রাইভ। লাল দেখলে থামবে। হলদে দেখলে প্রস্তুত হবে, সবুজ দেখলে স্টার্ট। ডাইনে বাঁয়ে ঘুরতে হলে ইন্ডিকেটার।’ বিকাশ বললে, ‘মা খুব ধরেছে।’
‘সে তো সুখের কথা রে! মা ছেলেকে ধরেছেন। কত বড় সৌভাগ্য তোর একালে জন্ম আছে ব্যস ওই পর্যন্ত। নো ফাদার, নো মাদার। নো স্নেহ, নো প্রেম! আমাদের কালে সুধীরলাল চক্রবর্তীর একটা গান খুব পপুলার হয়েছিল—প্রদীপ হয়ে মোর শিয়রে কে জেগে রয় দুখের রাতে! সে মা আর নেই রে! তোর আছে। এখন মায়েরা সব মাম্মি। বাবারা হল ড্যাড! চতুর্দিকে আন্ট আর আন্টি।’
বিকাশ বললে, ‘দাদা, এধরা সেধরা নয়, মা বলছেন, খোকা, আমার বয়েস হল তোকে এইবার বিয়ে করতে হবে। আমি একটি মেয়ে দেখেছি।’
অক্ষয়বাবু বললেন, ‘বিয়ে? আগে বুড়িদের তবু একটা যাওয়ার জায়গা ছিল কাশী। তোমার মা যাবেন কোথায়? কোনও ব্যবস্থা করেছেন?’
‘মা যাবেন কেন? মা আমাদের সঙ্গেই থাকবেন, বা আমরা মায়ের সঙ্গে থাকব।’
‘অতই সোজা! এ কী রকম জানিস? একটা পাইপ, এদিক দিয়ে ঠেলবি ওদিক দিয়ে বেরিয়ে যাবে। বউয়ের এন্ট্রি মায়ের এগজিট।’
‘অক্ষয়দা, তুমি সিনিক হয়ে গেছ। কেউ কি বিয়ে করছে না?’
‘অবশ্যই করছে। বয়েসের ধর্ম। তুমি মুখে যাই বলো, তোমারও ষোলো আনা ইচ্ছে আছে। ইচ্ছে যখন আছে করে ফেল। ধুতি পাঞ্জাবি পরে সোজা চলে যাও। পিঁড়েতে বসে পড়ো। বউভাতে গুচ্ছের লোক খাওয়ার আর এন্তার আবর্জনায় ঘর ভরো। আর বছর না ঘুরতেই তাসা পার্টি। যাই করো, বিয়ের আগে উকিল ধরে অ্যাডভান্স বিল নিয়ে রাখবে। এটা হল ফোর নাইন্টি এইটের যুগ।’
‘সে আবার কী?’
‘সে একটা এসেছে নতুন আইন। ধরো, তুমি তোমার বউকে বললে, একটু সরে শোও, সে অমনি সোজা উঠে তরতরিয়ে থানায় গিয়ে তোমার নামে একটা এফ আই আর করে এল, তোমার মাকেও জড়িয়ে দিলে, আমার ওপর মেন্টাল টরচার হচ্ছে। ব্যস, তোমার খেল খতম। থানা থেকে পুলিশ এল, নড়া ধরে খাবার থালা থেকে মাঝরাতে তুলে নিয়ে গিয়ে সোজা লকআপে। সেখানে আর পাঁচটা দাগী আসামির সঙ্গে ভূমিশয্যা। বিয়ে না করে তোর কি খুব অসুবিধে হচ্ছে!’
‘অসুবিধে হবে কেন?’
‘দিব্যি খাচ্ছিস দাচ্ছিস। মাকে নিয়ে আছিস। ফুরফুরে জীবন!’
‘তা নয়, তবে মা একজন সঙ্গী চাইছে, এই আর কী।’
‘বুঝেছি, তোমারও ষোলো আনা ইচ্ছে। মেয়েটিকে দেখেছ?’
‘দেখেছি।’
‘দেখে কী বুঝলে?’
‘মায়ের কাছে সেদিন এসেছিল। লাজুক। মায়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘুরছিল।’
‘মাকে কী বলে ডাকছিল? মাসি?’
‘না, মা, মা করছি। চারশো আটানব্বই করবে মনে হল না।’
‘দেখতে কেমন?’
‘স্লিম, ফরসা, ধারালো মুখ বেশ খাড়া নাক, বড় বড় চোখ।’
‘তার মানে সুন্দরী।’
‘সেই রকমই মনে হল।’
‘মনে হল আবার কী? মনে বসে পড়েছে এখন পিঁড়েতে বসলেই হয়। কণ্ঠস্বরটা কেমন?’
‘বেশ সুরেলা। গানটান করে।’
‘লেখাপড়া?’
‘বি এ করেছে।’
‘বা: বা:, সোনায় সোহাগা। চাকরি করবে না সংসার করবে?’
‘সেসব কিছু বলেনি।’
‘আজকালকার নিয়মে বিফোর ম্যারেজ মিটিং হয়েছে?’
‘না, ওসবের প্রয়োজন হবে না।’
‘তাহলে লাগিয়ে দাও। এখন ফাল্গুন মাস! এইরকম এক ফাল্গুনে আমারও বিয়ে হয়েছিল রে। সে কী সাজ! গরদের পাঞ্জাবি, চুনোট করা ধুতি। পাঞ্জাবিটা এখনও আছে। পোকা ফুটো ফুটো করে দিয়েছে। তবে আছে। পাটে পাটে পাট হয়ে। এক সেট সোনার বোতাম। বউয়ের বেনারসিটাও আছে। সেটারও একই অবস্থা। বুঝলি, পোকাদের কোনও সেন্স নেই। অবশ্য স্মৃতিও এক ধরনের পোকা। মানুষকে ফুটো ফুটো করে দেয়। বিয়ের পর আমরা পুরী গিয়েছিলুম। সমুদ্রের ধারে বসে আছি, পাশে ঘোমটা দেওয়া বউ। ঢেউ ভেঙে ভেঙে পড়ছে। ভিজে ভিজে চিটচিটে বাতাস। খুব ফরসা ছিল, আমি নাম রেখেছিলুম লালী। সমুদ্র আছে, বেলাভূমি আছে, ঢেউ আছে, ফেনা আছে, ছড়ানো ঝিনুক আছে, জগন্নাথদেবের মন্দির আছে, নেই আমার লালী। শোন বিয়ে যদি লেগে যায়, জীবনে বউ যদি ফিট করে যায়, তার চেয়ে মারভেলাস কিছু নেই। লড়াই করতে করতে কতটা পথ যেতে হবে বল তো, যৌবন থেকে বার্ধক্য পেরিয়ে চিতা। এ লং ওয়ে। মনের মতো একজন সঙ্গী চাই না! গল্প করতে করতে বেশ যাওয়া যায়, সুখ-দু:খের পানমশলা চিবোতে চিবোতে। পুরী থেকে একটা সিঁদুর কৌটো কিনেছিল। সেটা আমি লুকিয়ে রেখে দিয়েছি। মাঝে মাঝে বের করে দেখি। সঙ্গে সঙ্গে একটা আনা দেখি, একটা মুখ দেখি। মেয়েদের চুল বাঁধা আর সিঁদুর পরা একটা দেখার জিনিস। যাক, বিয়েটা করেই ফেলো। না, করেই বা করবে কী? বিয়ে না করলে মানুষের জীবন দানা বাঁধে না।’
বিকাশ যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল।
অক্ষয়দা বললেন, ‘শোন, খাওয়াদাওয়াটা আমাদের কালে যেমন হত, সেইভাবে করিস। হালুইকর। ক্যাটারার ঢোকাস না। বউভাত মানুষের জীবনে একটা অক্ষয় স্মৃতি।’
বিকাশ বেরিয়ে এল পথে। বেশ একটা আনন্দ আসছে মনে। সংসার হবে। একজন আপনজন আসছে। জীবনসঙ্গিনী। কত দিন, কত রাত, কত কথা, কত পরিকল্পনা!
সাত-আটদিন পরে বিকাশ অফিস থেকে ফিরছে। একটু রাত হচ্ছে। বিয়ের কেনাকাটা শুরু হয়েছে। বউবাজারে গয়নার দোকানে দরদস্তুর করতে গিয়েছিল। বাড়িতে মিস্ত্রি লেগেছে অনেকদিন পরে, রং হচ্ছে।
ষষ্ঠীতলার কাছটায় চির অন্ধকার। একটা বটগাছ আছে। পাড়ার একটা ক্লাব বেদি করে রেখেছে। আড্ডা হয়। অল্প দুরেই মেয়েদের স্কুল। এই বটতলাটা তাদের কাছে আতঙ্কের। সিটি, অশ্লীল কথা, সময় সময় হাত ধরে টানার চেষ্টা সবই হয়। প্রবীণ শিক্ষক প্রভাতবাবু, প্রতিবাদ করেছিলেন, তাঁকে অন্ধ করে দিয়েছে। পাড়ার লোক তাতে ক্ষিপ্ত না হয়ে মন্তব্য করেছিল, বেশি মাতব্বরি করতে গেলে ওই অবস্থাই হয়। একটা বয়েসে ছেলেরা একটু আধটু ওইরকম করেই থাকে। পুলিশের বক্তব্য, অন্য অনেক সমস্যা নিয়ে আমাদের ব্যস্ত থাকতে হয়। এই সব ছ্যাঁচড়া ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামাবার সময় আমাদের নেই।
বিকাশ ওই জায়গাটা পা চালিয়ে পার হয়ে যেতে চাইল। এখানে এলেই বিশ্রী লাগে। উলটো দিক থেকে একটা মোটর সাইকেল আসছে হেডলাইট জ্বেলে। গাড়িটা তাকে অতিক্রম করে গিয়েও আবার ঘুরে এসে তার পথ আটকে দাঁড়াল। আরোহী দুজন যুবক। বিকাশের খুব চেনা লাগল। দুজনকেই সে দেখেছে। প্রায়ই দ্যাখে।
একজন বলল, ‘বিকাশ না! ভালো আছো?’
‘বিকাশ একটু ঘাবড়ে গিয়ে বললে, ‘ভালো আছি।’
সঙ্গে টাকাপয়সা আছে। ব্যাঙ্কে গিয়েছিল। কেড়ে নিলে কিছুই করার নেই। চিৎকার করলেও কেউ আসবে না।
ছেলেটি বললে, ‘ভালো থাকতে চাও?’
বিকাশ বললে, ‘কে না চায়!’
‘তাহলে পাপিয়াকে বিয়ে করবে না।’
বিকাশ বলল, ‘কেন?’
‘পাপিয়াকে বিয়ে করব আমি। পাপিয়া আমার।’
‘ভালোবাসা?’
ছেলেটা বিদঘুটে হেসে বললে, ‘ভালোবাসা? ওসব আমাদের রক্তে নেই। আমাদের কাছে ভালো লাগা। তুমি অপেক্ষা করতে পারো, সেকেন্ড হ্যান্ড হলে ফেলে দেব তখন তুলে নিতে পারো। নতুন গাড়ি চড়ার ভাগ্য তোমার হবে না।’
‘পাপিয়ার বাড়িতে জানে?’
‘বাড়িফাড়ি আবার কী? তুলব আর ফেলব।’
‘পাপিয়ার মত আছে?’
‘এই লাও, নালায়েকের মতো কথা। মানুষ আমাদের কাছে মুরগি। ধরব আর ক্লিক। ত্রিলোকের কাছে কার্ড ছাপতে দিয়েছ? তুমি নিয়ে এসো।’
বিকাশ বললে, ‘বিয়েটা হবে।’
‘কার সঙ্গে?’
বিকাশ বললে, ‘যার সঙ্গে হওয়ার তার সঙ্গেই হবে।’
ছেলেটা তার সঙ্গীকে বললে, ‘ রেলা নিচ্ছে রে! ছাঁদনাতলার বদলে এখানেই চমকাইতলা করে দেব।’
সঙ্গী বললে, ‘ছুঁচো মেরে কী হবে? পাপিয়াকে তুলে নিলেই তো হবে।’
বিকাশ বললে, ‘কিচ্ছু দরকার নেই। ও মেয়েকে আর আমি বিয়ে করছি না। দেশে মেয়ের অভাব নেই। তোমাদের যা খুশি তাই করো।’
ছেলেটি বললে, ‘এই তো লক্ষ্মী ছেলে। বুঝেছে, আমাদের সঙ্গে কাজিয়া করে লাভ নেই। ব্যাপারটা কী জানো, মেয়েটাকে আমরা অনেকদিন নজরে রেখেছি। ফল গাছে থাক, পাকলেই পেড়ে নেব, এই আর কী! তার পরে পাওয়ারের ব্যাপার আছে। আমরা এখন পাওয়ারফুল। থানা-পুলিশ কী করবে আমাদের ! আমাদের শত্রু আমরাই। ঠিক আছে দোস্ত। সরি! মুখের গ্রাস ছিনিয়ে নিলুম। তোমার বিয়েতে পাপিয়াকে নিয়ে আসব। ভালো উপহার আনব।’
মোটর সাইকেলের মুখ ঘুরে গেল। কারণে অথবা অকারণে তীব্র বেগে দক্ষিণমুখো।
বিকাশ বল ফিরে পেয়ে আবার হাঁটছে। কয়েক পা গেছে। ভীষণ একটা শব্দ। পেছন দিকে, যেদিকে মোটর সাইকেলটা গেল সেই দিকেই।
বিকাশ দাঁড়িয়ে পড়ল। একটা হইহই কানে আসছে। কী হল? কৌতূহল। এই রাস্তাটা কিছু দূর গিয়েই বড় রাস্তায় উঠেছে। বিকাশ এগিয়ে গেল। বড় রাস্তার মুখেই ভিড় জমে আছে। কে একজন ইংরিজিতে বলছে ‘স্ম্যাশড।’
বিকাশ বক্তাকে চিনতে পারল। তারই বন্ধু, পার্থ। বিকাশ জিগ্যেস করল, ‘কী হয়েছে রে’?
‘আরে, এ যুগের যা ব্যামো, গতি। হাই স্পিড ডেথ। এ এদিক থেকে বেরল ঝড়ের বেগে। ওদিকে থেকে টপ স্পিডে তিরিশ টন লরি। ন’টার পর লরি ছেড়ে দেয়। হয়ে গেল।’
লাল আর বেগুনি রঙের একটা তালগোল। একটু আগেই এটা ছিল একটা মোটল সাইকেল। বিশ-তিরিশ হাত দূরে ছত্রাকার দুটো নরদেহ। একটু আগেই এরা ভয় দেখাচ্ছিল বিকাশকে।
পার্থ বললে, ‘চ দুটো কমল।’
‘চিনিস ওদের?’
‘চিনি না! সপ্তাহে একবার করে আমার দোকানে তোলা আদায় করতে আসে। কমুক। এইভাবে কমুক। জানিস তো, মাঝে মাঝে মনে হয় ভগবান আছেন।’
ত্রিলোক বিকাশের জন্যেই বসে ছিল, ‘তোর এত দেরি হল? এই নে কার্ড রেডি। একটা প্যাকেটের বাইরে বের করে রেখেছি। দেখেনে, সব ঠিক আছে কিনা।’
হ্যলোজেনের আলোয় সোনার জলে ছাপা অক্ষর ঝলমল করছে। বিরাট বড় একটা প্রজাপতি। প্রজাপতিটা একটু আগে মরে গিয়েছিল। বিকাশের মনে হল, প্রজাপতিটা এখন ডানা মেলে উড়ছে।